১.রোমান্টিক বন্ধুত্বের গল্প
#আঁধারে এক চিলতে হাসি #
পঁয়ত্রিশ বছরের দুই সন্তানের মা প্রেম করতে পারে কিনা জানা নেই,অবশ্য জানার ইচ্ছাও নেই।তবে খুব অস্বস্হি যে হয় তা বুঝতে পারছি অনুপমের সাথে কফি শপে এসে। অনুপমের বয়সও পঁয়ত্রিশ । তার মুখমন্ডল দেখে বোঝার উপায় নেই তার মনে কি চলছে?
অনুপমের সাথে এই নিয়ে দ্বিতীয় বারের মত একান্তে সময় কাটানো। প্রেম বলতে যদি শারীরিক মানসিক একাত্বতা বোঝায় ,তবে হয়ত আমাদেরটা প্রেম নয়। তবে এটাকে বন্ধুত্বও বলা যায় না। আমি যে হাসপাতালে রিসিপশনে কর্মরত সেখানেই কম্পিউটার অপারেটর অনুপম। ছয়মাসের চাকরি জীবনে ওর সাথে আমার পরিচয় । বন্ধুত্ব কখনোই ছিলনা। শুরু থেকেই দুটি মনের আবেগ দুজনকে তাড়িত করেছে এক অদ্ভূত সম্পর্কের দিকে। যা বহন করছি তিনমাস যাবৎ। প্রথমে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এরপর সাহস নিয়ে অফিস শেষে বাইরে কোথাও নিজেদের সময় দিচ্ছি।
এবার আমি আমার পরিচয় দিচ্ছি। আমি সুগন্ধা শর্মা। দুই ভাই এর পর আমাকে জন্ম দিতে গিয়ে মায়ের মৃত্যু। বাবা স্কুল শিক্ষক। বেশ কষ্ট করেই তিন ভাই বোনকে লালন পালন করেছেন তিনি। অর্থ কষ্ট খাকলেও জীবনে পারিবারিক কষ্টটা বুঝিনি। আমি যখন অনার্স পড়ি, বড় দা বিয়ে করেন। এরপর থেকে বুঝি আমাদের সুখের দিন শেষ। আমি সারাদিন খাটলেও দিনরাত দাদা বৌদির কলহের শেষ নেই। সিদ্ধান্ত হল আমায় বিয়ে দেওয়া হবে। এতে উভয় পক্ষই বেঁচে যাবে। অনার্সের পর আমার আর মাস্টার্স করা হল না।
আমার বিয়ে হল তিনবোনের একমাত্র ছোট ভাইয়ের সাথে । অসম্ভব শান্ত মানুষটাকে প্রথম দেখাতেই ভাল লেগেছিল। বিয়ের এক সপ্তাহ পর্যন্ত বিবাহিত জীবন ভালই কাটছিল। কিন্তু এক শুক্রবারের সকালে প্রচন্ড চিৎকারে ঘুম ভেঙে গেল আমার।
ঘুম ভাঙতেই শুনলাম শ্বাশুড়ি মা অশ্রাব্য ভাষায় গালাগালি করছেন। আর সবগুলো গালি আমায় দিচ্ছেন। আমি হতবম্ব হয়ে কিছুক্ষন বসে রইলাম খাটে । সব চেয়ে অবাক হলাম শুভ অর্থাৎ আমার স্বামী নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে। আমি মোটামুটি গুছিয়ে নিয়ে দরজা খুলে বললাম,
“কি হয়েছে মা? “
এতে যেন আগুনে তেল ঢেলে দিলাম। আরও যত নোংরা গালি আছে আমায় দেওয়া শুরু করল। শেষমেষ বুঝলাম নতুন বউ এত সকাল অবধি ঘুমাচ্ছি কেনো? সে জন্য শ্বাশুড়ি মায়ের ক্ষোভ হচ্ছে।
একটু সাহস নিয়ে বললাম, “মনি দিদি কোথায়?”
মনি দিদি এবাড়ির আশ্রিতা। একটু মাথায় সমস্যা দেখে শ্বশুরবাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে। তিনকুলে আর কেউ নেই তার। শ্বাশুড়ি রেখে দিয়েছেন ফাইফরমাশ খাটানোর জন্য।
এবার কিছুটা দমলেন মনে হয় তিনি। মনি দিদি রান্না ঘর থেকে দৌড়ে এসে মাথা চুলকে হাসতে লাগলেন।
শ্বাশুড়ি বললেন,” বিড়াল দিয়ে মুড়ি ভাজা হয়? একে তো ফকিন্নির মেয়ে তার ওপর যদি মনে করে থাকো এবাড়িতে এসে নবাবজাদী সাজবে তা ভুলে যাও।”
আমার খুব ঘৃনা জন্মাতে শুরু করল এ মহিলার প্রতি।কি নোংরা মানুষ তিনি। একেতো তিনি কেবল পূজা আর দুপুরের খাবার করেন। সব কাজ তো মনি দিদিই করে। তবে এত চেঁচামেচির কি হল বোঝা গেল না। সংসার করার সাধ বেশ ভাল মিটে যাচ্ছে। ওদিকে বৌদির ভয় ,এদিকে শ্বাশুড়ির পাগলামি।মনের ভিতর ঝড় চলছে।
এমন সময়। ঘরের ভেতর এসে দেখলাম শুভ বসে আছে। আমি দৌড়ে এসে তাকে বললাম,” আমি কি কোন দোষ করেছি? “
শুভ বিছানা পরিপাটি করতে করতে বলল, “কারো দোষ নয় সব সময়ের সাথে সয়ে যাবে।”
সারাদিন বিষাদ নিয়ে সংসারের টুকিটাকি কাজে দিন শেষ হল। দিন শেষে আবিষ্কার করলাম আমার শ্বাশুরি এক সেকেন্ডের জন্য কথা থামাতে পারেন না। কেবল আমাকে নয় স্বামী সন্তান পাড়ার প্রতিবেশী সবাই খারাপ ।কেবল তিনি ছাড়া। কিভাবে এক সপ্তাহ চুপ ছিলেন কে জানে?
শুভ বুঝিয়ে বলল তার মা এমনি। তাই এসব উপেক্ষা করলে কোন কষ্ট হবে না। শুভর মত স্বামী পেয়ে আর এরপর থেকে বেগ পেতে হয়নি।শ্বাশুড়িকে উপেক্ষা করে সংসার চলে যাচ্ছে।মাঝে মাঝে মাথা ব্যথা সঙ্গী হচ্ছে এই সমস্যা।
এক বছর পর আমি ছেলে সন্তানের মা হলাম।নাম রাখলাম অন্তু। শ্বাশুড়ির চিৎকার সন্তানের চিৎকার নির্ঘুম রাত, পরিশ্রম ,আত্মীয় স্বজন সব মিলে এবার বেশ বিরক্ত হয়ে যাচ্ছি।
ঘরকে নরক লাগা শুরু হয়েছে। তবুও নিজেকে সান্তনা দেই আমার স্বামী তেমন সাহায্য না করলেও মায়ের কথায় জীবনেও আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করে নি। চুপচাপ সংসার করে যাচ্ছে।মাঝেমাঝে ঘুরতেও যাচ্ছি আমরা।
আমার গর্ভে আবার দ্বিতীয় সন্তানের আগমন হল। যখন বড়টার বয়স ২ বছর আর গর্ভে ৬ মাসের শিশু তখন এক রাতে শুভ ঘরে ফেরেনি। পর দিন বিকালে সে বাড়িতে ফেরে । কিছুটা উদভ্রান্তের মত লাগছিল শুভকে। বাড়ির সবাইকে জানালো অফিসের কাজে বাইরে ছিল সে।আমিও চিন্তা মুক্ত হলাম।
তার তিনদিন পর রাতে শুভ খাটে বসে আছে আমি মশারী টানাচ্ছিলাম। এসময় শুভ আমার হাত ধরে পাশে বসায়। শান্ত মানুষটা আরও শান্ত হয়ে বলে,
“সুগন্ধা তোমায় কিছু কথা বলি। সব শুনে তবেই তোমার মত জানাবে। আমি যখন বুঝতে শিখি তখন থেকেই দেখতাম আমার ঠাকুমা মাকে অশ্রাব্য ভাষায় গালাগালি করছে মা মুখ বুজে সব সয়ে কাজ করছে। ঠাকুমার মৃত্যুর পর মায়ের মাঝে ঠাকুমার সব আচরন দেখতে পাই। চিৎকার ,গালি, অশান্তিতে বেড়ে ওঠা আমি ছোট থেকেই এ সংসারকে ঘৃনা করি। পড়াশুনা অবস্হায় এক মেয়ের সাথে আমার প্রেম ছিল। তার বিয়ের পরও আমাদের যোগাযোগ ছিল। এমনকি ভেবেছিলাম তুমি সংসারে আসলে সব ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু কিছু ঠিক হল না। অশান্তিতে যখন মাথা ফেটে যাওয়ার জো এমন সময় আমার প্রেমিকা আমার অফিসে যোগ দিল। ওর ডিভোর্স হয়েছে। এরপর থেকে আমার সাথে। ওর ঘনিষ্টতা বাড়তে থাকে। এই গতানুগতিক জীবন থেকে আমি পালাতে চাইতাম। আমরা বিয়ে করেছি সুগন্ধা। আমায় ডিভোর্স দেবে তুমি? কিংবা ক্ষমা করে দেবে কি? “
আমার পায়ের তলা থেকে মাটি সরে গেল । কি বলছে শুভ! যে মানুষটাকে ভালবেসে এমন নরকেও হাসিমুখে আছি সে এসব কি বলছে? আমি ভেবেছিলাম বোধ হয় মজা করছে। কিন্তু না, এ কথা বাড়ি, অফিস,পাড়াতে ছড়িয়ে পরল। শেষমেষ শুভ আমাদের ছেড়ে চলে গেল। আমি এতটাই অবাক হয়ে গিয়েছিলাম যে কিছু বলার শক্তি হারিয়ে ফেলেছিলাম।শুভ যাওয়ার আগে আমার শ্বাশুড়িকে স্পষ্ট করে বলে গেল কেবল তার জন্যই সে এমন সিদ্বান্ত নিয়েছে।
সংসারে বাচ্চাদের কান্নার শব্দ ছাড়া কোন চিৎকার ছিলনা। কোন ঝগড়া ছিল না। চুপচাপ শ্বশুড়বাড়ি পরেছিলাম। আস্তে আস্তে যখন সব সয়ে যাচ্ছে। তখন আবার শ্বাশুড়ি পূর্বের রূপ নিল। সারাক্ষন
আমার মত অপয়ার জন্য মা ছেলের এমন পরিনতি তা দিন রাত বোঝাতে লাগল। এবার যেন জীবন বিষাক্ত মনে হল। একদিন বাড়ি থেকে বেড়িয়ে বাবার বাড়ি চলে গেলাম ।
বাবা তখন নিজের কষ্টের কথা বলল। বৌদি সারাদিন অযথা ঝগড়া করে তাদের জীবন নরক বানিয়ে চলছে। মুখ গুজে বাবার বাড়ি থেকে বন্ধু বান্ধব সবার কাছে একটা চাকরি চাইতে লাগলাম ।অনার্স শেষ হয়েছে চার বছর আগে। এমন মেয়ের জন্য কেউ তেমন ভাল বেতনের চাকরি দিতে পারছে না। বড়দা তার বন্ধুকে ধরে পরে শহরের এক হাসপাতালের খোঁজ দিল। সেই থেকেই চাকরি করছি।
শ্বশুরবাড়িতে নিজের জিনিসপত্র আনতে গেলে মনিদিও জানালো সে আমার সাথে থাকতে চায়।সারাদিন এত চিৎকারের বাড়িতে সে থাকতে পারছে না। বাবু দুটোর জন্য ভেবেছিলাম মানুষ রেখে দিব। মনিদি বিশ্বস্থ, তাকে নিয়ে গেলে মন্দ হয় না।তবে শ্বাশুড়িকে ভয় পাচ্ছিলাম। মনিদি জেদ করায় শেষমেষ তিনিও রাজি হলেন। পেছনে অবশ্য অনেক অভিশাপও দিলেন।
সব মোটামুটি চলছিল। এদিকে শুভ ডিভোর্সের কার্যাদি শেষ করতে মরিয়া হয়ে উঠল। আমিও বাঁধা দিলাম না। শাখা সিঁদুর ছাড়লাম না। সমাজে এদুটোর বেশ জোর। থাকলে কেউ বাজে ব্যবহার করতে পারে না।
জীবন যখন কিছুটা সরল তখন দেখলাম দায়িত্বের বাইরে নিজের কষ্টের কথা বলার কোন মানুষ নেই। মুখ বুজে কেবল কাজ আর কাজ । এমন সময় নিজের নির্লিপ্ত চোখ এক হাসিহীন অনুপমকে খুঁজে পেল। সারাদিন কাজ করলেও রোবটের মত কেউ থাকে না। অনুপম এমন ভাবে থাকবে যে জীবন সম্পর্কে তার কোন আগ্রহ নেই।
কাজের ফাঁকে ফাঁকে অফিসের সময়ে কিছুটা কথা হত। এরপর ফেইসবুকে ম্যাসেন্জারে কথা শুরু। অনুপমই বেশী বলত। আমি কেবল শুনতাম। সেও বড্ড দুঃখি। মা বাবা মারা যাবার পর মামার কাছেই মানুষ । মামী বড্ড অত্যাচারী। চাকরির পর আলাদা থাকতে ইচ্ছা করে কিন্তু মামার জন্য পারছে না । বিয়ের কথাও পরিবার থেকে বলে না। শেষে ফাইফরমাশ খাটার লোক যদি হারিয়ে ফেলে।
জীবন ঘেটে দেখলাম। ছেলেরা যে অনৈতিক কাজ করুক তা আইনের পাতায় উঠে যায়। কিন্তু মেয়েরা যে সুক্ষ সুক্ষ অপরাধ করে মানুষের জীবনকে পাল্টে দেয়, যার কথা কোন আইন আদালতে উপস্হাপন করা যায় না। কেবল তার ক্ষতি পূরন গুনতে হয় নিরবে।
আজ আমি আর অনুপম দুজন যেখানে বসে আছি সেখানে তেমন ভীড় নেই।হাতে শাখা, সিথিতে সিঁদুর নিয়ে বসে আছি।দিব্যি স্বামী স্ত্রীর মত আচরন করলে হয়।তবুও ভেতরটা অস্বস্হিতে ভড়ে যাচ্ছে। অনুপম বেশ স্বাভাবিক কথা চালাচ্ছে। এমন সময় শুভর বাবার ফোন । রিসিভ করতেই জানতে পারলাম শুভর মা অসুস্হ । মনিদিকে পাঠাতে হবে। খুব বিপদে পরে গেলাম। অনুপমকে বিদায় দিয়ে ফিরে এলাম বাসায়।
মনিদিকে বাড়িতে তো পাঠালাম ।কিন্তু ছুটি পেতে বেশ বেগ পেতে হল। তিনদিন ছুটি। এদিকে বাজারও শেষ । ভাবলাম বাচ্চা দুজনকে নিয়েই বাজার করতে যাব এমন সময় কলিং বেলের শব্দ। খুলে দেখি অনুপম দাঁড়িয়ে। হাতে বাজারের ব্যাগ। আমি এত অবাক জীবনেও হই নি। আমার ছেলেটা বেশ দুরন্ত তার সাথে অনুপমের বেশ ভাব হয়ে গেল।দুজন এটা সেটা খেলনা নিয়ে খেলছে।
অনন্যা আমার মেয়েটি প্রথম আমার ওড়নার নিচে লুকালেও একটু পর ভাইকে অনুকরন করছে। আমি মুখে ব্যক্তিত্ব ছেপে রাখলেও ভেতরে ভেতরে শিশুদের মত খুশিতে ডগমগ করছিলাম।
অনেকদিন পর একসাথে অনেক কিছু রানলাম। অনুপমও তৃপ্তি করে খেল। রাতের বেলা অনুপম যাওয়ার সময় বাড়ির মালিকের সাথে দেখা।
মালিকের সামনে আমার ছেলে কি বুঝে যেন “পাপা পাপা” বলে খেলা শুরু করল। যেহেতু বাড়িথেকে অনেক দূরে শহরে বাসা ভাড়া নিয়ে আছি ,তাই কেউ কারও ধার ধারে না। মালিকও অনুপমের সাথে বেশ ভদ্র ব্যবহার করল । অনুপম চলে যেতেই আমার খুব জোরে জোরে কাঁদতে ইচ্ছা করল।আহারে জীবন ! সমাজের আষ্ঠে পিষ্ঠে নিয়মের বাইরে চলতে গেলেই কেবল মিথ্যার আশ্রয় নিতে হয়।
তিনদিন চলে গেল মনিদি আসল না। শুভর মায়ের শরীর বেশ দূর্বল।এদিক থেকে অফিস থেকে বারবার কল। মনে মনে ভয় পাচ্ছিলাম চাকরিটা না চলে যায়। এমন সময় অনুপম আবার এল বাসায়। তাও খুব ভোর বেলা। জানালো সে তিনদিনের ছুটি নিয়েছে। বাবুদের সে দেখাশুনা করবে। চাকরিটা তো আমার বিশেষ দরকার। আমি অন্য কিছু না ভেবে অফিস গেলাম। বাসার জন্য খুব চিন্তা হচ্ছিল। অফিস ছুটির পর বাজার করে ঘরে ফিরে দেখি আমার ছেলে মেয়ে বেশ খুশিতেই আছে। আমি রান্না করছি অনুপম বাচ্চাদের দেখাশুনা করছে বেশ সংসার সংসার ভাব। অনুপমকে রাতে থাকতে বললাম। যেহেতু সবার ধারনা আমরা স্বামী স্ত্রী সেহেতু থাকুক সে বাসায়। আর মনিদি না আসা পর্যন্ত এভাবেই দুজনকে চাকরি সামলাতে হবে। দুদিন এভাবেই কাটল। তিনদিনের দিন জানলাম মনিদি আগামীকাল আসবে। বেশ নিশ্চিন্ত লাগছিল। অফিস সেরে আসলে অনুপম আমাদের ঘুরতে নিয়ে গেল। বাসায় ঢুকে ফ্রেশ হতেই একটি কল আসল। রিসিভ করতেই ওপাশে শুভর কন্ঠ শুনতে পেলাম,
“সুগন্ধা কেমন আছো? আমি শুভ চিনেছো?”
আমার হাত পা ঠান্ডা হয়ে গেল। তবুও শক্ত গলায় বললাম “হ্যাঁ।”
শুভ: বাচ্চারা কেমন আছে ?
আমি:ভাল।
শুভ: আমি ফিরে আসতে চাই।
আমি: মানে?
শুভ: সুগন্ধা, সীমা যাকে আমি বিয়ে করেছি ও বন্ধ্যা।ও আমার কাছ থেকে এটা লুকিয়েছিল। কেবল বলেছিল শ্বশুরবাড়ির মানুষ তাকে নির্যাতন করত। কিন্তু সে যে বন্ধ্যা তার জন্য নির্যাতিত হত তা বলে নি।
আমি: তো কি হয়েছে? ভালবেসেইতো বিয়ে করেছো। আর তোমারতো সন্তানের কান্নার আওয়াজ বিরক্ত লাগে। সে বন্ধ্যা এজন্য তাকে ছেড়ে দিলে তার প্রাক্তনের সাথে তোমার অমিল কি হলো?
শুভ: আমি এসব জানি না। আমি তোমার কাছে ফিরতে চাই। সন্তানদের দ্বায়িত্ব নিতে চাই।
আমি: আমরা আইনত স্বামী স্ত্রী নই।
শুভ: আমরা আবার বিয়ে করব। আলাদা বাসা নিব। তোমার আমার সুন্দর সংসার হবে। সীমা আমার মায়ের মত বড্ড জেদী আর মুখরা। আমি মরে যাব সুগন্ধা । আমায় বাঁচাও।প্রেম আর সংসার এক নয়।
আড়চোখে অনুপমকে দেখলাম। সে আমার মেয়েটিকে খাওয়াচ্ছে খুব যত্নে। ছেলেটিকে বাটিতে আপেল কেটে দিয়েছে সে লাফিয়ে লাফিয়ে খাচ্ছে। এদিকের কথাগুলি কি শুনছে কিনা তা বোঝা যাচ্ছে না।
আমি শুভকে বললাম, “”রাখ পরে কথা হবে।”
শুভ অনেক অনুনয় বিনয় করল। আমি কল কেটে দিলাম। অনুপমের পাশে বসে বললাম,
“অন্তু কি তোমায় পাপা ডাকে আর।”
অনুপম বলল , “অনন্যাও ডাকছে দেখি। ভাই যা করে সেও তাই করবে। “
এই প্রথম আমি অনুপমের হাত চেপে ধরলাম।ও অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।
আমি কাঁপা গলায় বললাম, “কাল মনিদি আসছে। তুমি তো থাকতে পারবে না আমার কাছে। বিয়ে করবে আমায়?”
অনুপম কয়েক সেকেন্ড আমার চোখে চোখ রেখে আমায় দেখল।এরপর অনন্যার মুখে খিচুড়ি তুলে দিতে দিতে বলল,
“কাল ছুটি নাও। আমিতো ছুটিতেই। সকালে বেড়িয়ে যাব।দেখি বন্ধুদের মধ্যে কাকে কাকে পাওয়া যায়।
আমি একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে রানতে গেলাম । হঠাৎ কারেন্ট চলে গেল। মোমবাতি জ্বালাতে গিয়ে শুনতে পেলাম , অনুপম মোবাইলে গান ছেড়েছে,
“মোরা আর জনমে হংস-মিথুন ছিলাম
ঝিলাম নদীর চরে
যুগলরূপে এসেছি গো আবার মাটির ঘরে॥
তমালতরু চাঁপালতার মতো
জড়িয়ে কত জনম হল গত,
সেই বাঁধনের চিহ্ন আজও জাগে
জাগে হিয়ার থরে থরে॥”
মোববাতির স্বল্প আলোতেও দেখলাম অনুপম হাসি মুখে দুজনকে সামলাচ্ছে। আমার ঠোঁটেও এক চিলতে হাসি ছড়িয়ে পড়তে সময় নিল না।
আঁধার গান আর হাসিতে ঘরটি যেন স্বর্গ হয়ে উঠল।
২.সত্যিকারের বন্ধুত্বের গল্প
আমার রুমমেট একসাথে পাঁচটা ছেলের সাথে প্রেম করে। তাতে কোনো অসুবিধা নাই।
প্রত্যেকেই জান দিয়ে দিবে টাইপ ভালোবাসে মিমকে। প্রত্যেক বার যখন মেয়েটা ধরা খায় এমন জন্মের কান্না করে যে, ছেলে সন্দেহ করবে কি উল্টা আরো মাফ চায়। তাতে কোনো অসুবিধা নাই।
মিমের সব বয়ফ্রেন্ডের কাছেই আমার নাম্বার আছে। আমি প্রতেকের নাম্বার মিমের বফ ওয়ান/টু এভাবে লিখে সেইভ করে রাখছি। যেটার সাথে একটু বেশি সিরিয়াস ওটারে আবার মিমের সিরিয়াস বফ লিখে সেইভ করছি মনে রাখার সুবিধার্থে।
মিমের কিছু হলেই ছেলেগুলা আমাকে ফোন দেয়, মিমের শেখানো মিথ্যে গুলা আমাকে বলতে হয়। দুই একবার মনের ভুলে একজনের গল্প অন্যজনকে বলে বেচারিকে বিপদে ফেলে দিয়েছিলাম। তাতে কোনো অসুবিধা নাই। ও ভালোবাসা দিয়ে ঠিক করে দিছে।
চারটা বয়ফ্রেন্ডের কাছ থেকে বিশ হাজার করে টাকা নিছে, পাঁচ নাম্বার বয়ফ্রেন্ড ফোন কিনে দিছে; সেই একটা ফোনই বাকিগুলাকে দেখাইছে। তাতেও কোনো অসুবিধা নাই।
সিটভাড়ার কথা বলে প্রত্যেকের কাছ থেকেই ১৫০০/- করে নিছে। সেসব টাকা আবার আমার বিকাশেই আসে। মিমের বিকাশ নাই, কারণ ওর এনআইডি করার বয়স এখনও হয় নাই। এই ফাঁকে আমি বিকাশের গোল্ড ইউজার হয়ে গেছি।
মিম আজ কোনটার সাথে যেন ঝগড়া করতেছে আর বলতেছে আমি এত লয়্যাল হয়ে কি লাভ হলো হৃদয়? তুমি এখনও তোমার ওই মেয়েফ্রেন্ডকে লিস্টে রাখছ?
তাতে আমার কিছু যায় আসে না। আমি দীর্ঘশ্বাস ফেলে ওর দুই নাম্বার বফের কিনে দেওয়া পিৎজ্জা খাচ্ছি।
#Fun_Post
৩.বন্ধুত্ব ভালোবাসার গল্প
তার সাথে দেখা করার কথা সন্ধ্যা ৬টায়, আমি বিকেলের ঘুমে অচেতন। ঘুম ভা’ঙ”লো ৭টায় উঠে ফোন চেক করে দেখি ৩৫টা মিস কল। তাড়াহুড়ো করে রেডি হয়ে রিকশা করে পৌঁছালাম তাঁর কাছে, ভাবলাম আজকে হয়তো আর রক্ষা নেই।
কিন্তু আমাকে অবাক করে দিয়ে সে তার ওড়না দিয়ে আমার ঘাম মুছতে লাগলো আর বললো রাস্তায় অনেক জ্যাম ছিলো? কল রিসিভ করো নাই কেন? ওহ্ তোমার তো আবার ব’দ অভ্যাস ফোন সাইলেন্ট করে রাখার। যাইহোক তোমার জন্য তোমার ফেভারিট বিরিয়ানি রান্না করেছি আমি, খাইয়ে দিবো বসো।
সেদিন আমি কোনো কথা বলতে পারিনি। থমকে গিয়েছিলাম, চুপ করে তার টানাটানা দুটো চোখের দিক তাকিয়ে ছিলাম, নিজেকে দুনিয়ার সবচেয়ে ভাগ্যবান ব্যাক্তি মনে হচ্ছিলো। তার পাশাপাশি নিজের উপর অনেক রাগ হচ্ছিলো।
তবে আমাদের ও বিচ্ছেদ হয়েছে আজ ২ বছর হলো।
সংগৃহীত
৪.শিক্ষনীয় মোটিভেশনাল গল্প
ছবিটা দেখার পর কি ভাবছেন আপনি
সেটা আমি জানি।
আপনি ভাবছেন,
এরা তাদের নির্দিষ্ট জায়গায় নেই। এরা
যেখানে আছে, সেটা তাদের জায়গা নয়।
মানে তারা ভুল জায়গায় আছে।
যদি পেন্সিলের সাথে শার্পনারটা থাকতো,
আর নাটের সাথে স্ক্রু’টা থাকতো তাহলে মানাতো।
যদি তেমনটা থাকতো তাহলে কি হতো?
শার্পনারটা পেন্সিলকে একটু একটু করে নিঃশেষ করে ফেলতো। আর নাট’টা স্ক্রুটাকে এমনভাবে পেঁচিয়ে রাখতো, নাট’টার জীবন ওখানেই আটকে যেতো। না পারতো সে সামনে যেতে, না পারতো সে পেছনে যেতে।
পেন্সিলের জীবনটা শেষ হয়ে যেতো,
স্ক্রু’র জীবনটাও থেমে যেতো।
আসলে মাঝে মধ্যে জীবনে চলার পথে আমরা যেটাকে নিজেদের সাথে মানাবে বা খাপখাবে বলে ভাবি বা গ্রহণ করি, সেটাই কদাচিৎ আমাদেরকে তিলে তিলে নিঃশেষ করে দেয়।
মাঝেমধ্যে মানানসই জিনিসটাই সবচাইতে বেমানান ও ক্ষতির কারণ। তাই মাঝেমধ্যে বেমানানের সাথে মানিয়ে নিয়ে চলতে শিখুন।
©️ মাঝেমধ্যে ভুল থেকেও দারুন কিছু হয়।।
৫.বান্ধবীর নিয়ে গল্প
ন্যুড একটা অত্যন্ত ওভাররেটেড জিনিস। বাইসাইকেল চালানোর মত। চালানো শেখার পর প্রথম দুই চারদিন ভালো লাগে। তারপর বোরিং৷ কষ্ট করে চালাতে হয়। ন্যুডও রিলেশনশিপের শুরুতে এক দুইদিন দেখতে মজা৷ একই জিনিস আর কয়বার দেখা যায় ভাই?
কিন্তু তারপরও আমরা দুইদিন পরপর প্রেমিকার কাছে এই জিনিস কেন চাই? মেয়েরা জানলে কষ্ট পাবেন, তারপরও বলছি। জাস্ট আপনাকে খুশি করার জন্য, আপনাকে মূল্যবান ফিল করানোর জন্য।
তারপরও চাইলে কত ঢং। যেন ন্যুড না, বাপের সম্পত্তির ভাগ চাইছি। নানান তাল বাহানা। শেষমেশ দেবে৷ ফেস ছাড়া দুইটা বুকের ছবি দেখে আপনার স্কন্ধকাটা ভুতের কথা মনে পড়তে পারে, গর্দান কাটা লাশের কথা মনে পড়তে পারে, ফিল আসার প্রশ্নই আসে না৷ ইন্টারনেটে এরচেয়ে কোটি কোটি জোস জিনিস আছে।
কিন্তু তারপরও একজন ছেলে হিসাবে আপনার দায়িত্ব পালন করতে হয়। এই জিনিস দেখে এমন ভাব করতে হয় যেন এইটা রানি এলিজাবেথের ন্যুড। অথবা বহু খোজাখুজি করে মাটি খুড়ে বের করা লক্ষ বছর পুরানো কোনো গুহাবাসী নারীর ন্যুড। এর থেকে মূল্যবান জিনিস আপনি লাইফে কোনোদিন পাননি। রিপ্লাই দিতে হয়, ওয়াও, উফস, আহ, কি জোস, ও এমজি, আই কান্ট কন্ট্রোল মাইসেলফ, আই এম সো লাকি, দিস ইজ বেস্ট, ইস, যদি পাইতাম….ইত্যাদি।
এমন ভাব যে এইটা দেইখাই আপনার অর্গাজম হয়ে গেছে। অথচ সত্যি বলতে আপনার দাঁড়ায় ই নাই!
সুতরাং যেসব মেয়েরা ভাবেন ন্যুড দিয়ে আপনি বয়ফ্রেন্ডকে খুশি করে ফেলছেন, কিনে ফেলছেন, তারা আপনার পেছনে ঘুরঘুর করছে এই জিনিসের জন্য, ডিয়ার আপুরা, আপনারা ভুলের স্বর্গে বসবাস করছেন৷
আপনার বয়ফ্রেন্ড যদি একটা গলাকাটা খালি গায়ের ছবি ফোনে ওপেন করে দেখে দেখে মাস্টারবেট করে তাহলে হয় তার সমস্যা আছে, নাহয় সে ক্লাস নাইনের পিচ্চি।
আমরা প্রতিদিন ন্যুড চাই, কারণ খাইছো, ঘুমাইছো, কি করো, বলতে বলতে একসময় কনভার্সেশন বোরিং হয়ে যায়। ন্যুড চেয়ে একটু কথা বলাবলি করার টপিক পাওয়া যায়, সেজন্য।
আপনি যখন ঢং করে বলেন, ‘না না, পসিবল না দেয়া!’
তখন সে রিপ্লাই দেয়, ‘প্লিজ একবার দাও। দাওনা জান৷ প্লিজ!’
এটা তার মূখস্ত রিপ্লাই। গত পরশু দেখা একই জিনিস আবার দেখার কোনো এক্সাইটমেন্ট তার মধ্যে নাই। সে ভাবতেছে, বিরাট কোহলি আজকে আইপিএলে কত রান করবে? মেসি কি গোল দেবে? আজ রাতে কি রান্না হইছে বাসায়। ইত্যাদি!
আপনার ন্যাকামি করা দেখে তার প্রায় ই বলতে ইচ্ছা করে, দিলে দে, না দিলে ঘুমা।
কিন্তু সে নিতান্তই ভদ্র এবং এখনি ব্রেকাপ করতে চাচ্ছেনা বলেই কথাটা আপনাকে বলে না। আপনাকে সে কষ্ট দিতে চায়না। আপনি যে ভুলের বাবলে বসবাস করছেন, সেটা সে ভাঙতে চায় না। আপনি জামাটা উচু কইরা নিজের একটা ছবি তুলে পাঠায়েই ডিলিট করে দিয়ে মনে মনে বিশাল কিছু করে ফেলেছেন, এটা ভাবেন। সে চায়না আপনার ভুল ভাঙুক।
সুতরাং সামান্য একটা জিনিসরে বিশাল বড় করে দেখবেন না। সে চাইলে পাঠায় দেন৷ কতদিন চায় দেখেন৷ যতদিন চায় ততদিনই আপনি ভাগ্যবতী। ইন্টারনেটে নাতাশা মালকোভার আর ড্যানি ড্যানিয়েলের পুরা ভিডিও থাকার পরও সে আপনার কাছে একটা ছবি চায়। সে আপনাকে ভালোবাসে বলেই চায়। তাকে ছেড়ে যাবেন না।