রমনা পার্কে প্রেমিকার সাথে বসে আছি আর বাদাম খাচ্ছি। এমন সময় দেখি একজন দ্বীনি ভাই আমাদের দিকে এগিয়ে আসছে। ভালো করে তাকায় দেখি আরে এটা না আমার আব্বা!
তাড়াতাড়ি প্রেমিকার ঘাড়ে থেকে হাত সরিয়ে নিয়ে আমার আর প্রেমিকার মধ্যে দুই হাত ব্যবধানে দূরত্ব বজায় রাখলাম। প্রেমিকা আমার এই হঠাৎ অবস্থান পরিবর্তন দেখে বললো ” কি হইলো এতো দূরে গেলা কেন? একটু আগেই না বললা শীত শীত লাগছে”। আমি কাচুমাচু হয়ে বললাম চুপ করে বসে থাকো, সামনে যে লোক আমাদের দিকে এগিয়ে আসছেন উনি আমার আব্বা হুজুর। উনাকে দেখেই আপাতত গলা শুকিয়ে হাত পা গরম হয়ে গেছে।তাই দূরে আসছি। আর শুনো উনি সামনে এসে কিছু জানতে চাইলে বলবা তুমি আমার স্টুডেন্ট। আমি তোমাকে কেমিস্ট্রি পড়াই। আর আব্বা হুজুর খুব ভালো মানুষ আর আমাকে খুব ভালবাসে।
এর মধ্যে আব্বা হুজুর আমাদের সামনে এসে হাজির। উনি উনার বিশেষজ্ঞ চোখ দিয়ে একবার আমাকে আর একবার আমার প্রেমিকা সোমাকে স্ক্যান করে নিয়ে সরাসরি আমাকে প্রশ্ন করলেন তুই এই পার্কে কি করিস?
আমি আমতাআমতা করে উত্তর দিলাম। আসলে আব্বা পার্ক দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ আমার এই স্টুডেন্ট দেখে বসতে বললো তাই ওর সাথে বসে বসে গল্প করছিলাম।
আমার প্রেমিকাও আমার সাথে যোগ দিল হ্যাঁ আঙ্কেল। ভাইয়াকে দেখে আমিই বসতে বললাম। তাছাড়া জারণ- বিজারণ টা এখনো ঠিকমতো বুঝি নাই। তাই ভাইয়ার থেকে আবার সেসব বুঝে নিচ্ছিলাম। তাইনা ভাইয়া?
হ্যাঁ হ্যাঁ আব্বা। ও খুব ব্রিলিয়ান্ট ছাত্রী। ওকে কেমিস্ট্রি পড়াই।একটুতেই সব বুঝে যায়। কিন্তু জারণ-বিজারণ টা বুঝে নাই। তাই এটা নিয়ে আলোচনা করছিলাম।
মানুষ হঠাৎ অদ্ভূত কোনো প্রাণী দেখলে যেভাবে তাকিয়ে থাকে। আব্বাও আমার দিকে সেভাবে তাকিয়ে আছে। আর আমি একবার আব্বার মুখের দিকে আরেকবার প্রেমিকার মুখের দিকে দেখছি।
হঠাৎ আব্বা বলে উঠলো “তুই না এসএসসি তে দুইবার কেমিস্ট্রি তে ফেইল করছিলি? ইন্টারে একবার। তুই এমন গাধা হয়ে এই মেয়েটাকে কি শিক্ষা দেস”? বন্ধুরা আজকাল প্রেমিকার সামনে বাঁশ দেয় সেটা খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার। কিন্তু নিজের বাপ যে প্রেমিকার সামনে নিজের ছেলেকে এইভাবে বাঁশ দেয় এই অভিজ্ঞতা মনে হয় আমার ই প্রথম। প্রেমিকাকে বলছিলাম আমি এসএসসি ইন্টারে দুইটাতেই গোল্ডেন এ প্লাস পাইছি। ছেলে খুব ব্রিলিয়ান্ট। জগন্নাথে কেমিস্ট্রিতে পড়ি। কিন্তু আব্বা প্রেমিকার সামনে ইজ্জতের পুরা ফালুদা করে দিয়েছে।
আব্বার এসব কথা শুনে প্রেমিকা আমার দিকে আগুনের চোখে তাকিয়ে আছে। ঠিক এমন সময় আব্বা হুজুর আমাদের মাঝে বসে গিয়ে ওকে বললো দেখো মা আমার এই ছেলে কিভাবে তোমাকে পড়ায় এটা আমার ঠিক বুঝে আসছে না। যে ছেলে নিজের পরীক্ষায় ফেল করে তার ছাত্রীর রেজাল্ট কেমন হবে সেটা ভেবেই আমার কষ্ট হচ্ছে। তুমি কিছু মনে করো না মা।
মনে মনে বলতেছি ” আব্বাহুজুর আমার হাত দিয়ে কাপড় ছিঁড়ে আবার সুঁই দিয়ে সেলাই করে। দরকার নাই আর সেলাই করার। যে বাঁশ দেওয়ার তা দিয়েই দিছেন”। ঠিক এই সময় আব্বা হুজুর এক অদ্ভুত কথা বলে উঠলেন।
আচ্ছা তোর গার্লফ্রেন্ড শিলার খবর কি যে নিয়মিত আমাদের বাসায় ঘুরতে আসতো?
আব্বার এই প্রশ্ন শুনে চোখে জোনাকি পোকা দেখতে লাগলাম। আব্বা আমার কয় কি! ওদিকে প্রেমিকা দেখি অপলক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
আমি আমতাআমতা করে আব্বাকে বললাম ” কোন শিলা আব্বাজান”? আব্বা বললেন ” আরে যে মেয়েকে আমার পকেট থেকে টাকা চুরি করে রেস্টুরেন্টে ট্রীট দিতে গিয়ে আমার হাতেনাতে ধরা খাইছিলি। যে মেয়ের বাবা আমার কাছে বিচার দিছিল তুই তার জুতা নিয়মিত মসজিদ থেকে চুরি করতিস। সেই মেয়ের কথাই বলছি।
আব্বা দেখেন পাস্ট ইজ পাস্ট। আমি এসব ভুলে গেছি।
আব্বা বললেন ” তবে মেয়েটা অনেক ভালো আছিল। দেখলেই সালামকালাম দিত।আজকাল মেয়েদের মধ্যে এসব একদম দেখা যায় না।যাইহোক, তোর বউ কল দিছিলো কইলো যাওয়ার সময় লবণ আর পিঁয়াজ নিয়ে যাইতে।
আমি তো অবাক, বিয়ে করলাম কবে আমি! কিছু একটা বলতে যাবো। এদিকে সোমা উঠে দাঁড়িয়ে আমার সামনে এসে ঠাস করে একটা থাপ্পড় দিয়ে সোজা হাঁটতে লাগলো।
আব্বা এমন সময় বলে উঠলো ” এ কেমন অদ্ভূত ছাত্রী তোর? শিক্ষক কে সম্মান দিতে জানে না”। আমি আব্বাকে কইলাম ” আপন মানুষকে বিশ্বাস করলে যা হয়”।
জারণ- বিজারণ
রিফাত আহমেদ
আমাদের সকল হাসির গল্প এখানে