ইদানীং লক্ষ করলাম পেটটা একটু বেড়েছে। হাবিজাবি খাবারের ফল। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ঘুরেফিরে পেটটাকেই দেখে চলেছি। আয়নার ভেতর দিয়েই লক্ষ করলাম পেছনে দাঁড়িয়ে আদিকা মিটিমিটি হাসছে।
তীক্ষ্ণ চোখে তাকাতেই আদিকা এগিয়ে এসে বলল,
-“তুমি এত বড় খুশির সংবাদ আমাকে দিলে না? যাই হোক আমি তো বাচ্চার মা, তাই মনে আর কষ্ট পুষে রাখলামনা।”
আদিকার কথার মাথামুণ্ডু কিছুই বুঝলামনা। কিসের খুশির খবর? কিসের মা? ভ্রু কুঁচকে তাকাতেই আদিকা বলল,
-“তুমি যে প্রেগন্যান্ট। এটা আমাকে জানাওনি কেন?”
প্রথমে আমি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলেও পরক্ষণে বুঝতে পারলাম আদিকা আমাকে ক্ষে*পাতে চাইছে। এটুকু হলেও সহ্য করা যেত৷ দেখলাম ফোন হাতে নিয়ে কারো নাম্বারে ডায়াল করছে। অপর পাশ থেকে রিসিভ হতেই আদিকা লাউড স্পিকার অন করে দিলো। বুঝতে পারলাম আমার ছোট শালিকা আছে ওপাশে। আদিকা গদগদ কন্ঠে বলল,
-“জানিস কী হয়েছে?”
ওদিকে শালিকা বুঝতে না পেরে বলল,
-“কী হয়েছে?”
আদিকা বলল,
-“আমাদের বাবু হবে। তাই এই খুশির খবর তার খালামনিকে না দিয়ে পারলাম না।”
শালিকা আনন্দের সহিত চিৎকার করে বলল,
-“আপু তুমি প্রেগন্যান্ট? আমি খালামনি হচ্ছি? আমার তো ইচ্ছে করছে এখনি তোমাকে জড়িয়ে ধরি।”
আদিকা বাঁধা হয়ে বলল,
-“আরে না, আমি প্রেগন্যান্ট না। তোর দুলাভাই প্রেগন্যান্ট।”
এ নিয়ে দুবোন অনেক হাসিতামাশা করলো। আমি কিছুই বললাম না। শুধু চুপচাপ দেখে গেলাম। কথা শেষ করে আদিকা আমার পাশে বসলো। আহ্লাদী স্বরে বলল,
-“এই শোনোনা, আমার না জমজ বাবু লাগবে। একটা মেয়ে, একটা ছেলে।”
ভেতরটা দাউদাউ করে জ্বলে যাচ্ছে। তবুও একটা দীর্ঘশ্বাস ফে*লে কিছু তাপ বর্জন করলাম না। আমাকে চুপ থাকতে দেখে আদিকা খোঁচা দিয়ে বলল,
-“কী হলো? কথা বলছো না কেন?”
হঠাৎই আমার চোখ-মুখের রং পাল্টে গেলো। চোখমুখ খিঁচিয়ে পেট চেপে বসে আছি। আদিকাকে বিচলিত দেখালো। সে উৎকন্ঠা নিয়ে জানতে চাইলো,
-“কী হয়েছে রাদিফ? এমন করছো কেন? খা*রা*প লাগছে তোমার?”
আমি কিছু সময় বিচলিত ভঙ্গিতে আমার হালচাল জিজ্ঞেস করা মেয়েটির মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে বললাম,
-“আমার ডেলিভারি পেইন উঠেছে। আমাকে তাড়াতাড়ি হসপিটালে নাও। নয়তো বাচ্চা বা আমাকে, কাউকেই বাঁচানো যাবেনা।”
আদিকা হতবিহ্বল নজরে তাকিয়ে রইলো। ভাবতে পারেনি আমি এমন কিছু বলতে পারি। মুখটাকে বাংলার পাঁচের মতো করে আলতো হাতে একটা থা*প্প*ড় বসিয়ে দিলো আমার বাহুতে।
প্রচুর পানি পিপাসা পেয়েছে। পাশেই পানির গ্লাস। আদিকা রান্নাঘরে। গ্লাসের পানি না নিয়ে তাকে ডাকলাম,
-“আদিকা তাড়াতাড়ি একটু আসো তো।”
কয়েকবার গলায় জোর খাটিয়ে ডাকার পর আদিকা এলো। জিজ্ঞেস করলো,
-“কেন ডাকলে? ওদিকে রান্না পুড়ে যাচ্ছে।”
আমি পানির গ্লাস দেখিয়ে বললাম,
-“প্রচুর পিপাসা পেয়েছে। একটু পানি দাও।”
পাশ থেকে পানির গ্লাস হাতে নিয়ে কটমট দৃষ্টিতে তাকিয়ে আদিকা বলল,
-“পাশ থেকে হাত বাড়িয়ে গ্লাসটা নিতে পারো না?”
আমি পেট দেখিয়ে বললাম,
-“একজন প্রেগন্যান্ট মানুষের জন্য পানি তুলে খাওয়া যে রিস্কি, সেটা তুমি জানোনা?”
আদিকা ফোঁস করে শ্বাস ছেড়ে দুহাত জোড় করে বলল,
-“ক্ষমা চাই। ভুল হয়েছে আমার।”
আমি হাসতে হাসতেই আরেকটা চিৎকার দিয়ে ব্যথাতুর গলায় বললাম,
-“আদিকা আমার পেইন উঠেছে। জলদি এম্বুল্যান্স খবর দাও।”
#সমাপ্ত।
#জিন্নাত_চৌধুরী_হাবিবা।