আজ ক্লাসে ঢুকে রুদ্র চুপচাপ বসে আছে। এমন সময় রহমান স্যার বললেন,আজ ভালবাসা দিবসে কোনো ক্লাস হবে না। আজ মেয়েদেরকে তোরা কি কি মেসেজ পাঠিয়েছিস সেসব পড়া হবে। তোদের সবার মোবাইল গুলা এনে আমার টেবিলের উপর রাখ।
স্যারের কথা শুনে রুদ্রের কলিজা শুকিয়ে কাঠ । তাড়াতাড়ি পকেট থেকে ফোন বের করে মেসেজ ডিলিট করতে যাবে এমন সময় স্যার হাত থেকে ফোন কেড়ে নিয়ে চলে গেলেন। তারপর একে একে সবার কাছে থেকে ফোন কেড়ে নিয়ে তার টেবিলের উপর রেখে বললেন, তোদের প্রতিভা দেখি।
রুদ্রের মনে মনে ভাবা শেষ কোন দিক দিয়ে দৌড় দিলে সুবিধা হবে। আজ আর রক্ষা নাই।
স্যার প্রথমেই রুদ্রের ফোন হাতে নিয়ে বললেন, প্রথমে তোরটা দিয়েই শুরু করি। এদিকে আয়, লক খুলে দিয়ে যা। রুদ্র ভদ্র ছেলের মতো উঠে গিয়ে ফোনের লক খুলে দিয়ে এসে নিজ বেঞ্চে বসে গেলো আর মনে মনে বিপদের দোয়া পড়া শুরু করলো।
স্যার বললেন, প্রথম মেসেজে নাম লিখা নাদিয়া।
মেসেজে লিখা,
‘ নাদিয়া, তোমাকে আমি ভালবেসে ভালবাসার তাজমহল বানাতে চেয়েছিলাম। কিন্তু রাজউক কর্তৃপক্ষ সেটা করতে দেয়নি। ওরা বলেছে ঢাকার মাটি তাজমহলের ভার সইতে পারবে না। তাই আমার বুকের মধ্যে তোমার জন্য তাজমহল গড়িয়েছি। আজকে এই ভালবাসার দিনে তোমাকে সেই তাজমহল উপহার দিলাম সোনা পাখী।
স্যার বললেন, দ্বিতীয় মেসেজে নাম লিখা বৃষ্টি।
মেসেজে লিখা,
বৃষ্টি, আমি চেয়েছিলাম তোমার জন্য দশহাজার গোলাপ কিনতে। কিন্তু কয়েকটা গোলাপের দোকানে খোঁজ নিয়ে জানতে পারলাম ভালবাসা দিবসের জন্য গোলাপের চাহিদা থাকায় ওরা আমাকে ১ হাজারের বেশি গোলাপ দিতে পারবে না। তাই ওদের দোকান থেকে রাগ করে চলে এসেছি। কারণ আমি তোমাকে এই সামান্য কটা গোলাপ দিয়ে ছোট করতে চাই না। এইজন্য কাল রাতে তোমার জন্য ১০ টা হুইল ওয়াশিং পাউডার কিনে এনেছি। কারণ এতে আছে হাজারো গোলাপের সৌরভ। ভালবাসা দিবসে আমার হুইল ওয়াশিং পাউডার থেকে ভালবাসা নিও।
স্যার বললেন, তৃতীয় মেসেজে নাম লিখা তানিয়া।
মেসেজে লিখা,
তানিয়া, তুমি চেয়েছিলে এবার যেন আমি তোমাকে একটা বিদেশি কুকুর গিফট করি। কিন্তু তুমি তো জানো। আমার দাদা ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের সাথে সরাসরি যুক্ত ছিল। তখন থেকেই আমার দাদা শপথ করেছিল আর কোনো বিদেশি জিনিস ব্যবহার করবে না। দাদার সেই শপথ আমরা আজও ভুলে যাইনি। তাই তোমার জন্য রাস্তা থেকে অনেক কষ্টে একটা দেশি কুকুর ধরে রেখেছি। আমরা যদি আমাদের দেশি প্রাণীর কদর না করি তাহলে কে করবে বলো? এটাকেই তো বলে দেশ প্রেম। আশাকরি তুমি আমার ভালবেসে দেওয়া উপহার যত্নে রাখবে।
স্যার বললেন, চতুর্থ মেসেজে নাম লিখা সুইটি।
মেসেজে লিখা,
সুইটি, গতকাল বিকালবেলা ঘুমানোর সময় স্বপ্ন দেখলাম ভালবাসা দিবস উপলক্ষে তুমি আমাকে সিম্ফনি ব্যান্ডের একটা মোবাইল গিফট করছে। অথচ তুমি জানো না শাওমি ব্যান্ডের ফোনগুলো ভালো। আমি স্বপ্নে তোমাকে অনেক বকে দিলাম। আশাকরি তুমি আর এই ভুল করবে না। আজকের এই দিনে একবুক ভালবাসা নিও সুইটি সোনা।
স্যার বললেন, পঞ্চম মেসেজে নাম লিখা লাবনী ।
মেসেজে লিখা,
আরে এটা তো আমার মেয়ের নাম্বার। তুই আমার মেয়েকেও মেসেজ দিছিস? স্যার মুখ তুলে তাকালেন রুদ্রের দিকে। অথচ রুদ্র ক্লাসে নেই। স্যার ক্লাস থেকে বের হয়ে দেখলেন রুদ্র রুদ্ধশ্বাসে পালাচ্ছে।
স্যার পিছন থেকে বললেন, তোর আব্বার কাছে যদি বিচার না দিছি নাহলে আমার নাম আবুল হায়াৎ থুক্কু রহমান না।
সবার জন্য ভালবাসা
রিফাত আহমেদ