- বিদ্যালয় নিয়ে কবিতা
- স্কুল জীবনের কবিতা
- ক্লাসরুম নিয়ে কবিতা
- স্কুল নিয়ে স্মৃতিচারণ
- স্কুল জীবনের হারানো স্মৃতি কবিতা
১.বিদ্যালয় নিয়ে কবিতা
স্কুল জীবনের কবিতা
প্রিয় বিদ্যাপীঠ
কেমন আছো তুমি?
বহুদিন দেখি না তোমায়
তোমাতে আমাতে আজ বহু দূরত্ব
তোমাতে ফিরে যাবার অপেক্ষার প্রহর গুনি।
আজ বড্ড শান্ত হয়ে আছো তুমি
নেই কোন কোলাহল,
করিডোর গুলো বড্ড ফাঁকা হয়ে আছে
শিউলিতলায় নেই কারো শোরগোল।
কেমন আছে প্রিয় ক্লাস রুম
বেঞ্চ গুলো খালি পড়ে আছে,
এখন আর কেউ আসে আড্ডা জমিয়ে দেয় না ক্লাস শুরুর আগে
বোর্ডে আর আঁকা হয় না স্বপ্ন পূরনের পথ।
লাইব্রেরী টাও আজ ফাঁকা
মেধাবী ছাত্র টাও আজ বই ছাড়া,
বকুল তলায় যাই না বহু দিন
মুখরিত পুকুর পাড় টাও আজ বড্ড একা।
কত বিশাল দূরত্ব তোমাদের সাথে আমাদের
এই ক্লাসরুম, করিডোর, চত্বর,শিউলি তলা, বকুলতলা, মাঠ, পুকুরপাড়, লাইব্রেরি
তোমরাই তো আমারদের স্বপ্ন পূরনের প্রথম পথ চলা
তোমরা ছাড়া আমরা সত্যি বড্ড একা।
প্রানের ক্যাম্পাস
কেমন আছো তুমি?
তুমি ছাড়া আমি ভালো নেই
সত্যি আমি একবিন্দুও ভালো নেই।
#কেমন_আছে_প্রিয়_বিদ্যাপীঠ
সাহেরা রাহমান বিথী
২. স্কুল জীবনের কবিতা
স্কুল ছুটি
ঘর্মাক্ত শরীর
তোমার রিক্সার পেছনে সাইকেল,
প্যাডেলের প্রত্যেক ঘূর্ণনে প্রেম!
ফিজিক্সের টিউশন
খুঁজে খুঁজে তোমার পাশের বেঞ্চ
অমনোযোগী ছাত্রের পিঠে বেত্রাঘাত,
তোমার ভীতসন্ত্রস্ত চোখে আবার প্রেম!
কাল থেকে শীতের ছুটি
দেখা হবেনা অনেকদিন
শেষ পিরিয়ডের শেষ ঘন্টা,
গগনবিদারী শব্দতরঙ্গের প্রত্যেক কম্পনে প্রেম!
আহা প্রেম!
©Kamrull
৩.ক্লাসরুম নিয়ে কবিতা
হারিয়ে গেছে শৈশব স্মৃতি স্কুল পালানো দিন
হারিয়ে গেছে বিকেলের মাঠ সুতো বাঁধা দূরবীন,
হারিয়ে গেছে কুয়াশার ভোর রঙিন সকালবেলা
হারিয়ে গেছে মিঠেকড়া রোদ ভাসানো কলার ভেলা।
হারিয়ে গেছে সন্ধ্যার উঠোন বিছানো শীতলপাটি
হারিয়ে গেছে ইট পাথরে ধুলোমাখা সেই মাটি,
হারিয়ে গেছে গোলা ভরা ধান কৃষাণের হাসি মুখ
হারিয়ে গেছে খেয়া পারাপার জলজ নদীর বুক।
হারিয়ে গেছে পাখির বাসা বিন্নি ধানের খৈ
হারিয়ে গেছে নদী ভরা মাছ; রুই চিতল আর কৈ,
হারিয়ে গেছে হৃদয়ের টান দরদী প্রতিবেশী
হারিয়ে গেছে অন্যেতে খোঁজা নিজের হাসিখুশি।
হারিয়ে গেছে রাখাল বালক বিষাদ বাশির সুর
হারিয়ে গেছে ক্লান্ত ঘুঘুর ঘুমিয়ে পড়া দুপুর,
হারিয়ে গেছে গাভীন গাইয়ের শখের কাটা ঘাস
হারিয়ে গেছে মোরগের ছানা জলজ পাতিহাঁস।
হারিয়ে গেছে ‘না এলে কেউ’ বুকের ভেতর টান
হারিয়ে গেছে একসাথে গাওয়া স্কুলের পিটির গান,
হারিয়ে গেছে কাগজের নাও বানানো উড়োজাহাজ
হারিয়ে গেছে বন্ধু সবাই নেই তারা কেউ আজ।
হারিয়ে গেছে মায়ের বকুনি সন্ধ্যার কুপিবাতি
হারিয়ে গেছে মাটির বানানো পুতুল ঘোড়া হাতি,
হারিয়ে গেছে জোনাকি পোকা খেঁক শিয়ালের ডাক
হারিয়ে গেছে শীতের দিনের অতিথি পাখির ঝাঁক।
হারিয়ে গেছে ছুটে চলা দিন ফড়িঙের পিছুপিছু
হারিয়ে গেছে ডুবিয়ে তোলা শালুক শিংড়া গিছু,
হারিয়ে গেছে বর্ষার জলে বরশি বাঁধা মাছ
হারিয়ে গেছে লুকিয়ে খাওয়া গাব আর ডাবের গাছ।
‘হারিয়ে যাব না’ বলতো যারা হারিয়ে গেছে সব-ই
হারিয়ে যাবো এই আমিটাও হারানো দিনের কবি।
কবিতা : হারানো দিনের কবি
কাব্যগ্রন্থ : আপনি আমার দুঃখ শব্দের বিসর্গ
লেখা : সালমান হাবীব
৪.স্কুল নিয়ে স্মৃতিচারণ
আমার ফটোকপি করা শিট,
আমার বাসের লাস্ট সিট,
আমার স্ক্র্যাচ পড়ে যাওয়া চশমার কাচ, সায়ানোফাইটিক ইট।
আমার চিনি বেশি দেওয়া চা,
আমার ফোনে যান্ত্রিক মা,
আমার পকেট বাঁচানো ডিম ভাজা ভাত,
মুখে হাসি বুকে ঘা।
আমার অমনোযোগী ক্লাসরুম,
আমার মগজে নষ্ট ধুম,
আমার বাহিরে বুদ্ধ ভিতরে হিটলার,
লাশের মোড়কে ঘুম।
আমার প্রেমে ডুবে থাকা নারী,
আমার বুমেরাং আহাজারি,
আমার ফেলে আসা তাজা কাজলের চোখ,
কবিতার মহামারী।
আমার বর্ষার ভাঙা ছাতা,
আমার পেইজ শেষ হওয়া খাতা,
আমার সিজিপিএ লোভে রাতজাগা পড়া,
শিমুলের ঝরা পাতা।
আমার সাধুর আসরে গান,
আমার জোড়াতালি দেয়া প্রাণ,
আমার রাজপথে ভাঙা স্লোগানের স্বর,
মিছিলের অভিযান।
আমার কলমের কালি শেষ,
আমার স্বজাতি আমার দেশ,
আমার বুদ্ধিজীবীতা ভাঙা রেকর্ডার অস্থির জম্পেশ।
আমার পিংক ফ্লায়েডের সলো,
আমার মেঘদলও খুব ভালো,
আমার আর্টসেল ব্ল্যাক শিরোনামহীন সব হাসিমুখে ছিল।
আমার ধুলোবালি জমা বই,
আমার বন্ধুরা সব কই,
আমার ভাল্লাগেনা এই মিথ্যে শহর,
রাতের আড়ালে রই।
লেখক/শিল্পী – রায়হান রাহী।
৫.স্কুল জীবনের হারানো স্মৃতি কবিতা
নভেম্বর মাসটা চলে যাচ্ছে পরীক্ষা হতে হতে। হয়তো ডিসেম্বর মাসটা ছুটিতে কাটাবো।একদিকে মনে আনন্দ লাগলেও অন্যদিকে কষ্ট হচ্ছে খুব।সারা বছরের পঠিত বই গুলো একেকটা পরীক্ষার দিন সে সে বই স্কুলে জমা দিয়ে দিতে হচ্ছে। কতটা মায়া আর ভালোবাসার স্পর্শে বুলানো তার প্রতিটা পাতা! বই গুলো নতুন দেওয়া হতো না তবুও এই বইয়ের প্রতি এতোটা মায়া-টান।
রবি ঠাকুরের লিখে যাওয়া কথার মতোই যেন পূর্ববর্তী বৎসরের যত গ্লানি মুছে গিয়ে সবে স্নান শেষে জানুয়ারী মাস এসে ঢুকলো।শহরের সড়ক ও দেয়ালে দেয়ালে বর্ষবরণ শুভেচ্ছা।বাজারমুখী দোকান গুলো সেজেছে নতুন রুপে। প্রকৃতি পেল তার নব যৌবন।আমিও বায়না ধরি নতুন ড্রেস কিংবা এটা-সেটার।নতুন বছরে নতুন ড্রেস, নতুন ক্লাস, নতুন বই। আহা! আবেগাপ্লুত হতে থাকি।
কিন্তু জানতে পারি এবছরও আমাদেরকে নতুন বই দেওয়া হচ্ছে না। বিষয়টা বরাবরই মনে আঘাত করতো।একটা বই এক বছর পড়ার পর সে বইটি কি পূনরায় পড়ার মতন অবস্থা থাকে! সবাই তো আর সেই যত্ন জানেনা।
নতুন ক্লাসরুম নতুন এক অনুভূতি। বন্ধুরা যে যার মতন আসন গ্রহণ করলাম। ক্লাসে রাখা গাদার গাদা বইয়ের স্তুপ।ছাত্র-ছাত্রীদের দ্বারা স্কুলের লাইব্রেরি হতে এনে রেখেছেন । বই গুলো বেশি পুরাতন হওয়ায় গাদাও ঠিক ঠাক হলোনা। দূর থেকে স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে কোনোটার মলাট নেই,একেকটির সামনে অথবা পিছনের কয়েকটি পাতাও ছেঁড়া বা খসে পড়েছে।আমাদের বাধ্য হয়ে এগুলো নিতেই হবে।এগুলো দেখে আমাদের ঘেন্না হচ্ছে।কোনো কোনো বছর দুই থেকে তিন বছরের পুরনো বইও আমাদেরকে নিতে হয়েছে।
স্যার দ্রুত নাম ডেকে ডেকে বই প্রদান করছেন। ছাত্র-ছাত্রীরা বই গুলো হাতে পেয়ে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে সব দেখছে। বই বিতরণ শেষে আমরা একে অন্যের কাছে জানতে চাই কে কেমন বই পেল কিংবা কে পেল কয়টা বই।দেখা যেতো কয়েকজন শিক্ষার্থীদের হাতে বই পৌঁছলেও পেতে বাকি রইলো আরও দু-একটা করে বই।হয়তো বই গুলো কোনো শিক্ষার্থী আর ফেরত দেয়নি অথবা পরবর্তী ব্যাচ-এ শিক্ষার্থী বেড়ে যাওয়ায় এই অনাকাঙ্ক্ষিত সংকট দেখা দিয়েছে। কিন্তু কেনইবা এই পুরাতন বই আমাদের নিতে হচ্ছে আর কেনইবা সংকটের মুখে পরতে হচ্ছে! কোমলমতি শিক্ষার্থীদের প্রতি কেন এমন দূরাবস্থা! কেন বেখেয়ালি দেশের সরকার!
এ ছিল বিদ্যালয়ের প্রাথমিক স্তরের অবস্থা।মাধ্যমিকের বই গুলো হয়তো বাইরের লাইব্রেরী হতে নতুন কিনতে হতো।নতুন বইয়ের ঘ্রাণ আর আনন্দে ছাত্র ছাত্রীদের মনে এক অন্য রকম প্রফুল্লতা লক্ষ্য করা যেত।নতুন বইয়ের আশায় আমরাও সেদিনটার অপেক্ষায় থাকতাম।যেন নতুন বইয়ের ছোঁয়া মিলেনা সে কতদিন!সে দিনটার অপেক্ষা করতে করতে বছর শেষ প্রান্তে।
তারপর সারাদেশে জাতীয় নির্বাচনী হাওয়া বয়লো। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দেশ চালনায় রাস্তায় রাস্তায়, অলিতে, গলিতে, সভা-সমাবেশেে, মিটিংয়ে, চায়ের ষ্টলে সমর্থকদের আরো উত্তাপ ও সরগম।সর্বস্থানেই সমর্থকদের পৃথক ভাগাভাগি। এরইমধ্যে বিদ্যালয়টির সিদ্ধান্তে ফলাফল ঘোষণা করা হয়ে গিয়েছে।স্কুল কলেজ সব বন্ধ হয়ে নির্বাচনী তফসিল হয়ে গেলো। নির্বাচনও হল।জানা যায় উক্ত নির্বাচনে ২৩০ আসনে আওয়ামী প্রার্থী শেখ হাসিনা জয়লাভ করেন এবং মাত্র ৩০ আসনে জিতে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া সংসদীয় বিরোধী নেত্রী হন।
হয়তো ডিসেম্বর মাস পুরোটাই ছুটিতে কাটিয়েছিলাম।জানুয়ারী মাস আসলো স্কুল গুলো ভর্তি কার্যক্রম শুরু করলো।আমি নতুন স্কুলে ভর্তি হলাম।নতুন সরকার ঘোষণা করলো এবার দেশের সবকটা স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীরা পাচ্ছে বিনামূল্যে নতুন বই। কি মজা! আমরা খুশি। যেন এতোদিনের লালিত স্বপ্ন নতুন বইয়ের ঘ্রান ও স্পর্শ,নতুন স্কুলের নতুন ড্রেস সবই আজ বাস্তবায়ন হতে যাচ্ছে। আমার আনন্দ আজ আকাশে বাতাসে।তখন আমি রাজনীতি কি বুঝতাম না,হয়তো এখনো বুঝি না।
কিন্তু একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব যিনি, যার হাতে দেশ দায়িত্ব-ভার তার প্রতি অগাধ আস্হা ও বিশ্বাস জন্মেছিল।সেদিন হয়তো তাকে দিয়েই চিনতে পেরেছিলাম তার পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে।চিনতে শুরু করি এক রাজনৈতিক পরিবার থেকে জন্ম নিয়ে জেল,জুলুম,অত্যাচার,হামলা-আঘাত সহ্য করেও কিভাবে মানুষের অধিকার আদায় লক্ষ্যে দিব্যি বেঁচে আছেন কিংবা আল্লাহ বাঁচিয়ে রেখেছেন একজন শেখ হাসিনা’কে। সেদিন বিশ্বাস জন্মেছিল সত্যি যে তার হাতে যতদিন দেশ,পথ হারাবেনা বাংলাদেশ।
~রোহান আহমেদ