#শিমুল ফুল
পর্ব ১৪
#জাকিয়া_সুলতানা_ঝুমুর
মুন্নী পুষ্পর সাথে ঘুমাতে আসে।তাদের সবার সন্দেহ হচ্ছে পুষ্প আবার পা*লিয়ে যায় কিনা।পুষ্প সোজা হয়ে শুয়ে আছে।মোটেই কাঁদছে না।মুন্নী পাশ ফিরে বললো,
“সবাই তোর ভালো চায় পুষ্প।আব্বা আম্মার উপরে রাগ করিস না।”
পুষ্প ভাবলেশহীন ভাবে বললো,
“রাগ করি না আপা।আমারই ভুল ছিলো।”
মুন্নী লাইট অফ করে ড্রিম লাইট অন করে।পুষ্পকে জড়িয়ে ধরে বললো,
“সাফিনরা আমার শশুড় বাড়ির মানুষ তারা যদি এসব শুনে তাহলে আমাকে খুব কথা শুনাবে বোন।তুই প্লিজ আর ওদিকে যাস না যেন।”
পুষ্প কাঠকাঠ গলায় বলে,
“যাব না।”
মুন্নী আরো কিছুক্ষন এটা সেটা বলতে বলতে একপর্যায়ে ঘুমিয়ে যায়।তার গাঢ় নিঃশ্বাসের শব্দ শুনে পুষ্প দুই ঠোঁট ফাকা করে কয়েকবার ফুপিয়ে ফুপিয়ে শ্বাস নেয় তারপর হঠাৎ করেই ঠোঁট উল্টে কেঁদে দেয়।শব্দ হবার ভ*য়ে হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরে।কাঁদছে কিন্তু শব্দ হচ্ছে না চোখ দিয়ে অনবরত পানি গড়িয়ে পড়ছে।নিঃশব্দে কান্না কি এতো কষ্ট ?আহা শিমুল,আমার পাগল শিমুলকে বুঝি পাওয়া হলো না!পুষ্পর বুকে কি যন্ত্র*ণা!মনে হচ্ছে কেউ বসে বসে সুই দিয়ে খুচাচ্ছে।তার শিমুলকে ভুলে যেতে হবে এটা ভেবেই পুষ্পর দম আটকে আসছে।ওই রাগী মানুষটাকে যে খুব ভালোবাসে।তাকে নিয়েই তো কতো স্বপ্ন দেখা হয়ে গেছে।শিমুল যদি শুনে তার পুষ্প আর তাকে ভালোবাসবে না,কাছে আসবে না তাহলে তো পাগল হয়ে যাবে।পুষ্প তো যানে রাগী মানুষটা তাকে কতোটা ভালোবাসে।পুষ্প নিজেই’তো বাঁচতে পারবেনা।পুষ্প ভাবে,’আব্বা আম্মা যদি একটু বুঝতো তাহলে আমার শিমুলকে নিয়ে সুখে সুখে জীবনটা কাটানো হতো।’
এখন কি হবে পুষ্পর?শিমুলকে ছাড়া এই জীবনে বেঁচে থেকেও লাশ হয়ে যাবে।যতোবার ভাবে শিমলকে ভুলে যেতে হবে ততোবারই বুকে ব্যাথা হয়।পুষ্প ছটফট করে বিছানা থেকে উঠে ফ্লোরে বসে দু’হাত দিয়ে চুল টেনে ধরে।সারা শরীর ব্যাথায় নীল হয়ে আছে।এতো যন্ত্রনাও সুখের হতো যদি শিমুলটা তার হতো।সারা শরীরে মরণ ব্যাথা নিয়ে পুষ্প হাতের উপর মাথা রেখে ফ্লোরেই শুয়ে পড়ে।শিমুলকে ভুলে যাওয়া অসম্ভব।বিরবির করে বললো,
“শিমুল দেখোনা আমার কতো কষ্ট হচ্ছে।তোমার ফুলটা কষ্ট পাচ্ছে।তুমি কই গো শিমুল।ওই শিমুল কিভাবে ভুলবো তোমায়?এতো ভালোবাসার মালা কিভাবে আমি ফিরিয়ে দেবো?তোমায় ছাড়া বাঁচবো না একদমই মরে যাবো।এই এতো এতো বিষব্যাথা নিয়ে তোমার ফুল বাঁচতে পারবে না।মরে যাবে দেখে নিও।”
পুষ্প জানতেও পারলো না জানালার ওপাশে তার শিমুল ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে আছে।তিয়াশ রাস্তার পাশে চুপচাপ বসে আছে।শিমুলকে অনেক চেষ্টা করছে বাড়ি নিতে কিন্তু শিমুল এই জায়গা থেকে নড়ছেই না।রাত দু’টো বেজে গেছে শিমুলের দাদা মজিব হাওলাদার কয়েকবার ফোন দিয়েছেন শিমুল রিসিভ করেনি।দুনিয়ার সবকিছু বিতৃষ্ণা লাগছে।সেই কখন থেকে শিমুলের বুকটা চিনচিন করে ব্যাথা করছে।নাকের পাটাতন ফুলে ফুলে চোয়াল হচ্ছে শক্ত।শ্বাস প্রশ্বাস চলছে দ্রুত গতীতে।হালকা কালচে ঠোঁট মৃদু কাঁপছে,গভীর চোখ দেখায় ছলছল।পুষ্পকে করা প্রতিটা আঘাত,পুষ্পর করা আর্ত*নাদ শিমুলের অন্তর পু*ড়িয়ে দিয়েছে,বুকটা হয়ে গেছে র*ক্তাক্ত।কালকে থেকে পুষ্প শুধু মা*র খেয়েই যাচ্ছে,এই এতোটুকুন শরীরে এতো মা*র সহ্য হচ্ছে?কষ্ট পাচ্ছে না?শিমুল পুষ্পদের বিল্ডিংয়ের দেয়ালে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে দাঁড়ায়।বিরবির করে বলে,
“জান তোর কি খুব কষ্ট হচ্ছে?ব্যাথা হচ্ছে?আমারো ব্যাথা হচ্ছে।তোর সব ব্যাথা আমার হোক তাও তুই কখনো ছেড়ে যা যাস।কিন্তু তুই যে বললি সব শেষ করে দিবি।পুষ্প কিভাবে বললি আমাকে ভুলে যাবি?একবারো ভাবলি না আমি তোকে ছেড়ে থাকতে পারবো না।তুইও কি মনে করিস রাগী শিমুল ভালো না?পাষাণ সন্ত্রাস!সবাই রাগী শিমুলকেই দেখে কেউ শিমুলের ভেতরের নরম তুলোটা দেখে না।মিজান শেখের উপর তার খুব রাগ হয়,এভাবে মা*রতে হয়?জোড় করিয়ে ইমোশনাল টর্চার করে ঠিকি পুষ্পর মুখ থেকে না বের করলো।শিমুল সিদ্ধান্ত নেয় কালকে সকালেই তার আব্বাকে পুষ্পর কথা বলে,মিজান চাচার কাছে বিয়ের প্রস্তাব পাঠাতে বলবে।পুষ্প ভুলে যাবে বলুক আর যাই বলুক শিমুল কি বললেই ভুলে যাবে?ছেড়ে দিবে?এতো সস্তা?এতো বছরের অপেক্ষা কি বৃথা যাবে?কখনো না তার শিমুল গাছে যে ফুল ফুটেছে তা এতো সহজে নেতিয়ে পড়তে দিবে না।শিমুল চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে থাকে একটু যদি দেখতে পেতো!শিমুল হেটে তিয়াসের কাছে যায়,
“তিয়াস দেখা করার ব্যবস্থা করে দিতে পারবি?”
তিয়াস উঠে দাঁড়িয়ে বলে,
“এখন কিভাবে দেখা করবি?এমনি কতো মা*র খেয়েছে এখন যদি তোকে দেখে তাহলে আরো মা*রবে।”
শিমুল বুঝে।কিন্তু মনটাকে বুঝাতে পারে না।এতো বড়ো ছেলের এই পাগলামি মানায় না কিন্তু সে যে প্রেমিক!প্রেমিকের বয়স দেখে তো আর পাগলামি আসে না।প্রেমিকের মন যে বড়ই অবাধ্য।ইতোমধ্যে শিমুল চার প্যাকেট সিগারেট শেষ করে ফেলেছে।বুকটা এতো পুড়ছে শিমুল হাত দিয়ে মাথার চুল খামচে ধরে।রাত তিনটার দিকে বাড়ি যায়।বিছানায় শুয়ে চোখ বন্ধ করে পুষ্পর মুখটা দেখে।শিমুল শান্ত হয়ে শুয়ে অশান্ত মন নিয়ে সকাল হবার অপেক্ষায় থাকে।
মজিব হাওলাদারের কানে মন্টু কথাটা ঠিক দেয়।সন্ধ্যায় এসে বলে,
“দাদা একটা কথা ছিলো।”
মন্টুর কথা ছিলো মানেই গুরুত্বপূর্ণ কথা।মজিব চোখ তুলে তাকালে বলে,
“শিমুল ভাইজান রাত করে খালি পশ্চিম পাড়া যায়।”
মজিব হাওলাদারের কপাল কুচকে যায়।
“কেন যায়?”
“তা জানি না।তয় আরো কয়েক দিন দেখছি।কালকে দেইখা জিগানে কয় তিয়াশের কাছে যায়।”
মজিব হাওলাদার কিছু না বলে তাকিয়ে থাকে।সারা দিন রাত শিমুল আর তিয়াশ একসাথে থাকে।এতো রাতে আবার দেখা করার কি কারণ থাকতে পারে?নাকি শিমুল মেয়ে ঘটিত কোন কিছুতে জড়িয়ে গেছে।না এবার শিমুলের বিয়ে নিয়ে আলাপ করা দরকার বয়স তো আর কম হলোনা।কয়েকদিন আগে নির্বাচনের কাজে শিমুলকে ঢাকা তাদের উপজেলার এমপি ইউসুফ আব্দুলাহ সাহেবের কাছে পাঠিয়েছিলেন।তাগড়া সুদর্শন শিমুলকে এমপির খুব মনে ধরে।কথা বার্তায় শিক্ষিতের ছোঁয়া,কথার মাঝে তেজের রেশ বিদ্যমান।এই আলাদা ব্যাক্তিত্বের অধিকারী শিমুলকে এমপির মতো লোক নিজের ভাগনীর জন্য পছন্দ করে ফেলে।মজিব হাওলাদারের কাছে ফোন করে কথাটা জানাতে দেরী করেননি।মজিব হাওলাদার যেন হাতে আকাশের চাঁদ পায়,এমপির সাথে আত্মীয়তা করা মানে এলাকায় তাদের ক্ষমতা আরো পাকাপোক্ত হওয়া।সবসময় এমপির সুনজর থাকবে।তিনি সেদিনই তার ছেলে শওকত হাওলাদারের কাছে কথাটা বলে।শওকত হাওলাদার নিজেও বেশ খুশী।এর চেয়ে ভালো সমন্ধ আর হতেই পারে না।দুজনেই ভাবলেন নির্বাচনের পরে কথা এগিয়ে নিবেন।কিন্তু এখন শিমুলের পশ্চিম পাড়ায় যাবার কথা শুনে মনে আলাদা চিন্তা দুলে যায়।মন্টুর দিকে তাকিয়ে বলে,
“পশ্চিম পাড়ায় কোন মেয়ে টেয়ে আছে নাকি?”
মন্টু খানিক ভাবে তারপর বলে,
“আছে মিজানের মেয়ে পুষ্প আর তিয়াসের বইন শিলা।”
মজিব হাওলাদার নাক সিটকে বলেন,
“আমার ভাইয়ের নজর এতো খারাপ হয় নাই যে এমন ছোট লোকের মাইয়ার দিকে নজর দিবো।উঁচু বংশের পোলা নজর থাকবো চাঁদের উপর।”
কিন্তু রাতে যখন শিমুল বাড়ি ফিরে না মোবাইল রিসিভ করে না তখন মজিব হাওলাদারের সন্দেহ হয়।
সকালে শিমুল নাস্তার টেবিলে উপস্থিত হয়।সবার খাওয়া শেষ তার আম্মা টেবিল গুছিয়ে নিচ্ছে।সারা রাত জেগে থাকার কারনে শিমুলের চোখ অসম্ভব লাল দেখায়।রাবেয়া কিছু বুঝার আগেই পিছন থেকে শিমুল মাকে জড়িয়ে ধরে।
রাবেয়া ছেলের মাথায় হাত ভুলিয়ে বললো,
“আমার আব্বা এতো তাড়াতাড়ি উঠে গেছে?”
শিমুল মাথা নেড়ে বললো,
“হুম।আব্বা কই মা?”
“ঘরেই।টেবিলে বস নাস্তা দেই।”
“এখন নাস্তা করবো না,একটা জরুরী কথা বলি শুনো।”
“কি?”
শিমুল মুচকি হাসে।মাথাটা দুলিয়ে বলে,
“মা আমি বিয়ে করবো।”
রাবেয়া বিস্ময়ে হা করে তাকিয়ে থাকে।কয়েক বছর ধরে বিয়ের কথা বললেও এড়িয়ে গেছে আর আজকে কিনা নিজেই বিয়ে করবে বলছে!উনার মুখে হাসি ফুটে উঠে।
“মেয়ে দেখবো?”
“না মা।মেয়ে পছন্দ করে ফেলেছি।”
রাবেয়া অবাক হয়ে বলে,
“কাকে?”
শিমুল মায়ের দিকে তাকিয়ে বলে,
“পশ্চিম পাড়ার মিজান চাচার ছোট মেয়ে পুষ্প।”
রাবেয়ার যেন আজকে অবাক হবার দিন।পুষ্পকে তিনি চিনে।তার বিয়ের উপযুক্ত ছেলে যে এমন ছোট মেয়ে পছন্দ করবে এটা ভাবেন নি।
“মেয়েতো খুব ছোট আব্বা?”
শিমুল মায়ের হাত ধরে বলে,
“আমরা দুজন দুজনকে পছন্দ করি মা।”
রাবেয়া চোখ বড়ো বড়ো করে তাকিয়ে ফিসফিস করে বললো,
“বলিস কি?”
শওকত হাওলাদার সাত নং ওয়ার্ডে এক সমাবেশে যাচ্ছিলেন।শিমুল তার আব্বাকে দেখে ছুটে সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।অকপটে সব কথা বলে দেওয়া শিমুলের নিজের আব্বার কাছে নিজেরই বিয়ের কথা বলতে একটু লজ্জা লাগে।মাথা চুলকে বললো,
“আব্বা একটা কথা ছিলো।”
শওকতের চোখে শিমুল খুব মূল্যবান।শিমুলের মাঝে নেতা হওতার সব লক্ষন স্ফুটিত।তাইতো নিজের হাতে গড়েছেন।শিমুল কিছু বলতে চায় শুনে সোফায় গিয়ে বসে।শিমুল সামনে দাঁড়িয়ে বলে,
“আব্বা মিজান চাচার মেয়েটাকে ভালো লাগে।”
শওকত চোখ খোচ করে বলে,
“ভালো লাগে মানে কি?”
“আব্বা বিয়ে করতে চাই।”
শওকত হাওলাদারের চোয়াল শক্ত হয়ে যায়।এমপির ভাগনির জন্য এই ছেলেকে পছন্দ করেছে আর ও কিনা পছন্দ করে ভাতের হোটেলের মালিক মিজানের মেয়েকে!অবিশ্বাস্য!ভেবেছিলেন নির্বাচনের পরে শিমুলকে সব বলবে কিন্তু তার আগেই যে ছেলে এমন ছোটলোকের মেয়েকে বিয়ে করার ইচ্ছা ব্যক্ত করে ফেলবে এটা ক্ষুনাক্ষরেও ভাবেন নি।কিন্তু এখন উল্টাপাল্টা কিছু বলে শিমুলের মতো ক্ষ্যাপা ষাড়কে রাগিয়ে নির্বাচনে ভন্ডুল লাগাতে চায় না।নির্বাচনে শিমুল না থাকলে ব্যাপক ক্ষতি।তাই মাথা খাটিয়ে বললো,
“চারদিন পরে নির্বাচন।এখন এই বিষয়ে কথা না বলে আমরা নির্বাচনের পরে কথা বলি?তোমার পছন্দ গুরুত্ব দিবো ঠিক আছে?”
তিনি এমনভাবে শিমুলকে বললেন যেন শুনে মনে হয় শিমুলের পছন্দে উনার আপত্তি নেই।শিমুলের মনটা খুশীতে নেচে উঠে।হাসিমুখে বলে,”ঠিক আছে আব্বা।”
শওকত উঠে দাঁড়িয়ে বলে,
“আর কিছু বলবে?”
“না।”
শওকত সামনে এগিয়ে যায়।তার আব্বা এই অধঃপতনের কথা শুনলে তুলকালাম করে ফেলবে।কপালে দুই ভাজ চিন্তার রেখা ঠেলে দূরে সরিয়ে দেয়।শিমুল তার আব্বার ছলছাতুরি কিছুই বুঝতে পারে না।ছুটে যায় তিয়াশের কাছে।রাবেয়া দূরে দাঁড়িয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে।
পুষ্প সারা রাত ঘুমায়নি।শুধু কেঁদেছে কিভাবে ভুলবে শিমুলকে এটাই মূল কারণ।অতিরিক্ত কান্নার ফলে চোখের পাতা ফুলে উঠেছে।সকালে চোখ বন্ধ করে বিছানায় শুয়ে থাকে।মুন্নী এসে বলে,
“পুষ্প নয়টা বাজে উঠে যা।”
পুষ্প ধরফরিয়ে উঠে বসে।নয়টা বাজে কলেজ যেতে হবে।
মুন্নী বোধহয় বুঝতে পারে।সে বললো,
“আব্বা বলেছে তুই সাপ্তাহ খানেক কলেজে না যেতে।”
পুষ্প চোখে আবার পানি জমে।কলেজে যাওয়ার পথে শিমুলকে শেষবার দেখার ইচ্ছেটা জেগে উঠেছিল।বালিশের কাছে রাখা ওরনা দিয়ে ফোলা চোখ ডলে মুছে নেয়।মুন্নী সেদিকে তাকিয়ে বলে,
“এতো কাঁদার কি আছে?এর চেয়ে ভালো বিয়ে দিবো দেখিস।”
এর চেয়ে ভালো বিয়ে!কিন্তু সেখানে তো শিমুল থাকবে না!মৌমাছির মতো উড়ে উড়ে ভালোবাসা শিখাবে না,এতো পাগল করা ভালো তো আর কেউ বাসবে না।পুষ্পর প্রথম প্রেম কলি তো সে শিমুলের নামেই লিখে দিয়ে ফেলেছে তাহলে এর চেয়ে ভালো বিয়ে দিয়ে কি হবে?পুষ্পর চোখ ভরে আবার পানি আসে।উঠে বাথরুমে যায়।বাথরুম থেকে এসে দেখে মুন্নী নেই।পুষ্প জানালা খুলে দেয়।শিমুল প্রায়ই জানালার গ্রিল ধরে দাঁড়িয়ে আহ্লাদ করে এটা সেটা বলতো,কড়া চোখে তাকিয়ে শাসন করতো।শিমুল গ্রীলের যেখানে হাত দিয়ে দাঁড়াতো পুষ্প তার হাত সেখানে রাখে।তার পাগল অসহায় মন ভাবে সে শিমুলকে ছুঁয়ে দিতে পারছে।সামনে তাকিয়ে দেখে সিগারেটের অনেকগুলো ফিল্টার এখানে সেখানে পড়ে আছে।পুষ্পর হঠাৎ করেই মনে হয় রাতে শিমুল এসেছিলো,এই সিগারেটগুলো শিমুলের খাওয়া।পুষ্প বুঝতেই পারেনি।পুষ্প বিছানায় বসে ভাবে তার জীবনটাই উল্টাপাল্টা হয়ে যাচ্ছে।তখনি মিজান হাতে রুটি নিয়ে আসে।পুষ্পর বিছানায় বসে পুষ্পর সামনে রুটি ছিড়ে মুখে তুলে ধরে।পুষ্প তার আব্বার দিকে তাকিয়ে দেখে তিনি আলতো হেসে মেয়েকে খেতে ইশারা করছে।পুষ্প ভেবেছিলো তার আব্বা বোধহয় তার সাথে আর কথা বলবেনা।কিন্তু এখন তার আব্বার মুখের হাসির দিকে তাকিয়ে মনে মনে আবার তার ভালোবাসার জীবন্ত কবর দেয়।এই জনমে বাবা হাসুক পুষ্প নাহয় কাঁদলো!
সাড়ে নয়টার দিকে শিলা আসে কানে হেডফোন লাগিয়ে।সবাইকে বুঝাচ্ছে সে গান শুনছে,আসলে গান না শিমুল ফোন দিয়ে লাইনে আছে।সে পুষ্পর সাথে কথা বলতে চায়।শিলা রোকসান বেগমের সামনে এসে এক কানের হেডফোন খুলে বলে,
“চাচী পুষ্প কি কলেজে যাবে না?”
রোকসানা মাথা নেড়ে বলে,
“না।”
“কেন?”
রোকসানা বললো,
“জ্বর ভালো হয় নাই।”
“অহ তাহলে আমি একাই যেতে হবে।দেখা করে যাই।”
এটা বলে আর কোনদিকে না তাকিয়ে সোজা পুষ্পর রুমে যায়।রোকসানাও পিছনে লুকিয়ে লুকিয়ে আসে।কাল রাতের কাহিনী তিয়াস শিলাকে বলেছে।পুষ্পর রুমে গিয়ে দেখে পুষ্প বিছানায় শুয়ে মুখের উপরে ওরনা দিয়ে রেখেছে।শিলা মুখের ওরনা একটানে সরিয়ে দেখে পুষ্প নিঃশব্দে কাঁদছে।শিলা অবাক হয়ে বললো,
“আল্লাহ কাঁদিস কেন?চোখ মুখ ফুলিয়ে কি অবস্থা করেছিস।”
মোবাইলের ওপাশ থেকে শিমুল সব শুনছিলো।
পুষ্প উঠে বসে বললো,
“তেমন কিছুনা।”
“কলেজ যাবিনা?”
পুষ্প ঠোঁট মৃদু কাঁপে।
“শিলা আব্বা বলেছে কয়েকদিন কলেজ না যেতে।”
শিমুল বলে,
“শিলা মোবাইলটা পুষ্পকে দে।”
শিলা এদিক ওদিক তাকিয়ে,পুষ্পর দিকে মোবাইলটা বাড়িয়ে দিয়ে বললো,
“নে শিমুল ভাই কথা বলবে।’
পুষ্পর মনে হলো কথা বলুক আদর আদর কথা গায়ে মেখে সব ব্যাথা জুরিয়ে নিক।পরক্ষণেই বাবার হাসিমুখের চেহারা চোখে ভেসে উঠে।নিজেকে সংযত করে মাথা নেড়ে বললো,
“না কথা বলবো না।”
শিলা বলে,
“ভাই বলছে মাত্র দুই মিনিট।”
পুষ্প কানে হেডফোন লাগিয়ে বলে,
“হ্যালো।”
শিমুল চোখ বন্ধ করে অনুভব করে।
“ভালোবাসি।”
এই যে পাগল এভাবে পাগলামি করে এটা তো পুষ্প সইতে পারে না।তারও চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করে আমিও খুব ভালোবাসি।দরজায় কারো ছায়া দেখা যাচ্ছে।তারমানে কেউ তাদের কথা শুনছে,সে গোপনে দম ফেলে বললো,
“আর কখনো ফোন দিবেন না।আজকে থেকে সব শেষ।”
শিমুল বললো,
“আমি মরে যাবো।”
পুষ্প নিজেকে শক্ত করার চেষ্টা করে বললো,
“বললাম তো।”
“সামনে এসে বল।”
পুষ্প শিমুলের সামনে কখনোই যাবে না।শিমুল তো তার মায়ার বক্স।কাছে গেলেই মায়ায় আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে নেবে।মাথা নেড়ে বললো,
“না।”
শিমুল বললো,
“জান প্রেমে এমন বাধা আসবেই তাই বলে কি হাত ছেড়ে দিতে হবে?আমরা সব বাধা জয় করে নিবো।”
পুষ্পর মন নরম হয়ে যাচ্ছে।ফুপিয়ে বললো,
“রাখি।”
শিমুল জলদি বললো,
“আমি আব্বাকে বলেছি আব্বা নির্বাচনের পরে তোমাদের বাড়িতে যাবে।”
পুষ্পর কেন জানি বিশ্বাস হয় না।
“আপনার আব্বা আপনাকে মিথ্যে বলেছে আপনাদের মতো বড়লোক আমাদের বাড়িতে আসবে না।”
“আসবে।”
“রাখি।”
“আমার লক্ষিসোনা একবার দেখা করো।তারপর যা বলবা তাই হবে প্লিজ জান।”
আহা কি আদর!এই আদর মাখা মিষ্টি কথা থেকে বঞ্চিত হতে কার ইচ্ছে করে?পুষ্প আড়চোখে দরজার দিকে তাকায় ছাঁয়াটা এখনো দাঁড়িয়ে আছে।তার বুকটা জ্বলে যাচ্ছে।এতো যন্ত্রনা যদি তার আব্বা আম্মা দেখতো তাহলে এতো কষ্ট দিতো না।সে বললো,
“আর কখনো দেখা হবে না।”
শিমুলের গলা এবার কান্নার চাপে কেঁপে ওঠে।
“ওই তুই কি চাস আমি মরে যাই?তাই চাস?”
শিমুলের কাঁপা কাঁপা গলা শুনে পুষ্পর বুকটা ব্যাথায় ফেটে যায়।
“মরে যান তারপরেও আর কখনো ভালোবাসবো না।”
শিমুল স্তব্ধ হয়ে মোবাইল কানে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে।
পুষ্প ফোনটা কেঁটে দেয়ার সাথে সাথে দরজায় দাঁড়ানো মানুষটা আস্তে করে সরে যায়।পুষ্প বালিশে মুখ গুজে ডুকরে কেঁদে উঠে।পরিস্থিতি পুষ্পকে কি নিষ্ঠুর বানিয়ে দিয়েছে।পরিবারের মুখের দিকে তাকিয়ে তার শিমুলকে কি কষ্টটা দিলো।অথচ কেউ বুঝলো না পুষ্পর ভেতরটা জ্বলে ছাড়খার হয়ে যাচ্ছে।কেউ খবর নিলো না প্রেমের ভাঙ্গনে পুষ্প নিজেই টুকরো টুকরো হয়ে যাচ্ছে।শিলা দাঁড়িয়ে দেখে চোখের জলে শেষ হয়ে যাওয়া উপন্যাসের শেষ পাতা।কিছু বলতে পারেনা মুন্নী চলে আসলে শিলা বাড়ি চলে যায়।
চারদিনে শিমুল ঘুম খাওয়া দাওয়া সব ছেড়ে দেয়।কতো ভাবে পুষ্পর সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছে।কিন্তু সব রাস্তা বন্ধ রোকসানা আঠার মতো পুষ্পর সাথে লেগে থাকে।শিমুলের চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করে।বলতে ইচ্ছে করে,”পুষ্প তোকে ছাড়া আমার দুনিয়া ভালো নেই।মরে যেতে ইচ্ছে করে,আমি মরে যাবো রে জান।তুই এমন করলি কিভাবে?বিপদে একসাথে লড়তাম,ভালোবেসে বাঁচতাম।বাঁচতে দিলি না আমাকে!”
নির্বাচনের দিন সন্ধ্যায় মুন্নী ঢাকা চলে যায়।তাকে বিদায় দিয়ে রোকসানা বাহিরে দাঁড়িয়ে ছিলো আর পুষ্প ঘরে উদাস চোখে বসে আছে।তখন পাশের বাসার চাচী এসে বলে,
“রোকসানা খবর শুনছো?চেয়ারম্যানের পোলার মরার অবস্থা।সদরের হাসপাতালে নিয়া গেছে।”
চলবে……..
(প্রেমের জ্বলন যে সইতে পারে সেই পায় প্রেমের স্বাধ।প্রেম তো সবাই করতে পারে আঁকড়ে ধরে বাচে কয়জন?)
(পুষ্পকে সবাই খারাপ বলতে পারেন কিন্তু বেচারী আসলেই অসহায়।সবার চাওয়া যে পুষ্পর কাছে।)
(প্রেমের বিষকাটা একবার যার গায়ে ফুটে সে কখনোই তা সহযে বের করতে পারে না,যদি বের করতে পারে তবে আঘাত পাওয়া যায়গা থেকে ইনফেকশন হয়ে ছড়িয়ে যায় সারা অঙ্গে।আহা কি যন্ত্রনা।এর থেকে বুঝি মরনও ঢের ভালো।)
(লিখা শেষ অনেক্কক্কক্কক্ষন আগে কিন্ত অনেক দিন পরে কারেন্ট আমার সাথে মশকারা করলো।)