#শিমুল ফুল
পর্ব ১৫
#জাকিয়া_সুলতানা_ঝুমুর
বসন্তের কোকিল তার সুরেলা কণ্ঠ দিয়ে প্রেমের বার্তা বলে বেড়ায়।পুষ্পদের নারিকেল গাছের ডালে বসে একটা কোকিল তার কুহু কুহু ডাকে চারপাশ মুখরিত করে দিচ্ছে।এই মধুর ডাক পুষ্পর মন আরো বিষিয়ে দেয়।অন্তরে কেরোসিন ঢেলে যেন আগুনের জ্বলন বাড়িয়ে দিচ্ছে।পুষ্প বাথরুমের ফ্লোরে বসে মুখে ওরনা চেপে ধরে।এটা কি শুনলো?তার শিমুলের ম*রার অবস্থা?কিভাবে হলো?কোনভাবে কি শিমুল সুই*সাইড করতে চেয়েছিলো?না তার শিমুল এতো অবুজ না তার শিমুল তো বুঝদার।আর এই দুনিয়ায় পুষ্পকে একা রেখে চলে যাবে কেন?পুষ্প ফুপিয়ে কেঁদে কেঁদে উপলব্ধি করলো শিমুলের কিছু হলে পুষ্প নিজেও মরে যাবে।পুষ্প পুরো খবর শুনেনি।রোকসানা শিমুলের কথা বলেই হয়তো আগ্রহ দেখায়নি তাই ওই চাচী ও আর কিছু বলেনি।কিন্তু পুষ্প যে শুনতে চেয়েছিলো।তার কলিজাটার কি হলো।শব্দ করা ছাড়া পুষ্প চিৎকার করে উঠে।বুক আর গলা যেন ফেটে যাচ্ছে।দেয়ালে মাথা আঘাত করে ফিসফিস করে বললো,”আল্লাহ শিমুলের জানো কিছু না হয়।শিমুলের কিছু হলে আমি মরে যাবো।আমার শিমুল।”পুষ্পর বুকে আগুন জ্বলছে।ইচ্ছে করছে ছুটে শিমুলের কাছে চলে যায়।মোবাইল করে যে খবর নেবে তারও উপায় নেই রোকসানা মোবাইল লুকিয়ে রাখে।পুষ্প নিজে নিজেই মাথা দু দিকে নাড়িয়ে বিরবির করে বলে,’আমিতো তোমাকে খুব ভালোবাসি,আমাকে ছেড়ে যেও না।’
রোকসানা পুষ্পর রুমে আসে।রুমে না পেয়ে বাথরুমে নক করে।পুষ্প গলা স্বাভাবিক করে বললো,
“আসছি আম্মা।”
পুষ্প উঠে দাঁড়ায়।চোখ মুছার সাথে সাথেই চোখ থেকে আবার পানি গড়িয়ে পড়ে।মনটাকে কোনমতেই বুঝাতে পারছেনা শিমুল ঠিক হয়ে আবার তার কাছে আসবে ।উল্টাপাল্টা চিন্তায় দম আটকে আসে।পুষ্পর ইচ্ছা করে সে নিজেও ম*রে যাক।শিমুলের কিছু হলে সে সইতে পারবেনা তার চেয়ে ভালো পুষ্পই আগে ম*রে যাক।এখন কি অবস্থায় আছে কে যানে?পুষ্প ঠোঁট কামড়ে ধরে।কিছুক্ষণ পরে জিভে
নোনতা স্বাধ পায়।ঠোঁট কেঁটে রক্ত ঝরছে পুষ্পর কোন হেলদোল নেই হৃদয়ের রক্তক্ষরণের কাছে এটা যে সামান্য!
সে চোখে মুখে পানি দিয়ে রুমে যায়।পৃথিবীর বুকে পুষ্প এখন ভিষন অসহায়,প্রিয় মানুষকে হারানোর ভয়ে কাতর।
শিমুল সোজা হয়ে শুয়ে সিলিংফ্যানের দিকে তাকিয়ে আছে।চেহারা ফ্যাকাসে দেখাচ্ছে।রাবেয়া বেগম পাশে বসে ঘুনঘুনিয়ে কাঁদছে।শিমুল মাথাটা কাত করে মায়ের মুখের দিকে তাকায়।রাবেয়া দেখে বলে,
“আব্বা তোর কি বেশী কষ্ট হচ্ছে?”
শিমুল কিছু বলে না তাকিয়ে থাকে কিভাবে বুঝাবে তার দেহের কষ্ট থেকে মনের কষ্ট বেশী গভীর।তারপরও মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে আলতো করে হাসার চেষ্টা করে বললো,
“না মা।এখন ভালো লাগছে।”
রাবেয়া শিমুলের মাথায় হাত ভুলিয়ে দেয়।তার স্বামীর উপর খুব রাগ হয়,কি দরকার ছিলো এই রাজনৈতিক কাজে শিমুলকে জড়ানোর?প্রতিটি মূহুর্তে তার বুকটা ভয়ে হাহাকার করে।শিমুল চোখ বন্ধ করে শুয়ে থাকে।গত চারদিন থেকে শিমুল ঠিকমতো খাওয়া,ঘুম,সব বাদ দিয়ে শুধুমাত্র পুষ্পর সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছে।কিন্তু কোনভাবেই যোগাযোগ সম্ভব হয়নি।এতো ভালোবাসা এভাবে ভুলে যাবে কিভাবে?শিমুল পাগলের মতো হয়ে যায়।কিন্তু এক মিনিটের জন্যও পুষ্প কথা বলেনা,কথা বলার উপায় নেই যে।নির্বাচনের দিন শিমুল সবার সাথেই একসাথে কেন্দ্রে ছিলো।তবে মন ছিলো উদাসীন।সারা গায়ে হাহাকার মেখে দাঁড়িয়ে ছিলো কেন্দ্রের বাহিরে।যখন ফলাফল ঘোষণা করা হয় তখন তার আব্বা শওকত হাওলাদার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়।সবাই যখন আনন্দ উল্লাস করছিলো তখন প্রতিপক্ষ দলের লোক শিমুলের মাথায় আর পেটে আঘাত করে বসে।রড দিয়ে মাথায় আঘাত করে আর ছুড়ি দিয়ে পেটে।শিমুল যে উদাসীন ছিলো এটা বোধহয় তারা লক্ষ করেছিলো তাইতো বলিষ্ঠ দেহের অধিকারী শিমুলকে আঘাত করার সুযোগ পেয়েছে।তা না হলে শিমুলের হুংকারে এসব চেলাপেলা পালিয়ে দিশা হারায়।মূহুর্তেই সব আনন্দ চিৎকারে পরিনত হয়।চেয়ারম্যান ছেলেকে নিয়ে ছুটে হাসপাতালে।মাথার আঘাতটা বেশি গভীর।কপালের বা পাশে পাঁচটা সেলাই লেগেছে।পেটে বেশী কাটতে পারেনি তাই একটা সেলাই করে দিয়েছে।কপালের আর পেট থেকে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে।সিটিস্ক্যান করে দেখা হয়েছে মাথার ভেতরে কোন ক্ষতি হয়নি।কালকে সকালে ডিসচার্জ দেয়া হবে।সবাই একে একে দেখা করে যাচ্ছিলো।এতো এতো কষ্টের মাঝেও পুষ্পর জন্য শিমুলের মন ব্যাকুল হলো।এই সব ব্যাথা অতিক্রম করে বুকটা পুষ্প পুষ্প করে কেঁদে উঠে।মনে মনে বললো,
“আমার এতো কষ্ট হচ্ছে জান,তুই একবারো খবর নিলিনা?”
অথচ পুষ্প সারা রাত ঘুমাতে পারলো না।কারো কাছে কোনো খবর পাওয়ার উপায় নেই,শিলার সাথে যোগাযোগের কোন ব্যবস্থা নেই।অসহায় হয়ে বসে থাকে।সেদিন দেখে ফেলার পর থেকে রোকসানা এই বাহিরের দিকের দরজায় তালা দিয়ে রাখে।তার শিমুল ঠিক আছে কিনা এটাও জানতে পারছে না।পাগলের মতো ফ্লোরে গড়াগড়ি খেয়ে কাঁদে।মাথার চুল টেনে ধরে রাখে।
সকালে মিজান শেখ নামায পড়তে যায়।রোকসানা তখনো ঘুমে কাঁদা।পুষ্প আর কোন উপায় না দেখে মনে সাহস নিয়ে একছুটে শিলাদের বাড়ির পথ ধরে।শিলা তখন ঘুমাচ্ছে পুষ্প ডেকে তুলে।এতো সকালে পুষ্পকে দেখে শিলা বুঝতে পারে,
“আমি কালকেই যেতে চেয়েছিলাম।”
শিলার কাছে এসে পুষ্প শব্দ করে কেঁদে দেয়।
“পুষ্প শিমুল ভাইয়ের কি হয়েছে?”
শিলা হাত ধরে পুষ্পকে বসাতে চায়।পুষ্প মাথা নেড়ে বললো,
“বসবো না।লুকিয়ে আসছি।শিমুল ভাইয়ের কি হয়েছে বল।ভালো আছে তো?”
পুষ্প বলতে বলতে শিলার হাত ধরে কাঁদে।শিলা তার হাতের মুঠোয় পুষ্পর হাতের কম্পন টের পায়।এই মেয়েটাই আগে শিমুলকে জমের মতো ভয় পেতো,খুব অপছন্দ করতো।আর এখন শিমুলের জন্য কতো পাগল,কতো কষ্ট সহ্য করছে।এটাই বুঝি ভালোবাসা,পাগল বানিয়ে ছাড়ে।
“ভোটার কেন্দ্রে শত্রুরা আঘাত করেছে।”
পুষ্পর মুখে খেলে যায় একরাশ ভয়,
“বেশী?”
“হ্যাঁ।ভাইয়া বললো মাথায় পাঁচটা সেলাই লেগেছে।”
“কবে বাড়িতে আনবে?”
“আজকে আনার কথা।”
পুষ্প অনুনয় করে বললো,
“আমাকে একবার দেখা করার ব্যাবস্থা করে দে প্লিজ।”
“বেচারা অসুস্থ কিভাবে দেখা করবে?ভালো থাকতে পাগলের মতো ঘুরেছে তোর সাথে দেখা করতে তুই করিসনি।”
” প্লিজ।”
“আচ্ছা।ভাইয়াকে বলে দেখি কি বলে।যদি দেখা করে তাহলে আমি তোদের বাড়িতে যাব,আর দেখা না করলে যাব না।”
“আচ্ছা।”
পুষ্প আর দেরী করেনা।শিমুল সুইসাইড করেনি শুনে মনটা শান্ত হয়।পুষ্পর শিমুল বেঁচে আছে।পুষ্প আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করে ।জলদি বাড়ি যায়,ফজরের নামায পরে শিমুলের সুস্থতায় দুই রাকাত নফল নামায পড়ে নেয়।সারাটাক্ষন জানালার ধারে বসে থাকে।কিন্তু শিলা আসে না,তাহলে কি শিমুল দেখা করবে না?পুষ্পর কষ্ট কেউ বুঝলো না।কিছুক্ষণ পরে শিলা আসে জানালা দিয়ে চুপিচুপি বলে যায়,দুপুর তিনটায় শিমুল তাদের বাড়িতে আসবে।
শিমুল তার রুমে বিছানায় শুয়ে আছে।দশটার দিকে তারা বাড়িতে এসেছে।শিমুলের মাথায় চিনচিন করে ব্যাথা করছে যার কারনে দাঁড়িয়ে বা বসে থাকা কষ্ট হচ্ছে।এই এতো এতো কষ্টের মাঝে সুখের খবর হলো পুষ্প দেখা করবে।তার পাখি নাকি পাগলের মতো কেঁদেছে।পুষ্প তার দুঃখে কেঁদেছে এটা শুনে শিমুলের অন্যরকম সুখ সুখ অনুভুতি হয়।তার খুব অসুস্থ লাগছে কিন্তু তার ফুলের ডাকে যে সারা দিতেই হবে,না হলে শান্তি পাবেনা।দুপুরে বাড়ি থেকে একপ্রকার লুকিয়েই বের হতে হলো।তিয়াস বাইক চালাচ্ছে আর শিমুল পিছনে বসে আছে।
পুষ্প দুপুরে ভাত খেয়ে চুপচাপ ঘুমানোর ভান ধরে বিছানায় শুয়ে থাকে।রোকসানা এসে পুষ্পকে ঘুমিয়ে থাকতে দেখে নিজেও গিয়ে একটু শোয়।কিছুক্ষণ পরে পুষ্প আস্তে করে উঠে বসে।চুপিচুপি পা টিপেটিপে বাড়ি থেকে বের হয়।এই প্রেম তাকে কতো সাহসী করেছে!শিমুলকে কাছে থেকে দেখার অদম্য ইচ্ছা মাথা খেয়ে ফেলছে।পুষ্প যখন শিলাদের বাড়িতে গিয়ে পৌছায় তখনো শিমুল আসেনি।পুষ্প চুপচাপ শিলার রুমে বসে।মিনিট পাঁচেকের মাঝেই বাইকের শব্দ শোনা যায়।পুষ্পর বুকটা তখন কেঁপে কেঁপে জানান দেয় সুখ পাখির আগমনের বার্তা।
শিমুল তিয়াসের রুমে বসে।তিয়াস আর শিলার রুম পাশাপাশি।তিয়াশ শিলার দরজা খুলে ওই রুমে যায় আর পুষ্প এই রুমে আসে।শিমুল পুষ্পকে দেখে উঠে দাঁড়ায়।হঠাৎ করে বুঝতে পারে পুষ্পকে দেখে তার মনটা সুস্থ হয়ে গেছে এই মেয়ের সাথে দেখা করার জন্যই কতো পাগলামি।পুষ্প দাঁড়িয়ে শিমুলকে দেখে,মাথায় বেন্ডেজ করা শিমুল তার দিকে তাকিয়ে আছে।পুষ্পর বুকটা ভরে যায়,কালকে ওই খবরটা শুনে মনটা কতো কি ভেবে ফেলেছিলো।এখন শিমুল তার সামনে দাঁড়িয়ে।পুষ্পর চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ে।তারপর ছুটে গিয়ে শিমুলকে জড়িয়ে ধরে।আহা এই বুকে এতো শান্তি কেন?দুনিয়ার সব শান্তি যেন শিমুলের বুকে জড়ো করা।পুষ্প কেঁদে কেঁদে বলে,
“আমি খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।”
শিমুল দুই হাত দিয়ে শক্ত করে পুষ্পকে নিজের বুকে মিশিয়ে নিতে চায়।তার গলার স্বরও কাঁপে।
“কেন?”
পুষ্প শিমুলের বুকে নাক ঘষে বললো,
“যদি হারিয়ে ফেলতাম।”
শিমুল অভিমানী গলায় বলে,
“ম*রে গেলেই ভালো হতো।সেদিন না বললি মরে যেতে।”
“সেটা তো মন থেকে না।”
“কই থেকে?”
পুষ্প কিছু বলেনা।শিমুলের চোখের দিকে তাকিয়ে থেকে বলে,
“আমি ভেবেছিলাম আপনি কি না কি করে ফেলেছেন।”
শিমুল পুষ্পর মুখটা উপরে তুলে বললো,
” সুই*সাইড?”
পুষ্প কিছু না বলে তাকিয়ে থাকে।
শিমুল পুষ্পর দিকে তাকিয়ে বলে,
“আমার ফুলকে রেখে সুই*সাইড করবো কেন?সুই*সাইড কোন সমাধান না।তাছাড়া আমার ভালোবাসায় আমার বিশ্বাস আছে।”
“মাথায় আর কোথায় কেটেছে।”
শিমুল টিশার্ট উঠিয়ে পেটের ক্ষত দেখায়।তা দেখে পুষ্প আবার কাঁদে। শিমুলের মাথার ব্যান্ডেজে হাত রেখে বললো,
“বেশী ব্যাথা করছে জান?”
শিমুল পুষ্পর কপালে চুমু খায়।
“সত্যি করেই বলি,এতোক্ষণ চিনচিন করে ব্যাথা করছিলো,এখন আমার ফুলটার কাছে এসেছি তো সব ব্যাথা উধাও হয়ে গিয়েছে।”
পুষ্পর চোখ দিয়ে পানি পড়ে।এই ছেলেটা এতো ভালো কেন?পাগলের মতো কেন ভালোবাসতে হবে?বেশী ভালোবাসলে যে হারিয়ে যেতে হয় এটা কি শিমুল যানে না?
“আপনার কিছু হলে আমি ম*রেই যেতাম।”
“কিছু হয়নি।”
পুষ্প ঠোঁট ফুলিয়ে তাকিয়ে থাকে,শিমুল আলতো হেসে ঠোঁট টেনে দেয়।
“শিমুল ভাই!আমরা বোধহয় আর এগিয়ে না গেলেই ভালো।”
শিমুল পুষ্পকে ছেড়ে দাঁড়ায়।
“আবার এক কথা?”
“কেউ মেনে নিবে না”
শিমুলের মাথা প্রচন্ড ব্যাথা করছে।দাঁড়িয়ে থাকা কষ্টকর সে পুষ্পর হাত ধরে বললো,
“হাত ছাড়ার জন্য তো হাত ধরিনি জান।হাত যেহেতু ধরেছি শক্ত করে ধরে রাখবো যেন আশেপাশের সব বাধা আমাদের হাতের বাধন ছাড়াতে না পারে।আমরা সবাইকে আমাদের ভালোবাসার জোড়ে মানিয়ে নিবো।তুই ছেড়ে যাওয়ার কথা বলিস না।তাহলে আমি সত্যিই ম*রে যাবো।”
পুষ্প নিজেও তো শিমুলকে ছাড়া ভালো নেই।মাথা নিচু করে বললো,
“আব্বা মেনে নিবে না।”
“আমি আছি তো।ঠিক সামলে নিবো।তুই হাত ছাড়িসনা তুই আমার শক্তি।”
পুষ্প চুপ করে শিমুলের কথা শুনে।শিমুল তার ফুলের গালে হাত রেখে বললো,
“তুই ছাড়া নিঃশ্বাস নিতে খুব কষ্ট হয় জান।তোর কষ্ট হয় না?”
পুষ্প সত্যিটা স্বীকার করে।মাথা দুলিয়ে বলে,
“খুব কষ্ট হয়,দম আটকে আসে।”
শিমুল হাসে মুখে বলে,
“ভালোবাসি রে আমার বোকা ফুলরানি।”
পুষ্প আবারো শিমুলের বুকে মাথা রেখে বলে,
“আমিও খুব ভালোবাসি।”
তারপর থেমে বলে,
“শিমুল ভাই”
শিমুল বলে,
“ভাই টাই বলবিনা তো ফিলিংস নষ্ট হয়।এখন থেকে শিমুল বলবি।এবার বল।”
পুষ্প খুব আস্তে করে বলে,
“শিমুল..”
শিমুল পুষ্পর মতো করেই আস্তে আস্তে বলে,
“কি জান।”
“আমাকে আপনার বুকে লুকিয়ে নিন না।”
শিমুল হেসে সত্যি সত্যিই পুষ্পকে বুকে লুকানোর ব্যর্থ চেষ্টা চালায়।
“আর কখনো ছেড়ে যাওয়ার কথা বলবিনা।এসব বললে আমার বুকে ব্যাথা হয়,মাথা কাজ করেনা,নিজেকে পাগল পাগল লাগে।মনে থাকবে?”
পুষ্প বলে,
“থাকবে।”
“সেদিন কি খুব কষ্ট হয়েছিলো তোর?”
পুষ্প বলে,
“কোনদিন?”
“চাচা মারলো যে।”
পুষ্প হাসে,
“আপনাকে কাছে পেতে আরো মা*র খেতেও রাজি।”
“আর কাউকে মারার সুযোগ দেবো না।”
শিমুল পুষ্পর মুখে একটা একটা করে অনেক চুমু খায়।নিঃশ্বাস যখন বেশামাল তখন পুষ্পকে বলে,
“তোকে শুধু ভালোবাসতে ইচ্ছে করে।”
পুষ্প আবেশে চোখ বন্ধ করে থাকে।এই কয়দিনের কষ্ট যেন শিমুল শুষে নিয়ে নিচ্ছে।হাত বাড়িয়ে শিমুলের গলা আঁকড়ে ধরে।সল্প হাতের জোড়ে নিজের দিকে টানে,তারপর খুবই সাহস নিয়ে এই প্রথমবারের মতো আলতো করে শিমুলের হালকা কালচে ঠোঁটে নিজের ঠোঁট ছুঁয়ে দেয়।শিমুল পুষ্পর দেয়া পরশটা অনুভব করে।চোখে চোখ রেখে তাকায়।এই ছোট একটা ছোঁয়ায় শিমুলের ভেতরে সুনামী ভয়ে যায়।ঘন চোখে তাকিয়ে থাকে।পুষ্প আজকে মোটেই লজ্জা পায় না,পা উঁচু করে আবারো চুমু দেয়।এবার শিমুল মাথা নিচু করে একটু ছুঁয়ে দেয়।পুষ্প হাত দিয়ে আরো কাছে টানে।শিমুল পুষ্পর চোখের ভাষা পড়তে পারছেনা এই যেনো অন্য নেশাক্ত চোখ।শিমুল পুষ্পর নরম ঠোঁটের মাঝে নিজেকে হারায়।বিষাদের পরের মিলন সত্যিই মধুর।পুষ্পর চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়ে উতপ্ত পানি,এই এতো এতো ভালোবাসা ছেড়ে কি থাকা যায়?শিমুলের জন্য না হয় আরো কষ্ট সহ্য করবে,এমন পাগল পুরুষের ভালোবাসা উপেক্ষা করার সাধ্য তো তার নেই।উনত্রিশ বছরের শিমুলের মনে হয়,”তার নরম ফুলের অধরের ছোঁয়ার মতো সুখকর বুঝি আর কিছুই নেই।”
তখনি শিলা দরজা ধাক্কা দিয়ে বলে,
“পুষ্প চাচী আসতেছে।বের হ।”
হঠাৎ শিলার ডাক শুনে দুজনে ছিটকে দূরে সরে যায়।তখনো তৃপ্তির রেশ দুজনের মুখে।শিমুল পাগলকরা চোখে তাকিয়ে থাকে।
পুষ্প শিমুলের দিকে তাকিয়ে আবার জড়িয়ে ধরে।
“আপনাকে ছাড়া বেঁচে থাকতে হলে যেন আমার মরণ হয়।”
শিমুল বললো,
“আমাকে নিয়েই বাঁচবি তুই।আর মরতে তো তোকে হবেই সুখের মরণ।”
পুষ্প লজ্জায় মাথা নামিয়ে বলে,
“ঠিক মতো ওষুধ খাবেন।”
“আচ্ছা।”
পুষ্প চলে যেতে নিলে শিমুল আবারো পিছন থেকে আঁকড়ে পুষ্পর পিঠ তার বুকে মিশিয়ে নেয়।
“আবার কবে দেখা করবি?”
“জানিনা।”
শিলা তাড়া দিলে পুষ্প বেড়িয়ে যায়।শিলার টেবিলে বসে দুইজনে খাতা হাতে নেয়,এমনভাব যেন লেখাপড়া করছে।
রোকসানা দ্রুত গতিতে শিলাদের বাড়িতে আসে।ঘুম ভেঙে পুষ্পকে না পেয়ে কলিজা মুচড়ে উঠেছে।তারপরই ছুটেছে শিলাদের বাড়ি।শিলার টেবিলে দুজন বসে আছে।
“পুষ্প।”
চলবে…….
❝বললাম না ভালোবাসার বিষাক্ত কাটা একবার ফুটলে আর ছাড়ানো যায় না।❞
❝প্রেমের মাতাল ছোঁয়ার মতো অনুভূতি আর কিছুই নেই,তখন ভালো মন্দ বিচার করার সময় বা ইচ্ছা কোনটাই থাকে না।”
❝বাথরুমে কেঁদেছেন?❞
(আজকে কি লিখেছি যানি না,চাল,দাল,সবজি মিশিয়ে সবজি খিচুরি বানিয়ে ফেলেছি।সরি অল।)
❝মন্তব্য করে যাবেন।❞