#শিমুল ফুল
পর্ব ২
#জাকিয়া_সুলতানা_ঝুমুর
“মনেরও বাগানে ফুটিলো ফুল রে রসিক ভ্রুমর আইলো না ফুলের মধু খাইলো না।”
পুষ্পর মন খারাপ এই মন খারাপ কাটানোর জন্যই শিলা আউলাঝাউলা গানের কলি গাইছে।হিজল গাছের নিচে এসেই শিলা চুপ হয়ে যায়।শিমুল ভ্রুকুচকে তার দিকেই তাকিয়ে আছে,শুনে ফেললো না তো?পুষ্প আর শিলা মাথা নিচু করে চলে যায়।কিছুদূর গিয়ে শিলা বললো,
“আচ্ছা এই শিমুল ভাইয়ের কাহিনী কি রে?”
পুষ্প কপাল কুচকে বললো,
“কিসের কাহিনী?”
“এই রাত বারোটায় দেখা করার মানে কি?”
পুষ্প নিজেও এর মানে বের করতে পারছেনা তাই মাথা নেড়ে বললো,
“আমি জানি না।”
শিলা বললো,
“পুষ্প এমন নয় তো,শিমুল ভাই তোকে পছন্দ করে।”
শিলার কথা শুনে পুষ্পর চোখের তারায় খেলে যায় একরাশ ভয়।এমনটা সে কখনো ভেবেই দেখেনি।আর আধো কি সম্ভব?
“কি বলিস উল্টাপাল্টা কথা?উনি কিভাবে আমাকে পছন্দ করবে?”
“তুই একটা গাধী কিছুই বুঝিস না।”
“কি বুঝবো?”
শিলা পুষ্পর হাতে ধরে বললো,
“ছেলেদের চোখের দিকে তাকালেই বুঝা যায়।তাহলে তুই কেন বুঝিস না।”
পুষ্প মাথা নেড়ে বললো,
“আমি কখনো উনার চোখের দিকে তাকাই না।ভয় লাগে।”
“তাহলে কখনো বুঝতেও পারবি না।ছেলেদের মুখে থাকে এক কথা চোখে থাকে আরেক কথা।”
পুষ্প চুপ করে ভাবে কিছু বলেনা।
শিলা’ই আবার বলে,
“আজকে কলেজ থেকে আসার পথে দেখবি।”
পুষ্পর মন দুলে উঠে ভয় ভয় বাতাসে।সে সিদ্ধান্ত নিলো আজকে দেখবে।দুপুরে তিয়াশ কলেজে এসে শিলাকে নিয়ে যায় মামার বাড়ি যাবে বলে।পুষ্প সারাদিন এটাই ভাবে আসলেই কি শিমুল তাকে পছন্দ করে?একা একা শিমুলের সম্মুখীন হতে খুব ভয় হচ্ছে।হিজল গাছের কাছে গিয়ে দেখে আজকে শুধুমাত্র শিমুল বসে আছে।পুষ্প যেতে যেতে শিমুলের দিকে তাকায়,দুজনের চোখ একসাথে মিলে যায়।শিমুলের চোখের ভাষায় নেই কোন রুক্ষতা,সেখানে ফুটে আছে মুগ্ধতা যা খুবই স্পষ্ট।পুষ্পর কচি মন কেঁপে ওঠে,অন্তরে দোলা দেয় বন্য বাতাসের মাতাল হাওয়া।জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে আবার পিছন ফিরে তাকায়,শিমুল উঠে দাঁড়িয়ে চট করে পা ফেলে প্রায় তার কাছে চলে এসেছে,পুষ্প জলদি চলে যেতে চাইলে শিমুল সামনে এসে দাঁড়ায়।পুষ্প শ্বাস ঘন হয়ে আসে বুকের কাঁপন বাড়ে যদি তার সন্দেহ’ই ঠিক হয় তাহলে?না আর ভাবা যাচ্ছে না।দম আটকে আস্তে করে বললো,
“বাড়ি যাব।”
শিমুলের কন্ঠে আজ বসন্ত বাতাসের রেশ লাগানো দোলা।কিন্তু বসন্তের কোকিল যে তার দিকে না তাকিয়ে আশেপাশের পরিবেশ দেখতেই ব্যাস্ত।কেন তাকায় না?পাখির মনেও কি বসন্তের দোলা লেগেছে?তাই কি বন্দী হতে এতো আপত্তি?মাতাল মাতাল চাহনিতে মাদকতা মিশিয়ে বললো,
“এতো তাড়া কিসের?আগে আমার দিকে তাকা।”
পুষ্পর চোখের পাতা ভারি হয়ে আসে।শিমুলের কন্ঠে কোমলতা এই প্রথম শোনা হলো তা শুনেই অবুজ মন ক্ষনে ক্ষনে কেঁপে উঠছে।পুষ্পর সন্দেহ ঘোরতর হয়,কিন্তু এতো বড়ো শিমুল কিনা তাকে পছন্দ করে?
শিমুলই আবার ডাকে,”দেখ।”
পুষ্প মিনমিন করে বললো,
“কি দেখবো?”
শিমুল সহজভাবেই বললো,
“আমাকে।”
পুষ্প মাথা তুলে তাকায়।ভয়ে , অসস্থিতে গলা শুকিয়ে আসছে।শিমুলের শান্ত,চুপচাপ মুখটা আজকে অন্যদিনের চেয়ে আলাদা,এমন আলাদা শিমুলকে সে আগে কখনো দেখেনি কিংবা দেখার চেষ্টাই করেনি।শিমুল মাথা দুলিয়ে বললো,
“শরীর ভালো লাগছে।”
পুষ্প মাথা দুলায়।
“তোর ফোন নাই।”
“না।”
“ফোন চালাবি?”
“না।”
শিমুল হাসে।
“আচ্ছা সকালে শিলা একটা গান গেয়েছিলোনা ওইটা আবার গা তো।”
শিলার বলা গানটা পুষ্প পারে কিন্তু শিমুলের কাছে কিভাবে এমন একটা গান গেয়ে শুনাবে।কোন ছেলেকে গান গেয়ে শোনানোর কোন অভিজ্ঞতা পুষ্পর নেই আর যদি হয় এমন গান আর শ্রোতা স্বয়ং শিমুল তাহলে জীবনেও না।মাথা নেড়ে বললো,
“আমি পারি না।”
শিমুল যেন জানে পুষ্প গানটা পারে।জোড় দিয়ে বললো,
“তাড়াতাড়ি গা।”
অনেক অনুনয় বিনয় করেও কোন লাভ হলো না।শিমুল গান শুনবেই,গান না গেয়ে এখান থেকে যেতে দেওয়া হবে না।কেউ দুজনকে একা একা কথা বলতে দেখলেই সমস্যা হবে।পুষ্প চোখ খিচে বন্ধ করে।খুব আস্তে করে গায়,
“মনেরই বাগানে ফুটিলো ফুল রে রসিক ভ্রুমর আইলো না।”
পুষ্প এতোটুকু বলেই থেমে যায়।থামে না শিমুলের বেপরোয়া ইচ্ছা,সে ঠোঁট চেপে হেসে বলে,
“তারপর?”
পুষ্পর লজ্জা লাগছে।হঠাৎ করেই যেন শিমুলকে বেশ লজ্জা লাগছে।দম আটকে বললো,
“ফুলের মধু খাইলো না।”
শিমুল দুই হাত পকেটে ডুকিয়ে একপা এগিয়ে বলে,
“আচ্ছা!এই গানটার মানে বুঝিস?”
পুষ্প আর এক মূহুর্ত দাঁড়ায় না।এক দৌড় দেয় বাড়িতে।শিমুল যে এতো লজ্জা দিবে এটা তার কল্পনার বাহিরে ছিলো।
শিমুলের মুখে আজ বিস্তর হাসি।যে মেয়ে কখনো চোখ তুলে তাকায় না সে কিনা চোখে চোখ রাখলো আবার ফিরেও তাকালো।বুকে শিরিশিরানির দল লুটুপুটু খায়।অপেক্ষার প্রহর তবে শেষ হচ্ছে?আচ্ছা গানটার মানে কি পুষ্প জানে?শিমুল হাসে জিতে যাওয়া হাসি।বাড়িতে পুষ্পর ব্যাপারে কেউ জানে না,জানলে ঝড় বয়ে যাবে এটা শিমুলের জানা কিন্তু তার মন তো কোন ঝড় তুফানের পরোয়া করে না,মনটা যে বড়ই অবাধ্য,স্রোতের বিপরীতে চলতেই পছন্দ করে।এই অবাধ্য অশান্ত মন নিয়ে শিমুল খুব যন্ত্রনায় আছে,যখন তখন পুষ্পকে কাছে পাবার আকাঙ্ক্ষায় শরীরকে বিষিয়ে তুলে কিন্তু শিমুলের পাখি যে এখনো ছোট্ট বাবুইসোনা।তার যে এখনো লাল নীল বিষব্যাথার সাথে পরিচয় হয়নি।তখন মনটা খেকিয়ে বলে,”পরিচয় হয়নি তো কি হয়েছে? তুই পরিচয় করাবি,বুঝাবি,শিখাবি ,স্বাধ লাগিয়ে নেশা বাড়াবি।”
শিমুল তখন মুচকি হাসে।পাগলামির বয়স তার হয়েছে,পুষ্পর হয়নি।কিন্তু ইদানীং পুষ্প যেন তরতরিয়ে বড় হয়ে গেছে,চোখে লাগার মতো।আর আজকে বাবুই নিজেই চোখে চোখ রেখেছে,শিমুল তার মনে উল্টাপাল্টা ঝড় লাগিয়েই বাড়িতে যায়।
একতলা বাড়ির বারান্দায় যাওয়ার পরেই ছুটে এসে ছন্নছাড়া বালিকা শিমুলের বুকে ঝাপিয়ে পড়ে।শিমুল চোখ বন্ধ করে নেয়।
চলবে…..
❝দেখা যাক ধ্রুবর থেকে শিমুল ভালো শিক্ষক হতে পারে কিনা❞