#শিমুল ফুল
পর্ব ২৫
#জাকিয়া_সুলতানা_ঝুমুর
সুইটি রুমে গিয়ে হাত পা ছুড়ে নাচে ।পেশকারা আর আসমা বলে,
“কাজ হয়েছে?”
সুইটি চুল বাধতে বাধতে বলে,
“হবে না আবার!সবাই হা করে তাকিয়েছিলো।”
পেশকারা বিগলিত হয়ে হাসে।মজিব হাওলাদার ভোরেই বলেছিলো গ্রামের গণ্যমান্য লোক আর মেম্বাররা আসবে।দুই জামাই বউ মিলে এই বুদ্ধি করে যে উনাদের সামনে এমন কাজ করবে যে উনারা খারাপ বলবে আর কোন একটা উপায় বের করে শিমুলের সাথে সুইটিকে বেধে দেবে।পেশকারা সুইটির মাথায় হাত ভুলিয়ে বলে,
“তুই চিন্তা করবি না।শিমুলের রুমে তোকে পার্মানেন্ট থাকার ব্যবস্থা আমি করবো।”
সুইটি মাথা নেড়ে বললো,
“আচ্ছা।”
তারপর তিনজন বাহিরের দিকে কানপাতে কে কি বললো এটা শুনার জন্য।
শওকত চেয়ারম্যান তার আব্বার দিকে তাকায়।মজিব হাওলাদারের মুখে চোরা হাসি কিন্তু অবাক হওয়ার বান ধরে আছে।গ্রামের এক প্রবীণ মাতব্বর বলেন,
“চেয়ারম্যান সাহেব আপনি গ্রামের গণ্যমান্য মানুষ হয়ে যদি এমন দৃশ্য আপনার ঘরেই থাকে তাহলে কিভাবে হয়?”
শওকত এমন পরিস্থিতি আশা করেনি।তিনি আমতা-আমতা করে।
আরেকজন বলে,
“আপনি থাকতে এসব অনৈতিক কাজ কিভাবে হয়?”
রাবেয়া চা নিয়ে আসে।আলতো করে হেসে বললো,
“ভাইসাব তেমন কিছুনা।আসলে ও আমার ননদের মেয়ে আমিই শিমুলকে ডাকতে পাঠিয়েছি।আপনারা এসেছেন শিমুলের আসা উচিত তাই ডাকলাম।আপনারা কি বলেন এসব?সুইটি তো শিমুলের বোন।আর আমার শিমুলের তো মিজান ভাইয়ের মেয়ের সাথে সাপ্তাহ খানেক আগে বিয়ে হয়েছে।জানেন হয়তো আপনারা।”
শওকত আর মজিব হাওলাদার হা করে রাবেয়ার কথা গিলে।মহিলার কতো বড়ো সাহস পুরুষের মজলিসে এসে গলা বাড়ায়।উপস্থিত সবাই রাবেয়ার কথা বুঝে।তখনি শিমুল বেরিয়ে আসে।সবার সাথে হালকা পাতলা কথা বলে।সবাই প্রয়োজনীয় কথা বলে চলে যায়।শওকত হাওলাদার ফুসে রাবেয়ার কাছে যায়।
“বাহিরের মানুষের সামনে কথা বলার সাহস কই থেকে আসে?”
রাবেয়া শওকত হাওলাদারের দিকে তাকায়।সবসময় ভয় পেয়েছে কিন্তু যখন ছেলের চরিত্র নিয়ে কথা হয় তার বাবার সামনে যেখানে কিনা বাবাই চুপ।তখন রাবেয়া চুপ থাকতে পারেনা।
“আমার ছেলের চরিত্র নিয়ে কথা হচ্ছে আর আমি চুপ থাকবো?”
“তুমি বেশী বেড়ে গেছো।”
“ছেলের ভালোর জন্য না হয় এতোটুকু বাড়লাম।”
শওকত হাওলাদার আর কিছু বলার আগে শিমুল কাছে আসে।গম্ভীর গলায় বললো,
“আব্বা।পুষ্পকে আজকের মধ্যে বাড়ি আনবো।ব্যবস্থা করেন।”
শিমুলের কথা শুনে শওকত হাওলাদার চোখ পাকিয়ে তাকায়।
“এখন সম্ভব না।”
“আপনার ভাগনী যে এসব অসভ্যতামি করছে দেখেন না?আমার বউ এনে দেন।”
পলাশ রুম থেকে বেরিয়ে নাস্তা খেতে যাচ্ছিলো ভাইয়ের কথা শুনে বললো,
“আব্বা,যেহেতু বিয়ে হয়ে গেছে আমাদের মানুষ অন্য জায়গায় রেখে কি লাভ?মিজান চাচারে বলে দেন আজকে সন্ধ্যায় অমরা যাবো।”
পলাশের কথা শুনে শওকত হাওলাদার পলাশের দিকে তাকায়।
“এখন এসব সম্ভব না।”
শিমুল ত্যাড়া গলায় বললো,
“কেন?আজকের মধ্যে পুষ্পকে ঘরে আনবো আর এটাই ফাইনাল।ভাইয়া বুঝাও।”
পেশকারা এসে বলে,
“শিমুল ঠিকই তো বলেছে।তুই রাজি হয়ে যা।”
তারপর শিমুলের দিকে তাকিয়ে বললো,
“ভাই তুই টেনশন করিসনা আজকেই বউ আনা হবে।”
মজিব হাওলাদারও মত দেয়।সবাই যখন মত দিচ্ছে তখন শওকত হাওলাদার আর কিছু বলার রাস্তা পেলেন না।ছেলের পাগলামি ইতোমধ্যে দেখেছে,ওই এক পয়সার মেয়ের জন্য তো আর ছেলের ক্ষতি কামনা করা যায় না।শিমুল তার যত্নে গড়া সৈনিক পুষ্পর জন্য তো শিমুলকে হাতছাড়া করা যাবে না।পুষ্পকে না হয় এই বাসায় এনে শায়েস্তা করবে।শিমুলের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললো,
“যা তোর আম্মাকে নিয়ে শপিং করে আন।নতুন বউ তো আর এমনি এমনি আনা যাবে না।”
সবাই শওকতের কথা শুনে অবাক হয়।শিমুল হঠাৎ করে তার আব্বাকে জড়িয়ে ধরে,
“ধন্যবাদ আব্বা।”
শওকত মনে মনে পুষ্পকে নিয়ে ছক কষে।এমনভাবে খেলতে হবে যেন সাপও মরে লাঠিও না ভাঙ্গে।তখনি ফোন করে মিজান শেখকে জানিয়ে দিলেন আজকে বউ নিতে আসবে।
সুইটি ডাইনিংয়ে বসে আছে শিমুল গিয়ে বললো,
“তোকে এক বদনা ধন্যবাদ।তুই সকালে এই কাজটা না করলে আমার বউ আনা আরো দেরী হতো।তুই সহজ করে দিলি।আয় আজকে আমার বিয়ে উপলক্ষে তোরে একজোড়া স্পঞ্জের স্যান্ডেল কিনে দেই,বাথরুমে ব্যবহার করিস।আয় আয়।”
শিমুল এটা বলে তার আম্মাকে নিয়ে শপিংয়ে যায়।সুইটি নাক ফুলিয়ে তার নানুর দিকে তাকায়।পেশকারা চোখের ইশারায় সুইটিকে আশ্বস্ত করে।
পলাশ আজকে একটু তাড়াতাড়িই কলেজে যাচ্ছে।সারারাত ঘুম হয়নি চোখ ভিষণ জ্বলছে।আজকে কলেজে তাড়াতাড়ি যাওয়ার কারন হচ্ছে নিধি।কালকে নিধিকেই প্রিন্সিপাল স্যারের সাথে দেখেছিলো,নিধি বাংলা শিক্ষক হিসেবে জয়েন করেছে।নিধির আসার ব্যাপারটায় পলাশ বেশ অবাক হয়েছে,সাথে প্রিয় কাজলচোখ দেখতে পেয়ে খুশীও হয়েছে।পলাশ এগিয়ে এসে কথা বলার চেষ্টা করেছে কিন্তু নিধি সবার সাথে কথা বলে বাসায় চলে গেছে।নিধিকে আবার দেখতে পেয়েই পলাশের হৃদস্পন্দন বেড়ে গেছে।বুকের আগুনে তুশ পড়ে জ্বলেছে দাউদাউ করে।পলাশ সারারাত ঘুমাতে পারেনি।কলেজে গিয়ে দেখে নিধি অফিস-রুমে বসে আছে।নিধির সামনে যেতে পলাশের লজ্জা লাগছে।তারপরেও পলাশ সামনে এগিয়ে যায়।নিধির কাছে বসে বললো,
“কেমন আছো নিধি?”
নিধি কোন কথা না বলে উঠে চলে যায়।পলাশ সেদিকে তাকিয়ে তার চোখ ছলছল করে উঠে।সে কখনো কাউকে নিজের ব্যাথাটা বুঝাতে পারলো না।বুকের চাপা কষ্ট কেউ দেখলো না।
শিমুল পুষ্পর জন্য লাল টুকটুকে একটা শাড়ি কিনে।তার ফুলকে আজকে লাল রঙে দেখবে যদিও কালকে দেখেছে কিন্তু আজকে তো নিজের কাছে নিয়ে আসবে।শিমুলের বুকটা খুশীতে কেমন কেঁপে কেঁপে উঠে।তার আম্মা আর তিয়াসকে নিয়ে শপিং শেষ করে।
মিজান শেখের কাছে চেয়ারম্যান যখন মেয়ে নেয়ার কথা বলে তখন উনার বুকটা কেঁপে ওঠে।ঘরের অবস্থা এখন এমন যে রোকসানা ,মুন্নী,পুষ্প সবাই কাঁদছে।মিজান মেয়ের কাছে এসে বসে।মেয়েটা লেখাপড়ায় খুব ভালো,পুষ্পরও ইচ্ছা ছিলো অনেক পড়বে মিজান শেখও মানা করেনি মেয়ের ইচ্ছামতো পড়াবে বলে কতো বিয়ের সমন্ধ নাকোচ করেছে তার ইয়োত্তা নেই।কিন্তু কি থেকে কি হয়ে গেলো?যেই বাবা মেয়ের মাঝে নিজের মাকে খুঁজে পেতো সেই মেয়েকেই মে//রেছে।এখন পুষ্পকে চেয়ারম্যান বাড়িতে নিয়ে যাবে বলাতে মিজান শেখের কলিজা কাঁমড়ে উঠে,মেয়েটাকে যে খুব ভালোবাসে।পুষ্পর দিকে তাকিয়ে পুষ্পর মাথায় হাত ভুলিয়ে দেয়,কিন্তু কিছু বলতে পারে না,কান্নায় গলা আটকে আসে।বাবার স্পর্শ পেয়ে পুষ্প ঠোঁট উল্টে কেঁদে দেয়।এটা ঠিক তার মন শিমুলের কাছে যেতে চায়,সবসময় শিমুলের সানিধ্যে থাকতে চায় কিন্তু এখন যখন বাবা মাকে ছেড়ে যাবার কথা এসেছে পুষ্পর বুকটা পুড়ছে।মিজান শেখ উঠে চলে যায়।বিয়ে যেহেতু হয়ে গেছে আর অভিমান রেখে কি হবে?মেয়ে তো শশুড় বাড়ি পাঠাতেই হবে।উনারা সন্ধ্যায় আসবে।মিজান শেখ আয়োজনে লেগে পড়ে।
সন্ধ্যার দিকে শিমুল গাড়ি নিয়ে আসে।আসার আগে অবশ্যই বাসর সাজিয়ে এসেছে।তিয়াসের এই নিয়ে কি হাসাহাসি।
“সালা কেউ কি নিজের বাসর নিজে সাজায়?”
শিমুল তখন সাজাতে ব্যস্ত।হেসে হেসে বললো,
“বিয়ে একবার,বাসরও একবার।নিজের মতো না সাজালে দেখে তৃপ্তি আসবে না।”
“সবাই কি ভাবছে বল তো?”
“সবাই কি ভাববে এটা ভাবতে গেলে তো হবে না।আমার ফুলকে আমি ফুলের রাজ্যে এনে বসাবো।”
সাজানো শেষ হলে তিয়াশ শিমুলের হাসিখুশী মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে।ভালোবাসার পূর্নতা আসলেই সুন্দর।
রাত নয়টার দিকে পুষ্পকে নিয়ে আসা হয়।রোকসানা কেঁদে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে আহা মেয়েটাকে কতো মে/রেছে কতো মন্দ কথা বলেছে এখন তো চলে যাচ্ছে।পুষ্পরও অবস্থা খারাপ।গাড়িতে শিমুল পুষ্পর মাথাটা টেনে তার কাধে নেয়।শিমুল হাসে ফিসফিস করে বলে,
“আমার কাছে যাওয়ার জন্য যে তুমি এতো কান্না করবে আমি জানতামই না।”
পুষ্প কিছু বলেনা।বাবা মাকে ছেড়ে এসেছে মন খারাপ লাগছে।পুষ্পর চুপ থাকা দেখে শিমুল বললো,
“আচ্ছা কেঁদো না।তুমি কাঁদলে ভালো লাগে না।”
পুষ্প চারদিকে তাকায়।সবসময় বাহির থেকেই চেয়ারম্যান বাড়ি দেখেছে কখনো ভেতরে আসেনি,আজকেই প্রথম ভেতরে আসলো,পুষ্পর মনে হলো সে যতটা ভেবেছে শিমুলরা তার থেকেও বেশী ধনী।কেন জানি চারিদিকে এতো দামী জিনিসপত্র দেখে পুষ্পর হাফসাফ লাগে।সেদিনতো ভেবেছিলো মরেই যাবে সব শেষ কিন্তু আজকে সে এই বাড়ির বউ।বাহিরে ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি নামে।পুষ্পর মনে পড়ে তার মা বলতো বিয়ের দিন রাতে বৃষ্টি হলে নাকি বউ ভাগ্যবতী হয়।পুষ্পও কি ভাগ্যবতী?সে তার ছোট এই জীবনে শিমুলকে পেয়েছে এর চেয়ে বড়ো ভাগ্য আর কি হতে পারে! পুষ্প একা ড্রয়িংরুমে বসে আছে আশেপাশে কেউ নেই,কেউ নেই বললে ভুল হবে একটা পনেরো বছরের মেয়ে ঘুরঘুর করছে,পুষ্প আগে রাস্তায় এই মেয়েকে একবার দেখেছিলো কিন্তু পরিচয় জানে না।পুষ্পর মনটা শুধু শিমুলকে খুঁজে একবার এসে মুচকি হেসে ফিসফিস করে বলে গেছে একটা মিটিং আছে,যেতে হবে।জরুরী নয়তো আজকে শিমুলকে কেউ নড়াতে পারতো না।এই মানুষটাকে দেখলেই শান্তি লাগে।
রাবেয়া এগিয়ে আসে।পুষ্পর কাছে বসে পুষ্পর হাত ধরে।মেয়েটাকে তার ভিষন পছন্দ হয়েছে।প্রথম বউ বলেই কিনা পুষ্পকে খুব আপন লাগছে।
“পুষ্প আমি শিমুলের মা।”
পুষ্প রাবেয়াকে চিনে।তারপরেও পরিচয় দেওয়াতে সালাম করে।রাবেয়া আলতো হেসে গলার হার খুলে পুষ্পকে পড়িয়ে দেয়।
“তুমিও আমাকে মা বলে ডাকবে পুষ্প।আমার মেয়ে নেই তো মেয়ের মুখে মা ডাক শুনার খুব ইচ্ছে।তুমি কথায় কথায় আমাকে মা বলবে।ঠিক আছে?”
উনার কথার ধরনে পুষ্পর চোখ ভিজে উঠে।আসলেই উনার থেকে স্নেহের ঘ্রান পাওয়া যাচ্ছে।উনার চাহনিতে কেমন আপন আপন ছোঁয়া।কথায় ছেয়ে আছে সরলতা।
“ঠিক আছে মা।”
“শিমুল আর তোমার কি অবস্থায় বিয়ে হয়েছে তা তো জানোই।পরিবারের বাকি সবার মেনে নিতে একটু সময় লাগবে।তাদের কোন কথায় তুমি কষ্ট পেও না।কোন সমস্যা হলে আমাকে বলবে।”
“জ্বী আচ্ছা।”
ফুলি তখন আসে।রাবেয়া পরিচয় করিয়ে দেয়।
“পুষ্প এ হলো ফুলি।আমার আরেক মেয়ে।আমাকে সব কাজে খুব সাহায্য করে।তোমাকেও সাহায্য করবে।”
ফুলি গদগদ হয়ে বললো,
“ভাবী আপনের কতা কতো হুনছি।ভাইজানে ঠিক কইছে আপনে হেছাই পরীর মতো।”
পুষ্প হাসে।এই মেয়েটা সেই কখন থেকে ঘুরঘুর করছে এতোক্ষণে কথা বললো।
রাত বারোটায় পুষ্পকে শিমুলের রুমে পাঠানো হয়।পুষ্প রুমে ঢুকার পরে শিমুল দরজা বন্ধ করে দরজায় হেলান দিয়ে দাঁড়ায়।পুষ্প অবাক হয়ে পুরো রুম দেখছে।ফুল দিয়ে এতো সুন্দর করে সাজানো যে মুগ্ধ না হয়ে থাকা যায় না।সে শিমুলের দিকে ফিরে।দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে থাকে,তারপর ফিক করেই দুজনে হেসে ফেলে।শিমুল এগিয়ে আসে।পুষ্পর হাত ধরে বললো,
“আমার ফুলকে ফুলের রাজ্যে না আনলে তো ভিষণ বাজে লাগতো।”
পুষ্প হাসে।তার এতো সুখ সুখ লাগছে।সুখে বুকটা চিনচিন করে উঠছে।
“পছন্দ হয়েছে?”
পুষ্প মাথা দুলিয়ে বললো,
“হয়েছে।”
“এই রুমটা তোমার।এই রুমে এখন থেকে তোমার রাজত্ব চলবে।”
তারপর পুষ্পর দিকে কিছুটা ঝুঁকে নিজের বুকে হাত রেখে বললো,
“এই মানুষটাও তোমার,মানুষটার উপরেও তোমার রাজত্ব বহাল থাকবে।”
পুষ্প শিমুলের চোখের দিকে তাকিয়ে থাকে।শিমুলের দিকে তাকালেই পুষ্পর বুকটা সুখে ব্যাথা করে।এই যে এখন পুষ্পর দম বন্ধ হয়ে আসছে।শিমুলের ঠোঁট টিপে হাসিটাও খুব শান্তি দিচ্ছে।আজকে সে পুরোপুরি শিমুলের।বদ্ধ রুমে একা শিমুলের কাছে এসে পুষ্পর সারা শরীর শিরশির করে কেঁপে ওঠে।
শিমুলের কেমন অনুভূতি হচ্ছে এটা বুঝানো সম্ভব না।সে ফুলকে জয় করে তার ঘরে নিয়ে এসেছে।পুষ্পর হাতের কাঁপন টের পেয়ে শিমুল হাসে।আচ্ছা তার ফুলবউ তাহলে বরকে ভয় পাচ্ছে?শিমুল আরেকটু ভয় দেখাতে পুষ্পকে খাটে বসিয়ে বললো,
“আমি ফ্রেস হয়ে আসছি।একটু অপেক্ষা করো।”
তারপর বাথরুমে ঢুকার আগে পুষ্পর দিকে তাকিয়ে ঠোঁট কামড়ে হাসে,
“আজকে তো তুমি শেষ ফুলরানী।”
শিমুলের কথা শুনে পুষ্পর হাত পা অসাড় হয়ে আসে।এতোদিন যদিও শিমুল কাছাকাছি এসেছে কিন্তু পুষ্পর এই বিশ্বাস ছিলো যে শিমুল কিছু করবেনা।কিন্তু আজকে পুষ্প শিমুলকে মোটেই বিশ্বাস করতে পারছেনা।দুষ্টু দুষ্টু চোখের চাহনি আর এখন এই কথাটা শোনার পরে তো আরো ভয় লাগছে।
শিমুল ফ্রেস হয়ে ট্রাউজার পরে বের হয়।তাওয়াল দিয়ে মাথা মুছতে মুছতে ড্রেসিংটেবিলের আয়নায় গিয়ে দাঁড়ায়।
পুষ্প শিমুলের আদুল গা দেখে হা করে তাকিয়ে থাকে।ফর্সা বুকে কালো পশম যেনো সৌন্দর্য দ্বিগুণ করে দিয়েছে।পুষ্পর ইচ্ছে করে ছুঁয়ে দিতে।শিমুলের মুচকি হাসি সমেত দুষ্টু দুষ্টু চাহনি দেখে আবার মনের ভয় মাথা নেড়ে উঠে।
শিমুল গায়ে বডিস্প্রে করে আয়না দিয়েই পুষ্পকে দেখে।পুষ্পর লজ্জামাখা ভীতু চাহনী দেখে বললো,
“সুন্দরী কি আমাকে ভয় পাচ্ছে?”
পুষ্প কিছু বলেনা।এই এতো এতো চেনা শিমুলকে এতো ভয় লাগছে কেন?পুষ্পর লজ্জাও যেন আজকে প্রতিযোগিতা দিয়ে বাড়ছে।শিমুল আলমারি খুলে হেংগার থেকে গেঞ্জি নেয়।গায়ে দিয়ে বিছানায় বসে।পুষ্প মাথাটা নিচু করে ফেলে।তার যে লজ্জায় মরে যেতে ইচ্ছে করছে।
শিমুল তাকিয়ে থাকে।পুষ্পর লজ্জামাখা চাহনি দেখতে ভালো লাগছে।বাহিরে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি হাতের নাগালে প্রিয় রমনী শিমুলের নিষিদ্ধ ইচ্ছারা তাকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে বারবার ফুসলিয়ে দেয়,শিমুলের সারা শরীরে কেমন কাঁপন ধরে।জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে পুষ্পর হাত ধরে মুখোমুখি বসে।মোলায়েম গলায় বললো,
“বৃষ্টির রাত,একা ঘর,সাথে শিমুল ফুল,আজকে হয়ে যাক কিছু ভুল।”
পুষ্প তো এই ভুলের ভয়ই পাচ্ছিলো।পুষ্পর পেট কেমন ব্যাথা করে উঠে।আজকে কি তার মরন হবে?
চলবে……