শিমুল_ফুল
২৭
জাকিয়াসুলতানাঝুমুর
পুষ্প আর শিমুল ভোর চারটার দিকে ঘুমিয়েছে।দুজনের মনে যে এতো কথা থাকতে পারে তা বুঝি রাতেই প্রকাশ পেলো,শিমুল কথার ফাঁকে ফাঁকে পুষ্পকে চুমু দিচ্ছিলো। প্রিয় মানুষের কাছে থাকলে যে এতোটা সুখ অনুভব করা যায় এটা পুষ্প তার শিমুলকে পেয়ে উপলব্ধি করতে পেরেছে।শিমুল তাকে একটা গলার হার দিয়েছে,হারের সাথে এস আর পি অক্ষরের পেচানো একটা লকেটও আছে।শিমুল নিজ হাতে পড়িয়ে গলা সমেত লকেটে আলতো ছুঁয়ে বলেছে এই হারটা যেনো সবসময় গলায় থাকে।পাঁচটার দিকে পুষ্পর ঘুম ভেঙে যায়।সে ঘুমালেও তার ব্রেনে ঠিক এটা ছিলো যে সকালে উঠতে হবে।চোখ খুলে পুষ্প আবিষ্কার করে তার উপরে কেউ হাত পা দিয়ে তাকে আঁকড়ে ধরে আছে।সবসময় একা থাকা পুষ্পর এটা হজম হলো না চোখ বড়ো বড়ো করে আঁকড়ে ধরা আগুন্তুকের দিকে তাকায়।ঘুমন্ত শিমুল,এই ঘর শিমুলের গায়ের মিষ্টি ঘ্রান সব মিলিতে পুষ্পর মনে পড়ে সে কাল শশুড় বাড়ি এসেছে,আঁকড়ে ধরা মানুষটা তার শিমুল।পুষ্প ঘুমন্ত শিমুলকে দেখে।কি মায়া লাগছে।আচ্ছা মায়ার উপমা দিতে মেয়েদের যদি মায়াবতী বলে ছেলেদের কি বলে?তার জানা নেই।পুষ্প শিমুলের কপালের অগোছালো চুল সরিয়ে কপালে চুমু খায়।শিমুল নড়েচড়ে পুষ্পকে আরো টেনে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়।পুষ্পর উঠা দরকার উঠতে চাইলে শিমুলের ঘুম ভেঙে যায়,আধোআধো চোখ মেলে পুষ্পকে কাছে পেয়ে পুষ্পর গলায় মুখ গুজে বললো,
“উঠে যাচ্ছো কেন?আমার ঘুম শেষ হয়নি তো।”
“আমি উঠে যাবো।তুমি ঘুমাও।”
“না তোমাকে সাথে নিয়ে না ঘুমালে ঘুম হবেনা।”
“সবাই খারাপ বলবে।”
“বলুক।নতুন বউ দেরীতে উঠবে এটাই নিয়ম।”
“এই নিয়মগুলো কি তুমি আবিষ্কার করেছো?”
শিমুল ঠোঁট টিপে মুচকি হাসে,
“বউ আমার নিয়ম তো আমিই আবিষ্কার করবো।এতো নড়াচড়া করো না তো।”
পুষ্প শান্ত হয়ে শুয়ে থাকে।কিন্তু শিমুল শান্ত থাকেনা।দুষ্টুমিতে পুষ্পকে মাতাল করে ছাড়ে।পুষ্প খিলখিল করে হাসে।শিমুলের গভীর ছোঁয়ায় পুষ্প যখন চোখ বন্ধ করে আছে তখনি দরজায় ধুপধাপ করে কেউ ধাক্কা দেয়।তারপর বাজখাই গলায় বলে,
“শিমুল,শিমুলরে।আরে তোর বউরে উঠাই দে।নতুন বউ কি এতোক্ষণ ঘুমায়?লাশ-শরম নাই।”
পুষ্প ঝটপট উঠে পড়ে,হাত দিয়ে গায়ের কাপড় টেনেটুনে ঠিক করে,তার হাত-পা কাঁপছে।দ্রুত ছুটে গিয়ে দরজা খুলে।পেশকারা দরজা থেকেই পুষ্পকে তীক্ষ্ণ চোখে দেখে।পুষ্প এমন চাহনী দেখে মাথা নিচু করে নেয়।পেশকারা পুষ্পর মাথায় হাত দিয়ে দেখে চুল ভিজা না শুকনো।শুকনো দেখে বললো,
“কোনসময় ফজরের আজান দিয়েছে এখনো গোসল করোনি কেন?”
গোসল করার মতো তো কিছুই হয়নি তাই পুষ্প গোসল করেনি।কিন্তু সামনের অগ্নির মতো জলন্ত নারীটাকে এই কথা বলার থেকে চুপ থাকাই শ্রেয়।পুষ্পকে চুপ থাকতে দেখে পেশকারা বেগম বললো,
“আমরা কাকপক্ষী জাগার আগেই গোসল সেড়ে নিতাম,তোমাদের মতো বেলাজ ছিলাম না।গোসল ছাড়া যেন রুম থেকে বাহির না হও।নিলজ্জ মেয়ে কোথাকার।”
তিনি তেড়্যা চোখে তাকিয়ে চলে গেলে পুষ্প দরজা আটকে ফিরে আসে।তার চোখ টলমল করছে।প্রথম দিন সকালেই যে এমনতর ঝাড়ি খেতে হবে এর জন্য পুষ্প প্রস্তুত ছিলো না।শিমুল তার বুবুর এমন কাজে হতভম্ব।পুষ্পর টলমল চোখের দিকে তাকিয়ে উঠে বসে।খাটে বসে পুষ্পর হাত ধরে তার কাছে বসায়।
“কি হলো?”
“বুবু এভাবে বললো কেন?”
এটা বলতে বলতে পুষ্পর চোখ দিয়ে টলমল করে পানি পড়ে যায়।শিমুল চোখের পানি মুছে দিয়ে পুষ্পকে স্বান্তনা দিলো।
“আগের কালের মানুষ তো এসব মানে বেশী।”
“হুম।”
“পুষ্প আমাদের বিয়েটা মা আর ভাইয়া ছাড়া কেউ মেনে নেয়নি।আমাকে দিয়ে তারা তাদের মনের ইচ্ছা পূরন করতে পারেনি বিধায় তোমার উপর তাদের ক্ষোভ থাকবে,ত্যাড়াত্যাড়া কথা বলে নিজেদের রাগ দেখাবে।তুমি নিজে শক্ত থাকতে হবে।তাদের দেখিয়ে মোটেই কাঁদা যাবে না।কাঁদলেই তারা ভাববে তুমি কষ্ট পাচ্ছো তাহলে আরো বেশী এমন করবে।তাই তোমার কি করতে হবে?তুমি নিজের মতো চলবে কোন সমস্যা হলে আমাকে বা মাকে বলবে।আর এদের জন্য চোখের পানি যেন আর না পড়তে দেখি।আমার বউয়ের চোখের পানি খুব দামী।ঠিক আছে?”
মানুষটা এতো ভালো করে সব বুঝায় যে না বুঝে উপায় থাকে না।পুষ্প মাথা নেড়ে হ্যাঁ বলে।তারপর ফ্রেস হয়ে বাহিরে যায়।রাবেয়া পুষ্পকে দেখে ডাইনিং টেবিলে নিয়ে বসায়।আলতো হেসে বললো,
“পুষ্প কিছু খাবে?”
পুষ্প উনার দিকে তাকায়।এক পরিবারে কতো ধরনের মানুষ।একজন ধানি লংকা তো আরেকজন বরফগলা পানি।সে মাথা নেড়ে না জানায়।ফুলি তখন আটার রুটি বানাচ্ছে।শাশুড়ী বউমা’কে একসাথে বসে থাকতে দেখে পেশকারার সারা শরীর জ্বলে যায়।পুষ্পকে বলে,
“রুটি বানাতে পারো?নাকি শুধু ছেলেদের মাথা খেতেই পারো?”
এমন কথার কি উত্তর হতে পারে তা পুষ্পর জানা নেই।সে কি বলবে ভেবে পেলো না।মাথা নিচু করে বসে থাকে।নতুন বউকে এমনভাবে কথা বলাতে রাবেয়া বিব্রত হয়।পরিস্থিতি সামলাতে বলে,
“আম্মা আজকে ফুলিই বানাক।পুষ্প তো এখন সবসময়ই এখানেই থাকবে।পরে বানাতে পারবে।”
রাবেয়ার কথা শুনে পেশকারার মেজাজ খারাপ হয়ে যায়।দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
“একদিনের বউয়ের পক্ষ নিয়ে আমার সাথে কথা তর্ক করো?শওকত কই তুই দেখে যা তোর বউ কতো বেড়েছে।”
“আম্মা আপনি ভুল বুঝবেন না।মেয়েটা কালকেই এসেছে।”
“তাতে কি!আমি এই বাড়িতে প্রথমদিন এসেই মশলা বেটে রান্না করেছিলাম।তোমাদের মতো এতো নকশা করি নি।”
পুষ্পর কাছে অবস্থা সুবিধার লাগে না।কিন্তু সে তো রুটি বানাতেও পারে না,সাহস করে রাবেয়াকে বললো,
“মা আমি পারবো।”
এটা বলে উঠে রান্নাঘরে গিয়ে ফুলির হাত থেকে বেলুন নিয়ে রুটি বেলতে যায়।বাবার বাড়িতে কাজ না করা অদক্ষ পুষ্প গোলগাল রুটি বানাতে পারে না,যতই গোলগাল বানাতে চায় ততই তেড়্যাবেকা হয়ে যায়।পেশকারা পাশে দাঁড়িয়ে আছে,পুষ্পর বুকটা কাঁপে।পেশকারা কিছু বলার আগে রাবেয়া আসে।
“আম্মা আব্বা উঠেছে,আপনাকে ডাকে।”
পেশকারা রুটির দিকে তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে চলে যায়।উনি চলে যাবার পরে রাবেয়া ফুলিকে দিয়েই রুটি বানিয়ে ফেলে।পুষ্প তার শাশুড়ীর দিকে তাকিয়ে কৃতজ্ঞতায় চোখ ভিজে উঠে।রাবেয়া পুষ্পকে আবার ডাইনিং টেবিলের চেয়ারে বসায়।
“আমার যখন বিয়ে হয় আমি খুব ছোট ছিলাম।কিছুই পারতাম না,সবাই ভুল ধরতে মুখিয়ে থাকতো কেউ শিখিয়ে দিতে আসতো না।অথচ আমাকে শিখিয়ে দিলেই আমি পারতাম।একসময় করতে করতে সব শিখে গেলাম।কিন্তু সবার ব্যবহারগুলো মন থেকে গেলো না,বুকে এখনো সব তাজা।আমি তোমাকে নিজ হাতে সব শিখাবো।আমি যে কষ্ট পেয়েছি আমি চাইনা আমার ছেলের বউও এমন কষ্ট পাক।”
এমন ভালো একটা শাশুড়ী পেয়ে পুষ্প মনে মনে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জানায়।
রাবেয়া পুষ্পর জন্য রুটি আনতে রান্নাঘরে যায়।তখনি সুইটি আলোথালু বেশে ছুটে আসে।এসেই পুষ্পর সামনে দাঁড়ায়।পুষ্প সুইটিকে দেখেই বুঝতে পারে সুইটি মাত্রই ঘুম থেকে উঠে এসেছে।সুইটি কিছু না বলে পুষ্পর চুলে হাত দেয়।চুল ভিজা এটা বুঝতে পেরে বললো,
“তোমার চুল ভিজা কেন?”
এমন উদ্ভট প্রশ্নের উত্তর কি হতে পারে পুষ্প ভেবে পায় না।তখনি শিমুল আসে পুষ্পর পাশের চেয়ারটা টেনে তাতে বসে বললো,
“চুল ভিজানোর কাজ করেছে তাই চুল ভিজা।তোর কোন সমস্যা?”
শিমুলের দিকে চোখ কটমট করে তাকিয়ে সুইটি আবার রুমে চলে যায়।
যদিও রীতিমতো আড়াইদিন পরে মেয়ে আবার বাবার বাড়ি যাওয়ার কথা থাকে কিন্তু মুন্নীর বর আবার ঢাকা চলে যাবে বিধায় আজকেই পুষ্পকে নিতে আসবে।পুষ্পর বাবার বাড়ির লোক আসবে পুষ্পর সেকি খুশী শাশুড়ীকে হাতে হাতে এটা সেটা এগিয়ে দিচ্ছে।দুপুরের দিকে মিজান শেখ,মুন্নী আর মুন্নীর বর আসে।সবাই স্বাভাবিক ভাবেই কথা বলে।খাওয়ার সময় হলে শওকত বা মজিব হাওলাদার কাউকেই টেবিলে আনা যায় না।শিমুল নিজেই সবাইকে সাদর করে খাবার বেড়ে দেয়।মিজান শেখ বারবার জিজ্ঞাসা করছিলো মজিব আর শওকত হাওলাদারের কথা শিমুল বললো,
“আপনি শুরু করেন।আব্বা আর দাদা একটা কাজে বাহিরে গেছে,আসতে দেরী হবে।”
পুষ্পর চোখ ভিজে উঠে।তার শশুড় আর দাদাশশুড় বাড়িতেই আছে।পুষ্পর বাবার সাথে বসে খেতে এতো লুকোচুরি!বিকালে পুষ্প আর শিমুল মিজান শেখের সাথে তাদের বাড়িতে যায়।পুষ্প অবাক হয়ে তার আব্বা আম্মার কাজকর্ম দেখে,যে শিমুলের নাম শুনলেই পুষ্পকে মা/রা হতো সেই শিমুলকে কতো আদর যত্ন করা হচ্ছে।রোকসানা কিছুক্ষণ পরে পরে এটা সেটা এনে দিচ্ছে।পুষ্প চুপচাপ সব দেখে আর ভাবে,বাবা মায়ের কথা শুনে যদি অন্য কোথাও বিয়ে করে নিতো তাহলে বুকের কষ্টটা সারাজীবন জ্বালাতো আর এখন একটু কষ্ট হলেও শিমুলেকে পেয়েছে,আর বাবা মাও কি সুন্দর শিমুলকে জামাই আদর করছে।পুষ্প মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে থাকে।
পলাশ বেহায়ার মতো নিধির পিছু পিছু ঘুরছে।নিধি পলাশকে দেখেও দেখছে না।সবার সাথে হেসে কথা বললেও পলাশকে এড়িয়ে যাচ্ছে।এই এড়িয়ে যাওয়াটা পলাশের সহ্য হচ্ছে না।বারবার নিধিকে দেখছে।নিধি যেহেতু একসময় এই কলেজেরই স্টুডেন্ট তাই সব শিক্ষকই নিধির প্রতি সদয়।ক্লাস গ্যাপে পলাশ অফিসরুমে আসে তখন নিধিরও গ্যাপ ছিলো।নিধিকে একা পেয়ে পলাশ সোজা নিধির টেবিলের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।নিধি মাথা তুলে তাকায়।তারপর আবার চোখ নামিয়ে নেয়।পলাশ ডাকে,
“নিধি…”
“নিধি।”
নিধি কথা বলেনা দেখে পলাশ হাটুমুড়ে নিচে বসে।একটু কথা বললে কি হয়?পলাশ তো এতোটা খারাপ না।
“একটু কথা বলো।”
পলাশের এমন কাজে নিধি অপ্রস্তুত হয়ে যায়।তাদের প্রেম চলাকালীন প্রেমের কথা কলেজে কেউ জানতে পারেনি।এখন হঠাৎ করে পলাশের এমন কাজ কেউ দেখে নিলে নিধির সমস্যা।তাই সে আস্তে করে বললো,
“কি বলবো?ভীতু পুরুষের সাথে কথা বলার মতো রুচি নেই।”
নিধি উঠে চলে যেতে নিলে পলাশ আরো কিছু বলতে চায়।নিধি থামিয়ে বলে,
“আপনি আমাকে এভাবে বিরক্ত করলে খারাপ হবে কিন্তু।কাছে এসেছি বলে কথা বলার জন্য উঠে-পড়ে লেগেছেন,কই এতোদিন তো খবর নেননি।একবার জানতেও চাননি কই আছি।”
নিধি উঠে চলে যায়।পলাশ অসহায় হয়ে উঠে দাঁড়ায়।নিধির প্রতিটা কথা পলাশের বুকে এসে লেগেছে,সে ভীতু?পলাশ চুপচাপ নিজের টেবিলে গিয়ে বসে।টেবিলের উপর মাথাটা রেখে চুপচাপ শুয়ে থাকে।এতো এতো কষ্টের মাঝে পলাশের শরীরটা আর বয়ে বেড়াতে ইচ্ছে করেনা।তার আব্বা তাকে বলেছিলো নিধির বিয়ে হয়ে গেছে,এখন যোগাযোগ রাখলে নিধির সংসার ভাঙ্গতে তিনি দুবার ভাববে না।তারপরেও পলাশ লুকিয়ে নিধির বাবার ঠিকানায় গিয়েছিলো ওখানে গিয়ে কাউকে পায়নি।নিধির কোথায় বিয়ে হয়েছে সেই খবরও পায়নি।একবুক হাহাকার নিয়ে ফিরে এসেছে।কিছুক্ষণ পরে কলেজ থেকে বেরিয়ে বাড়ির উদ্যেশ্যে যায়।মনে মনে প্রার্থনা করে,আল্লাহ বাইক এক্সিডেন্ট করে যদি ম/রে যেতাম এটাই ভালো হতো।
এর পরেরদিন শিমুল আর পুষ্প বাড়িতে ফিরে আসে।শিমুলের জরুরী কাজ আছে বিধায় তাড়াতাড়ি ফিরে আসা।পুষ্প রাবেয়া বেগমের কাছে গিয়ে বসে থাকে।নিজের মা’কে ছেড়ে এসেছে রাবেয়ার কাছে আসলে মায়ের মতোই ঘ্রান পাওয়া যায়।দু’জনে কথা বলতে বলতে অনেক সময় কাটায়।রাতের নয়টার সময় পুষ্প তার রুমে আসে।শিমুল বিকেলে বেরিয়েছে এখনো আসেনি।পুষ্পর চোখগুলো শুধু শিমুলকেই খুঁজে।বিছানায় গিয়ে দেখে একটা শপিং ব্যাগ।পুষ্প এগিয়ে গিয়ে ব্যাগটা হাতে নেয়।খুলে দেখে একটা কালো শাড়ী।সাথে একটা চিরকুট।পুষ্প চিরকুট হাতে নিয়ে পড়া শুরু করে,
“প্রনয়ীনি আমি যে বি/ষ ব্যা/থায় পা/গল হয়ে যাচ্ছি তোমার চোখে পড়েনা?
প্রনয়ীনি আমার তৃষ্ণার্থ চোখের নেশা কি তোমায় কাবু করতে পারছে না?
প্রনয়ীনি এই জন্মউপোস পা/গল প্রেমিকের খরা লেগে মরে যাওয়া শিমুল গাছে একটু উষ্ণ ছোঁয়া দেয়া যায়না?
প্রনোয়ীনি তুমিও কি আমার মতো তৃষ্ণায় ছটফট করো?খুব আপন করে নেয়ার ইচ্ছা জাগে না?
প্রনয়ীনি তুমি চাইলে আমরা শিমুল ফুল ফুটাতে পারি।আমাকে দেখো আমি খুব করে চাইছি তোমাতে ডুবে যেতে,তুমিও কি আমাতে ডুবতে চাও?
এই শাড়ীটা পরে আপনার পাগলের জন্য অপেক্ষা করার দরখাস্ত রইলো।
ইতি আপনার অতি বাধ্যগত স্বামী “শিমুল।”
এই সামান্য চিরকুট পড়েই পুষ্পর মনটা অন্যরকম ভালো-লাগায় ছেয়ে যায়।লজ্জায় শরীরে শিহরণ বয়ে যায়।কালো শাড়ীটা হাতে নিয়ে রেডি হতে ছুটে।আজকে মনের সবটা রঙ মিশিয়ে সাজবে।
রাত এগারোটার দিকে শিমুল রুমে আসে।পুরো রুম অন্ধকারে লেপ্টে আছে।শিমুল লাইট জ্বালিয়ে স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকে।শিমুল পুষ্পকে কালো শাড়ীতে যতোটা সুন্দর লাগবে ভেবেছিলো তার থেকেও বেশী সুন্দর লাগছে।শিমুল আলতো পায়ে এগিয়ে যায়।পুষ্পকে নিজের করে দেয়ার জন্য মনে মনে বারবার আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করে।পুষ্পর হাত ধরে বললো,
“আমার বউকে অনেক সুন্দর লাগছে তো।”
শিমুলের এমন প্রশংসায় পুষ্প মিহিয়ে যায়।বুকের পাখি উল্টাপাল্টা ডানা ঝাপটে বেরিয়ে যেতে চায়।শিমুলের নিঃশ্বাসের গরম তাপে পুষ্প চোখ বন্ধ করে নেয়।মাথা নেড়ে বললো,
“মিথ্যা কথা।”
“সত্যিই।এতোই সুন্দর লাগছে যে খেয়ে ফেলতে ইচ্ছে করছে।”
পুষ্প মাথা নিচু করে লাজুক হাসে।পুষ্পর লাজুক হাসির দিকে তাকিয়ে শিমুলও হাসে।তারপর
শিমুল পুষ্পকে কোলে তুলে নেয়,ফিসফিস করে বললো,
“আজকে রাতে আমি ভীষন খারাপ হতে চাই,আজকে না হয় শিমুল ফুল ফুটুক।”
পুষ্প প্রতিউত্তরে শিমুলের গলা আঁকড়ে ধরে।প্রনয়ের ছোঁয়ায় সেও যে জর্জরিত।কাতর!
চলবে……