শিমুল_ফুল
৩৯
জাকিয়াসুলতানাঝুমুর
পুষ্প মিজান শেখের আদরের মেয়ে।প্রেম করে বিয়ে করেছে বিধায় মেয়ের প্রতি একটা চাপা রাগ আছে।কিন্তু রাগ কতোক্ষন রাখবে?শিমুল যখন আব্বা আম্মা বলে ডাকে তখন মনে অজানা খুশীর রেশ দোলা দেয়।শিমুলকে যতটা উগ্র ভেবেছিলো ততটা নয়। পুষ্পকে দেখেই বুঝা যায় শিমুলের সাথে পুষ্প কতোটা সুখী।পুষ্পর সবদিকেই শিমুল খেয়াল রাখে।মিজান আর রোকসানা ঠিক করে পুষ্পকে দেখতে যাবে।
বুধবার সকালে রাবেয়া বাথরুমে আছাড় খেয়ে পড়ে কোমড়ে ব্যাথা পায়।মিজান শেখ আর রোকসানা এই উছিলায় চেয়ারম্যান বাড়িতে আসে।রাবেয়া বিছানা থেকে উঠতে পারে না।শওকত হাওলাদার শিমুলকে জরুরী এক কাজে থানায় পাঠায়।পুষ্পর নিজেকে খুব অসহায় লাগে।তার আব্বা আম্মা আসবে কি রান্না করবে বুঝতে পারে না।ফুলি পুষ্পর ছটফটানি দেখে বললো,
“ভাবি আফনে খালি খালি চিন্তা করতাছেন ফ্রিজে খাসি আর গরুর মাংস আছে।একটা নামাইয়া রানলেই তো হয়।”
পুষ্প আমতা আমতা করে বললো,
“কেউ যদি কিছু বলে?”
ফুলি হাত নেড়ে বললো,
“কিতা কইবো আবার?মেমান আইলে ভালা কিচু রান্ধন বারন লাগে না!আফনে খালি ভয় ফান।আমি হইলে দেখতেন তুইল্লা কচু ছুইল্লা দিতাম।”
পুষ্প হাসে।সেদিনের পর থেকে পুষ্প সুইটি আর পেশকারাকে গম্ভীর গলায় প্রতিবাদ করে।বেশী লাই দিয়েছে বলেই এরা মাথায় বসে কাঠাল খাওয়ার সুযোগ পাচ্ছে।তবে প্রতিবাদ না বলে এটাকে নরম কথা বললেই চলে,পুষ্পর এমন তর্ক করে অভ্যাস নেই কিন্তু এদের ব্যবহার দেখলে মনে হয় ঝগড়া না করে এই বাড়িতে টিকে থাকা সম্ভব না।
পুষ্প এভাবে থম মেরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ফুলি হাতে ধরে বললো,
“ভাবি দশটা বাইজা জাইতাছে কহন রান্না বসামু?কি রানবো এইটা কন।”
পুষ্প মাথা নেড়ে বললো,
“আম্মাকে জিজ্ঞাসা করে আসি কি রান্না করবো।”
শওকত হাওলাদার ড্রয়িংরুম থেকে পুষ্পর কথা শুনে বললো,
“সেদিন না ব্রয়লার মুরগী আনলাম।মুরগী,মাছ আর সাদা ভাত রান্না করো।তোমার শাশুড়ী ঘুমাচ্ছে এখন ডাক দেয়ার দরকার নেই।”
পুষ্প শশুড়ের উপরে আর কথা বলার সাহস পায় না।গরুর মাংস,খাসির মাংস উপেক্ষা করে ব্রয়লার মুরগী রান্না করে।পুষ্পর চোখ ছলছল করে উঠে তার আব্বা ব্রয়লার মুরগী পছন্দ করেনা পুষ্পর ইচ্ছা করছিলো গরুর মাংস রাধতে,কিন্তু পুষ্প অসহায়।তার বুকটা টনটন করে উঠে কি মেয়ে হলো মা বাবা আসবে একটু মন মতো রান্না করতে পারে না।হ্যাঁ এটা ঠিক তার আব্বা আম্মা বাড়িতে ভালো মন্দ খায়,তার আব্বার তো হোটেলই আছে কিন্তু তার বাড়িতে আসবে একটু ভালো কিছু রান্না করতে না পারলে কিভাবে হয়?চেয়ারম্যান বাড়ির মনমতো যদি শিমুল বিয়ে করতো তাহলে কি মেয়ের বাবার বাড়ির লোককে এভাবে আপ্যায়ন করা হতো?হয়তো না।পুষ্প তো প্রেম করে বিয়ে করেছে তাই তার সবকিছুতেই অবহেলা।নিঃশব্দে পুষ্পর চোখের পানি পড়ে।তার চোখগুলো আজকাল বেহায়া হয়ে গেছে,বিয়ের পর থেকে চোখ থেকে পানি গড়ায় বেশি।চুপচাপ পুষ্প রান্না শেষ করে।ফুলি গজগজ করে বললো,
“খালা ছাড়া এই বাড়ির সবডি খানে খারাফ।”
বারোটা নাগাদ মিজান শেখ আর রোকসানা চেয়ারম্যান বাড়িতে আসে।তিনপদের মিষ্টি,চার রকমের ফল,বিস্কুট চানাচুর নিয়ে আসে।পেশকারা এইগুলোর দিকে এমনভাবে তাকালো মনে হলো গরুর পায়খানা নিয়ে এসেছে।রোকসানা মেয়েকে দেখে খুব খুশী।বাড়ির চারদিকে আভিজাত্যর ছোঁয়া ফুটে আছে।প্রথমে রাবেয়ার সাথে গিয়ে রুমে দেখা করে উনারা ড্রয়িংরুমে বসে।পুষ্প আশা করেছিলো শিমুল দুপুরে আসবে কিন্তু ফোন করে যখন জানতে পারলো শিমুলের আসতে আরো দেরী হবে তখন তার ভগ্ন মন আরো মুচরে গেলো।শিমুল কাছে থাকলে তার সাহস লাগে কোনো কিছুতেই চিন্তা হয় না।দুপুরে খাওয়ার সময় হলে সবাই একসাথে খেতে বসে।মুরগী মাংস দেখে রাবেয়া অবাক হয়ে পুষ্পর দিকে তাকায়।পুষ্প তার শাশুড়ীর মুখের কথা চোখের দৃষ্টিতে বুঝে নেয়।ছলছল চোখে সবাইকে ভাত বেড়ে দেয়।মিজান আর রোকসানা কোন কথা না বলে চুপচাপ ভাত খায়।পুষ্প তার আব্বা আম্মার খাওয়া দেখে চোখের পানি আটকাতে পারে না,তরকারি আনার বাহানায় রান্নাঘরে গিয়ে চোখ মুছে।খাওয়া-দাওয়ার পরে সবাই ড্রয়িংরুমে বসে সবাই অনেকক্ষণ কথা বলে।পাশের বাড়ির এক মেয়ে নাকি পালিয়ে গেছে এই প্রসঙ্গ আসাতে পেশকারা মুখ অন্ধকার করে বললো,
“আজকালকার মেয়েরা এতো অ/সভ্য মা বাপের বার চায়না নিজেই নিজের নাগর জুটিয়ে নেয়।”
পুষ্প যেহেতু প্রেম করেই বিয়েটা করেছে তাই স্বাভাবিক ভাবেই এই কথাটা পুষ্পর গায়ে লাগে।অন্যসময় হলে এতোটা খা/রাপ লাগতো না কিন্তু বাবা মায়ের সামনে বলাতে খা/রাপ লাগলো,আড়চোখে তার আম্মার দিকে তাকায়।অতিথির সামনে এমন কথায় রাবেয়া বিব্রত হয় তাই কথা ঘুরিয়ে নিতে বললো,
“আম্মা এখনের যুগ পাল্টিয়ে গিয়েছে।যুগ এখন এই তালেই চলে।”
পেশকারা যেনো আজ প্রতিজ্ঞা করেছে পুষ্পর বাবা মাকে অপ/মান করবেই।তাইতো কাঠকাঠ গলায় বললো,
“আরে বউ যুগের কথা বাদ দাও।আসল কথা হইতাছে বাপ মাই এগুলারে পোলার পিছনে লাগিয়ে দেয়।বলে কি মেয়ে সামলাতে পারে না কথা শুনে না।আমি বলি এমন মা বাপেরে জুতায় গু লাগিয়ে থাপ/ড়ানো দরকার।”
পুষ্প থ/ম/থ/ম খেয়ে তার আব্বা আম্মার দিকে তাকায়।দুজনের মুখই গম্ভীর হয়ে গেছে।পেশকারার কথায় যে ক/ষ্ট পেয়েছে এটা স্পষ্ট।শওকত হাওলাদার যেন তার মায়ের কথা সঙ্গ দিতেও বললো,
“ছোট ছোট মেয়েরা যে এসব কি বুঝে আল্লাই যানে।”
রাবেয়া বেয়াই বেয়ানের দিকে তাকিয়ে তাদের মনের অবস্থা কিছুটা টের পায়।এই প্রসঙ্গ বদলাতে বললো,
“আচ্ছা এদব বাদ দেন তো।মিজান ভাই বলেন হোটেলের কি অবস্থা?”
মিজানের মনে তখন পাহাড় সমান ক/ষ্ট ভীড় জমিয়েছে।কিন্তু নিজেকে স্বাভাবিক রেখে বললো,
“চলছে আপা ভালোই।”
কথায় কথায় আরেক প্রসঙ্গ আসে।মেম্বারের বোনের বিয়ে হয়েছে।মেম্বার নাকি শিমুলের সাথেই বিয়ে দিতে চেয়েছিলো।কোনো চাওয়া পাওয়া ছিলো না কিন্তু উনারা মেয়েকে কতোকিছু দিয়েছে।মজিব হাওলাদার ঠেস দিয়ে বললো,
“আজকাল চেয়ে নিলে তো চাওয়া জিনিসই পায় আর কোন দাবী না থাকলে আরো বেশী দেয়।”
মিজান শেখ সব শুনে কিছু না বললে কেমন দেখায়!তাই কথায় তাল মিলাতে বললো,
“হ্যাঁ!তা ঠিক।”
পেশকারা মাথা নেড়ে বললো,
“আজকালে মেয়ের বাপেরা তো ফাঁ/দ পেতে থাকে কোনমতে মেয়ে বিদায় দিতে পারলেই হলো।সব আনিচ আনিচ।মাগনা মেয়ে দিতে পারলেই বাঁচে।”
তখনি শিমুল আসে।শিমুলকে দেখে কথায় ভাটা পড়ে শিমুলের মুখ থমথমে গম্ভীর কেউ জানতেই পারলো না তাদের কথা প্রথম থেকেই শিমুলের কানে গেছে।সব কথা শুনেই তো মুখ গম্ভীর।আলতো হেসে শশুড় শাশুড়ীকে ভালো মন্দ জিজ্ঞাসা করে।শিমুল আসার পরে মিজান আর রোকসানা উঠে দাঁড়ায়।রোকসানা পুষ্পকে জড়িয়ে ধরে কেঁ/দে দেয়।মায়ের কা/ন্না দেখে পুষ্প নিজেও কেঁ/দে দেয়।তার মায়ের কা/ন্নার কারণ পুষ্পর অজানা নয়।উনারা চলে গেলে শিমুল খেতে বসে।পুষ্প আজকে চুপ থাকে না মা বাবাকে করা অপ/মান বুকে দগদগে করে জ্ব/লছে।শিমুল রুমে গেলে পুষ্প তাকে সব বলে।কখনো না/লিশ না করা পুষ্প আজকে মা বাবার করা অ/পমান মানতে পারে না শিমুলকে বলতে বলতে কেঁ/দে দেয়।পরিবারের মানুষের এমন ব্যবহারে শিমুল স্তব্ধ।বিয়ের পরেরদিন থেকে উনারা যা করছে অন্য ছেলে হলে এতোদিন কেয়ামত করে ফেলতো কিন্তু শিমুল চুপ আছে কারণ হলো তার মা।সে কিছু করলে বা বললেই সব দোষ গিয়ে চাপবে তার মায়ের উপর।কিন্তু সবাই সহ্যের সীমা অতিক্রম করে ফেলেছে।উনারা হয়তো ভুলে গিয়েছে লেবু বেশী চিপলে তীতা হয়ে যায়।ঘটনাটা এখানে থামলেও পারতো তা হয়নি।সন্ধ্যায় পুষ্পর গায়ের সাথে লেগে সুইটির হাত থেকে মোবাইল ফোন পরে গ্লাস ভে/ঙে গেছে।সুইটি রেগে এক থা/প্পড়ে পুষ্পর নরম গালে তার পাঁচ আঙুলের দাগ বসিয়ে দিয়েছে।ঘটনাটা এতো তাড়াতাড়ি ঘটেছে যে পুষ্প কিছু বুঝে উঠতে পারেনি।যখন বুঝলো তখন সেও সুইটির গালে থা/প্পড় দিয়ে দেয়।সুইটি গলা ছেড়ে চি/ৎকার করে কাঁ/দে।মজিব,শওকত হাওলাদার পেশকারা রাবেয়া সবাই ছুটে আসে।শিমুল এগিয়ে আসে না সে তার দরজায় দাঁড়িয়ে ব্যাপারটা দেখে।সুইটি ইনিয়ে বিনিয়ে পুষ্পকে দোষী বানায় সে নিজেও যে থা/প্পড় দিয়েছে এটা ভুলেও বলে না।বাবা মাকে অপমান করার কারনে এমনিতেই পুষ্পর মন খারাপ এখন সুইটির মিথ্যে অপমানে শরীর রি রি করে উঠে।ক্ষিপ্ত গলায় বললো,
“আপনি মিথ্যে বলেন কেনো?আপনি আগে আমাকে থা/প্পড় দেননি?”
পেশকারা তেড়ে এসে বললো,
“ও থা/প্পড় দিলে কি তোমাকেও থা/প্পড় দিতে হবে?”
“কেন দিবো না?আমি তো কোনো অন্যায় করিনি উনি আমাকে মা/রলেন কেনো?”
“আমার নাতনীর নানীর বাড়ি যা ইচ্ছে করবে।তুই ফকিন্নি!মাথা পেতে সব মেনে নিবি।বেশী কথা বললে আমিও থা/প্পড় দেবো।”
পুষ্প মাথা নেড়ে বললো,
“আসেন থা/প্পড় দেন।আমারো হাত আছে আমিও দেবো।বিয়ের পর থেকে কম জ্বা/লাচ্ছেন না।শয়/তান মহিলা।”
পেশকারা স্বামীর মুখের দিকে তাকায়।মজিব হাওলাদার তেড়ে এসে বললো,
“ছোটলোকের বাচ্চা!মুখে মুখে ত/র্ক করিস কেন?”
বাবা নিয়ে কথা বলাতে পুষ্পর চোখ বেয়ে টপটপ পানি পড়ে।কান্নাভেজা গলায় বললো,
“কথায় কথায় বাবা মা টানেন কেন?দোষ করলে আমি করেছি আমার আব্বা আম্মা কি করেছে?যা বলার আমাকে বলবেন।”
মজিব হাওলাদার পুষ্পর সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।
“তুই আমারে কথা শিখাবি?”
পুষ্প চুপ করে থাকে।রাবেয়া পরিস্থিতি সামলাতে চায় কিন্তু পরিস্থিতি তখন অন্য ধারায় চলে গেছে।শিমুল শান্ত চোখে দরজায় হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে দেখছে।যেন ঝড় আসার পূর্ব মূহুর্ত।মজিব হাওলাদার বললো,
“সুইটির পা ধরে ক্ষমা চা।”
পুষ্প মাথা নেড়ে বললো,
“আমি কোনো অন্যায় করিনি।জীবনেও ক্ষমা চাইবো না।”
মজিব হাওলাদার তার বলিষ্ঠ থাবা দিয়ে পুষ্পর চুল টেনে ধরে।পুষ্প ব্য/থায় ককিয়ে উঠলে শিমুল এসে ছাড়ায়।তার হাত পা কাঁপছে।শক্ত করে মজিব হাওলাদারের হাত ধরে উচ্চস্বরে বললো,
“তোমার হাতটা ভে/ঙে দেই?আমার বউয়ের গায়ে হাত তুলার সাহস কই পাও?”
পেশকারা বললো,
“তোর বউ কি করেছে সেটা আগে শোন।”
শিমুলের চোখ রা/গে লাল হয়ে যায়।
“আমি সব দেখেছি।”
তারপর মজিব হাওলাদারের দিকে তাকিয়ে বললো,
“আমার বউ ক্ষমা চাইবেনা কি করবে?”
মজিব কটকট করে বললো,
“ক্ষমা চাইতেই হবে।”
সুইটিকে দেখিয়ে শিমুল বললো,
“এর মতো খারা/প মেয়ের কাছে ক্ষমা চাওয়ার কোনো প্রশ্নই আসে না।”
রাবেয়া আর পেশকারা দুজনকে দুদিকে টেনে নিলেন।শিমুল বললো,
“আজকে আমার শশুড় শাশুড়ীকে এগুলা বলার মানে কি?”
পেশকারা হাহাকার করে বললো,
“অহ!কালনা/গিনী জামাইর কানে লাগিয়ে দিয়েছে?”
শিমুল চিবিয়ে চিবিয়ে বললো,
“আমি নিজের কানে শুনেছি।আচ্ছা প্রেম করলে কি মেয়েটা একা প্রেম করতে পারে ছেলেটা করে না?ছেলেটার সম্মতি ছাড়া কি প্রেম হয়?তাহলে মেয়ের মা বাবাই কেন কথা শুনবে?ছেলের বাবা মাও তো এই কথাগুলো শুনার যোগ্য।মেয়ের বাবা মাকে যদি জুতায় গু ভরিয়ে থাপড়ানো হয় তাহলে ছেলের বাবা মাকেও থাপড়াতে হবে।তাইনা আব্বা?”
শওকত হাওলাদার বললো,
“আমাদের মতো পরিবারে মেয়ে দিতে পেরেছে এটাই তো অনেক।”
“তাই বলে আপনারা এভাবে অপমান করবেন?ঘরে গরুর মাংস থাকার পরেও কেন রান্না করা হয়নি?আমি প্রেম করে বিয়ে করেছি বলে?”
শওকত হাওলাদার বললো,
“ছোটলোকদের এরচেয়ে ভালো খাবার গলা দিয়ে নামবে না।”
পুষ্প বললো,
“বারবার আমার আব্বাকে ছোটলোক কেন বলেন?”
শিমুল পুষ্পকে থামিয়ে বললো,
“এমনিতেই তো মাঝে মাঝে গরুর মাংস খাসির মাংস রান্না হয় আজকে কেনো হলোনা?সোজা উত্তর দেন।”
শওকত হাওলাদার চোখ পাকিয়ে বললো,
“নিজের টাকায় শশুড়কে ভালো মন্দ খাওয়া।আমার টাকায় তো বউ নিয়ে খাস এখন তোর শশুড় বাড়ির লোকলেও খাওয়াবো নাকি?”
টাকার খোটা দেওয়াতে শিমুল স্তব্ধ হয়ে যায়।
“আমাকে খোটা দিচ্ছেন?”
“হ্যাঁ দিচ্ছি।এক টাকা ইনকামের মুরোদ নেই তার আবার বড়ো বড়ো কথা।”
“আমি আপনার রাজনৈতিক সব কাজ করি তাই আপনি আমাকে টাকা দেন।মাগনা তো টাকা নেইনা।”
শওকত হাওলাদারের গলার স্বর আরো বেড়ে যায়।
“বিয়ে মনে হয় তুই একাই করেছিস আর কেউ করেনা।বিয়ে করে নাটক শুরু করেছে।বউ পড়ায়,শুশুড় শাশুড়ীকে ভালো খাবার খাওয়ানোর আদেশ দেয়,ঘরের মানুষকে যা ইচ্ছা তাই বলিস।এসব করতে হলে আমার বাড়ি থেকে বেরিয়ে যা।আমার বাড়িতে তোর আর তোর বউয়ের মতো অস/ভ্যের জায়গা নেই।”
শিমুল স্তব্ধ হয়ে যায়।
“বাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়ার তাড়া দিচ্ছেন?কি বলছেন ভেবে বলছেন তো?”
“এতো ভাবার কিছু নেই।তোর মতো কু/লাঙ্গার না থাকলে বা/ল ছিড়ানো যাবে।”
এককথায় দুই কথায় মজিব আর শওকতের সাথে শিমুলের তুমুল ঝ/গড়া হয়।রাবেয়া ছাড়া সবাই বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতে বলে।মজিব হাওলাদার বললো,
“বউ পালার মুরোদ থাকলে তো বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে যেতে সাহস করবে।সেই হে/ডাম আছে নাকি?খালি চিল্লা/ইতেই পারে।”
শিমুল অবাক গলায় বললো,
“আমি বউ পালতে পারবো না?”
“কু/ত্তার মতো ঘুরলেও এক কেজী চালের টাকা বের করতে পারবি না।আজাইরা খাস তো খবর নাই,গায়ে তেল নিজের টাকায় মাখ।”
ঝগড়ার এক পর্যায়ে শিমুল পুষ্পকে নিয়ে রুমে ঢুকে।কিছুক্ষনের মাঝেই প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে পুষ্পর হাত ধরে বেরিয়ে যায়।রাবেয়া আহা/জারি করে উঠে শিমুল আর পুষ্প উনাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।শিমুল কিছু না বলে ঢাকার বাসে উঠে।সে নাকি বউ পালতে পারবে না!এতো অপমান!নিজের পরিবারের কাছে থেকে এতো অপমান!শিমুল এতো কমদামী!থাকলো না অ/মানুষের এই বাড়িতে।
চলবে……