#শিমুল ফুল
পর্ব ৪
#জাকিয়া_সুলতানা_ঝুমুর
পুষ্পর কলেজ ছুটি হয়।সে ভেবেছিলো শিমুলকে হিজল গাছের নিচে পাবে কিন্তু না আজকে শিমুল গাছের নিচে নেই।পুষ্পর মন খারাপ হয়,তার অজান্তেই তার মনটা শিমুলকে খুঁজে।পুষ্প রাতে নিজেই নিজেকে বুঝায় যে মেয়েটা হয়তো শিমুলের বোন হয় প্রেমিকা নিয়ে তো আর গ্রামে ঘুরবে না!পুষ্পের ভেতর থেকে তার বিবেক বলে,’পুষ্প তুই কি শিমুলের প্রেমে পড়ে গেলি?কোন মেয়ে নিয়ে ঘুরছে এটা এতো ভাবছিস কেন?ওই রাগী ষাড়ের জন্য তোর মন এতো পুড়ে কেন?শিমুল কি তোকে বলেছে ভালোবাসার কথা?বলেনি তো?তাহলে এতো জ্বলাপুড়া কেন?’
পুষ্প কাথা দিয়ে মুখ ঢাকে।কথাগুলো একদম সত্যি।কিন্তু মনকে বোঝাতে অক্ষম।পরেরদিন পুষ্প কলেজে যাওয়ার পথে মনে মনে শিমুলকে খুঁজে।শিলা তার মতো গল্প করলেও পুষ্প ভেতরে ভেতরে ছটফট করে।কই গেলো শিমুল?অশান্ত মন নিয়েই পুষ্প তিনদিন কাটায়।চারদিনের মাথায় শিলাকে বলে,
“শিলা শিমুল ভাইকে আর দেখছিনা।কই গেছে রে?”
পুষ্পর মুখে শিমুলের নাম শুনে শিলা অবাক হয়ে তাকিয়ে বলে,
“ভুতের মুখে রাম নাম।কি ব্যাপার বান্ধুপি কি ব্যাপার?রহস্য রহস্য গন্ধ পাই।”
শিলার কথায় পুষ্প মাথা ঝুকিয়ে হেসে বললো,
“দেখছিনা তাই জিজ্ঞেস করলাম।কোন ব্যাপার ট্যাপার নেই।”
শিলা তিয়াশের মুখে শুনেছে শিমুল ঢাকা তার ফুফুর বাসায় গেছে।
“ভাইয়ার কাছে শুনেছি,শিমুল ভাই ঢাকা গেছে,ফুফুর বাসায়।”
পুষ্প কিছুক্ষণ চুপ থেকে কিছু ভাবলো তারপর বললো,
“শিলা সেদিন যে দেখলাম শিমুল ভাইয়ের বাইকে মেয়েটা তুই খেয়াল করেছিস?”
শিলা সুইটিকে চিনে।তাদের বাড়িতে শিমুলের সাথে এসেছিলো,
“অহ এটা শিমুল ভাইয়ের ফুফাতো বোন সুইটি।ভাইয়ার সাথেই এসেছিলো আমাদের বাড়িতে।বাব্বাহ মেয়েটা কি মর্ডান,যানিস সারাটাক্ষন শিমুল ভাইয়ের হাত ধরে রেখেছিলো।”
শিমুলকে নিয়ে এমন কথা শুনতে পুষ্পর খুব খারাপ লাগছিলো।আচ্ছা তাহলে ফুফাতো বোনকে পছন্দ করে তাইতো বাইকে নিয়ে এভাবে হেসে হেসে যাচ্ছিলো।শিমুল তাহলে পুষ্পর কাছে কি চায়?কেন পাগল বানাতে আসে?পুষ্পর’ই ভুল হয়েছে কই চেয়ারম্যানের ছেলে আর কই পুষ্পরা।পুষ্পই হয়তো ভুল বুঝে মনের দরজায় কড়া নেড়েছে।রাগে অভিমানে পুষ্পর চোখে পানি এসে জ্বালা করতে শুরু করলো।সে কিনা ভেবেছিলো শিমুল তাকে ভালোবাসে।চুপচাপ কলেজ থেকে গিয়ে শুয়ে থাকে,ভেতরটা জ্বলছে,মনটা পুড়ছে,শিমুল এমন করলো কেন?তাহলে কিসের টানে রাত বিরাতে দেখা করতে চলে আসে?কথায় কথায় কিসের এতো অধিকার?পুষ্প চোখ বন্ধ করলে চোখের কার্নিশ বেয়ে গড়িয়ে যায় মন পুড়ানো এক ফোটা উতপ্ত পানি।
শিলা তার বড় ভাই তিয়াসের সাথে খুবই ফ্রী।বিকালে পুষ্পর বলা কথাগুলো ভাইকে বলে।তিয়াস তখনি শিমুলকে ফোন দেয়।
“বাড়ি আসবি কবে?”
“আগামীকাল।”
“পুষ্প তোর কথা শিলাকে জিজ্ঞেস করেছে?”
শিমুল নড়েচড়ে বসে পুষ্প জানতে চেয়েছে তার কথা?ভ্রু কুচকে বললো,
“কি জিজ্ঞেস করেছে?”
“কই গেছিস,বাইকে বসা মেয়েটা কে ছিলো।এসব”
শিমুল মুচকি হাসে।তাহলে খবর নেয়,মনে পড়ে।বাইকে কেউ বসলে অন্তর পুড়ে কিনা এটা জানতেই শিমুল তখনি রওনা দিয়ে ফেলে।হরিন নিজেই যদি শিকারির খুজ নেয় শিকারি কি হাত ঘুটিয়ে বসে থাকতে পারে?তার বুবুর জন্যই তাকে ঢাকায় আসতে হলো।উনার শরীর ভালো না ডাক্তার দেখাতে হবে তাই শিমুলকে’ই আসতে হলো,দুইদিন ঘুরাঘুরি করে আজকেই ডাক্তার দেখানো শেষ হলো,ঠিক করা হলো পেশকারা বেগম কয়েকদিন তার মেয়ে আসমার বাসায় থাকবে।এই চারদিন শিমুলের দম বন্ধ হয়ে আসছিলো।একে তো সুইটির ন্যাকামি আবার প্রিয় মানুষটাকে দেখতে না পাওয়ার যন্ত্রনায় মনের কাতরতা।রাত তিনটার দিকে শিমুল বাড়িতে এসে পৌছায়।একবার ভাবে দেখা করতে যাবে পরে এতো রাতে যাওয়া ঠিক হবেনা ভেবে আবার সিন্ধান্ত বদলায়।
সকাল নয়টায় পুষ্প আর শিলা কলেজে যাচ্ছে।দুজনেই কলেজের কথা বলছে।পুষ্পর চোখ খুব জ্বলছে,অতিরিক্ত কাঁদার ফলে,রাতে না ঘুমানোতে চোখ ফুলে উঠছে মাথায় যন্ত্রনা হচ্ছে।তখনি দেখলো হিজল গাছের শিকড়ে শিমুল তিয়াশ বসে আছে পুষ্পদের দেখেই শিমুল দাঁড়ায়।এগিয়ে আসে কিছু বলার জন্য।শিমুলকে দেখেই পুষ্পর মুখ থমথমে হয়ে যায়,গাঢ় অভিমানের লেপন পড়ে মুখে।শিমুল কাছে আসছে পুষ্প তার মতো করে হেটে চলে যায়,দাঁড়ায় না।
শিমুল পুষ্পর এমন কাজে হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে থাকে।তাকে এড়িয়ে গেলো?এতো ছোট মেয়ের এতো সাহস!কিন্তু প্রেয়সীর মুখে যে অভিমান স্পষ্ট।শিমুলের কেমন সুখ সুখ লাগছে,প্রেম শুরু হলোনা,অভিমান শুরু হয়ে গেলো?শিমুল বাড়িতে চলে যায়।ঠিক করে বিকেলে আবার আসবে।এই মেয়েটার জন্যই শিমুলের টিনেজারদের মতো রাস্তায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে হয়।প্রেম ছাড়াই পাগল বানিয়ে ফেলেছে।বিকেলে শিমুল পুষ্পর সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে পথ আটকায়,শিলার দিকে তাকালে শিলা বুঝতে পারে মুচকি হেসে পুষ্পকে একা রেখেই চলে যায়।পুষ্প মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকে,শিমুল কাছে আসলেই বুকটা কাঁপে,শরীরে শিহরণ বয়ে যায়।শিমুল পুষ্পর দিকে মাথা কাত করে তাকায় গলার স্বর নরম করে বললো,
“কি হয়েছে?”
পুষ্পর চোখে পানি চলে আসে,বেহায়া চোখগুলোর উপর তার খুব রাগ হয়।মাথা নাড়িয়ে বললো
“কিছু না।”
শিমুল পুষ্পর দিকে তাকিয়ে থাকে।এতোদিন দেখা হয়নি বলে এই অভিমান নাকি সুইটিকে একসাথে দেখেছে বলে।
“আমার দিকে তাকিয়ে কথা বল।”
পুষ্প তাকায় না।মাথা নাড়িয়ে বলে,
“আমি বাড়ি যাব।সরে দাঁড়ান।”
শিমুল সরে না আরো কাছে এসে বলে,
“রাগ করছিস?”
“না “
পুষ্পর অভিমানে শিমুলের খুব মজা লাগে।
“আমার কথা জিজ্ঞেস করেছিলি কেন?”
পুষ্প চমকে উঠে উনি কিভাবে জানলো?শিলা বলেছে?শিলার উপর ভিষন রাগ হলো।জলদি বললো,
“জিজ্ঞেস করা ভুল হয়েছে আর জিজ্ঞেস করবো না।”
“বাহ মুখে খই ফুটছে।সাহসের ওষুধ খাইছিস?সাহস বেড়ে গেছে।”
পুষ্প নিজেও অবাক,আগে শিমুলকে ভয় পেতো।কিন্তু এখন এতোটাও ভয় করেনা।পুষ্প কথা ঘুরিয়ে বললো,
“এখন বাড়ি যাই।”
শিমুল পুষ্পকে আরেকটু রাগাতে বললো,
“আমার ফুফাতো বোনটা খুব সুন্দরী।আমাকে প্রপোজ করেছে।ভাবছি রাজি হবো কিনা!”
পুষ্প নত করে রাখা মুখটা তুলে শিমুলের দিকে তাকায়।শিমুলের মুখে মুচকি হাসি।জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে বললো,
“তাহলে গিয়ে প্রেম করুন।আমাকে বলছেন কেন?”
এটা বলে হাটতে শুরু করে।শিমুল পিছন থেকে বললো,
“আমি যাকে ভালোবাসি সে তো প্রেম করতে চায় না কিভাবে প্রেম করবো?এই পুষ্প।দাঁড়া না।”
পুষ্প শিমুলের কথা শুনেও দাড়ায়না।বিরবির করে বলে,কি সুন্দর প্রপোজের কথা বলতে এসেছে।অসভ্য,ইতর কোনখানের।
শিমুল দৌড়ে এসে বললো,
“রাতে আসবো কিন্তু।”
পুষ্পের নাকের পাটাতন ফুলে উঠে,
“আইসেন।আব্বারে বলে দেবো।”
শিমুল হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে থাকে,কি যন্ত্রণা!শিমুলকে এই মেয়ে তার বাপের ভয় দেখায়!
চলবে……