#শিমুল ফুল
পর্ব ৫০
#জাকিয়া_সুলতানা_ঝুমুর
বি/পদে পরলে দুনিয়ার সব খা/রাপ চিন্তা ভাবনা মাথায় এসে আঘাত করে।হারিয়ে ফেলার ভ/য়ে মনটা কু/কড়ে যায়,নিঃশ্বাস নেওয়াটা দুর্বিষহ হয়ে উঠে।পুষ্পর কোনো ক্ষ/তি হলো কিনা পুষ্প ঠিক আছে কিনা এসব ভাবনা শিমুলের বুকে পাথরের মতো পড়ে থাকে।মেয়েটাকে হা/রালে সে বাঁচবে কি করে?না না তার পাখিকে সে হারাতে পারেনা কিচ্ছু হবেনা আল্লাহ ভরসা।কিন্তু পরমূহূর্তেই আবার মনে আ/ঘাত করে কেউ তার পুষ্পকে মে/রে ফেলেনি তো?আর কি শেষ দেখা হবে না?শিমুল দাঁত দিয়ে ঠোঁট চেপে ধরে।বি/পদের সময় রাস্তা যেনো ফুরায় না রিক্সায় বসে থেকে শিমুল অ/স্থির হয়ে উঠে।সে রিক্সাওয়ালাকে তাড়া দেয় তাড়াতাড়ি স্টেশনে যেতে।শিমুলের এখন এমন অনুভূতি হচ্ছে তার মনে হচ্ছে বুকের গহীনে কেউ ক/রাত দিয়ে খচ/খচ করে কলিজা কে/টে ফেলছে।মোবাইল দিয়ে প্রয়োজনীয় কয়েকজনের কাছে ফোন করে নেয়।পলাশকে জানায়।যখন রিক্সা বাস স্টেশনে পৌঁছায় তখন রাত সাড়ে নয়টা বাজে।শিমুল বুকে তখন উত্তাল সমুদ্রের ঢেউ।সেই ঢেউয়ের তোড়ে পানির ছিটাফোঁটা সামান্য পরিমান চোখের কার্নিশ দিয়েও নেমে যাচ্ছে।হন্তদন্ত হয়ে কাউন্টারে গিয়ে টিকেট নেয়।ভাগ্য ভালো বিধায় এখনি রাননিং হবে এমন একটা বাসের টিকেট পায়।দ্রুত ছুটে বাসের দিকে।বাস মাত্র রওনা হচ্ছে।শিমুল দৌড়ে বাসে উঠতে যাবে তখনি!ঠিক তখনি কুমিল্লা থেকে আগত তিশা এক্সপ্রেস থেকে হেলেদুলে নেমে আসে শিমুলের প্রাণভোমরা।হলুদ মিশেল লেমন রঙের ঢোলা জামা পরিহিত মেয়েটাকে চিনতে শিমুলের এক সেকেন্ডও লাগলো না।পুষ্প এখনো শিমুলকে দেখেনি তাইতো এদিকে সেদিকে বোকাবোকা চোখে তাকাচ্ছে।শিমুল বাস ছেড়ে পুষ্পর দিকে ছুটল।অতি যত্নে আঁকড়ে ধরে রাখা হাতের টিকেট অবহেলায় ছিটকে গিয়ে পড়ল রাস্তায়।শিমুল কিছু না বলে ছুটে গিয়ে আলতো করে পুষ্পকে জড়িয়ে ধরে।এতক্ষণ জ্বমিয়ে রাখা কা/ন্নারা হু হু করে শক্ত সামর্থ্য শরীর কাঁপিয়ে বের হয়ে যায়।পাগ/লের মতো পুষ্পর কপালে গালে চুমু এঁকে দেয়।তার গলা আঁটকে আসছে কথা বলা বড়ই কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।
পুষ্প ভ/য়ে জড়োসড়ো হয়ে থাকে।শিমুলের উপস্থিতি সে মোটেও আশা করেনি।আজকে বিকালে প্রচন্ড মিস করেছিলো বিধায় সে একাই চলে এসেছে।সে জানে এটা অ/ন্যায়।শুধু অ/ন্যায় না বড়োসড়ো রকমের খা/রাপ কাজ।সে জানে সবাই তার জন্য টেনশন করবে কিন্তু সে যে শিমুলের সানিধ্যের কাঙাল।মা বাবাকে বললে এই মুহূর্তে কখনোই আসতে দিবে না বরং আরো উল্টাপাল্টা বুঝিয়ে দেবে।তাই পুষ্প সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো বাসে উঠে বাড়িতে ফোন করে জানিয়ে দেবে কিন্তু সমস্যা হলো বাসে উঠে খেয়াল হলো মোবাইলের চার্জ শূন্য!মোবাইল ইতোমধ্যেই বন্ধ হয়ে গেছে।তারপরেও পুষ্প ভেবেছে ঢাকা যেতে মাত্র তিন ঘন্টা লাগবে জটপট পৌঁছে বাসায় যেতে পারলেই হয় কিন্তু ভাগ্যক্রমে আজকে দাউদকান্দি ব্রিজে প্রচন্ড জ্যাম ছিলো।তাইতো এতো দেরী হলো আসতে।এতো রাত হয়ে গেছে আর মোবাইলেও কাউকে জানাতে পারছে না তার আব্বা নিশ্চয়ই এতোক্ষণে শিমুলের কাছে খবরটা পৌঁছে দিয়েছে সে বিষয়ে সন্দেহ নেই।তাইতো বাসে বসেই ভ/য়ে হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছিলো।শিমুল যে তাকে কতোটা ভালোবাসে তাকে নিয়ে কতোটা ভাবে এটা সে বেশ বুঝতে পারে।তার লাপাত্তার খবর শুনে শিমুলের কি অবস্থা হবে এটা ভেবেই পুষ্পর গলা শুকিয়ে এসেছিলো।বাস স্টেশনে এসে শিমুলকে পেয়ে পুষ্প হতবাক।চোখ পিট পিট করে শিমুলের আদর নেয়।শিমুলের মাথায় রা/গ উঠে।এই অবস্থায় ঢাকা আসতে হবে?শিমুলই তো যেতো।এটা বাড়াবাড়ি না!যদি কিছু হয়ে যেতো।সে পুষ্পর দিকে তাকিয়ে বলে,
“মাথা খা/রাপ?”
পুষ্প শিমুলের রা/গী মুখের দিকে তাকিয়ে ভ/য় পেলেও তা প্রকাশ করে না।তার মিষ্টি হাসি দিয়ে বলে,
“তোমাকে মিস করছিলাম।”
শিমুল পুষ্পর হাসিমুখের দিকে তাকিয়ে থাকে।মেয়েটা পা/গল!যদি কিছু হয়ে যেতো তাহলে এই হাসিটা কিভাবে দেখতো?শিমুল পুষ্পর কপালে আবার চুমু খায়।
“যদি কিছু হয়ে যেতো?”
শিমুলের আদর পেয়ে পুষ্প শিমুলের গা ঘেষে দাঁড়ায়।ঠোঁট উল্টে বললো,
“হয়নি তো।”
শিমুল হাত দিয়ে পুষ্পকে আঁকড়ে ধরে।
“যদি হয়ে যেতো?এমন পাগ/লামি কেউ করে?বাবুর কথাও ভাবলে না!”
পুষ্প অপ;রাধী চোখে তাকিয়ে থাকে।গাড়ির বাতাসে পুষ্পর হাত ঠান্ডা হয়ে গেছে।শিমুল হাত টেনে তার হাতের মুঠোয় পুরে নেয়।
“আমার দ/ম আটকে আসছিলো পুষ্প।”
পুষ্প কিছু না বলে শিমুলের দিকে তাকিয়ে আছে।শিমুল বললো,
“এতো ব/কা দিতে ইচ্ছে করছে।বে/য়াদব।”
পুষ্প হেসে বললো,
“দাও ব/কা।আমি ব/কা পাত্তা দেই না।”
“আস্ত বে/য়াদব।কিভাবে যে এই পাগলকে ভালোবাসলাম আল্লাহ যানে।”
পুষ্প মাথা দুলিয়ে বললো,
“সরি জামাই।”
“আরেকটু হলেই তো আমি কুমিল্লার বাসে উঠে যাচ্ছিলাম।তখন কি হতো?”
“উঠোনি তো।”
“উঠে গেলে?একা কই যেতে?আর ফোন কই?ফোন করলেই হতো। সবাই টেনশন করছে না?”
পুষ্প মাথা নিচু করে বললো,
“ফোনে চার্জ ছিলো না তাই বন্ধ হয়ে গেছে।”
শিমুল অদ্ভুত চোখে পুষ্পকে দেখে।
“এটা কি রে ভাই?আজব মানুষ।”
“তোমারই বউ!”
শিমুল বাড়িতে ফোন দিয়ে জানায়।সবাই শুনে হতবাক।পুষ্প যে এমন একটা কাজ করবে এটা কেউ ভাবেনি।পুষ্প কাচুমাচু করছে।আধাঘন্টা আগে থেকেই তার হালকা ব্যা/থা শুরু হয়েছিলো।কিন্তু এটা ফলস পেইন নাকি ডেলিভারি পেইন এটা বুঝতে পারছিলো না। বাসে সে খুব ভ/য় পেয়ে গিয়েছিলো একা একা এতো রাতে জার্নি তাছাড়া তার সময় গনিয়ে এসেছে এখন এই মূহুর্তে কিছু হলে!এই ভ/য়েই পুষ্প ব্যাকুল ছিলো।তার আর শিমুলের প্রথম ভালোবাসার ফল।তখন পুষ্পর মনে হয়েছিলো এতো রাতে আসা ভু/ল হয়ে গেছে,নিজের আবেগকে এতোটা প্রশয় দিয়ে পাগলামি করা ঠিক হয়নি।শিমুল পুষ্পকে খেয়াল করছিলো।ভারী শরীর নিয়ে এতোটা পথ জার্নি করে এসেছে খা/রাপ লাগছে কিনা বুঝার চেষ্টা করছে।পুষ্পর ফ্যাকাসে মুখের দিকে তাকিয়ে বললো,
“কি।খা/রাপ লাগছে?ওই!”
পুষ্প শিমুলকে সত্যিটাই বলে,
“পেটে পেইন করছে।”
আর ছয়দিন পরে পুষ্পর ডেলিভারি ডেট।শিমুল চিন্তিত্ব গলায় বলে,
“কতক্ষণ ধরে?”
“আধাঘন্টা।”
শিমুল বি/ষ্ফোরিত চোখে পুষ্পর দিকে তাকিয়ে থাকে।
“পা/গল নাকি?এতোক্ষণে বলেছো।বেশী ব্যা/থা?”
“এক মিনিট পরে পরে হচ্ছে।”
“বাবুর মুভমেন্ট ঠিক আছে?”
“বেশী ছটফট করছে।”
শিমুল সিদ্ধান্ত নেয় মেডিকেল থেকে ডাক্তার দেখিয়ে নেবে।মা যেই পা/গলামি করে বাচ্চাও দেখা যাবে পাগ/লামি করে আগেভাগে দুনিয়ায় চলে আসছে।তখনি পুষ্প বাকা হয়ে রাস্তায় বসে পড়ে।পেটে হাত দিয়ে ফোসফাস করে শ্বাস ফেলে।শিমুল ভ/য় পেয়ে যায়।
“কি হলো?বেশী খা/রাপ লাগছে?”
“বেশী ব্যা/থা হচ্ছে।খুব বেশী।”
শিমুল হাতের কাছের একটা সি এন জি তে পুষ্পকে নিয়ে উঠে।পুষ্পর এই ধরমর ব্যা/থা তো এই নেই।হাসপাতালে যাওয়ার পরে ডাক্তার বললো এটা ডেলিভারি পেইন।শিমুল বাড়িতে ফোন করে পুষ্পর অবস্থা জানায়।পুষ্পর আব্বা আম্মা আর শিমুলের আম্মা তখনি রওনা দেয়।শিমুল ডাক্তারের কথামতো পুষ্পকে নিয়ে করিডোরে হাটে রঙ চা খেতে দেয়।এভাবেই কেটে যায় চার ঘন্টা।গ্রাম থেকে সবাই যখন এসে পৌঁছায় তখন রাত দুইটা।পুষ্প তখন প্রচন্ড ব্যা/থায় ছটফট করছে।পুষ্পর ব্যাথায় ছটফটানিতে শিমুল ঘাবড়ে যায়।পুষ্পর ক/ষ্টটা তার সয় না।পুষ্পর হাত ধরে ভরসা দেয়।আজকে করা পাগলামিতে রোকসানার ইচ্ছে করে পুষ্পকে ব/কা দিতে কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে ব/কা মুখে আসে না মেয়ের ছটফটানিতে তারও খা/রাপ লাগে।ডাক্তার এসে চেকাপ করে জানায় পুষ্পর নরমাল ডেলিভারি হতে সময় লাগবে।পুষ্প জানায় সে তৈরি।ফুলের মতো নরম,কোমল মেয়েটির সহ্য ক্ষমতা দেখে শিমুল অবাক হয়।পুষ্পর চিৎ/কারে তার চোখেও পানি জমে।সবার আড়ালে গিয়ে সে চোখের পানি মুছে।মা হওয়া এতো ক/ষ্ট!একটা মেয়ে কতোটা স/হ্য করতে হয় যার ক/ষ্টের পরিমান কোনো পুরুষ কোনোদিন বুঝতে পারবেনা।শিমুলের ফুল প্রচন্ড ব্যা/থা নিয়েই সারারাত কাটিয়ে দেয়।ভোরের নতুন আলোর সাথে পুষ্পকে মায়ের স্বাধ গ্রহণ করিয়ে পৃথিবীর বুকে আসে ফুটফুটে ছেলে সন্তান।দুনিয়ার আলো চোখে লাগাতেই কিনা চিৎ/কার করে নিজের ভালো থাকা জানান দেয়।চোখে পানি নিয়ে চোখ বন্ধ করেই পুষ্প কা/ন্নাটা তার কান ভরে শুনে।আহা একটা বাবুর কা/ন্নাও এতো সুন্দর হতে পারে!পুষ্পর বুকটা সুখে চিনচিন করে উঠে।শিমুল রুমের বাহিরে দাঁড়িয়ে বাবুর কা/ন্নাটা শুনে।তার হাত পা তিরতির করে কেঁপে বাবা হওয়ার সুখ জানান দেয়।সাথে সাথে আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া জানায়।রাবেয়া নাতীকে নিয়ে বাহিরে আসে।শিমুলের কোলে দিয়ে বলে,
“আব্বা তোর মতোই হইছে।”
শিমুল ছেলেকে কোলে নিয়ে চোখ ভরে দেখে।সে তার বুকে কেমন কাঁ/পন টের পাচ্ছে।পুষ্পর কাছে যায়।পুষ্প হাসিমুখে শিমুলকে দেখছে।শিমুল কি বলবে ভাষা খুঁজে পায় না।মেয়েটা এতোটা ক/ষ্ট সহ্য করার পর এখন বাবু দেখে কেমন হাসছে।এটাই বুঝি না।শিমুল আস্তে করে বললো,
“তোর কাছে সারাজীবন ঋণী রে বউ।আমাকে বাবা বানিয়ে দিলি।ধন্যবাদ দিলে কি পোষাবে?”
“আমাকেও তো মা বানিয়ে দিলে!এতো সুখ দাও কেনো আমাকে?”
শিমুল বাবুর ছোট ছোট হাতগুলো ধরে।পুষ্প শিমুলের চোখের কোনায় চিকচিক করা পানির কণা দেখে বললো,
“কাদো কেনো?তোমার চোখে পানি দেখবো বলে কি এতো কষ্ট সহ্য করলাম?”
শিমুল কথা বলতে পারে না।বাবুর ছোট হাত তার চোখে রেখে চোখের পানি আড়াল করার চেষ্টা করে।এই সুখের মূহুর্ত দেখে পুষ্পর চোখেও সুখের কান্না আসে।আহা সুখের মূহুর্ত এতো সুন্দর কেনো?মা হওয়া এতো সুখের কেনো?প্রিয় পুরুষকে বাবা রূপে দেখা এতো আনন্দের কেনো?এতো এতো কেনোর উত্তর পুষ্পর জানা নেই আর না সে জানতে চায়।কিছু প্রশ্নের উত্তর অজানা থাক।
চলবে…..