আমার বয়ফ্রেন্ড রিফাতের জন্মদিনে তাকে কি গিফট দিবো সে যখন কথাটা জিজ্ঞেস করলো,তখন আমি আমি মুচকি হেসে বললাম, সারপ্রাইজ থাকুক সেটা।
আমি মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে,কিন্তু তবুও মা’র থেকে টিফিনের টাকা,সিএনজির বদলে বাসে চড়ে,মাকে না জানিয়ে ১ মাস ১টা টিউশনি করে প্রায় ৫ হাজার টাকা জমিয়ে ফেললাম।
হয়তো অনেক বেশী না তারপরেও এই ৫ হাজার টাকা জমাতে আমার গায়ের রক্ত জল হয়ে গেলো।
পরদিন রিফাত মেসেঞ্জারে একটা শার্টের ছবি দিয়ে বললো,” দেখো তো কেমন?”
আমি বল্লাম, সুন্দর।
সে বললো, “আমাকে এটা কিনে দিবা জন্মদিনে রিচম্যান থেকে। ওখানে প্যান্ট ও পাবা আর একটা ওয়ালেট,জেন্টেল পার্কে একটা কালো পাঞ্জাবি চুজ করে রেখেছি,তোমাকে পিক দিচ্ছি। আর একটা ঘড়ি,এগুলা আমার পছন্দের,আর বাকী তোমার যা ইচ্ছে করে নিও।”
আমি বললাম,” রিচম্যান,জেন্টেল পার্কের পণ্যের তো অনেক দাম,আমার বাজেটে কুলাবে না।”
“আমি কি এরকম চেয়েছি তোমার কাছে?
আমার ফ্রেন্ডদের গফরা দেখি কতো কিছু গিফট করে,এন্ড সবই ব্রান্ডের প্রোডাক্ট।
আর তুমি আমাকে এটুকু দিতে পারবে না?
আমি ফ্রেন্ডদের কে কিভাবে দেখাবো আমার গফ আমাকে কি গিফট দিলো?”
” আচ্ছা ঠিক আছে,দিবো।”
রিফাত কে তো বললাম দিবো,কিন্তু এতো টাকা আমি কিভাবে জোগাড় করবো?
আগামী সপ্তাহে ওর জন্মদিন,আমি এখন কি করবো ভাবতে ভাবতেই স্টুডেন্টদের বাসায় গেলাম,পড়াতে বসে বার বার আনমনা হয়ে যাচ্ছি,স্টুডেন্টের মা দরজার ওপাশ থেকে বিষয় টা খেয়াল করলেন,কিছুক্ষণ পরে সামনে এসে জিজ্ঞেস করলেন,”ম্যাডাম,আপনার কি শরীর খারাপ?”
” না আন্টি,আমি আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।”
“আমি খেয়াল করছি আজ আপনি কেমন যেনো,কোনো সমস্যা হলে আমাকে বলতে পারেন,আমার ও একটা ছোটবোন ছিলো আপনার বয়সী।মারা গেছে। ”
আমি ভাবলাম আন্টিকে কি বলা যায় আমাকে আগামী ২ মাসের বেতন এডভান্স দিতে,পরক্ষণে ভেবে চিন্তে বলাটাই ঠিক হবে ভেবে বলে দিলাম।
শুনে আন্টি বললো,” ঠিক আছে,সমস্যা নেই,আমি আগামী ২ মাসের বেতন আপনাকে এডভান্স দিয়ে দিবো,টাকা পয়সা নিয়ে প্রব্লেম হলে বলবেন,লজ্জা পাবেন না।আমার বোন টা বেঁচে থাকলে ওকে ও তো দিতাম।”
” অনেক ধন্যবাদ আপনাকে আন্টি। “
আন্টির থেকে টাকা নিয়ে চলে এলাম বাসায়।
বাড়ি আসার পথেই মা কল দিলো,ফোন রিসিভ করতেই উদ্বিগ্ন স্বরে জিজ্ঞেস করলো,”নিরু,কোথায় তুই?”
“এইতো মা আসছি,পথে।”
“আচ্ছা আয়,সাবধানে আসিস।”
প্রতিদিনই কলেজ থেকে বাসায় ফিরার সময় মা ২-৩ বার কল দিবেই দিবে।
আমার মা ফারজানা বেগম একজন সাধারণ গৃহিণী,উনি একটা কিন্ডারগার্টেনে চাকরি করে,বাবা মারা যাওয়ার পর আমাকে নিয়ে মা অনেক লড়াই করে এই পর্যন্ত এসেছে,আমি অনার্সে পড়ি এখন।
মা এখন আগের মতো নাই,শরীর দুর্বল হয়ে গেছে আগের চাইতে,কোমরের ব্যথা টা অনেক জ্বালায়,সারাদিন স্কুল,টিউশনি,সেলাই এসব করে করে শরীরের খেয়াল রাখার সময় পায় নি,তার উপর আমার লেখাপড়ার খরচ,বাড়ি ভাড়া,সংসারের খরচ,আয়ের পথ শুধুই মা,বাবা আমাদের জন্য কোনো সম্পদ রেখে যেতে পারে নি,বাবার চিকিৎসার পিছনেই সব শেষ তবু বাবাকে বাঁচানো যায় নি।
মা তখন শক্ত হাতে সংসারের হাল ধরেছে,অনেকে মা কে আবার বিয়ে করার কথা বলেছিলো,বাবার মৃত্যুর সময় আমি ছিলাম ৪ বছরের
একা একটা মহিলার বেঁচে থাকা অনেক কঠিন আমাদের সমাজে,শিয়াল কুকুরের হানা প্রতিনিয়ত পড়ে,আর সেখানে যদি হয় মহিলা ডিভোর্সি বা বিধবা,তাহলে তো কথাই নেই আর।
মা সব প্রতিকূলতা কাটিয়ে আমাকে বড় করে তুলেছিলো।একটাই স্বপ্ন ছিলো,আমি একদিন প্রতিষ্ঠিত হবো,মায়ের সব কষ্ট দূর হবে সেদিন।
বাসায় ফিরে খাওয়া দাওয়া করে হিসাব করলাম,মাত্র ১২হাজার টাকা আছে আমার কাছে এখন,১২ হাজার টাকাতে কি হবে?
জন্মদিনে তো রিফাত ওর বন্ধুদের নিয়ে আসবে,সবাইকে ট্রিট দিতে হবে।এই টাকায় যদি না কুলোয়?
হঠাৎ করেই খুব রাগ উঠলো মায়ের উপর,এরকম অভাবের সংসার কেনো আমাদের?
মা বিকেলে বাসায় এসে দেখে আমি চুপচাপ বসে আছি,মা এসেই জিজ্ঞেস করলো,”খেয়েছিস?”
“হ্যাঁ খেয়েছি।”
“মন খারাপ কেনো,কি হয়েছে?”
“কিছু হয় নি,মন ভালো আছে।”
“এরকম চুপচাপ কেনো,আমাকে বল কোনো সমস্যা হলে।”
“বললাম না কিছু হয় নি,এতো কথা জিজ্ঞেস করো না তো, যাও।”
“তুই কি আমার উপর রেগে আছিস কোনো কারনে?
আয়,মায়ের হাতে ২ লোকমা ভাত খা।”
“এসব আদরই তো করতে পারো,আর কি পারো এসব সস্তা আদর ছাড়া?”
মা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো,”কি বললি তুই এটা নিরু?
আমি সস্তা আদর দেই তোকে,মায়ের আদরের পরিমাপ করার মতো কি যন্ত্র আছে?”
“সস্তাই তো,আমার বান্ধুবীদের কে দেখি প্রতি মাসে মাসে নতুন নতুন ড্রেস,বোরকা,হিজাব সবই কিনে,ওরা একটা ব্যাগ ১ মাস ব্যবহার করে না,সবাই এন্ড্রয়েড ফোন ব্যবহার করে এবং দামী ফোন সেগুলো,আর আমি কি ব্যবহার করি এটা?
একটা বোরকা ১ বছর গায়ে দেই,২ টা হিজাব দিয়ে বছর কাটাই,এই ঈদে আর ওই ঈদে ২ টা জামা,এই তো দাও,এটাই কি আদর?
তারপরেও তুমি বলবে এসব সস্তা আদর না?
আমার অভিযোগ শুনে মা ভাতের প্লেট রেখে দিলো না খেয়েই।
আমার সামনে এসে বসে বললো,”তোর একটু মাথা ব্যথা হলে আমার বুকের ভিতর যে পরিমানে ব্যথা হয়,তুই কি সেই ব্যথা কখনো মেপে দেখেছিস?
তার পরিমান কতোটুকু,আমার আদর টাই সস্তা মনে হলো তোর কাছে,তোর জন্য আমার ত্যাগ টা কি কখনো দেখেছিস তুই?
ভালোবেসে তোর বাবাকে বিয়ে করেছিলাম,তাই আমার বাবার বাড়ি থেকে মেনে নেয় নি,তোর দাদাবাড়ি থেকেও মেনে নেয় নি।
কিন্তু তোর বাবার মৃত্যুর পর আমার বাবা মা এসেছিলো আমাকে নিতে,আমি যাই নি।জীবিত থাকতে যেখানে আমার স্বামীকে ওরা মেনে নেয় নি,আমাকে মেয়ে বলে মেনে নেয় নি,এখন আমার দুঃসময়ে তাদের করুণা আমার চাই নি বলে ফিরিয়ে দিয়েছিলাম বাবা মা কে,তোর দাদা দাদী ও তোর বাবাকে কোনো সম্পত্তি দেয় নি।
আমার বাবা মা আমাকে অন্য জায়গায় বিয়ে দেয়ার অনেক চেষ্টা করেছে কিন্তু আমার তুই আছিস তোর বাবার শেষ অস্তিত্ব হিসেবে,তাই পারি নি তোকে ছেড়ে নিজের জীবন সুখী করতে,তাও কি সস্তা আদর ছিলো?
এই যে আমার গায়ের বোরকা দেখেছিস,তোর বাবা জীবিত থাকতে আমাকে ২ টা বোরকা কিনে দেয়,আজ এতোগুলো বছর এই ২ টা বোরকা আমি গায়ে দিয়ে স্কুলে যাই,অনেক জায়গায় ছিড়ে গেছে বোরকা,রিপু করে নিয়েছি,বড় ওড়না গায়ে দেই রিপু ঢেকে রাখতে,কিন্তু তোকে প্রতিবছর নতুন বোরকা আমি ঠিকই কিনে দেই,তোর কাছে কি আমার এই কষ্ট টাও সস্তা মনে হয় নিরু?
তোকে এই ঈদে আর ওই ঈদে ২ টা জামা দেই ঠিক বলেছিস,কিন্তু আমি যে কোনো ঈদেই একটা কাপড় নিই না তুই কি কখনো সেটা দেখেছিস?
তাও কি সস্তা আদর আমার তোর জন্য?
এই দেখ আমার হাতে ১ টা চুড়ি,তোর বাবা আমাকে ২টা চুড়ি গড়িয়ে দিয়েছিলো,আমাকে এই ২ টা চুড়ি পরিয়ে দিয়ে বলেছিলো,মৃত্যু ছাড়া এই ২টা চুড়ি তুমি হাত থেকে খুলবে না,আমার ভালোবাসার প্রথম নিদর্শন এই চুড়ি।তোর বাবা মারা যাওয়ার পর তোর নিউমোনিয়া হয়,আমার হাতে টাকা ছিলো না,তোর বাবা ও কিছু রেখে যায় নি,তাই তোর চিকিৎসার জন্য তোর বাবার শেষ স্মৃতি ২ টা চুড়ির ১ টা চুড়ি বিক্রি করে দিয়েছিলাম তখন,আর পারি নি ১ টা চুড়ি গড়তে,তোর বাবার শেষ স্মৃতিটুকু বিক্রি করতে আমার একটুও কষ্ট হয় নি,আমার কলিজার ছেড়া ধন,আমার মেয়ে সুস্থ হবে এই জন্য আমি ১টা চুড়ি বিক্রি করে দিয়েছিলাম সেদিন,তাও কি তোর সস্তা মনে হয়?
আমি জানি রে মা,তোর অভিযোগ সবই সত্যি,কিন্তু আমার যদি সেই উপায় থাকতো,আমি ঠিকই তোর সব ইচ্ছে পূর্ণ করতাম,আমার ও তো ইচ্ছে করে আমার মেয়েকে হাসিখুশী দেখতে,আমার মেয়ে অনেক সুন্দর করে সেজেগুজে থাকুক আমার ও তাতে অনেক খুশী,কিন্তু আল্লাহ আমাকে সেই তৌফিক দেয় নি,যতোটুকু পারি তোর কোন আবদার রাখি নাই আমি?
মা বাবার দেওয়া জিনিস হয়তো কমদামী হয়,হয়তো বাবা মা তোদেরকে তোদের পছন্দ মতো ভালো জিনিসটা দিতে পারে না,কিন্তু তোদের কে ছোটো যে জিনিসটা দেয়,তা অনেক ভালোবেসে দেয়,প্রতিটি জিনিসের পিছনে বাবা মার একটা স্বার্থই থাকে,তোদের মুখের হাসি টুকু,যা অমূল্য সব বাবা মায়ের কাছে। ”
মা হাতের অরেকটা চুড়ি আমার হাতে দিয়ে বললো,”তোর হয়তো কোনো জিনিস পছন্দ হয়েছে,মা রে আমার কাছে তো এখন টাকা নাই,এই চুড়িটা ছাড়া আর কোনো সোনা ও নাই আমার নিজের,তোর বিয়ের জন্য গড়িয়ে রাখা কয়েকটি গয়না ছাড়া,এই চুড়ি টা বিক্রি করে তুই তোর পছন্দের জিনিসটা কিনে নিস,তাও এরকম রাগ করে থাকিস না মায়ের উপর,একটু হেসে দে এবার।”
আমি চুড়িটা হাতে নিয়ে হেসে মা কে জড়িয়ে ধরলাম।
রিফাতের জন্মদিন চলে এলো,যথারীতি দেখা করতে গেলাম তার সাথে।সাথে ওর ৪-৫ জন বন্ধু বসে আছে।
রেস্টুরেন্টে বসে রিফাত গিফটের প্যাকেট খুলতে লাগলো। আস্তেআস্তে ওর হাসি মুখ বিবর্ণ হয়ে গেলো। সবগুলো প্যাকেট খুলে আমার দিকে হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইলো।
ওর কিছুতেই বিশ্বাস হচ্ছিলো না এই গিফট আমি তাকে দিচ্ছি।
আমি মুচকি হাসতেন বললাম,” খুব অবাক হচ্ছো গিফট দেখে,ভাবছো তোমার দেয়া গিফট আবার তোমাকে ফিরিয়ে দিয়েছি কেনো?”
” হ্যাঁ,এসব কেমন কাজ,মানে কি এসবের?”
” শুনো রিফাত,তুমি তো জানতেই আমি একটা সাধারণ পরিবারের মেয়ে,না আছে আমার বাবা,না আছে আমার মায়ের অনেক টাকাপয়সা। মা আমাকে অনেক কষ্ট করে বড় করে তুলেছে,কখনো আমাকে বুঝতেই দেয় নি তার কি পরিমাণে স্ট্রাগল করতে হচ্ছে আমাকে ভালো রাখার জন্য,আর আমি এরকম হতভাগী এক বাসায় থেকেও কখনো দেখে ও দেখি নি যে আমার মায়ের কতো না পাওয়া জিনিস রয়ে গেছে আমার অগোচরে, কখনো হয়তো জানতেই পারতাম না।
ব্রান্ডের জিনিস গিফট করলেই ভালোবাসা প্রকাশ পায় না সবসময়,মাঝে মাঝে একটা গোলাপের মাঝেও লুকিয়ে থাকে প্রিয়জনের অব্যক্ত ভালোবাসা।
ভালোবাসা মিশে থাকে একটা সাদা রুমালে প্রেমিকার যত্ম করে তোলা ফুলে।
ভালোবাসা মিশে থাকে প্রেমিকের দেওয়া ১মুঠো কাঁচের চুড়িতে।
তুমি ভালোবাসা কি আসলে সেটাই বুঝো নি,তুমি বুঝেছো বন্ধুদের সামনে শো-অফ করা।
এটাকে ভালোবাসা বলে না রিফাত।
তোমার জন্মদিনের গিফট দেয়ার টাকা আমি ঠিকই জোগাড় করেছি কিন্তু সেই টাকা দিয়ে তোমার জন্য একটা সুতো ও কিনি নি,বানিয়েছি আমার মায়ের জন্য একটা চুড়ি,ঠিক যে চুড়িটা আমার অসুখের সময় মা বিক্রি করে দিয়েছিলো,বাবার শেষ স্মৃতিটুকু,আমিও ঠিক তেমনি একটা চুড়ি মায়ের জন্য বানিয়েছি মায়ের জন্য।
রিফাত,আমি তোমার টাইপের না,তুমিও আমার টাইপের না,তোমার জন্য দরকার এমন একজনকে যে কিনা তোমাকে দামী দামী গিফট দিবে,তোমার বন্ধুদের গার্লফ্রেন্ডদের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পারবে,স্টাইলিশ ভাবে চলতে পারবে,আমি সেরকম হতে পারবো না,আমি তেমনি টা হতে চাইও না।
আমার দরকার এরকম একজনকে,যে একটা টং দোকানে নিয়ে যাবে আমাকে একসাথে বসে চা খাওয়ার জন্য,কপালের টিপ জায়গা মতো না হলে যে আমার টিপটা বসিয়ে দিবে ঠিক জায়গায়, আমার কাজলমাখা চোখের দিকে তাকিয়ে যে মুগ্ধ হয়ে যাবে।একটা গোলাপ এনে যে লোকসম্মুখে আমাকে দিতে লজ্জা পাবে,ভীতু চোখে চারদিকে তাকিয়ে আমার হাতের মুঠোয় গোলাপ গুঁজে দিবে।আমার এরকম একজনকে দরকার।
আমাকে ক্ষমা করে দিও।”
আর এক মুহূর্ত দাঁড়ালাম না সেখানে দ্রুত বাসায় ফিরে এলাম।আজ খুব শান্তি লাগছে। মায়ের আরেকটা চুড়ি আমি সেদিন বিক্রি করে দেয়ার জন্য নিই নি,নিয়েছিলাম একই ডিজাইনের আরেকটা চুড়ি গড়ার জন্য,২ আনা সোনা দিয়ে একটা চুড়ি গড়াতে আমার একটুও সমস্যা হয় নি,সাথে একটা বোরকা ও এনেছি।
বাড়ি ফিরতেই কেমন আনন্দ অনুভব করছিলাম,আজ মা কে সারপ্রাইজ দিবো।মা আজ স্কুলে যায় নি।
বাসায় ঢুকতেই দেখতে পেলাম মা ঝুঁকে ঝুঁকে কি যেনো সেলাই করছে।
মায়ের হাতে গিফট বক্সটা দিয়ে বললাম,”খোলো তো মা”
মা জিজ্ঞেস করলো কি এটা,আমি মুচকি হেসে চুপ হয়ে রইলাম।
আমার থেকে জবাব না পেয়ে মা খুলতে লাগলো বক্সটা।আমি দেখতে পেলাম মায়ের চোখ আস্তে আস্তে ভিজে উঠছে।
চুড়ি দুটো হাতে নিয়ে মা স্তব্ধ হয়ে বসে রইলেন।আমি বোরকা টা মায়ের হাতে দিলাম।
মা কাঁদছেন,ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছেন।মায়ের কান্না আমার সহ্য হচ্ছে না,সারাজীবন তো মা কেঁদেছে আর কতো কাঁদবে,তাই করুণ সুরে বললাম,”ভীষণ ক্ষিধে পেয়েছে মা,ভাত খাইয়ে দাও তো। ”
আমার ক্ষিধে পেয়েছে শুনে মা উঠে গেলো খাবার আনতে।আজ অনেক বছর পর কেমন নিশ্চিন্ত অনুভব করলাম।
অণুগল্প
#আমার_মা
জাহান আরা