একটা সুপার শপে গেছি। মাছ এবং মাংসের সামনে ঘুরাঘুরি করছি। ইচ্ছা গরুর মাংস কেনার।
দোকানের ছেলেটা বলল, ভাই, হাঁস এবং কবুতরের মাংস আছে। নিবেন?
আমি বললাম,দেখাও।
সে ফ্রিজ থেকে এক কেজি প্যাকেটের দুইটা হাঁস এবং কবুতরের মাংস বের করে দিল। এখন সুবিধা হয়েছে,সব কিছু প্যাকেটজাত পাওয়া যায়। মনে মনে ভাবলাম, আজ বাসায় গিয়ে হাঁসের মাংস দিয়ে চিতই পিঠা খেলে কেমন হয়? এই খাবারটা অনেকদিন খাওয়া হয় না।
হাঁসের মাংস কিনতে গিয়েও কিনলাম না। ফ্রিজের মাংস এমনিতেই সুস্বাদু নয়। কবে এনে ফ্রিজে রেখেছে কে জানে!
খাবো যখন টাটকা মাংস খাবো, এই বিবেচনা করে কাঁচা বাজারে চলে গেলাম। দুইটা হাঁস কিনে বাসায় ফিরলাম। বউকে বললাম, রাতে মজা করে হাঁসের মাংস দিয়ে চিতই পিঠা খাবো।
বউ বলল,চাউলের ঘুরা তো নাই।
আমি বললাম, ব্লেন্ডার দিয়ে ব্লেন্ডিং করে নাও।
আমাদের বাসায় একজন ছুটা কাজের বুয়া আছেন। তার কাজ নির্দিষ্ট করা আছে। নির্দিষ্ট কাজের বাইরে তিনি কোন কাজই করতে চান না। বাড়তি টাকা দিলেও না। তার কাজের টাইমও ফিক্সড করা। সময়ের বাইরেও তিনি কোন কাজ করেন না। ঘড়ি ধরে আসেন, ঘড়ি ধরে যান। যেহেতু একাধিক বাড়িতে কাজ করেন, টাইম ফিক্সড করা থাকবে এটাই স্বাভাবিক।
হাঁসের মাংস প্রস্তুত করা এতো যন্ত্রনার আগে জানতাম না। গরম পানিতে চুবিয়ে নখ দিয়ে একটা একটা করে খুটে খুটে লোম বাছতে হয়। এতো লোম বাছতে গিয়ে বউয়ের সারাদিন লেগে গেল এবং তার আঙ্গুলে ব্যথা হয়ে গেল। যন্ত্রনার কাজ দেখে মেয়ে তার ধারেকাছেও গেল না।
বউ হাঁসের লোম বাছতে বলল, এতো কচি হাঁস কেউ কিনে?
আমি বললাম, কচি জিনিসই তো ভালো। খেতে মজা।
তোমার জন্য মজা হলে কী হবে, আমার জন্য তো সাজা। হাঁসগুলোর বয়স বেশি হয়নি বলেই লোম বাছতে সমস্যা হচ্ছে।
হাঁসের মাংস আর চিতই পিঠা, আমার অসম্ভব প্রিয় একটা খাবার। আগে শ্বশুড়বাড়ি গেলে এই খাবারটা আমার জন্য অবশ্যই বরাদ্দ থাকতো।
রাতে খুবই আরাম করে পিঠা খেলাম। মাংস এতোই সুস্বাদু হয়েছে যে আমি প্রায় দুই বাটি মাংস খেয়ে ফেললাম। আমার খাওয়া দেখে বউ খুবই অবাক হলো। মেয়ে বলল, আব্বু, তুমি এতো খাবার খেলে,আমার তো বিশ্বাস হচ্ছে না!
একসাথে সে আমাকে এতো খাবার খেতে দেখেনি।
রাতে শোয়ার সময় বউ আমাকে বলল, হাঁসের লোম বাছতে গিয়ে তাকে টানা অনেকক্ষণ বসে থাকতে হয়েছে। ফলে, আঙ্গুল এবং হাটু ব্যথা করছে।
আমি বললাম,শুয়ে পড়। কিছুক্ষণ ঘুমালেই ঠিক হয়ে যাবে।
বলাবাহুল্য, সে সুগারের রোগী।
কিছুক্ষণ সে আঙ্গুল এবং পা টেপাটিপি করলো,তারপর শুয়ে পড়ল। আমিও ঘুমিয়ে গেলাম।
মাঝরাতে গোঙানির মতো আওয়াজ পেয়ে ঘুম ভেঙে গেল। তাকিয়ে দেখি,বউ কম্বলের নীচে নাই। বসে আছে এবং পা টিপাটিপি করছে। তার পায়ে প্রচণ্ড ব্যথা করছে। আমি কি করবো বুঝতে না পেরে কম্বল সরিয়ে বসে রইলাম।
সে একনাগাড়ে পা টিপে যাচ্ছে। ঘরে নাপা টেবলেট ছিল,তা খেতে দিলাম। সে আমাকে জানালো,তার বাম পা বেশি ব্যথা করছে। আমি বললাম,আমি তোমার পা টিপে দেই?
সে আঁতকে উঠে বলল, না,না। পা টিপতে হবে না। এমনিতেই সেরে যাবে, বলেই পা সরিয়ে নিল।
আমি বললাম, সমস্যা কী? তুমি ঠিকমত টিপতে পারছো না, আমি টিপে দেই,আরাম পাবে।
সে কঠোর গলায় বলল,না।
আমি মনে মনে ভাবলাম, এখন যদি আমার পা ব্যথা করতো,সে কি আমার অনুমতির তোয়াক্কা করতো? কখনোই না। সে অনুমতির ধারেকাছেও যেত না। পা টিপা শুরু করে দিতো। আমাকে এই অবস্থায় রেখে সে ঘুমাতেও পারতো না। জেগে বসে থাকতো।
তাহলে আমি ঘুমাতে পারলাম কী করে? কেন তার পা ধরতে আমার সংকোচ লাগছে? এটা কি পুরুষত্বের অহংকার? নাকি স্বামী হবার গৌরব?
স্বামী স্ত্রীর পায়ে হাত দিলে গুনাহ হবে, সম্ভবত এই ধারনা থেকে আামকে পায়ে হাত দিতে দিচ্ছে না। সে কঠোর ধর্ম পালন করে।
আমি জোর করে তার পা টেনে নিলাম। সে আবারও পা সরিয়ে নিল।
আমি বললাম, সরি। তুমি এতো কষ্ট করে হাঁসের লোম বাছতে গেলে কেন?
বউ বলল, তুমি শখ করে একটা খাবার খাইতে চাইছো, আমি করবো না তা কি হয়?
আমি বিরক্ত গলায় বললাম, এটা এমন কোন খাবার নয় যে, না খেলে আমি মরে যাবো। একদিন পর কাউকে দিয়ে করালেই তো পারতে,,,
তা কী করে হয়। আজকে তোমার খাইতে মন চাইছে। পরে হয়তো আগ্রহ না ও থাকে পারে।
আমার মনে হলো, এই যে আমরা স্বামী স্ত্রী এতো কাছাকাছি পাশাপাশি থাকি,অনেক সময় একজন আরেকজনের উপর অনাহুত দায়িত্বের বোঝা চাপিয়ে দেই, অপরজনের সুবিধা অসুবিধার খবর আমরা কয়জনে রাখি?
#হানিফ_ওয়াহিদ