শিশিরের আদ্র পর্ব ১২
#Neel
মধ্যরাতে আদ্র বাড়ি ফিরেছে। তাও ছাদ টপকে। সে জানে এখন, কেউ জেগে নেই। আদ্র নিজের কাজের জন্য অনুতপ্ত। তার শিশির কে এভাবে হার্ট করা উচিত হয় নাই। শিশির ও তো এটার সম্পর্কে জানতো না।আদ্র নিজের রুমে না গিয়ে চুপচাপ শিশিরের রুমে চলে গেল। শীতের মৌসুম ।সবাই কম্বল গা দিয়ে ঘুমিয়ে আছে। অন্ধকার ও বটে। আদ্র পড়লো মহা বিপদে। এখন এই তিনজনের মধ্যে কিভাবে বুঝবে কোনটা শিশির।
আদ্র ১ম জনের কম্বল সরাতে গিয়ে আচমকা পানের গন্ধ পেল। আদ্র কম্বল না সরিয়ে এইপাশ থেকে কেটে পড়ল।অপর পাশে গিয়ে বিরবির করে বলল – বুড়ি, তুই মাঝে ঘুমোতে পারিস নি আজ। আর কি পান খায় রে, দাদার আত্মাতো মনে হয় পানের গন্ধেই কাছে আসে না।আরেকটু হলেই তো … উফ্ বাবা, কি জোর বাঁচা বেঁচে গেছি। ভালোবাসা, তুই বড্ড বেইমান। কেন যে ভালোবাসতে গেলাম, এখন ভুল করে, না দেখে ও থাকতে পারছি না।এই পাশে কে শুয়ে আছে, আল্লাহ মাবুদ, রক্ষা কইরো আমারে।
কম্বলটা উল্টাটেই ঠাস করে একটা চর লাগল আদ্রের গায়ে। আদ্র ভয়ে ধপ করে নিচে বসে পড়লো। আদ্র প্রথমে মনে করছিল হয়তো সামনে থাকা মানুষটা জেগে আছে। আদ্র চোখ বুজেই মাথা চাপড়াতে চাপড়াতে বলল-আজ আমার ইজ্জত শেষ।
মিনিট দুয়েক এর পর ও আদ্র কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে চোখ খুলে তাকালো। আবছা আলোয় দেখলো শিশির ঘুমিয়ে আছে।আদ্র বুকে হাত রেখে সস্থির নিঃশ্বাস ফেলে বললো – ঘুমের মধ্যে ও তুই ফাইট আর হাত পা নাড়া বন্ধ করোছ না। যাক জাগা অবস্থায় নেই তুই। ঘুমন্ত অবস্থায় আমার ১২টা বাজিয়ে ফেলছিস , জাগা থাকলে কি করতি। মাবুদ রে, আমার প্রিয়তমা কে একটু জ্ঞান বুদ্ধি দাও।
(শিশির এর দিকে এগিয়ে, গালে হাত রেখে কপালে চুমু দিয়ে) বলল-মাফ করে দিও প্রিয়। এভাবে রিয়েক্ট করা ঠিক হয় নি। কাল থেকে তো মনে হয় রাগ করে আমার সাথে কথা বলবি না, আর ভয়ে আমাকে তোর ধারের কাছেও আসতে দিবি না। সরি রে।
শিশির যে পাশে শুয়ে আছে,সে পাশে একটা ছোট্ট টেবিল আছে। ওটার উপর একটা চিরকুট আর শিশিরের ওই নূপুর টা রেখে চলে গেল।
____
সকাল বেলা, ঘুম ভেঙ্গে গেলো চিল্লাচিল্লি শব্দে। উঠে দেখি দাদি নেই আর স্বর্ণালী আপু ও আড়মোড়ে জেগে ওঠে পাশে বসলো।
খাট থেকে নিচে নামতেই, টেবিলের উপর আমার নূপুর টা আর একটা সাদা কাগজ দেখতে পেলাম। আমি চিল্লিয়ে বলে উঠলাম – আমার প্রিয় নূপুর।
স্বর্ণালী আপু চোখের ইশারায় বলল কী হয়েছে?
বললাম – আমার নূপুর পেয়েছি। যেটা হারিয়ে গিয়েছিল।
কিন্তু এখানে একটি চিরকুট ও আছে।(এ কথাটা আস্তে আস্তে বললাম)
চিরকুট টা খোললাম….
…. পুরোনো সেই নদীর তীরে বসে স্মৃতিচারণ করলাম….হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে আমি ভুল করে ফেলেছি…. আমাকে না হয় ক্ষমাই করো….
~~আদ্র~~
তার মানে আদ্র ভাইয়া আমার নূপুর পেয়েছিল। ধন্যবাদ আদ্র ভাইয়া। নূপুর গুলো খুব ই প্রিয় ছিল। তার জন্য তোমাকে মাফ করে দিলাম। তবে এতো সহজে না। তোমাকে ও বানের জলের গোল পানি প্রথমে খাইয়ে নেই। হি হি
স্বর্ণালী – কিরে , হাসছিস কেন?
এমনিই। উঠে গিয়ে চিরকুট টা ডায়েরির ভেতর রেখে দিলাম। কেন রাখলাম জানি না, তবে ভালো লাগছে।
—সারাদিনে এই পর্যন্ত আদ্র ভাইয়াকে দেখি নাই। সবাই কাজে ব্যস্ত আছে। বরপক্ষ বলে কথা, কম হলে চলবে না।
দুপুরে,মা চিল্লিয়ে চিল্লিয়ে বলছে তাড়াতাড়ি গোসল করে আসতে।৩টার দিকেই আমাদের সবার কমিউনিটি সেন্টারে উপস্থিত থাকতে হবে। দেড়টার উপরে বাজে।
স্বর্ণালী আপু সব কিছু তে ফিটফাট। এবার আমি গোসল করতে গেলাম।
গোসল শেষ করে বের হতে, একটা টাস্কি খাইলাম। আমার রুমে অহনা আপু। আমার ওয়াড্র চেক করছে। মনে হয় গুরুত্বপূর্ণ কিছু খুঁজছে। আমি বুঝে গেছি, সে কি খুঁজতেছিল। কিন্তু তার তো হুঁশ নেই, যে রুমের ভেতর আমি ছিলাম।
কি করা যায়,কি করা যায়, আইডিয়া। খুব ভালো একটা বুদ্ধি এলো। আমি আস্তে আস্তে ডিসেন টেবল থেকে তেলের বোতলটা নিয়ে, আর মোবাইল টা ভিডিও অন করে অহনা আপুর দিকে সেট করে রাখলাম।
অহনা আপু খুব ব্যস্ত।ড্রয়রে আমার জামাকাপড় গুলো উলোট পালোট করে ফেলেছে। তার থেকে কিছুটা দূরে আমি তেলের বোতল থেকে সব তেল ফ্লোরে ঢেলে দিলাম। আস্তে আস্তে ওয়াসরুমে ঢুকে গেলাম। মিনিট দুয়েক এর মধ্যেই সব সেট। আমি ওয়াসরুম থেকে বের হওয়ার অভিনয় করলাম।
অন্যদিকে অহনা হুট করে ওয়াসরুমের দরজার আওয়াজ শুনে হচকচিয়ে উঠলো। দ্রুত রুম থেকে চলে যাওয়ার সময় তেলের উপর পিছল খেয়ে ঠাস করে ফ্লোরে পড়লো।
আমি অহনা আপুকে ফ্লোরে পড়ে যেতে দেখে হাসি আটকাতে পারলাম না, হাসতে হাসতে ওয়াসরুমের সামনে ই বসে পড়লাম।
অহনা – ও মাগো মরে গেলাম। আমার কোমরটা ভেঙ্গে গেল গো।অশি, তোমার কি কমন সেন্স নেই একজন মানুষ তোমার সামনে পিছনে পড়ে ব্যাথা পেয়েছে, আর তুমি হাসছো?মা গো…
হাসি কোন রকমে আটকিয়ে বললাম – সরি সরি, আমি ছোট মানুষ তো বুঝতে পারিনি। তা তুমি আমার রুমে কি করছো? পরলেই কি করে? বলেই আবার হেসে দিলাম।
অহনা শিশিরের প্রশ্নে থমথমিয়ে গেল। কি বলবে,কি বলবে বুঝতে পারছে না। ফ্লোর থেকে উঠার চেষ্টা করতেই আরেকবার পিছলিয়ে ধপাস করে পড়লো। পড়তেই অহনা চিৎকার করে উঠলো – ও মা গো… গেলাম।
রুমের সামনে দিয়ে অহনার ভাই রোহান যাচ্ছিল। দৌড়ে রুমে এসে দেখলো অহনা পড়ে আছে।
রোহান – তুই ফ্লোরে বসে আছিস কেন?
অহনা -তুই কথা বলিস না, আমাকে ধর, ধরে আমার রুমে নিয়ে যা ।
অহনা আর রোহান ভাইয়া যেতেই আমি হাসতে হাসতে বেডে গড়াগড়ি খেতে লাগলাম। ভিডিও এর কথা মনে পড়তেই, দৌড়ে মোবাইল ফোন হাতে নিলাম। ভিডিওটি পুনরায় দেখতেই হাসি আরো বৃদ্ধি পেয়ে গেল। ভিডিওটি শান্ত ভাইয়ার মোবাইল এ পাঠিয়ে দিলাম।
অন্যদিকে, অহনা কে রোহান রুমে নিয়ে যেতেই…
রোহান – তুই ও মেয়ের রুমে গিয়েছিলি কেন? আদ্র ভাইয়ের কথা মনে নেই? তুই কোন দিন যেন আদ্র ভাইয়ের হাতে চর থাপ্পর খাস। আর তোর শরীর থেকে তেলের কেমন যেন ভাপসা গন্ধ বের হচ্ছে।
অহনা এবার রোহানের কথা মতো নিজের শরীর থেকে তেলের গন্ধ পেল। অহনা বুঝতে পারছে না, তেল তার শরীরে কীভাবে এলো।
___
শান্ত , আদ্র, আয়ান, বলতে গেলে সব ছেলেরা বাড়ির বাইরে বসে আজকের হলুদ সন্ধ্যার প্লান করছে। এমন সময় শান্তের মোবাইলে মেসেজ এলো। শান্ত মোবাইল চেক করতেই দেখলো, শিশিরের মোবাইল থেকে একটা ভিডিও এসেছে। শান্ত ভিডিও টি ওপেন করতেই, দেখতে দেখতে , হাসতে হাসতে ওখানে ই গড়াগড়ি খাচ্ছে।
আয়ান- কিরে , হাসছিস কেন?
শান্ত হাসি থামিয়ে কোন রকম বলল-সবাই মোবাইল হাতে নাও , আমি আমাদের অনলাইন গ্রুপে ভিডিওটি সেন্ড করছি।( ছেলেদের কাজিন মহল নামে একটা গ্রুপ, )
সবাই ভিডিওটি দেখে হাসতে শুরু করলো।
আদ্র – শান্ত,তুই বলিস তোর বোন পিচ্চি,তাই তো। এখন কিছু বলে যা। অহনা থেকে গুনে গুনে সব শোধ তুলছে, না জানি আমার সাথে কি করে।
মনে মনে (ওওও শিশির, বার বার তোমার দুষ্টুমির প্রেমে কেন যে পড়ে যাই)
____
আড়াইটা বেজে গেছে। বড়রা সবাই চলে গেছে। নাহিদ আর নিজাম ভাইয়া ও। আমাকে স্বর্ণালী আপু শাড়ি পরিয়ে দিয়েছে। আমি শাড়ি সামলাতে পারি না। তবুও পড়েছি।
দুই গাড়ি করে সবাই চলে গেছে। শুধু হাতে গোনা কয়েকজন বাকি আছে। শাড়ি পড়ে গেইটের কাছে গেলাম।
শান্ত ভাইয়া রয়ে গেছে আমাকে আর স্বর্ণালী আপু আর মিনা ভাবি, মিন্নাত মিন্নাহ কে নেওয়ার জন্য।
পনেরো বিশ মিনিট এর মধেই কমিউনিটি সেন্টারে পৌঁছে গেলাম। পৌঁছাতেই ছোট্ট একটা পিচ্চি মেয়ে দৌড়ে ফুল আর একটা চিরকুট দিয়ে গেল।
আদ্র শিশিরকে দেখে হা হয়ে সেখানে ই দাঁড়িয়ে আছে। আদ্র ভাইয়া কে এগিয়ে আসতে দেখেই দুহাত পিছনে লুকিয়ে ফেললাম। আদ্র ভাইয়া নিভু নিভু চোখে তাকিয়ে বলল – কি লুকালি? দেখি( গম্ভীর ভয়েসে )
আমি ভয়ে আদ্র ভাইয়ের দিকে দুহাত এগিয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করে বললাম – প্লিজ আমাকে আজ মাইরেন না, কালকে খুব ব্যাথা পেয়েছি। আমি জানি না, কে এই ফুল আর চিরকুট দিয়েছে?
আদ্র ভাইয়া এগিয়ে এসে চিরকুট টা নিয়ে নিল। ছিরে ওখানে ই ফেলে দিল। ফুলটা দূরে ছিটকে ফেলে দিল। কাছে এসে ফিসফিসিয়ে বললো – আজ তোকে অনেক সুন্দর লাগছে রে, মাশাআল্লাহ।
আমি আদ্র ভাইয়ের দিকে চোখ মেলে তাকালাম। আদ্র ভাইয়া কে খুব সুন্দর লাগছে। হলুদ পাঞ্জাবী তে একদম হিমু। কোন কমতি নেই।
আদ্র দেখলো শিশির তার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে, আদ্র আবারো বলে উঠলো – আজ তোকে হলুদ পরী লাগছে, তবে তোকে নীল শাড়িতে রুপা হতে হবে কিন্তু। তুই কিন্তু আমাকে হিমু বলেসিছ।
আদ্র ভাইয়ের কথায় চমকে উঠলাম। সে কি আমার মনের কথা পড়তে পারে নাকি। হঠাৎ পিছন থেকে অহনা আপুর আওয়াজ শুনে হচকচিয়ে একটু দূরে সরে গেলাম। অহনা আপু ভারি মেকআপ করছে আর আধুনিক স্টাইলে শাড়ি পড়েছে।যেন সবই বোঝা যায়।
অহনা – যাক ভালোই হলো আদ্র তুই এখানে। এই মাত্র আমি আসলাম। আমাকে কেমন লাগছে? মাগো,ব্যাথা।
কথাটা শুনতেই আমার হাসি পেল। হাসতে হাসতে বসে পড়ব এমন অবস্থা। আমার হাসি দেখে আদ্র ভাইয়া ও হেসে দিল।
অহনা – তোমরা হাসছো কেন?
এমনিতেই। বলে কেটে পড়লাম।
হলুদ সন্ধ্যায়, বর কনেরা একসাথে বসে আছে। সবাই হলুদ দিচ্ছে। সেই যে এসে বসেছি আর উঠি নাই। আমি শাড়ি সামলাতে পারি না, তাই মাই বসে থাকতে বলেছে।একটা ছেলে কতক্ষন যাবত আমাকে চোখে চোখে রাখছে। আমার দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে। কতবার যে চোখে চোখ পড়েছে। উফ্ কি বাজে। বাধ্য হয়ে উঠে গেলাম। খুব ইয়ে পেয়েছে। মীনা ভাবিকে বলতেই ওনি একটা রুমের ওয়াসরুমে নিয়ে এলো।
ওয়াসরুম থেকে বেরোতেই….
চলবে…