শিশিরের আদ্র পর্ব ১৩
Neel
হলুদ সন্ধ্যায়, বর কনেরা একসাথে বসে আছে। সবাই হলুদ দিচ্ছে। সেই যে এসে বসেছি আর উঠি নাই। আমি শাড়ি সামলাতে পারি না, তাই মাই বসে থাকতে বলেছে।একটা ছেলে কতক্ষন যাবত আমাকে চোখে চোখে রাখছে। আমার দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে। কতবার যে চোখে চোখ পড়েছে। উফ্ কি বাজে। বাধ্য হয়ে উঠে গেলাম। খুব ইয়ে পেয়েছে। মীনা ভাবিকে বলতেই ওনি একটা রুমের ওয়াসরুমে নিয়ে এলো।
ওয়াসরুম থেকে বেরোতেই শাড়ির কুঁচিতে পা লেগে কুঁচি খুলে গেল। লে হালুয়া এ কী হলো, এখন কী করবো? আমি তো শাড়ি ও পড়তে পারি না, কুঁচি কী করে দিব। নিচে ঝুঁকে শাড়ির কুঁচি ধরে উঠাতেই কেউ একজন দরজা খুলে ভিতরে ঢুকলো। আমি না দেখেই, মনে করলাম মিনা ভাবি হবে। কারন সে তো এখানে ই থাকার কথা ছিল। হয়তো ফিরে এসেছে। কুঁচি ধরে মাথা না উঠিয়ে ই বলে ফেললাম – তুমি এসেছো? আমার কুঁচি গুলো ঠিক করে দেও না? আমি শাড়ি পড়তে পারি না। দেখছো তো , জীবনের প্রথম বার পড়েছি তাও কুঁচি খুলে হাতে ধরে দাঁড়িয়ে আছি। এটা খুবই বিরক্তিকর, আর জীবনেও শাড়ি পড়বো না।হু ।
ব্যাপার টা খটকা লাগলো, আমি এতো কথা বলছি, ভাবি রিসপন্স দিচ্ছে না কেন? মাথা উঠিয়ে সামনে তাকাতেই, টাস্কি খেয়ে পিছনে সরতে গিয়ে উল্টো শাড়ির প্যাচে ফ্লোরে ধপাস করে পরে গেলাম।
সামনে আর কেউ নয় আদ্র ভাইয়া দাঁড়িয়ে আছে। আর দাঁড়িয়ে আছে না, অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে আছে।
আদ্র কখনো শিশির কে এরকম অবস্থায় দেখে নাই। শিশির কে প্রথম দেখেছিল শান্তের মোবাইলে। সেদিন শান্ত কে জিজ্ঞাসা করলে, শান্ত শিশিরের সম্পর্কে সব কিছু খুলে বলে। দুষ্টুমি থেকে ভিতু প্রকৃতির সব কিছু। শিশিরের সম্পর্কে শুনেই আদ্রের মনে আদ্র শিশিরকে নিয়ে কল্পনা ঝল্পনা সব এঁকে ফেলেছিল।আদ্র এগুলো ভাবছিল…
আমি আদ্র ভাইয়াকে আমার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে বললাম – আপনি তো মশাই বারি নির্লজ্জ। আমার দিকে এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন? আপনার লজ্জা না থাকতেই পারে, আমার লজ্জা করছে, এভাবে আপনার তাকানোতে।আমি ই ঠিক ই ধরেছিলাম আপনার ক্যারেকটার লুজ। আপনি…(আর না বলতে দিয়ে)
আদ্র- ওওও(বাঁকা হেসে)আমার বিড়াল আমাকে ই মিয়াও।নট বেড। মীনা ভাবি কাজে ফেঁসে গেছে, আমাকে বললো, বিয়ের মহল ,যেন তোকে রুম থেকে নিয়ে আসি, কোন বিপদে না ফেঁসে যাস।আর তুই যে এরকম অবস্থায় থাকবি আমি কি করে জানবো?যা বাবা!! ভালোর জামানা ই নেই দেখছি?তা, শেষে আমাকে কি বললি, (শিশিরের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে) সেদিন ও বলছিলি, কিন্তু দাদি বাঁচিয়ে ফেলছিলো, আজ কোথায় যাবি। নির্লজ্জ আমি? ক্যারেকটার লুজ আমার। তুই জানিস, আমি আদ্র কতটা ভার্জিন ()।যাক আমি ও চাই আমার ভার্জিনিটি নষ্ট করতে, চাইবো না কেন? সামনে কোন মেয়েকে এরকম অবস্থায় দেখলে যে কোন ছেলেই তার ভার্জিনিটি নষ্ট করতে চাইবে। কেন? আমি কেন নয়।চল তোকে ক্যারেকটার লুজ সম্পর্কে পরিচিত করাই।
আদ্র ভাইয়ের এহম কথায় আমি শব্দ করে কান্না শুরু করলাম। আমি জীবনে ও এতো বাজে কথা শুনিনি। আমি কি ইচ্ছে করে এই অবস্থায় এসেছি নাকি? আমার কি জানতাম আমি শাড়ির কুঁচি তে পা দিয়ে খুলে ফেলবো?
আদ্র শিশিরকে কান্না করতে দেখে শিশিরের সামনে হাঁটু গেড়ে বসলো, দু হাত দিয়ে মুখে আলতো স্পর্শ করে বলল-এই মাথা মোটা পাগলি মেয়ে, কান্না করছিস কেন? (চোখের পানি মুছে দিয়ে)আমি তো দুষ্টুমি করে বলেছি। তুই ও তো এই অবস্থায়…যাক বাদ দে। উঠ, উঠে শাড়ি পড়।(শিশির কে দাঁড়া করিয়ে দিলো)
আমি বললাম – আমি শাড়ি পড়তে পারি না। (মুখ ফুলিয়ে)
আদ্র ভাইয়া পিছন ফিরে দাঁড়িয়ে আছে। ওভাবেই বলল – তোকে কি সাধে আমি মাথা মোটা বলি? শাড়ি পরতে পারিস না কেন পড়েছিস?
আজ আমি না যদি না আসতাম, যদি অন্যকেউ আসতো, তাহলে?
মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকলাম। আস্তে আস্তে বললাম – আমি তো শাড়ি পড়তে পারি না, তুমি কি পড়াতে পারো?
আদ্র ভাইয়া প্রথমে নিজের মাথার চুলে হাত বুলালো। পিছনে ফিরে, ভাইয়া নিজের মোবাইল টা বাড়িয়ে দিলো। একটা ভিডিও দেখালো ইউটিউব এ। বললো – এটা দেখে পড়তে থাক। আমি দরজার সামনে দাঁড়িয়ে পাহারা দেই।
আদ্র ভাইয়া দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। মিনিট দশেক ধরে চেষ্টা করছি, কিন্তু ব্যর্থ। আমি শাড়ি ঠিক করতে পারছিই না।
আদ্র -কিরে আর কতক্ষন। আমাদের তো ওখানে ও যেতে হবে তাই না? তোর জন্য কি সারারাত এই রুমে ই দাঁড়িয়ে থাকবো কী?
চিল্লিয়ে বললাম – আমি পারি না, তুমি পারো? পারলে পরিয়ে দেও।
আদ্র ভাইয়া দেওয়ালে কয়েকবার মাথা আস্তে আস্তে বারি দিলো । বির বির করে কী যেন বলছে।দরজা খুলে বাইরে মিনিট দুয়েক উঁকি দিলো। তারপর দরজাটা ভেতর থেকে বন্ধ করে দিল। আমার দিকে তাকিয়ে এগিয়ে এলো। আদ্র ভাইয়ের চোখ চোখ রাখতেই খুব লজ্জা লাগলো। জীবনে ও এরকম অবস্থায় কোন ছেলের সামনে, ছিঃ । কিন্তু এখন?
এর মধ্যেই আদ্র ভাইয়া আমার সামনে হাঁটু গেড়ে বসলো।
আদ্র মনে মনে তার মাবুদ কে স্মরণ করতেছে। আদ্র শিশিরের কোমরের দিকে তাকাতেই নিজের মধ্যে পরিবর্তন লক্ষ্য করছে। এক অদ্ভুত নেশা কাজ করছে। শিশির কে রঙে রঙে ছুঁয়ে দিতে ইচ্ছা জাগছে।
আদ্র ভাইয়া কাঁপা কাঁপা হাতে শাড়িটা ধরলো। পাশে মোবাইল টা সেট করলো। ইউটিউব এ ভিডিও টা দেখছে আর কুঁচি দেওয়ার চেষ্টা করছে। অনেক বার চেষ্টা ও ব্যর্থ হওয়ায় পর অবশেষে কোনো মতে কুঁচি ঠিক করলো।
আদ্র- এই নে , ( কুঁচি টা শিশিরের হাতে দিয়ে) কোমরে গুঁজে নে।
আমি কুঁচি টা নিয়ে গুঁজতে গিয়ে আবারো এলোমেলো করে দিলাম। আদ্র ভাইয়া আমার দিকে নিভু নিভু চোখে তাকিয়ে রইল।
আমি ঠোঁট উল্টিয়ে বললাম- সরি সরি, আর করবো না। আমি পারি না। এই শাড়ি টা খুবই সিল্ক।
আদ্র ভাইয়া আবারো কাঁপা কাঁপা হাতে কুঁচি ঠিক করতে লাগলো। আবার কুঁচি গুলো ঠিক করে এবার নিজেই গুঁজে দিল।আদ্র ভাইয়ের পুরুষালি স্পর্শ কোমরে পেয়ে, শরীরে বিদ্যুতের ঝটকা লাগলো। হৃৎপিণ্ড জোরে বিট করা শুরু করলো। আমি চোখ বুজে সেখানে ই স্থির হয়ে গেলাম। যেন পা সেখানে ই জমে গেছে।
আদ্র শিশিরের কোমরে শাড়ি গুঁজেতে গিয়ে, সে যেন আরো নেশা ময় হয়ে গেছে। কোমল নরম শিশিরের কোমরে ঝুঁকে আস্তে করে একটা চুমু খেলো।
এভাবেই জমে গেছি, হঠাৎ আদ্র ভাইয়ার কান্ডে আমি বিচলিত হয়ে, আদ্র ভাইয়ের চুল খামচে ধরি। কেমন এক অদ্ভুত ভালোলাগা কাজ করছে।
আদ্র শিশিরের পরিস্থিতি ভয়াবহ। দুজনই নিজেদের ধ্যানে নেই। এর মধ্যেই হঠাৎ দরজায় করাঘাত হলো।
দরজায় করাঘাত শুনে আমি হচকচিয়ে আদ্র ভাইয়ের থেকে দূরে সরে যাই। আদ্র ভাইয়া ও নিজেকে সামলিয়ে, দরজার কাছে গিয়ে দরজাটা খুলে দিল। দরজার ওপাশে একজন বলল -হলুদের অনুষ্ঠান শুরু হবে , সবাইকে উপস্থিত হতে বলছে।
আদ্র ভাইয়া পিছন ফিরে আমার দিকে তাকালো। আদ্র ভাইয়ের দিকে তাকাতেই লজ্জা ঘিরে ধরলো।দ্রুত রুম থেকে বের হলাম। রুমের বাইরে এসে মাস্ক ওয়ালা লোকটাকে দেখলাম। কিন্তু এখন ভাবলে চলবে না। আদ্র ভাইয়ের সামনে থাকা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।
আদ্রের ভেতর ভালোলাগা কাজ করছে। হয়তো ভুলে, বেখেয়ালে করে ফেলছে, কিন্তু যা হয়েছে, ভালো হয়েছে। সে ও তো চায় প্রিয়তমার কাছে নিজেকে রঙে রঙে উপস্থাপন করতে।
অন্যদিকে মাস্ক ওয়ালা ছেলেটি আদ্রে আর শিশিরকে একসাথে রুম থেকে বের হতে দেখে রেগে আছে। ছেলেটির পাশে তার বন্ধু তাকে সামলাতে লাগলো।
___
হলুদ সন্ধ্যা আরম্ভ হয়ে গেছে। একে অপরজনকে হলুদ দিচ্ছে। অহনা পড়েছে বিপাকে। সে যার সামনে যায়,সে ই হাসে। অহনা উলু বনে গেলো, সবাই হাসে কেন।
হঠাৎ রোহান অহনা কে টেনে নিয়ে গেল, তারপর একটা ভিডিও দেখালো। অহনা রেগে লাল হয়ে গেল।
অহনা – অশি, তুমি কাজটা ভালো করো নাই। এর শাস্তি তোমাকে পেতে হবে। আনন্দ যত পারো করে নাও। সুযোগ আর সময় আমার ও আসবে।
____
সবাই খুশি। বিয়ে বলে কথা। নাহিদ ভাইয়াকে তেমন খুশি মনে হচ্ছে না। আমি নাহিদ ভাইয়ের পাশে বসলাম। বললাম – তোমার কি হয়েছে? বিয়ে পাকা হওয়ার পর থেকেই তোমাকে মনমরা দেখছি। কি হয়েছে? তুমি কি খুশি নও?
নাহিদ – না, তেমন নয়। এমনিতেই।(মুখে জোরপূর্বক হাসি দিয়ে) আনন্দ কর।
এর মধ্যেই মাস্ক পড়া ছেলেটি বলল- হেই, আপনি একা বসে আছেন ,বরের মানে জিজুর সাথে কেন? হলুদ ও তো দেন নাই। চলেন হলুদ খেলি।( বলেই, পাশে বক্স থেকে হলুদ হাতে নিয়ে, এগিয়ে আসতেই)
আমি বললাম – একি, দূরে থাকুন। গায়ে পরে কথা বলছেন কেন? আমাকে হলুদ লাগবেন না।
তবুও এগিয়ে আসতেই, কেউ একজন হাত ধরে টান দিল । আমি বসা থেকে হেঁচকা টানে কারো বুকে যেয়ে পড়লাম। নাকে পারফিউম এর ঘ্রান নিতেই বুঝে গেলাম কে?
চোখ মেলে তাকাতেই…
চলবে…