শিশিরের আদ্র সিজন ২ পর্ব ৩
Neel
আদ্র ভাইয়ের এহম কথায় আমি ছিটকে দূরে সরে দাঁড়ালাম। বড় বড় দম নিচ্ছি। হৃৎপিণ্ড জোরে বিট করছে। এমন সময় আদ্র ভাইয়া এমন এক কথা বলল আমার তখন দম যায় যায় অবস্থা। করুন চোখে আদ্র ভাইয়ের দিকে তাকালাম।
আদ্র ভাইয়া বলল – দেখ এতো দিন তোকে ছাড় দিয়েছি আর নয়? তুই কি চাস বিয়ের আগে আমি তোকে ছুঁয়ে দেখি।দেখ আমার আপত্তি নেই। তুই যদি চাস তাহলে আমি বিয়ের আগেই বাসর করতে রাজি।
আপনি ইইইই? আপনি একটা ফাজিল। উফ্ ক্যারেকটার লুজ পারসন। ধেৎ। ভালো লাগে না।
আদ্র – শিশির, কোন চালাকি নয়? আমাদের বিয়ে টা হতে দে। না হলে আমি যা বললাম তাই হবে। বিয়ের আগেই আমি তোকে রন্ধে রন্ধে ছুঁয়ে দেখব। স্ট্রেবেরির মতো।(বাঁকা হেসে)
আর কিছু বলবো না। এবার আমি ও তোমাকে শিশিরের কান্ড দেখাবো। বাঁকা হাসি আমি ও দিলাম। আদ্র ভাইয়ের কথা মতো আমাকে পার্লারের মেয়েরা বউয়ের সাজে সজ্জিত করে দিল।
বাড়ির কোন সদস্য আমার সাথে দেখা করতে আসে নাই। আসবে কি করে , আজ তাদের পেলে পাওরুটির মতো ছিঁড়ে খাব।
বউ সাজে নিজেকে দেখছি। কোথায় মন্দ তো লাগছে না। আদ্রের শিশির কে কী করে মন্দ লাগবে?
কত আশা ছিল, একদিন আমার আর আদ্র ভাইয়ের ধুমধাম করে বিয়ে হবে। (মুখে হাসি ফুটে উঠলো) আজ ঠিক বিয়ে তো হচ্ছে কিন্তু আমি দ্বিধা দ্বন্দ্বে জড়িয়ে গেছি।
রুমে কেউ নেই। এইতো সুযোগ পালানোর। যেই ভাবা সেই কাজ। বারান্দার জানালা দিয়ে পালাবো। আদ্র বিয়ে করার খুব শখ তোর। এবার কনে ছারাই বিয়ে কর।হু ।
___
আজ চৌধুরী বাড়িতে বিয়ের আমেজ বসেছে। খুব কম সময়ে বিয়ের সাজ সজ্জা করেছে। আত্মীয় স্বজন ছাড়া বাহিরের মানুষ নেই। আর আছে প্রতিবেশী। খুব কম মানুষই হবে। আদ্র চাচ্ছে আগে বিয়ে টা হোক তারপর আবার ও বড় করে অনুষ্ঠান করবে না হয় পার্টি থ্রো করবে।
এশার নামাজ পড়ে আদ্র আর শিশিরের বিয়ে পড়ানো হবে। ঘড়ির সময় ঘনিয়ে এসেছে। সুমাইয়া, স্নেহা মিনা কে শিশিরের আনার দায়িত্ব দিল।
মিনিট পাঁচেক পর স্নেহা দ্রুত শিড়ি দিয়ে নেমে এলো।এসেই নাহিদের কানে ফিসফিস করে কিছু বলল। স্নেহার পিছন পিছন সুমাইয়া,মিনা ও এলো। ওরা স্নেহার দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়িয়ে না বলল।
আদ্র- তোমরা নিজেদের মধ্যে কি আলাপ করছো?এই শান্ত, দেখ তো শিশির কোথায়। ওরা মনে হয় ওকে আনতে পারে নাই, তুই যা না ভাই, তোর কথা ও ফেলতে পারবে না।
স্নেহা – আমরা সারা রুমটাতে তন্ন তন্ন করে খুঁজেছি, শিশিরকে পাই নাই।
শিশির কে পাই নাই বলতেই আত্মীয়-স্বজন, পাড়া প্রতিবেশী দের মধ্যে শোরগোল শুরু হয়ে গেল। নিজাম আর নাহিদ সব আত্নীয় স্বজন দের বাড়ি থেকে বাগানের খাবারের মহলে নিয়ে গেল।
আদ্র – পাগল হয়ে গেছো ? কি এসব বলছো। ঐ মিনা ভাবি প্লিজ শিশির কে নিয়ে এসো না। আচ্ছা থাক, তোমাদের লাগবে না আমি ই যাচ্ছি।
নিজাম আদ্র কে আটকিয়ে দিলো। আদ্রের হাতে একটা চিরকুট ধরিয়ে দিল। আদ্র চিরকুট টা খুলে পড়লো। পড়েই নিজেকে আর আটকে রাখতে পারলো না ড্রইংরুম এর প্রত্যেকটা জিনিস গুলো ভাঙচুর করতে শুরু করলো।
বড়রা সবাই ভয় পেয়ে গেল। আদ্র কে কেউ থামাতে পারছে না। এই সময়ে শান্ত শিড়ি দিয়ে হন্তদন্ত হয়ে নামছে। আদ্র দ্রুত শান্তের কাছে গেল। শান্তকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কান্না করে দিল।
শান্ত আদ্রের এই অবস্থা দেখে ভয় পেয়ে গেল। আদ্র নিজের হাত পা ছিলে ফেলছে। রক্ত ধারার মতো বইছে।শান্ত এবার নিজের বোনের কান্ডে নিজেই ক্ষেপে গেল। এখন শিশির কে পেলে শান্ত নির্ঘাত কয়েকটি থাপ্পড় দিতে ও পিছু পা হতো না।
আদ্র শান্তের হাতে চিরকুট টা ধরিয়ে দিয়ে বলল – এবার ওকে খুঁজে এনে দে।না হয় আমি পাগল হয়ে যাব। আর ওকে আমি…
আর কিছু না বলেই এভাবেই আদ্র নিজের রুমের দিকে যেতে থাকলো।
শান্ত শিশিরের দেওয়া চিরকুট টা খুলল –
আপনি খুনি আদ্র। আপনি খুনি। আমি যে আদ্র কে চিনতাম সে খুনি নয়, কিন্তু আপনি খুনি। একজন খুনির বউ হওয়ার ইচ্ছে নেই। তাই আমি পালালাম। আপনার পিছনে তো কম মেয়ে পাগল নয়, বিয়ে করে নিয়েন।
শান্ত চিরকুট টা ছিঁড়ে ওখানে ই ফেলে দিল। দৌড়ে আদ্রের পিছু আদ্রের রুমের দিকে গেল। আদ্রকে এখন তার প্রয়োজন।
বড়রা সবাই মাথায় হাত দিয়ে সোফায় বসে পড়লো যার যার মতো। তারা জানতো এমন কিছু হবে। শিশির যে পরিমান দুষ্টু, শয়তান ও হার মানে।
___
বাড়ি থেকে পালিয়ে আমি অন্য শহরেই বাস ধরবো। মাহি (আমার বেস্ট ফ্রেন্ড) ওর বাবার ট্রান্সফার হয়েছে কয়েক মাস আগে। আমি এখন ওদের বাসায় উঠবো। তারপর ওখানে কিছু দিন থেকে আবার চলে আসবো।আশা করি আদ্র ভাইয়ের আমাকে বিয়ের চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে যাবে। আচ্ছা পরেরটা পরে দেখা যাবে।
বসে আছি। বাসস্টপে। এখানে রাত ১২ টায় সেই শহরে যাওয়ার বাস ছাড়বে। আর দশ মিনিট।
অবশেষে বাস এলো। আমি ও বাসে উঠে গেলাম। বাস চলছে। স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়লাম।
____
আদ্র ঘরে যেয়ে আবারো পাগলামি শুরু করে দিল। ঘরের জিনিসপত্র সব ভাঙা শুরু করলো। শান্ত এসে দৌড়ে ধরলো। আদ্র যেন মানছে না। এক পর্যায়ে ক্লান্ত হয়ে হাঁটু গেড়ে বসে চিৎকার করে উঠলো।
অন্যদিকে নিচে আদ্রের চিৎকার শুনে বাড়ির সকল সদস্য দৌড়ে গেলো উপরে।
শান্ত আদ্রকে ওর মেডিসিন টা দিল । সাথে ঘুমের টেবলেট ও। মিনিট পাঁচেক আদ্র বিছানায় শুয়ে শিশির শিশির বলে আবল তাবল বকবক করলো। তারপর গভীর ঘুমে তলিয়ে গেল।
আদ্রের রুম পরিস্কার করছে স্নেহা, মিনা, সুমাইয়া আর স্নেহা, সুমাইয়া এর শাশুড়ি আদ্রের পাশে বসে আছে।
শিশিরের মা আর আদ্রের মা শিশিরের পালানো আর আদ্রের পাগলামি দেখে ওখানে ই জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। তাদের কে ডা. রেস্ট নিতে বলেছেন।
বাড়ির বড়রা একসাথে বসে আলোচনা করছে। কীভাবে এদের দুজনকে এক করা যায়।
আর আয়ান বাচ্চাদের সামলাচ্ছে। শান্ত, নিজাম, নাহিদ এরা শিশিরের খোঁজে লেগে পড়েছে।
আদ্র ঘুমের ঘোরে এখনো শিশিরের নাম ঝপছে। সুমাইয়া বিরক্ত হয়ে বলল – আচ্ছা মা, আপনারা এই পাগল লোক টারে এতো কেন মাথায় তুলছেন? আর ঐ শয়তান মাইয়া, কেমন মেয়ে রে বাবা, আমার মেয়ে হলে এতোক্ষণে…
আর কিছু বলার আগেই মিনা সুমাইয়ার গাল বরাবর কষে একটা চড় দিলো।
সুমাইয়া এহম কান্ডে উলু বনে গেলো। সামনে তাকিয়ে দেখলো মিনা ভাবি তাকে থাপ্পড় দিয়েছেন।
সুমাইয়া – ভাবি আপনি আমাকে?…
মিনা – অনেক শুনেছি তোমার কানাঘুষা। আমি কি জানি না তুমি কি করো? ঐ পাগল কাকে বলছো? কি জানো আদ্র আর শিশির কে নিয়ে? সাহস তো কম নয়, বাড়ির বউ হয়ে বাড়ির ছেলে, মেয়েদের নামে এগুলো বলছো?
সুমাইয়া – ভাবি আপনি ও কিন্তু এই বাড়ির বউ। তাছাড়া আমি বুঝি না সবাই কেন আদ্র আদ্র, শিশির শিশির নাম ঝপবে? আমার স্বামী ও ।
সুমাইয়ার শাশুড়ি বলে উঠলো – চুপ করো ছোট বউ (সুমাইয়া)। মিনা শুধু বউ নয় এই বাড়ির মেয়ে ও। তাছাড়া তুমি আমার সামনে..আর তুমি একজন পড়া শোনা করা মেয়ে, তুমি এতোটা নিচু , তোমার মন মানষীকতা এতোটা নিচু। ছিঃ। পরিবার বন্ডিং এখন থেকেই শিখ। এখান থেকে যাও তোমরা।
___
সকাল বেলা, আদ্রের ঘুম একটা ফোন কলে ভেঙে গেল। আদ্র রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে কিছু একটা বলল। আদ্র বলল আমি আসতেছি।তোরা ওকে নিয়ে ওখানে আয়।
গাড়ির হঠাৎ ব্রেকে আমার ঘুম ভেঙ্গে গেল। গাড়ির ভেতরে শব্দ ও হচ্ছে। কারা যেন গাড়ির পথ কাউকে রেখেছে। আশেপাশে তাকিয়ে দেখলাম। সকাল হয়ে গেছে। মোবাইল এ সময় দেখলাম, ওমা আটটা বেজে গেছে।
একদল লোক গাড়ির ভেতরে এলো। এসেই…..
চলবে…