শিশিরের আদ্র সিজন ২ পর্ব ৪
Neel
গাড়ির হঠাৎ ব্রেকে আমার ঘুম ভেঙ্গে গেল। গাড়ির ভেতরে শব্দ ও হচ্ছে। কারা যেন গাড়ির পথ কাউকে রেখেছে। আশেপাশে তাকিয়ে দেখলাম। সকাল হয়ে গেছে। মোবাইল এ সময় দেখলাম, ওমা আটটা বেজে গেছে।
একদল লোক গাড়ির ভেতরে এলো। এসেই আমার সিট বরাবর দাঁড়ালো। পুরো বাসের লোকজন কে গান পয়েন্ট এ বসিয়ে রাখছে। কেউ ভয়ে টু শব্দ ও করছে না। আমি তাদের কে দেখে লম্বা একটা ঘোমটা দিয়ে মুখ ঢেকে নিলাম। আর মাথা নিচু করে চুপচাপ বসে রইলাম। আল্লাহ কে স্মরণ করছি, যেন এঁরা আদ্রের লোক না হয়। আদ্র পারে না এমন কিছু নেই।
একটা ছেলে বলল – ম্যাম, আপনি এভাবে বসে থাকলে চলবে না, আমরা আপনাকে কষ্ট দিতে চাই না, চুপচাপ আমাদের সাথে চলুন।
আমার পাশে থাকা সিটে বসা মহিলা টা বলল- এ তোমরা কারা। আর আমাকে কী এগুলো বলছো? আমি তোমাদের চিনি না? আমি কিছু করি নাই।
ছেলেটি আবার বলল- মিস. আচ্ছা আন্টি আপনি প্লিজ সিট থেকে একটু সরবেন। আমরা জানালার পাশের ম্যাডাম কে বলছি।ওনি জানে আমরা কে?
হঠাৎ করেই দুজন মেয়ে আমার হাত ধরে টেনে বাস থেকে তাদের সাথে নামালো।বার বার হাত মুচরে ছুটতে চেষ্টা করছি কিন্তু আমি ব্যর্থ।
চিৎকার করে বললাম – আমাকে ছেড়ে দাও বলছি। তোমাদের সাহস তো কম নয়, আমাকে ধরে রেখেছো । ছাড় বলছি। তুমি জানো আমি কে?
আর কিছু বলার আগেই আমার ঘাড়ে সুচ বিধল। আমার হাত ছেড়ে দিল মেয়ে দুটি । আমি পিছন ফিরে তাকাতেই দু চোখ জুড়ে আবার ও অশ্রু গড়িয়ে পড়লো। আমার পিছনে আর কেউ নয় আমার ই ভাই শান্ত।
মাথাটা চক্কর দিতেই শান্ত ভাইয়ার বুকে হেলান দিয়ে পড়ে গেলাম, অস্ফুট স্বরে বললাম – অবশেষে তুমি ও। আমি তোমাকে কখনই ক্ষমা করব না, ভাইয়া ওপস না না শান্ত চৌধুরী।
তারপর আর হুঁশ নেই।
শান্ত শিশির কে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করলো। বলল – বোন আমাকে ক্ষমা করে দে। আমার এছাড়া আর উপায় ছিল না রে। আদ্র অনেক সাইকো। আদ্রের তোর প্রয়োজন। তুই কেন ওকে বুঝোস না। আমাকে মাফ করে দিস, আমি তোকে তোর বিরুদ্ধে ই আদ্রের কাছে পৌঁছে দিচ্ছি। তোর গন্তব্য আদ্র তে ই সমাপ্ত।
____
হুঁশ ফিরতেই, নিজেকে একটা গাড়ি তে হেলান দিয়া অবস্থায় পাই। উফ্,মাথা।খুব ব্যাথা করছে। চোখ মেলতে কষ্ট হচ্ছে। আমি কোথায় এখন? সামনে তাকাতেই দেখি গাড়ির সামনে একটা ছেলে না না,আদ্র ভাইয়া পিছন অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে।
গাড়ি থেকে নামলাম। আমাকে এখান থেকে পালাতে হবে। আবার ও আদ্র ভাইয়ার হাতে বন্দী হয়ে গেছি। না না। গাড়ি থেকে নেমে পিছনে ফিরে এক পা এগোতে ই আদ্র ভাইয়া বলল – কোথায় পালাবি? কোথায়? আচ্ছা তুই এতো বোকা কেন শিশির? তুই ভাবলি কী করে এবার তোকে পালাতে দিব?
পালানো শেষ। এই শয়তান পাদ্রের কি পিছনে ও চোখ আছে। বাধ্য হয়ে ওখানে ই দাঁড়িয়ে রইলাম। পেট ব্যাথায় ওখানে ই বসে পড়লাম।
আদ্র শিশিরকে বসতেই দৌড়ে এলো।আদ্র জানতো এমন কিছু ই হবে। শিশির কে পাজা কোলে নিয়ে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে।
আহ্, কি ব্যাথা রেএএ। এই আদ্র পাদ্র আমার খিদা লাগছে, আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন। প্লিজ আমাকে কিছু খেতে দেন। আমি এখন না খেলে মারা যাব। উঁহু কি খিদার ব্যাথা রে।
আদ্র শিশিরের এমন বোকা মার্কা কথা শুনে আদ্র শিশির কে কোলে নিয়ে ই হাসতে শুরু করলো। বলল – শিশির, তুই এতো খাস তবুও তো মোটা হস না। ওজন কত হবে ৪০/৪৫ । দেখ তোকে কোলে নিয়ে আমি মাউন্ট এভারেস্ট ও জয় করতে পারুম।
আদ্র ভাইয়ের এহম কথায় আমি নিভু নিভু চোখে তাকিয়ে বললাম – এতে হাসার কি আছে। নামান আমাকে। আমার ওজন নিয়ে আর খাওয়া নিয়ে কথা বললে তাকে আমার খুন করতে ইচ্ছে করে। এখন আপনাকে, আপনাকে তো আমার…
আদ্র – বিয়ে করতে ইচ্ছে করছে? সমস্যা নেই, ওই দেখ বোর্ড আমরা এখন বিয়ে করবো। চল।
আদ্র ভাইয়ের কথা শুনে আমি হচকচিয়ে তাকালাম। আরে সত্যি ই তো ।এটা কাজি অফিস। তার মানে আমাকে কথার মাঝে ই বন্দি করে রেখেছে। আদ্রওওও কা বাচ্চা। নিজের চুল এখন নিজের ছিরতে ইচ্ছে করছে। আমি জানতাম এই পোলা জীবনে ও ভালো হবে না। ব্যাটা খবিশ। কেউ বাঁচাও (মনে মনে) আমি বিয়ে করবো না।
আদ্র শিশিরকে নিয়ে কাজি অফিসের একটা রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিল। শিশির কে একটা টেবিলে বসিয়ে দিল। সামনে খাবার ও। আদ্র জানতো, শিশির টাইম টু টাইম খেতে ভালোবাসে। টাইম টু টাইম না খেলে পেট ব্যাথায় চিৎকার করে কাঁদতে থাকে। সেই রাত থেকে শিশির না খাওয়া।
আমার সামনে খাবার দেখে জিভে জল এসে গেল। খিদা টা আরো পাক্কা হয়ে গেছে। মন বলছে খাওয়া শুরু করি মস্তিষ্ক বলছে না। এখানে আদ্র আছে।
আদ্র ভাইয়া আমার সামনে এসে বসল। নিজের হাতটা ধুয়ে খাবার নিজের হাতে আমার মুখ বরাবর তুলে বলল – যত ফাইট, চিৎকার,যা বলার আছে সব খাওয়ার পর । এখন খেয়ে নে। নিজেকে কষ্ট দিতে নেই।
আদ্র ভাইয়ের কথায় তার উপর রাগ ভুলে গেলাম। তার উপর খিদা লাগছে তাই কিছু না বলেই খাওয়া শুরু করলাম। ওমা একি , আদ্র ভাইয়া আমাকে খাইয়ে দিয়ে,নিজে ও খাচ্ছে।
মুখ ভর্তি খাবার নিয়ে ভুরু কুঁচকে তাকালাম। মুখ এ খাবার নিয়ে ই কিছু বলতে যাবো তখন ই আদ্র ভাইয়া বলল-আগে গিল খাবার তারপর কথা বল। তোর চিন্তায় রাত থেকে খাই নাই, এখন তোকে দেখে খিদে পেয়ে গেছে তাই ভাবলাম আমি ও তোর সাথে খেয়ে নেই।
খাবার শেষ করে বললাম – তাই বলে আমার এত্তো খাবার।
আদ্র ভাইয়া মুচকি হেসে আমার মুখ মুছিয়ে মুচকি হেসে বলল – তুই থাকলে ওসব মেটার করে না। এখন চল।
হাত ধরে টান দিয়ে তার পিছু পিছু নিয়ে যাচ্ছে। ভিতরে প্রবেশ করার সময় কাজি অফিস সাইনবোর্ড দেখে কি ভয় টা না পেয়েছিলাম। মনে করেছি আজ মনে হয় বিয়ে হয়ে ই ছারবে। যাক আদ্র ভাইয়ের মাথা থেকে বিয়ের ভুত সরেছে।
বললাম – আদ্র ভাইয়া কোথায় যাচ্ছি। প্লিজ বাসায় নিও না, মামা বাড়ি ছেড়ে দিও। বাসার সবাই আমার উপর রাগ করে আছে হয়তো।
আদ্র – তোর মুখ থেকে ভাইয়া ডাকটা বন্ধ করতে।বোর হয়ে গেছি।কান পেকে গেছে ভাইয়া ভাইয়া, শুনতে শুনতে।
বললাম – তোমাকে ভাইয়া না বলে কি ডাকব। পাদ্র?(বলেই খিলখিল করে হাসতে লাগলাম)
আদ্র একটা রুমের সামনে থেমে গেল। মনে মনে ভাবছে,কে বলবে এই মেয়েই কাল কত বড় হাঙ্গামা করছে। আদ্র শিশিরকে ভালো মতো দেখলো, কালকের সাজ নষ্ট হয়ে গেছে তবুও শিশির কে সুন্দর লাগছে। হয়তো এটাই প্রেমিক নজর, প্রেমিকা যতই অসুন্দর হোক, সুন্দর ই লাগে।
আদ্র – পাদ্র না। ভাইয়া বলা বন্ধ করে সাইয়া ডাকাবো। আহ্ কি প্রশান্তি।
আমি আপনাকে বিয়ে করবো না আদ্র ভাইয়া। কেন বুঝেন না? আপনি আমাকে এবার যদি জোর করেন আমি নিজেকে শেষ করে দিব!(থমথমে গলায়)
আদ্র ভাইয়া বাঁকা হাসি দিয়ে আমার দিকে তাকিয়েই বলল-তাই? তাহলে মরে যা। তবে শান্তর কথা ভাব একটু?
শান্ত?(আসলেই তো! আমার মাথা থেকে এটা বের হয়ে গেছে। আমি আদ্র ভাইয়ের কাছে কীভাবে? আমি জ্ঞান হারানোর আগে শান্ত ভাইয়ার কাছে ছিলাম। আমার ভাইয়ের কি হয়েছে?)
আমার ভাই কোথায় আদ্র ভাইয়া?কি করেছেন আমার ভাইয়ের সাথে।আদ্র ভাইয়া?(রাগে)
আদ্র – তোর জেনে কি লাভ। তুই তো মরে যাবি। যা মরে যা।
আমি আরো রেগে গেলাম। রেগে আদ্র ভাইয়ার কলার চেপে ধরি, বললাম – আদ্র, আমার ভাইয়া কই? কি করেছেন আপনি?
আদ্র ভাইয়া আমার কোমর জড়িয়ে ধরল।এক টানে তার সাথে মিশিয়ে নিল।টুপ করে আমার কাঁপা কাঁপা ঠোঁটে চুমু খেল। বলল – আমাকে বিয়ে করে নে। সব ঠিক করে দিব।
বলেই আদ্র ভাইয়া তার মোবাইল ফোন টা অন্য হাতে বের করল, আর একটা ভিডিও দেখালো। ভিডিও দেখে আমার পায়ের নিচ থেকে যেন মাটি সরে গেল। অস্ফুট স্বরে কাঁপা কাঁপা ঠোঁটে বলে ফেললাম – আপনি এতো টা নিচে নেমে গেলেন? ছাড়ুন আমাকে। আমি বিয়ে করতে রাজি। তবুও আমার ভাইকে কিছু করবে না। আপনি যে সাইকো তার প্রমাণ টা দিয়ে ই দিলেন।
আদ্র ভাইয়া আর আমার বিয়েটা হয়ে ই গেল। তখন মোবাইল এ…
চলবে…