শিশিরের আদ্র সিজন ২ পর্ব ৫
Neel
আদ্র ভাইয়া আর আমার বিয়েটা হয়ে ই গেল। তখন মোবাইল এ আদ্র ভাইয়া একটি ভিডিও দেখিয়েছিলো।শান্ত ভাইয়া কে বেঁধে রাখা হয়েছে। শান্ত ভাইয়া নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছে তো করছে, কিন্তু পারছে না। রক্ত পরছে শরীর থেকে।
আদ্র ভাইয়া আমাকে দেখে মুচকি হেসে বলল – তিন কবুল এ বিয়ে করে ভাই কে জীবন দে।
বিয়ে হয়ে গেল। আদ্র ভাইয়া আর বাকি গার্ড সবাই মিলে রেস্টুরেন্টে নামলাম। খেতে ইচ্ছে করছে না। তবুও খেলাম।মন এখনো মানতে রাজি নয়,যে আমার বিয়ে হয়ে গেছে।
এগুলো ভাবতে ভাবতে বাসার সামনে গাড়ি এসে থামলো। রাত হয়ে গেছে । মনে হয় ১০ টা বাজবে হয়তো।সবাই ঘুমিয়ে গেছে নাকি জেগে আছে। জেগে থাকলে কি রিয়েকশন হবে। আদ্র ভাইয়া নেমে আমার দিকে এসে হাত বাড়িয়ে বলল – চল,তোকে শশুর বাড়িতে হাত ধরে নিয়ে যাই। আফটার অল এটা তোর বাপ ,চাচা জেঠা,শশুর বাড়ী বলে কথা।
ইশ্, কথা শুনে গা পিত্তি জ্বলে যাচ্ছে। যেন এ বাড়িতে কখনো আমি আসিনি। যত্তো সব ঢং আমার সাথে দেখাতে পারে। পাদ্র কা বাচ্চা।
দাঁত চেপে বললাম – সামনে থেকে সরেন। বিয়ে হয়েছে তো কি হয়েছে? আপনাকে আমি জামাই বলে মানি না, আমার আশেপাশে ঘেঁষার চেষ্টা করবেন না। হু ।
বলেই হন হন করে চলে এলাম। আদ্র ভাইয়া মুচকি হেসে আমার পিছু পিছু আসছে। কলিং বেল চাপ দিতেই, মাই দরজা খুলে দিল। মুচকি হেসে বলল – এই আমার ছেলে আর তার বউ এসেছে রে। তোমরা কোথায়। এই শিশিরের মা, আসো।
একি । বিয়ে করেছি ঘন্টা দুই এক হয় নাই। বাড়ির মানুষ কেমনে জানলো। আরে ভাই রে এরা দেখি ইন্টারনেট থেকে ও বেশি ফাস্ট। মাই এর থেকে চোখ সরিয়ে সামনে তাকাতেই আবার টাস্কি খাইলাম। এই দুনিয়াতে কি আমি টাস্কি খাওয়ার জন্য ই বেঁচে আছি। সামনে আমার ভাই শান্ত দাঁড়িয়ে আছে। মহা খুশি তে। যেন খুশি সামলাতে পারছে না।
আদ্র ভাইয়ের দিকে নিভু নিভু চোখে তাকিয়ে বললাম – এটা যদি আমার ভাই হয়, তাহলে ভিডিও টা…
আদ্র ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে একটা বেকুব মার্কা হাসি দিয়ে আস্তে আস্তে বলল – শান্ত আমার জানের দোস্ত, ওরে কি করে ওরকম করব। আমি পাগল হতে পারি, আর ওটা শুধু তোর জন্য, এমনিতে আমি ঠিক আছি। আফটার অল ডাক্তার সাহেব আমি।
কি যে করি এই আদ্র পাদ্র রেএএএ। বললাম – ডাক্তার সাহেব আমি। (ভেংচি কেটে) কি ঘোড়ার ডিম এর ডাক্তার।কদু মার্কা হাসি দিচ্ছেন কেনো । আমার গা পিত্তি জ্বলে যাচ্ছে।
আদ্র ভাইয়া আমাকে কিছু বলবে এর আগেই মা আমাকে জড়িয়ে ধরলো।
মা – আমাকে মাফ করে দে মা। কেউ বাবা মা এর সাথে রাগ করে বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়। আমাদের কলিজা টা বের হয়ে যাচ্ছিল। আমাদের কথা একবার ও ভাবলি না।
আমি মায়ের বাঁধন থেকে নিজেকে মুক্ত করে বললাম – ওওও এখন ভালোবাসা উতলাইয়া পরছে।যেই শুনেছো তোমাদের মনের আশা পূরণ হয়েছে, আদ্রের সাথেই আমার বিয়ে হয়েছে, এখন মেয়ের সামনে ভালোমানসি সাজতে এসেছে। পালাতে দিলে কোথায়? আদ্র নামক সিসি ক্যামেরা পিছনে থাকলে কোন মানুষ সুখে পালাতে পারে।ছাড়ো আমাকে।
বলেই হন হন করে উপরে নিজের রুমে চলে এলাম। নিচে সবাই ছিল। তাদের সাথে কথা না বলেই চলে এসেছি।নিচে সবাই মুচকি হাসি দিল।সবার মাঝেই খুশি খুশি ভাব।
ওমা রুমের সামনে এসে দাড়িয়ে আছি। রুমের নকশা একদিন এ পাল্টে গেল কেমনে? আমার রুমে আমার জিনিস পত্র ই নেই। বাধ্য হয়ে চেঁচিয়ে বললাম – মিনা ভাবি!!ওওও মিনা ভাবি!!
আমার ডাকার দুই এক মিনিট এর মধ্যেই মিনা ভাবি, সুমাইয়া আর স্নেহা ভাবি দৌড়ে এলো।
আমি হাঁকিয়ে বললাম – ডেকিছি একটারে, আসলে যে তিন জন ই। বেপার কী? থাক ওসব জেনে লাভ নেই, আমার জিনিস পত্র গুলো কোথায়?
মিনা ভাবি – আদ্রের ঘরে।
আদ্রের ঘরে? মানে কি? আমার জিনিস পত্র তার ঘরে কেন?
স্নেহা – আদ্র ভাইয়ের আদেশ ছিল। এখন থেকে তোমাকে ঐ ঘরেই থাকতে হবে।
আর কিছু না বলতে দিয়ে এরা তিন জা চলে গেল।
একি , সবাই এমন করছে কেন আজ? আমার বিয়ে হয়ে গেছে বলে নাকি? বিয়ে হলে কি কোনো দিক দিয়ে কমে যায়? আমি আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম, ঘুরে ঘুরে দেখলাম কোন দিক দিয়ে কমছে কি না। বুঝতে পারছি না। ধেৎ। বাধ্য হয়ে আদ্র ভাইয়ের ঘরের দিকে গেলাম।
আদ্র ভাইয়ের ঘরে ঢুকে আরেক দফা টাস্কি খাইলাম। বুঝছি আজ টাস্কি ডে। মানে শুধু আমার জন্য। যেখানে যাই সেখানে ই টাস্কি খাই।
আদ্র ভাইয়ের রুমটা সুন্দর করে সাজানো হয়েছে। চারদিকে গোলাপ ফুল আর গোলাপ ফুল। একদিকে ভালো লাগছে , আরেক দিকে আবার ও কথা গুলো মনে পড়তেই দৌড়ে পালিয়ে যেতে ইচ্ছে করছে।
একটু এগিয়ে ভেতরে প্রবেশ করলাম। কাবার্ড থেকে একটা সাদা রঙের থ্রী পিস নামিয়ে ফ্রেস হতে চলে গেলাম। সেই কালকের থেকে একটা ড্রেস ই পরে আছি।
ফ্রেস হয়ে বের হতেই আদ্র ভাইয়াকে খাটে হেলান দিয়ে বসা অবস্থায় চমকে উঠলাম।
আমি যে চমকে উঠলাম তা আর প্রকাশ করলাম না।
আদ্র ভাইয়ের ড্রেসিং টেবিলের সামনে গিয়ে চেয়ারে বসে হাত পা এ প্রসাধনী ব্যবহার করছি।
আড়চোখে আয়নায় আদ্র ভাইয়ের দিকে তাকালাম, আদ্র ভাইয়া মুচকি হাসছে।
উফ্, উনি হাসছে কেন? ভুরু কুঁচকে তাকালাম তার দিকে হয়ে, বললাম – হাসছেন কেন? লজ্জা করে না একটা মেয়ের দিকে তাকিয়ে এভাবে ভেটকি মাছের মত হাসতে?
আমি যেন বড় জোকস্ বলছি। আদ্র ভাইয়া মুচকি হাসির পরিবর্তে শব্দ করে হেসে উঠলো।
আমি একটু গম্ভীর হয়ে বললাম – হাসছেন কেন? আচ্ছা বলবেন কি? তাছাড়া বিয়ে হলে কি কারো কোনো দিক দিয়ে কমে যায়?
আদ্র ভাইয়া আমার দিকে এগিয়ে আসছে। তাকে এগিয়ে আসতে দেখেই আমার প্রান যায় যায় অবস্থা। ঢুক গিললাম। বললাম – এগিয়ে আসছেন কেন? আপনি দূর থেকে উত্তর দেন, আমার কান ভালো আছে , আমি দূরের প্রশ্ন ও শুনতে পাই!! আপনি জানেন না, আপনি আমার কাছে আসলে আমি ঠিক থাকতে পারি না, হৃৎপিণ্ড জোরে বিট করে।(সাথে সাথে মুখ চেপে ধরলাম, ইরেএএ এটা কি বলে ফেললাম, নিজের পায়ে নিজেই কুড়াল মারলাম, ধেৎ।)
আদ্র ভাইয়া খুব কাছাকাছি চলে এলো। আমি একদম দেওয়ালে মিশে গেছি। আদ্র ভাইয়া ফিসফিস করে বলল – বউ এর দিকে না তাকালে কার দিকে তাকাবো? তুই ই বল। পাশের বাড়ির আন্টির দিকে।
আমি নিভু নিভু আওয়াজ এ বললাম – আসলে , আসলে..(আসলে আসলে ছাড়া আর কোন কথা ই বের হচ্ছে না আমার, আম্মি গোওওও)
আদ্র ভাইয়া আবারো বলে উঠলো -বিয়ে করলে কোন দিক থেকে কমে যায় না বরং একটা মেয়ে স্বামী পেয়ে তার ছোঁয়ায় পূর্ণ হয়।আর একটা ছেলে ও।
আদ্র ভাইয়ের কথা শুনে চমকে উঠলাম।আদ্র ভাইয়া ও কি আমাকে আজ ছুঁয়ে দেখবে। নাআআআ। আদ্র ভাইয়া ছুঁলে ই আমি নিজের ভেতরে ঠিক থাকি না। আদ্র ভাইয়া কে আচমকা ধাক্কা দিয়ে বললাম- আপনি ও আমাকে ছুঁয়ে দেখবেন তাহলে? আমাকে ছুঁবেন না আদ্র ভাইয়া। আমি আপনাকে,এই বিয়ে…
কিছু বলার আগেই আদ্র ভাইয়া আমাকে পাঁজাকোলা করে নিল। বিছানায় ফেলে দিয়ে….
চলবে…