শিশিরের আদ্র পর্ব ৭
#Neel
আমি চুপচাপ হাঁটছি। আদ্র ভাইয়া আমাকে আজ বকা দিয়েছে। সেই কথা মনে হতেই কষ্ট লাগছে। আমার সব বিষয়ে তার নাক গলাতে হবে কেন। আদ্র ভাইয়া কে পিছনে ফেলে ই একা একা হাঁটছি। হঠাৎ আদ্র ভাইয়া এসে আমার হাত ধরলো।
আমি হাতটা তার হাত থেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছি। তবুও ছাড়তে পারছি না।বাধ্য হয়ে হাত ধরেই হাঁটছি। শীতের আমেজ টা বোঝা যাচ্ছে ইতিমধ্যে। হালকা হালকা রিমঝিম বাতাস, ঠান্ডা লাগছে তবে বাতাসটা ভালো ও লাগছে।
হঠাৎ আদ্র ভাইয়া বলল-
………. রিমঝিম কোমল ঠান্ডা বাতাস
শরীরের রন্ধে রন্ধে মাদকতার আভাস…
রোজ বিকেলে ধরনীর বুকে জমবে শিশির কনা -আদ্র শিশিরের উন্মেদনায় চলবে শীতের রঙিন খেলা!!
#Noor
আদ্র ভাইয়া তো দারুন ছন্দ বলতে পারে। আচ্ছা তাহলে আদ্র ভাইয়া, আদ্র ভাইয়া চোখের ইশারায় বলল কী?
আদ্র ভাইয়া হালকা ঠান্ডায় ও কেঁপে উঠছে।নাক লাল হয়ে গেছে। আদ্র ভাইয়া কে সুন্দর লাগছে। আচ্ছা সবার ই কি নাকে, শীতের কোমল ঠান্ডায় নাক লাল হয়ে যায়? সবাইকে কি সুন্দর লাগে, হয়তো!! কিন্তু আদ্র ভাইকে আমার লোভনীয় লাগছে।
আদ্র- কিরে? তাকিয়ে কি দেখছিস? আমার প্রেমে পড়ে যাবি, কিন্তু।
হু ঢং। আইছে। আমি অন্য কিছু ভাবছিলাম। বলছিলাম কি- আদ্র কে ছাড়া কি শিশির চলতে পারবে না?
আদ্র ভাইয়া একটু থমকে দাঁড়িয়ে পড়ল। মুখে মলিন হাসি দিয়ে বলল – প্রশ্নটা ভুল করেছিস? আদ্র শিশিরকে ছাড়াও দিব্বি চলতে পারে।ভেবে দেখ, আদ্র কিন্তু গরমে ও থাকে শীতে ও থাকে। কিন্তু আদ্র শীতে শিশিরকে পেয়ে পূর্ণ হয়। এখন তুই এই প্রশ্ন টা খুঁজে বের কর, “কেন আদ্র কে ছাড়া শিশির চলতে পারে না?”
( আপনারা ও কিন্তু কমেন্ট এ প্রশ্নের উত্তর টা দিবেন )
এই আদ্র ভাইয়া কি বলতে চাচ্ছে বুঝতে পারছি না।তবে কথা বলতে বলতে,হাঁটতে হাঁটতে কখন যে বাসায় পৌঁছে গেছি, বুঝতে ই পারিনি। দেখতে দেখতে সন্ধ্যা হয়ে গেছে।
এমা, আমি বাসার সামনে কি করে, আমি নানু বাড়ি যেতে চাই। ওপস,আমার আজকের প্লান নানু বাড়ি থাকার ছিল। পাদ্রের বাচ্চা (মনে মনে) আদ্র ভাইয়ের দিকে তাকালাম, আদ্র ভাইয়া আবারো চোখ মেরে বাড়ির ভেতরে চলে গেল। বুঝলাম না, বেটা ইচ্ছে করে ই চোখ মারে নাকি চোখে সমস্যা। হার্টের ডা. কে চোখের ডা. এর কাছে নিয়ে যেতে হবে।ধেৎ।বাধ্য হয়ে আদ্র ভাইয়ের পিছু পিছু বাড়ির ভেতর প্রবেশ করলাম।
দাদি, মাই, মেজমা, মিনা ভাবি, মিন্নাত মিন্নাহ সবাই ড্রইংরুমে বসে সন্ধ্যার নাস্তা করছে।মা মনে হয় উপরে নিজের রুমে আছে। পুরুষরা কেউ বাসায় নেই। এমনিতে ও শান্ত ভাইয়া, নাহিদ, নিজাম ভাইয়া তারা আজ বন্ধুদের বাসায় ঘুরবে। আদ্র ভাইয়া কে নিয়ে যেতে চেয়েছিল, তার নাকি ইম্পর্ট্যান্ট কাজ আছে, বুঝলাম না বাপু কি কাজ? । সারাদিন আমার পিছু পিছু ঘুরছে, আজকে আমার দিনটাই মাটি করলো, মনে হয় সিসিটিভি ক্যামেরা ।বাবা, মেজ বাবা, আর বড় বাবা এবং আয়ান ভাইয়া কিছু ক্ষন পর ই অফিস থেকে চলে আসবে।
এগুলো ভাবতে ভাবতে ভিতরে ঢুকতেই কারো সাথে ধাক্কা খেলাম। কিন্তু আশ্চর্য, অন্যদিন ধাক্কা খেলে আমি নিচে পড়ে যাই, আজ পড়লাম না কেন?
নিচে তাকিয়ে দেখি মিন্নাত বসে আছে। ওমা একি আমি তাকাতেই দিল একটা চিৎকার। কি গলার আওয়াজ। বাপরে বাপ, মসজিদে মাইক না দিয়ে ওর গলার ভয়েস টা দিলে ও মনে হয় মাইলের পর মাইল আওয়াজ যাবে।
এই মিন্নাতের বাচ্চা চুপ কর। বেশি গলা করলে তোরে চকলেট দিমু না। মিন্নাহ কে দিয়ে দিমু। আমি আর মিন্নাহ মিলে তোর গলাটা ভাড়া দিমু মাইকের পরিবর্তে।
আরে বাহ্, মিন্নাত কান্না বন্ধ করে দিছে। কিন্তু ভেজাল হলো অন্য একটা। পিছন থেকে বুড়িটা বলল- কিরে সতিন, শশুর বাড়ী থেকে তাড়িয়ে ফারিয়ে দিল না কি?
আমি চিল্লিয়ে বলল- চুপ কর বুড়ি। সব দোষ তোর আদরের পাদ্র সরি সরি আদ্রের। আজ আমার দিনটাই মাটি করে দিসে। ঐ ছেমরা (আদ্র ভাইয়াকে) তোর কি কাম কাজ নাই, সারাটা দিন সিসিটিভি ক্যামেরার মতো আমার পিছু পিছু ঘুরছোস। শেষ এ কথার ফাঁদে ফেলে আবার বাসায় নিয়ে এসেছোস। উঁহু ভালো লাগে না।(ফ্লোরে হাত পা ছড়িয়ে বসে পড়লাম)
হঠাৎ মা পিছন থেকে বলল- হাতের মাইর না খাওয়া অব্দি সোজা হয়ে উঠে দাঁড়া। আজ ও বাড়িতে কি কি করেছো সব আমাকে ফোন দিয়ে মহিদ বলেছে। এই তুই ডেন্টিস্ট এর কাছে গেছিলি।
হু । গেছি তো।
মা – যা ফ্রেশ হয়ে নিচে আয় নাস্তা করবি।
আমি রুমে যাচ্ছি। পিছনে পিছনে মিন্নাত আর মিন্নাহ ও আসলো । বললাম – কিরে তোরা আমার পিছনে পিছনে কেন ঘুরছিস? ঘটনা কি?(মিন্নাত আর মিন্নাহ হচ্ছে এই বাড়ির সিসিটিভি ক্যামেরা। ওরা আমার গুপ্ত সাংবাদিক, বাড়িতে যা হয় সব খবর আমাকে বলে)
মিন্নাহ- একটা গুরুল্তপু্ল্ল (গুরুত্বপূর্ণ, র কে ল বলা ওর জাতীয় অভ্যাস) তথ্থ জানি।
মিন্নাত – হু, জানি জানি। তবে আদের চলকেত দিতে হবে।পমিজ কলো।
ওকে বাবা ওকে। তোরা ও তো দেখছি আমার মতো চকলেট খোর হচ্ছিস। ঠিক আছে বাবা, তোদের চকলেট দিব। পিঙ্কি প্রমিজ। ওরা দুজন খুশিতে লাফিয়ে উঠলো। আমি আমার ড্র থেকে চকলেট বের করে ওদের দিলাম।
মিন্নাত – অনিমা, আজ সকালে তুমি যাওয়ার পর আদ্দু ভাইয়া নেগে( রেগে) গেছে। খাবার টেবিল ভেঙে ফেলছে।
মিন্নাহ- হুম , অনিমা। চিক্কার কলে উঠছিল।হাত দিয়ে ভেঙে ফেলছে।
আচ্ছা বাবা থাম থাম। তোদের আর বলতে হবে না। আমি ব্যাপারটা জেনে নিব। দাদিকে বললেই সে বলে দিবে।
ফ্রেশ হয়ে নিচে ড্রইংরুমে গেলাম। ওদের কথা অনুযায়ী , সত্যি ই ড্রইংরোম এর খাবার এর টেবিল টা নেই। নেই বলতে, অন্যরকম । নতুন। আরে , আমার কাঁচের একুরিয়ামটা কই? নেই তো।
নিচে নেমে চিল্লাতে শুরু করলাম – মা, মাইই.. আমার একুরিয়ামটা কই? আমার প্রিয় মাছগুলো কই?
আমার চিৎকার শুনে মাই দৌড়ে এলো।
মাই – কি হয়েছে তোর? এমন চিল্লাচিল্লি শুরু করলি কেন? তোর মা আইলে তোরে কিন্তু লাঠি দিয়ে পিটাবে।
ওটা দেখা যাবে। তবে আমার শখের এটা ভাঙলো কে?
মিরা (আয়ান এর স্ত্রী)- আদ্র। তুমি তো ছিলে না, সকালে (হঠাৎ থেমে গেল, আদ্রের মা ইশারা দিয়ে থামিয়ে দিল)
আদ্র ভাইয়ের কথা শুনতেই আমার মাথা গরম হয়ে গেল।সে শুরু টা করলো কি? কাল থেকে সব কিছু ই উল্টো পাল্টা করে দিছে।
সোজা দৌড়ে উপরে চলে গেলাম। আদ্র ভাইয়ের রুমের দিকে। দরজাটা খোলা ই আছে। ভেতরে ঢুকলাম। আদ্র ভাইকে খুঁজলাম কিন্তু পেলাম না। লোকটা গেল কোথায়। বাধ্য হয়ে চলে যাবো তার আগে আদ্র ভাইয়ের পড়ার টেবিলের দিকে নজর গেলো। একটা ডায়েরি, খুব সুন্দর। ডায়েরিটা ধরলাম, এপাশ ওপাশ ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখলাম। কিছু লেখা নেই। তবে প্রথম পাতা উল্টিয়ে দেখলাম লিখা আছে – মা , যাকে মা বলে চিনি, সে আমার মা নয়, সে আয়ান ভাইয়ের মা ও নয়। আমার মায়ের জমজ বোন। আমার মা কে তো খুন করা হয়েছে!!আমার বাবা খুনি, আমার মায়ের খুনি। ছাড়বো না কাউকে। কাউকে না ।খুন করে ফেলবো।
এটুকু পড়ে আমার ডায়েরিটা হাত থেকে পড়ে গেল। ভয়ে দৌড়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলাম। রুম থেকে বের হয়ে, নিজের রুমের দিকে যেতেই কিছুর সাথে ধাক্কা খেয়ে নিচে পড়ে গেলাম। আমার অন্তর আত্মা এখনো কাঁপছে। চোখ মেলতেই…
চলবে…