শিশিরের আদ্র পর্ব ৮
Neel
(গল্প কপি করেন ,ভালো কথা, দয়া করে রাইটার এর নাম পাল্টে দিবেন না, একটা গল্প লিখতে কষ্টের সাথে সময় ও নষ্ট হয়। তাছাড়া, গল্প লেখার মন মানসিকতা ও নষ্ট হয়)
এটুকু পড়ে আমার ডায়েরিটা হাত থেকে পড়ে গেল। ভয়ে দৌড়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলাম। রুম থেকে বের হয়ে, নিজের রুমের দিকে যেতেই কিছুর সাথে ধাক্কা খেয়ে নিচে পড়ে গেলাম। আমার অন্তর আত্মা এখনো কাঁপছে। চোখ মেলতেই আদ্র ভাইয়াকে দেখলাম। কেমন একটু চিন্তিত।
আদ্র – তোর কি চকলেট এর মতো জায়গায় জায়গায় হোঁচট খাওয়ার অভ্যাস আছে। শরীর কি চকলেট খেয়ে তুলতুলে বানিয়ে ফেলছোস, নাকি হাড্ডি নেই। আমি কিন্তু ডা. হার্টের ডা. রুমে চল ঠিক করে দিব।(চোখ মেরে #Neel)
বেটার চোখ নষ্ট। কোন কথা বলা যাবে না, উনি তো সাইকো, আল্লাহ (মুখে হাত দিয়ে চেপে ধরেছি, যেন ভুলেও কোন কথা বের না হয় #Neel) বাঁচাও, খুন করে ফেলবে,যদি আমাকে ও করে ফেলে,উঠে দৌড়ে আমার রুমে চলে আসলাম।
আদ্র ব্যাপার টা বুঝল না। কি হয়েছে হঠাৎ করে শিশিরের । বিরবির করে বলল – আমার প্রিয়তমা টা আস্ত একটা পাগলি।
দ্রুত রুমের দিকে হেঁটে গেল। রুমে ঢুকতেই আদ্রের চোখে তার ডায়েরিটা পড়লো। আদ্র তো ডায়েরিটা টেবিলের উপর রেখেছিল। কিছু লিখতে ছিল, ফোন আসতেই দ্রুত বন্ধ করে চলে গেল, নিশ্চয়ই কেউ রুমে ঢুকেছিল।ডায়েরিটা উঠাতেই ডায়েরিটার নিচে একটা নূপুর পেল। নূপুর টা দেখে বুঝে গেল কে এসেছিল। এটা আর কেউ নয় শিশির। শিশির ছোট থেকেই নূপুর পরতে পছন্দ করত। আদ্রের চিন্তা আরো একটু বাড়লো।
শিশির তুই ভুল করেছিস। ঠিক ভুল নয় , বলতে পারিস আমার জন্য ঠিক। তোকে আমার সম্পর্কে সব জানতে হবে, সব বলতে সব । শুরুটা তুই করেছিস, আস্তে আস্তে শেষ টা আমি করবো। তবে কন্ডিশন একটাই, তোকে সব পরিস্থিতিতেই আমার কাছে ই থাকতে হবে, আমার হতেই হবে। দুজন একসাথে বাঁচবো দুজন একসাথে মরবো।
বাঁকা হেসে, রুমের বাইরে এল, শিশিরের রুমের দিকে পা বাড়াতেই, মীনা এসে বলল -নীচে যেতে। খাবার খেতে।
আদ্র বাধ্য হয়ে মীনার সাথে নিচে চলে গেল খাবার খেতে।
আমি খাবার খেতে যাব না যাব না, তবুও খুব খুদা লাগছে। কিচ্ছু খাই নাই এখন পর্যন্ত। ধেৎ, বাধ্য হয়ে ড্রইংরুমে গেলাম।কিছুটা নির্ভয় হলাম,কারন এখানে সবাই আছে।
বড় বাবা – কিরে তুই যে নানু বাড়ি থেকে চলে এসেছিস? যাস নি?
আমি ভয়ে ভয়ে আদ্র ভাইয়ার দিকে একবার তাকালাম।দেখি আদ্র ভাইয়া ও আমার দিকে তাকালো, মুচকি একটা হাসি দিল। এরে সব জেনে গেল না তো?(রাইটার -নীল)আমি সবাইকে সব বলে দিবো, আদ্র ভাইয়ার সম্পর্কে। কিন্তু সঠিক সময় আসুক, এখন আদ্র ভাইয়া আছে ।
আমি একটা ঢুক গিললাম বললাম – এমনি এসেছি। পরে আবার যাবো।
বাবা – হ্যা হ্যা, তোমার তো এই কাজ ই। খালি, এখানে তো সেখানে। পড়ালেখার কি অবস্থা?
মাই – আরে , মেয়েটা খেতে এসেছো,খেতে দাও, আর তোমরা জানি কি বলতেছিলে, ঐ নিজাম আর নাহিদ কে নিয়ে।
বড় বাবা – ও আচ্ছা, আচ্ছা। ভালো কথা কিন্তু মনে করিয়ে দিয়েছো। আমি নিজাম আর নাহিদের বিয়ে নিয়ে কথা বলছি। ছেলেরা যথেষ্ট বড় হয়েছে। কাল আমরা মেয়ে দেখতে যাব , ওদের সাথে ও এই বিষয়ে কথা বলতে হবে। আমার জানা মতে ওদের কোন আপত্তি থাকবেনা।আর এখন আদ্র ও আছে, আয়ানের বিয়ের সময় থাকতে পারে নাই, ওদের টা আমি চাই আমার ছেলে আদ্র দেখুক।
আয়ান- আরে বাবা, আদ্র হয়তো উপস্থিত ছিল না তবে আমার বিয়ের সব খুঁটিনাটি আদ্র ই ছিল।কিরে আদ্র।(আদ্র ভাইয়া মুচকি হেসে মাথা নাড়িয়ে সায় দিল , রাইটার-নীল) এবার কিন্তু সামনাসামনি হবে, সবকিছু। ওদের পর তোর টা চাই। অশি, তুই চুপচাপ আছোস কেন? অন্যদিন তো ভাইদের বিয়ে হবে কবে,কবে? বলে মাথা খেয়ে নিতিস?আজ তোর কি হলো।
কেমনে আয়ান ভাইয়া কে বলি, আদ্র ভাইয়ের সাইকো গিরি এখনো কমে নাই। সে তো মাইই আর বড় বাবা কে খুন করে ফেলবে। এই কথা আমি কারে বলি ।ধেৎ , কেন যে আদ্র ভাইয়ের রুমে গেলাম। এখন আমার শান্তি কেড়ে নিয়েছে। ব্যাটা পাদ্রের বাচ্চা।
আদ্র ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে আবার ও একটা মেকি হাসি দিয়ে, আয়ান ভাইয়া কে বললাম – খুশি ই তো। আমি তো মহা খুশি। ভাইয়া রা আসুক তখন হবে। দেইখো ।
খাওয়া শেষে দ্রুত চলে আসলাম রুমে। এই আদ্র পাদ্র এর জন্য কিছু ভালো মতো খেতেও পারিনি।ধেৎ।
অন্যদিকে শিশির এর খাওয়া দাওয়া, কথা বার্তা,সব কিছু ই আদ্র লক্ষ্য করেছে।আদ্র বুঝতে পেরেছে শিশির তাকে ভয় সহ খারাপ ভেবেছে। শিশির কি জেনেছে কতটুকু ই বা জেনেছে ,(রাইটার-নীল) এই চিন্তায় আদ্র ও ভালো মতো খেতে পারে নাই। শিশিরের পিছু পিছু সে ও খাওয়া শেষ করে নিজের রুমে চলে গেল।
অন্যদিকে বিয়ের আমেজে মেতে উঠেছে চৌধুরী বাড়ির বড়রা।
____
চৌধুরী বাড়ির সবাই এখন ঘুমে। ঘুম নেই দুজন মানুষের চোখে। একজন ভয়ে তার কথা কাউকে বলতে পারছে না, না পারছে নিজে গিলে পেটে রাখতে। অন্যদিকে আরেক জন প্রিয়তমার প্রিয় হওয়ার জায়গায় অপ্রিয় হয়ে উঠেছে কিছুটা । কিভাবে বুঝাবে সে প্রিয়তমা কে?
আমার ঘুম আসছে না। ভালো লাগছে না কিছু। দাদির কাছে সব শেয়ার করি, কিন্তু আজকের ঘটনা টা শেয়ার করতে পারছি না। পারি নাই। প্রমান ছাড়া, কি করবো, কেউ কি বিশ্বাস করবে আমার কথা। ধেৎ। তখন কেন যে ডায়েরিটা নিয়ে আসলাম না। আস্তে আস্তে উঠে গেলাম।একটা চাদর পরে রুম থেকে বের হয়ে গেলাম। চুপচাপ হেটে ছাদে চলে আসলাম। এটা আমার একটা পুরোনো অভ্যাস। কোন চিন্তায় পড়লেই আমি ছাদে চলে আসি । এক কোনা থেকে কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে আছি। ছাদের কোনায় দাঁড়াতে আমার ভয় করে ।একটু ফোবিয়া আছে।রাত ১১টা হয়তো বাজবে। শহরে কতকিছু ঘটে যায়। মানুষ মধ্য রাত পর্যন্ত জেগে থাকে কত বাহানায়। এগুলো ভাবছিলাম। সাথে ভাবছিলাম কিভাবে, ঐ ডায়েরিটা হাসিল করা যায়, প্রমান ছাড়া কিছুই করতে পারবো না।(#Neel)
আরে মাথা মোটা, আর কত ভাব্বি, ওটা একটা সাহিত্যিক বই ছিল। আমি ওটার কভার ডায়েরির মতো লাগিয়েছিলাম। শুনেছিস, কেউ কখনো তার মা বাবা কে খুন করে? আর এতো রাতে তুই ছাদে কি করছিস?- আদ্র
কথাটা শুনে চমকে উঠলাম। পিছনে তাকিয়ে দেখি ওটা আর কেউ নয় , আমার যম,মানে আদ্র ভাইয়া।ভয় পেয়ে গেলাম।
আদ্র ভাইয়া আমার দিকে এগিয়ে এলো। আমি ভয়ে এক পা এক পা পিছনে যাচ্ছি। কখন যে ছাদের কিনারে চলে গেছি ভুলে গেছি , হঠাৎ পা ফসকে গেল, আমি ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেললাম। মনে মনে ভাবছি, আদ্র ভাইয়া কি আমাকে মেরে ফেলতে আমার পিছু নিয়েছে।(রাইটার -নীল)তার মানে এখন আমি মরে গেছি। কিন্তু না, মনে হচ্ছে আমাকে কেউ আটকে রেখেছে। পিট পিট করে চোখ খুলতেই, দেখলাম আমি আদ্র ভাইয়ের বুকের সাথে লেপ্টে আছি। কিভাবে কি হল ,ব্যাপার টা বোধগম্য হলো না।
আদ্র জানতো শিশিরের উচ্চতা নিয়ে ফোবিয়া আছে।যখন দেখলো শিশির পরে যাচ্ছে, আদ্রের কলিজা বের হয়ে যাওয়ার উপক্রম। আদ্র দ্রুত শিশিরের হাত ধরে শিশিরকে নিজের বুকে টেনে নিল। যেন নিজের প্রান আবার ফিরে পেল। আদ্রের হৃৎপিণ্ড জোরে জোরে বিট করছে। একটু দেরি হলে বা হাত ফসকে গেলে, না না, সে আর ভাবতে পারছে না।
আদ্র ভাইয়া আমাকে জড়িয়ে ধরে আছে। এক অদ্ভুত ভালোলাগা কাজ করছে। আমার তো আরো ভাইয়া আছে, কই তাদের জরিয়ে ধরলে তো আমি এরকম ফিলিং হয় না? নাকি আদ্র ভাইয়াকে প্রথম জরিয়ে ধরেছি বলে এরকম ফিলিং হচ্ছে। আদ্র ভাইয়ের থেকে সামান্য একটু দূরে সরে দাঁড়ালাম।
আদ্র – অনেক সময় আমরা যা চোখে দেখি তা সঠিক হয় না, এই দেখ আমি এখনো দ্বিধা দ্বন্দ্বে ভুগছি। আবার যা আমরা দেখতে পাই না, তা হয়ে যাচ্ছে। আমাদের চোখের সামনে।(কোমল ভয়েস এ)
আদ্র ভাইয়া এতো ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে কথা বলছে কেন? বললাম – তাহলে আপনি জেনে গেছেন, আমি আপনার ঐ ডায়েরিটা পড়ে ফেলছি? এখন যদি সবাইকে বলে দেই, আপনার আসল চেহারা সবার সামনে চলে আসবে?
আদ্র ভাইয়া থমথমে গেল। ওনার মুখ দেখে বুঝা যাচ্ছে না ওনি কি পরিস্থিতিতে আছে। আমার কথায় তার উপর কতটুকু ই রিয়েকসন হলো, আমার বোধগম্য হলো না।(রাইটার-নীল) কিন্তু হঠাৎ, আমার হাত টেনে হেঁচকা টানে আমাকে পাঁজাকোলা করে নিল। ব্যাপার টা এতো দ্রুত ই ঘটেছে, আমি এখনো শকড। আদ্র ভাইয়া পিছন ফিরে হাঁটা শুরু করলো। আমি হাত পা ছুড়তে লাগলাম। বলতে লাগলাম – আমাকে ছাড়ুন, আমাকে নামিয়ে দিন আদ্র পাদ্রের বাচ্চা। তোকে আমি ছাড়বো না। ছাড়ুন।
কিন্তু আদ্র তো আদ্র ই। ওনি যে হঠাৎ করেই এই কাজটি করবে ভাবতে পারিনি, ওনি….
চলবে….