শিশিরের আদ্র পর্ব ৯
#Neel
কিন্তু আদ্র তো আদ্র ই। ওনি যে হঠাৎ করেই এই কাজটি করবে ভাবতে পারিনি, ওনি ওনার ঠোঁট দুটো আলতো করে আমার ঠোঁটে মিশিয়ে দিল। প্রথমে হাত পা, মুখ যাই বলছিলাম, ওনার এই কান্ডে আমি চুপ হয়ে যাই।
বরাবরই আমাদের ছাদে একটা দোলনা আছে। ওটাতে বসিয়ে দিল। আমি চুপচাপ ই বসে আছি। (রাইটার -নীল)তিনি ও আমার পাশে গা ঘেঁষে বসলেন। আমার চাদরটার অর্ধেক ভাগ ও নিয়ে নিলেন। অর্থাৎ একটাই চাদরের ভেতর আমরা দুজন।
শীত কিছুটা পড়েছে। কিছুটা ঠান্ডা লাগছে। প্রবাহমান ঠান্ডা বাতাস বলছে, এবারের শীত ঝমঝমিয়ে পরবে। বরাবরই শীতকাল আমার খুব পছন্দের। হাল্কা কুয়াশা পড়েছে। ছাদের উপর টব গাছগুলোতে, শিশির জমেছে। মিনিট পাঁচেক হবে আদ্র ভাইয়া আর আমি চুপচাপ বসে আছি।
নিরবতা ভেঙ্গে আদ্র ভাইয়া বলল- শিশির?
ডাকটাতে কি ছিল জানি না, তবে আমার ঠিক হৃৎপিণ্ড বরাবর লেগেছে, একটু কেঁপে উঠলাম। বলবো না, বলবো না, তবুও মুখ ফসকে বলেই ফেললাম – হুঁ।
আদ্র- আমার রুমে গিয়েছিলি কেন? কি দেখছিস,কি পরেসিছ? হঠাৎ তোর বিহেব এরকম পাল্টে গেছে কেন?(শিশিরের হাত দুটো আদ্রের হাতে বন্দী করে ) আমাকে বল, আমাকে নিয়ে সমস্যা কিন্তু আমিই সল্ভ করতে পারবো।বলবি আমায়??
জানি না আদ্র ভাইয়ের হাতের ছোঁয়ায় কি আছে? আর শেষের কথাটার অনুরোধ আমি যেন ফেলতে পারলাম না। আদ্র ভাইয়ের দিকে তাকালাম, তার চোখে আমি ভরসা খুঁজে পেলাম। তাই যা যা জানি সব বলে দিলাম, ডায়েরিটা সম্পর্কে ও।
আদ্র ভাইয়া মুচকি হাসলো। আদ্র ভাইয়ের মুচকি হাসিটা খুব সুন্দর। খুবই। যেন মুচকি হাসি কেবলমাত্র তার জন্য ই প্রজয্য।
আদ্র – ওটা একটা সাহিত্যিক বই। তুই কি পাগল, ওটা পরে আমাকে অবিশ্বাস করছিস? আরে আমি কেন আমার বাবা মা কে খুন করবো । কোন সন্তান কি তার বাবা মা কে খুন করে।আর খুন করতে হলে কবেই আমি খুন করতে পারতাম। তুই কি ভাবতে পারলি না, এই সাধারণ ব্যাপার টা।
আদ্র ভাইয়া তো ঠিক ই বলছে সে মাই আর বড় বাবা কে তো আগে ও খুন করতে পারতো, কোন সন্তান কিভাবে খুন করতে পারে তার মা বাবা কে, ধেৎ। তবে, ঐ ডায়েরিটা, ওটা ডায়েরি ই ছিল। কিন্তু আদ্র ভাইয়া তো সাহিত্যের বই বলছে।আমার চোখ ভুল দেখেছে কি? হতেই পারে, যেই তিড়িং বিড়িং করি , কি জানি বাপু,হতে ও পারে।
আস্তে করে বললাম – সরি আদ্র ভাইয়া।
আদ্র ভাইয়া আমার চাদরটা আমাকে দিয়ে দিলো। বলল – যা হওয়ার হয়েছে, এখন রুমে যা, সোজা গিয়ে শুয়ে পড়বি, রাত অনেক হয়েছে। যা।
আমি মাথা নেড়ে সম্মতি দিলাম। এভাবে ও কাল কলেজ যেতে হবে, একটা প্রোগ্রাম আছে। ঘুমোতে হবে। আদ্র ভাইয়াকে রেখে ই চলে গেলাম।
অন্যদিকে আদ্র হাসছে, ভয়ংকর হাসি। বলল- আমার প্রিয়তমা এতো টা বোকা। সরি রে, তুই যা জেনেসিস তা সব ঠিক ছিল। কিন্তু ঐ যে , সব সময় সব কিছু সঠিক হয় না, সঠিক হলেও সঠিক পরিস্থিতি হয় না। আবার সঠিক কিছু চোখের সামনে থাকলেও অদেখা ই থেকে যায়। আমাকে সঠিক তথ্য টা জানতে হবে, তার জন্যই তো দেশে ফিরে আসা। আসছি আমি, আমি ফিরে এসেছি, সবাই কে পাপের শাস্তি এবার সামনে থেকে পেতে হবে। হবেই। আপাতত ডায়েরিটা লুকিয়ে রাখতে হবে। অন্যকারো হাতে পরার আগে। (রাইটার -নীল)
___
সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠেই দেখি ৯টা বেজে গেছে। এরে আজ কলেজ যেতেই হবে। প্রোগ্রাম আছে। ১০টার আগে যেতে হবে।দৌড়ে দৌড়ে সব রেডি করলাম।
কলেজ ড্রেস পরে নিচে নামতেই মেজমা কে বললাম – মেজমা মেজমা, প্লিজ, আমাকে তাড়াতাড়ি খাওয়াইয়া দেও। দেরি হয়ে যাচ্ছে। অলরেডি সাড়ে ৯ টা বেজে গেছে।
আমার বাজে অভ্যাস আছে, আমি মেজমা মাই এদের হাতে বেশি খেতে পছন্দ করি।
মেজমা -তুই বস, আমি আনছি।
মা – এতো বড় ধেমরি ছেরি রে কি খাওয়াই দিবেন। ওর কি আগে হুঁশ ছিল না, ওর কলেজ আছে, নাকে কি সরিষা তেল লাগিয়ে ঘুমিয়েছিল। এরে অশি, তোর কি হাতে ফুসকা পড়ছে, বেয়াদব মেয়ে কোথাকার, সারাদিন একে ওকে ঝালিয়ে মারিস।( মা চিল্লিয়ে চিল্লিয়ে )
মেজমা -আহ, ছোট। তুই চুপ কর। আমার মেয়ে থাকলে দেখতি কি করতাম। এমন করস কেন, আমার ভালোই লাগে ওর এই পাগলামো দেখে। তুর কাজ তুই কর।
মাই – ঠিক বলসিস মেজ। এই ছোট্ট কিন্তু খুবই বেশি করে। বলি আমাদের মেয়ে নাই দেখে, তোর মেয়েকে আদর করি দেখে কি তোর হিংসে হয়?
মা – বাপরে। তোমরা যে কি বলো না? এই মেয়ে সংসার করবো কেমনে? আদরে আদরে যে বাঁদর বানিয়েছো।যা খুশি তাই করো। তোমরা ওর পাগলামি সহ্য করতে পারলে আমার কি যায় আসে।যাও তো এটাকে আগে খাইয়ে বিদায় করো।
মেজ মায়ের হাতে খাচ্ছি।এমন সময় বাইকের হন শুনতে পেলাম। অল্প খেয়েই মেজমা কে বিদায় দিয়ে চলে গেলাম।
অন্যদিকে আদ্র জগিং করে বাড়ির দিকে ফিরছিল। গেইটের বাইরে একটা ছেলেকে বাইক নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলো। ব্যাপার টা দূর থেকে বুঝতে একটু অসুবিধা হচ্ছিলো তাই দৌড়ে দ্রুত এগিয়ে আসছে, কিন্তু আদ্রের আগেই শিশির বাইক চালানো ছেলেটির সাথে কথা বলে বাইকে উঠে গেল। আদ্র এগিয়ে আসতে আসতে ওরা চলে গেল।
আদ্রের চোখ মুখ রাগে লাল হয়ে গেছে। এই অবস্থায় আদ্র বাড়িতে গেল। আদ্রকে দেখে আদ্রের মা এগিয়ে আসতেই আদ্র হাতের ইশারায় মানা করলো। মেজ মা কে বলল – দাদি কে আমার রুমে একটু পাঠান তো তাড়াতাড়ি।
বলেই পাশ কাটিয়ে চলে গেল। আদ্রের মা আদ্রের দিকে অশ্রমাখা চোখে তাকিয়ে রইল।
___
অন্যদিকে, কলেজে পৌঁছাতেই হৈচৈ শুরু হলো আমাদের গ্রুপের। আমি, মাহি সহ আমার বন্ধুরা কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজে আছি।
মাহিকে বললাম – আমার ফুল?
মাহি নিরলস চোখে তাকিয়ে আছে । বলল – আমি বইয়ের ভেতর রেখেছি, কাল আমার বইয়ের থেকে নিয়ে নিস।
ইশ্ শুনেই কলিজা খুশি হয়ে গেল।খুশি হয়ে মাহিকে জড়িয়ে ধরলাম, মাহি ও হেসে জড়িয়ে ধরলো।
পুরো কলেজ সাজানো হয়েছে। কলেজে এক সমাবেশ হবে। এখানে নামখ্যাত এক ডক্টরের টিম আসবে। তার সাথে মন্ত্রী ও সাথে গন্যমান্য ব্যক্তিগন ও।এখন থেকেই এর শোরগোল শুরু হয়ে গেছে।
একে একে গাড়ি প্রবেশ করছে। বড় বড় ব্যক্তিদের ফুলের মালা দিয়ে বরণ করা হচ্ছে। সবার শেষে দুটি গাড়ি প্রবেশ করলো। প্রথম গাড়ি থেকে মন্ত্রী নামলো তার সাথে একজন সুদর্শন যুবক। আমাকে আমার বন্ধু বললো, ওটা মন্ত্রীর ছেলে, খুবই এরোগেন্ট। তাদের বরন করার জন্য আমাকে আর তোহা (ক্লাসমেট)কে স্যার রা ফুলের তোড়া দিল।
আমি আর তোহা বরন করতে গেলাম। তোহা মন্ত্রী কে বরন করলো, আমি মুচকি হেসে মন্ত্রীর ছেলে কে বরনের জন্য ফুল দিলাম। ফুলের তোড়া টা নেওয়ার সময় তার হাতটা আমার হাতে ছোঁয়া লাগলো। আমি ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে হাত ঝাড়া দিলাম।
ছেলেটি বলল – মাশাআল্লাহ, তুমি কিন্তু খুবই সুন্দর। উফ্, এককথায় অসাধারণ।
ছেলেটি কথায় যতটা অবাক হয়েছি,তার চেয়ে পিছনে তাকিয়ে অবাক হয়েছি। পিছনের গাড়ি থেকে নেমে, আদ্র ভাইয়া গম্ভীর চোখে তাকিয়ে এগুলো পর্যবেক্ষন করছে।এমন সময় প্রিন্সিপাল স্যার এসে, আরেকটি ফুলের তোড়া, আমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল – বরন করে এসো।
এক পা এক পা এগিয়ে আদ্র ভাইয়ের সামনে দাঁড়ালাম। কাঁপা কাঁপা হাতে ফুল টা দিলাম। আদ্র ভাইয়া ব্যান্ডজ হাতে ফুলের তোড়া টা নিল।
তড়িগড়ি করে ওখান থেকে চলে আসলাম।
শিশির যেতেই প্রিন্সিপাল সবাইকে মঞ্চে বসালো। আমরা সবাই সামনে বসলাম। আদ্র শিশিরের সাথে সেই বাইক ওয়ালা ছেলেটি কে দেখে মুখটা আরো শক্ত করে নিল।
কিছুক্ষণ আগে, সকালে রুমে যেয়ে আদ্র রাগে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। তার রুমে থাকা শো পিস গুলো ভেঙ্গে ফেললো। এমনিতেই কাল কাঁচ ভেঙ্গে হাত ব্যান্ডজ করেছে, এটার উপরে আবার আঘাত পেয়ে তরতাজা রক্ত স্রোতের মতো প্রবাহিত হচ্ছে।
এর মধ্যেই দাদি ঘরে ঢুকে। আদ্রের হাত দেখে চমকে উঠে। দৌড়ে হাত ধরে ।
আদ্র দাদিকে দেখে কান্না করে দিল। বলল- ও কেন এমন করে দিদুন?
দাদি – কি হয়েছে,বাজান। বল আমায়? আবার কি করলো অশি।
আদ্র শিশিরের আর বাইকের ঐ ছেলেটির কথা বলতে ই দাদি জোরে হাসতে শুরু করলো।
আদ্র – তুমি হাসছো কেন?
দাদি – হাসবো না তো কি করবো। ওটা পাশের বাড়ির , মানে মোল্লা বাড়ির ছেলে। একসাথে পড়াশুনা করে ওরা। এটা নিয়ে ও এমন করতে পারিস তুই। ওর কী বন্ধু বান্ধব ও থাকবে না!
আদ্র কিছু না বলেই ওয়াসরুমে চলে গেল। ফ্রেস হতে হতে ভাবলো, আর নয়। আর প্রিয়তমা কে ছাড়া যাবেনা। কখনো কাজিন, কখনো বন্ধু বান্ধব, আর কত। না, শিশির আর নয়? আমার ভালোবাসা তোকে এবার বুঝতে হবে, আর সেটা যেকোনো অবস্থাতেই। সময় এসেছে সব কিছু নিজের হাতে তুলে নেওয়া। এর আগে তাকে সব কিছু ঠিকঠাক করতে হবে। যেন সঠিক চাল চালতে পারে। সবার শেষে বাজিমাত টা সে ই করতে পারে।
____
বর্তমানে…
মাহি – এই অশি, শোন আমার কথা। এই যে মঞ্চে বসে আছে ডা. আদ্র । তাকে আমি চিনি।
আমি বললাম – চিনতেই পারিস । নামকরা হার্ট সার্জেন্ট। ডা. আদ্র।
মাহি – আরে না না, আমি তো তাকে কালকে দেখেছি। তাকে আমি তোর সম্পর্কে কত কিছু বলেছি।
কিহ্!! কীভাবে? কখন?
মাহি সব কিছু খুলে বলল। ব্যাপার টা একটু খটকা লাগলো। আদ্র ভাইয়া আমাকে চিনে ও না চেনার ভান। কেন ? জানতে হবে।
আদ্র ভাইয়া মাঝ অনুষ্ঠানে চলে গেল। অনুষ্ঠান শেষ হতে হতে ৩ টা বেজে গেল।যাক অবশেষে,অনুষ্ঠান ঠিকঠাক মতো শেষ হলো। কিন্তু মন্ত্রীর ছেলের বিষয়টা মাথায় ঢুকলো না। অনুষ্ঠান এ সারাক্ষণ তাকিয়ে ছিল। বেটা কি ত্যারা চোখা নাকি?
আদ্র ভাইয়া যাওয়ার আগে আমার জন্য বাসার একটি গাড়ি রেখে গেছে। আজ খুব টায়ার্ড লাগছে,সবাই কে বিদায় দিয়ে চলে আসলাম। ড্রাইবারকে বলতেই, সে বাড়ির দিকে রওনা হলো।
__
সন্ধ্যায় বাসায় সবাই উপস্থিত। উপস্থিত নেই একজন। সে হলো আদ্র ভাইয়া। আমি বললাম – আচ্ছা দাদি, আজ বিকেল থেকে তো আদ্র ভাইয়াকে দেখলাম না? কোথায় সে?
কথাটা বলতেই সবাই আমার দিকে তাকালো, যেন আমি….
চলবে…