#টু ফাইভ এইট জিরো
পর্ব ২
মেয়েটা তখনও দাঁড়িয়ে আছে, আমি অবাক হয়ে সেদিকে তাকিয়ে রইলাম৷ আমার উচিৎ ছিল কল দিয়ে নিজের টিমের সাহায্য কামনা করা। কিন্তু হাত পা কেমন অবসের মতো হয়ে গেছে তাই তাকিয়ে থাকা ছাড়া কিছু করতে পারিনি।
তাইশা আবার বললো,
– আপনি পুলিশের ইনফর্মার হিসেবে কাজ করেন তাই না? নাকি অন্য কোন পদবি?
আমি বললাম,
– আমার সঙ্গে এরকম করার ফলাফল কিন্তু ভালো হবে না তাইশা।
– তো কি করবো? আপনি আমাকে ধরার জন্য ফাঁদ পেতে বসে থাকবেন। আর আমি নিজেকে বাঁচানোর চেষ্টা না করে সবকিছু জেনেও ফাঁদে পা দেবো। এটা ভাবলেন কীভাবে?
– অন্যায় করে কেউ বাঁচতে পারে না।
– মরে গেলে তখন দেখা যাবে। আমি জীবিত অবস্থায় নিজেকে বিড়াল বানাতে চাই না। মরার পরে আমার সম্পর্কে মানুষ কে কি বলে এসবে আমার কোনো চিন্তা নেই।
বললাম,
– নিয়াজ হাসানকে কেন মেরেছেন?
– পা!পের শা!স্তি দিতে।
– আর আপনার স্বামীকে? তাকে কেন মারলেন?
– তাকে আমি মারিনি, সে সত্যি সত্যি অসুস্থ হয়ে মারা গেছে।
আমি আর কিছু বলতে পারছিলাম না। শরীরের মধ্যে তখন যন্ত্রণার কাতরানি। হঠাৎ করে দেখি তাইশার কাছে আরেকটা মানুষ এসেছে। সেই লোকটা এসেই বললো,
– আমি ভালো করে জানি লোকটা একা এখানে আসেনি। নিশ্চয়ই তাকে সাপোর্ট করার জন্য বিল্ডিংয়ের আশেপাশেই পুলিশের টিম আছে। তাই তারা আসার আগেই আমাদের এখান থেকে চলে যেতে হবে।
তাইশা বললো,
– কিন্তু যদি না মরে তখন?
– মরবে না কেন? আধ ঘন্টার মধ্যে ফিনিশ হয়ে যাবে। কিন্তু আমরা শুধু শুধু রিস্ক নিয়ে কেন থাকবো এখানে?
– আচ্ছা চলো তাহলে।
জানালার সামনে থেকে তারা চলে গেলেন। মৃদু আলো ছাড়া আর কিছু নেই সেখানে। কতক্ষণ জ্ঞান ছিল জানি না। তবে দরজায় জোরে ধাক্কা আর আমার নাম ধরে ডাকার আওয়াজ কানে শুনতে পেয়েছিলাম।
★★★
ডাক্তার সাহেব কেবিনে প্রবেশ করলো। সবার দিকে তাকিয়ে সকলের উদ্দেশ্যে বললেন,
– অনেকটা সময় আপনাদের দেওয়া হয়েছে। এখন প্লিজ সবাই বাইরে যান। এরকম কন্ডিশনে এতো কথা বললে শ্বাসকষ্ট বাড়বে। অবস্থা আরো খারাপ হতে পারে।
ওসি সাহেব ও এসআই ফরিদ কেবিন থেকে বের হয়ে বাইরে এলো৷ ওসি সাহেব বললেন,
– তুমি আরেকটু দেরি করে গেলে হয়তো রুদ্রকে বাঁচানো কষ্ট হয়ে যেত।
– স্যার ঝামেলা হচ্ছিল ছাদের দরজার খুলতে গিয়ে। আমরা বাড়ির ভেতর প্রবেশ করে যখন সবাই মিলে উপরে যাচ্ছিলাম তখন গিয়ে দেখি ছাদের দরজা ছাদ থেকে বন্ধ করা।
– তারমানে বাড়ির মালিক বা তার মেয়ে ছাদে উঠে দরজা বন্ধ করে তারপর রুদ্রর উপর আক্রমণ করেছে।
– এখানে একটা কথা আছে স্যার।
– কি কথা?
– আমরা ছাদের উপর কাউকে দেখতে পাইনি। রুদ্রর কথা অনুযায়ী ছাদে দুজন ব্যক্তি ছিল তাদের মধ্যে একজন মহিলা ও একজন পুরুষ। আমরা যেহেতু দরজা ভেঙে প্রবেশ করেছি তাহলে ছাদের সেই দুজন কোথায়?
– তোমরা কি ভালো করে খোঁজ করেছ?
– জ্বি স্যার করেছি। কারণ দরজা যখন বন্ধ ছিল তখনই সন্দেহ হচ্ছিল। তাই ছাঁদে গিয়ে আমরা চারিদিকে খুঁজে দেখেছি।
– উপরে পানির যে ট্যাংক থাকে সেখানে দেখেছ?
– ভিতরে তো দেখিনি স্যার, তাছাড়া বৃষ্টিতে ছাদ খানিকটা পিচ্ছিল ছিল। আমাদের একজন আহত হয়েছে পড়ে গিয়ে।
– আচ্ছা শোনো, আপাতত রুদ্রকে পাঠিয়ে এটুকু তো নিশ্চিত হওয়া গেছে যে নিয়াজ হাসানকে হত্যা করা হয়েছে। মামলা আরও ভালো করে তৈরি করো, আর নিয়াজের বড়বোনকে বলবে নিয়াজ সম্পর্কে ও বাড়িতে থাকা অবস্থায় আর কি কি হয়েছে সেগুলো যেন জানায়।
– ঠিক আছে স্যার।
– আমি ওই বাড়িতে যাচ্ছি। বাড়ির মালিক ও তার মেয়ের সঙ্গে কথা বলতে হবে। পালিয়ে গেছে নাকি তা বা কে জানে? রাতে ছাদ থেকে জ্বলজ্যান্ত মানুষ দুটো কোথায় গেল সেটাই বুঝতে পারছি না।
– স্যার আমরা যদি আগে থেকে জানতাম এসব বাড়ির মালিক ও তার মেয়ে মিলে করতেছে তাহলে তো রাতেই বাড়ি আটক করতাম।
– সেটাই তো সমস্যা, রুদ্রর কাছে না শুনে তো কিছু করা যেত না। আচ্ছা সাজু কোথায়?
– সাজু ভাই তো উত্তরায়, ওখানে একটা বাসায় এক ভাড়াটিয়ার শালি খুন হয়েছে। সেখানেই তিনি আছেন, সম্ভবত আসামি ধরা পড়েছে।
– সাজুর সঙ্গে যোগাযোগ করার ব্যবস্থা করো৷ ডিবি অফিসে কথা বলে দেখো সাজুকে পাওয়া যায় নাকি।
– মনে হয় পাওয়া যাবে না স্যার।
– কেন?
– শুনেছি কি একটা বিষয় নিয়ে সাজু ভাইয়ের সঙ্গে উপরমহলের কার সঙ্গে ঝগড়া হয়েছে। সাজু ভাই এই মামলা শেষ হলে চাকরি ছেড়ে দিবেন শুনলাম।
– কি বলো এসব? আচ্ছা তবুও চেষ্টা করো, যদি পাওয়া যায়।
– ওকে স্যার।
↓
↓
বাড়ির দারোয়ান চুপচাপ বসে আছে গেইটের সামনে। রাস্তায় একটা রিকশা এসে থামলো। রিকশা থেকে নামলো তামান্না, ব্যাগ থেকে ৫০ টাকা বের করে রিকশা ভাড়া দিয়ে গেইটের সামনে এসে দাঁড়ালো৷
দারোয়ান গেইট খুলতে খুলতে তামান্নার দিকে তাকিয়ে বললো।
– আপা গতকাল রাতে বাড়িতে পুলিশ এসেছিল।
তামান্না অবাক হয়ে গেল, এ বাড়িতে পুলিশ কেন আসবে বুঝতে পারলো না৷ তাছাড়া দারোয়ান এমনভাবে পুলিশ আসার কথা বর্ননা করছে যেন পুলিশ কোনো শুভ কাজে এসেছে।
তামান্না বললো,
– পুলিশ এসেছে কেন? কি হয়েছে?
– ছাদের রুমে সপ্তাহ খানিক আগে যে ছেলেটা এসেছিল তাকে ধরতে আসছিল। শালায় মনে হয় সন্ত্রাসী হবে, পুলিশ তো তাকে এমন মাইর দিছে যে একদম অজ্ঞান হয়ে গেছে।
– কীভাবে বুঝলেন? আপনি কি গেইট পাহারা বাদ দিয়ে ছাদে আসামি ধরা দেখতে গিয়েছেন?
– না না, দেখলাম পুলিশ ওই শালারপুতকে ধরে ধরে নিয়ে যাচ্ছিল। তখনই বুঝেছিলাম।
– ঠিক আছে।
তামান্না বেশ চিন্তিত হয়ে বাড়ির ভেতর প্রবেশ করলো। নিজের ফ্ল্যাটে গিয়ে কলিং বেল টিপতেই দরজা খুলে দিল তামান্নার মামা।
তামান্না বললো,
– রাতে নাকি পুলিশ এসেছিল মামা?
– হ্যাঁ আমিও শুনলাম, কিন্তু রাতে কিছু জানতাম না আমি। সকাল বেলা উঠে হাঁটতে বের হবার সময় দারোয়ানের কাছে শুনলাম।
– আমার তো সন্দেহ হচ্ছে মামা।
– কেন কি হয়েছে?
– পুলিশ আবার আমার বিষয় কিছু জানতে পেরেছে নাকি?
– তা কি করে সম্ভব?
– মামা তুমি তো জানো আফরিন নামের ওই মেয়ে হ!ত্যার মামলায় সাজু নামক একজন তদন্তের দায়িত্বে আছে। সেই লোক মাত্র তিনদিনের মধ্যে শাহানা আর আমার বিষয় বের করে ফেলেছে।
তামান্নার মোবাইল বেজে ওঠে, তামান্না মোবাইলে তাকিয়ে রইল কিছুক্ষণ। তারপর চোখ বড় বড় করে মামার দিকে তাকিয়ে রইল।
মামা বললো,
– কে কল করেছে?
– অপরিচিত নাম্বার।
– রিসিভ কর।
– কিন্তু আমার এই নাম্বারে তো কেউ জানে না।
– তাহলে কল কেটে দিয়ে মোবাইল বন্ধ কর।
[ ” বিশ্বাস অবিশ্বাস ” গল্পের সঙ্গে এই গল্পের সম্পুর্ন মিল আছে। তাই যারা নতুন পাঠক পাঠিকা তারা পেইজে পিন পোস্টে চেক করে গল্পটা আগে পড়বেন। ]
★★
দুজন কনস্টেবল সঙ্গে নিয়ে ওসি সাহেব তাইশার বাড়ির সামনে এসে উপস্থিত হলেন। দারোয়ান আলমগীর গেইট ধরে দাঁড়িয়ে আছে।
ওসি সাহেব বললেন,
– বাড়ির মালিক বাসায় আছে?
আলমগীর বললো,
– না স্যার।
– কোথায় গেছে?
– বড় সাহেব তো রাতে হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে গেছে তাই তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেছে।
– কোন হাসপাতালে?
– তা তো জানি না, গতকাল রাতে আফামনি তাকে নিয়ে হাসপাতালে গেছে।
– গতকাল রাতে মানে? রাত কয়টার দিকে?
– তখন তো ঘড়ি দেখিনি, তবে বৃষ্টি নামার আগে। রাতে যখন বৃষ্টি নামছে তার একটু আগে।
– তুমি ঠিক বলছো তো? রাতে বৃষ্টি কমার পরে তাইশা বা তার বাবা কেউ বাসায় ছিল না?
– সত্যি বলছি স্যার, বড়সাহেবকে নিয়ে রাতে হাসপাতালে যাবার পরে আফামনির এখনো বাসায় আসে নাই।
ওসি সাহেব এবার যেন সমুদ্রের মধ্যে পড়ে গেল। রুদ্রর কাছ থেকে আসার সময় পথে বসে বসে তাইশা ও তার বাবাকে জিজ্ঞেস করার জন্য যে প্রশ্ন সাজিয়েছেন সবকিছু এলোমেলো হয়ে গেল। ওসি সাহেব বিড়বিড় করে বললেন,
” তাইশা যদি তার বাবাকে নিয়ে রাত বাড়িতেই না থাকে তাহলে রুদ্রর সঙ্গে জানালার সামনে দাঁড়িয়ে কে কথা বলেছে? যে দুজন মিলে রাতের আঁধারে ছাদে ছিল তারা কোথায়? ”
– ওইতো মনে হয় আফামনির গাড়ি আসছে।
সাদা রঙের একটা গাড়ি রাস্তার সামনে এসে দাঁড়ালো। আলমগীর দারোয়ান গেইট সরিয়ে দিল। গাড়িটা ভিতরে প্রবেশ করে। গাড়ি থেকে একটা মেয়ে নামলো। ওসি সাহেব বুঝলেন যে এটাই তাইশা। ওসি সাহেব সামনে এগিয়ে গেল।
তাইশার দিকে তাকিয়ে বললেন,
– আপনার বাবা এখন কেমন আছে?
– জ্বি অনেকটা ভালো, কিন্তু আপনারা হঠাৎ? কোনো সমস্যা হয়েছে কি?
– জ্বি, কিছুটা সমস্যা তো হয়েছে। নাহলে থানা থেকে তো এমনি এমনি আসিনি।
– একটু তাড়াতাড়ি বলবেন প্লিজ। আমি গতকাল রাত থেকে এখনো ঘুমাইনি।
– গতকাল রাতে ছাঁদের নতুন ভাড়াটিয়া রুদ্রর সঙ্গে আপনার শেষ কখন কথা হয়েছে?
তানিশা এবার কি যেন ভাবলো। তারপর বললো,
– ওহ্ আচ্ছা আপনারা সেই রুদ্র সাহেবের বিষয় তদন্ত করতে এসেছেন? আমি রাতে হাসপাতালে বসে শুনেছি বাসায় পুলিশ এসে তাকে ধরে নিয়ে গেছে।
– কখন কথা হয়েছে?
– সন্ধ্যার একটু পরে, আমি তখন ছাঁদে গিয়ে তার সঙ্গে কথা হলো। তারপর কিছুক্ষণ কথা বলার পরে আমি নিচে চলে আসি নাস্তা করার জন্য।
– তারপর উপরে যাননি?
– নাহ
– কেন?
– কারণ নিচে নেমে দেখি বাবা কেমন জানি করছে। বাবার হার্টে সমস্যা আছে, তাই বেশিক্ষণ দেরি না করে বাবাকে নিয়ে হাসপাতালে যাই। আর হাসপাতাল থেকে এইমাত্র এসেছি।
– আপনি সত্যি বলছেন?
– আমি মিথ্যা কেন বলবো? আর কেন মনে হচ্ছে আমি মিথ্যা বলি। দেখুন ওই রুদ্র সাহেবকে দেখে ভদ্রলোক মনে হচ্ছিল তাই বাবা ভাড়া দিয়েছে। কিন্তু সে সন্ত্রাসী নাকি অন্য কিছু এটা তো আমরা জানতাম না।
– রুদ্র সন্ত্রাসী নয় পুলিশের লোক। আর গতকাল রাতে বৃষ্টি কমার পরে তার রুমের জানালা দিয়ে কেউ একজন রুদ্রর শরীরে বি!ষ দিয়েছে। যিনি কাজটা করেছেন তিনি নিখুঁতভাবে করেছে। আর রুদ্রর সেই লোককে দেখেছে।
– তাহলে তো হয়েই গেল, রুদ্র সাহেব যাকে দেখেছেন তাকে গিয়ে ধরুন।
– রুদ্র আপনাকে দেখেছে। রুদ্র বলেছে যে তার শরীর যখন আস্তে আস্তে খারাপ হচ্ছিল তখন সে জানালার সামনে আপনাকে দেখেছে।
– অসম্ভব, আমি তো হাসপাতালে ছিলাম তাহলে আমাকে কীভাবে দেখবেন তিনি?
– আপনি উত্তেজিত হবেন না। আপনি কোথায় ছিলেন আর তখন ছাদে কে ছিল সবকিছুই খুঁজে বের করা হবে। একটা প্রশ্নের উত্তর দিন তো।
– কি প্রশ্ন?
– আপনি রুদ্রকে বলেছিলেন নিয়াজ হাসান এক্সি!ডেন্ট করে মারা গেছে। কিন্তু আমার মনে হয় নিয়াজ হাসান এক্সি!ডেন্টে মরেনি তাকেও ছাদের ওই রুমে খু!ন করা হয়েছে। সম্ভবত আপনারা কোনকিছু এড়াতে গিয়ে সিস্টেম করে মৃত্যুটা এক্সি!ডেন্ট বলে চালাচ্ছেন।
তাইশা কিছু বলতে যাচ্ছিল কিন্তু তখনই তার হাতের মোবাইলটা বেজে ওঠে। তাইশা কলটা কেটে দেয়। কিন্তু আবারও কল আসে। ওসি সাহেব বললেন,
– লাউডস্পিকার চালু করে রিসিভ করেন।
অনিচ্ছা সত্ত্বেও তাইশা রিসিভ করে। একটা পুরুষ কণ্ঠ অপরপ্রান্ত থেকে বলে,
” রুদ্র তো মারা যায়নি তাইশা, হাসপাতালে সে ওসি সাহেবের কাছে জবানবন্দি দিয়েছে। ওসি সাহেব তোমার বাসায় যেতে পারে। গতকাল রাতে রুদ্রর সঙ্গে ঘটে যাওয়া কিছুই তুমি স্বীকার করবে না। বলবে তুমি হাসপাতালে ছিলে। “
কলটা কেটে গেল, তাইশা বিমর্ষ হয়ে তাকিয়ে রইল। ওসি সাহেব চোখের ইশারায় কিছু বললেন।
তাইশা বললো,
– বিশ্বাস করুন একে আমি চিনি না, অপরিচিত নাম্বার তাই প্রথমে রিসিভ করতে চাইনি। আমি কিছু করিনি আমার কথা বিশ্বাস করুন।
চলবে…
.
লেখা:-
মোঃ সাইফুল ইসলাম (সজীব)