- আমার সংসার। (ধারাবাহিক)
- পরিবার নিয়ে কষ্টের কথা।
- Family depression status bangla.
- depressed status about life bangla.
- deep pain status bangla।
১.আমার সংসার
(ধারাবাহিক)
মরিয়ম বেগম বাড়ির সব সদস্যদের খাইয়ে দিয়ে লতাকে উদ্দেশ্য করে বললেন,
— মেজো বউমা!
— জ্বী মা।
— সবার খাওয়া শেষ, তুমি বড়ো বউমাকে সাথে করে খেয়ে নিও আর সব কিছু গুছিয়ে শুয়ে পইড়ো তাড়াতাড়ি। সকাল সকাল উঠতে হবে রাত জেগোনা।
— আচ্ছা মা।
কথা গুলো বলেই মরিয়ম বেগম রান্না রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন।
লতা এ বাড়ির মেজো বউ আর অথৈ বাড়ির বড়ো বউ। অথৈ বিয়ে হয়ে মাত্র কিছু দিন হলো এ সংসারে এসেছে। লতা এ বাড়িতে বিয়ে হয়ে আগে এসেছে, তাই দায়িত্বটা মেজো বউকেই দেয়া হলো। সুমন বাড়ির বড়ো ছেলে, সে দেশের বাইরে থাকার কারনে মেজো ছেলে সুজনকেই আগে বিয়ে করিয়েছিলেন মরিশম বেগম। কারন বাড়িতে একটা লোকের প্রয়োজন ছিলো। লতার কোল জুড়ে আট বছরের একটা ছেলেও আছে। ছোটো ছেলে সৈকত মাত্র কলেজে উঠেছে, লেখাপড়ার সুবাদে বেশিরভাগ সময় শহরেই থাকতে হয় তাকে। আর বাকি রইলো দুই বোন। বড়ো বোনের বিয়ে হলেও স্বামী সন্তান নিয়ে বছরের বেশির ভাগ সময় এ বাড়িতেই থাকে। ছোটো মেয়ে এবার এস এস সি পরীক্ষা দিবে।
বড়ো ছেলে আর মেজো ছেলে সংসারের হাল ধরায় রহমান সাহেব সমস্ত কাজ কর্ম থেকে অব্যাহত নিয়েছে। টুকটাক গ্রামের সালিশ আর ময়মুরুব্বিদের নিয়েই তার সময় কাটে।
সংসারের সব কাজ শেষ করে লতা আর অথৈ রাতের খাবার খেতে বসেছে। দু’জন দু প্লেট ভাত নিয়ে তরকারির বাটি গুলোর ঢাকনা খুললো লতা। তরকারি বলতে একটা বাটিতে সামান্য কিছু লাল শাক ভাজি, আরেকটা বাটিতে ৩/৪ পিচ আলু আর এক পিচ মাছের পেটির অর্ধেক রাখা আছে আর একটা পাতিলে কিছুটা ডাল।লতা কিছুটা লাল শাক আর দু পিচ আলু সহ মাছের টুকরোটা অথৈ এর প্লেটে তুলে দিতে দিতে বললো,
— আপা, ওই যে ওই পাতিলে ডাল আছে তুলে নিও।
— আচ্ছা আপা। কিন্তু মাছের টুকরাটা আপনি আমার পাতে কেনো দিলেন? আপনি বড়ো আপনাকে রেখে আমি খাই কি করে।
— বড়ো আপা, তুমি বাড়িতে নতুন বউ তাছাড়া আমি এ বাড়িতে আগে আসলেও আমি এ বাড়ির মেজো বউ। তুমি বড়ো তোমাকে রেখে আমি খাই কি করে বলো? আর তাছাড়া আমার ছেলেটা তো খেয়েছে ও খেলেই আমার খাওয়া হয়ে যায়। তোমার তো বাচ্চা কাচ্চাও নাই। আবার তুমি যদি না খাও তাহলে তো পুরো ভাগ টাই তো হারিয়ে গেলো। আপা আর কথা বলোনাতো খেয়ে নাও। অনেক রাত হয়ে গেছে ঘুমাতে হবে কাল সকাল সকাল আবার উঠতে হবে।
— আপা আমি বাড়ির বড়ো বউ হলেও আপনি এ বাড়িতে আগে এসেছেন। আমার থেকে আপনার অধিকারটা বেশি এবং বয়সেও আপনি বড়ো তাই আমি আপনাকে রেখে কি করে খাই!
অর্ধেক টুকরা মাছ নিয়ে লতা এবং অথৈ একে অপরের সাথে বেশ কিছুক্ষণ ঠেলাঠেলির এক পর্যায়ে এসে সীদ্ধান্ত হলো ওই অর্ধেক টুকরা মাছের মধ্যে অর্ধেক করে ভেঙে নিয়ে দুজনে খাবে। লতা মাছের টুকরোটা ভাঙতে যাবে এমন সময় সুমন রান্নাঘরের দরজা থেকে দাঁড়িয়ে বললো,
— থামো মেজো বউ, মাছ ভাঙবেনা।
সুমনের আচমকা কথাতে দুজনেই চমকে উঠে সুমনের দিকে তাকালো। লতা আর অথৈও একে অপরের দিকে চাওয়াচাওয়ি করে লতা বললো,
— কেনো ভাইয়া।
সুমন এগিয়ে এসে বললো,
— তরকারির বাটিটা আমার হাতে দাও।
— তরকারির বাটি দিয়ে কি করবেন আপনি।
— আমি দিতে বলেছি দাও, এতো প্রশ্ন কেনো করছো?
সুমন অনেক রাগি এবং বদমেজাজি তাই বাড়ির সবাই তাকে অনেক ভয় পায়। লতাও এর বাইরে না। লতা ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে কিছু বলতে যাবে এমন সময় সুমন লতাকে থামিয়ে দিয়ে নিজেই তরকারির বাটি দুটো হাতে তুলে নিলো। আর সাথে ওদের প্লেটে থাকা তরকারি টুকুও তুলে নিলো দুই বাটিতে। এবার বাটি দুটো হাতে নিয়ে রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে গেলো সুমন। লতা বুঝতে পেরেছিলো এটা নিয়ে সুমন আজ একটা ঝামেলা করবে তাই অথৈকে ইশারা করে সুমনকে আটকাতে বললো। অথৈ পিছন থেকে বললো,
— তুমি তরকারির বাটি নিয়ে কোথায় যাচ্ছো?
— কোথায় যাচ্ছি সেটা কি তোমার কাছে এখন কৈফিয়ত দিতে হবে?
— না আমি সেটা বলিনি। এতো রাতে কোনো ঝামেল করোনা। সবার খাওয়া তো শেষ আমরা দুজনেই আছি ওগুলো দিয়ে আমাদের দুজনের খাওয়া হয়ে যাবে। তরকারি গুলো আমাকে দাও।
কথা গুলো বলে সুমনের দিকে এগিয়ে যেতেই সুমন জোর পায়ে ওখান থেকে রহমান সাহেবের রুমের দিকে এগিয়ে গেলো।
লতা এবং অথৈ দুজনেরই মুখ শুখিয়ে গেছে। হয়তোবা তাদের শাশুড়ী ধারনা করবে দুই বউ মিলে সুমনের কাছে নালিশ করেছে তাদের খাওয়া নিয়ে। ওরা দুজনও এগিয়ে গেলো তাদের শশুরের রুমের দিকে।
সুমন রহমান সাহেব এর রুমের সামনে দাঁড়িয়ে বললো,
— আব্বা রুমে আছেন?
— হ্যাঁ আছি বাবা, আয় ভিতরে আয়।
সুমন রুমে ঢুকে খাটের পাশে রাখা টেবিলের উপর তরকারির বাটি দুটো রাখতে রাখতে বললো,
— ওহ, মা-ও আছো দেখছি!
— কিরে সুমন তুই হঠাৎ তরকারির বাটি নিয়ে এখানে কেনো?
— মা, এ বাড়িতে আমরা খাওয়া দাওয়া শেষ করার পর কয়জন লোক খেতে বাকি ছিলো?
— লতা আর অথৈ বাকি ছিলো শুধু।
— লতা আর অথৈ এ বাড়ির কে মা?
— এ আবার কেমন প্রশ্ন?
তরকারির বাটি দুটো রহমান সাহেবের দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো,
— আব্বা, এখানে যা তরকারি আছে তা দিয়ে কি দুটো মানুষের ভাত খাওয়া হবে? আপনি আপনার দিক থেকে বিবেচনা করে বলবেন!
— হওয়ার তো কথা না, কি হয়েছে খুলে বল তো!
মরিয়ম বেগম এতক্ষণ চুপ থাকলেও এবার মুখ খুললেন,
— আমি যখন রান্নাঘর থেকে আসলাম তখন তো তোর বউ বললোনা যে ওই তরকারিতে তাদের দুজনের খাওয়া হবেনা! তাহলে তোকে ডেকে কেনো বিচার দিলো?
— মা, না জেনে শুনে কারো সম্পর্কে কিছু বলা ঠিক না। আমি কি তোমাকে একবারও বলেছি যে আমার বউ আমাকে বিচার দিয়েছে!
— যদি তাই না হয় তাহলে হাঁড়ির খবর তুই কি করে জানলি?
সুমন তার মায়ের সাথে আর তর্কে জড়াতে চাইলোনা তাই রহমান সাহেবের দিকে মননিবেশ করলো।
— কি হলো আব্বা কিছু বলেন!
— কি হয়েছে আমাকে একটু খুলে বলবি?
— আব্বা, আমার পানি খাওয়ার দরকার ছিলো তাই আমি পানি খাওয়ার জন্য রান্নাঘরের দিকে যাচ্ছিলাম। রান্না ঘরের দরজায় দাঁড়িয়ে দেখলাম এই অর্ধেক পিচ মাছের টুকটা নিয়ে লতা আর অথৈ ঠেলাঠেলি করছে যে কে কাকে রেখে খাবে। শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত নিলো এই টুকু মাছ দু’জন ভাগ করে খাবে। মাছ যতটুকুই হোক না কেনো এই শাক ভাজি আর এই তরকারি টুকু দিয়ে কি একটা পরিপূর্ণ মানুষের ভাত খাওয়া হবে আব্বা? সেখানে তারা দুজন তাহলে কিভাবে দুজন মানুষের ভাত খাওয়া হবে আব্বা! আমাকে একটু বোঝান তো।
— মরিয়ম তুমি এমনটা কেনো করলে? সত্যিই তো যেটুকু তরকারি তুমি রেখেছো তাতে তো একজনেরই ঠিকঠাক মতো খাওয়া হবেনা সেখানে দুজন মানুষের কিভাবে খাওয়া হবে?
— ডাল রান্না তো আছে। তারা তো ডাল দিয়ে খেয়ে নিতে পারতো। এগুলো পুরুষ মানুষের কানে দেয়ার কি আছে। আর মেয়ে মানুষের এতো বাচবিচার করা ঠিক না। যা আছে তাই দিয়ে খেয়ে নিতে হয়।
সুমন বললো,
— আমি যে এতক্ষণ কথা গুলো বললাম তার মধ্যে কি কোথাও বলা ছিলো যে লতা বা অথৈ আমাকে এসে জানিয়েছেন?
— তোকে কি বললেই তুই এখন স্বীকার করবি?
— মা, তুমি খুব ভালোই জানো আমি কোন ধরনের ছেলে। আর কি বললে তুমি! মেয়ে মানুষের এতো বাচবিচার করতে নেই। আমি যতদূর জানি তোমার দুই মেয়ের এক মেয়েও কিন্তু ডাল খায়না। এ বাড়িতে কি শুধু মাত্র ওরা দুজনই মেয়ে আছে? তুমিও তো আছো! তোমার দুই মেয়েও তো আছে! যদি এমন নিয়মই হয় যে বাড়ির পুরুষরা আগে খেয়ে যাবে তারপর মেয়েরা খাবে তাহলে তুমি এবং তোমার মেয়েদের খাওয়া হলো আগে কি করে? তুমি কি পারতেনা তোমরা পাঁচটা মানুষ একসাথে বসে খেতে? কম বেশি যেটাই থাকুক মিলেমিশে ভাগ করে খেতে পারতে। কিন্তু সেটা করে তোমরা সবাই খেয়ে তাদের জন্য তলানি গুলো রেখে দিয়েছো কারন তারা দুজন এ বাড়ির বউ, মেয়ে না। তাই তো?
— তুই কি তোর বউ এর হয়ে উকালতি করতে এসেছিস এখানে?
— মা এবার তুমি একটু বেশিই বলে ফেলছো। আমি এখানে কারো উকালতি করতে আসিনি। আমি শুধু জানাতে এসেছি এই কাজটা তোমাদের সাথে হলে কেমন লাগতো?
লতা এবং অথৈ দুজনেই দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। অথৈ বুঝতে পারছে এবিষয়টা যদি বাড়তে থাকে তাহলে এর ইফেক্ট তাদের দুই বউ এর উপর এসেই পড়বে। কিন্তু সাহস করে সুমনের সামনে কিছু বলতেও পারছেনা। তবুও সাহস করে দরজার ভিতরে এক পা রাখলো অথৈ।
চলবে….
আমার সংসার পর্ব ১
কলমেঃ আয়েশা সিদ্দিকা (লাকী)
(সবাই সাড়া দিবেন প্লিজ শেয়ার)
সম্পূর্ণ গল্পের লিংক একসাথ
https://kobitor.com/category/uponnaslink/songsar/
২.পরিবার নিয়ে কষ্টের কথা
” পা নামিয়ে বসো!”
ভারিক্কি গলার আওয়াজের আদেশ শুনে ছেলের সাথে সাথে আমিও নড়েচড়ে বসলাম।
আমি বসে আছি বাবার বাড়ি! না না ভাইয়ের বাড়ির ড্রয়িং রুমের দামী সোফায়। বাবা তো সেই কবেই মরে মাটির সাথে মিশে গেছেন। মা থেকেও না থাকার মতোই। কানে শুনে না, চোখে দেখে না, কোনো কথা মনে রাখতে পারে না।
আমি একা নই, আমার সাথে আছে আমার এগারো বছরের ছেলে আরিফ আর মেয়ে আয়েশা। মেয়েটা এবছর এসএসসি পাশ করেছে। ছেলেটা বাবার মতো একটু বোকাসোকা। চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে। পড়লে কি হবে। অনেক কিছু বুঝে না। সেই বোকাসোকা ছেলেই সোফায় পা তুলে বসেছে।
কী আর বলব। ছেলেটা বসার আদব জানে না। জানবে কোথা থেকে নিজেদের বাড়িতে তো আর সোফা নেই।
সেই প্লাস্টিকের হাতলওয়ালা দুটো চেয়ার।
ইদানিং অসুস্থ হয়ে গেছি। আগের মতো শরীরে জোর পাই না। সারাক্ষণ বুকে ব্যাথা করে। কী হয়েছে জানি না। কখনো ডাক্তারের কাছে যাইনি। বুকে ব্যাথা করলেই মায়ের কথা খুব মনে পড়ে। এভাবে রোজ মনে পড়ে তবুও আমি আসি না, আজও আসতাম না। ছেলে ভীষণ বায়না ধরেছে
” মা নানার বাড়ি চলো না! আমরা একদিন থেকেই চলে আসব। কতদিন নানিকে দেখতে যাও না। “
বুকের ভেতর তখন হঠাৎ করে মোচড় দিয়ে উঠল। বাবার মুত্যুর আগেই এমনি করে আমি বাবাকে দেখতে আসিনি। পরে আর জীবিত অবস্থায় বাবার মুখটাও দেখতে পাইনি।
মাও যদি বাবার মতো একদিন…., বা আমি….।
আমি নাজমা। বাবার আদরের নাজু। কত স্বপ্ন ছিল আমাকে নিয়ে বাবার। পড়াশোনা করিয়ে ভালো চাকরি করাবেন, ভালো পরিবার দেখে বিয়ে দিবেন। কিন্তু বাবার বড় মেয়ে হওয়ায় সে স্বপ্ন আর পুরন করতে পারেননি।
কারণ আমরা দুই বোন ছিলাম পিঠাপিঠি। ভাই আমাদের চার বছরের ছোট। মেয়ে মানুষ! খুব অল্প বয়সে বড় হয়ে গিয়েছিলাম। গ্রামের মানুষ নানান কথা বলত। যোগ্য, অযোগ্য সবাই বিয়ের কথা বলত। আসলে বিয়ে কেউই করতে চায়নি। সবাই শরীর দেখে নোংরা ইঙ্গিত করত।
ইজ্জত রক্ষা করার জন্য বাবা অস্থির হয়ে পড়লেন আমাকে বিয়ে দেয়ার জন্য।
স্বপ্ন বিলাসী বাবার খুব বড় স্বপ্ন আমাদেরকে নিয়ে। ভালো ঘর, ভালো বর দেখে বিয়ে দিবেন। কিন্তু কিভাবে আমাদের যে একটা ভালো ঘরই নেই। দোচালা একটা টিনের ঘর বলতে যা আছে। সেটারও সমস্ত টিনের চালা ফুটো হয়ে আছে। বর্ষাকালে সব বৃষ্টির পানি বাইরে পড়ার আগে ঘরে পড়ত। সারা বছর বৃষ্টি এলে ঘরের মেঝেতে পাতিল বিছিয়ে দিয়ে আমরা বর্ষা যাপন করতাম।
ঘর একটা করার সামর্থ বাবার আছে। কিন্তু তিনি টিনের ঘর আর করবেন না। একটা পাকা ঘরের খুব শখ। তাই অনেক বছর ধরে টাকা জমিয়েছেন। মেয়ে বিয়ে দেয়ার আগে একটা পাকা দালান বানাবেন। তারপর ধুমধাম করে ভালো ছেলের কাছে মেয়ের বিয়ে দেবেন।
যেই ভাবা সেই কাজ।
বাবা ইট, সিমেন্ট, বালি এনে একদিন সত্যি সত্যি বাড়ি বানানো শুরু করে দিলেন। আমার দিনমজুর বাবার এতবড় কাজে হাত দেয়া দেখে তো সবাই অবাক।
অথচ শরীরের রক্ত পানি করা টাকা তিনি জমিয়েছেন। আমদেরকে ভালো খাবার দেননি, ভালো পোষাক দেননি। তিনি টাকা জমিয়েছেন আমাদেরকে একটা সুন্দর ঘর বানিয়ে দেয়ার জন্য।
টাকার স্বল্পতার কারণে মেস্ত্রীদের চেয়ে বেশি কাজ করতাম আমরা। ইটে পানি দেয়া, ইট ভেঙে কণা করা, মেস্ত্রীদের সাথে যুগালি হয়ে কাজে সহযোগীতা করা। মা আর আমরা দুবোনই করেছি। কারণ ভাই তখনও ছোট। বাবা তো নিজের কাজে ব্যস্ত থাকতেন শহরে।
ইট ভাঙতে গিয়ে হাতে ফোসকা পড়েছে, ইটের কণা ধুতে গিয়ে কোমরে গা হয়ে গিয়েছে। তারপরও কত আনন্দ আমাদের পাকা ঘর হবে।
বাবার স্বপ্ন মেয়েদেরকে তিনি ভালো ঘর দেখে বিয়ে দেবেন। টাকার স্বল্পতার জন্য ঘরটা একটু করার পর আর করতে পারছিলেন না বাবা।
আমাদের ভিটে মাটি ছাড়া খুব একটা জমি ছিল না। মা নানার বাড়ি থেকে পাওয়া চার ডিসেম জমি ছাড়া। মা ভেবেছেন ভিটেটা ভাইকে দিলে ঐ চার ডিসেম জমি আমাদের দু’বোনকে দেবেন।
অথচ ঘরের কাজ অসমাপ্ত দেখে আমি, বাবা অার বোন মিলে মাকে দিয়ে জমিটা বিক্রি করিয়ে কোনো মতে বাড়ির কাজটা শেষ করিয়েছি।
রাতদিন কাজ করে মোটামুটি একটা পর্যায়ে আনার পর। একরাতও পাকা ঘরে ঘুমুতে পারিনি।
আমার বিয়ের প্রস্তাব এলো। ছেলে ভালো। পড়াশোনাও আছে মেট্রিক পর্যন্ত। গৃহস্থ পরিবার। চাষবাসেরর জন্য নিজেদের জমি আছে। ঘরে ভাত আছে। ছেলে এখন কিছু করে না। তবে বিদেশ যাবে।
এত ভালো প্রস্তাব পেয়ে বাবা আর একমুহূর্তও চিন্তা করলেন না।
আমাকে বিয়ে দিয়ে দিলেন। বর পক্ষেরও আমাকে ভীষণ পছন্দ হয়েছে । আমি দেখতে,শুনতে মন্দ নয়। মেট্রিক পাশ করেছি সেকেন্ড ডিভিশনে। বাবার নতুন পাকা ঘর আছে।
বেকার ছেলের জন্য আর কি চাই!
বিয়ের কয়েক বছর বেশ ভালোই কেটে ছিল। তিনি বিদেশ না গেলেও, বেকার থাকলেও ভাত কাপড়ের অভাব ছিল না। নিত্য অভাবে বড় হওয়া মেয়েটা পেট ভরে ভাত খেতে পেয়েই বেশ খুশি ছিলাম।
এদিকে সবার অবস্থার পরিবর্তন হলো বাবা বোনকে পড়িয়ে বেশ ভালো ঘর, বর দেখে বিয়ে দিলেন। ভাইও পড়াশোনার পাশাপাশি ব্যাবসা বাণিজ্য করে বেশ টাকা পয়সা বানিয়েছে। বাবার সেই জমানো টাকায় করা পাকা ঘর, যেটা মায়ের জমি বিক্রি করেও পুরোপুরি শেষ করতে পারেনি। ভাই সেই ঘরটাকে নতুন করে ঘষামাজা করে, রঙ করে টাইলস বসিয়ে একদম ঝকঝকে নতুন করে নিয়েছে।
নিজের পছন্দের মেয়ে দেখে বিয়েও করেছে।
ঘরের আসবাবপত্র, আর নতুন ডিজাইনের বাহার দেখলে কেউ বিশ্বাসই করবে না, এই ঘরের প্রতিটা ইটের ভাঁজে, ভাঁজে রক্ত লেগে আছে আমাদের।
কারো কথা বাদ ভাইয়ের বউই বিশ্বাস করে না।
বেকার স্বামীর বউ হলে যা হয় আর কি! দেবর, ভাসুর সবাই বিদেশ গিয়ে, দোকান করে নতুন ঘর করেছে। বাধ্য হয়ে আমাকে শ্বশুরের সেই ভাঙা টিনের ঘরে থাকতে হচ্ছে। বাবার বাড়ির মতো বর্ষাকালে বৃষ্টির পানি বাহিরে না পড়ে ঘরে পড়ে।
আমার অভ্যাস আছে ছোটবেলায় বাবার বাড়ি ঘরের কষ্ট করেছি, বৃদ্ধ বয়সে এখন স্বামীর বাড়ি করছি। তিনি অবশ্য সারাজীবন বেকার থাকতেন না। কারণ সংসার বড় হচ্ছে। দুই জন থেকে পাঁচ জন হয়েছে। আমারও দুই মেয়ে, একছেলে। ছেলে সবার ছোট।
একদিন দুপুরবেলা গাছ থেকে ডাব পাড়তে গিয়ে ধুম করে নিচে পড়ে গেলেন। অনেক অনেক চিকিৎসা করিয়েও আর সুস্থ করতে পারলাম না। অল্প সময়ে তিনি স্থায়ীভাবে বিছানায় আটকে গেলেন। ক্রাচে ভর না দিয়ে হাঁটতে পারেন না।
সংসারে নিত্য অভাব। ভাতের অভাব, কাপড়ের অভাব, ঘরের অভাব। সারা জীবন বাবার বাড়িতে অভাব করেছি। শ্বশুর বাড়িতে এসেও সে অভাব আমার পিছু ছাড়েনি।
যৌথ পরিবারের বড় বউ আমি। একটা বেড়ার ঘরের ছোট্ট একটা রুমের, ছোট্ট একটা তক্তপোষে বছরের পর বছর কাটিয়েছি।
রাতেরবেলা ভয়ে, লজ্জায় একটা নিশ্বাস পর্যন্ত ফেলতাম না। পাশে ছিল শ্বশুর শাশুড়ির রুম।
আমি মেয়ের বাবার কাছে আবদার করতাম
” আমাকে একটা ঘর বানিয়ে দেবেন?যেটা একান্ত আমার ঘর হবে। যেটা আমি ইচ্ছে হলে গুছিয়ে রাখব, আবার ইচ্ছে হলে সব এলোমেলো করে রাখব।”
তিনি আশ্বাস দিতেন সামনের বছর ভাদ্রমাসেই তিনি ছোট্ট একটা আলাদা ঘর তুলে দিবেন আমায়।
কত ভাদ্র আসত যেত আমার জীবনে। কিন্তু ঘর করার সমার্থ আর হয়ে উঠেনি। উনার ভাইরা আস্তে আস্তে সবাই আলাদা হয়ে গেল।
সেই জং ধরা টিনের বেড়ার ঘরটাই রয়ে গেল আমার জন্য।
এদিকে তিনি অসুস্থ হয়ে বিছানায় পড়ে রইলেন। আমার শরীরও এখন আর আগের মতো সায় দেয় না। মনে হয় এজীবনে একটা নতুন ঘরের স্বপ্ন আমার আর পুরন হবে না।
রাতেরবেলা পাশে শুয়ে শুয়ে মেয়েটা আমাকে স্বপ্ন দেখায়
” মা পড়াশোনা শেষ করে আমি তোমাকে একটা বড় পাকা বাড়ি বানিয়ে দেব। যেটার নরম বিছানায় শুয়ে শুয়ে তুমি সারাদিন টিভি দেখবে। নরম সোফায় পা তুলে, হাত তুলে আরিফ শুয়ে, বসে থাকবে।কেউ তাকে পা নামিয়ে বসতে হুকুম করবে না।”
আনন্দে আমার চোখে পানি চলে আসে। আমি তো জানি খুব কম মেয়েই বাবা-মার স্বপ্ন পুরন করতে পারে। সে কম মেয়ের তালিকায় আমার মেয়েটার নাম থাকবে তো!
আমি ছিলাম দুইদিন বাবার বাড়ি। দুইদিন আমার কাছে দুই যুগের মতো মনে হয়েছে। আমার ছেলে বাথরুম ব্যাবহার করতে জানে না। আমার মেয়ে খেতে জানে না। ভাইয়ের বউয়ের আধুনিক বাথরুম, দামী ডাইনিং টেবিল।
আমার ছেলে মেয়ে সেখানকার অযোগ্য। আমি আসছি শুনেই ছোট বোন এসেছে আমাকে দেখার জন্য। যে সোফায় পা তুলে বসার অপরাধে আমার ছেলেকে ধমক শুনতে হয়েছে, সে সোফায়ই বোনের ছেলে জুতা তুলে বসেছে।
সেটা কেউই দেখতে পায়নি শুধু আমি দেখতে পেয়েছি। আমার পোড়া চোখ এত কিছু দেখতে পায় কেন?
বোন ধনী পরিবারের বউ তার ছেলের জুতা নিশ্চয়ই আমার ছেলের পায়ের চেয়ে অনেক দামী, নামাতে বলবে কেন?
বছর দুয়েক পর এক বর্ষার রাতে আমি শুয়ে আছি নিজের বিছানায়। বাইরে মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টির পানি ঘরে পড়তে পড়তে এখন বিছানায় পড়ছে। আমার পুরনো বুকের ব্যাথাটা হঠাৎ বাড়তে বাড়তে এত তীব্র হচ্ছে। মনে হচ্ছে এখুনি ধম বন্ধ হয়ে মরে যাব।
মেয়ের বাবা এসে পাশে বসছে। তিনি বুঝতে পারছেন আমি কষ্ট পাচ্ছি। আমিও বুঝতে পারছি। এবার বুঝি আর শেষ রক্ষা হবে না।
কী আশ্চর্য আমার কারো জন্য কষ্ট হচ্ছে না। বাবার জন্য না, মায়ের জন্য না, ছেলের জন্য না, মেয়ের জন্য না। কারো জন্য দুশ্চিন্তাও হচ্ছে না। বিবাহযোগ্য মেয়ের জন্য না, মেয়ের পঙ্গু বাবার জন্যও না। উল্টো আমার আনন্দ হচ্ছে। মরে গেলে আমার কবরটা পাকা হবে। যেটা আমার, আপনার স্থায়ী ঘর। সেই পাকা ঘরে আমি স্থায়ীভাবে থাকব।
মেয়ের বাবা আমার হাতটা শক্ত করে ধরে বললেন
“কী হয়েছে নাজমা তোর? আমি তোর জন্য কি করতে পারি বল”
” কিছু না। শুধু আমার কবরস্থানটা পাকা করে দেবেন।”
#ছোট গল্প
ঘর
কামরুন নাহার মিশু
৩. Family depression status bangla.
**পরীক্ষার খাতা বাদে আর কোথাও আমার মতামতের গুরুত্ব পাইনি!
……………………
………………………
বুয়েটের সেকেন্ড ইয়ারে থাকাকালীন ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারের একটা ছেলেকে পড়াতাম। খুব হাসিখুশি। অনেক ব্রিলিয়ান্ট। এমন এমন সব জোকস করতো আমি অভিনয় করেও গম্ভীর থাকতে পারতাম না। ছেলেটা আমার মন খারাপ ব্যাপারটা কিভাবে যেনো ধরে ফেলতো। এরপরই সে এমন সব কর্মকান্ড শুরু করতো যে আমার মন ভালো হতে বাধ্য। মাঝে মাঝে আমার মনে হতো, মাস শেষে আমারই তো এই ছেলেকে বেতন দেয়া উচিৎ।
.
ছেলেটা মাঝে মাঝে আমাকে ফোনে বলতো, ভাইয়া, আজ আইসেন না। আমি অবাক হতাম। ওর পরীক্ষার আগ দিয়ে একদিন না যেতে বলা সত্ত্বেও আমি গেলাম।
.
ছেলেটা চুড়ান্ত অপ্রস্তুত। আমি বসার রুমে বসে আছি। ভেতর থেকে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কান্নার শব্দ আসছে। আমার নিজের কাছে ই কেমন খারাপ লাগছে। অনেকক্ষন পর ছেলেটা এলো। ওর চোখটা লাল। মুখটা থমথমে।
.
আমার সামনে ও চুপ করে বসে রইলো দশ মিনিট। আমি বললাম, কী হইছে?
.
ও হঠাৎ আমার হাতটা ধরে ঝরঝর করে কেঁদে দিলো। আমি এই রকম একটা হাসিখুশি ছেলেকে কাঁদতে দেখে বেশ অবাকই হলাম। ও বললো – “আমার বাবা মাঝে মাঝে ই আমার মাকে পেটায়। সামান্য কারনে পেটায়। কথায় কথায় অশ্রাব্য গালি মারে। আজ সে আমার মা কে বেল্ট দিয়ে মেরেছে।”
.
যা জানলাম, অবাক করলো। কোনো কিছু পছন্দ সই না হলেই লোকটা তার স্ত্রীর উপর অত্যাচার করে। কথায় কথা থাপ্পড় মারা তার খুব সাধারন কাজ। আর এই সব অত্যাচারে তার লেশ মাত্র অনুশোচনা হয় না। লোকটা একজন শিক্ষিত উচুদরের ব্যবসায়ী।
.
আমার ছাত্রের মা তার স্বামীকে, সন্তানকে খুব বেশী ভালোবাসে। আমার ছাত্র আমাকে বললো, ভাইয়া, আমার জন্য দোয়া করবেন। আমি মাকে নিয়ে চলে যাবো। এই লোকটা আমার বাবা, ভাবতে ইচ্ছা করে না। আমার শরীরে এই লোকেরও যে কিছু রক্ত আছে, মনে হলে মরে যেতে ইচ্ছা করে।
.
আমি কিছু বললাম না। ওর মা বিশাল ঘোমটা টেনে আমার জন্য নাস্তা নিয়ে এলো। মুখ ভরা মিষ্টি একটা হাসি কিন্তু চোখ ভরা কষ্ট। উনি হয়তো থাপ্পড়ের দাগটা আড়াল করার জন্য এতো বড় ঘোমটা টেনেছেন।
.
আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, “বাবা, আমার ছেলে টা ভালো রেজাল্ট করবে তো?” – কথার মধ্যে যে আর্তি ছিলো, তা আমি ভুলতে পারিনি। একজন অসহায় মানুষ শেষ অবলম্বন খুঁজছিলো সেদিন।
.
আমি খুব যত্ন করে ওকে পড়াতাম। আমার বাড়ি ওর মোটামুটি কাছে ছিলো। ওকে আমি আমার বাসায় চলে আসতে বলতাম। একসাথে দুই জন কম্পিউটার গেম খেলতাম। আড্ডা মারতাম, একসাথে খাওয়া দাওয়া করতাম। চেষ্টা করতাম ওর কষ্ট কিছু টা কমানোর।
.
ও এইচ,এস,সি তে স্টারসহ দুই লেটার পেলো। যেদিন ওর এই অসাধারন রেজাল্টের আনন্দ, সেই দিনটিতে ওর বাবা ওদের একটা চমৎকার উপহার দিলো। যা কখনো ওরা কল্পনা করতে পারেনি। ওর বাবা মা কে ডিভোর্স দিলো। ওর বাবা নতুন করে নতুন মানুষ নিয়ে জীবন শুরু করবে। এর দুই দিন পর ওর মা নানা বাড়ি চলে গেলো। আমার ছাত্র ঢাকার একটা মেসে থাকতো। ওর বাবা যদিও বলেছিলো ছেলে যেনো তার সাথে থাকে। ও থাকেনি।
.
আমার ছাত্র কে আমি এক টা টিউশনী জোগাড় করে দিলাম। মাঝে মাঝে ও আমার বাসায় আসতো। ও আমার কাছে এসে ভর্তি পরীক্ষার প্রিপারেশন নিতো। যখন খুব মন খারাপ হতো মা এর সাথে কথা বলতো। খুব কানতো। আমি আদর করে ওকে বোঝাতাম। ওর মা খুব অসুস্থ ছিলো। বুয়েট ভর্তি পরীক্ষার দিন আমি ওকে নিয়ে গেলাম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষার দিন ও গেলাম। পাগল টা পরীক্ষা দেবার আগে আমার পা ছুঁয়ে সালাম করে যেতো।
.
ও বুয়েটে চান্স পেলো না কিন্তু ঢাকা ভার্সিটির ক ইউনিটে ৩৪ বা ৪৪ তম হলো। ওর এই কৃতিত্বে আমারই চোখে পানি চলে এলো। আমি ওকে একটা ব্র্যান্ড নিউ ক্যাসিও জি শক গিফট করেছিলাম। (আমার নিজের ও খুব শখ ছিলো, কিন্তু নিজে না কিনে ওকে উপহার দিতে ই আমার আনন্দ বেশী লেগেছিলো)
.
এই আনন্দের মাত্র তিন মাস পর হুট করে ওর মা মারা গেলো। মহিলা টা জীবনে শুধু কষ্ট ই করেছিলো। তার ছেলের খুব ইচ্ছা ছিলো মাকে জীবনের সব সুখ এনে দেবে, সব আনন্দ গুলো মাকে উপহার দেবে।
.
আমার ছাত্র আমাকে কান্না চেপে বলেছিলো, “জীবনে শুধু চেয়েছিলাম আমার মায়ের হাসি, মাঝে মাঝে অবাক লাগতো, মৃত্যুর শেষ মুহূর্তে ও আমার মা বাবার কথা জিজ্ঞাসা করেছিলো। আমার মা ওই লোক টা কে প্রচন্ড ভালোবাসতো। অথচ লোক টা আমার মা কে না খেতে দেবার জন্য রুমে লক করে রাখতো। আর আমার মা কাদতো।”
.
একজন মানুষ যখন তার জীবনসঙ্গীকে ভালোবাসতে পারে না, সেটা দুঃখজনক আর তাকে সন্মান দিয়ে না পারলে সেটা অপরাধ। আমার আশেপাশে এরকম হাজার হাজার অপরাধী আছে।
.
প্রতিনিয়ত আমি দেখি এই রকম মুখোশধারী নিপাট ভদ্র মানুষগুলোকে। যারা নিজেদের পুরুষত্ব প্রমান করার জন্য, নিজেদের অবস্থান জানান দেবার জন্য হামলে পড়ে তার জীবনসঙ্গীর উপর।
.
আমাদের আশে পাশে অনেক ছেলে আছে, যারা মেয়েদের সাথে প্রেম করে নিজের স্মার্টনেস, হ্যান্ডসামনেস, অসামনেস প্রমান করার জন্য। খুব সহজেই এক টা মেয়ের মন ভেঙ্গে দিতে ওদের বিন্দু মাত্র অনুশোচনা হয় না, ঝাপিয়ে পড়ে নতুন কোনো মেয়েকে গার্লফ্রেন্ড বানাতে। । আবার ওই ছেলে কে যখন কোনো মেয়ে রিফিউজ করে, সেই মেয়ের সম্পর্কে বাজে কথা বলতে এক মুহুর্ত দেরী করে না। আমি জানি, সবাই এমন না, কিন্তু এই জাতীয় মানুষ দিন দিন বাড়ছে।
.
আমাদের কাছে আমাদের জীবনসঙ্গীদের, ভালোবাসার মানুষদের প্রত্যাশা খুব বেশী না। মতের মিল না ই থাকতে পারে, পারষ্পারিক সন্মান বোধ টুকু পরিবারের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
.
একটা ছোট্ট গল্প মনে পড়লো, স্বামী স্ত্রী একটা ব্রীজ দিয়ে পার হচ্ছে। স্বামী বেচারার খুব ভয় লাগছে। শেষ পর্যন্ত সে তার স্ত্রী কে একটু ঘুরিয়ে বল্লো, “তুমি আমার হাত ধরো, হঠাৎ পড়ে যেতে পারো।”
.
তার স্ত্রী মিষ্টি করে হেসে বল্লো, “আমি তোমার হাত ধরবো না, তুমি আমার হাত ধরো। হঠাৎ সত্যিই যদি আমার কিছু হয়, আমি হয়তো তোমার হাত ছেড়ে ও দিতে পারি, কিন্তু আমি জানি, তুমি আমার হাত কখনো ছাড়বে না”
.
আমার সেই ছাত্রের মা ও হয়তো এরচেয়ে বেশী কিছু চায় নি।
.
এরপর আমার ছাত্র অনেক যুদ্ধ করে মনোবুশো স্কলারশীপ নিয়ে জাপান পাড়ি জমালো। বিয়ে করলো। ওর একটা ফুটফুটে বাবু হলো।
.
ও আমাকে ফোন দিয়ে জানালো। সেই কী আনন্দ ওর! আমাকে অনেক কথা বল্লো। শেষে থেমে থেমে বল্লো, “এই পৃথিবীতে আমার বেচে থাকতে ইচ্ছা করতো না। আপনি আমাকে বাচতে শিখিয়েছেন, স্বপ্ন দেখতে শিখিয়েছেন, ভালোবাসতে শিখিয়েছেন। এক সময় আমার মা যখন কাদতো, আমার তীব্র যন্ত্রণা হতো, মনে হতো, আল্লাহ নাই। এখন মনে হয় আল্লাহ ই আমাকে রক্ষা করেছেন, এই জন্য ই হয়তো আপনি আমার শিক্ষক। কষ্ট হলো, আমার মা এই আনন্দের সময় আমার কাছে নাই।”
.
আমি কথা বলতে পারছিলাম না। আমি এই ছেলের জন্য তেমন কী ই বা করেছি? খুব লজ্জা লাগছিলো। আমি বললাম, “তুমি খুব সাহসী ছেলে, আল্লাহ তোমার অনেক ভালো করবে। আর কখনো ভাববে না তোমার মা নেই, উনি তোমাদের মাঝে ই আছেন।”
.
ও কিছুক্ষন চুপ করে হঠাৎ বল্লো, “আপনাকে না জানিয়ে একটা কাজ করেছি, আমার ছেলে টার ডাক নাম রেখেছি ইমন। যদি আপনার মতো হয়, এই আর কি!”
.
আমি কথা বলতে পারছিলাম না। গলা টা ধরে আসছিলো। আমি অতি কষ্টে শুধু বললাম “আরে গাধা, পুরান আমলের নাম রাখলি! ছেলে তো পরে তোকে গালি দেবে রে!”
.
আমার ছাত্র তৃপ্তির হাসি হাসলো।
.
মানুষকে ভালোবাসা অনেক সহজ, কিন্তু এই সহজ কাজটা করতে আমাদের কষ্ট হয়।
.
লেখা: সাব্বির ইমন
………………….
আমি কখনো আমার বাবা ভাই কে ছেঁড়া লুঙ্গি পড়তে দেখিনি।
কিন্তু আমার স্বামীকে দেখেছি ছেঁড়া লুঙ্গি কিভাবে পেঁচিয়ে আড়াল করে পড়তে হয়।
সেইদিন গুলোতে আত্মীয়রা সবাই হারিয়ে গিয়েছিলো। চিরচেনা মুখগুলো ঝাপসা হয়েছিলো।
যেদিন ঘরে রান্না করার মতো কিছু থাকতো না, সেদিন কাঁচা মরিচ আর পেয়াজ ভেজে ভর্তা করে গরম ভাত মাখিয়ে খেতাম।
আমার ভাইয়েরা তখন খোঁজ নিতে ভয় পেতো।
মাস্টার্স শেষ করা ছেলেটা যখন চাকরি না পেয়ে গার্মেন্টসে অল্প বেতনের চাকরিতে ঝুঁকেছিলো, আমার বাবার বাড়ির আত্মীয়রা তার জন্য লজ্জায় কুঁকড়ে যেতো।
সেবার ঈদের পরদিন বাবার বাড়ি বেড়াতে গিয়েছিলাম। আমার স্বামীর অবহেলা পরিমাণে এতটায় বেশি ছিলো যে সে বাড়িতে এক বছরের মতো আর পা রাখিনি।
আমার তিন বছরের ছেলেটা ভাসুরের ছেলের সাথে খেলতে গিয়ে ধাক্কা খেয়ে বাম পায়ে প্রচন্ড আঘাত পেয়েছিলো। আমাদের নুন আনতে পান্তা ফুরোয় অবস্থা। ডাক্তার, ঔষুধ ভালো চিকিৎসা করার মতো সামর্থ্য ছিলো না। বাধ্য হয়ে আমার স্বামী ভাসুরের কাছে হাত পেতেছিলো। কিন্তু কিঞ্চিৎ সাহায্যও কেউ করেনি। নিরুপায় হয়ে অবশিষ্ট কানের দুল জোড়া বিক্রি করেছিলাম।
.
আলহামদুলিল্লাহ আজ আমাদের সব আছে। দূর্দিন কাটিয়ে উঠেছি। প্রিয় থেকে প্রিয় মানুষগুলোর মুখ চিনে রেখেছি।
গত সপ্তাহে আমার ভাই এক জোড়া ইলিশ মাছ নিয়ে বাসায় এসেছিলো। ভাইয়ের বউ প্রায়শই কল দিয়ে বলে কবে যাবো বেড়াতে।
ভাসুরের শরীরে নানা ধরনের রোগের উৎপাত। চিকিৎসার জন্য গত মাসেও টাকা পাঠানো হয়েছে।
সৃষ্টিকর্তার রহমতে আমার স্বামীর ব্যবসাটাও বেশ বড়-সড় হয়েছে। সাথে মান-মর্যাদা, প্রতিপত্তির বুঝি কমতি নেই। আত্মীয়রা আমাদের নিয়ে এখনও কানাঘুঁষা করে তবে হয়ত ইতিবাচক কিছু।
আমার স্বামীর সেই ছেঁড়া লুঙ্গিটা আজও আমি আলমারিতে অনেক যত্নে তুলে রেখেছি৷ সেদিনও লুঙ্গিটা দেখলে যতটা কষ্ট হতো আজও ঠিক ততোটাই কষ্ট হয়।
ব্যবধানটা শুধু দুর্দিন আর সুদিনের।
collected
…………….
‘প্রিয় মানুষ’ ছেড়ে চলে যাবে!’ বেস্টফ্রেন্ড অন্য বেষ্টফ্রেন্ড বানাবে! ফ্যামিলি প্রবলেম বেড়ে যাবে! ‘ডিপ্রেসড’ লাগবে! একাকিত্বে ডুবে যাবে!’ তবুওও থেমে থাকা যাবে না, জীবন সুন্দর!
……….
৪. depressed status about life bangla
কারো কারো হয়তো ফ্যামিলি প্রবলেম চলে,কারো হয়তো ক্যারিয়ারের চিন্তায় রাতে ঘুম হয়না,কেউ কেউ হয়তো প্রিয় মানুষ কে হারিয়ে বিষন্নতায় ভোগে সারাদিন,কেউ কেউ হয়তো নানান রকমের প্রেশারে পড়ে নিজেকে হারিয়ে খুঁজছে,কেউ কেউ হয়তো রোগে আক্রান্ত,আমাদের জীবনের ‘সমস্যার’ শেষ নাই আসলে,তাও আমরা কেউ ‘কেমন আছি?’ জিজ্ঞেস করলে হেসে হেসে বলে দেই ‘আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি!’
আমাদের ‘ভালো থাকা’ হারিয়ে গেলেও আমাদের ‘ভালো’ থাকতে হয়! এটাই জীবন।
~উমেদ
…..
“আমি দেশ জয় করে এসে দেখি
আমার প্রেমিকাকে জয় করে নিয়েছে অন্য কেউ।”
–বীর মুক্তিযোদ্ধা জয়নাল হাজারী।
***********
গত ৩ ঘন্টা ধরে ৫মিনিট কথা বলার জন্য একটা মানুষ খুঁজছি!’
কি অদ্ভুত!’এমন একজনরেও পাই নাই যারে আমি নির্দ্বিধায় কল দিয়ে বলতে পারি ‘আজকে আমার মন ভালো নাই!’আমার কিচ্ছুই ভালো লাগছে না!’
………….
নতুন একটা হার্ট লাগবে, এটা অল্পতেই ইমোশনাল হয়ে যায়!
…………..
৫. deep pain status bangla
সামান্য মন খারাপ হয়ে গেলেও যারে বলা যাইতো; অধিকার হারায়ে ফেলার দীর্ঘ সময় পর কোন এক অবসরে তার সাথে কথা হইলে, তীব্র বিষন্নতা ও জীবনের গভীর বিষাদ নিয়েও সেসময় তার কাছে আর মন খারাপের গল্প বলা যায়না। বলা যায়না- জীবন নিয়ে হাঁপায়ে আছি। ক্লান্ত লাগে।
অধিকারবোধ ব্যাপারটা এমনই জঘন্য এক বিষয়। হারায়ে ফেললে; কথাও হারায়ে যায়।
*************
অধিকার চাইবার বিষয় নয়; ছাড়বারও বিষয় নয়।
অনেক সময়ের বিনিয়োগে যে অধিকারবোধের জন্ম হয়; অনেক সময়ের যোগাযোগহীনতায় সেই অধিকারবোধের একসময় বিনাশও ঘটে।
তুমি চেয়ে চেয়ে এই অধিকার ব্যাপারটাকে অর্জন করতে পারবেনা; অনাগ্রহে ছেড়ে আসার ক্ষমতাও তোমার নেই।
“অধিকার” বোধটা বিনা নোটিশে চলে আসে; বিনা নোটিশেই একসময় জীবন থেকে চলে যায়।
………………
স্বর্গ পাওয়ার আনন্দ এবং নরকে পোড়ার বেদনা যে একই সাথে পেতে চায়; সে যেন প্রেম করে।