#লেখনীতে:অনুসা রাত(ছদ্মনাম)
#পর্ব:১০
-“দেখো মিতালি!একমাত্র তোমার জেদের জন্য আমাকে এসব করতে হচ্ছে। “
শক্ত গলায় বললো নুশান। মিতালি নুশানের হাত ধরে নিম্ন স্বরে বলে উঠলো,
-“আরে,তুমি বোঝার ট্রাই করো!সায়ানকে ছেড়ে আমি থাকতে পারব না। সায়ান আমার ছেলে।”
নুশান মিতালির হাতটা ঝাড়া দিয়ে ফেলে দিলো। ওর থেকে কিছুটা দূরে সরে এসে বললো,
-“আমি কি বুঝিনা মনে করেছো!তুমি সায়ানের জন্য আসছো তাই না!হাহ!”
-“হ্যা।আমি তো সায়ানের জন্যই আসছি।”(জোরপূর্বক হেসে)
-“থাক আর কত মিথ্যা বলবা।আমি খুব ভালো করেই জানি যে তুমি এখানে শিশির আর রাতের মধ্যে প্যাচ লাগাতে এসেছো।”
মিতালি হাসলো।হাসতে হাসতে বললো,
-“যাক!আমার সাথে থেকে থেকে তোমার কিছু তো বুদ্ধি হয়েছে। “
নুশান বিরক্তি নিয়ে বললো,
-“কোনো দরকার আছে কি এসবের? “
-“আলবাদ আছে।আর আমার আসলেই সায়ানকে লাগবে।আমি সায়ানকে এখান থেকে নিয়ে যাব।”
-“একমাত্র তোমার শরীরের কথা চিন্তা করে আমি সায়ানকে নিয়ে রাজি হয়েছি।নয়ত পরের ফসল আমি কেন বয়ে বেড়াব?”
-“আচ্ছা ঠিকাছে। আর বাকি রইলো রাত-শিশির।ওদেরকে আলাদা করাটাই আমার মেইন কাজ।”
-“কিন্তু শিশির তো আমাদের বিরুদ্ধে কিছু করছে না। যা করেছিল সব আমি পুলিশদের টাকা খাইয়ে বাদ করেছি। এখন কিসের শত্রুতা ওর সাথে?”(ভ্রু কুঁচকে)
-“শত্রুতা আছে!শিশির কিভাবে পারলো আমাকে ভুলে যেতে?”
-“ন্যাকামো কথা বলো না।শিশিরকে ছেড়ে দিয়েছো। তাহলে ও তোমায় ভুলবে না তো কি তোমার জন্য সারাজীবন অপেক্ষা করবে?”
-“হ্যা করবে!”
-“পাগলকে নিয়ে আছি আমি।”
-“সে তুমি যাই বলো। শিশির সুখে সংসার করবে এটা আমি দেখতে পারব না। আমি সুখে থাকছি এটা শিশির দেখবে এটাই আমি চাই।”
-“কিন্তু কেন মিতালি!বাদ দাও এসব। চলো আমরা আমাদের মত থাকব।”
-“একদম আমার কাজে বাঁধা দিবে না নুশান। তুমি না আমায় ভালোবাসো?”
নুশান কি বলবে বুঝতে পারছে না। মিতালির এসব তার মোটেও ভালো লাগছে না। তারা তো পালিয়ে ছিল। এখন কেন মিতালি আবার এসব নাটক শুরু করেছে?নুশান অসহায় গলায় বললো,
-“প্লিজ মিতালি!”
মিতালি শয়তানী হেসে বললো,
-“আমি শিশিরের ধ্বংস দেখতে চাই।”
নুশান বেশ অবাক হলো। তারপর মিতালিকে টেনে নিয়ে বললো,
-“কোনো ব্যক্তিগত শত্রুতা?”(ভ্রু কুঁচকে)
মিতালি কিছু বলতে যাবে তার আগেই দরজায় ঠকঠক করে কড়া নাড়লো কেউ।মিতালি নুশানকে থামিয়ে দিয়ে দরজার দিকে এগিয়ে গেলো।দরজা খুলতেই শিশিরদের বাড়ির কাজের মহিলাকে দেখে বললো,
-” বলো।”
-“আফা খালাম্মা আফনাগো আইতে কইছে।”
-“তুমি যাও আমরা আসছি।”
-“জ্বে।”
বলেই কাজের মহিলাটি চলে গেলো। মিতালি দাঁতে দাঁত চেপে নুশানকে উদ্দেশ্য করে বললো,
-“বউয়ের জন্য কাজের মহিলাও রাখা হচ্ছে।”
-“হ্যা তো। রাখুক না!”
-“একদম বাজে কথা বলবা না।আমার জন্য কখনে রাখেনি।”
নুশান আর কিছু বললো না। মিতালিকে দেখে তার নিজেরি কেমন অচেনা অচেনা লাগে।কারণ মিতালি পালানোর সময় বলেছিল যে আর কখনো সে পিছনে ফিরে তাকাবে না। কিন্তু এখন তো সে পরের সংসার ভাঙতে উঠেপড়ে লেগেছে। নুশান তো শুধু মিতালিকে চেয়েছিলো।তারচেয়ে বেশিকিছু তো না।
নুশান,মিতালি শিশির একই ভার্সিটিতে পড়ত। নুশান আর শিশির দুজনই মিতালিকে ভালোবাসতো। শিশির বিয়ের প্রস্তাব দেয়ায় মিতালিও রাজি হয়ে যায়। তখন আর নুশান এরমধ্যে থাকতে চায়নি। সরে গেছিলো।কিন্তু বিয়ের ২ বছর পর মিতালি নিজেই নুশানের সাথে দেখা করে, ঘনিষ্ঠ হয়।নুশানও পুরনো প্রেম পাওয়ার লোভে শিশিরকে ঠকাতে অগ্রসর হয়।
-“খেতে চলো!”
মিতালির কথায় ধ্যান ভাঙে নুশানের।হ্যাবোধক মাথা নাড়িয়ে বলে উঠে,
-“যাবো তো।”
-“তো চলো!এমনিতেই আজকের দিন গেলে একদিন চলে যাবে। হাতে থাকবে ছয়দিন।”
-“আমি তো মানুষের বাসায় থাকতেই চাই না।”
রেগেমেগে বলেই নুশান প্রস্থান করলো।মিতালি বাঁকা হেসে বললো,
-“তুমি চাও আর না চাও শিশিরকে কখনোই আমি সুখে দেখতে পারব না। তার অবশ্য আরেকটা কারণও আছে। জানবে জানবে!ধীরে ধীরে সবই টের পাবে।”
বলেই সে আঁচল ঠিক করে খেতে চলে যায়।
____
সায়ানকে ঘুম পাড়িয়ে চৈতী বেগমের ফ্ল্যাটে খাবার নিতে এসেছে রাত।কারণ রান্না-বান্না তো উনিই করেন।শিশির অসুস্থ থাকায় চৈতী বেগমকে রাতদের ফ্ল্যাটে থাকতে হয়েছিল। এখন তো শিশির কিছুটা সুস্থ আর এই শয়তানগুলোও এখানে এসে জুটেছে তাই চৈতী বেগম নিজের ফ্ল্যাটে চলে এসেছেন।চৈতী বেগম যে ইচ্ছে করে মিতালিকে রেখেছেন এমনটা কিন্তু নয়। তিনি যথেষ্ট ঘৃণা করেন মিতালিকে।কিন্তু মিতালিকে তো বিশ্বাস নেই।কি থেকে কি ক্ষতি করক বসবে!তাই তিনি বাধ্য হয়েই রাজি হয়েছেন।সাত দিনেরই তো ব্যাপার। কথাগুলো মনে মনে আওড়াচ্ছিলেন চৈতী বেগম।রাত টেবিলে প্লেট রেখে ভাত বাড়ছে। তা দেখে মিতালি বলে উঠলো,
-“এখানে খাবে না?”
রাত শান্ত গলায় বললো,
-“রুমে গিয়ে খাবো।”
মিতাকি অসহায় হওয়ার ভান করে বললো,
-“আমাদের জন্য খাচ্ছো না তাই না?আচ্ছা আমি চলে যাচ্ছি রুমে।যদি তুমি বলো তো।”
রাত মুচকি হেসে বললো,
-“আসলে আমার হাসবেন্ড কে খাইয়ে দিতে হয় তো তাই আমরা রোজ একসাথেই খাই।”
মিতালির মুখটা চুপসে গেলো। রাত চৈতী বেগমকে উদ্দেশ্য করে বললো,
-“আন্টি তুমি খেয়ে নাও। আমি ওনাকে খাইয়ে আসি।”
বলেই রাত চলে যাচ্ছিলো। পিছন থেকে আবারো মিতালি বলে উঠলো,
-“সায়ান মনে হয় ঘুমায়নি তাই না?আসলে ও তো আমায় ছাড়া ঘুমাতে পারে না।”
রাত পিছনে ফিরে বললো,
-“সায়ান রোজ রাত ১১ টায় ঘুমিয়ে যায়। দেড় মাস যাবত আছি তো!সব টাইমে টাইমেই হয়।”
-“ওহ ঘুমিয়ে গেছে?”
-“জ্বী।”
বলেই রাত আর একমুহূর্ত দেরী না করে নিজের রুমে চলে গেলো। শিশির লেপটপ নিয়ে বসে আছে। রাত গিয়ে লেপটপ টা সরিয়ে বললো,
-“নিন জনাব। খেয়ে নিন।”
শিশির হেসে বললো,
-“অসুস্থদের খাইয়ে দিতে হয়।”
রাত জানত শিশির এটাই বলবে। তাই নিজ হাতে শিশিরকে খাইয়ে দিতে লাগলো।শিশির খেতে খেতেই বললো,
-“তুমি খেয়েছো?”
-“খাবো নে।আগে আপনি।”
-“আমার থেকেই খাও।”
রাত শিশিরের জোরাজোরিতে এখান থেকেই খেয়ে নিলো।রাত খাবারটা শেষ করে হাত ধূয়ে প্লেটটা ছোট্ট টেবিলে রেখে বললো,
-“ঔষধ টাইম।”
শিশির সম্মতি দিলো। একটু পর বললো,
-“খাবার যে আনতে গেলে, শয়তানদের কি অবস্থা? “
-“কোন শয়তান?”
-“মিতালি আর নুশান।”
-“ওহ।মিতালি সায়ানকে চাচ্ছিলো।”
-“মানেহ।”(ভ্রু কুঁচকে)
-“হ্যা। সে বললো তার কাছে নাকি ঘুমাবে।”
-“পাগল নাকি!”
বলেই শিশির ঔষধ গুলো খেয়ে নিলো। তারপর জোরে শ্বাস ছেড়ে বললো,
-“আমার ছেলে তার মায়ের কাছেই বেশি কমফরটেবল।”
রাত হাসলো।শিশিরের দিকে হালকা ঝুঁকে বললো,
-“আর সায়ানের বাবা?”
শিশির নিচের ঠোঁট কামড়ে হাসলো। রাতও মিটিমিটি হাসছে।শিশির আচমকা রাতের কোমড়ে হাত রেখে বললো,
-“জানতে চাও?”
-” হু হু।”
শিশির রাতের কোমড় ধরে নিজের কোলে বসিয়ে নিলো।রাত অস্থির হয়ে বললো,
-“আরে আরে কি করছেনটা কি!ব্যাথা পাবেন তো।”
-“পাবোনা।”
রাত আর কিছু বললো না। শিশিরের চোখের দিকে তাকিয়ে রইলো। শিশির রাতের কপালে পড়ে থাকা চুলগুলো সরিয়ে বললো,
-“সায়ানের বাবাও রাতের কাছেই বেশি কমফোর্টেবল।”
-“আচ্ছা তাই!”
-“জ্বী।”
রাত হেসে শিশিরের চুলগুলো এলোমেলো করে দিলো।শিশির বলে উঠলো,
-“এলোমেলো করলে কেন? এখন কে আঁচড়ায় দিবে?”
-“এতটুকু চুল আবার আঁচড়ানো লাগে।”(মুখ ভেঙিয়ে)
-“লাগে লাগে। এখন তুমিই আচঁড়িয়ে দিবে। দাও।”
রাত মুখ ভেংচি কেটে উঠে পড়লো।ড্রেসিং টেবিল থেকে চিরুনি এনে শিশিরের চুলগুলো আঁচড়াতে লাগলো।শিশির হঠাৎ বলতে লাগলো,
-“রাত তুমি ইনভিটিশন পাইছো?”
-“কিসের?”(চুল আঁচড়াতে আঁচড়াতে)
-“হাসিব স্যারের বিয়ে।”
-“ওহ আমাদের হাসিব স্যার?কলেজের?”
-“হ্যা। আমাকে আগেই জানালো।তোমাদের মেবি জানাননি।”
-“জানালেও কি!এত স্টুডেন্ট কে কি দাওয়াত করা যায়?”
-“আমার সাথে যাবে।”
-“আপনি যাবেন?”(অবাক হয়ে)
-“হ্যা।”
-“একদম না। পায়ে না ব্যাথা?”
-“কমে গেছে তো রাত। এখন খুঁড়াইও কম।”
-“কবে বিয়ে?”
-“এইত ৩ দিন পর।”
-“আচ্ছা।”
বলেই রাত চিরুনিটা ড্রেসিং টেবিলে রেখে দিলো। শিশির পিছন থেকে বলে উঠলো,
-“রাত একটা কথা বলি?”
রাত ড্রেসিং টেবিল গুছাতে গুছাতে বললো,
-” কি বলবেন? এই মাঝরাতে আপনার এত পকপক।”
-“আরে শুনোই না।!”
-“কি?”
-“তুমি হাটার সময় না,তেমার কোমড়টাও নড়ে।”
রাতের চোখজোড়া বড় বড় হয়ে গেলো। অবাক হয়ে পিছনে ফিরে তাকায় শিশিরের দিকে।শিশির চোখ টিপলো। রাতের বিষম উঠে গেলো। শিশির যে কোনোদিন একথা বলবে এটা রাতের ধারণার বাহিরে একদম।রাত কিছু বলবে তার আগেই মিতালি হুড়মুড় করে রুমে ঢুকে পড়লো।
চলবে….
(ভুলক্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন। একটা সুন্দর মন্তব্য উপহার দিয়েন)
(গতকাল বোনাস দিতে চেয়েছিলাম।কিন্তু আপনাদের নেক্সটের ঠেলায় গল্প লিখতেই ইচ্ছে হয়নি আবার নাকি তাড়াতাড়ি দিতাম)
(আমার গল্প পারমিশন ছাড়া কপি হলে অবশ্যই স্টেপ নিতে বাধ্য হবো।আর অবশ্যই নামের আগে # হ্যাশট্যাগ দিবেন।ধন্যবাদ)