#লেখনীতে:অনুসা রাত(ছদ্মনাম)
#পর্ব:২০
বছরের পর বছর____
বাতাসে জানালার পর্দাগুলো উড়ছে। বাহিরে রোদ তো আছেই।আবার মন ভালো কথা বাতাসটাও।রাত আড়মোড়া ভেঙে উঠতেই পাশে থাকা সায়ানকে দেখতে পেলো।কি সুন্দর পাশ ফিরে শুয়ে।রাত সায়ানের গালে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিলো।শিশির ওয়াশরুমের ভেতর থেকে বের হতে হতে বললো,
-“উঠে গেছেন?”
রাত হালকা হাসলো।বিছানা থেকে নামতে নামতে বললো,
-“উঠবই তো। আজ কত্ত কাজ!কেয়ার বিয়ে বলে কথা।দুঘন্টার জন্য চোখটা লাগলো শুধু।”
-“এত্ত কাজ করতে হবে না রাত।লোক আছে।তুমি আরেকটু ঘুমিয়ে নাও।”
ঘুমকাতুরে রাত তবুও না করলো।সে ঘুমাবে না।তার বহু কাজ বাকি।শিশিরের সামনে দাঁড়িয়ে বলতে লাগে,
-“আমি নিচে যাচ্ছি। তুমি একটু সায়ানকে দেখে রাখো। নয়ত দৌড়ে এদিক ওদিক চলে যাবে আমায় খুঁজতে। “
বলেই রাত দরজার দিকে অগ্রসর হয়। কিন্তু পিছনে হাতে টান পড়ায় আঁটকে যায়।পিছনে ঘুরে শিশিরের অসহায় মুখপানে তাকিয়ে ভ্রুর সাহায্যে ইশারায় জিজ্ঞেস করে,
-“কি হলো?”
শিশির রাতকে এক টানে বুকে ফেলে বললো,
-“আর আমাকে কে দেখবে রাত?”
রাতের হাত গিয়ে পড়লো শিশিরের বুকে। রাতকে চুপ থাকতে দেখে শিশির রাতের বাহু ধরে বললো,
-“বলো?”
-“কি বলতাম!”
-“আমাকে কে দেখবে?”
-“তোমাকে দেখার কি আছে স্যার। তুমি কি ছোট বাচ্চা নাকি! “
বলেই মুখ ভেংচি কাটলো রাত।শিশির রাতের ঠোঁটে চিমটি কেটে বললো,
-“অবশ্যই।”
এদিকে রাত তো রেগে ফায়ার।কোমড়ে হাত দিয়ে বললো,
-“ঠোঁটে কে চিমটি দেয়?”
-“কেন আমি!”
রাত দাঁত কটমট করে তাকালো।শিশির তো দাঁত কেলাচ্ছে। সকাল সকাল রাতকে জ্বালাতে বেশ লাগে তার। রাতের কটমট করা চেহারাটা বেশ ভালো লাগে।রাত শিশিরের বুকে হালকা ধাক্কা দিয়ে বললো,
-“সরো তো সরো।”
শিশির যেন আরো মজা পেল বিষয়টাতে। রাতের কোমড় জড়িয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো।কপালের চুলগুলো সরিয়ে ঠোঁট ছুঁইয়ে বললো,
-“রাত তোমার মনে হয় না যে তোমার আমার কথা চিন্তা করে কিছুক্ষণ ঘরে থাকা উচিত?”
রাত শিশিরের ভালোবাসার স্পর্শ নিতে নিতে বললো,
-“ঘরে থেকে আপনার সব উদ্ভট কান্ড সহ্য করতে হবে।আর কোনো কাজের কাজ হবে কি?”
-“তো করো সহ্য।”
বলেই শিশির রাতের হাত ধরে ঘুরাতে লাগলো।আর হাত দিয়ে মিউজিক বক্সের রিমোট নিয়ে একটা সফট টুন ছেড়ে দিলো। রাত রাগী গলায় বললো,
-“সকাল সকাল ভিমরতি ধরেছে?”
-“হ্যা।”(হেসে)
-“ছেলেটা উঠুক খালি।পরে তোমার খবর আছে।”
শিশির নিজের মত করে রাতকে নাচাচ্ছে। রাতের খারাপ লাগছে এমনটা নয়। তারও ভালোই লাগছে।কিন্তু তার শরীরটা তেমন ভালো নয়।তাই কিছুক্ষণ পরেই মাথাটা ঘুরে উঠলো।রাত মাথায় হাত দিয়ে বিছানায় বসে পড়লো।শিশির তাড়াতাড়ি করে মিউজিক অফ করে রাতের হাত ধরে বললো,
-“কি হয়েছে রাত?আর ইউ ওকে?”
-“মাথাটা ঘুরছে।”
-“হঠাৎ!!”
-“না কিছুদিন ধরেই।”
শিশির রেগে গেলো। ধমক দিয়ে বললো,
-“এই মেয়ে!এতদিন ধরে মাথা ঘুরছে আর আমায় বলো নি তুমি!প্রেশার ফল করেছে মনে হয়।দাঁড়াও আমি ডিম দুধ আর ব্রেকফাস্ট আনছি।আরো না খেয়ে থাকো।”
রাত কাঁদো কাঁদো গলায় বললো,
-“আমি না খেয়ে থাকিনি।”
-“তোমায় চিনি না আমি?”(চোখ রাঙিয়ে)
শিশিরের চোখ রাঙানোতে রাত চুপ হয়ে গেলো।ঠোঁট উল্টে মাথা নিচু করে ফেললো।এদিকে শিশির রাতকে বকতে বকতে দরজার বাহিরে চলে গেলো।রাত পা তুলে বসলো।সায়ানের মাথায় হাত বুলালো।ছেলেটা হাঁটতে শিখেছে, আদো আদো গলায় কথা বলে।কি সুন্দর করে রাতকে মা বলে ডাকে।প্রথম যেদিন রাতকে মা বলে ডেকেছিল রাতের সে কি কান্না!আলাদা অনুভূতি পাচ্ছিলো সে।সেগুলো ভেবেই রাত ঘুমন্ত সায়ানের হাতে চুমু দিলো।আর বললো,
-“আর মাত্র ১ মাস। তারপর তোর ৩ বছর পূর্ণ হবে।”
রাতের কথা মধ্যেই শিশির খাবারের ট্রে হাতে রুমে ঢুকলো।রাত ভ্রু কুঁচকে বললো,
-“এটা কিন্তু গ্রামের বাড়ি!লোকে নানান কথা বলবে। আমাকে নিচে যেতে হবে।গেলাম।”
-“যেখানে বসে আছো সেখানেই বসে থাকো।”
গম্ভীর কণ্ঠে বললো শিশির।তারপর রাতের সামনে বসে সিদ্ধ ডিম ধরে বললো,
-“নাও,আমি খাইয়ে দিই।হা করো।”
রাত কাছে যেতেই নাক ছিটকে বললো,
-“ইয়াক!বাজে গন্ধ।”
শিশির অবাক হয়ে বললো,
-“না রাত। এটা একদম ফ্রেশ।মাত্র সিদ্ধ করে আনলাম।”
-“না এটা গন্ধ।”
বলেই রাত ওয়াক ওয়াক করতে লাগলো। শিশির একটু মুখে দিয়ে বললো,
-“এই দেখো গন্ধ নেই।নাও এবার তুমি খাও।”
শিশিরের জোরাজোরি তে রাতকে খেতেই হলো।এবার শিশির রাতের দিকে দুধ এগিয়ে দিলো।কিন্তু এটা তো রাত খাবেই না।কোনোমতেই না। বাধ্য হয়ে শিশির রাতকে রুটি ভাজি দিলো। অন্যসময় হলে রাত খেতো না।কিন্তু শিশিরের এভাবে বসে থাকায় রাতকে খেতে হচ্ছে। কোনোমতে গিলে রাত আধশোয়া হয়ে বসে পড়লো।শিশির হেসে বললো,
-“এখন না শরীরে জোর টা আসবে!”
রাত মুখ ভেংচি দিলো।শিশির রাতের গাল টেনে বললো,
-“ঝগড়া করার শক্তি।”
বলেই শিশির ট্রে নিয়ে উঠে পড়লো।আর বলতে লাগলো,
-“মাকে বলেছি।মা বলেছে তোমায় রেস্ট নিতে।আর একটু পর এসে মা দেখে যাবে।”
-“এটা গ্রাম। লোকে নানান কথা শুনাবে। আমি এক্ষুনি যাবো।কত কাজ বাকি।”
-“চুপ করে শুয়ে থাকো।”
রাত বসে রইলো।শিশির দরজা দিয়ে বের হবে এমন সময় পিছন থেকে ধুপধাপ আওয়াজ পেলো।শিশির পিছনে ফিরে দেখলো রাত বিছানায় নেই।ওয়াশরুম থেকে শব্দ আসছে।শিশির তাড়াতাড়ি করে ট্রেটা টেবিলে রেখে ওয়াশরুমের দিকে এগিয়ে গেলো। রাত বেসিনে গড়গড় করে বমি করছে।শিশির রাতের মাথায় হাত দিয়ে বললো,
-“তোমার বমি হচ্ছে কেন রাত?”
-“….”
-“এসো মাথায় পানি ঢালবে।”
বলেই শিশির রাতকে ঝর্ণার নিচে দাঁড় করিয়ে দিলো। রাত দুহাতে নিজেকে ঢেকে বললো,
-“তোমাকে কে বলেছে আমাকে সকাল সকাল এখানে দাঁড় করাতে!”
-“একদম চুপ!”
শিশির ধমকে উঠলো।
-“চুপচাপ গোসল করে বাহিরে এসো।”
বলেই শিশির বের হয়ে গেলো।রাত বাদ্ধ হয়ে গোসল করে বের হয়ে এলো চুলে টাওয়াল পেঁচিয়ে।কিন্তু তার অসুস্থতা কমলো না।মাথাটা এখনো ঘুরছে।কিন্তু শিশিরকে বলছে না। পাগল নাকি!শিশিরকে বলে বকা খাবে?শিশির রুমে পায়চারী করছে।রাতকে বের হতে দেখে বললো,
-“এখন কেমন লাগছে?”
-“বেটার।”
শিশির কিছু বলতে যাবে তখনই দেখলো সায়ান রাতের পায়ের কাছে দাঁড়িয়ে।সে তার মায়ের আঁচল ধরে বললো,
(বাচ্চারা একটু আদো আদো ভাষায় কথা বলে।কিন্তু এখানে আদো আদো ভাষায় লিখলে আমারি হাসি পায়।তাই স্বাভাবিক ভাবেই লিখছি। বুঝে পড়ে নিবেন।থ্যাংক ইউ অল)
-“মা,তোমার কি হয়েছে?”
রাত হাসলো।সায়ানকে কোলে নিতে নিতে বললো,
-“কিছু না বাবা।এমনি মাথা টা ঘুরছিলো।”
সায়ান তার মায়ের গালে হাত দিয়ে বললো,
-“নিচে যাবো নিচে।”
রাত মাথা নাড়ায়।শিশির সায়ানকে কোলে নিতে নিতে বললো,
-“সায়ান তোমার মা অসুস্থ। তাই সে এখন রুমে থাকুক। চলো আমরা ঘুরে আসি।”
সায়ান কিছুক্ষণ অবুঝ নয়নে তার মায়ের অসহায় মুখপানে তাকিয়ে রইলো।তারপর বাবার গলা জড়িয়ে বললো,
-“আচ্ছা!মাম তুমি শুয়ে থাকো।আমি আসছি দাদুকে নিয়ে।”
রাত সায়ানের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো।সায়ান তার বাবার গলা জড়িয়ে বাহিরে চলে গেলো। শিশির যেতে যেতে বললো,
-“প্রভলেম হলে নাম্বারে মিসড কল দিয়ো। আমি আশেপাশেই আছি।”
-“এত টেনশন করতে হবে না ধূর।”
-“বেশি বুঝিও না।”
সায়ানও বাবার নকল করে ভূবন ভুলানো হাসি দিয়ে তার মাকে বললো,
-“বেশি বুঝিয়ো না “
রাত আর বলবে?চুপচাপ বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লো।আসলেই তার মাথাটা ধরেছে ভীষণ। আস্তে আস্তে তার চোখ লেগে এলো।ঘুমের দেশে তলিয়ে গেলো মুহূর্তেই।
______
কেয়ার বিয়ের অনুষ্ঠান শেষ।নিয়ম অনুযায়ী কেয়াকে এখনই শ্বশুরবাড়ি যেতে হবে।কিন্তু গ্রাম এলাকা আর ভীষণ রাত হওয়ায় সিদ্ধান্ত হয়েছে ভোরবেলায় কনেকে তুলে দেয়া হবে।আপাতত সবাই মিলে আড্ডার আয়োজন করা হয়েছে। সব কাজিনরা মিলে মজা,আনন্দ-উল্লাস করবে।রাত এক পাশে দাড়িয়ে আছে।শিশির একটু দূরেই ছেলেকে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।আর বাকি সবাই বর-কনেকে নিয়ে মজা করছে।কিছুক্ষণ পর রাতের পাশে এসে রাতের শ্বাশুড়ি আর কিছু মহিলারা দাঁড়ালো।রাত সবাইকে সালাম দিলো।চৈতী বেগম সবাইকে উদ্দেশ্য করে বললেন,
-“এটা আমার বউমা। রাত।”
_”মাইয়া তো ভালাই।কিন্তু পোলাপাইন হইছে?”
রাতের বুক ধক করে উঠলো।এটারই ভয় হচ্ছিলো।চৈতী বেগম জোরপূর্বক হেসে বললেন,
-“একটা ছেলে তো আছেই। আর কি লাগে আমাদের আপা।”
_”হেইডা তো আছেই কেয়ার মা।কিন্তু হেইডা তো প্রথম বউডার। এই বউডার বাচ্চা গাচ্চা নাই?”
রাতের আজ উত্তর দেয়ার শক্তিই হচ্ছে না।শরীরটা এমনিই খারাপ।তার উপর এসব কথা গিলতে হচ্ছে। শিশিরকেও পাচ্ছে না। চৈতী বেগম বিষয়টা বুঝে বললেন,
-“আচ্ছা চলো আমার বেয়াইনকে দেখাই।”
-“আরে খাড়াও। আগে এইডা কও তোমার বউ কি মা হইতে পারতো না?বন্ধ্যা নাকি?এমন বউ বিয়া করাইয়া আনছো আমগোর শিশিরের লাইগ্গা।মাইয়ার কি অভাব পড়ছিলো?এমন বউ জুটে ক্যান শিশিরের কপালে?”
রাত চুপ করে মাথা নিচু করে আছে।চোখে জল টলমল করছে।সে কিছু বলতে যাবে তার আগেই সেই মহিলাটা তাকে উদ্দেশ্য করে বললো,
-“কি গো বউ? বাচ্চাকাচ্চা হইবো না? না হইলে কও। আমরা শিশিরের আবার বিয়া দিমু।”
রাত কোনোমতে নিজেকে সামলে কাঠ কাঠ গলায় বললো,
-“আপনার মেয়ের নাম জুই না?ওকে আগে বিয়ে দেন। শুনলাম ২৪ পার হচ্ছে। আগে একটা বিদায় করেন পরে নাহয় আমাদের পরিবারল দখলদারি করবেন।”
বলেই রাত সেখান থেকে দৌড় লাগায়।কারণ মহিলা আরো কিছু কথা বলবে যা গিলবার শক্তি তার নাই। সিড়ির কাছে আসতেই হঠাৎ রাতের মাথাটা ঘুরে উঠলো।একটা সিড়িতে পা দিতেই মাথায় হাত দিয়ে পড়ে গেলো।সবকিছু ঝাপসা হয়ে আসছে।না পড়েনি!পরিচিত একটা ঘ্রাণ আসছে।শিশির ধরে ফেলেছে তাকে!
চলবে…
(ভুলক্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন। একটা সুন্দর মন্তব্য উপহার দিয়েন)
(পছন্দের ক্যারেক্টার কোনটা?)