#লেখনীতে:অনুসা রাত(ছদ্মনাম)
#পর্ব:০৫
-“এতগুলো টপস আমার লাগবেনা বললাম তো।”
রাতের কথায় পাত্তা দিলো না শিশির। সে দোকানদারকে প্যাক করতে বলে রাতের হাত ধরে আরো কিছু জিনিস দেখতে লাগলো।রাত মহাবিরক্ত হয়ে বলতে লাগলো,
-” ওয় ব্যাডা!কইছি না লাগব না?এতগুলা দিয়া কি ঘর মুছমু্?”
রাতের কথা শুনে শিশির চোখ বড় বড় করে রাতের দিকে তাকায়। দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
-” শপিংয়ে এসে এসব কি ভাষা হাহ?”
রাত মুখ ফুলিয়ে বললো,
-” এতগুলা শুধু শুধু কিনছেন। টাকা খরচ করার কোনো দরকার আছে কি?”
-“চুপ করে হাঁটতে থাকো।”
শিশিরের কথায় চুপ মেরে গেল রাত। তার আর কিছু বলতেই মন চাচ্ছে না। লোকটা শুনলে তো সে বলবে। রাত হঠাৎ শিশিরের হাত ধরে বাচ্চাদের ড্রেসের দোকানে ঢুকে পড়লো। ছোট ছোট ড্রেসে হাত বুলাতে লাগলো। রাত শিশিরের হাতের শার্ট ধরে ঝাকাতে ঝাকাতে বললো,
-” এই সেটটা আমার বাচ্চাকে ভালো মানাবে।তাই না স্যার?”
শিশির চুপ করে আছে। রাত আরো কিছু গেন্জি শার্ট নিয়ে বলতে লাগলো,
-” কত কিউট এগুলো। অনেক সুন্দর মানাবে।”
মানুষের যেটা পাওয়ার আশা থাকেনা না বা আল্লাহ যেটা আমাদের ভাগ্যে দেনই নি।সেগুলো মানুষ নিজেদের কল্পনায় তৈরী করে নেয়। কল্পনায় তাদের এনে নেয়,গুছিয়ে নেয়,সাজিয়ে নেয়।কল্পনায়ও মানুষের একটা নিজের সংসার থাকতে পারে।তাই শিশির ভাবছে,
-“আল্লাহ যে কেন ওকে বাচ্চা ধারণ ক্ষমতা টা দিলেন না। ইশ!কত শখ করে দেখছে।”
রাত এবার শিশিরের উপর বিরক্ত হয়ে বললো,
-” উফফ বলছেন না কেন! সুন্দর না?”
শিশির হালকা হেসে সায় দিলো। রাত দোকানদারকে শার্ট গুলো দিয়ে বললো প্যাক করে দিতে। শিশির অবাক হয়ে বললো,
-” প্যাক করছো যে?”
-” বাহ রে!আমার ছেলেকে পড়াব না?”
-” তোমার ছেলে..”
-” হ্যা। আমার সায়ুকে কত্ত সুন্দর মানাবে।”
বলেই সে মুচকি হেসে ব্যাগগুলো নিয়ে বের হয়ে এলো। শিশির অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। আর ভাবছে,
-“কি দিয়ে তৈরী এই মেয়ে?আমি আরো ভাবলাম ও নিজের অক্ষমতা নিয়ে অখুশী হয়ে মনের কষ্ট নিয়ে এগুলো দেখছে।কিন্তু ও তো সায়ানকে নিয়েই নিজের অক্ষমতা ভুলে যাচ্ছে।”
শিশির কিছুক্ষণ ভাবার পর হালকা হাসলো। সে আবারো রাতকে ভুল বুঝেছিলো।শিশির মাথা চুলকে বিরবির করলো,
-” কার কি হও সেটা জানি না রাত।কিন্তু তুমি সায়ানের পার্ফেক্ট মা।”
শিশির রাতকে শপিং করে দিয়ে বের হলো। কিন্তু রাত তো নিজের ব্যাগগুলো নিয়েও দেখছে না। সে বেশ এক্সাইটেড হয়ে বারবার সায়ানের ব্যাগগুলো অল্প অল্প খুলে দেখছে। শিশির তা দেখে বললো,
-” তোমার ছেলের জিনিস কেউ নিবে না। বারবার দেখছো যে।”
-“আরে না। ভাবছি,সায়ুকে পড়লে কত কিউট লাগবে।”(খুশি হয়ে)
-” হ্যা তোমার মত।”
বলেই হাসলো শিশির।পাশে তাকিয়ে দেখলো রাতের তার দিকে কোনো খেয়ালই নাই। সে রাস্তার পাশে ছোট ছোট ঝুমকার দোকানগুলো দেখছে। শিশির বারকয়েক চোখের পলক ফেললো। রাতকে অন্যমনষ্ক হতে দেখে বললো,
-” কি দেখছো রাত?”
হুশ ফিরে রাতের। হেসে বলে উঠে,
-” আরে কিছু না।আমি গাড়িতে বসি।”
বলেই রাত গাড়িতে বসে পড়লো।
শিশির গাড়ির পিছনে ব্যাগগুলো রাখতে রাখতে বললো,
-” রাত!আমার একটা দরকারী ব্যাগ শপিংমলেই ফেলে এসেছি।”
-“সেকি!কি রেখে এসেছেন?”
-“একটু পারসোনাল। আমি নিয়ে আসছি। তুমি এখানেই বসো।”
রাত মাথা নাড়ায়।শিশির ঝুমকার দোকানে গিয়ে লাইট ওয়েটের কয়েকটা ঝুমকা আর কাঁচের চুড়ি কিনলো। তারপর গাড়ির কাছে এসে সেগুলো গাড়ির পিছনে রাখলো।নয়ত রাত দেখলে হাজার প্রশ্ন করবে। গাড়ির ড্রাইভিং সিটে বসতেই রাত বলে উঠলো,
-“ওমা!কই্?”
শিশির অবাক হয়ে বললো,
-” কি কই?”
-” আরে আপনার দরকারী ব্যাগ।”
-“ওহ!সেটা আপনার ভাবতে হবে না মিসেস রাত।”
বলেই শিশির মুচকি হেসে গাড়ি স্টার্ট দিলো।রাত চোখ ছোটছোট করে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো। শিশির রাতের দিকে তাকিয়ে হেসে ইশারায় জিজ্ঞাসা করলো,
-“কি?”
রাত মুখ ভেংচি কেটে সায়ানের ড্রেসগুলো বুকে জড়িয়ে বসে রইলো।শিশির হাসলো।
গাড়ি চালাতে শুরু করলো। রাত বাহিরের প্রকৃতি দেখছে।শিশির কি মনে করে রাতের দিকে তাকায়। রাতের চুলগুলো বাতাসে উড়ছে।কি স্নিগ্ধ লাগছে।রাত অনুভব করলো কেউ তার দিকে গভীর ভাবে তাকিয়ে আছে।রাত শিশিরের দিকে তাকালো।মুচকি হেসে সামনে তাকাতেই রাত শিশিরের দিকে আচমকা তাকিয়ে বললো,
-“সামনে তাকান।”
শিশির সামনে তাকাতেই দেখলো ইয়া বড় একটা ট্রাক সামনে।কিছু বুঝে উঠার আগেই গাড়ি গিয়ে ধাক্কা লাগলো ট্রাকের সাথে।
_______
হাসপাতালের আইসিউর সামনে বসে আছে রাত,চৈতী বেগম, আর রাতের বাবা-মা।চৈতী বেগমের কোলে সায়ান ঘুমাচ্ছে। রাতের কপালে ব্যান্ডেজ। আর হাতেও রয়েছে। কিন্তু শিশিরের অবস্থা গুরুতর। তাকে আইসিউতে দেয়া হয়েছে। রাতের চোখের পানিগুলো শুকিয়ে গেছে। মনে ভয়!যা ওর চোখেমুখেই প্রকাশ পাচ্ছে। ডাক্তার দরজা খুলে বের হতেই রাত দৌড়ে গিয়ে বলতে লাগলো,
-“ডক্টর?কেমন আছেন উনি?”
-“নাউ হি ইজ আউট অফ ডেঞ্জার। “
-“আলহামদুলিল্লাহ।”
-“বাট ওনার একটা হাত আর একটা পা ভেঙেছে। যা প্লাস্টার করতে হয়েছে। কপালে তিনটা সেলাই লেগেছে।নির্দেশনা মেনে চললে উনি সুস্থ হয়ে উঠবেন ইনশাল্লাহ। আপাতত ওনাকে কেবিনে দেয়া হবে। উনি ঘুমাচ্ছেন। ইনজেকশন দেয়া হয়েছে। “
বলেই ডাক্তার চলে গেলেন। রাত মুখ চেপে কাঁদছে। চৈতী বেগমও কাঁদছেন ছেলের এই অবস্থা দেখে। রাত কোনোমতে নিজেকে সামলে চৈতী বেগমকে সামলাতে ব্যাস্ত হয়ে পড়লেন। রাতের মা ও চৈতী বেগমকে স্বান্তনা দিচ্ছেন। সায়ান কান্না করায় রাতের বাবা সায়ানকে নিয়ে বারান্দার দিকে চলে গেলেন দুলাতে দুলাতে।
শিশিরকে কেবিনে দেয়া হচ্ছে।রাত ওয়াশরুমে গিয়ে চোখমুখ ধুয়ে নিলো।এরাতের মাথায় হাজারো চিন্তা সে মনে মনে ভাবছে,
-“শিশির স্যারের পা টার জন্য উনি ভীষণ ভেঙে পড়বেন।”
ভাবতে ভাবতে রাত কেবিনের দিকে এগোচ্ছে।আরো ভাবছে,
-“চাকরীটার জন্যে আমাকেই কথা বলতে হবে হ্যাড স্যারের সাথে। নয়ত চাকরী হারিয়ে আরো ভেঙে পড়বেন উনি।”
ভাবতে ভাবতে রাত কেবিনের দরজা খুললো। শিশির ঘুমাচ্ছে।হাতে সেলাইন চলছে। রাত শিশিরেী সামনের টেবিলটায় বসে পড়লো।শিশিরের একটা হাত তুলে নিয়ে আনমনে বলতে লাগলো,
-” আপনাকে যে সুস্থ হতেই হবে স্যার। আমাদের সবার জন্য না হোক আন্টি আর সায়ানের জন্য অন্তত। বিশেষ করে সায়ানের জন্যে। ওর যে আপনি আর আমি ছাড়া কেউ নাই।”
_____
ঘুমের মধ্যেই পা টা ভারী লাগে শিশিরের।সে কোনো মতেই পা টাকে নাড়াতে পারছে না। ভীষণ ব্যাথা করছে।চোখটা খুলতেই নিজেকে হাসপাতালের বেডে শোয়া অবস্থায় পেলো সে। পাশে তাকাতেই দেখলো রাত নিচের দিকে তাকিয়ে কি যেন ভাবছে।শিশির ভাঙা গলায় বললো,
-“পানি।”
রাত চমকে উঠলো। শিশির রাতের দিকেই তাকিয়ে।
রাত তাড়াতাড়ি করে পানি দিতে দিতে চৈতী বেগমকে ডাকতে লাগলো। ছেলের জ্ঞান ফেরার কথা শুনতেই চৈতী বেগমসহ এক এক করে সবাই এসে দেখে গেল শিশিরকে।রাত একপাশে দাঁড়িয়ে আছে। শিশিরের চোখ যে রাতের দিকে।শিশির মনে মনে ভাবছে,
-“আমার জন্যে রাত কাঁদছে?কেন!”
পরমুহূর্তেই হাসলো। ভাবলো,
-“সবার জন্যে এত চিন্তা ওর।”
এদিকে শিশিরকে এভাবে হাসতে দেখে ভ্রু কুঁচকে গেলো রাতের। সে চৈতী বেগমকে বাসায় পাঠিয়ে দিয়ে শিশিরের কাছে বসতে বসতে বললো,
-“এক্সিডেন্টটা হলো কেমনে সেটা কিন্তু আমি জানি।”
-“কিভাবে?”
-“এইযে হুদাই আমার দিকে তাকিয়ে ছিলেন।”(ঠোঁট উল্টে)
ভড়কালো শিশির। তবুও হেসে বললো,
-“কিউট বাচ্চাদের দিকে তাকাতেই মন চায়।”
রাত অবাক হয়ে বললো,
-“আমি বাচ্চা!”
-“তো?”(ভ্রুজোড়া তুলে)
-“বাচ্চার আম্মু হয়ে গেছি।”
শিশির আবারো মুচকি হাসলো।রাতও ফিক করে হেসে দিলো। শিশির রাতের হাতের উপর হাত রেখে বললো,
-“কাঁদছিলে?”
-“ভয় হচ্ছিল।”
-“কি নিয়ে।আমার মরে যাওয়া নিয়ে?”
রাত শিশিরের ঠোঁটে আলতো করে হাত চেপে ধরে বললো,
-“খবরদার এ কথা মুখেও আনবেন না।”
শিশির রাতের হাত মুখ থেকে সরিয়ে বললো,
-“কেন?”
-“আমি আপনার জন্য হয়ত কিন্তু না।কিন্তু আপনি আমার আর সায়ানের জন্যে অনেককিছুই। আপনাকে নিজের স্বামী বলে মেনে নিয়েছি আমি। এমনি এমনি না।”
শিশির কিছু না বলে রাতের দিকে তাকিয়ে আছে।
হঠাৎ শিশির অসুস্থ গলায় বলে উঠলো,
-“রাত?”
-“হু?”
-“আমার মাথায় একটু হাত রাখবা?”
রাত চরম অবাক হলো। অবাক হয়ে বলেই ফেললো,
-“আপনি বলছেন আমাকে আপনার মাথায় হাত দিতে?”
-“হ্যা বলছি। তো?”(ভ্রু কুঁচকে)
রাত মুখ ভেংচি কেটে শিশিরের মাথায় হাত রাখলো। শিশির চোখ বন্ধ করে ফেললো।বড্ড আরাম হচ্ছে তার।রাতও আপন মনে হাত বুলাচ্ছে। হঠাৎ মিতালি কোত্থেকে দৌড়ে এসে রাতকে টেনে সরিয়ে শিশিরের পাশে বসে কাঁদতে কাঁদতে বললো,
-“শিশির!কেমন আছো এখন তুমি?জানো?কতটা টেনশনে ছিলাম আমি!”
রাত অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।শিশিরেরও ভ্রুজোড়া কুঁচকে গেছে।মিতালী আবারো ব্যাক করলো?কি হবে এরপর?
চলবে….
(ভুলক্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন। একটা সুন্দর মন্তব্য উপহার দিয়েন)