শ্রাবন আধারে তুমি .
লেখিকা:আফরিন ইসলাম
পার্ট:১০
রাত দুইটা ছুই ছুই ৷আবরার হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে গেছে ৷মূলত আবরার খুব ঠান্ডা লাগছিল ৷আর এতেই তার ঘুম ভেঙ্গে গেছে ৷ আবরার চোখ খুলতেই সোফার দিকে তাকালো ৷কিন্তু সোফা খালি ৷ রাই তো ওখানেই ঘুমায় ৷রাইকে কয়েকবার আবরার ইশারা ইঙ্গিতে বিছানায় শুতে বলেছিল ৷কিন্তু রাই তার ইশারা বোঝে নি ৷আবরার আশে পাশে তাকালো কিন্তু রাইকে দেখতে পেল না ৷ ডিভানের দরজা খোলা তাই আবরার উঠে দাড়ালো ৷ তারপর লাঠিতে ভর দিয়ে আস্তে আস্তে ডিভানের দিকে পা বাড়ালো ৷ডিভানের চারিদিকে তাকাতেই এক কোনে আবরার চোখ থমকে গেল ৷ একটু দূরেই এক নারী মুর্তি দাড়িয়ে আছে ৷দমকা হাওয়ায় তার খোলা চুল গুলো এলোমেলো করে দিচ্ছে ৷ হ্যা একটু দূরে রাই দাড়িয়ে আছে ৷তার দৃষ্টি উপরের দিকে ৷আবরার নিশব্দে রাইয়ের পেছনে দাড়ালো ৷আবরার দাড়াতেই রাই বলে ওঠে ৷
এত রাতে না ঘুমিয়ে এখানে কি করছেন আপনি আবরার ৷
আবরার চমকে উঠলো ৷কারন সে এতটাই আস্তে হেটে রাইয়ের কাছে এসেছে যে কোনো শব্দই হয় নি ৷ রাই কিভাবে বুঝলো তার উপস্থিতি ৷ আবরার চিন্তার মাঝেই রাই আবারো বলল
কি ভাবে আপনার উপস্থিতি বুঝলাম তাই ভাবছেন তাই না ৷আপনার মনের কথাও আমি পড়তে পারি আবরার ৷আপনার চোখের ভাষাও আমি বুঝি ৷আপনার না বলা সকল কথা বুঝি ৷আর আপনার উপস্থিতি বুঝবো না ৷এটা কি করে হয় বলুন তো ৷ কিন্তু বিশ্বাস করুন তবুও আমার আর কিছু করার নেই ৷
তুমি সত্যিই কি আমার মনের কথা বুঝতে পারো আবরার বলল ৷
রাই হাসলো ৷আবরার রাইয়ের পাশে যেয়ে দাড়ালো ৷তারপর বলল
এত রাতে এখানে কি করছো তুমি ৷না ঘুমিয়ে এখানে কেন দাড়িয়ে আছো ৷
নিজের ভবিষ্যৎ বাসস্থানকে দেখছি খুব কাছ থেকে রাই বলল ৷
কি সব বলছো তুমি ৷ আমি কি বলছি আর তুমি কি বলছো ৷
রাই আঙ্গুলের ইশারা করলো বাগানের দিকে তারপর বলল
আবরার আপনাদের বাগানের ঐ রক্তজবার গাছটা দেখেছেন ৷ঐ জায়গাটা আমার বড্ড ভালো লাগে ৷কেন ভালো লাগে জানেন ৷আপনি যখন নিজের প্রেয়সীকে নিয়ে এখানে চন্দ্রবিলাস করবেন ৷ তখন আমি ওখান থেকে দেখবো ৷ সময় পেলেই যখন আপনি এখানে দাড়াবেন ৷ তখন আমি খুব সহজেই আপনাকে দেখবো ৷
আবরার রাইয়ের দিকে তাকিয়ে বলল মাথাটা কি গেছে ৷নাকি আরো বাকি আছে ৷কি সব উল্টা পাল্টা বলছো তখন থেকে ৷
রাইয়ের চোখে পানি চিকচিক করছে ৷রাই আবরার দিকে না তাকিয়ে বলল
আপনি তিনমাস আগে একটা কথা বলে ছিলেন মনে আছে ৷
কি বলে ছিলাম মনে নেই আবরার বলল ৷
আপনি বলে ছিলেন আমি কেন আপনার সেবা করছি ৷ আপনার সেবা করার বদলে আমার কি চাই তাই না ৷
ও হ্যা মনে পড়েছে ৷
আজকে যদি চাই তাহলে দেবেন আমি যা চাইবো ৷মানা করতে কিন্তু পারবেন না আপনি ৷যা চাইবো তাই দেবেন ৷
আবরার মনটা খারাপ হয়ে গেছে ৷রাই নিজের স্বার্থে তার সেবা করেছে ৷ আবরার দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে বলল হ্যা দেব ৷কি চাই তোমার বলো আমাকে ৷
কাল আপনার পছন্দ মতো একটা শাড়ী এনে দেবেন আমাকে ৷পছন্দ মতো চুড়ি এনে দেবেন ৷টকটকে লাল আলতা এনে দেবেন ৷তারপর নিজের হাতে কাল সাজিয়ে দেবেন ৷তারপর আমি যেখানে বলবো সেখানে নিয়ে যাবেন ৷আর আপনাকেও আমার পছন্দ মতো পোশাক পড়তে হবে কিন্তু ৷
আবরার ভেবে ছিল রাই হয়তো বাড়ী , গাড়ী কিছু চাইবে ৷কিন্তু এই মেয়ের মাথা মনে হয় গেছে ৷কি সব জিনিস চাইছে ৷আবরার ভাবনার মাঝেই রাই আবারো বলল
বাড়ী ,গাড়ী কেন চাইলাম না ৷তাই ভাবছেন তো ৷ ঐ সব বাড়ী ,গাড়ী আমার কাছে এখন মূল্যহীন ৷আমার কাছে সব ধরনের বিলাসিতা এখন মূল্যহীন ৷এগুলো দিয়ে এখন আর আমার কিছুই হবে না ৷ঘরে চলুন ঘুমাবেন ৷আর আমার বলা জিনিস গুলো কাল নিয়ে আসবেন ৷মনে করুন এগুলো আমার শেষ চাওয়া আপনার থেকে ৷তাই দয়া করে ভুলে যাবেন না ৷
পরের দিন সকাল বেলা ৷ সকাল দশটা বাজে রাই নিজের ঘর পরিষ্কার করছে ৷ আবরার গাড়ী নিয়ে কিছুক্ষন আগে বেড়িয়েছে ৷রাই কাজ করছিল ৷হঠাৎ পেছন থেকে মিশকা এসে জরিয়ে ধরলো ৷রাই পেছনে তাকিয়ে হেসে দিল ৷তারপর বলল
আজ বেশি খুশি খুশি লাগছে তোমাকে ৷কি হয়েছে ৷
মিশকা মাথা নিচু করে বলল ও নাকি খুব তাড়াতাড়ি বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসবে ৷
রাই খুশিতে মুখ চেপে ধরলো ৷তারপর বলল কবে আসবে ৷
কিছু দিনের মধ্যেই আসবে বলেছে ৷
তোমার ভাই তো এগুলোর কিছুই জানে না ৷তাকে কবে জানাবে ৷
সময় হলেই জানাবো ৷
হঠাৎ আনিলা বেগম রাইয়ের নাম ধরে ডাকতেই রাই বলল
আপু মা ডাকছে ৷আমি বরং মায়ের কাছে যাই ৷রাই দৌড়ে আনিলা বেগমের কাছে গেল ৷ রাইকে দেখে তিনি বললেন
সারাদিন কোথায় থাকিস হ্যা ৷সকালে তো কিছুই খাস নি ৷তাড়াতাড়ি খেয়ে নে ৷চোখের নিচে কালো দাগ পড়ছে খেয়াল করেছিস ৷দিন দিন চেহারার কি হাল করছিস ৷তাড়াতাড়ি খা ৷নইলে খাবি এক চড় ৷রাই আনিলা বেগমের গলা জরিয়ে ধরলো ৷তারপর বলল
রাগ কেন করছো মা ৷আমি তো তোমারই মেয়ে ৷আমার না খেতে ইচ্ছে করছে না ৷ রাইয়ের এমন কথায় আনিলা বেগম গরম চোখে তাকালেন ৷তারপর হাত ধরে চেয়ারে বসিয়ে দিল ৷খাবার বেড়ে নিজের হাতে রাইকে খাইয়ে দিল ৷রাইও আর না করতে পারলো না ৷এই দুনিয়াতে হয়তো মায়েদের ভালোবাসাই খাটি হয় ৷যেই ভালবাসা কখনো উপেক্ষা করা যায় ৷যে ভালবাসায় রাগ থাকলেও হাজার গুন বেশি মমতা থাকে ৷
আবরার বাড়ীতে এলো দুপুর বারোটার দিকে ৷ আবরার ঘরে এসে রাইকে পড়ার টেবিলে দেখলো ৷ রাই বই পড়ছে ৷আবরারকে দেখে রাই উঠে দাড়ালো ৷ তারপর আবরার কাছে গেল ৷আবরার হাত থেকে শপিং ব্যাগ গুলো নিয়ে নিল ৷আবরারকে সোফায় বসিয়ে রাই বাইরে চলে গেল ৷
রাই কিছুক্ষন পরে ঘরে এলো ৷ রাই নিজের হাতে এক গ্লাস লেবুর শরবত নিয়ে এলো ৷রাইয়ের হাতে শরবত দেখে আবরার ঠোটেঁ হাসি ফুটলো ৷মেয়েটাকে তার কিছুই বলতে হয় না ৷ তার না বলা সব কিছু বুঝে ফেলে ৷শরীরটা অনেক ক্লান্ত লাগতে ছিল আবরার ৷ তাই রাই গ্লাস এগিয়ে দিতেই আবরার হাত বাড়ালো গ্লাসে দিকে ৷
আবরার ফ্রেশ হয়ে রুমে এলো ৷রাইকে শপিং করে আনা কোনো কিছু আবরার দেখতে দেয় নি ৷রাই এর জন্য কিছুক্ষন আগে রাগও করেছে ৷
চলবে….