শ্রাবন আধারে তুমি
লেখিকা : আফরিন ইসলাম
পার্ট:১২
মাঝ রাত হয়ে গেছে ৷আবরার আর রাই কিছুক্ষন আগে বাসায় এসেছে ৷আবরার ফ্রেশ হয়ে রুমে আসতেই রাই ওয়াসরুমে চলে গেল ৷
আবরার ত্রিশ মিনিট ধরে রুমে বসে আছে একা ৷রাই ফ্রেশ হয়ে বের হলেই দুজনে এক সাথে খাবে ৷একা একা খেতেও ভালো লাগে না ৷ আবরার ফোনে গেমস্ খেলছিল সময় কাটাতে ৷এর মধ্যে রাই বের হল ওয়াসরুম থেকে ৷রাই বের হয়েই বলল
আরে আপনি কি এখনো খান নি ৷না খেয়ে বসে আছেন এখনো ৷
তুমি তো দেরি করছিলে ৷তো আমি কি করবো ৷একা একা খেতে ভালো লাগে না ৷
ভালো না লাগলেও খেতে হবে ৷দুইদিন পর তো এমনিতেও এই বাড়ী ছেড়ে চলে যাব ৷তখন তো আর থাকবো না ৷তাই অভ্যাস করে নিন ৷
আবরার মনটা হঠাৎ খারাপ হয়ে গেল ৷মুখটা মলিন আকার ধারন করলো আবরার ৷সে মাথা নিচু করে নিল ৷রাই আবরার মলিন মুখ দেখে হাসলো ৷তারপর বলল
আবরার আমার শরীরটা না একদম ভালো লাগছে না ৷আপনি খেয়ে নিন ৷মাথাটা বড্ড ব্যাথা করছে ৷
আবরার ব্যস্ত কন্ঠে বলল মাথা কি বেশি ব্যাথা করছে তোমার ৷
নানা একটু একটু ব্যাথা করছে ৷ আপনি খেয়ে নিন ৷
ওকে খাবার গুলো তাহলে নিয়ে যেতে বলো ৷ আমিও খাব না ৷
আপনি কেন খাবেন না ৷আপনি এখনো অনেক অসুস্থ আবরার ৷
তুমি তাহলে কেন খাবে না ৷তুমি তো এটাই চাও যেন আমি না খাই ৷এর জন্যই তো খাবে না ৷
রাই আর কোনো কথা না বলে খাবার বাড়তে লাগলো ৷ রাইকে খাবার সাজাতে দেখে আবরার বেশ ভালোই লাগলো ৷দুইজন একসাথে খেতে বসে গেল ৷রাই নিজেও খাচ্ছে আর আবরারকে খাবার দিচ্ছে ৷আবরার খাচ্ছে আর রাইয়ের দিকে বারবার তাকাচ্ছে ৷
রাই খেতে খেতে হঠাৎ থেমে গেল ৷রাইয়ের মনে হচ্ছে খাবার গলায় আটকে যাচ্ছে ৷ মাথার মধ্যে ভনভন শব্দ হচ্ছে ৷নাক আর কানে প্রচন্ড ব্যাথা অনুভব করলো রাই ৷চোখ দুটো খুব জ্বলছে ৷ রাই আবরার দিকে তাকিয়ে দেখলো সে খাচ্ছে ৷
আমার এতো কষ্ট কেন হচ্ছে ৷এখানে আর এক মুহূর্ত থাকলে ধরা পড়ে যাব ৷ আবরারকে কিছু জানতে দেওয়া যাবে না ৷রাই মনে মনে কথা গুলো বলে উঠে দাড়ালো ৷আবরার রাইকে কিছু বলার আগেই রাই ওয়াসরুপে ঢুকে গেল ৷রাই বেসিনের কাছে যেতেই রক্ত বমি করে দিল ৷রাইয়ের মুখ থেকে গাঢ় লাল রক্ত বেড়িয়ে আসছে গলগল করে ৷সাথে সাথেই রাই নিজের নাক আর কানে তীব্র ব্যাথা অনুভব করলো ৷রাই সহ্য করতে না পেরে নিজের কান দুই হাতে চেঁপে ধরলো ৷কিছুক্ষনের মধ্যেই রাই নিজের হাতে ভেজা ভেজা অনুভব করল ৷রাই নিজের হাত সামনে নিয়ে আসতেই চমকে উঠলো ৷কারন রাইয়ের হাতে রক্ত ৷ রাই আঙ্গুল কানে দিতেই আবারো ভেজা রক্তের আভাস পেল ৷রাই দেখতে পেল ওর নাক থেকেও রক্ত আসতে শুরু করেছে ৷ রাইয়ের মুখ রক্ত বর্ন ধারন করেছে ৷হঠাৎ দরজায় আঘাতের আওয়াজ পেল রাই ৷রাইয়ের বুঝতে বাকি রইলো না যে আবরার ধাক্কা দিচ্ছে ৷ওপর পাশ থেকে আবরার বলতে লাগলো
কি হয়েছে রাই ৷ওভাবে ওয়াসরুমে কেন গেলে ৷তোমার কি কিছু হয়েছে ৷
রাই নিজের কন্ঠ স্বাভাবিক করে বলল আমি ঠিক আছি ৷আপনি যান প্লিজ ৷
রাই নিজের মুখ মুছে নিল ৷কান আর নাকের রক্তও মুছে নিল ৷মাথাটা বড্ড ব্যাথা করছে ৷চোখ লাল হয়ে গেছে ৷জোড়ে জোড়ে সে শ্বাস নিতে লাগল ৷রাই চোখে মুখে পানির ঝাপটা দিল ৷ আয়নায় নিজের চেহারা দেখে একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিল ৷রাইয়ের মনে পড়ে গেল সাড়ে তিন মাস আগে ডাক্তারের কথা ৷
ডাক্তার বলে ছিল রাইয়ের ব্রেন টিউমার হয়েছে ৷রাইয়ের মাথায় এই টিউমার বিকট আকার ধারন করেছে ৷টিউমার ছড়িয়ে পড়েছে শিকড়ের ন্যায় ৷রাইয়ের জন্য আর কোনো চিকিৎসা নেই ৷ নাক ,চোখ ,গলা ,কানেও বিস্তার করেছে টিউমার ৷খুব তাড়াতাড়ি ভয়াবহ আকার ধারনের পথে ৷ নাক ,কান ,চোখে ছড়িয়ে পড়তেই রক্তপাত ঘটবে যে কোনো সময় ৷আস্তে আস্তে খুধা মন্দা দেখা দেবে ৷ চোখের নিচে কালো হয়ে যাবে ৷জ্বর হবে হঠাৎ হঠাৎ ৷চোখে ঘুম আসবে না ৷প্রচন্ড মাথা ব্যাথা অনুভব করবে ৷আর এই লক্ষন গুলোই আস্তে আস্তে প্রকট আকার ধারন করবে ৷তারপর যে কোনো একদিন জীবন আলো নিভে যাবে ৷ রাইয়ের চোখ থেকে দুফোটা নোনা জল গড়িয়ে পড়ল ৷রাই নিজেকে স্বাভাবিক করলো ৷চোখের পানি মুছে নিল ৷মুখে একটা মিথ্যা হাসি ফুটিয়ে তুলল ৷জীবনের শেষ সময় গুলো সুন্দর ভাবে কাটাবে রাই ৷আবরারকে কিছু বুঝতে দেওয়া যাবে না ৷রাই সব কিছু পরিষ্কার করে বেড়িয়ে এলো ৷রাই বেড়িয়ে আসতে আবরার দৌড়ে রাইয়ের কাছে এসে বলল
কি হয়ে ছিল ৷ঐ ভাবে কেন দৌড়ে গেলে ৷আমার কত চিন্তা হচ্ছিল জানো ৷
রাইয়ের মানুষটাকে সব বলতে ইচ্ছে করছে ৷জরিয়ে ধরে বলতে ইচ্ছে করছে আবরার আমি ভালো নেই ৷আমি আপনার সাথে হাজার বছর বাচতেঁ চাই ৷আমি আপনাকে ছেড়ে কিভাবে থাকবো ৷রাই কিছুই বলতে পারলো না ৷রাই হেসে বলল
আমার আর কি হবে ৷এমন ভাব করছেন যেন দুই দিন পরেই আমি মরে যাব ৷আমার কি যেন হয়েছে ৷
আবরার চিৎকার করে বলল বাজে কথা একদম বলবে না৷ঐ ভাবে কেউ ওয়াসরুমে যায় ৷আমার মনে হয় ভয় করে না ৷আর এক দিন যদি উল্টা পাল্টা কিছু বলো তো ৷আমার থেকে খারাপ আর কেউ হবে না ৷
রাই খাটের ওপর বসে আবরারকে বলল প্লিজ এগুলো একটু গুছাবেন ৷আমার না ভালো লাগছে না একদম ৷ আর কখনো কিছু করতে বলবো না ৷
এই মেয়েকে কিছু বলাই বেকার ৷ আবরার রাইকে আর কিছু না বলে সব গুছাতে লাগল ৷সব গুছিয়ে বিছানাও নিজেই করে নিল ৷রাই বালিশ নিয়ে সোফার দিকে আস্তে আস্তে যাবে এমন সময় আবরার বলল
আজকে থেকে আর তুমি সোফায় ঘুমাবে না ৷বিছানায় শুয়ে পড় ৷
আপনার পাশে আমি ঘুমাব ৷ আপনার অসুবিধা হবে না ৷
বেশি কথা না বলে শুয়ে পড় ৷আজ থেকে আমার পাশে ঘুমাবে ৷কোনো কথা শুনবো না আমি ৷আর যদি সোফায় শুতে যাও ৷তাহলে আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না বলে দিলাম ৷
চলবে….