শ্রাবন আধারে তুমি .
লেখিকা: আফরিন ইসলাম
পার্ট : ১৯
আবরার চোখ থেকে দুই ফোঁটা নোনাজল গড়িয়ে পড়ল ৷যতই রাইয়ের উপর রাগ দেখাক কিন্তু ভালো তো বাসে ৷ সাদি আবরার দিকে কিছু কাগজ এগিয়ে দিয়ে বলল
এগুলো যেই যেই দিন রাই ডাক্তারের কাছে গেছে তার কাগজ ৷তারিখ গুলো দেখলেই বুঝবি ৷রাই ঠিক ঐ দিন গুলোতে কলেজ যায় নি ৷ আর ঐ দিন রাই আমার সাথে দেখা করতে যায় নি বরং ডাক্তারের কাছে গিয়ে ছিল ৷
তুই কিভাবে জানলি রাইয়ের এই অবস্থা ৷আবরার বলল ৷
রাই যেই ডাক্তারের কাছ থেকে চিকিৎসা নিত ৷সে আমার কাছের একজন বান্ধবী প্রিয়ন্তী ৷ঐ দিন রাই যখন ডাক্তারের কাছে যায় ৷আমিও সেই দিন প্রিয়ন্তীর কাছে যাই বিশেষ দরকারে ৷আর সেখানে রাইকে দেখতে পাই ৷তারপর এক এক করে সব জানতে পারি ৷তারপর অনেক জোর করে ওকে পৌছে দিয়ে যাই ৷
তাহলে ঐ দিন যে তোরা একে ওপরকে জরিয়ে ধরে ছিলি ওটা কি ছিল আবরার বলল ৷
রাই নিজের মেডিকেলের কাগজ গুলো নিতে ভুলে গিয়ে ছিল ৷তাই আমি সে গুলো দিতে তোদের বাড়ীর দিকে রওনা দেই আবার ৷কিন্তু তোদের বাড়ীর সামনে এসে দেখি রাই গেটের সামনে বসে কাদঁছে ৷ মেয়েটা বড্ড কষ্ট পেয়ে ছিল ৷তাই কথা বলতে বলতে আমাকে জরিয়ে ধরে ছিল ৷
আবরার নিজের ফুপুর দিকে তাকালো ৷এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো ৷হঠাৎ আবরার ওর ফুপুর দিকে তেড়ে গেল ৷আর গলা টিপে ধরলো ৷আবরার বলতে লাগলো
তোমাকে আমি ছাড়বো না ৷আজ তোমার জন্য আমার জীবনটা শেষ হয়ে গেছে ৷তুমি দিনের পর দিন আমাকে মিথ্যে কথা বলেছো ৷তোমাকে বিশ্বাস করে আমি অনেক বড় ভুল করেছি ৷তুমি কেন আমার জীবনটা নষ্ট করলে ৷তোমাকে তো নিজের মায়ের মতোই আমি ভালোবাসতাম ৷তাহলে কেন ফুপু কেন এমন করলে ৷
আফজাল খান ,মিশকা সবাই এসে আবরারকে আটকালো ৷কারন আর কিছুক্ষন আবরার যদি ওর ফুপুর গলা ধরে রাখে ৷তাহলে সে মারা যাবে ৷
আবরার ফুপু ছাড়া পেতেই কাশতে লাগলো ৷আবরার চিৎকার করে বলল আমাকে ছেড়ে দাও ৷দিনের পর দিন আমাকে এই মহিলা ঠকিয়েছে ৷আমার জীবনটা শেষ করে দিয়েছে ৷শুধু এর জন্য আমি আড়াই বছর ধরে ঠিক মতো ঘুমাই নি ৷আমার সব শেষ করে দিয়েছে এই মহিলা বাবা ৷আবরার হাউমাউ করে কাদঁতে লাগলো ৷আবরার ফ্লোরে বসে কাদঁতে লাগলো ৷ফ্লোরে দুই হাত দিয়ে আঘাত করতে লাগলো ৷
আফজাল খান বোনের কাছে গিয়ে ঠাস করে একটা চড় মারলো ৷তারপর বলল কেন এমন করলি বল ৷ কি এমন করে ছিল আমার ছেলে যার জন্য তাকে এত বড় শাস্তি দিল ৷
রাইয়ের ফুপু এবার চিৎকার করে বলল আমি কি করে ছিলাম ভাইয়া ৷যে তোমরা আমার জীবনটা নষ্ট করে দিয়েছো ৷শুধু তো ভালোই বেসে ছিলাম ৷ তুমি আর বাবা মিলে দ্বীপ কে কেড়ে নাও নি আমার থেকে ৷ তোমাদের জন্য আমার সংসার হয় নি ৷আমি আমার ভালোবাসার মানুষ হারিয়েছি ভাইয়া ৷আমি যখন দ্বীপকে নিয়ে সুখী হতে পারি নি ৷তখন তোমার ছেলে মেয়েরাও পারবে না ৷আমি সুখী হতে দেব না কখনো ৷
বাড়ীর সবাই থমকে গেল ৷আফজাল খান বোনের কাছে যেয়ে বলল তুই আমাকে ভুল বুঝলি বোন ৷কে তোকে বলেছে দ্বীপকে আমরা কেড়ে নিয়েছি তোর থেকে ৷
দ্বীপ নিজে আমাকে বলেছে ৷ শুধু আমার জন্য ও নিজেও এখনো বিয়ে করে নি ৷তোমরা ওকে বল নি আমার জীবন থেকে ওকে সরে যেতে৷নইলে তোমরা ওর পরিবারকে মেরে ফেলবে ৷
আফজাল খান বোনের দিকে তাকিয়ে বললেন ঠিক আছে আজ তোকে সব পরিষ্কার করে বলবো ৷তার আগে দ্বীপ চৌধুরীর সাথে তো কথা বলি ৷
আফজাল খান দ্বীপ চৌধুরীকে কল করলো ৷ আর স্পিকার অন করে দিল ৷কিছুক্ষন পর কল রিসিভ হতেই ওপাশ থেকে একটা ভারী কন্ঠ ভেসে এলো ৷
কি ব্যাপার মিঃ খান ৷হঠাৎ আমাকে কেন কল করলেন ৷কল তো আমি আপনাকে করি প্রতিবার ৷
ছেলে মেয়ে নিয়ে কেমন আছো দ্বীপ ৷
আমি ভালো আছি ৷তারা কিছু দিনের মধ্যেই আসবে বলেছে এই দেশে ৷কিন্তু আপনার বোকা বোনটা তো এর কিছুই জানে না ৷আহারে বেচারী আমার জন্য জীবন যৌবন সব শেষ করলো ৷ কিন্তু আমাকে দেখুন আমি তার গোপনে বিয়ে করে সন্তানের বাবাও হয়ে গেলাম ৷ আর প্রতিমাসে আপনার থেকে বিশ লাখ করে টাকা তো পাচ্ছি ৷টাকা না দিলে কি করবো বলুন তো ৷আপনার বোনকে নিয়ে আসবো ৷তারপর বিদেশে পাচার করে দেব হা হা হা ৷আর আপনার বোনটা মনে করে আমি তাকে কত ভালোবাসি ৷নিজের মা বাবাকে বাচাঁতে তাকে বিয়ে করছি না ৷কিন্তু সে তো আর জানে না আমার মা বাবাই আসলে নেই ৷সব নকল মানুষ ৷কিন্তু দেখুন আপনার আর আপনার বুড়ো বাপটার সাথে চালাকি করে আর পারলাম না ৷বুড়ো টা তো মরেছে ৷আমি যে অনেক মেয়ের সাথে চিট করেছি তা ঠিক জেনে গেলেন ৷ আর টাকার বিনিময়ে নিজের বোনটাকে বাচিঁয়ে রাখলেন ৷ আফজাল খান ফোনটা কেটে দিলেন ৷এতক্ষন সবাই সব কিছু শুনেছে ৷আবরার ফুপুর কাছে এখন সব পরিষ্কার ৷সে ফ্লোরে বসে পড়লো ৷ চোখ দুটো পানিতে ভরে এলো ৷ দ্বীপ তাকে এত বছর ধরে ঠকিয়ে আসছে ৷আর সে বুঝতেই পারলো না ৷
সাদির ফোনে হঠাৎ একটা মেসেজ এলো ৷সাদি ফোনটা অন করতেই দেখলো প্রিয়ন্তীর মেসেজ ৷সাদি মেসেজটা পরে নিল ৷তারপর পেছন দিকে ঘুরে আবার হাটা শুরু করলো গাড়ীর দিকে ৷
আবরার সাদির দিকে তাকিয়ে দেখলো সে খুড়িয়ে খুড়িয়ে হাটছে আর চলে যাচ্ছে ৷ আবরার দৌড়ে গেল সাদির কাছে ৷আবরার দৌড়ে যেয়ে বলল
সাদি ভাই আমার আমাকে একবার রাইয়ের কাছে নিয়ে যাবি তুই ৷একবার নিয়ে চল না প্লিজ ৷
সাদি আবরার দিকে তাকালো না ৷নিজের মতো হেটে চলল ৷
এবার আবরার সাদির দুই পা জরিয়ে ধরলো আর চিৎকার করে কাদঁতে কাদঁতে বলল
আমার মতো পাষান হয়ে যাস না তুই ৷একটু দয়া কর আমার ওপর ৷ আমি আজকের পর আর রাইয়ের কাছে যাব না ৷কথা দিচ্ছি তোকে ৷একটু নিয়ে চল না আমাকে ৷তোর দুটো পায়ে পরি ভাই ৷আমার সব কিছু তুই নিয়ে নে ৷কিন্তু রাইয়ের কাছে একবার নিয়ে চল না সাদি ৷
সাদি আবরার কাছ থেকৈ নিজের পা ছাড়ালো ৷তারপর বলল
রাইয়ের কাছে যেয়ে কি করবি আর ৷ সহ্য করতে পারবি না আবরার ৷ও এখন আর আগের রাই নেই ৷ জীবন মরনের শেষ প্রান্তে মেয়েটা এখন ৷এতক্ষনে সবাই চলে এসেছে ৷সাদি মিশকার দিকে তাকিয়ে বলল জানিস মিশকা বলতো রাইয়ের চুল নাকি অনেক সুন্দর ৷কিন্তু আজ রাইয়ের মাথায় একটা চুল খুজে পাবি না ৷ আন্টি বলতো রাইয়ের চোখে নাকি হাজারো মায়া কিন্তু আজ রাইয়ের চোখের নিচে কালো কুচকুচে হয়ে গেছে ৷ মেয়েটা পরশু রাতে ওয়াসরুমে অঙ্গান হয়ে পরে ছিল ৷মরার মতো নিয়ে গেছি ওকে আমি হাসপাতালে ৷ডাক্তার বলেছে আটচল্লিশ ঘন্টার মধ্যে ঞ্জান না আসলে ওকে মৃত ঘোষনা করবে ৷একটু আগে ঞ্জান ফিরেছে ৷কিন্তু অবস্থা ভালো না ৷প্রিয়ন্তী আমাকে ওর আত্মীয় স্বজনকে ওকে শেষ বারের মতো দেখে আসতে বলেছে ৷আমি ওর বাড়ীতে জানিয়েছি ৷ যদি শেষ বারের মতো দেখতে চাস তাহলে চল তোর রাইকে দেখতে ৷
চলবে……