শ্রাবন আধারে তুমি
লেখিকা:আফরিন ইসলাম
পার্ট :২১
দ্বীপ চৌধুরী যন্ত্রনায় কাতরাচ্ছেন ৷একটু দুরেই আবরার ফুপু রুহানা খান ধারালো ছুড়ি নিয়ে দাড়িয়ে আছে ৷ছুড়িটা রক্তে রঞ্জিত হয়ে আছে ৷ছুড়িটা থেকে টপটপ করে রক্ত পড়ছে ৷ রুহানা খান এগিয়ে আসছে দ্বীপ চৌধুরীর দিকে ৷ দ্বীপের দিকে তাকিয়ে রুহানা খান বলল
কি ভেবে ছিলে তুমি আমাকে ঠকাবে ৷আর আমি জানার পর কিছু বলবো না ৷আমি সবার মতো ওত ভালো নই দ্বীপ ৷
দ্বীপ চৌধুরী দুই হাত জোড় করে নিজের প্রান ভিক্ষে চাইলো ৷
কিছুক্ষন আগে দ্বীপ চৌধুরী তার ফার্ম হাউজে আসে ৷গেটের বাইরে রুহানা খান দাড়ানো ছিল ৷দ্বীপ চৌধুরী গাড়ী থেকে নেমে গেট খুললো ৷তারপর রুহানা খানকে নিয়ে ভেতরে ঢুকে পরে ৷দ্বীপ চৌধুরী কথা বলতে বলতে বাড়ীর ভেতরে ঢুকে গেল ৷ ভেতরে ঢুকতেই নিজের পিঠে তীব্র ব্যাথা অনুভব করেন তিনি ৷রুহানা খান দ্বীপকে কিছু করার সুযোগ না দিয়ে পর পর কয়েকবার ছুড়ি দিয়ে আঘাত করলো ৷
আমাকে কেন মারতে চাইছো রুহানা ৷আমি কি করেছি ৷কেন এমন করছো দ্বীপ চৌধুরী বলল ৷
রুহানা খান দ্বীপ চৌধুরীর গলা চেপে ধরে বলল তুই জানিস না কি করেছিস ৷তুই দিনের পর দিন আমাকে ব্যবহার করেছিস ৷আমাকে ঠকিয়েছিস ৷আমার জীবনটা শেষ করে দিয়েছিস ৷দিনের পর দিন মিথ্যাচার করেছিস ৷তোর জন্য আজ চারটা জীবন আমি শেষ করে দিয়েছি ৷তুই একটা নরখাদক ৷তোর মতো জানোয়ারদের বাচাঁর অধিকার নেই ৷
রুহানা খান কথা গুলো বলে দ্বীপ চৌধুরীর বুকে একের পর এক ছুড়ি দিয়ে আঘাত করতে লাগলো ৷রুহানা খানের কোনো হুশ নেই ৷সে তো একটা বিশ্বাসঘাতক কে শাস্তি দিতে ব্যস্ত ৷একটা সময় রুহানা খান দেখলো দ্বীপ চৌধুরী আর নড়ছে না ৷তার চোখ দুটো স্থির হয়ে আছে ৷রুহানা খান হাতের ছুড়িটা ফেলে দিল ৷তারপর একটা বিকট চিৎকার করে উঠলো ৷চিৎকার করে কাদঁতে কাদঁতে বলল
কেন এমন করলে আমার সাথে দ্বীপ ৷ আমি কি এমন করে ছিলাম ৷ভালোবাসলে এমন শাস্তি কেন পেতে হবে বলতে পারো ৷তোমার এত টাকার লোভ ৷আমাকে বলতে পারতে টাকার কথা ৷কিন্তু তুমি সব শেষ করে দিয়েছো ৷আমি তো খারাপ ছিলাম না ৷তুমি আমায় খারাপ বানিয়েছো ৷আমি তো খুনি ছিলাম না ৷তুমি আমায় খুনি বানিয়েছো ৷ রুহানা খান তার ভালবাসার মানুষটাকে বুকে ধরে চিৎকার করে কাদঁতে লাগলেন ৷তোমায় মুক্তি দিলাম এই পাপের দুনিয়া থেকে দ্বীপ ৷ভালো থেকো ঐ পাড়ে ৷
অপর দিকে রাই আবরার বুকে শুয়ে আছে ৷দুজনেই কাদঁছে ৷আবরার কান্নায় শব্দ হলেও রাই নিঃশব্দে কাদঁছে ৷রাই কাদতে কাদঁতে বলল
আবরার এটা কিন্তু আমাদের প্রথম আর শেষ আলিঙ্গন ৷এর পর আর এই পাড়ে আলিঙ্গন হবে না ৷আবরার নিজের হাতের বাধঁন শক্ত করে নিল ৷তারপর বলল আমি তোমার কিছু হতে দেব না ৷ তুমি কেন আমায় বললে না রাই ৷এতটা অমানুষ আমাকে কিভাবে ভাবলে তুমি ৷
রাই মুচকি হেসে বলল
তোমায় হৃদমাঝারে রাখবো
ছেড়ে দেব না ৷
তোমায় বক্ষ মাঝে রাখবো
ছেড়ে দেব না ৷
ওরে ছেড়ে দিলে সোনার গৌর
আর পাবে না
ক্ষেপা ছেড়ে দিলে সোনার গৌর আর পাবে না না না না…
ছেড়ে দেবনা ৷
রাই থামলো ৷তারপর বলল আমায় কিছু সময়ের জন্য নিজের সাথে মিশিয়ে নিন আবরার ৷কারন তারপর আর সুযোগ পাবেন না ৷ আমি আর আমার ভালোবাসা তারপর পর মাটির তলায় বন্দি হয়ে যাবো ৷ জানেন আবরার আপনার থেকে আমার আরো একটা শেষ আবদার আছে ৷ আপনার মনে আছে আমাকে দেওয়া আপনার প্রথম উপহারের কথা ৷ঐ শাড়ী , গহনা যদি আপনি আপনার দ্বিতীয় বউকে দেন তাহলে আমি বড্ড কষ্ট পবো আবরার ৷ঐ গুলো যেন ওভাবেই থাকে ৷কারন আপনাম প্রথম সব জিনিসেই আমার অধিকার ৷আপনার প্রথম চুমু আর আলিঙ্গনের মালিকও কিন্তু আমি ৷ তবে একটাই দুঃখ আপনার প্রথম সন্তানের মা হতে পারলাম না ৷ জানেন আপনার গাড়ি দূর্ঘটনায় যত কষ্ট পেয়েছি ৷তার থেকেও বেশি তৃপ্তি পেয়েছি ৷কেন জানেন আবরার ৷আমি সব সময় আপনার সাথে থাকতে পেরেছি ৷আপনাকে ছুতে পেরেছি ৷
রাই একটু থেমে বলল আবরার দয়া করে আমার শেষ বিদায়ের সাজটায় যেন কোনো কমতি না থাকে ৷মনের মতো বউ তো আর সাজা হলোনা ৷ কিন্তু কাফনের সাদা সাজে যেন কমতি না থাকে ৷ অনেক দিন বাচাঁর ইচ্ছে ছিল ৷কিন্তু মরন ব্যধি রোগ সব শেষ করে দিল ৷ আমার লাশটা বেশিক্ষন মাটির ওপর রাখবেন না আবরার ৷আমার লাশটা সহ্য করতে পারবে না ৷এক জীবনে কত আঘাত নেওয়া যায় বলুন তো ৷মায়ের মৃত্যু ,বাবার অবহেলা , সৎ মায়ের অত্যাচার ,মিথ্যা অপবাদ , আপনজনদের ভুল বোঝা ,স্বামীর অবহেলা ,আর শেষে এই মরন যন্ত্রনা ৷ আমার বদ্ধ চোখের কষ্ট গুলো চাপা দেওয়াই থাক ৷ আপনার জন্য ঐপাড়ে অপেক্ষায় থাকবো ৷জানি না এবারের অপেক্ষা কতটা দীর্ঘ হবে ৷তবে দেখা হবে জান্নাতে বাগীচায় ৷আপনার আলিঙ্গনের অপেক্ষায় থাকবো ৷সময় হলে না হয় চলে আসবেন ৷ এই দুনিয়ায় আপনাকে পাওয়া হলো না কিন্তু ঐ দুনিয়ায় আমার খোদা আমাকে ফিরিয়ে দেবে না ৷ রাইয়ের নিঃশ্বাস ভারী হয়ে গেল ৷রাই আর বলতে পারছে না ৷রাইয়ের গলা বন্ধ হয়ে গেছে ৷রাই অনেক কষ্টে বলল আমার বক্ষ পিঞ্জিরার পাখিটা যাওয়ার সময় হয়ে গেছে আবরার ৷বিদায় নিচ্ছি ৷আপনার নতুন জীবনের শুভ কামনা রইলো ৷
আবরার চিৎকার করে উঠলো এই না ৷রাই এমন করিস না আমার সাথে ৷এই ডাক্তার আমার রাইকে দেখ না ৷আমার রাই কথা বলছে না ৷আবরার রাইকে বুকে ধরে চিৎকার করতে লাগলো ৷এই আল্লাহ আমার সাথে এমন করো না ৷আল্লাহ আমি সহ্য করতে পারবো না ৷ এই রাই এইইইইই…..এই রাই কথা বল ৷রাইয়ের হাত পা কাপছেঁ ৷ডাক্তাররা দৌড়ে এসেছে ৷ রাইয়ের চোখ উল্টে গেছে ৷ নাক মুখ থেকে সাদা ফেনার সাথে বেড়িয়ে এলো রক্ত ধারা ৷আবরার রাইকে বুকের সাথে চেপে ধরে বলল
আমাকে এভাবে শাস্তি দিস না তুই ৷ তুই যা বলবি সব করবো আমি ৷ মা বাবা আমার রাইকে বাচাঁও ৷ও আল্লাহ আমি এখন কি করবো ৷
রাইয়ের কাপঁতে থাকা শরীরটা থেমে গেল ৷নিথর হয়েই আবরার কোলে পরে রইলো ৷ মনিটরের উঠা নামা করা সবুজ দাগটা সমান হয়ে গেছে ৷ডাক্তার রাইয়ের হাতের কবজি ধরে পালস চেক করলেন ৷তারপর রাইয়ের নিশ্চুপ চোখ দুটো বন্ধ করে দিলেন ৷চোখের কোন বেয়ে দুই ফোটা জল গড়িয়ে পড়লো রাইয়ের ৷
আবরার উঠে ডাক্তারের কাছে গেল ৷তারপর বলল এই ডাক্তার তুই আমার রাইয়ের চিকিৎসা না করে দাড়িয়ে আছিস কেন ৷তোদের মনিটর থেমে আছে কেন ৷এই আমার রাইকে বাচাঁ না তোরা ৷আবরার কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো ৷ডাক্তারের পা জরিয়ে ফ্লোরে বসে পড়লো আবরার ৷
(পাঠক পাঠিকাদের উদ্দেশ্যে বলবো আপনাদের কারো কোনো অভিযোগ থাকলে বলবেন ৷আমি কাল একটা বেলী ফুলের মালা গল্পটা শেষ করবো ৷আপনাদের সামনে আর কোনো গল্প দিতে পারবো কি না জানি না ৷তবে আমি চেষ্টা করবো ৷আজকের পার্টটা কেমন লেগেছে জানাবেন ৷আর হ্যা গল্প যেমনই হোক না কেন ৷গল্প পড়ে যদি পাঠকের চোখ থেকে পানি না পরে তাহলে তা কোনো গল্প নয় ৷ আশা করি বুঝতে পেরেছেন ৷বাস্তবতা গল্পের মতো সুন্দর না ৷ তাই কেউ আমায় ভুল বুঝবেন না ৷)
চলবে …..