ভোর ৬.৩০ এর মতো হবে, কাউন্টারের বাইরে একটা রিক্সা দাঁড়িয়ে আছে। রিক্সা ওয়ালা সিটে বসে আরাম করে চা খাচ্ছে আর এক হাতে একটা পান ধরে বসে আছে।
আমিঃ মামা যাবেন?
রিক্সাওয়ালাঃ এতো আয়েশ করে যে চা খাচ্ছিলো সে ওই গরম চা টুপ করে পানির মত দুই / তিন ঢোকে গিলে পানটা মুখে পুরেই…. কই যাবেন?
কই যাবো, ভাড়া কত, সব শেষ করে রিক্সায় উঠলাম
মাত্র আর ওমনি পান খাওয়া দাঁতের হাসি দিতে দিতে রিক্সাওয়ালা আমাকে বলে “মামা ১০ টাকা বাড়ায় দিয়েন”।
রিক্সা যেভাবে চলছে বেশ ভালোই লাগছে। রাস্তা একবারে খালি বলা যায়। আবার মোবাইলটা নিজের মনে করে কেউ নিয়ে যায় কিনা এই ভেবে ছবি তুলবার জন্য বেরও করতে পারছিনা।
রিক্সাওয়ালা ঃ মামা কি টুরে গেছিলেন?
আমিঃ না মামা কিছু কাজ ছিল এই জন্য গেছিলাম।
রিক্সাওয়ালা ঃ ভোরবেলা অনেক আপা ভাইয়া এমন টুর থেকে আসে তাই কইলাম। আমিও যাই ঘুরতে খুব ভালো লাগে। আমার কক্সবাজার সবচেয়ে ভালো লাগে। এবার গেছিলাম ৫০০০ টাকা দিয়ে ঘুরে আইছি বুজলেন মামা।
আমিঃ বাহ। বেশ ইন্টারেস্টিং মামা। আর কই কই গেছেন?
রিক্সাওয়ালা ঃ মামা খালি ফরিদপুরটা বাকী আর সব জায়গায় গেছি। সামনের মাসে যাবো ফফরিদপুর। ৩০০০ টাকা লাগবে টাকা জমে যাবে সামনের মাসে। এই রুটে আমার কোন ড্রাইভার বন্ধু নাই তাই যাওয়া হয় নাই। আমার এক বন্ধু আছে ছোডকালের বন্ধু সে কক্সবাজারের গাড়ি চালায়। সে আমারে প্রতি বছর কক্সবাজার নিয়ে যায়। ইঞ্জিনকভারে বসে মিন্টুর লগে গল্প করতে করতে চলে যাই।
আমিঃ দারুন মামা। তোহ কেমন লাগলো দেশ ঘুরতে?
রিক্সাওয়ালা ঃ মামা ঘোরতে আমার খুব ভালো লাগে। এতো সুন্দর দুনিয়া না দেখে মইরা গেলে আফসোস। ইন্ডিয়াও দেখছি মামা। পঞ্চগড় গেছিলাম শীতে ইন্ডিয়ার কি একটা পাহাড় আছে ওইটা দেখছি।
আমিঃ কাঞ্চনজঙ্ঘা নাকি নাম?
রিক্সাওয়ালা ঃ হ হ মামা। নামডা একটু জটিল মনে থাকে না।
আমিঃ মামীকে নিয়ে যান না?
রিক্সাওয়ালাঃ নিছি মামা। বিয়ের বছর কক্সবাজার, রাংগামাটি,বান্দরবান, খাগড়াছড়ি নিছি। দুইজন মিলে ১০ দিন ঘুরছি। ১৫ হাজার টাকা নিয়ে গেছিলাম। বউরে কইছিলাম তোমারে ঘুরতে নিয়ে জামু আর কিছু দিতে পারমু না। সেও রাজি ছিলো। তারপর আস্তে আস্তে গলার, কানের কইরা দিসি এখন। এহন হের সব আছে।
আমিঃ বাহ মাম দারুন। আপনিতো মামা বিন্দাস মানুষ। মামীকে নিয়ে যাবেন সব জায়গায়।
রিক্সাওয়ালা ঃ আমি নিতে চায় হেয় পারে না। বমি করে বাসে উঠলেই। তাই যাইতে চায় না। আর এহন পোলা মাইয়া নিয়ে যাইবার চায় না। তয় ইন্ডিয়া যামু দুইজন প্লেনে কইরা। বাচ্চাগো ওর নানীগো বাড়ী দিয়া যামু।
আমিঃ মামা বাসে ট্রেনে ও যাওয়া যায় খরচ কম হবে।
রিক্সাওয়ালা ঃ না মামা আমাগো দুইজনের প্লেনে ওঠার খুব ইচ্ছা। অনেক টেকা লাগবো তাই পারতাছি না। ইন শা আল্লাহ একদিন জামু দুইজন।
আমিঃ মামাতো মনে হয় মামীকে আগে থেকেই চিনতেন এতো ভালোবাসেন মামীকে..
রিক্সাওয়ালা ঃ না মামা। আমার জেঠা ঠিক করছিলো বিয়ে। কিন্তু আপনার মামীরে আমি খুব ভালোবাসি। আমার কোন কাজ নিয়ে না করে না। এই যে কয়দিন আগে কক্সবাজার গেছিলাম। শুটকি আনছি,আচার আনছি, ঝিনুকের মালা আনছি মা আর মেয়ের জন্য। সে খুব খুশি হইছে।
আমি আমার বাসার গেটে আরো মিনিট দশেক আগেই পৌছে গেছি। কিন্তু মামার এতো সুখের গল্পটা মাঝপথে ভেঙে দিতে ইচ্ছে করছিলো না। তাই রিক্সায় বসেই শুনছিলাম।
আমি ঃমামা আল্লাহ ইন শা আল্লাহ আপনাদের প্লেনে ওঠার ইচ্ছাও আল্লাহ পূরণ করে দিবেন।
রিক্সাওয়ালা ঃ মামা প্লেনে করে দিল্লি যামু। তারপর বাসে যামু কাস্মীর। আমি ইউটিউবে অনেক ভিডিও দেখছি। খুব সুন্দর জায়গা।
আমিঃ জি মামা। খুব সুন্দর জায়গা।
গেট দিয়ে ঢুকতে গিয়েও আবার বের হলাম। রিক্সাওয়ালা রিক্সাটা ঘুরিয়ে রিক্সায় উঠেছে আমি ডেকে বললাম মামা আপনি কি জানেন আপনি একজন সুখি মানুষ। রিক্সাওয়ালা রিক্সা থামায় পানখাওয়া দাঁত বের করে বললো মামা আপনের সাথে কথা কইয়া খুব আনন্দ পাইছি। কিছু মনে নিয়েন না আপনেও পারলে ঘুইরেন মনে বড় শান্তি লাগে দেখবেন।
আমিঃ জি মামা মনে রাখবো কথাটা। ভালো থাকবেন আল্লাহ হাফেজ।
#সুন্দর সকাল ( ২)