#সত্য_ঘটনা_অবলম্বনে
#উল্টোকরন_যাদু
আমাদের পরিবারে আমি (শিপন), মা-বাবা আর একমাত্র আদরের ছোট বোন মোস্কান। বোনটা আমার সেই ছোটবেলা থেকেই বেশ চঞ্চল টাইপের। সবসময় কিছুনা কিছু করতেই থাকবে। তবে সে খুব ভদ্র নম্র এবং গোছানো স্বভাবের। আস্তে আস্তে সে বড় হতে থাকলো। দেখতে দেখতে সে আঠার বছরের যুবতী। দেখতে পুরোপুরি পরীর মত সুন্দরী। সাত গ্রামের সকলে তার রূপ নিয়ে প্রশংসা করে। বোনের বিয়ের প্রস্তাব আসতে থাকে। প্রথম প্রস্তাব আসলো নিজেদের আত্মীয় থেকে। সম্পর্কে তারা আমাদের দুঃসম্পর্কের চাচা হয়।
চাচার ছেলের সাথে আমার বোনের বিয়ের প্রস্তাব আসলো। আত্মীয় সম্পর্কের মধ্যে বিয়ে দিব না এমন সংকল্প করে রেখেছিল আমার মা। তাই প্রস্তাবে রাজি হলো না। দুঃসম্পর্কের চাচা আমার মাকে রাজি করানোর অনেক চেষ্টা করলেন। কিন্তু মা তো নাছোড় বান্দা যে কোন আত্মীয়ের মধ্যে বিয়ে দিবে না তো দিবেই না। এক প্রকার ক্ষোভ আর রাগ নিয়ে আমার দুঃসম্পর্কের চাচা আমাদের বাসা থেকে বেরিয়ে গেল। চাচা বাসা থেকে থেকে রাগে ও অভিমানে বের হয়ে যাওয়ার চার মাস পর থেকে আসল ঘটনা শুরু।
সবসময় হাসিখুশি থাকা বোনটা আমার হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে পড়লো। খাওয়ার রুচি কমে যাওয়া, বমি বমি ভাব, খাবার ঠিকমতো হজম না হওয়া, শরীর সবসময় দুর্বল থাকা, মাথা ঘুরানো, দিন দিন চিকন হয়ে যাওয়া, ইত্যাদি ইত্যাদি লক্ষণ গুলো দেখা দিতে লাগল।
অনেক ডাক্তার পরীক্ষা নিরীক্ষা করেও কোন রোগ পাওয়া গেল না। গভীর রাতে একা একা কি যেন বিড়বিড় করে। তখন এই মোস্কান কি বলছিস এগুলো বলে ধাক্কা দিলেই ঠিক হয়ে যেত। আর সাথে সাথেই অজ্ঞান হয়ে যেত। গভীর রাতে একা বাসা থেকে বের হয়ে বড়ই গাছের নিচে বসে থাকতো। বাসার সবাই তখন চিন্তায় পড়ে গেল। হাসিখুশি চঞ্চল একটা মেয়ে এখন সবসময় মন মরা হয়ে থাকে। কারো সাথে মিশে না। বাধ্য হয়ে গেলাম এক নামকরা কবিরাজের কাছে। ভালো কোন হুজুর বা ডাক্তারের কাছে না গিয়ে গেলাম এক কবিরাজের কাছে। আমাদের সবার মাঝে একটাই ধারণা যে মোস্কানকে বোধহয় জীন ভর করেছে। তাই একপ্রকার বাধ্য হয়েই কবিরাজের কাছে বোনকে নিয়ে গেলাম। মোস্কান তো যেতেই চাচ্ছিল না। একপর্যায়ে ওকে দোয়া দরুদ পড়ে ফুঁ দিয়ে শান্ত করে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিলাম।
যে গ্রামের কবিরাজের কাছে গেলাম সে গ্রামে কবিরাজের অনেক নাম ডাক। সেই কবিরাজের হাত থেকে আজ পর্যন্ত নাকি কোন বদজীন নিস্তার পায়নি। কবিরাজের কাছে অনেক বতলবন্দী জীন আছে। কবিরাজ নাকি জীন পালন করে। এবং কবিরাজ যে টিনের ঘরে থাকে সে ঘরের মাটির নিচে অনেক কংকাল পাওয়া গেছে। যখন কবিরাজ ওনার ঘরের কাজ শুরু করতে যান তখন তিনি মাটি খুঁড়ে গুনে গুনে ২৬টি কংকাল পান। কার কংকাল কাদের কংকাল এসবের হদিস নেই। কবিরাজ এসব কংকাল গুলো তার যাদুর কাজে ব্যবহার করতে শুরু করে। যদিও এসব লোকমুখে শোনা।
তারপর ঘটনায় আসি,,,
বোনকে নিয়ে কবিরাজের কাছে গেলাম। কবিরাজের ঘরে অনেক লোকের ভিড়। আর হ্যাঁ সন্ধ্যার পরে কবিরাজের বাসায় গিয়েছিলাম। কারণ সন্ধ্যার পর কবিরাজ তার আসর বসায়। প্রচুর লোকসমাগম। কবিরাজের ঘর বলতে গেলে পুরো হাউজফুল। পুরো ঘর অন্ধকার। চারিদিকে শুধু মোমবাতি আর মোমবাতি। সিরিয়াল অনুযায়ী যে যার সমস্যা কবিরাজকে বলছে আর সমস্যার সমাধান নিচ্ছে। কবিরাজ তার কাজের বিনিময়ে একটা আস্ত গরু, একহালি মুরগি, সাত নদীর পানি ইত্যাদি এসব লোকদের কাছে চাচ্ছে। আস্তে আস্তে লোক কমছে। আমাদের আসতে দেরি হয়ে গিয়েছিল বলে আমাদের সিরিয়াল নাম্বার সবার শেষে ছিল। অনেকক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়েছিলো। অপেক্ষা করার সময় অনেক খারাপ লাগছিল ছোট বোনটার জন্য। কি মেয়ে কি হয়েগেল। যে মেয়ে সবসময় আমাদের পুরো বাসা মাতিয়ে রাখতো আজ সেই মেয়ে নিস্তব্ধ চুপচাপ। সাথে ভয়ও করছিল এটা ভেবে যে কবিরাজের কাছে ছোট বোনকে নিয়ে এসে কি ভুল করলাম। আমার মন বলছিল এই কবিরাজের কাছ থেকে দূরে নিয়ে গিয়ে ভালো কোন আলেম বা হুজুরকে দিয়ে আমার বোনকে চিকিৎসা করাই। কিন্তু আমার মা তো অনেক জেদি। সে তার মেয়েকে এই কবিরাজকেই দেখাবে। এই কবিরাজের কাছ থেকেই চিকিৎসা নেওয়াবে।
– আপনার কি সমস্যা?
জিজ্ঞেস করলো কবিরাজ। কবিরাজের কথা শুনে আমার চিন্তার ঘোর কেটে গেল। চারিদিকে তাকিয়ে দেখলাম যে ঘরে এতো লোকজন ছিল তা আর এখন নেই শুধু আমরা ছাড়া। পুরো ঘর ফাঁকা। শুধু আমরা কয়জন। ঘরের দরজাও লাগানো। তা দেখে আমি অবাক হলাম। দরজা লাগানো কেন! এতক্ষণ তো দরজা খোলাই ছিল। মানুষজন তাদের নিজ নিজ সমস্যার সমাধান নিয়ে বের হয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু শুধু আমরা আছি আর দরজা বন্ধ। এমন সময় কবিরাজ আমাকে বলল, শিপন ভয় পেওনা শান্ত হও। কবিরাজের কথা শুনে আমার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়লো। কবিরাজ আমার নাম জানলো কি করে!? আমি অবাক হয়ে মায়ের দিকে তাকালাম। মা বিষয়টা নোটিস করলো না। আমি কবিরাজ থেকে বেশ দূরে বসেছিলাম। মা কবিরাজের আরো কাছে গিয়ে ছোট বোনের সব ঘটনা কবিরাজকে খুলে বলল। একেবারে এ টু জেড। সব ঘটনা কবিরাজকে বলা হলো। ঘটনা বলার পর মা কবিরাজকে বলল, আমার মনে হয় আমার মেয়েকে কোনো বদজীন ধরেছে।
যেহেতু মেয়ে অনেক সুন্দরী আর চুলগুলো সবসময় খোলা রেখে ঘুরে বেড়ায়। মায়ের কথা শুনে কবিরাজ হেসে দিল। সে কি হাসি। আমার দেখে মনে হচ্ছে কোনো শয়তান হাসছে। কবিরাজ দেখতেও অনেক বিশ্রী। কোঁকড়ানো কোঁকড়ানো চুল। কবিরাজের হাসি দেখে আমার প্রচন্ড রাগ হচ্ছিল। আমাদের সমস্যা শুনে হাসার কি হলো। এসব ঘটনা আসলে যার সাথে ঘটে সেই বুঝে কেমন লাগে।
অতঃপর কবিরাজ হাসি থামিয়ে কবিরাজের সামনে থাকা ৬টি জলন্ত মোমবাতি থেকে একটি মোমবাতি নিভিয়ে বিজোড় সংখ্যা ৫টি মোমবাতি জ্বালিয়ে রাখলো। তারপর তার হাত দুটো সামনে এনে হাতের আঙ্গুল গুলো মোমবাতির আগুনে রেখে কি যেন মনে মনে পড়া শুরু করলো। মিনিট পাঁচেক এমন বিড়বিড় করে পড়া চলল। পাঁচ মিনিট পরে কবিরাজের হাত কাঁপা শুরু করলো। দেখলাম বাম হাত কাঁপছে আর ডান হাত স্থির। তো কবিরাজ মাকে বলতে লাগলো –
তোর মেয়েকে কোনো জীনে ধরে নাই। বরং ওকে কালা যাদু করা হয়েছে। আর যাদুটা করার জন্য তোর মেয়ের চুল ছবি তিন মাস ব্যবহার করা তোর মেয়ের উড়না ব্যবহার করা হয়েছে। আর যাদুটা বাস্তবায়ন করার জন্য একটা কাকাতুয়া পাখি ব্যবহার করা হয়েছে। একটা কাকাতুয়া পাখিকে খাঁচায় বন্দী করে সেই পাখির গলায় শক্ত করে একটা তাবিজ বেঁধে দেয়া হয়েছে। যার ফলে পাখিটি কিছু খেতে পারে না। আর যেটার প্রভাব গিয়ে পড়ে তোর মেয়ের উপর। তোর মেয়ে খেতে পারে না। খেলে বমি হয় বদহজম হয়। এছাড়াও পাখিটার উপর আরো অনেক অত্যাচার করা হয়। পাখির খাঁচায় নিচে আগুনের তাপ দেয়া হয় যাতে পাখিটি ছটফট করতে থাকে। পাখির পাখনায় আগুনের ছ্যাঁকা দেয়া হয়। আর এর প্রভাব যখন তোর মেয়ের উপর পড়ে তোর মেয়েও ছটপট করতে থাকে। তার ঘর থেকে বের হয়ে যায়। পাখিটি দিন দিন দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। তাই তোর মেয়েও দিন দিন দুর্বল আর চিকন হয়ে যাচ্ছে। পাখিটি মারা গেলে তোর মেয়েও মারা যাবে। যাদু মূলতঃ মাছ পুতুল দিয়ে করা হয়। কিন্তু এটা একটু ব্যতিক্রম ভাবে কাকাতুয়া পাখির উপর করা হয়েছে। আর যাদুটা অনেক শক্তিশালী। যাদুটা করার আগে একটা শিশু বাচ্চা বলি দেয়া হয়েছে। এবং যে যাদুটা করিয়েছে সে চায় না তোর মেয়ে কোনভাবে এ দুনিয়ায় বেঁচে থাকুক। এটুকু বলার পর কবিরাজ থামলো।
প্রথম অংশ
(চলবে)
#Imran_Khan_Ratan_ACMA
#সত্য_ঘটনা_অবলম্বনে
#উল্টোকরন_যাদু
দ্বিতীয় অংশ
কবিরাজের কথাগুলো তীরের মত আমার বুকে বিঁধছিল। বুকের ভেতর এক অজানা চাপ অনুভব হচ্ছিলো। কবিরাজের কথা বিশ্বাস হচ্ছিল না। আবার বিশ্বাস না করে কোনো উপায়ও ছিল না। কারণ কবিরাজ যেভাবে ধাপে ধাপে সব বর্ণনা দিল তাতে সব সত্যই মনে হলো। এবার আমি আর চুপচাপ বসে থাকতে পারলাম না। রেগে গিয়ে কবিরাজকে সব অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে লাগলাম। কবিরাজের বাচ্চা তুই কি বলছিস সব আবল তাবল? আমার বোনকে বদজীনে ধরেছে আর তুই টাকা খাওয়ার ধান্দায় আমাদেরকে নয় ছয় বুঝাচ্ছিস? বেটা পাজি ইতর ধান্দাবাজ , এক থাপ্পড় মেরে…….. ইত্যাদি ইত্যাদি।
আমার মা উঠে এসে আমাকে ধমক দিয়ে চুপ থাকতে বলল। কবিরাজ আমার কথা শুনে আরো জোরে জোরে হাসতে লাগলো। একপর্যায়ে হাসি থামিয়ে বলল, আরে তুই কি বুঝবি আমার ক্ষমতা। আমি যদি ভন্ড হতাম তাহলে তোর নামই জানতাম না। তুই কি তোর নাম আমাকে বলেছিস? না, বলিসনি। তারপরও আমি তোর নাম জানি। তোর বন্ধু কয়টা, তোর জীবনের সব কাহিনী জানি।
কবিরাজের কথা শুনে আমি হা হয়ে বসে আছি। কবিরাজকে আমি কখনো আমার নাম বলিনি। তারপরও সে আমার নাম জানে। শুধু নাম না, সে প্রায় সবই জানে। এখানে একটা কথা বলে রাখি। আমার তন্ত্র মন্ত্র কালা যাদু সম্পর্কে কোন ধারণা ছিল না। এসবের ধারণা পরবর্তীতে হয়েছে।
যাইহোক, আবার ঘটনায় ফিরে আসি। আমার তখন মন বলছিল এক কবিরাজ আসলে ভন্ড। আর ব্রেন বলছিল না এ কবিরাজ আসল। ভন্ড না। এবার আমি চুপ করে বসে রইলাম। বসে চিন্তা করলাম। চিন্তা একটাই নিষ্পাপ মেয়ের শত্রু তো থাকার কথা না। তাহলে কে আমার বোনকে যাদু করলো আর কেনই বা করলো? আমার বোনকে যাদু করে মেরে তার কি লাভ? এমন সময় মা কেঁদে দিল কবিরাজের সামনে। কেঁদে কেঁদে কবিরাজকে বলল, আমার একটাই মেয়ে, ওর বয়স এখন কম, ওর সামনে পুরো জীবন পড়ে আছে এমন অকালে যদি মেয়েটার মৃত্যু হয় তাহলে আমরা কেউ তা সহ্য করতে পারব না। তা আমার একটা জিনিস বারবার খটকা লাগছিল যে কবিরাজ এমনভাবে যাদুর বিবরণ দিয়েছেন তাতে মনে হচ্ছে যাদুটা সে নিজেই করেছে বা কেউ তাকে দিয়ে করিয়েছে। কারণ মাত্র পাঁচ মিনিট ভিড় ভিড় করে মন্ত্র পড়ে এতসব গভীর তত্ত্ব কবিরাজের পক্ষে বলা সম্ভব না। একমাত্র যদি কবিরাজ নিজেই যাদুটা করে তাহলেই এত সুন্দর নিখুঁত করে বিবরণ দেয়া সম্ভব। আমার মা তো পুরো কেঁদে কেটে হার্টফেল হওয়ার দশা। কবিরাজ মাকে নিশ্চয়তা দিয়ে বলল সে নিজেই এ যাদু কাটাবে। তবে এ যাদু কাটানো অতো সহজ নয়। অনেক কিছু ত্যাগ করতে হবে। কবিরাজ যখন মাকে এসব বলছিল তখন এই সুযোগে আমি কবিরাজের সামনে এসে বসলাম। আমার সামনে এসে বসা দেখে মা একটু নড়ে চড়ে বসলো। মা মনে করছিল আমি কবিরাজের সাথে ঝগড়া করব। তাই মা আমার হাত ধরে রাখলো। আমি ইশারায় মাকে আশ্বস্ত করলাম কোন ঝামেলা করব না। তারপর কবিরাজকে জিজ্ঞেস করলাম, আপনি আমার নামটা জানলেন কি করে? কবিরাজ উত্তরে বলল, তা জেনে তোর লাভ কি? তার থেকে বরং তোর ছোট বোনের সমস্যা সমাধানের বিষয়ে চিন্তা কর। আমি বললাম না আমি জানতে চাই। আপনি আমার নাম জানলেন কিভাবে? অনেক জোরাজুরি করার ফলে কবিরাজ বলতে রাজি হল। কবিরাজ বলল, শোন আমার বাসার নিচে যে সকল কংকাল পাওয়া গিয়েছিল সেসবের কয়েকটা কংকালের কারিন জীন আমার কাছে বন্দি। প্রতিটা কংকালের হাড় আমার যাদুর কাজে আমি উৎসর্গ করি। সাধারণ জীন যেকোনো কবিরাজ পালন করতে পারে। কিন্তু কারিন জীন পালন করা অতো সহজ না। প্রত্যেকটি মানুষের সাথে এক একটি কারিন জীন থাকে। তোর সাথেও কারিন জীন আছে। তুই যখন আমার বাসায় পা ফেলেছিস তখনই আমার কারিন জীন তোর কারিন জীনের সাথে যোগাযোগ করে। সাথে সাথে তোর সব তথ্য কারিন জীনের মাধ্যমে আমার কাছে চলে এসেছে। শুধু তুই না, তোর সাথে যারা যারা আসছে তোর মা এবং তোর বোন সবার সব তথ্য আমার হাতে। এক কারিন জীন আরেক কারিন জীনকে সহায়তা করবে এটাই স্বাভাবিক। কারণ শয়তান শয়তানকে ভাই ভাইকে সহযোগিতা করে। আমি এসব বলছি কারন তুই যাতে আমার শক্তি সম্পর্কে বুঝতে পারিস। আমাকে ভন্ড বলেছিলি। এবার বুঝবি আমার ক্ষমতা। আমি বললাম, তাহলে আপনি শয়তানের অনুসারী। আপনি শয়তানের পূজা করেন।
এসব জিজ্ঞাসা করাতে কবিরাজ একটু ভয় পেয়ে গেল। সে একটু নড়ে চড়ে বসে কথা কাটিয়ে বলল, আমি কার পূজা করি না করি সেটা তোর বুঝার বিষয় না। তোর বোনের সমস্যা সমাধান চাস কিনা সেটা বল? এর বেশি কৈফিয়ত তোকে কেন দিব? তুই কে?
আমি বললাম, আমার বোনকে শয়তানের পূজারীর কাছ থেকে চিকিৎসা নেওয়াবো না। এই বলে ছোট বোনটার দিকে তাকালাম। বোনের হাত ধরে টান দিয়ে বসা থেকে উঠালাম নিয়ে যাওয়ার জন্য। ঠিক তখনই আমার বোন আমায় ধাক্কা দিল আস্তে কিন্তু পড়লাম গিয়ে দশহাত দূরে। একজন সাধারণ মানুষের শরীরে এতো শক্তি আসতে পারে না। এবার কবিরাজ তার বিকৃত অট্টহাসি দিয়ে ফেটে পড়ল। সে এক গগনবিদারী হাসি। হাসি থামিয়ে বলল, কি চিকিৎসা আমাকে দিয়ে করাবি নাকি অন্য জায়গায় নিবি? একে দুনিয়ার কোন কবিরাজ ভালো করতে পারবে না। শুধু আমি ছাড়া।
আমার মা ওও অনেক জোর করে এই কবিরাজের কাছ থেকে চিকিৎসা নেয়ার কথা বলল। এবং মা একেবারে শক্ত হয়ে সংকল্প নিয়েই বসে পড়লো যে যাই কিছু হোক সে তার মেয়েকে এই কবিরাজের কাছ থেকেই চিকিৎসা করাবে। তাতে হোক কবিরাজ শয়তানের পূজারী। মায়ের জিদের কাছে আমাদের পরিবার প্রায়ই হেরে যায়। আজও হেরে গেলাম। কবিরাজের প্রতি তীব্র ঘৃণা আর রাগ হয়ে তার দিকে তাকাচ্ছিলাম এমন সময় আমার বোন হঠাৎ করে দাঁড়িয়ে গেল। কবিরাজের বাসায় দরজা লাগানো। মোস্কান দরজায় এক লাথি দিয়ে দরজা ভেঙে ফেললো। এমন সময় কবিরাজ বলল ওকে ধরেন সবাই ও এখান থেকে পালাতে চাচ্ছে। তাড়াতাড়ি ধরেন। ঘরের দরজা ভাঙায় সাথে সাথেই জলন্ত মোমবাতি সব নিভে গেল। পুরো ঘর অন্ধকার হয়ে গেল। কিছুই দেখা যাচ্ছিল না। অথচ বাহির থেকে বিন্দু পরিমাণ বাতাস আসছিল না। তাহলে মোমবাতি কিভাবে নিভলো? এদিকে পুরো ঘর অন্ধকার। কিছুই দেখা যাচ্ছিল না। মোস্কানকে ধরতে হবে এটা ভেবেই অন্ধকারের মধ্যে দিলাম দৌড়। মোস্কান ততক্ষণে ঘরের বাহিরে চলে গিয়েছে। আন্দাজে অন্ধকারকে ভেদ করে কোনরকম ঘর থেকে বের হলাম। চারিদিকে তাকালাম দেখলাম মোস্কান উত্তরের দিকে দৌড়ে চলে যাচ্ছে। আমি সাতপাঁচ না ভেবে ছুটলাম মোস্কানের পিছনে। উত্তরের দিকে যতটুকু জানি একটা পুরনো খাল আছে। খালটা পরিত্যক্ত। কবিরাজের বাসায় আসার আগে লোকমুখে খালটার অতীত শুনেছিলাম। মুক্তি যুদ্ধের সময় অনেক মানুষকে গুলি করে পাকিস্তানি সেনারা এই খালে ফেলে যায়। অসংখ্য মানুষের লাশ পাওয়া গিয়েছিল এই খালে। লাশ পাওয়ার পরও এই খালকে নিয়ে নানা ধরনের বিতিকিচ্ছা আছে। আমি চিন্তায় পড়ে গেলাম এটা ভেবে যে মোস্কান এখন আর ওর মধ্যে নেই। ওর শরীর মাথা নিয়ন্ত্রণ করছে অন্য কেউ। সে ব্যক্তিটি কে তা আমার যেভাবেই হোক জানতে হবে। এদিকে মোস্কানের পিছনে ছুটছি তো ছুটছি। থামার কোন লক্ষন নেই। একটা মেয়ে হয়ে এত জোরে দৌড় দিতে পারে কিভাবে আমি বুঝতে পারছিলাম না। মনে হচ্ছে একটা বাইকে যদি ফুল স্পিডে মোস্কানকে ধরতে যাই তারপরও ওকে ধরতে পারবনা। একবার পেছনে তাকালাম আমার পেছনে আমার মাও আসছে। মোস্কানের দৌড়ের গতি দেখে আর বুঝতে বাকি রইল না যে ঐ খালের দিকেই ও যাচ্ছে।
(চলবে)
#Imran_Khan_Ratan_ACMA
#সত্য_ঘটনা_অবলম্বনে
#উল্টোকরন_যাদু
তৃতীয় অংশ
আমি দৌড়ের স্পিড বাড়িয়ে দিলাম কারন মোস্কান যদি একবার খালে ঝাপ দেয় তাহলে ওকে উদ্ধার করতে অনেক সমস্যা হবে। একেতো আমি সাঁতার জানিনা তার উপর এখন রাত। এদিকে আমার শরীর বেয়ে বেয়ে অজস্র ঘাম ঝরছিল। ঘামে পুরো শার্ট ভিজে টইটুম্বর। তারপরও দৌড়াতে থাকলাম চোখ বন্ধ করে। কি জানি কি হল মোস্কান যখন খালে ঝাপ দিতে যাবে ঠিক তখনই আমি ওর হাতটা ধরে ফেলি। কিভাবে ওর নাগাল পেলাম সেটা মাথায় ঢুকলো না। যেদিকে ওর দৌড়ের সাথে আমার দৌড়ের স্পিড মিলাতে পারছিলাম না সেদিকে আমি কিভাবে ওকে ধরে ফেললাম! যাইহোক, এখন আর এসব ভাবার সময় না। মোস্কানের হাত ধরতেই মোস্কান হাত ছাড়াতে চেষ্টা করছে। হাত ছাড়াতে না পারার কারণে রেগে গিয়ে আমার বাম গালে কষে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দিল। হাতের পাঁচ আঙুলের ছাপ বসে গেল গালে। পাঁচজন মিলে থাপ্পড় দিলে যেমন লাগে সেরকম একটা থাপ্পড়। গাল ফুলে বালিশ হয়ে গেল। একটা মেয়ের এতো শক্তি থাকার কথা না। আমিও রেগে গিয়ে ওর গালে কয়টা থাপ্পড় বসিয়ে দিলাম। মোস্কান মূহুর্তের মধ্যেই জ্ঞান হারিয়ে ফেললো। এদিকে ভালোই হলো ওকে কবিরাজের বাসায় নিয়ে যেতে সুবিধা হলো। কারণ বেহুঁশ থাকাকালীন ও কোনো ভাবে কবিরাজের বাসা থেকে বের হতে পারবে না। এমন সময় মা আসলো। মায়ের দিকে তাকিয়ে দেখলাম মা কথা বলতে পারছেনা। শুধু হাঁপাচ্ছে। শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। কিছু বলতে পারছে না। তাছাড়া কি-ই-বা বলবে। বলার তো ভাষা নেই। জীবনে যা ঘটেনি আজ তা ঘটতে চলেছে। দেখতে হচ্ছে সেসব। এতো সুন্দর সাজানো সংসার ছিল আমাদের আর সেই সুন্দর সাজানো সংসারে কার বদনজর পড়লো?! এদিকে আমি মা দু’জনে মিলে মোস্কানকে ধরে ধরে আবার কবিরাজের বাসায় আনলাম। দেখলাম কবিরাজ ধ্যানে মগ্ন। বিড়বিড় করে কি যেন পড়ছে। আমাদের ফিরে আসার ইঙ্গিত পেয়ে কবিরাজের ধ্যান ভাঙলো। ধ্যান ভেঙ্গেই আবার সেই পুরনো বিকৃত হাসি। আমাদের দেখে হাসি থামিয়ে সে বলল, আর একটুর জন্য তুই তোর বোনকে হারাতি। একবার খালে পড়ে গেলে বোন তোর সোজা পাতাল লোকে চলে যেত। আমি কবিরাজকে জিজ্ঞেস করলাম, পাতাল লোক কি? কবিরাজ বলল, পাতাল লোক হলো ‘পানির নিচের স্থান।’ সেখানে বেশ কিছু বদজীন বাস করে। আর যে খালটিতে তোর বোন গিয়েছিল ঐ খালের তলদেশে ১২টি বদজীন আছে। আর প্রতি শনিবার আর মঙ্গলবার তারা মানুষ নেয়। যদি কেউ ঐ খালটায় নামে তাহলে সে আর ফেরত আসে না। কয়েকদিন পরেই সেই ব্যক্তির লাশ ভেসে উঠে। তাই খালটি পরিত্যক্ত। আমি কবিরাজকে বললাম, আপনি তো আমাদের সাথে দৌড় দেননি। মোস্কান যে ঐ খালের দিকেই যাচ্ছিল সেটা আপনি জানলেন কি করে? কবিরাজ আবার হেসে বলল, আমি যদি জীন না পাঠিয়ে তোকে সাহায্য না করতাম তাহলে তোর বোনকে তুই বাঁচাতে পারতি না। আমি জীন পাঠিয়ে তোর বোনকে আটকিয়ে ছিলাম। আটকানোর ফলেই তোর বোন আর দৌড়াতে পারেনি যার কারণে তুই তোর বোনের হাতের নাগাল পেয়েছিস।
কথাগুলো আমার কাছে বেশি বেশি হয়ে যাচ্ছিল। ঐ কবিরাজের বেশ অহংকার তার ক্ষমতা আর তদবির নিয়ে। কিন্তু ও জানেনা অহংকার পতনের মূল। এগুলো মনে মনে বলছিলাম। কবিরাজের কথা শুনে আমি কবিরাজ থেকে কিছুটা দূরে সরে গেলাম। মোস্কান মাটিতে পড়ে আছে। কবিরাজ উঠে এসে মোস্কানের চারিদিকে গোল বৃত্ত আঁকলো। বৃত্ত আঁকার পর বৃত্তের ভেতর আবার কিছু আঁকলো। মিনিট দশেক ধরে চলল আঁকা আঁকি। এদিকে সময় রাত নয়টার বেশি হয়ে গেছে। কবিরাজ রাত দশটার পর তার আসর তুলে নেয়। আর রোগী দেখে না।
যাইহোক, সবকিছু করার পর কবিরাজ ধ্যানে বসলো। ধ্যান চলাকালীন মা তার সামনে গিয়ে বসলো। কবিরাজ ধ্যান করতে করতে চোখ বন্ধ করে ফেলে। এবার আগের মত আবার কবিরাজের বাম হাত কাঁপতে থাকলো কিন্তু ডান হাত স্থির ছিল। এক পর্যায়ে কবিরাজ মাকে বলল, এ যাদু কাটানো যেমন সম্ভব না ঠিক তেমনি আবার অসম্ভবও না। একটা নিষ্পাপ শিশুকে বলি দিয়ে সয়ং ইবলিশ শয়তানকে খুশি করা হয়েছিল বলে এ যাদু কাটানো সহজ নয়। যাদু কাটাতে হলে সব বিজোড় জিনিস যাদু কাটানোর কাজে উৎসর্গ করতে হবে। যেমন – সাত নদীর পানি, পাঁচ মোড়ে একটা আস্ত খাশি জবাই করে তার মাংস, একটি মুরগী আর ……, বলে কবিরাজ তার ধ্যান ভাঙলো। মা কবিরাজকে জিজ্ঞেস করলেন, আর বলে থেমে গেলেন কেন? আর কি লাগবে? কবিরাজ গম্ভীর গলায় বলল, আর লাগবে তিনটি নিষ্পাপ শিশু। তাদেরকে বলি দেয়া হবে শয়তানের নামে। কারণ যাদুটা করা হয়েছিল একটা শিশুকে বলি দিয়ে। তাই এই যাদু কাটাতে একের অধিক তিনটি শিশু লাগবে। কবিরাজের কথা শুনে আমার চোখ রক্ত জবার মতো হয়ে গিয়েছে। পাগল কবিরাজ বলে কি এসব!?
এখানে একটা কথা বলিনি। আমার সহজে রাগ উঠে যায়। আমি অনেক রাগী মানুষ। যাইহোক, আমি রেগে গিয়ে কবিরাজকে বললাম, আপনি তো দেখছি খাটি শয়তানের পূজারী। আপনাকে দিয়ে আমার বোনকে চিকিৎসা করাবো না। আমার বোনের জন্য তিন তিনটি বাচ্চার জীবন শেষ করতে পারবো না। আপনি আমার বোনকে ভালো কোনো আলেম দিয়ে কোরআন এবং সুন্নাহ মোতাবেক চিকিৎসা করান। কবিরাজ উত্তরে বলল, দেখ কাঁটা দিয়ে কাঁটা তুলতে হয়। শয়তানের যাদু একমাত্র শয়তানের পূজারীরাই কাটাতে পারে। আমি তখন বললাম, তারমানে আপনি শিকার করলেন আপনি শয়তানের পূজারী? কবিরাজ বলল, হ্যা আমি শয়তানের পূজারী। এটা তোর দেখার বিষয় না। তোর হাতে তোর বোনকে বাঁচানোর সময় খুব কম। কারণ কাকাতুয়া পাখিটা মরনের পথে। পাখিটি মরে গেলেই তোর বোনও মরে যাবে। আর বোনকে বাঁচাতে চাইলে কথা কম বল আর তোর মায়ের কথা শোন। এদিকে মা আমার দিকে রাগান্বিত হয়ে তাকিয়ে আছে। আমি আর কিছু বললাম না। আমি রেগে হনহন করে কবিরাজের ঘর থেকে বেরিয়ে গেলাম।
বাকি ঘটনা আমার মায়ের মুখ থেকে শোনা। তাই তার ভাষাতেই বলছি –
তুই যখন কবিরাজের ঘর থেকে বেরিয়ে গেলি। আমি তখন তোর হয়ে কবিরাজের কাছে মাফ চাইলাম। উত্তরে কবিরাজ বলল, মাফ চাইতে হবে না। শিপন তো ছোট মানুষ। ওর তো তেমন জ্ঞান বুদ্ধি হয়নি। আমি কবিরাজকে জিজ্ঞেস করলাম, আচ্ছা এসব ছাড়া কি অন্য কোন মাধ্যমে যাদু কাটানো যায় না?
এমন প্রশ্ন জিজ্ঞেস করায় কবিরাজ চিন্তায় পড়ে গেল।
কিছুক্ষণ ভেবে বলল, আছে একটা উপায়,
সেটা হলো উল্টোকরন যাদু।
আমি জিজ্ঞেস করলাম উল্টোকরন যাদু কি?
উত্তরে কবিরাজ বলল, যদি কোন ব্যক্তি কাউকে মেরে ফেলার জন্য বা ক্ষতি করার উদ্দেশ্যে যাদু করে এবং সেই যাদু উল্টিয়ে উল্টো যাদু করার মাধ্যমে তার ক্ষতি করার পদ্ধতির নামই উল্টোকরন যাদু।
আচ্ছা আমি একটু বুঝিয়ে বলি। যে ব্যক্তি যাদু করেছিল তাকে যদি উল্টা যাদু করা হয় সেটিকেই উল্টোকরন যাদু বলে। অর্থাৎ তোর মেয়েকে যে যাদু করে মেরে ফেলতে চেয়েছে তাকে উল্টা যাদু করে মেরে ফেলা যাবে। উল্টোকরন যাদুতে সেই লোক উল্টা নিজেই নিজের জালে ফাঁসবে। আর তোর মেয়ে সুস্থ্য হয়ে যাবে।
আমি ভিশন খুশি কারণ কবিরাজকে উল্টোকরন যাদুর কথা বলেছি আমি। এতে সাপও মরবে আর লাঠিও ভাঙবে না। একদিকে আমার মেয়ে ভালো হবে আর অন্যদিকে যে যাদু করেছে তাকেও শাস্তি দেয়া যাবে । যাকে বলে যেমন কর্ম তেমন ফল। আমার কথা শুনে কবিরাজ মুখ গম্ভীর করে বসে আছে। কিছু বলতে যাবে এমন সময় দেখলাম কি যেন ভাবছে। আমি হাত দিয়ে ধাক্কা দিতেই কবিরাজের হুঁশ ফিরলো।
আমি জিজ্ঞেস করলাম, কি হলো?
উল্টোকরন যাদুটা করুন।
কবিরাজ বলল, আজ আর হবে না।
দশটা বেজে গেছে। আমার আসর বসার সময় শেষ।
আমি বললাম, তাহলে এখন কি করব?
সমস্যার সমাধান তো হলো না।
কবিরাজ বলল, আমি দুইটা তাবিজ দিয়ে দিচ্ছি। একটা মোস্কানের বাম হাতে লাগাবি আরেকটা ওর কোমরে পরাবি। তাহলে আর কোন সমস্যা হবে না। কালকে আসিস। আর তাড়াতাড়ি আসিস। আসার সময় একহালি দেশী মোরগ আর একদামে পাঁচ কেজি মিষ্টি কিনে নিয়ে আসিস। মনে রাখিস মিষ্টি কেনার সময় কোনো দরদাম করবি না। বিক্রেতা যে দাম চাইবে সেই দামেই কিনে নিয়ে আসবি। এবার তোরা যা। আর হ্যা যাওয়ার সময় পেছন থেকে কোনো আওয়াজ আসলে পেছনে তাকাবি না। আর কোনো প্রশ্নের উত্তরও দিবি না।
আমি কবিরাজের নিকট থেকে তাবিজ নিয়ে মোস্কানকে সঙ্গে নিয়ে বেরিয়ে গেলাম।
(চলবে)
#Imran_Khan_Ratan_ACMA
#সত্য_ঘটনা_অবলম্বনে
#উল্টোকরন_যাদু
চতুর্থ অংশ
এদিকে আমি রেগে কবিরাজের ঘর থেকে বের হয়েছিলাম তো হয়েছিলামই আর কবিরাজের ঘরে যাইনি। হঠাৎ করে দেখলাম মা মোস্কানকে ধরে ধরে নিয়ে আসছে। আমি সামনে এগিয়ে মোস্কানকে ধরলাম। আর ভেতরে কি হয়েছে জিজ্ঞেস করলাম। মায়ের মুখ থেকে শুনে নিলাম সব ঘটনা। কবিরাজের দেয়া তাবিজ হতে একটা মোস্কানের বাম হাতে পরিয়ে দিলাম। কারণ একবার যদি মোস্কানের জ্ঞান ফিরে তাহলে আমি আর তার সাথে পেরে উঠবো না। তাই দেরি না করে আমি আগে তাবিজ পরিয়ে দিলাম। গ্রামে এ সময় যানবাহন বেশি একটা দেখা যায়না। তাছাড়া গ্রামে দশটা মানেই গভীর রাত। যাইহোক, কোনমতে মোস্কানকে নিয়ে বাসায় আসলাম। বাসায় এসে মা মোস্কানের কোমরে তাবিজটি পরিয়ে দিল। দেখলাম বোন আমার গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। দেখে মনে হচ্ছিল নিষ্পাপ শিশু ঘুমাচ্ছে। সারাদিন মোস্কান স্বাভাবিক। কোনো অস্বাভাবিক কিছু ঘটলো না। ঐ তাবিজ দুটির কার্যকারিতা দেখে একটু ভালো লাগলো।
আমার গাল ফোলা দেখে মোস্কান আমাকে জিজ্ঞেস করলো, কিরে ভাইয়া তোর গালটা ফোলা কেন রে?
আমি হকচকিয়ে গেলাম। আমি কি বলবো মাথায় আসছিল না। কাল রাতের ঘটনা তো মোস্কানের মনে থাকার কথা নয়। কারণ কাল ও যা করেছে সবেই ওর সাথে যাদুর চালান করা জীনটা করেছে। আমি কোনো রকম নিজেকে সামলিয়ে বললাম, ঘুমের ঘোরে মশা মারতে গিয়ে নিজের গালে নিজেই জোরে থাপ্পড় মেরে দিয়েছি। আমার কথা শুনে মোস্কান আরও কিছু জিজ্ঞেস করতো কিন্তু জিজ্ঞেস করার সুযোগ দিলাম না। কথা কাটিয়ে কথা ঘুরিয়ে ফেললাম। কোনো মতে কথা কাটিয়ে ওর সামনে থেকে উঠে বাজারে গেলাম মিষ্টি আর মোরগ কিনতে।
কবিরাজের কথা মতো সব কিনলাম। দিন ফুরিয়ে সন্ধ্যা এসে গেল। সবাই কবিরাজের বাড়ি যাবার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। সন্ধ্যা হলেই মোস্কানের পাগলামি শুরু হয়ে যেত। তবে আজ পুরোপুরি বিপরীত দৃশ্য। মোস্কান একেবারে ঠান্ডা। আমাদের কথা শুনছে। যাইহোক, কবিরাজের বাসায় চলে গেলাম। কবিরাজের বাসায় পৌঁছে কবিরাজের ঘরের দরজায় নক করলাম। দরজা খোলার পর দেখলাম অপরিচিত দুজন লোক। অপরিচিত বলার কারণ হলো গতকাল এদের কবিরাজের ঘরে দেখিনি। ভাবলাম হয়তো এরা কবিরাজের কাছে চিকিৎসা নিতে এসেছে। কিন্তু দরজা খোলার সাথে সাথেই লোক দুটি কবিরাজের আসনের দিকে এগিয়ে গেল। তাছাড়া ঘরে আর কোনো লোকজন নেই। নেই কোনো সিরিয়াল। এমন সময় কবিরাজ আসলো। কবিরাজ আমাদের দিকে ইঙ্গিত দিয়ে সামনে বসতে বলল। আমি কবিরাজকে জিজ্ঞেস করলাম, এরা দুজন কে?
আর আজকে আপনার রোগীরা কোথায়? উত্তরে কবিরাজ বলল আজকে আমি আসরই বসাইনি। আজকের দিন রবিবার। আজকে আমি রোগী দেখিনা। আজকে তোদের সমস্যার সমাধান করার জন্য তোদের আসতে বলেছি। আর এই দুজন লোক হলো আমার সহযোগী। আমার কাজে সাহায্য করবে। আমি ঘরের চারদিকটা ভালো করে দেখলাম। দেখলাম গতকালের তুলনায় ঘরে মোমবাতি বেশি। গতকালে ছিল ছয়টি। আজকে বিশটির উপরে। তারমধ্যে ছোট-বড় সব সাইজের আছে। কি অদ্ভুত ভুতুড়ে পরিবেশ।
কবিরাজ ধ্যান শুরু করলো। ধ্যান চলাকালীন তার দুজন সহযোগী একটা বড় কাগজ নিয়ে আসলো। কাগজের সাইজটা একটু বেশি বড়। কাগজ এনে কবিরাজের হাতের নিচে রাখলো। তারপর কবিরাজের হাতে কবুতরের পাখনা ধরিয়ে দেয়া হলো। খেয়াল করে দেখলাম কবুতরের পাখনা লাল রঙের কিছু একটা পেছানো। দেখতে রক্তের মতো লাগছে। আমি কবিরাজকে জিজ্ঞেস করলাম পাখনায় কি রক্ত লাগলো?
উত্তরে কবিরাজ বলল, না পাখনায় জাফরান রং লাগলো। তারপর কবিরাজ জাফরানের কালি দিয়ে কাগজের উপর এক বিশেষ ধরনের ছক আঁকলো। ছকের মধ্যে আরবিতে কি যেন লেখলো। প্রতিটি ছকে একটা একটা আরবিতে কিছুনা কিছু লেখা। লেখার পর আমার কাছে মোরগ আর মিষ্টি চাইলো। আমি মার কাছ থেকে কবিরাজকে এক হালি মোরগ আর মিষ্টি দিলাম। কবিরাজ হাতের কাগজটা মাঝ বরাবর কেটে দুইভাগ করে নিল। একভাগ বাম পাশে আর একভাগ ডান পাশে দিল। কবিরাজের সহযোগীরা একটা ধারালো চাকু এনে কবিরাজের হাতে দিল। কবিরাজ এক এক করে মোরগ নিয়ে কাগজের উপর একটানে গলা কেটে ফেললো। তরতাজা রক্তগুলো মোরগের ফিনকি দিয়ে ছিরছির করে বেরিয়ে কাগজের উপর পড়তে থাকলো। এভাবে একে একে সে সব মোরগ গুলোকে বলি দিল। এবং শয়তানের নাম উচ্চারণ করতে থাকলো।
আমি শুধু চেয়ে চেয়ে দেখছিলাম। কবিরাজের কান্ডকারখানা। একে একে সব মোরগ বলি দেয়ার পর সব মিষ্টিগুলো ঢেলে দেয়া হলো কবিরাজের ডান পাশে থাকা কাগজের উপর। এরপর কবিরাজের সহযোগী দুজন দুইটা কাগজ ধরে নিয়ে গিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে গেল। তাদের বের হওয়া দেখে আমি জিজ্ঞেস করলাম তারা কোথায় গেল মিষ্টি আর মোরগ গুলো নিয়ে? উত্তরে কবিরাজ বলল, ঐ উত্তরে পরিত্যক্ত খালটায় নিয়ে গেছে জীনদের জন্য। খালে থাকা জীনরা তোর বোনের যাদু কাটাতে সাহায্য করবে বলেছে আমায়। তাই তাদের খুশি করার জন্য আমি এগুলো পাঠালাম।
আমি কবিরাজের কথা শুনে হা হয়ে আছি। আমার অবাক হওয়া নিয়ে কবিরাজ কোনো মাথা ঘামালো না।
এদিকে কবিরাজ গতকালের মতো আবার একটা বৃত্ত আঁকা শুরু করে দিল। বৃত্তের ভেতর আবার ছোট কিছু বৃত্ত আঁকলো। আঁকা শেষে মোস্কানকে বৃত্তের ভেতর বসানো হলো। বৃত্তের ভেতরে কবিরাজ বিড়বিড় করে কিছু মন্ত্র টন্ত্র পড়লো। এবং মোস্কানকে তার শরীরে থাকা তাবিজ দুটি খুলে ফেলতে বলল। মোস্কানকে কবিরাজের পাশে আরেকটি ছোট রুমে নেয়া হলো। মা মোস্কানের হাতে ও কোমরে থাকা তাবিজ দুটি খুলে ফেললো। তাবিজ খুলে এনে আবার বৃত্তের ভেতর বসানো হলো। এদিকে ভাবছিলাম কখন এ নাটক শেষ হবে। আমার বোন মুক্ত হবে। তাবিজ খুলে মোস্কানকে বৃত্তের ভেতর বসানোর সাথে সাথেই যেন ঘরের আবহাওয়া পরিবর্তন হয়ে গেল। ঘরটা আস্তে আস্তে অস্বাভাবিক ঠান্ডা হয়ে গেল। এমন সময় কবিরাজ বলল,
কেউ ভয় পাবেন না। ভয় পেলে মোস্কানের ক্ষতি হবে। সবাই শান্ত থাকবেন। কবিরাজের কথা মতো চুপ করে বসে আছি। কবিরাজ মোস্কানকে বলল,
তুমি তোমার হাতের তাবিজটি পরে নাও আবার। কবিরাজের কথা মতো মায়ের কাছ থেকে মোস্কান তাবিজটি নিয়ে তার হাতে পরে নিল।
কবিরাজ আবার ধ্যানে গেল। কিছুক্ষণ পর ধ্যান থেকে ফিরে বলল,
যাদুটা করেছে তোমার দুঃসম্পর্কের একজন চাচা। কবিরাজ চাচার নাম বলল। কবিরাজ নাম বলাতে আমরা সবাই তাকে চিনে ফেললাম। আশ্চার্য হয়ে কবিরাজকে জিজ্ঞেস করলাম, কিন্তু সে কেন যাদু করবে?! তার সাথে আমাদের তো কোনো শত্রুতা নেই।
কবিরাজ আমাদের কথা শুনে জিজ্ঞেস করল,
তোর চাচা কয়েক মাস আগে তোদের বাসায় এসেছিল?
উত্তরে আমরা হ্যা বললাম।
এবার কবিরাজ বলল,
যখন তোর চাচা এসেছিল তখন কি তার ছেলের জন্য মোস্কানের বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিল?
এবং তাতে কি তোরা অসম্মতি জানিয়ে ছিলি?
আমরা বললাম, হ্যা।
কবিরাজ বলল,
মোস্কান যখন ছোট ছিল তখন থেকেই তোর চাচা ভেবে রেখেছিল মোস্কানের সঙ্গে তার ছেলের বিয়ে দিবে।
এছাড়াও তোদের সম্পদের উপরেও তাদের লোভ ছিল। যেটা সে মোস্কানের মাধ্যমে তা হাতিয়ে নেয়ার স্বপ্ন দেখছিল। যখন তোর মা আর তুই না করলি তখন সে রেগে গিয়ে মোস্কানের ঘরে গিয়ে মোস্কানের ব্যবহৃত চিরুনি থেকে চুল, উড়না নিয়েছিল। আর ছবি তার কাছে আগেই ছিল। হয়তো ছবিটি সে কোনো ভাবে কারো কাছ থেকে সংগ্রহ করেছিল।
কবিরাজের কথা শুনে আমার কানে যেন বাজ পড়লো। কি বাজে বকছে এগুলো। মা কবিরাজের কথায় রেগে গেল। বলল, আপনি জলদি উল্টোকরন যাদুর কার্যক্রম শুরু করুন।
অতঃপর কবিরাজ তার সামনে কিছু কাঠ দিয়ে আগুন ধরালো। চোখ বন্ধ করে অনেক মন্ত্র পাঠ করে আগুনে ফু দিল। এভাবে চললো পনের বিশ মিনিট। তারপর কবিরাজ মোস্কানের হাতে একটা চাকু ধরিয়ে দিয়ে বলল, এবার তুমি তোমার বাম হাতের আঙ্গুলের মাথা কেটে রক্ত এ আগুনে দাও। তারপর ডান হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলীর মাথা কেটে রক্ত এ আগুনে দাও। তোমার মাথার একটি চুল ছিঁড়ে এ আগুনে দাও। তারপর সব শেষে তোমার গায়ের উড়না এ আগুনে দাও। মোস্কান মায়ের দিকে তাকালো। মা হ্যা বোধক সম্মতি দিলে মোস্কান কবিরাজের কথা মতো আগুনে সব দিয়ে দিল। আস্তে আস্তে আগুনে দেয়া জিনিসগুলো পুড়তে শুরু করলো।
এখানে আমি একটা জিনিস লক্ষ্য করে দেখলাম আগুনে দেয়ার পর জিনিসগুলো এমনভাবে পুড়তে ছিল যেন জিনিসগুলো পুড়তে চাইছিল না। স্বাভাবিক ভাবে আগুনে উড়না দিলে সেটা দাউদাউ করে পুড়ে যাওয়ার কথা তারউপর উড়না ছিল সুতি কাপড়ের। তারপরও উড়নাটিতে আগুন ধরছিল না। কবিরাজ একটা কাঠের টুকরা দিয়ে উড়নাটিতে ভালো ভাবে আগুন ধরিয়ে দিল। আমি এ দৃশ্য দেখে আমার চোখ বড় বড় হয়ে গিয়েছিল। আমি বড় বড় চোখ করে আগুনের দিকে তাকিয়ে ছিলাম।
কবিরাজ তার সহযোগীদের তেল আনতে বলল। আমি ভাবলাম হয়তো কেরোসিনের তেল আনতে পাঠিয়েছে। কিন্তু ছোট সাইজের বতলে যখন তেল আনলো দেখলাম তেল পুরো কালো। জিজ্ঞেস করলাম এটা কিসের তেল? উত্তরে কবিরাজ বলল, এটা যাদুর কাজে ব্যবহৃত এক বিশেষ তেল। সব তেল আগুন জ্বালাতে ব্যর্থ হলেও এই তেল ব্যর্থ হবে না। যাইহোক, কবিরাজ বোতলের সব তেল ঢেলে দিল আগুনে ওমনি ছেন করে আগুন দাউদাউ করে জোরে পুড়তে লাগলো। এবার উড়নাটা ভালো ভাবে পুড়তে শুরু করলো। উড়না পুড়তে পুড়তে কবিরাজ বলল, উড়না দিয়ে কালোযাদু করার ফলে উড়না পুড়ছিল না।
অবশেষে পোড়াতে পেরেছি। উড়না যখন পুড়ছিল তখন আগুনের ধোঁয়া স্বাভাবিকের চেয়ে কালো ছিল আর বেশ কড়া একটা দুর্গন্ধ বের হচ্ছিল। কিছুক্ষণ পর মোস্কানের শরীর আস্তে আস্তে পাতলা লাগছিল। যেটা মোস্কান নিজে থেকেই আমাকে বলছিল। আগে যে শরীর একটা ভার ভার অনুভব হতো সেটা এখন আস্তে আস্তে কমতে শুরু করলো। উড়না আর চুল পুড়ে ছাই হওয়ার এখনো বাকি। পুরোপুরি পুড়তে হবে নয়তো যাদু রয়ে যাবে। কবিরাজ যখন আগুনে সেগুলো পোড়াচ্ছিলো তখন চোখ গেল কবিরাজের দুই হাতের দিকে। দেখলাম কবিরাজের দুই হাতের মধ্য আঙ্গুল নেই। আঙ্গুলের জায়গায় বেন্ডেজ করা। প্রথম দিকে খেয়াল করিনি। আমার কৌতুহল বেশি তাই অহেতুক প্রশ্ন করি। তবে এবার কবিরাজকে প্রশ্ন না করাই ভালো।
একপর্যায়ে আগুনে সবকিছু পুড়ে ছাই হওয়ার পর তা মাটির কলসে নেয়া হলো। তার সহযোগীরা কলসটা নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। জিজ্ঞেস করলাম, ছাইগুলো কোথায় নিলেন জানতে পারি?
উত্তরে কবিরাজ বলল, ঐ উত্তরের পরিত্যক্ত খালে ছাইগুলো ফেলে আসবে। এটা বলে কবিরাজ তার আসর থেকে উঠে মোমবাতি গুলো নিভিয়ে মোমবাতি গুলো সব একত্র করলো। তারপর আবার নতুন করে আগুন ধরালো। এবং সেই আগুনে মোমগুলি গলিয়ে নিল। গলে যাওয়া মোম একটা পাত্রে নেওয়া হলো। তারপর কবিরাজ আগের দুই তাবিজ চাইলো। চাচার নাম ও ছবি চাইলো। আমরা সব দিলাম। দেওয়ার পর কবিরাজ সেই তাবিজ দুটি ভেঙে টুকরো টুকরো করে আগুনে দিয়ে দিল। এরপর গলিত মোমের পাত্র নিয়ে সে রুমে চলে গেল। আমাদের বসে থাকতে বলা হলো। আমরা চুপচাপ বসে রইলাম। পাশের রুমে কি হচ্ছে তা বুঝতে পারছিলাম না। আনমনে বসে আছি চিন্তা করছি। কবিরাজের আঙ্গুল কাটা কেন? কই গতকালও তো কবিরাজের আঙ্গুল কাটা দেখলাম না। আজকে বেন্ডেজটা নতুন মনে হচ্ছে। যাইহোক, বিশ মিনিট পর কবিরাজ পাশের রুম থেকে আসলো। হাতের দিকে তাকিয়ে দেখলাম হাতে তিনটা তাবিজ। একটা আমাকে দিল। একটা মাকে আর একটা মোস্কানকে। বলল, এ তাবিজ আজীবন সাথে রাখতে। তাহলে আর কেউ আমাদের যাদু করতে পারবে না। আমি কবিরাজকে জিজ্ঞেস করলাম, গলিত মোমগুলি কি করলেন? উত্তরে কবিরাজ বলল, তাবিজে ব্যবহার করেছি। এর বেশি কিছু জানতে চাস না। বেশি বললে তাবিজের ক্ষমতা হ্রাস পাবে। এরপর মা কবিরাজকে জিজ্ঞেস করল, উল্টোকরন যাদু কি সম্পন্ন হয়েছে? কবিরাজ বলল, হ্যা। সম্পূর্ণ হয়েছে। যে যাদু করেছিল তার যাদু এখন তার উপরেই পতিত হয়েছে। এখন তোদের সেই দুঃসম্পর্কের চাচা আস্তে আস্তে মারা যাবে। সে যে উল্টোকরন যাদুর শিকার হয়েছে সেটা সে কখনো বুঝবে না। কাকাতুয়া পাখিটি মারা যাবে আর শিপনের চাচাও মারা যাবে। কিন্তু এই উল্টোকরন যাদু বাস্তবায়ন করবে ঐ উত্তরের পরিত্যক্ত খালের জীনগুলি। তারাই মূলত যাদুটি চালিয়ে যাবে। কোনো ভাবে যদি শিপনের চাচা বুঝতে পারে যে তাকে যাদু করা হয়েছে তারপরও সে কিছু করতে পারবে না। কারণ এটা শয়তানের যাদু। আর শয়তানের যাদু উল্টানো যায় কিন্তু কাটাতে হলে নিষ্পাপ শিশু বলি দিতে হয় যেটা তোরা দিলি না।
চলবে
#Imran_Khan_Ratan_ACMA
সত্য ঘটনা অবলম্বনে উল্টোকরন যাদু
পঞ্চম (শেষ) অংশ
শিপনের চাচার যে ছবি দিয়েছিলি আর নাম কি সঠিক? আমরা বললাম, হ্যা। কবিরাজ বলল, তাহলে যাদুও সঠিক আছে। শিপনের চাচা যদি আবারও যাদু করার চেষ্টা করে তাহলে আমার তাবিজের কারনে ব্যর্থ হবে। সবসময় তাবিজ পরিধান করে থাকবি আর কোনো সময় খুলবিনা। এরপর কবিরাজ মোস্কানকে সেই কালো তেলের বোতল দিল
যেটা আগুন জ্বালাতে সাহায্য করেছিল।
তেল দিয়ে মোস্কানকে বলল, এই তেল শাহাদাত আঙ্গুলে মাখবি অন্য কোনো আঙ্গুলে মাখবি না। আঙ্গুল দিয়ে এই তেল মাথায় লাগাবি। এরপর সাথে সাথে গোসল করে ফেলবি। দেরি করবি না।
এবার কবিরাজ তার হাদিয়া হিসেবে একটা আস্ত খাশি, একটা ধুতি, সিঁদুর, চমচম, যেকোনো একটা পুরনো কবরের একমুষ্টি মাটি এইসমস্ত কিছু চাইলো। কবিরাজ কোনো টাকা চাইলো না। তার হাদিয়ার বর্ননা শুনে অবাক হলাম। কবিরাজ তার অন্যান্ন রোগীর কাছ থেকে টাকা নেয়। নির্ধারিত ফিস আছে সেটা নেয়। কিন্তু আমাদের কাছে টাকার বদলে কেন এগুলো চাচ্ছে? এসব ভাবতে ভাবতে কবিরাজ আবার বলল,
এগুলো সব মোস্কানের হাতে কিনাবি। আমি কৌতুহল বশত বললাম,
আপনি তো টাকা নেন, তাহলে আমাদের কাছ থেকে টাকা নিলেন না কেন?
কবিরাজ বলল, তোদের কাহিনী অন্য দশটা কাহিনী থেকে আলাদা। তোদের ভেতর কি ঘটেছে সেটার ব্যাখ্যা একমাত্র আমিই জানি। তোর বোনের উপর যে যাদু করা হয়েছে সে যাদু হাজারে একটা হয়। আর আমার জীবনে এমন যাদু কখনো দেখিনি। অভিজ্ঞতাও নাই।
আমি বললাম, অভিজ্ঞতা না থাকলে উল্টোকরন যাদু করলেন কি করে? কি বলেন আপনার কথার আগা মাথা কিছুই বুঝিনা। কবিরাজ বলল, আমার কবিরাজি আর যাদুর সিংহভাগ অবদান কারিন জীন গুলির। যতদিন আমার হাতে কারিন জীন গুলি বন্দি ততদিন আমার কবিরাজি জীবন আছে। এখন এসব কথা বাদ দে। এবার তোরা যা। মোস্কানের বিশ্রামের প্রয়োজন। বাসায় গিয়ে ওকে তেলটা মাখিয়ে গোসল করাবি। গোসলটা জরুরী। আরেকটা কথা ভালো ভাবে মনে রাখবি তাবিজ কোনো ভাবেই শরীর থেকে খোলা যাবে না। ভুলে যাসনি যাদু কিন্তু কাটেনি। শুধু উল্টিয়ে দেয়া হয়েছে। উল্টানো যাদু আবার উল্টাবে না এর কোনো গ্যারান্টি নাই।
যাইহোক, কালকে হাদিয়ার জিনিসগুলো নিয়ে আসবি। আর আসল কথাটা মনে রাখিস সবগুলো জিনিস মোস্কানের হাত দিয়ে কিনাবি। মোস্কানের হাতে না কিনালে কিন্তু ধরা পড়ে যাবি। তাতে উল্টোকরন যাদুতে ক্ষতি হবে।
আমি বললাম, হাদিয়া জিনিসগুলো দিয়ে কি করবেন? কবিরাজ বলল, নতুন ক্ষমতা হাসিল করব। বিস্তারিত তোকে জানাবো কেন? তুই কে? যা এখান থেকে। আমি বিশ্রাম নিব।
এদিকে রাত এগারোটার কাছাকাছি। এতো রাতে মোস্কানকে নিয়ে যেতেও ভয় লাগছে। মাঝপথে সেই উত্তরের পরিত্যক্ত খালটি পড়ে। যদিও সেই জীনগুলি এখন আমাদের বন্ধু। কিন্তু প্রশ্ন রয়ে গেল কবিরাজের হাতের আঙ্গুল কাটা কেন?
যাইহোক কালকে হাদিয়ার জিনিসগুলো নিয়ে এসে কবিরাজকে সেই প্রশ্নটি করবো। এসব ভাবতে ভাবতে মোস্কান আর মাকে নিয়ে কবিরাজের ঘর থেকে বেরিয়ে গেলাম। তখন রাত এগারোটা। গ্রামের রাস্তা বুঝতেই পারছেন। তারউপর গতরাতে বৃষ্টি হলো। যদিও ভয়টা তেমন লাগেনি তবুও কোনো একটা অস্বস্তি লাগছিল। জীনদের বিশ্বাস করা যায় না। কখন কি করে বসে সে ভরসা নাই। আনমনে বলছি খালটার দিকে না তাকিয়ে সোজা নাক বরাবর হেঁটে চলে যাব। মা আর মোস্কান হাত ধরে সামনে হাঁটছে আর আমি ওদের পেছন পেছন। খালটির দিকে তাকাবো না তাকাবো না ভাবছি তবুও হঠাৎ করে চোখ গেল খালটির দিকে। তাকিয়ে যা দেখলাম, তা দেখার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না। দেখলাম যে কয়েকটি আগুনের বল শূন্যে ভাসছে। ছোটবেলায় আমরা অনেকেই রাবারের বল বা পিংপং বল দিয়ে খেলতাম। সেই রকম সাইজের আগুনের বলগুলি পানির উপর চারিদিকে ঘুরছে। এই দৃশ্য দেখে আমার কলিজা শুকিয়ে যাওয়ার উপক্রম হল। জোরে একটা চিৎকার দিলাম।
চিৎকারের আওয়াজ শুনে মা আর মোস্কান পিছনের দিকে তাকিয়ে দ্রুত আমার কাছে এসে জিজ্ঞেস করল কিরে কি হয়েছে হঠাৎ এত জোরে চিৎকার দিলি? আমার তখন না আছে কোন কথা শোনার অবস্থা না আছে কোন উত্তর দেয়ার অবস্থা। শুধু আঙ্গুল দিয়ে খালের দিকটায় তাকাতে বললাম। মা আঙ্গুল ইশারায় বুঝতে পেরে খালের দিকে তাকিয়ে বলল, কই কি দেখাস? আমি ততক্ষনাত তাকালাম কিছুই নেই। আগুনের বল নেই আর বলগুলো তো সিরিয়ালে সাপের মত লম্বা আকার ধারণ করেছিল। কিন্তু নিমিষেই একফলকে সেই বলগুলি গায়েব হয়ে গেল। বুঝলাম সবই জীনদের কারসাজি। তাড়াতাড়ি মাকে বললাম, কিছু না। পরে বলব। আগে বাসায় চল। হাতের ঘড়িতে তখন সময় বারটা বাজতে চলেছে। কোনরকমে আমাদের বাসায় পৌঁছে গেলেই বাঁচি। আমি এবার আর পেছনে তাকালাম না। তিনজন একসাথে হাটছি। এমন সময় ডান পকেটে হাত দিতেই কবিরাজের তাবিজগুলো হাতে লাগলো। জলদি পকেট থেকে তাবিজগুলো বের করে ফেললাম। কবিরাজ বারবার আমাদের হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছিল তাবিজগুলো সবসময় পরে থাকবে। তাই জলদি আমি মোস্কান আর মা তাবিজগুলো পরে ফেললাম। তারপর বিনা সমস্যায় বাসায় পৌঁছালাম। বাসায় পৌঁছে মোস্কান গোসল করতে চাচ্ছিল না। এতো রাত হবার কারণে কিন্তু কবিরাজ জোর গলায় বলেছে বাসায় গিয়ে তেল মেখে গোসল করতে হবে। মা জোর করে মোস্কানের শরীরে তেল মেখে দিল। তারপর গোসল করানো হলো। তারপর থেকে নিয়মিত তেল মেখে গোসল করা চলতে থাকলো। তবে একটা জিনিস খুব খেয়াল পড়লো, গোসলের পানি একেবারে কুচকুচে কালো ছিল। যেহেতু তেল কালো সেহেতু পানি কালো হওয়াটা স্বাভাবিক। কিন্তু পানিটা অনেক গাঢ় রকমের কালো ছিল। তেলের থেকেও বেশি কালো। দেখে মনে হচ্ছে শরীর থেকে যাদুর প্রভাব ধুয়ে ধুয়ে পড়ছে। তারপর আর তেমন কোন অস্বাভাবিক ঘটনা ঘটেনি। আস্তে আস্তে মোস্কান স্বাভাবিক হতে লাগলো। ওর বমিবমি ভাবটা কমলো। খাওয়ার অরুচি ছিল। এসব সমস্যা দূর হতে আরও এক দুই মাস লেগে গেল। তারপর মোস্কানের আর কোনো সমস্যা হয়নি।
শিপন রাগে ক্ষোভে আর ঐ চাচার কোনো খবর নেয়নি। তবে শিপনের এক ফুফু ছিল যার মাধ্যমে জানতে পেরেছিল ঐ চাচা পরবর্তীতে পাগল হয়ে গিয়েছিল। তার ছেলে তাকে মানসিক হাসপাতালে ভর্তি করায়। ভর্তি হওয়ার এক সপ্তাহ পরে সেই হাসপাতালের ছাদ থেকে পড়ে তার মৃত্যু হয়।
– পাপ বাপকে ছাড়েনা –
#Imran_Khan_Ratan_ACMA