#এক কাপ চা পর্ব ২
#সাদিয়া_খান(সুবাসিনী)
(৪)
“পরকীয়া সম্পর্কটা যখন ভাবীর সাথেই রাখবে তবে আমাকে কেন বিয়ে করেছিলে?”
ইখুমের প্রশ্নে কোনো ভাবান্তর হলো না রাশেদের। টাই বাধতে ব্যস্ত সে।ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে সে বার বার চেষ্টা করছে কিন্তু কিছুতেই ঠিক মতোন টাই বাধতে পারছে না।
জবাব না পেয়ে টেবিলের উপর এক কাপ চা রেখে ইখুম এগিয়ে এলো রাশেদের দিকে। লোকটা এখনো টাই বাধতে পারে না।
মৃদু হেসে তার দিকে এগিয়ে গিয়ে একটু উঁচু হয়ে দাঁড়ালো ইখুম।রাশেদের হাত তখন তার কোমরে গোজা আঁচলের দিকটায়।
রাশেদ ইখুমের কোমরের দিকটায় ইচ্ছে করেই একটা চিমটি কেটে বলল,
“আমি যে তোমার, এটা তোমার বিশ্বাস হয় না?বিশ্বাস করার জন্য অন্যের রেফারেন্স কেন লাগে?”
“রক্ষীতা রাখা পুরুষের কথায় কী বিশ্বাস জন্মে?”
সে সময় ঘরে দরজা নক না করেই প্রবেশ করছিল সামিনা৷রাশেদ খেয়াল করেনি। কারণ সে ততক্ষণে গভীরভাবে ডুবে যেতে ব্যস্ত ইখুমের অধরে।ইখুম তার থেকে নিজেকে ছাড়াতে চাইলেই দেখতে পারলো সামিনা দরজার সামনে দাঁড়ানো। তাকে দেখে ইখুমের হাতের বন্ধন শক্ত হলো।ইখুম নিজ থেকে
রাশেদের আরো একটু সন্নিকটে এসে ডুব দিলো তার পুরুষালি স্পর্শ এবং সিগারেটে পোড়া ঠোঁটে।
সে যেন সামিনাকে চোখে আংগুল দিয়ে দেখিয়ে দিতে চাইছে,
“রাশেদ তার সিল মোহর প্রাপ্ত অধিকার। তার সন্নিকটে আসতে রাতের আধার কিংবা লুকোচুরির প্রয়োজন নেই।”
কয়েক মুহূর্ত পর ইখুম চোখ মেলে তাকিয়ে দেখতে পেলো সামিনা তার পরনের শাড়ির আঁচলে মুখ গুঁজে ধীরে ধীরে সরে যাচ্ছে দরজার সামনে থেকে।
(৫)
নিজের ঘর থেকে বার বার উঁকি দিয়ে দেখছে সাগরিকা।তাশদীদ বাড়িতে আছে কী না।থাকলে সে পড়ার টেবিলে বসবে না হলে আরেকটু ঘুম দিবে।
চুপিসারে নিজ রুমের জানালা দিয়ে দেখতে পেল তাশদীদ এবং রাশেদ বেরিয়ে যাচ্ছে অফিসের জন্য। খুশীতে মনে হাজার খানেক প্রজাপতি পাখনা মেলেছে।কিন্তু পাখনা গুলোকে কেটে দিলো তাজবীদ।
হুকুম জারি হয়েছে, তাজবীদের জন্য চা নিয়ে ছাদে যাওয়ার। তাজবীদ শুধু সাগরিকার হাতেই চা খেতে অভ্যস্ত। মাঝেমধ্যে বেশ বিরক্ত লাগে তবুও করতেই হয়।
চা বানাতে বানাতে সাগরিকার মনে পড়ে গেল সেই দিনের কথা। যে দিন তাজবীদের বন্ধুরা এসেছিল এবং বাসায় কেউ ছিল না যে তাদের চা করে দিবে।
সাগরিকা তখন ক্লাস সেভেনে পড়ে। ঠিক মতোন চা বানাতেও জানে না।কিন্তু সে দিন চা না কি অমৃতের মতোন হয়েছিল।এটা তাজবীদের সকল বন্ধুদের কথা।তাজবীদ সে থেকেই বলেছে প্রতিদিন সাগরিকার হাতের চা তাই চাই ই চাই।তাই বাধ্য হয়েই চা বানাতে হয় সাগরিকা কে।
বিগত পাঁচ বছরে এই নিয়ম অনুসারে চলছে সে। যদি তাজবীদ কোথাও যায় এবং রাত থাকে তবুও ফ্লাক্সে করে চা নিয়ে যায়।
গোসল সেরে ইখুম ছাদে বসে চুল মেলেছে রোদে।তুলি বসে আচার খাচ্ছে। তাজবীদের ক্লাস নেই তাই সেও বসে আড্ডায় ব্যস্ত।
সাগরিকা চা নিয়ে যেতেই তাজবীদ মুচকি হেসে চায়ের কাপ হাতে নিলো।
হতাশ ভঙ্গিতে ইখুমের পাশে বসে সাগরিকা বলল,
“কাল যা গেছে আমার উপর দিয়ে ইখুম পাখি তুমি যদি জানতে!”
“কি হয়েছে?”
অতঃপর তাশদীদের সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনা বলল সাগরিকা।ইখুম হেসে বলল,
“তাশদীদকে এত ভয় কেন পাও?”
“সে এক ইতিহাস।”
“বলো তবে শুনি।”
“ক্লাস থ্রিতে পড়ার সময় গণিতে ফেল করেছিলাম।তো তখন আমাদের সবার পড়ার ঘর একটা ছিল।এত বড় বাড়ি ছিল না আমাদের। ফেল করা খাতা কোথায় লুকাবো?
ঠিক করি এমন জায়গায় যেখানে প্রতিদিন কেউ যায় না। যেমন চিন্তা তেমন কাজ। খাতা লুকিয়ে ছিলাম কোর-আন শরীফের ভিতরে৷ কে জানতো?তাশদীদ ভাই পরদিন সকালেই যাবে কোর-আন পড়তে।
সে সকালের আগ অবধিও আমি তাকে ভয় করতাম না। কিন্তু সেদিন সকালে আমাকে খুব সুন্দর করে ডাক দিয়ে জিজ্ঞেস করেছিল
আমি মানা করি, এরপর খাতা বের করে। খাতায় নাম্বার তখন ২২।
বিশ্বাস করো রাঙ্গামা!
আমাকে গাছের সাথে বেধে রাখছিল পুরো বাইশটা ঘন্টা। এমন মানুষকে কেউ ভয় পাবে না?”
সাগরিকার কথায় হাসি যেন থামছেই না কারোর৷ তাজবীদ বলল,
“ভাই পড়ালেখার ব্যাপারে একটু স্ট্রিক্ট।তবে মন ভালো।”
“হ্যাঁ! মন ভালা না হলে কি গন্ডায় গণ্ডায় প্রেমিকা পালে?”
সাগরিকার কথা শেষ করার পূর্বে ইখুম দৌড়ে এক কোণে গিয়ে দাঁড়ায়। বমির দমকে সে দাঁড়িয়ে থাকতে পারছে না।
তাজবীদ দ্রুত বাকীদের ডাক দেয়।সাগরিকা তাকে ধরে নাক মুখে পানি দিয়ে ঘরে এনে শুইয়ে দিয়েছে৷
(৭)
বাড়িতে খুশীর একটা আমেজ সৃষ্টি হয়েছে। কায়সার মারা যাওয়ার পর এ বাড়ির মানুষ এতটা খুশি হয়নি।ইখুম মা হতে চলেছে। সাগরিকা বলল,
“স্নেহার খেলার সাথি আসবে। রাঙ্গামা তুমি এবার খুশী তো!”
“স্নেহাকে একবার এনে দিবি?”
ইখুমের সাথে সামিনার যত যা হোক কখনো স্নেহাকে তাদের ঝামেলার মাঝে আনে না ইখুম।স্নেহাকে কোলে বসিয়ে তাকে জিজ্ঞেস করলো,
“তোমার ভাই বোন এলে খুশী হবে না?”
স্নেহা ইখুমের গলা জড়িয়ে ধরে বলল,
“রাঙ্গামা, আমি আমার সব খেলনা রাঙ্গা বাবুকে দিয়ে দিবো।”
সাগরিকা স্নেহার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বাইরে বেরিয়ে এলো ছাদে যাবে বলে। সিড়ি কোঠার কাছটায় এসে সে শুনতে পেল সামিনা ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে বলছে,
“রাশেদ, ডক্টর এসেছিল। ইখুমকে দেখতে। ইখুম মা হতে চলেছে। এবার কী করবে তুমি?
আমার স্নেহার কী হবে?”
চলবে
.