১.সময় নিয়ে কবিতা আমার খুব শখ
২.সময় নিয়ে কবিতা সঠিক সময়
৩.সময় নিয়ে কবিতা সোনালী ডানার চিল
৪. সময় নিয়ে কবিতা নষ্ট সময়ের পদ্য
৫.সময় নিয়ে কবিতা শোনার সময় কোথায়
৬.সময় নিয়ে কবিতা
৭.সময় নিয়ে কবিতা
দশটা দিন দাও-
তোমার এই দিন রাত্রির জীবন থেকে
আমায় দশটা দিন দেবে প্লিজ?
১.সময় নিয়ে কবিতা আমার খুব শখ
আমার খুব শখ
মাত্র ২৪০ ঘণ্টার একটা সংসার করার-
চালে-ডালে নয়,
নুনে-ঝালে নয়-
বরং খুব প্রজাপতি টাইপের ঘর করার!
যেখানে অপেক্ষা নেই,
প্রতিক্ষা নেই-
আছে গায়ে গা লাগিয়ে সারাক্ষণ কেবল
গল্প বুনে যাওয়া!
আঙুলের স্পর্শে আবিষ্কার করা
অজানা অচেনা মহাকাশ!
চোখের ভেতর ঝিনুক নিয়ে
বুকের ভেতর লাল পিঁপড়ের বাসা বোনা!
দেবে আমায়
এমন স্বপ্নীল দশটা দিন?
সেই ক’দিন আমরা কেবল
পাহাড় আর সমুদ্রে বেড়াবো!
ঢেউ গুনবো আর পাহাড় চূড়ায় উড়াবো
আমাদের ভালবাসার পতাকা!
শীতলপাটির মতো জুড়িয়ে নেবো সকল ক্লান্তি!
চোখের পাতায় শ্বেতপাথরের শান্তি
আর পায়ের পাতায় নেবো তোমার চুমুর প্রসাদ!
আসবে এমন উজাড় করে সব দিতে
কেবল ২৪০ ঘণ্টার জন্য!
লাগামহীন দশটা দিন দেবে বলো?
অবুঝ শিশু হবো ঐ ক’টা দিন,
পাগল প্রেমিক হবে তুমিও-
কিশোরী আবেগে
আর শক্ত আলিঙ্গনে
আমরা মরে যাবো,
ভেসে যাবো-
আর ফিরে পাবো নতুন করে বাঁচার মন্ত্র!
আমার শুভ্র শরীরে দাগ কাটা থাকবে
তোমার পবিত্র পূন্য প্রেমের!
আর তোমার চিবুক জুড়ে থাকবে
আমার একমাত্র দখল করা মানচিত্র!
আমরা আমাদের হবো-
আমরা জমা রাখবো আমাদের হৃদয়!
চিরস্থায়ী বন্দোবস্তে সুদ জমবে ভালবাসার!
দেবে বলো এমন দশটা দিন?
২৪০ ঘণ্টার একটা অমরত্ব?
শাহনাজ রানু
.
মেক্সিকো সিটি
২.সময় নিয়ে কবিতা সঠিক সময়
সঠিক সময়
-জিয়াউল
কাউকে ঠকিয়ে দিয়ে ভাবছো,
জিতে গেছো?
তাই! আনন্দে ভাসছো জয়ের?
তোমার ভাবনা কতটা ভুল
অপেক্ষা করো শুধু
সঠিক সময়ের।
কারো স্বপ্ন নিয়ে করছো খেলা?
নিজেকে ভাবছো মস্ত বড় খেলোয়াড়?
ভুলে যেওনা শেষ চালের দান তোমার নয়
ওটা ঐ উপরে বসে থাকা বিধাতার।
কারো বিশ্বাসের প্রতিদানে
ছুরি মেরেছ পিছন থেকে?
তোমাকেও সে স্বাদ গ্রহণ করতে হবে একদিন
সময় গনো আজ থেকে।
৩.সময় নিয়ে কবিতা সোনালী ডানার চিল
সোনালী ডানার চিল
একটু একটু করে ভুলে যাচ্ছি সব।
ভুলে যাচ্ছি চেনা অবয়ব ;
প্রিয় মাটির ঘ্রাণ, ধানসিঁড়ির গান।
ফেলে আসা রথ, মধুর শৈশব।
একটু একটু করে ভুলে যাচ্ছি সব।
কি যে ছিল নেশা,
ডাঙ্গগুলি আর হাডুডু খেলা।
ঘোলা নদীর পানি,
নড়বড়ে ভেলা আনি
ভাসিয়ে ভাসিয়ে
ডুব সাঁতারে কাটাতাম বেলা।
কৃষাণীর চোখে অপরূপ প্রিয়া ;
হেমন্তের ধান, পিঠা পুলি প্রাণ
বৈশাখের মেলা,
পুতুল নাচ আর বায়স্কোপে
সময় বয়ে চলা।
একটু একটু করে ভুলে যাচ্ছি সব।
ভুলে যাচ্ছি মায়ার টান, আঁচলের ঘ্রান,
রূপকথার বর, জোছনার সরোবর।
ঐ যে দ্যাখ — ছুটে চলছে সময়,
দুরন্ত সাইকেল,
সোনালি ডানার চিল ।
পেছনে ফেলে হাওড় খাল বিল।
ধূলো মাখা পথ,
বৃষ্টির ধ্বনি।
লাল মোরগের ঝুঁটি।
ভেলা বিস্কুট আর মদন মোহনের
দই মিষ্টি রুটি।
একটু একটু করে ভুলে যাচ্ছি সব।
এখন এখানে কংক্রিটের ঘ্রাণ,
গুমোট আবহাওয়া,
বিষাদবাতাস, বাষ্পঘন দীর্ঘশ্বাস।
মায়া মাখা স্বর
হাক ছেড়ে ডাক দিয়ে বলে না —
অনেক তো হলো, এবার বাড়ি চল।
S.I ZITU
৪. সময় নিয়ে কবিতা নষ্ট সময়ের পদ্য
নষ্ট সময়ের পদ্য
..মুনিরুল ইসলাম চঞ্চল
খুব চেনা এই শহরে
খুব অচেনা আজ আমি,
নষ্ট হওয়া মূল্যবোধে
ভ্রষ্টরা আজ সবার চেয়ে দামী।
এখন এই শহর জুড়ে
মুখ আর মুখোশের দ্বন্দ্ব,
রাজনীতিতে আঁশটে মাছের গন্ধ।
কাঠগড়ায় বিবেক, বিচারক অন্ধ
উন্নয়ন কাব্যে, দুর্নীতি ছন্দ
মাদক রাজত্বে, মেধাবৃত্তি মন্দ।
খুব চেনা আমার শহরেতে
ভোটের উৎসবে হায়েনারা নাচে,
বিরোধী ধর্ষনের নগ্ন উল্লাসে।
স্বৈরাচারী চুম্বন গণতন্ত্রী গালে,
ধর্ষিতার রক্ত পতাকার লালে।
এখন শহরে সভা করে
প্রশ্নবিদ্ধ বুদ্ধিজীবী শেয়াল,
শকুনির ধারালো নখের আচড়
রক্তাক্ত ক্ষতবিক্ষত করে
বিপ্লবী কবির বুকের দেয়াল।
এখন শহর জুড়ে প্রযুক্তির ছায়া,
লালনের বুকে গুমরে কাঁদে
ভাওয়াইয়া ভাটিয়ালির মায়া,
চেনা প্রেমিকার মুখে ভাসে
অচেনা পতিতার দীর্ঘশ্বাসের কায়া।
খুব চেনা এই শহর জুড়ে
শোষকের রক্তচক্ষুর ভয়,
একটা প্রেমের কবিতা লিখতে
দগ্ধ কবির কলম হয় যে ক্ষয়।
এই শহরের গাঁটে গাঁটে
ধরেছে যে অকাল জং
স্বেচ্ছাচারীতার উদ্বায়ী খরতাপে
শুকিয়েছে পটুয়ার সব রং,
নির্মম নিঠুরতায় এখানে এখন
জীবনের কবিতা লিখে সং।
এই শহরে বিপ্লবীরা আজ
মিছিল করে না আর,
শিল্পীর শিল্পিত শরীর দিয়ে
ঘৃনিত নেতার মনোরঞ্জন
করে চতুর চাটুকার।
এই শহরে প্রেম এখনো
নরম মাটির মতোই সোদা,
নৈতিকতার অবক্ষয়ে বিদ্রোহী কবির
শানিত কলম আজ ভোঁতা।
নগর রক্ষীরাই আজ নগরের ত্রাস,
শীতলক্ষ্যার নোংরা জলে ভাসে
উকিল আর বিদ্রোহীর লাশ।
শহরেতে আর যায় না শোনা
আগুন ঝড়া শ্লোগান
বন্দুক যুদ্ধের আততায়ী গুলি
কেড়েছে সব পাখির কলতান।
খুব চেনা এই শহরে
খুব অচেনা আজ আমি,
ভ্রষ্ট নীতির নস্টামিতে
সত্য মাখা মুখের চেয়ে
পলিশ করা মুখোশটাই আজ দামী।
________
১২ জানুয়ারি ২০১৮
________
৫.সময় নিয়ে কবিতা শোনার সময় কোথায়
কবিতা শোনার সময় কোথায়
মনজুর মুকাদ্দাস
কবিতা শোনা মন বা মানুষ আর নেই,
তাই বুঝি সুরঞ্জনা-বনলতাদের দেখা মিলে না,
আকাশলীনারা কোথায় যেন হারিয়ে গেছে।
আজও কবিতা পঠিত হয়, বাচিক শিল্পীর
কণ্ঠে সুরে কবিতার ঢেউ উঠে নিভে যায়,
কবিতারা প্রাণ ফিরে পায়না।
হয়ত তুমিই ঠিক ছিলে,
দিন আর রাতের মিলনে গোধূলি কতো সুন্দর!
কিন্তু ওতে নিজেদের স্বকীয়তা থাকে না।
চাঁদ-সূর্যের মিলনে পৃথিবী তার গতি হারায়
তাই তো প্রবল ভালবাসার মিলন হতে নেই,
ওতে ভালবাসা থেমে যায়। কবিতারা প্রাণ হারায়,
কবি তার আকাশলীনাকে বরুণার মাঝে হারিয়ে
পাণ্ডুলিপি হাতরায়।
প্রহর বয়ে যায়, তাজা মাংসের বাজারে
কবিতা শোনার সময় কোথায়!