- স্বামীকে হাতে রাখার উপায়।
- স্বামীকে ইমপ্রেস করার উপায়।
- স্বামীকে কিভাবে আদর করতে হয়।
- স্বামীকে রোমান্টিক করার উপায়।
1.স্বামীকে হাতে রাখার উপায়।
জামাইকে বশে আনার জন্য জনৈক বান্ধবী আমাকে বুদ্ধি দিলো জামাইকে তাবিজকবচ করার। আমি এসবের ঘোর বিরোধী। প্রথমেই ওর বদবুদ্ধি শুনে রাগী গলায় বললাম,আমি এসব পারবো না!
ও আমার কাঁধে হাত রেখে বললো, আরে.. পুরুষমানুষের স্বভাব তো তুই জানিস! তারপর তোর জামাই হ্যান্ডসাম,সুন্দর। একে বশ না রাখলে চলে? তোর হুমায়ূন আহমেদেরই তো একটা কথা আছে, পুরুষ মানুষ আর ছাগল এই দুই জিনিসকে সবসময় বেঁধে বেঁধে রাখতে হয়!
হুমায়ূন আহমেদের নাম শুনে আমি একটু নরম হলাম। হুমায়ূন আহমেদ আমার দূর্বলতা। হুমায়ূন আহমেদের নাম নিয়ে কেউ কিছু বললে আমি না করতে পারি না। সুতরাং রাজি হলাম। বান্ধবী নিজেও তার স্বামীকে তাবিজ করবে।
এক শুক্রবারে বান্ধবীর সাথে চলে গেলাম হুজুরের কাছে। আমি ভেবেছিলাম হুজুর মানেই তার একটা খাস কামরা থাকবে,আশেপাশে কর্মরত খাদেম আর বাইরে মুরিদের লাইন…
কিন্তু বাস্তব কখনো উপন্যাসের মতো সুন্দর হয় না। গিয়ে একেবারেই অন্য জিনিস দেখলাম। গ্রামের এক চালাঘরে হুজুরের বসবাস। আমরা যখন পৌঁছলাম সে গাছের তলায় বসে এক হাত দিয়ে অন্য হাতের বগল চুলকাতে চুলকাতে বউয়ের সাথে ঝগড়া করছে। বউ বলছে, আরেকদিন যদি তুমি আমার বাপ মা তুলে কথা কউ আমি বাপের বাড়ি চলে যামু…
হুজুর জবাব দিতে গিয়েও আমাদের দেখে থেমে গেলেন। আমার মাথায় প্রথমেই এই কথাটা এলো যে, যার নিজের সংসারেই আগুন লেগে রয়েছে সে আমাদের সমস্যার কি সমাধান করবে?
হুজুর গম্ভীর মুখে একটা পাঞ্জাবী গায়ে দিয়ে এসে বসেছেন। আমাদের সমস্যা শুনে আরো গম্ভীর হয়ে গেলেন। বললেন,
বুঝতেছি তোমাদের মন অত্যাধিক চিন্তাযুক্ত! সমাধান হবে, চিন্তা নাই। আমার কাছে আসছো, সমাধান হবে!আমার কাছে আজ পর্যন্ত যারা আসছে তাদের বর ছাগলের মতো এখনো পর্যন্ত তাদের পেছন পেছন ঘোরে!
আমি বিরক্ত হয়ে ভাবলাম, কোথায় আসলাম এইটা? বরকে ছাগলের মতো ঘোরানোর দরকারটা কি? পুরুষ মানুষ সবসময় পেছন পেছন ঘুরলেও তো বিরক্ত লাগবে!
কিন্তু একবার এসে যখন পড়েছি পিছু হটার কোনো সুযোগ নেই।
সুতরাং, হুজুর আমাদের দুইজনকে দুইটা তাবিজ দিলেন। শোবার ঘরের বিছানায় রাখতে হবে। আর একটুকরো জাফরান মেশানো ছোট্ট একটা কাগজ যেটা বরের ব্যবহৃত যেকোনো বস্তুর মধ্যে রেখে দিতে হবে।
নিয়মানুযায়ী তাবিজটা বরের বালিশের ওয়ারের ভেতর রাখলাম আর কাগজটা বরের ব্যবহৃত পারফিউম খুলে তার ভেতর ডুবিয়ে রেখে দিলাম।
কয়দিন কেটে গেল। এখনো কোনো ফল পাওয়া যায়নি। তবে একটা অদ্ভুত জিনিস লক্ষ্য করছি, আমাদের বিড়ালটা আমার পিছু ছাড়ে না। আগে শুধু ক্ষুধা লাগলে আমার পেছনে পেছনে ঘুরত। বাচ্চা হওয়ার সময় ওর বেশী ক্ষুধা লাগে। কয়দিন আগেই তার বাচ্চা হয়ে গেছে। এখন আর তেমন বাড়িতেও থাকে না, সারাদিন বাইরে বাইরে ঘুরে সন্ধ্যার দিকে ওর জন্য বাটিতে রেখে দেয়া ভাত খেয়ে গিয়ে শুয়ে পড়ে। কিন্তু গত একসপ্তাহ ধরে ও আমার পেছন পেছনই ঘুরছে। মনে মনে আমি হাসি আর ভাবি, যেখানে আমার বরের আমার পেছনে পেছনে ঘোরার কথা সেখানে ঘুরছে ও!
অফিস থেকে বাড়ি ফিরেছে বর। আমি আড়চোখে দেখলাম সে আমাকে লক্ষ্য করছে কি না,আমার জন্য ফুলটুল কিছু এনেছে কি না। কিন্তু কই? কোনো কিছুই তো উন্নতি হয়নি। ভন্ড হুজুরের পেছনে দুই হাজার টাকা খামাখাই দিলাম।
আমি বরের পাশে গিয়ে বসে তার হাত ধরে বললাম,আমার কথা মনে পড়েনি সারাদিন অফিসে?
সে বিরক্ত হয়ে হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বললো, আগে পানি গরম করো! পা কাদায় পড়েছিল,বিচ্ছিরি অবস্থা!
বর উঠে চলে গেছে এদিকে বিড়ালটা আমার কোল থেকে নামছে না!
রাতে ঘুমাতে এসেছি,বিড়ালটা কিছুতেই আমার পিছু ছাড়ছিলো না বাধ্য হয়ে ঝাঁটা পেটা করে তাড়িয়ে দরজা দিয়ে দিয়েছি।
কি মনে করে বরের পারফিউমের শিশি দেখতে গেলাম,শিশি খালি।
বালিশের ওয়ার দেখতে গেলাম। তার ভেতরে তাবিজ নেই!
কৌতূহল দমন করতে না পেরে আমি সরাসরি ওকেই প্রশ্ন করতে গেলাম,
শোনো! তোমার পারফিউম শেষ? আমাকে বলোনাই কেন? আরেকটা কিনতাম!
বর পত্রিকার পাতা উল্টাতে উল্টাতে জবাব দিলো, শেষ হতো না! আমাদের বিড়ালটা ইঁদুর নিয়ে এসে ওর ঘরে বিচ্ছিরি গন্ধ করে ফেলছিলো।ঐখানে স্প্রে করে দিয়েছি,রুম স্প্রে পাইছিলাম না।
-আর বালিশ কি করছো? বালিশ তো তোমার ঐটা না!
:হুম বিড়ালের সদ্য বাচ্চা হয়েছে না! ছোট বাচ্চা, মেঝেতে ঘুমাতে পারে না। দেখলাম বালিশের ওপর উঠে বসে থাকে, তাই ওদের দিয়েছি ওটা!!!!
Jannatul Firdous
2.স্বামীকে ইমপ্রেস করার উপায়
আনরোমান্টিক বর
কাল বহুল প্রতিক্ষিত বিয়ের দিন। সারাদিন বিয়ের অনুষ্ঠানের প্রস্তুতির হাড় ভাঙ্গা পরিশ্রম শেষে মাঝরাতে বিছানায় যেতেই অপরিচিত নাম্বার থেকে একটা কল এলো।
আজ বলতে গেলে একাই একশ জনের কাজ করে গেছি। বাবুর্চি, বাজার, ডেকোরেশন, ফটোগ্রাফি, গাড়ি, গাড়ি সাজানো, ফুল শয্যা, শেষ মুহূর্তের টুকটাক শপিং, এক বিবাহিত বন্ধুকে নিয়ে ভয় লজ্জা নিয়ে ফার্মেসিতে যাওয়া, কিছু আত্মীয় স্বজনদের মান ভাঙ্গানো ইত্যাদি ইত্যাদি করে ভীষণ ক্লান্ত ছিলাম। কিন্তু তৃতীয় বারের মতো একই নাম্বার থেকে কলটা আসতেই না ধরে আর পারলাম না।
“আমি তুলি বলছি! আচ্ছা কালকে আমাদের বিয়েটা কি ভেঙ্গে দিতে পারেন?” তন্দ্রাচ্ছন্ন আমার কাছে কথাগুলো হঠাৎ করেই এটম বোমার মতো বলে মনে হলো। হুড়মুড়িয়ে বিছানা থেকে উঠে গেলাম। এ যে আমার হবু স্ত্রীর বয়ান! যাকে কি না আমি একদিনই খানিকক্ষণের জন্য দেখেছিলাম। অল্প কথাও হয়েছিল। তবে ওর মায়াবী মুখখানা বা কন্ঠটা এখনো স্পষ্ট মনে আছে। কিন্তু সেদিনের পর আর কোন কথা বা দেখা হয়নি।
হঠাৎ করেই হবু বউয়ের এই আবদার, বিয়ের আগের রাতে আমার জীবনে আরেকটা সিনেমার করুন পরিনতি, ভেবেই গা দিয়ে ঘাম ঝরতে লাগলো।
“আমি সত্যই দুঃখিত তুলি! তোমার আগের করা কল দুটো ধরতে পারি নি। আমি তোমার কথাটা ঠিক বুঝতে পারলাম না। এখন এই সময়ে এসে বিয়ে ভেঙ্গে ফেলতে চাইছো! এটা কোন কথা হলো!” আমার গলার স্বর ধরে এলো।
“আপনি আমাকে তুমি তুমি করে বলছেন কেনো? আমার সাথে আপনার কিন্তু এখনো বিয়ে হয়নি। আর আমিতো আপনাকে তুমি ডাকার পারমিশন দেইনি! দয়া করে আপনি করে বলুন।” তুলির বলা এ কথাগুলো সিরিয়াস না ফান বুঝতে পারলাম না। তবে এই মুহূর্তে বিয়ে ভাঙ্গলে আমার মান ইজ্জতের কি হবে সেই ভাবনাতেই গা হিম হয়ে আসতে লাগলো!
” আচ্ছা ঠিক আছে আপনি করেই বলছি।
আপনি বিয়ে ভাঙ্গতে চাচ্ছেন কেনো? আমাকে একটু খুলে বলবেন কি। যদি গুরুতর কোন কারণ থাকে, কথা দিলাম এ বিয়ে ভেঙ্গে দিবো। নিজ দ্বায়িত্বেই।” কথাগুলো বলার সময় নিজেকে বাংলা সিনেমার স্যাক্রিফাইসিং তৃতীয় নায়কের একজন বলেই মনে হচ্ছিলো। এই শেষ মুহূর্তে এসে এই বিপদটায় নিজেকে আর ধরে রাখতে পারলাম না। হাত পা কাঁপতে লাগলো।
“আপনাকে বিয়ে ভেঙ্গে দিতে বলছি তাই বলে এটা ভাববেন না যে আমার কারো সাথে এফেয়ার আছে। কিংবা কোন শারীরিক বা মানসিক সমস্যার মধ্যে আছি। বরঞ্চ আমি বিয়ের জন্য অনেকদিন আগে থেকেই সম্পূর্ণ প্রস্তুত আছি। এমনকি আপনি যেদিন আমাকে যমুনা ফিউচার পার্কে দেখলেন, সেদিন থেকেও কিন্তু আপনাকে ঘিরেই আমার বিয়ের ভাবনা।” কথাগুলো বলেই তুলির দীর্ঘশ্বাসে আমার নিজের মধ্যেও একটা খারাপ লাগা অনুভব।
“দেখাদেখির প্রায় দুমাস পর আমাদের বিয়ে অথচ আপনি আমাকে একটি বারের জন্য দেখাতো দূরে থাক কলও দেননি। আমার সারাজীবনের স্বপ্ন হবু স্বামীর সাথে অন্ততপক্ষে বিয়ের অনুষ্ঠানের পরিকল্পনাটা করবো। আমার স্বামীর শেরওয়ানিটা কি কালারের হবে কিংবা আমার সাজটা কি রকম হবে, এটা ঠিক করার ইচ্ছাটা যে বহু কালের।”
তুলির শেষ কথাটায় জীবন ফিরে পেলাম। বুঝলাম এই মেয়েতো অভিমান করে বসে আছে। আমার দিক থেকে যোগাযোগের প্রত্যাশায় ছিলো। কিন্তু আমি কিভাবে ওকে বলবো আমিও মনে মনে চাইছিলাম কিন্তু বাসা থেকে বড় আপা আর মায়ের কড়া নির্দেশ বিয়ের আগে কনের সাথে কোনরকম যোগাযোগ করা যাবে না।
“আমি সারা জীবন খুব রোমান্টিক একজন হাসব্যান্ড চেয়েছি। কারো সাথে প্রেম ভালোবাসায় যাইনি। বিয়ের কথা বার্তা ফাইনাল হতেই ভেবেছিলাম আপনি আমাকে জানার চেষ্টা করবেন। আমাকে আপনাকে বোঝার সুযোগ দিবেন।
সারাজীবনই বিয়ের অনুষ্ঠান নিয়ে আমার একটা স্বপ্ন ছিলো। আমার স্বামী আমার পছন্দের সাজে আমাকে এসে নিয়ে যাবে। সুন্দর ফটোশুট করবো। এক সাথে গুরুত্বপূর্ণ শপিং বা অর্নামেন্টস কিনবো। আমার পছন্দের স্যূটে জামাইকে নিয়ে রিসেপশনে আসবো। না, এর কোন কিছুই হয়নি। ভীষণ মন খারাপ।
আমার বড় ভাবীর কাছে সব পছন্দের কথা বলছি, আই মিন ভাবিই আমাকে সব খুটিয়ে খুটিয়ে জিজ্ঞেস করেছে। আমার পছন্দের সব কিছু ভাবির সাথেই কিনেছি। অথচ এগুলো কিন্তু আপনার বা আপনাদের পক্ষ থেকে কারোরই করার উচিৎ ছিলো। অনেক ভেবে দেখলাম আপনার সাথে আমার আসলে যায় না। বিয়েটা ভেঙ্গে দিন প্লিজ।” তুলির কাতর স্বরে বলা “প্লিজ” কথাটা অনেকক্ষণ ধরে কানে বাজলো। আমার হবু স্ত্রীতো দেখি রীতিমতো তেতে আছে।
“আপনার পছন্দের প্রিন্স স্যূট, ক্রিম কালারের শেরওয়ানি, মেরুণ কালারের পাগড়ি এমনকি নাগড়াটাও আপনার পছন্দেই কেনা হয়েছে। ফটোগ্রাফার, বিয়ের অর্নামেন্টস, ফুল শয্যা, স্টেজ সবকিছু কিন্তু আপনার পছন্দেই হচ্ছে। আর এ সব কিছু বড় ভাবির সাথে সারাক্ষণ যোগাযোগ রেখে, আমি নিজে করে যাচ্ছি। শুধু ভাবিকে অনুরোধ করেছিলাম, আপনাকে যেনো এসব না জানানো হয়। সারপ্রাইজ দিব বলেই।
আমার এই বিয়ে নিয়ে আপনার চাইতে আমার উত্তেজনা কিন্তু মোটেও কম নয়। আর হ্যাঁ, আমি কিন্তু আপনার পোষা বিড়াল মিনির সব ব্যবস্হাও কিন্তু আমার এই বাসায় করে রেখেছি। মিনিকে ছাড়া নাকি আপনি থাকতেই পারেন না, এটা জেনে।” তুলিকে একটানা কথাগুলো বলে থামলাম। মেয়েটা এখন সময় নিচ্ছে, সম্ভবত কথাগুলো শোনার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিল না। ইনফরমেশন প্রসেসিংয়ে।
“অনেক রাত হয়েছে, সারা দিন তোমার উপর অনেক ধকল গিয়েছে। যাও এখুনি ঘুমাও। আমিও ঘুমোতে যাই, না হলে কাল বিয়ের ছবি পঁচা আসবে। আর শুনো শাওন, আই লাভ ইউ!” কথাটা আচমকা বলেই তুলি খানিকক্ষণ চুপ করে রইলো।
আর আমিও সাহস করে জীবনের প্রথম কোন মেয়েকে বলে ফেললাম “আই লাভ ইউ টু।”
(শেষ।)