#ভ্যাম্পায়ার বর
পর্ব ৭
#M_Sonali
দেখতে দেখতে মিতুর সামনে বারান্দায় এসে দাঁড়ালো ভ্যাম্পায়ার ছেলে মেয়ে দুজন। ওদের দেখে ভয়ে ঠকঠক করে কাঁপতে শুরু করেছে মিতু। জোরে যে চিৎকার করবে বা দৌড়ে পালিয়ে যাবে সে সাহস টুকুও নেই মিতুর।মিতু বুঝতে পারছে আজকে ওর আর রক্ষা নেই।আগামিকাল সকালে হয়তো নিউজ পেপারে খবরে ওর নিউজই ছাপানো হবে। মিতুকে এমন ভয় পেতে দেখে ভ্যাম্পায়ার ছেলে মেয়ে দুজনের মুখে ফুটে উঠলো ভয়ানক হাসি। তারপর ভ্যাম্পায়ার ছেলেটা এগিয়ে এলো মিতুর দিকে। আর মুহুর্তের মাঝে মিতুর গলায় নিজের বিশাল আকারের দাঁতগুলো বসিয়ে দিলো। মিতুর চোখের সামনে সব কিছু যেনো ঝাপসা হয়ে এলো।
হঠাৎ কি হলো মিতুকে ছেড়ে দিয়ে একটুদুরে গাছের সাথে আছড়ে পরলো ভ্যাম্পায়ার ছেলেটা। আর মিতু নিচে ধপ করে পরে যেতে নিলো। কিন্তু তার আগেই কেউ একজন ধরে ফেললো মিতুকে। মিতু জ্ঞান হারাবার আগে শুধু এতটুকু বুঝতে পারলো যে ওর সামনে এক প্রকার যুদ্ধ চলছে কারো মাঝে। কিন্তু মিতু কারো চেহারাই ঠিক করে দেখতে পারলো না।
শ্রাবন নিজের ভ্যাম্পায়ার রুপে ঐ ছেলে ভ্যাম্পায়ারটাকে ছুড়ে ফেলে দিয়ে মিতুকে বাচিয়ে নেয়। আর তখনি মিতু জ্ঞান হারিয়ে নিচে পড়ে যেতে নিলে শ্রাবনী এসে ধরে ফেলে মিতুকে। কিন্তু মিতু শ্রাবনীকে দেখার আগেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।
ওদিকে শ্রাবন আর শ্রাবনীকে দেখে হকচকিয়ে ওঠে ঐ ভ্যাম্পায়ার ছেলে মেয়ে দুজন। তারপর দুজন মিলেই এক সাথে আক্রমন করে শ্রাবনের ওপর। এদিকে শ্রাবনী নিজের ভ্যাম্পায়ার রুপে এসে মিতুর গলায় নিজের বিশাল দাঁতগুলো বসিয়ে দেয়। তারপর সেখান থেকে ঐ ছেলে ভ্যাম্পায়ারের ছেড়ে দেওয়া ভ্যাম্পায়ার বিষটুকু চুষে নেয়। কারন ঐ ভ্যাম্পায়ার বিষ যদি মিতুর শরীরে থাকতো তাহলে মিতুর রক্ত পরা কিছুতেই বন্ধ হতো না। আর রক্ত বোমি হয়ে মারা যেতো মিতু। মিতুকে কোলে নিয়ে মিতুর রুমের বিছানায় শুইয়ে দিয়ে এলো শ্রাবনী। তারপর বাইরে এসে দেখলো শ্রাবন আর ঐ খারাপ ভ্যাম্পায়ার দুটোর মাঝে খুব মারামারি হচ্ছে। শ্রাবনী আর দেরি না করে শ্রাবনকে সাহায্য করতে চলে গেলো। বেশ কিছুক্ষণ এভাবে মারামারি করার পর থেমে গেলো সবাই। তখন শ্রাবন ঐ ভ্যাম্পায়ার দুটোকে রাগি গলায় জিগ্যেস করলো
— এভিক তিয়াসা তোরা কেনো এভাবে নিরিহ মানুষদেরকে রক্ত খেয়ে মেরে ফেলছিস। আর আজকে কিনা আমার বোনের বেষ্টফ্রেন্ডের ওপর আক্রমন করলি। তোরা কি ভুলে গেছিস আমি কে? আর আমি চাইলে তোদের কি করতে পারি?
শ্রাবনের কথা শুনে রাগে ফোস ফোস করতে করতে এভিক বললো
— তুমি কেনো বার বার আমাদের কাজে বাধা হয়ে দাড়াও? আমরা জানি আমাদের চাইতে তোমার শক্তি অনেক বেশি কিন্ত আমাদের শক্তিও কিছু কম নয়। আজকে আমরা কোনো মানুষ পাইনি রক্ত খাওয়ার জন্যে তাই এই মেয়েটির ওপর আক্রমন করেছিলাম।আমাদের রক্ত চাই তৃষ্ণা মেটানোর জন্যে।
— রক্ত খেতে চাইলে হিংশ্র প্রানীর রক্ত খাও আমাদের মতো, এভাবে নিরিহ মানুষদেরকে কেনো মারছো তোমরা। আর আমার প্রিয় বান্ধবীর দিকে নজর দেওয়ার সাহস কই পেলে তোমরা?(রাগি গলায় বললো শ্রাবনী)
শ্রাবনীর কথা শুনে তিয়াসা বললো
— তোমরা তো পিয়র ভ্যাম্পায়ার তাই দিনের বেলাতেও তোমরা মানুষের সাথে চলাফেরা করতে পারো। তোমাদের শিকারেরও কোনো অভাব হয়না কারন তোমরা তো ভালো নিরিহ মানুষের রক্ত খাওনা। কিন্তু আমরা মানুষের রক্ত ছাড়া কিছু খাইনা। আজ না হয় তোমরা আমাদের হাত থেকে ওকে বাচিয়ে নিলে কিন্তু ওর রক্তের স্বাদ যখন আমরা একবার পেয়েছি ওকে তো আমাদের চাইই চাই। আর সেই সময়টাও বেশি দুরে নয়।
কথাগুলো বলেই এভিকের হাত ধরে উড়ে চলে গেলো তিয়াসা নামের ভ্যাম্পায়ার মেয়েটা।
ঐ ভ্যাম্পায়ার দুটো চলে যেতেই শ্রাবন আর শ্রাবনী নিজের হিংশ্র রুপ বদলে মানুষ রুপে ফিরে এলো। তারপর শ্রাবনীর দিকে তাকিয়ে শ্রাবন বললো
— তুই আজকে রাতটা এখানে মিতুর কাছেই থাক শ্রাবনী। কারন এভিক আর তিয়াসাকে কোনো বিশ্বাস নেই ওরা আবারও আসতে পারে। একবার যখন মিতুর রক্তের স্বাদ পেয়েছে ওরা, তখন ওরা যে করেই হোক মিতুর রক্ত খাওয়ার জন্যে উন্মাদ হয়ে থাকবে।
— ঠিক আছে ভাইয়া আমি মিতুর কাছে থাকছি। কিন্তু তুমি কই যাবে এখন?
— আমিও আছি আশেপাশেই দরকার পরলে আমায় ডেকে নিস।
— হুমম ঠিক আছে।
কথাগুলো বলেই শ্রাবন উড়ে কোথাও চলে গেলো।আর শ্রাবনী মিতুর রুমে গিয়ে মিতুর গলায় ব্যান্ডেজ করে মিতুর পাশেই বসে রইলো।
,
,
গভির ঘুমে তলিয়ে আছে দুজন বৃদ্ধ বৃদ্ধা। গরিব বলে তাল পাতা দিয়ে কোনো রকমে একটা কুঁড়েঘর বানিয়ে তার মাঝে বাস করে এই দুজন। এভিক আর তিয়াসা রাগে আর রক্তের তৃষ্ণায় ফোস ফোস করতে করতে গিয়ে নামলো সেই বৃদ্ধ ও বৃদ্ধার ঘরের সামনে। তারপর আর এক মুহুর্তও দেরি না করে তালপাতার তৈরি বেড়া ফাক করে তার ভিতর ঢুকে পরলো তিয়াসা আর এভিক। আর মুহুর্তেই দুজন ঐ বৃদ্ধ বৃদ্ধার গলায় নিজেরের শুচালো দাঁতগুলো বসিয়ে দিলো। তারপর জোকের মতো করে রক্ত চুষে চুষে খেতে লাগলো। এমনিতেই বয়স্ক মানুষ তারওপর ঘুমের মাঝে এমন আক্রমন হওয়ায় চিৎকার করারও সময় পেলো না বৃদ্ধ বৃদ্ধা দুজন।মুহুর্তেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পরলো তারা।
রক্ত খাওয়া শেষ করে পৈশাচিক হাসি দিলো এভিক আর তিয়াসা। তারপর আবার মুখে গম্ভির ভাব এনে এভিক রাগি গলায় বললো
— আমার ঐ মেয়েটাকে চাই তিয়াসা। ওর রক্তের স্বাদটা এখনো লেগে আছে আমার মুখে। যে স্বাদ আমি এই বৃদ্ধর রক্ত খেয়ে পেলাম না।
— শান্ত হও এভিক, আমাদের ভুলে গেলে চলবে না যে ঐ শ্রাবন আমাদের চাইতে অনেক বেশি শাক্তিশালী ভ্যাম্পায়ার। ঐ শ্রাবন আর শ্রাবনী দিনের বেলাতেও মানুষের সাথে মিশে থেকে চলাচল করতে পারে। কিন্তু আমাদের শক্তি রাতের মাঝেই সিমাবদ্ধ। আমরা চাইলেও দিনের আলোয় বাইরে বের হতে পারবো না। তাহলে তখনি আমাদের ভশ্ম হয়ে মরতে হবে। তাই আমাদের যা করতে হবে খুব সাবধানে করতে হবে।
— শ্রাবন শ্রাবন শ্রাবন, আমার তো মন চায় আমি সবার আগে ওকেই রক্ত খেয়ে মেরে ফেলি। ও আমার প্রতিটা কাজে বাধা হয়ে দাড়ায়।
— নিজের রাগকে সংযত রাখো এভিক। আমাদেরও সময় আসবে যখন ঐ শ্রাবন আমাদের শক্তির সাথে পেরে উঠবে না। তাই আমাদের সেই সময়টার জন্যে অপেক্ষা করতে হবে।তুমি জানো তো এভিক সেই সময়টা কবে??
তিয়াসার কথা শুনে শয়তানি হাসি দিয়ে এভিক বললো
— হ্যা আমি জানি তিয়াসা, পুর্নিমার রাতে পিয়র ভ্যাম্পায়ারদের শক্তি বারে আর আমাদের মতো খারাপ রক্তচোষা ভ্যাম্পায়ারের শক্তি কমে যায়। ঠিক একি ভাবে আমাবস্যার রাতে পিয়র ভ্যাম্পায়ারদের শক্তি চলে গিয়ে তারা সাধারন ভ্যাম্পায়ার হয়ে যায়। আর আমরা সেদিন রাতে অসিম শক্তির অধিকার লাভ করি। সেদিন পিয়র ভ্যাম্পায়ারেরা আমাদের কাছে কিছুই নয়।
— হ্যা এভিক তুমি ঠিক বলেছো। তাই আমাদের সেই আমাবস্যা রাতের জন্যে অপেক্ষা করতে হবে। এখন চলো আমরা এখান থেকে চলে যাই।
তারপর আর একমুহুর্তও দেরি না করে এভিক আর তিয়াসা উড়ে সেখান থেকে চলে গেলো। আর সেখানে পরে রইলো বৃদ্ধা ও বৃদ্ধর রক্তশূন্য প্রাণহীন দেহ।
,
,
চাঁদনীর বেডের সামনে সোফার ওপর পায়ের ওপর পা তুলে বসে এক নজরে চাঁদনীর দিকে তাকিয়ে আছে শ্রাবন। আর মনে মনে বলছে
— দুষ্টুপাখির ঘুম দেখো? একজন পিয়র ভ্যাম্পায়ারের গলায় কামড় বসিয়ে তার ঘুম কেরে নিয়ে কি সুন্দর করে নিজে ঘুমিয়ে আছে। যেনো ওর মতো নিশ্পাপ মেয়ে আর দুটো হয়না। ইচ্ছেতো করছে ছুটে গিয়ে গলায় দাঁত বসিয়ে দিয়ে রক্ত চুষে নেই। কিন্তু কি আর করার সেটাও তো পারবো না। এই মেয়েটা যে তার দুষ্টুমিতে এই পিয়র ভ্যাম্পায়ারের মনটাকে কেরে নিয়েছে। আচ্ছা ওকে যেমন মিষ্টি দেখতে ওর রক্তও কি তেমনই মিষ্টি হবে? একটু খেয়ে দেখবো? একটু খাইই না বেশি একটা সমস্যা হবে না।
কথাগুলো মনে মনে ভেবেই চাঁদনীর কাছে এসে বসলো শ্রাবন। তারপর নিজের বিশাল দাঁতগুলো বের করে এগিয়ে গেলো চাঁদনীর গলার কাছে। তারপর চাঁদনীর গলায় কামড় দেওয়ার বদলে গভির চুমু একে দিলো শ্রাবন। চাঁদনী হালকা নড়েচড়ে উঠলে শ্রাবন দ্রুতো সেখান থেকে সরে সোফায় গিয়ে বসলো। তারপর মুচকি হেসে বললো ” মাই স্লিপিং কুইন”
চলবে,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,