ভয়ের গল্প পর্ব ১
নাজিয়া নাসরিন
গল্প নয় সত্যি।
২০১০সাল আমরা পুরানো বাসা ছেড়ে, তাজমহল রোডে নতুন বাসা ভাড়া নিলাম। বাড়িটা চার তলা, নিচ তলায় অফিস। দোতলায় ফ্যামেলি ভাড়া দেয়া তিন তলায় আমরা অর্থাৎ আর একটা ফ্যামেলি। চার তলায় একটা মিডিয়ার অফিস। বাসায় তিনটা বেড, এক ড্রইং, বড় বড় দুইটা বারান্দা। রান্না ঘর ও অনেক বড়।
আমার ফ্যামেলিতে আমার দুই মেয়ে এক ছেলে, ওদের বাবা।বড় মেয়ে ভার্সিটিতে পড়ে, মেঝটা কলেজে, ছেলেটা ছোট।প্রথম দিন ওদের বাবা বাসা বদল করেই তার ফ্যাক্টরি গাজীপুরে চলে গেলো। আমার দুই মেয়ে মিলে ঘর যতদুর পারলাম গোছালাম। এ বাসার গেট দিয়ে ঢুকেই বামদিকে ড্রইংরুম, ড্রইংরুমের তিনটা দরজা একটা দরজা দিয়ে অন্য রুমে যাওয়া যায়। আমার বড় মেয়ে ড্রইংরুমটাই ওর বেডরুম বানাতে চাইলো, আর মাঝের যে রুম সেটাকে আমরা ড্রইংরুম বানালাম। আমরা সবাই ক্লান্ত।
রাত দেরটা থেকে দুটার মধ্যে ঘুমাতে গেলাম। সকালে মেয়েরা কলেজ, ভার্সিটিতে গেলো। আমি সারাদিন যতটুকু পারলাম ঘর গোছালাম। বিকালে সবাই মিলে বাকি কাজ শেষ করে। রাতে ঘুমাতে গেলাম। রাত তখন আনুমানিক দেরটা দুটো হবে। বড় মেয়ে (যে ড্রইংরুমকে বেডরুম বানিয়েছে) চিৎকার করতে করতে আমার ঘরে দৌড়ে এসেছে। ওর চিৎকারে,আমি লাফ দিয়ে উঠেই মেয়েকে জড়িয়ে ধরে জানতে চাই কি হয়েছে, সে সময় ও কেঁপে কেঁপে উঠছিলো। ও বললো, আমার ঘরে যেনো কে? আমি বললাম চলো আমি দেখবো কে? ও রাজি হলো না। আমি সব ঘরের লাইট জ্বেলে একাই গেলাম ওর ঘরে।
ঘরে ডিম লাইট জ্বলছিলো, তা তে সব পরিস্কার দেখা যাচ্ছিলো। তার পরে ও আমি লাইট জ্বালিয়ে ঘরের সব যায়গায় খুজলাম কেউ নেই। ডাকলাম মেয়েকে, মেয়ে এলো সাথে ছোট মেয়েকে নিয়ে। বললাম দেখো কেউ নেই, তুমি স্বপ্ন দেখেছো। না মা আমি নিজে দেখেছি।প্রথমে ভেবেছিলাম তুমি এসেছো আমি ঘুমিয়েছি কি না দেখতে। এসে আমার পাশে বসেছো। আমি অন্য পাশে কাত হয়ে শুয়ে ছিলাম, তুমি বসাতে আমার ফোমের বিছানা একটু ডেবে গিয়েছিলো।আর তুমি জেনো বির বির করে কি বলছিলে।
তখন আমি ভাবলাম তুমি সুরা পড়ছো।কিন্তু গলাটা তোমার না।একজন পুরুষের গলা।আর সে সুরা পড়ছে না। সে আরবি ভাষায় কি জেনো বলছে। তখন আমি চিৎকার করে এক দৌড়ে তোমার ঘরে আসি।আমি আর এ ঘরে ঘুমাবো না।সে রাতে চারজন এক খাটে ঘুমালাম। সকালে যার যার গন্ত্যব্যে সে, সে চলে গেলো, আমি সারাদিন যতটুকু পারলাম ড্রইংরুমকে ড্রইংরুম বানালাম।ওরা ফেরার পরে মাঝের রুমকে বেডরুম করে বড়কে দিলাম, তার পাশেরটায় ছোটমেয়ে পড়াশুনা করে রাতে ঘুমায় আমার সাথে।পরের দিন থেকে আর এক যন্ত্রনা।
ছেলেটার বয়স দের বছর। একটু আধটু কথা বলতে পারে।ড্রইং ডাইনিং এর বরাবর প্যাসেজ,পরের দিন ছেলেটা সেখানে বসে খেলনা দিয়ে খেলছে। আর বলছে মামা, মামা। বাসায় আমি আর আমার ছেলে। সকালে ছুটা বুয়া কাজ করে চলে গিয়েছে। আমি রান্না ঘরে ছিলাম। রান্না ঘর থেকে ছেলেকে দেখা যায়। আমি ওর কথা শুনে ভাবলাম বাচ্চা মানুষ কি না কি বলছে। কিন্তু সে বলেই যাচ্ছে মামা মামা। আমি ওর কাছে গিয়ে বললাম, আরন কোথায় মামা (ছেলের নাম আরন) ও হাত উচু করে রান্না ঘরের জানালার দিকে দেখালো। রান্না ঘরের জানালা দিয়ে ড্রইংরুমের দরজা দেখা যায়।আমি কিছুই দেখতে পেলাম না।
ও বলেই যাচ্ছে ঐযে মামা। আমার তখন একটু ভয় ভয় লাগছিলো। আমি ছেলেকে নিয়ে ঘরে চলে আসি।এর পর থেকে প্রায় দুপুরে ছেলে খেলতে বসলেই মামা মামা ডাকতো। আমি তখন আরনকে রান্না ঘরেই বসিয়ে রান্না করতাম। দুপুর সময়টা আমার ও একটু ভয় ভয় লাগতো।একদিন রাতে আমি ঘুমিয়ে যাই, সময় তখন এগারোটা হবে,ছেলেটা পটি করতে চাচ্ছে,বড়মেয়ে ওকে নিয়ে প্যাসেজে পটিতে বসায়,তখন ছেলেটা জানালার দিকে তাকিয়ে বলতে থাকে, ঐ যে মামা।কোথায় মামা ভাইয়া? ঐ যে মামাটা কান্না করছে।
এ কথা শুনে ছোট মেয়েটা ও দৌড়ে ওদের কাছে আসে।ছোট মেয়ে এসেই বলে, কই মামা,ছেলে বলে মামা চলে গেছে।তখন ওরা তারাতারি কাজ শেষ করে ঘরে চলে আসে। এর মাঝে রংপুর থেকে আমার বড় বোন বেড়াতে এলো। বাসায় দুপুরে আমরা তিনজন থাকি আমার ভয়ও একটু কমেছে। ছেলে সারাবাড়ি ঘুরে, কিন্তু প্যাসেজ এ গেলেই সে মামা ডাকা শুরু করে, এটা আমার বোন ও খেয়াল করেছে। একদিন দুপুরে খাবারের জন্য আপাকে ডাকতে, আপা দেখি মুখ কালো করে বসে আছে, কি হয়েছে আপা মন খারাপ কেনো? খেতে আসো,
তোর ছোট মেয়ের কান্ডটা দেখলি? গোছল করে চুল ঝাড়লো, সব পানি আমার গায়ে লাগলো, একটু তাকায়ে ও দেখলো না। চুল আস্তে ঝাড়তে বললাম, কথা না শুনে ড্রইং রুমে চলে গেলো।
আমি আপা কে আস্তে করে বললাম। আপা তুমি কি বলছো, ও তো এখনো কলেজ থেকে আসে নাই। ওর ছুটি চারটায়। এখন আড়াইটা বাজে। তাছাড়া বাইরের গেট তো বন্ধ, একথা বলেই আমি বাইরে গেটের কাছে গেলাম।গেট বন্ধ।আপা ও আমার সাথে এলো। আপা বললো তুই ড্রইংরুমে চল, আমি দেখাচ্ছি। আমরা ড্রইংরুমে গেলাম কেউ নাই। সব ঘর বারান্দা ঘুরে দেখলাম, কেউ নাই। আপার গায়ে তখনো অল্প অল্প পানি লেগে আছে।
চলবে…………
ভয়ের গল্প পর্ব ২
নাজিয়া নাসরিন।
গল্প নয় সত্যি।
আমার আপা পরহেজগার মানুষ। দেখলাম সে দোয়া কালাম পড়ছে। আমায় বললো, তোমরা বাসাটা ছেড়ে দাও।
আপা কি করে সম্ভব, দুই মাস হলো এ বাসায় এসেছি। ওদের বাবা শুধু শুক্রবার এখানে থাকে।ও কিছুতেই বাসা ছাড়তে রাজি হবে না।তাছাড়া ঢাকায় এতো কম ভাড়ায় এতো বড় বাসা পাওয়া যাবে না।
আপা আমার কথা শুনলো কি শুনলো না ব্যাগ গোছাতে শুরু করলো।
আপা কই যাও? তোমার বাসায় থাকলাম তো কয়েকদিন, এখন অন্য বোনের বাসায় বিকালে চলে যাবো।
আপা সত্যি সত্যি চলে গেলো।যাবার সময় আবার বলে গেলো, বাসাটা ছেড়ে দাও।
ওদের বাবা বাসায় আসলে আমি বললাম, বাচ্চারা এ বাসায় ভয় পাচ্ছে,
কিসের ভয়? বাচ্চাদের সবকিছুতে গুরুত্ব দিও না।
বাসা বদলানো অনেক ঝামেলা।তাছাড়া তিন হাজার স্কয়ার ফিট এর বাসা। খোলা মেলা,এতো সুবিধা কোথায় পাবে। আমি ও ভেবে দেখলাম, কথা সত্যি। তখনো বুঝতে পারি নাই, আমাদের জন্য কি অপেক্ষা করছে।
সন্ধ্যার পর, মেয়েরা ড্রইংরুমে কেউ যেতে চায় না।মেহমান এলে আমিই সাহস নিয়ে মেহমান কে বসতে দেই।
গত দুই মাস থেকেই ছেলেটা দু,চারদিন পর পর অসুস্থ হচ্ছে। হয় পেট খারাপ,নয় তো জ্বর, নয় বমি। একটার পর একটা আছেই। ভাবলাম, মেয়েরা ভয় পায়। ছেলেটা ও অসুস্থ থাকছে, বাসায় হুজুর ডেকে কোরআন খতম দেবার ব্যাবস্তা করি।
মাদ্রাসার ছাত্ররা এসে কোরআর খতম দিলো।আমার ছেলেটার জন্য দোয়া করে ওরা চলে গেলো( ড্রইংরুমেই খতমের ব্যবস্থা করেছিলাম।)
মাগরবের আগেই সবাই চলে যাবার পরে, ঘর পরিস্কার করতে থাকি, আমার ছেলেটা দরজার সামনে দাড়িয়ে ছিলো।আমি তাকে ডাকলাম ভেতরে আসার জন্য, ও মাথা নেড়ে না করে, বলে মামা, মামা। হাতের সব কিছু টেবিলে ফেলে রেখে, ছেলেকে কোলে নিয়েই দৌড়ে ঘরে আসি।বুঝে যাই আমি ঘরে একা ছিলাম না। এতো ভয় কখনো পাইনি।মেয়েরা বললো কি হয়েছে মা,ওদের কিছুই বুঝতে দিলাম না।আমি ভয় পেয়েছি এটা ওরা জানলে, বাথরুমেও কেউ একা যাবে না।
ছোট মেয়ে প্রায় রাত করে পড়াশুনা করে। একরাতের ঘটনা, আমরা সবাই ঘুমিয়ে পড়েছি,মেয়েটা পড়ছে(, আমাদের বাসার সামনে একটা বারান্দা। বাসার পেছনে এল, প্যাটার্ন এর একটা বারান্দা। বাসার পেছনের বাসাটা ভেংগে ফেলেছে।পেছনটা একদম ফাঁকা।)
রাত বারোটার মত হবে। হঠাৎ শোনে ওর জানালায় খট, খট,শব্দ,ও প্রথমে ভেবেছে ভুল শুনেছে, কারন ওর জানালার পেছনে, এল প্যাটার্নের বারান্দা।ওখানে যেতে হলে আমার ঘর অথবা ওর ঘর দিয়ে যেতে হবে।সবার ঘরের দরজা বন্ধ। ও আবার পড়ায় মন দিতেই, জানালার কাছে হালকা বাঁশির শব্দ। সেই বাঁশির শব্দকে পাত্তা না দিয়ে,ও পড়ছিলো। এবার বাঁশির আওয়াজটা ওর কানের সামনে বেঁজে উঠলো। ওর ঘর থেকে একটা শব্দই আমার কানে এসেছে, মা। আমি ঘুমের চোখে কি ভাবে যে ওর ঘরে গিয়েছি, বলতে পারবো না। দেখি মেয়ে আমার বিছানায় পড়ে আছে। সারা ঘরে বাঁশির শব্দ। আমার চিৎকারে বড়মেয়ে ও চলে এসেছে।আমরা দুজনে ধরে ওকে আমার ঘরে নিয়ে এসেছি।
সারারাত আমরা আর ঘুমাইনি।ফজরের নামাজ পড়ে বাড়িওয়ালাকে ফোন দিলাম। বাড়িওয়ালা থাকে উত্তরায়। সকাল এগারোটার সময় বাড়িওয়ালা,ও তার মিসেস এসে জানতে চাইলো কি হয়েছে।বললাম আপনার বাসায় আমরা সবাই ভয় পাচ্ছি, এখানে কি খারাপ কিছু আছে? ভাবি (বাড়িওয়ালি) একটু রেগে গেলো। কি থাকবে এখানে। বাসায় কিছু থাকে না।পেছনের বারান্দার পাশে যে বাড়ি ভেংগে ফেলেছে, সেখানে এক নাইট গার্ড ফাঁসি দিয়ে মরেছে। তো কি হয়েছে?
চলবে….
ভয়ের গল্প পর্ব ৩
নাজিয়া নাসরিন।
গল্প নয় সত্যি।
.
আমি হতভম্ব, ভাবি কি বললেন এটা? আপনি জানেন গতরাতে আমরা সারারাত জেগে পাশের ঘরের বাঁশির আওয়াজ শুনেছি।বাঁশির শব্দ আগে আমার মেয়ে শুনেছে, তারপর আমরা যখন ঘরে গিয়েছি, তখন ও সারা ঘরে বাঁশির শব্দ হচ্ছিলো। আমরা এঘরে এসে সবাই ভয়ে কাঁপছিলাম।
আরে ভাবি, আপনি আমার বেগমের কথা ধরবেন না। ও কি বলতে কি বলে। সে অনেক আগে এক নাইট গার্ড ফাঁসি দিয়ে মরেছিলো।ঐ বাসা ভেংগে ও ফেলেছে।ঐ মৃত্যুর সাথে আমার বাসার কোন সম্পর্ক নাই।
তাহলে বাঁশি কেনো বাজলো? আর ড্রইংরুমে কে থাকে। রাতে ড্রইংরুমের লাইট বন্ধ করতে কেউ যেতে চায় না।আমি বন্ধ করে, পেছন ফিরে আসতে গেলে মনে হয়, আমার পেছনে কে দাড়িয়ে আছে। এসব কথা আমি বাচ্চাদের বলি না। এমনিতেই ভয়ের অনেক কিছু ঘটে গেছে।বলেন কি আছে এখানে?
ভাবি আপনি অযথাই ভয় পাচ্ছেন, বাসা বড় আপনারা মানুষ কম, তাই সব কিছু ফাঁকা লাগে, তাছাড়া কিছু না, আর অন্য কোন সমস্যা থাকলে বলেন?
না আর কোন সমস্যা নাই।এটাই সমস্যা।
দূর, এটা কোন সমস্যাই না।চলো চলো অন্য ভাড়াটিয়াদের সাথে কথা বলি, আর ভাবি, ছাদের চাবি আপনার কাছে রাখবেন,চারতলারা চাইলে দেবেন না।
বলেই চাবি আমার হাতে দিয়ে ওনারা চলে গেলেন। আমি ওদের বাবাকে ফোন দিয়ে সব জানালাম।বললো শুক্রবারে এসে কথা বলি। কাজের অনেক চাপ।
আমার বাসায় একা থাকতে ভালো লাগছিলো না। আমি আমার ভাবিকে আসতে বললাম, কয়েকদিন থাকার জন্য।পরের দুটো দিন, কোন উৎপাত ছাড়াই কাঁটিয়ে দিলাম, পরের দিন ভাবি এলো দিনাজপুর থেকে। বাসায় মানুষ বেশি থাকলে ভয় একটু কম লাগে,ওদের বাবা এসে, ভালোমত সব শোনার পর,বললো, আমিও তো থাকি কই কিছুই তো দেখি না।আর বাঁশির শব্দ বাইরে নাইট গার্ড পাহাড়া দেয়, তার শব্দ শুনেছো। শুধু শুধুই সবাই ভয়ে অস্থির। পাগলামো করো না, ভাবি আসছে, আপাদের আসতে বলো, সবাই মিলে থাকলে ভয় টয় চলে যাবে। আমি এখন নতুন করে বাসা খুজতে পারবো না, আমার ফ্যাক্টরিতে কাজ অনেক।
দুই দিন থেকে ওদের বাবা চলে গেলো। দুটোদিন আমরা বাইরে ঘুরে ঘুরেই সময় কাঁটালাম। বাইরে আমরা খুব ভালো থাকতাম, বাসায় ঢুকলেই, কেমন জেনো গা ছম ছম করতো।
সেদিন এশার নামাজ পড়ে টেবিলে খাবার দিয়ে ভাবি বাচ্চাদের ডাকলাম। ভাবি এতোক্ষন বড় মেয়ের ঘরে শুয়ে ছিলো।সবাই খেতে বসেছি।ভাবি বললো, তোমার বাসায় কি মেহমান এসেছে? সে কি আগে খেয়ে নিয়েছে?
কোন মেহমান? তুমি ছাড়া আর তো মেহমান নাই।
তবে কে ড্রইংরুমে নামাজ পড়লো?(ড্রইংরুমে সব সময় ডিমলাইট জ্বালানো থাকে, আর ড্রইংরুমের তিন দরজার একটা বড় মেয়ের রুমের সাথে) দেখলাম একজন দাড়িওয়ালা বয়স্ক লোক নামাজ পড়ছে।ভাবলাম কেউ মনে হয় এসেছে।
তুমি কি ভাবে দেখলে ঐ দরজা তো সন্ধ্যার পরে বন্ধ থাকে।
না খোলা ছিলো, আমি শুয়ে ছিলাম, তার নামাজ পড়া দেখে আমি উঠে বসেছি। তারপর ভালো করে দেখলাম, লোকটাকে আমি চিনতে পারি কি না। চিনতে না পেরে ভাবলাম, তোর শশুর বাড়ির কেউ হবে।
টেবিল থেকে উঠলাম,মেয়েরা ভয়ে খাবারে হাত রেখে বসে আছে।তোমরা খাও আমি দেখছি, বলে ঘরে দরজার কাছে গেলাম, দরজা হা করে খোলা।
অথচ আমি সন্ধ্যার আগে নিজ হাতে দরজার ছিটকানি লাগিয়েছি।
ফিরে এসে বললাম, তোমরা কেউ দরজা খুলেছো? ওরা না করলো।ভাবিকে নিয়ে ড্রইংরুমে গেলাম। সব কিছু ঠিকঠাক আছে। অন্য সময় হলে ভাবিকে বলতাম, তুমি ভুল দেখেছো। কিন্তু,কয়েকদিনের ঘটনার কথা ভেবে তাকে কিছু বললাম না।
কি সমস্যা আমায় বলো তো?
ভাবিকে সব খুলে বললাম, ভাবি বললো দিনাজপুরে এক হুজুর আছে,তার কাছে এই ব্যাপারে চানতে চাইবো।তাহলে কাল আমি অন্য ননদের বাসায় বেড়ায়ে, দিনাজপুর চলে যাবো।
আর কয়েকটা দিন থাকো, ভাবি রাজি হলো না। আমি আর জোড় করলাম না। এই ভয়ংকর বাসায় কে থাকতে চাইবে। সেই রংপুরের আপাকে আবার ফোন দিয়ে আসার জন্য অনুরোধ করলাম।আপা দুই দিনের জন্য আসতে রাজি হলো।পরের দিন ভাবি চলে গেলো।আপা এসেই বললো সে দুইদিন পরে রংপুর চলে যাবে।আমি তাতেই রাজি হলাম।দুইদিন পার হলো ভালো ভাবেই,আজ আপা চলে যাবে রাত এগারোটায় বাস। রাতের খাবার খেয়ে, বড় মেয়ের ঘরে বসে আমি, আপা গল্প করছিলাম।আপা বললো বাসাটা ছেড়ে দাও।
বললাম আগামি মাস থেকে বাসা খোজা শুরু করবো।(এল প্যাটার্ন এর বারান্দাটা বড় মেয়ের জানালার সাথে লাগানো।)
বারান্দার সাথে লাগানো সব জানালা, দরজা বন্ধ,হঠাৎ জানালায় ঘস, ঘস শব্দ, ভাবলাম বাচ্চারা দরজা খুলে বারান্দায় গিয়েছে। কিন্ত সন্ধ্যার পরে ঐ বারান্দায় যাবার দরজা, জানালা খোলা রাখি না। তারপর দুজনেই তাকালাম জানালার দিকে, না তাকানোই ভালো ছিলো, পাশের বাসার জানালার হালকা আলো আসছিলো। দেখলাম একটা লোক দাড়িয়ে আছে। হাতদুটো আমার জানালার উপরে রাখা,হাত সহ পুরো শরিরটাই লোমশ।
আমরা চিৎকার দেবার শক্তি ও হারিয়ে ফেলেছি,আমাদের হাত, পা,অবস হয়ে যাচ্ছে।লোকটার মুখ ধিরে ধিরে জানালা ভেদ করে ঢুকে যাচ্ছে, এসময় ড্রইংরুম থেকে কে জেনো চিৎকার করে বলছে, যা বেড়িয়ে যা। যা এখান থেকে। আমাদের কোথা থেকে শক্তি এলো,জানি না। মহান আল্লাহ্ আমাদের বাঁচিয়ে দিলেন।দৌড়ে আপাকে নিয়ে বাচ্চাদের ঘরে চলে আসি।মুখ দিয়ে কোন আওয়াজ বের হচ্ছিলো না।
দুজনেই কাঁপছিলাম, কি ছিলো এইটা। ড্রইংরুম থেকে ধমক দিলো কে?আমরা কি জেগে স্বপ্ন দেখলাম? কি হলো এটা?
মেয়েরা বার, বার জানতে চাইলো কি হয়েছে
ওদের কিছুই বললাম না
আমরা কিছুতেই স্বাভাবিক হতে পারছিলাম না আপার যাবার সময় হয়ে গেলো। সারাবাড়ি লাইট জ্বালানো। তারপরে ও আপাকে গেট পর্যন্ত দিয়ে আসতে ভয় লাগছিলো।
সে রাতে, সব ঘরের লাইট জ্বালিয়ে রেখেই সবাই এক ঘরে ঘুমালাম।বাচ্চারা ঘুমালো,আমি ঘুমাতে পারলাম না। ঘরের দরজা বন্ধ, তারপরে ও মনে হচ্ছিলো, এই বুঝি দরজা খুলে কেউ ঘরে ঢুকলো।
সকালে সবাই তাদের কাজে যাবার পর,আমি ছেলেকে নিয়ে বাসা খুজতে বের হলাম। এবাসায় আর না।
দুপুরে বাসায় এসে দেখি গেটের কাছে, দিনাজপুর থেকে আমার এক চাচাতো বোনের স্বামী তার ভার্সিটি পড়া ছেলে,সাথে একজন কাজের মহিলা নিয়ে দাড়িয়ে, আমাকে ফোন দিতে চেষ্টা করছে। তালা খুলে ওদের নিয়ে ড্রইংরুমে বসালাম।ভাই বললো, ছেলেটাকে ভার্সিটিতে ভর্তি করিয়েছি। দুই একদিন তোমার এখানে থাকবে, ওকে হোস্টেলে দিয়ে দেবো। আর যদি কিছু মনে না করো, তোমার এতোবড় বাসা, আমি ওর খরচ দেবো,যদি তোমার কাছেই রাখতে, আমি টেনশন মুক্ত হতাম।
আমি বললাম,
আমার বাসায় তো আলাদা কোন রুম নাই ভাই,
তা, তে কি, এতো বড় ড্রইংরুম এখানে ছোট একটা খাট দিলেই সমস্যার সমাধান।খাট আমি এখনই কিনে আনছি, তোমার অন্য কোন সমস্যা না থাকলে, আমার ছেলের থাকতে কোন সমস্যা হবে না।ও খাটে বসেই পড়াশুনা করবে।
কি করে বলি এই ড্রইংরুমে সমস্যা। বিস্বাস করবে? ভাববে তার ছেলেকে না রাখার বাহানা বানাচ্ছি। আমি শাহারিয়া কে বললাম (ভাগিনার নাম শাহারিয়া) তুমি এতো বড়রুমে একা থাকতে পারবে? ভয় লাগবে না।
শাহা, হেসে দিয়ে বললো, কি বলেন খালামনি, আমি খোলা মাঠে ও ঘুমাতে পারি। আমার কোন ভয় নাই।
আমিও চিন্তা করে দেখলাম একজন ছেলে মানুষ বাসায় থাকলে ভালোই হবে। তাছাড়া ভালো একটা বাসা পেলেই এই বাসাটা ছেড়ে দেবো।
ওরা আমার জন্য কষ্ট করে একজন কাজের মহিলা এনেছে।আমি মেনে নিলাম।
বেশ কয়েকটা দিন খুব ভালো ভাবেই কেঁটে গেলো।ভাই চলে গিয়েছে, শাহারিয়া ভালোই আছে। শুধু খাবার সময় আমরা একসাথে খাই, তাছাড়া শাহা, সব সময় ড্রইংরুমেই থেকেই পড়াশুনা, নামাজ কালাম পড়ে।
আমার এখানে থাকতে হলে কিছু নিয়ম আমি ওকে বলে দিয়েছি। তার মধ্য একটা, রাত জেগে মোবাইল দেখা যাবে না। শাহা, সেই কথা অনুযায়ী চলছে।
ফজরের নামাজের সময় শাহারিয়াকে, কাজের বুয়া সহ সবাইকে নামাজের জন্য ডেকে, আমি নামাজ পড়ে,
প্যাসেজ, সামনের বারান্দা আমার ঘর, হাটা হাটি করি। শাহা, নামাজ পড়ে, পড়তে বসে। আমি সেই সময় ওকে হালকা, চা,নাস্তা দেই।
একদিন ওকে চা দেবার সময় আমায় বললো,
খালামনি একটা কথা বলবো?
হা বলো,
খালামনি আমি কিন্তু, রাত এগারোটায় পড়া শেষ করে শুয়ে পড়ি, রাতে মোবাইলে কারো সাথে কথা বলি না, কোন ভিডিও দেখি না,কিন্তু আপনি প্রতিদিন রাতে আমার মশারী তুলে আমার দিকে তাঁকিয়ে দেখেন আমি ফোনে কিছু করছি কি না? বিস্বাস করেন আমি আপনার কথা মতই চলি,শুধু শুধু রাত জেগে কষ্ট করে আমাকে পাহারা দেবার কোন দরকার নাই। আমি ফোন ধরিই না।
আমি পাথর, নড়া চড়ার শক্তি ও হারিয়ে ফেলেছি।
ভুলে ও রাতে শাহার ঘরে আমি যাইনি, মশারী তোলা তো দূরে থাক।
ভেবেছিলাম, মানুষ বেশি হওয়াতে সব কিছু ঠিক হয়ে গেছে।
বললাম বাবা, কাল তোমার ঘর বদলায়ে দেবো, বড়মেয়ের ঘর তোমাকে দেবো, আর ওকে পাঠাবো ছোটর ঘরে, ঘর যেহেতু অনেক বড়, তখন এক ঘরে দুই খাট, কোন ব্যাপার না।
না না খালামনি, আমি এখানেই খুব ভালো আছি।আপুর ঘর থেকে (শাহা আমার দুই মেয়েকেই আপু ডাকে)আপনাদের কথা বার্তা শোনা যায়, ড্রইংরুমটা নিরিবিলি, আমি পড়াশুনাতে মনোযোগী হতে পারি।
আমি ওকে কিছুই জানাতে পারলাম না। শুধু বললাম, আমি যে এসে তোমাকে দেখি, তুমি কি ভয় পাও?
ও হেসে দিলো, কেনো ভয় পাবো? আমি আপনাকে দেখে তারাতারি ঘুমাতে চেষ্টা করি।অনেক সময় আগে ঘুমিয়ে গেলে জানতে পারি না আপনি এসেছিলেন কি না।
শাহারিয়া, আমার কথা শুনলো না ড্রইংরুমেই থেকে গেলো।
কিন্তু আমি ভয় পেলাম, পরের ছেলে কিছু যদি ক্ষতি হয়।
ভাবলাম শাহার মা,কে সব জানাবো। কিন্তু যদি বিস্বাস না করে। কি এক সমস্যায় পড়লাম।
সমস্যার সমাধান শাহারিয়াই করে দিলো।
চলবে…….
ভয়ের গল্প শেষ পর্ব
নাজিয়া নসরিন।
গল্প নয় সত্যি।
…..
সেদিন সন্ধ্যায় শাহারিয়া,আমাকে জানালো, ওর কোন বন্ধুর বোনের বিয়েতে দিনাজপুর যেতে হবে,তাছাড়া ভার্সিটিও বন্ধ আছে। বেস কয়েকদিন দিনাজপুরে থাকবে।
মনে মনে একটু খুশিই হলাম,আমাব চিন্তা ও হলো, বাসায় একজন ছেলে ছিলো, সে ও দশ বারো দিনের জন্য থাকছে না।আবার না জানি কি হয়।
শাহা চলে যাবার পরে, আমি একদিন ও বসে থাকিনি, প্রতিদিন বাসা খুজতে বের হয়েছি।কষ্ট হয়েছে, ছেলেকে নিয়ে বাসা খুজতে।
শাহা থাকতে মাঝে মাঝে ড্রইংরুমে যেতাম, ও যাবার পরে, আবার যাওয়া বন্ধ করেছি।এর মাঝে আমার দূর, সম্পর্কের ছোট বোন আসলো, আমিই রিনাকে জোড় করে ডেকে আনলাম।বাসাটা খালি রাখলেই ভয় বেশি লাগে। তাছাড়া বাসায় ছেলেকে ওর কাছে রেখে,আমি বাসা খুজতে যেতাম।
আর বলে যেতাম,ড্রইংরুমে যাবার দরকার নাই আমার ঘরে থাকিস,
ছেলে ড্রইংরুমের জিনিস পত্র ধরে নষ্ট করে।
আমি তো আপা তোমার ঘরেই থাকি, আরন চলে যায় ড্রইংরুমে, আর মামা, মামা ডাকে। কাকে
মামা ডাকে?
বললাম, কি জানি কাকে ডাকে (এ ডাক শুনে আমরা অভ্যস্ত একথা ওকে আর জানাইনি)
তুই ওকে ঐ ঘরে যেতে দিবি না।
চার,পাঁচদিন পরে রিনা বলছে ও চলে যাবে,জানতে চাইলাম কেনো?
আপা,আমার রাতে ঘুম হচ্ছে না, এমনিতেই ঘুম কম হয়। আর তুমি প্রতিরাতে ঘরে ঢুকো, যাবার সময় বারান্দার দরজা খুলে রেখে যাও।ভোরের আলোটা আমার চোখে লাগে (রিনা ড্রইংরুমেই ঘুমায়। না করে ছিলাম শোনে নাই।ড্রইং রুমের চারিদিকে এতো খোলামেলা,যে কেউ এলেই ওখানেই থাকতে চায়।)
বুঝে গেলাম, সমস্যা কোথায়, বললাম ডাকলে, নামাজ পড়তে উঠিস না,তাই আল্লা তোর ঘুম নষ্ট করে দেয়।
রিনা আর দুই একদিন থেকে চলে গেলো, কেউ এসে এ বাসায় বেশিদিন থাকতে পারে না। কাজের বুয়া ও বলছে, তার মন টেকে না। তার জেনো কেমন লাগে।আমি ফজরে ডাকার আগেই, তাকে না কি, কে বলে উঠ,উঠ।
বুয়া আজাইরা কথা বলবেনা, তুমি আমার মেয়ের ঘরে ঘুমাও, তোমাকে ডাকে, কই মেয়েকে তো ডাকে না, সবাইকে ডাকলে আমার আর কষ্ট করে ডাকতে হতো না।
বাড়িওয়ালাকে, টু- লেট, দিতে বলেদিয়েছি। লোকজন বাড়ি দেখতে আসে,আমি নিজের বাড়ির মত ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখাই। অনেকে ভাবে এটা আমারই বাড়ি।
এক ভদ্র লোক,তার মিসেসকে নিয়ে বাড়ি দেখতে এলো।দরজা, জানালা সব খুলে দেখালাম।
তাদের খুব পছন্দ হলো। (তারাও ভাবলো আমারই বাসা) তার দুই ছেলে। স্কুল, কলেজে পড়ে। ভাড়া বললাম। ভদ্রলোক টাকা বের করে দিতে চাইলো।
আমি বললাম, ভাড়া বাড়িওয়ালাকে দিয়েন। তার নাম্বার আমি দিয়ে দিচ্ছি।
এবাসা আমার না, আমি ভাড়াটিয়া।
আমি চারতলার ছাদে খুব কম যেতাম,কম্বল, বড় কাথা যদি শুকাতে হতো তবেই তালা খুলে ছাদে যেতাম।
একদিন চার তলার অফিসের এক ছেলে এসে
ছাদের চাবি চাইলো। বললাম বাড়িওয়ালার নিষেধ আছে, চাবি দেয়া যাবে না।ছেলেটা চলে গেলো।একটু পরে, বাড়িওয়ালার ফোন এলো, চাবিটা দেবার জন্য। আমি চাবি দিয়ে দিলাম। বিকালে ছাদে গিয়ে দেখলাম ওরা নাটকের শুটিং করছে।
বলে আসলাম আপনাদের কাজ শেষ হলে চাবিটা আমাকে দিয়ে দেবেন।
ওরা চাবির কথা ভুলে গেলো কি না জানি না, আমি ভুলে গেলাম।
দুদিন পরের ঘটনা।
রাত, একটা, বা দেড়টা হবে, থাপ, থাপ আর চেয়ার, টেবিল বা খাট টানার শব্দে, আমার ঘুম ভেংগে গেলো। শব্দটা আসছে চারতলা থেকে। কারা জেনো দৌড়াচ্ছে,আবার চেয়ার টানছে। কি জেনো পড়লো।
খুব বিরক্ত হলাম, সকালেই বাড়িওয়ালাকে বলবো।
আরো কিছুক্ষন এই তান্ডব চললো,
ফজরে উঠার পর, ভুলে গেলাম, বাড়িওয়ালাকে বলতে।
পরের দিন, বিকালে চারতলার এক ছেলে এলো আমার সাথে কথা বলতে, তখন আমার মনে পড়লো একদিন আগের রাতের কথা।
ছেলেটা বললো আন্টি ছাদের সিড়িতে কি জেনো মরে পড়ে আছে।গন্ধ বের হচ্ছে,
বললাম, বিড়াল, টিড়াল মরলো না কি?
না আন্টি, মানুষ।
তোমরা সব সময় নিচের গেট খোলা রাখো।
একটা বয়স্ক ফকির প্রায় আসে, দেখো সেই মরে পরে আছে নিশ্চয়ই।
না আন্টি মেয়ে মানুষ, আপনি একটু দেখবেন গিয়ে।
গেলাম ওর সাথে, দেখলাম একটা মেয়ে উপুর হয়ে পরে আছে, চারি পাশে রক্ত জমাট বেঁধে আছে।
মাথা থ্যাঁতলানো,ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে বাসায় আসলাম, আসতে আসতেই ছেলেটাকে বললাম, থানায় ফোন দাও। আমি জীবনে এমন ভয়ংকর মরা মানুষ দেখি নাই।বাসায় এসেই বাড়িওয়ালাকে ফোন দিয়ে সব জানালাম,আর বললাম ছাদের চাবি ওরা কয়েকদিন আগে নিয়ে গিয়েছে, আর দিয়ে যায় নাই,আপনি তারাতারি আসেন, আর বললাম সে,রাতে ওদের ফ্লোরে দৌড়া দৌড়ি,চেয়ার টেবিল
পড়ে যাবার শব্দের কথা।
আর এক ঝামেলায়, পরলাম। রাতেই পুলিশ,ক্যামেরা, লাইট, পুরো বাসা আলোয় আলোকিত।টি ভিতে দেখানো হচ্ছে বাসা। রাত একটায় দুজন পুলিশ আসলো আমার বাসায়।অনেক কথা জানতে চাইলো। আমি যা জানি বললাম।
একপুলিশ দেখলাম ড্রইরুমে বসতেই পারছে না। একবার দেখি দাড়ায়, আর বসে, আবার দরজার কছে যায়।খুব তারাতারিই ওরা চলে গেলো।
পরের দিন থেকে সাংবাদিক, পুলিশ, বিজিপি, আর যা যা আছে সব আসতে শুরু করলো।কিন্তু যারাই আসে ড্রইংরুমে অনেক সময় নিয়ে বসতে পারে না। একজন তো বলেই গেলো, পুরো বিল্ডিংএই সমস্যা।
আমি গোছগাছ শুরু করলাম।
আর এক যন্ত্রনা শুরু হলো
মেয়েরা কোচিং করে সন্ধ্যায় বাসায় এলে কেউ একা সিড়ি দিয়ে উপরে উঠতে চায় না। আমি নিচে নামি, তারপরে ওরা আমার সাথে আসে। বুয়াকে বললে বুয়া ও যায় না।
ওদের নিচ থেকে নিয়ে আসতে যাবার সময় আমারো যে ভয় লাগে, তা কি করে বলবো।
আমি ছোটবেলা থেকেই মোটামুটি সাহসি, সেদিন রাতে আমার সাহসের পরিক্ষা হয়ে গেলো।
রাত সারে বারোটা।ঘুমিয়ে পড়েছিলাম, মেয়েরা পড়ছে। বড় মেয়ে এসে আমায় ডেকে তুললো।
মা, কে জেনো বাইরের গেটে নক করছে।
ভাবলাম আবার পুলিশ এলো না কি? কিন্তু তারা কলিংবেল চাপছে না কেনো? আর গতমাসেই পুলিশের ঝামেলা আমার বাড়িওয়ালা শেষ করেছে।
মেয়েদের বললাম, পুলিশ টুলিশ হলে, তোমাদের সামনে আসার দরকার নাই। দেখি কে আসলো। (কাঠের দরজা, তার পেছনে কেজিগেট।)
প্যাসেস, বারান্দায় আলো জ্বলছে।আমি লুকিং গ্লাস দিয়ে দেখতে চেষ্টা করলাম, সিড়ির আলোয় আবছা দেখা যাচ্ছে। কে জেনো দাড়ানো।
বললাম কে?
আমি,শাহারিয়ার গলা।
ছিটকানি খুলে দরজা মাত্র অল্প ফাঁক করেছি। আমার পেছনে কে বলে উঠলো, খুলিস না। ঐ একটু ফাঁকাতেই আমি যা দেখার দেখে ফেলেছি।
মাথা থ্যাঁতলানো মেয়েটা দাঁড়িয়ে আছে।
আমি শুধু একবার চিৎকার দিয়েছি,আর কিছু মনে নাই।
জ্ঞান ফিরলে, দেখি আমি বিছানায়, মেয়েরা কাঁদছে বুয়া মাথায় পানি ঢালছে।
বললাম কি হয়েছিলো আমার?
তোমার চিৎকার শুনে আমরা দৌড়ে তোমার কাছে যাই। গিয়ে দেখি তুমি ফ্লোরে পড়ে আছো। বুয়া, আমরা মিলে তোমায় ধরে ঘরে নিয়ে আসি। তখন মনে পড়লো, গেট তো খোলা।
তোমরা কি গেট বন্ধ করেছো?
গেট তো বন্ধই ছিলো।ছিটকিনি লাগানো ছিলো।
আমার আর কিছু বলার নাই। চুপ করে শুয়ে শুয়ে ভাবছি, গেট যদি নাই খুলি, তাহলে আমি কি ভাবে কি দেখলাম, গেট খুলতে কে বারন করলো? গেট এর ছিটকিনি বা কে লাগালো?
বাচ্চারা রাতে আমার কাছে কিছু জানতে চাইলো না। আমি নিজ থেকেই শুধু বললাম ভয় পেয়েছি।
বুয়া লবন পানি, খাওয়ালো। লোহা, পোড়া পানি এনে জোড় করে খাওয়ালো।
বাকি রাতটুকু সবাই এক ঘরেই থকলাম। বুয়া ও তার বিছানা এনে এই ঘরেই ঘুমালো।
সকালে বাচ্চার বাবাকে ফোন করে বললাম, আর একদিনের জন্য ও এই বাসায় থাকবো না। প্রয়োজনে রাস্তায় থাকবো।
সেদিনই আমরা নতুন বাসায় উঠলাম। যদিও বাসা ছাড়তে ১৯দিন বাকি ছিলো।
আল্লাহ্ আমাদের সহায় ছিলো বিধায় নতুন বাসা খালি পেয়েছিলাম।
এই বাসা যে ভাড়া নিয়েছে, তাকে ফোন দিয়ে বাসার চাবি দিয়ে দিলাম।
আর বললাম কারেন্ট বিলে এলে আপনি রেখে দিয়েন আমি আগামী মাসে এসে বিল এর টাকা দিয়ে যাবো।
নতুন বাসায় আমরা খুব ভালো ছিলাম।
পরের মাসে কারেন্ট বিল আনতে গেলাম। নিচ থেকেই বেল চাপলাম, ভাবি বারান্দায় এসে আমাকে দেখে বললো বিল এসেছে, উপরে আসেন।
বললাম আমার সময় কম, আপনি একটু কষ্ট করে
উপর থেকেই ফেলে দেন।
আপনার সাথে তো আমার অনেক কথা আছে আপা, একটু উপরে আসেন, প্লিজ।
আমি কিছুতেই রাজি হলাম না।(আমার যে অভিজ্ঞতা হয়েছে, ঐ সিড়িতে আমি আর উঠবো না।)ভাবি অনেক অনুরোধ করলো। শেষে বিলের কাগজ দিয়ে, বললো আমাদের কোথায় রেখে গেলেন আপা? আপনারা কি কিছুই বুঝতে পারেন নাই? একবার যদি বলতেন?
আমরা বাসা ছেড়ে দিয়েছি।
ভাবিকে বললাম ফোনে আপনার সাথে কথা বলবো।
ঐ গলিতেই আমি আর কোন দিন ঢুকি নাই।আমার বোন থাকে মোঃপুরে তাই আমার যাওয়া হয়, তখন দেখলাম ঐ বাসা ভেংগে নতুন বিল্ডিং হচ্ছে।কিন্ত আমার ভয়ংকর দিনগুলোর কথা
আজও মনে আছে।
শেষ।
(যারা তাজমহল রোডে থাকেন, তারা নিশ্চয়ই এতোক্ষনে বাসাটা চিনে ফেলেছেন।যারা এখনো চেনেন নাই তাদের বলছি। কবরস্হানের বিপরিতে একটা মাজার আছে। সেই গলি।
লিখায় অনেক ভুল থাকতে পারে নিজগুনে ক্ষমা করবেন প্লিজ। আমি প্রফেশনাল লেখিকা না,
এতোদিন সাথে থাকার জন্য, অনেক অনেক ধন্যবাদ