‘কাকু তুমিও আজ আমাদের সাথে ঘুমাও না, বাবা বাইরে গেলে যেভাবে এক বিছানায় আমি, মা আর তুমি ঘুমাই।’
.
রাকিবের বুকে যেন প্রচণ্ড জোরে একটা ঘুষি বসিয়ে দিয়েছে কেউ, সে হতভম্ব হয়ে বড় ভাইয়ের ছোট মেয়ে বৃষ্টিকে বলল, ‘এসব তুমি কী বলছ মা, পাগলের মতো!’
ফরহাদ খেতে বসে এক লোকমা খাবার কেবল মুখে পুড়েছে এমন সময় বেডরুম থেকে কথাটা কানে ঢোকায় তার গলায় খাবারটা আটকে গেল। তার স্ত্রী তানিয়া টেবিলের পাশে দাঁড়িয়ে ছিল। তার মুখটাও একদম ফ্যাকাশে হয়ে গেল মুহূর্তেই। কথাটার অর্থ এমনই কুৎসিত শোনালো যে একমুহূর্তে তার মাথাটা ঘুরে উঠলো। সে ছুটে গেল নিজের মেয়ের কাছে, ‘একি বলছিস তুই?’
বৃষ্টি ফ্যালফ্যাল করে তাকালো মায়ের দিকে। আবার বলল, ‘সেদিন বাবা যখন খুলনা গেল সেরাতে না, তুমি রাকিব কাকাকে কল করে বাড়ি আসতে বললাম, আমরা তিনজন এক বিছানায় ঘুমালাম।’ তানিয়া রেগে এক চড় বসিয়ে দিল বৃষ্টির গালে। কাঁদতে কাঁদতে ঘর থেকে বেরিয়ে গিয়ে বাবার কাছে চলে গেল সে।
রাকিবের মুখ পুরোই ফ্যাকাশে হয়ে গেল। সে লজ্জায় ছুটে বাড়ি থেকে পালিয়ে গেল। তানিয়া কিছুই যেন বুঝতে পারছে না এসব নোংরা কথা ৭ বছরের একটা বাচ্চা মেয়ের থেকে কী করে বের হয়। এসব সত্যি নয়, এটা ফরহাদকে বলতে যেতেও তার লজ্জায় মরে যেতে ইচ্ছা করছে। মেয়ের মুখ আর দেখতে ইচ্ছা করছে না তার। সে দরজা ভেতর থেকে বন্ধ করে দিয়ে বিছানায় ছুটে গিয়ে বালিশ চেপে ধরে ফুঁপিয়ে কাঁদতে থাকে।
ফরহাদ স্তম্ভিত হয়ে খাবার টেবিলে বসে আছে। তার কোলে মুখ গুজে ফুঁপিয়ে কাঁদছে মেয়েটা। রাকিবকে সে আপন ছোট ভাইয়ের মতো দেখতো। দুই মাস আগে গ্রাম থেকে শহরে এনে সেই ওকে এখানে একটা কাজ আর থাকার ব্যবস্থা করে দেয়। সম্পর্কে সে তার খালাতো ভাই হয়। সে যতদূর দেখেছে তানিয়া আপন ছোট ভাইয়ের মতো ব্যবহার করে এসেছে তার সাথে। কিন্তু মেয়ের কথা শুনে তার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো। তার অগোচরে তাদের দুজনের ভেতর যে কোনো অবৈধ সম্পর্ক থাকতে পারে তা সে ভেবেই পাচ্ছে না।
বৃষ্টি কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়লো। ওকে সোফায় বসিয়ে দিয়ে সে পাথরের মূর্তির মতো বসে রইলো তার পাশে দুই ঘণ্টার মতো। অতিরিক্ত চিন্তা করতে করতে ঘোরের জগতে চলে গেছে সে। এমন সময় ঘাড়ের পেছনে হালকা ঠাণ্ডা কিছুর স্পর্শ পেতে শিউরে উঠল তার সারা শরীর। শরীরে অদ্ভুত এক রকম প্রশান্তি অনুভব করছেন এখন। কয়েক মুহূর্ত প্রচণ্ড মানসিক অস্থিরতার পর এমন শান্তি তার ঘোরকে ঘোরতর করে ফেলল। ফরহাদ ধীরে ধীরে সোফা থেকে উঠে দাঁড়ালো। মেয়েটা বেঘোরে ঘুমাচ্ছে। স্ত্রীর ঘরটাও ভেতর থেকে বন্ধ। সে হেঁটে এসে দাড়ালো বেলকনিতে।
বেলকনির লোহার রেলিং বড়জোর ৪ফুট উঁচু। সে দাড়িয়ে আছে ৯ তলা একটা বিল্ডিং এর ৮তলার দক্ষিণ পাশের ফ্ল্যাটের বেলকনিতে। কয়েক মুহূর্ত শান্ত হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো সে সেখানে। চোখের সামনে ভেসে উঠলো নিজের মা-বাবা, প্রিয় আত্মীয়-বন্ধু, স্ত্রী তানিয়া,মেয়ে বৃষ্টি আর রাকিবের ছবি।
রেলিং টপকে ঝাঁপিয়ে পড়লো সে নিচে। রাস্তার এপাশে গতরাতে এক ট্রাক ইটা এনে রেখেছিল কেউ। ওগুলোর উপরই মুখ থুবড়ে পড়লো সে। মুহূর্তে মাথা ফেটে ঘিলু বেরিয়ে এলো। রক্তের স্রোত বইতে লাগলো মুখে নিচ থেকে। কয়েকবার শরীরটা সামান্য কেঁপে একদম নিস্তেজ হয়ে গেল। ছুটে এলো বিল্ডিং এর দারোয়ান। শুরু করলো চেঁচামেচি। একে একে জ্বলতে লাগলো বিল্ডিং এর সমস্ত ফ্ল্যাটের আলো।
লোকের ভিড় লাগলো, পুলিশ আসলো, রাকিবও ফরহাদের আত্মহত্যার খবর পেয়ে ছুটে এসেছে। তানিয়া নির্বাক হয়ে গেল। এসব কী ঘটছে তার সাথে। নিশ্চই এগুলো সত্যি নয়, কোনো দুঃস্বপ্ন দেখছে সে। পরদিন পুলিশ হেফাজতে নিয়ে যাওয়া হলো রাকিব আর তানিয়াকে ফরহাদের খুনের দায়ে। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ হলো, তারা দুজনে মিলে ধাক্কা দিয়ে বেলকনি থেকে ফেলে দিয়েছে ফরহাদকে।
রাতটা কোনোরকম কাটলো। পুলিশ বুঝতে পারছিল না কিভাবে তদন্ত শুরু করবে। প্রতিবেশীরা বলছিল ফরহাদ হাসি-খুশি, মিশুক, সৎ সুখী একজন মানুষ ছিল। কোনো রকম অশান্তির খবর তাদের কাছে নেই। তানিয়ার মানসিক অবস্থা বিবেচনা করেও জটিল কিছু জিজ্ঞেস করেনি তারা। কিন্তু তাদের ছোট্ট মেয়ে বৃষ্টিকে দেখে মনে হলো বাবার মৃত্যুতে বিচলিত হয়নি একটুও। কেমন যেন রাগে ফুঁসছে। তদন্ত অফিসার তাকে জিজ্ঞেস করলো, তার বাবা-মায়ের কোনো ঝামেলা চলছিল কিনা! কিন্তু এরপর বৃষ্টি যা বলল, আৎকে উঠলেন স্বয়ং পুলিশ অফিসার।
বৃষ্টি জানালো গতরাতে সে ঘুমিয়ে ছিল। এমন সময় বাবা-মা আর রাকিব কাকার চিৎকার শুনে জেগে উঠে সে। তার মা আর রাকিব কাকাকে তার বাবা ধমকাচ্ছিলেন। বলছিলেন পুলিশে দেবে রাকিবকে। তখনই মা আর কাকা মিলে গলা চেপে ধরে তার বাবার। তারপর ধাক্কাতে ধাক্কাতে বেলকনিতে নিয়ে গিয়ে ধাক্কা মেরে নীচে ফেলে দেয়। মেয়ের মুখ থেকে এমন কথা শুনে শোকের মধ্যেও বড় একটা শক খেল তানিয়া।
বৃষ্টি এসব কী বলছে, এর এক বিন্দুও যে সত্যি নয়। সে ঘরে চুপচাপ বসে ছিল মন খারাপ করে। মানুষের চেঁচামেচি শুনে ঘর থেকে বেরিয়ে আসে। এরপর লোক মুখে শুনে বুঝতে পারে তাকে ভুল বুঝে ফরহাদ আত্মহত্যা করেছে। কিন্তু তার মেয়ে গতরাত থেকে এত বানিয়ে বানিয়ে বাজে কথা কেন বলছে! সে চিৎকার করে বলে উঠলো, ‘তুই আমাদের সাথে এমন কেন করছিস, তোর মিথ্যা কথার জন্য তোর বাবা আত্মহত্যা করেছে, এখন আবার আরেকটা মিথ্যা বলছিস! তোকে আমি খুন করে ফেলবো!’
ছুটে গেল তানিয়া মেয়ের দিকে। বৃষ্টি ভয়ে চিৎকার করে উঠলো। অফিসার আটকালেন তানিয়াকে।এরপরই তানিয়াকে আর রাকিবকে পুলিশ হেফাজতে নিয়ে যাওয়া হয়। বৃষ্টির সাথে আরেকটু কৌশলে কথা বলে অফিসার জানতে পারেন তাকে ঘুম পাড়িয়ে বাবা বাড়িতে না থাকলে প্রায়ই মা আর রাকিব কাকা এক সঙ্গে সময় কাটাতেন। পুলিশের কোনো সন্দেহই রইল না এই খুন নিয়ে। ‘স্ত্রীর পরকীয়া, পরকীয়া প্রেমিকের সঙ্গে গোপন মুহূর্তে স্বামীর হাতে ধরা খাওয়া, সম্মান বাঁচাতে স্বামীকে খুন।’ একেবারেই সাধারণ একটা মামলা।
রাকিব হতভম্ব হয়ে আছে গত রাত থেকে। সে বৃষ্টিকে আপন সন্তানের মতই স্নেহ করতো, তানিয়াকে নিজের বোনের মতো স্নেহ করতো। আর ফরহাদ ভাইকে সে কী করে অসম্মান করবে যে তার এত বড় উপকার করেছে! গত রাতে বৃষ্টি যে অভিযোগ তুলেছে তার বিরুদ্ধে এই ধরনের কোনো চিন্তা স্বপ্নেও সে মাথায় আনেনি কোনোদিন। এমন সে কেন করবে! দুই মাস পর রেখা নামের একটি মেয়ের সাথে বিয়ে হওয়ার কথা ছিলো তার! যখন ফরহাদ ভাই বাড়িতে থাকতেন না খুব কমই আসতেন বৃষ্টিদের বাড়িতে। তাও শুধু দিনে , প্রয়োজন পড়লে। রাতে আসার তো প্রশ্নই উঠে না।
আর বৃষ্টি কিনা তার বাবার সামনে বলল, তানিয়া আপুর সাথে সে এক বিছানায় ঘুমায়! সে অভিমানে হতবিহ্বল হয়ে ছুটে বেরিয়ে গিয়েছিল। সারারাত রাস্তায় রাস্তায় হেঁটে বেরিয়েছে লজ্জায় মাথা নিচু করে। মাঝরাতে একজন কল করে জানালো ফরহাদ ভাইয়ের আত্মহত্যার কথা। ছুটে এসেছিল সে। আর পরদিন কিনা ফরহাদ ভাইয়ের খুনের অভিযোগ ওইটুকু মেয়ে তুলল তার বিরুদ্ধে! বৃষ্টির এই বয়সে এতটা বোধ কিছুতেই হয়নি। নিশ্চই কেউ তাকে দিয়ে এসব বলাচ্ছে কিন্তু কে!
বৃষ্টি কী বুঝতে পারছে না তার দুটো মিথ্যা কথায় তার বাবা মারা গেল! আর মা আর কাকা সারাজীবনের জন্য জেলে চলে যাচ্ছে! এমনটা কেন হচ্ছে!
পুরো মিডিয়া জগতে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়ে গেল। ‘পরকীয়া প্রেমিকের সঙ্গে মিলে স্বামীকে খুন।’ শিরোনামে ফলাও করে বেড়াতে লাগলো এই ঘটনার রোমাঞ্চকর খবর। ঢাকায় আপন আর কেউ ছিল না ছোট মেয়েটার। প্রতিবেশিরাই ফুটফুটে মেয়েটিকে নিজেদের মাঝে রেখে দিলেন যাতে এমন বীভৎস নোংরা ঘটনার প্রভাব তার শৈশবে গেঁথে না থাকে। কিন্তু বৃষ্টির মধ্যে বিন্দুমাত্র দুঃখ, মা-বাবাকে নিয়ে কৌতূহলতা দেখা দিল না। সে যেন এসবের জন্য আগে থেকেই প্রস্তুত ছিল। তার দৃঢ় মনোবলের সকলেই প্রশংসা করলো।
প্রফেসর আমির হোসেন শুয়ে রয়েছেন তার বিছানায়। এক অচেনা, অজানা ভয়ে জমে যাচ্ছে তার শরীর। তার হাতে একটি পত্রিকার পাতা। সেখানে একটা পরকীয়া খুনের ঘটনা উল্লেখ করা আছে। খুনের ভিক্টিম ফরহাদ হোসেনকে খুব ভালো করেই চেনেন তিনি। রাকিব নামে তার খালাতো ভাইটিকে ফরহাদের অনুরোধে সেই তার একটা ফ্যাক্টরিতে চাকুরী দিয়েছিল। ফরহাদ তার ছেলের বয়সী হলেও ভালো বন্ধুত্ব ছিল তাদের। তানিয়া সম্পর্কে সে যতটুকু জানে এমন ব্যাক্তিত্বের একটি মেয়ে এরকম অবৈধ সম্পর্কে জড়াবে না। ফরহাদের দাম্পত্য জীবন সম্পর্কে টুকটাক জানতেন তিনি। আর খুন করাতো অনেক বড় ব্যাপার। বৃষ্টি মেয়েটাকেও তিনি সন্তানের মতোই ভালোবাসতেন।এখানে সমস্যা হচ্ছে এই সমস্ত অভিযোগ গুলো আসছে তাদেরই মেয়ে বৃষ্টির কাছ থেকে। এইটুকু একটা মেয়ে যে মিথ্যা কথা বলবে তা কেউই বিশ্বাস করবে না। কারণ কেন মেয়েটা মিথ্যা বলবে!
তবে এক অজানা কারণে এই ছোট মেয়েটিকেই সন্দেহ করছেন প্রফেসর। এর পেছনে এক অদ্ভুত যুক্তি রয়েছে। গত এক সপ্তাহ আগে নিজের ২১ তম বিবাহ বার্ষিকী উপলক্ষে বাড়িতে ছোটখাটো একটা আয়োজন করেন তিনি। আমন্ত্রিত ছিল ফরহাদ, তানিয়া এবং বৃষ্টি। সন্ধ্যার পর হাসি ঠাট্টায় আলাপে মশগুল হয়ে উঠে বাড়িটি। প্রফেসরের বাড়িটি সাদামাটা হলেও বাড়ির পেছনে আর সামনে বেশ খোলামেলা জায়গা। আলোচনার এক পর্যায়ে তিনি খোঁজ করলেন বৃষ্টির। বৃষ্টিকে ঘরের কোথাও দেখতে না পেয়ে তার বুকটা কেমন ধক করে উঠলো আমির হোসেনের। বাড়ির বেশ খানিকটা পেছনের দিকে একটা খোলা কুয়ো রয়েছে। খুব প্রাচীন আর গভীর। ওটাকে বর্তমানে আবর্জনা ফেলানোর কাজে ব্যবহার করেন তিনি। কুয়াটার পার তেমন উঁচু নয়। আজ বিকেলে কাজ করার পর তিনি ঢাকনাটা দিয়ে এসেছিলেন কিনা মনে পড়ছে না!
মেয়েটা ওদিকে যায়নিতো! গেলে দূর্ঘটনা ঘটতে সময় লাগবে না। তিনি দ্রুত ঘর থেকে বেরিয়ে সেদিকে চলে গেলেন। আশেপাশে বৃষ্টির দেখা পাওয়া গেল না। তিনি প্রায় ছুটে কুয়োর কাছে চলে এলেন। হায় খোদা! কুয়োর ঢাকনাটা খোলা! আর কুয়োর পাশের কাদামাটিতে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে ছোট জুতোর ছাপ। টর্চ আনেননি। তবুও ঝুকে পড়লেন কুয়োর দিকে। অন্ধকার ছাড়া কিছুই দেখা যাচ্ছে না। হঠাৎ বাচ্চা একটি মেয়ের খিলখিল হাসির শব্দে তার হাড় কেঁপে উঠলো। কুয়োর নিচ থেকে বৃষ্টির শব্দ বারি খেতে খেতে উপরে পৌঁছাল, ‘দাদু , আমি নিচে, দারুন মজা হচ্ছে এখানে।’ তিনি ভয় পেয়ে বললেন, ‘তুমি পড়ে গেছ মামুনি?’
‘না, ও আমাকে নিয়ে এসেছে এখানে ডেকে, এখানে কী যে সুন্দর জায়গা তুমি বিশ্বাস করবে না। দাঁড়াও আমি উঠে আসছি!’ বৃষ্টির কণ্ঠ।
এরপরেই অন্ধকার ফুঁড়ে বেরিয়ে এলো একটি বাচ্চা মেয়ের হাত। পুরো হাত কাঁদায় ঢাকা। এত অসম্ভব! দড়ি দিয়েও কোনো প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের এই কুয়োতে নামা কিংবা ওঠা অসম্ভব! প্রায় লাফ দিয়ে কুয়ো থেকে বেরিয়ে এলো বৃষ্টি। তার পুরো শরীর ভয়ানক দুর্গন্ধে ভরা আর কাঁদায় মাখামাখি। তিনি ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করলেন, ‘কে তোমায় নিয়ে গিয়েছিল ওটার ভেতর!’
‘একটা কালো কুচকুচে দেখতে মানুষ। তার নাকি কোনো শরীর নেই! তাই সে আমার সঙ্গে আমার শরীরে থাকবে এখন থেকে। তাই ওর ঘর দেখাতে নিয়ে গিয়েছিল। এই দেখ আমার ভেতর সে!’
মুহূর্তেই বৃষ্টির চোখ জোড়া লাল হয়ে জ্বলজ্বল করে জ্বলে উঠলো। মুখ ফুঁড়ে বেরিয়ে এলো যেন দুটি তীক্ষ্ণ দাঁত! একি দেখছেন তিনি। আৎকে উঠে পেছাতে গিয়ে কাঁদায় পিছলিয়ে পড়ে গেলেন তিনি। খিলখিল করে হেসে উঠলো মেয়েটা। তাকে টেনে কাদা থেকে উঠলো মেয়েটা। তার শরীরে এমন ঐশ্বরিক শক্তি কোথা থেকে এলো ভেবে কুল পেলেন না তিনি।
বৃষ্টির বাবা , মা সহ কয়েকজন বৃষ্টিকে আর তাকে খুঁজতে এদিকে চলে এলেন। দুজনকে কাঁদায় এভাবে মাখামাখি দেখে চমকে গেলেন। বৃষ্টি হাসতে হাসতে বলল, ‘দাদা আমাকে ধরতে পারেনি! দৌড়া দৌড়ি খেলছিলাম , দেখ কিভাবে দুজনে পরে গেছি!’ তানিয়াও হাসতে হাসতে এগিয়ে এলো, ‘একি করেছ তোমরা, শরীর থেকে কী বিচ্ছিরি গন্ধ আসছে তোমাদের, চল এখনই গোসল করিয়ে দেই, আচ্ছা দাদি-নাতনির জুটি হয়েছে তো!’ সবাই হেসে উঠল।
মেয়েটার উপস্থিত মিথ্যা বলার জ্ঞান দেখে চমকে উঠলেন প্রফেসর। কিন্তু চোখের সামনে যা দেখলেন তা বিশ্বাস করাও তার পক্ষে সম্ভব না। মাথা পুরোই জমে গেল তার। তিনি কোনো মতে ঘরে ফিরে এলেন।
এরপর এক সপ্তাহ দেখা হয়নি পরিবারটার সাথে তার। কিন্তু তার মন বলছে পরিবারের এই অনাকাঙ্খিত ট্রাজিডির পেছনে সেই দিনের ঘটনা এবং বৃষ্টি মেয়েটা কোনো না কোনো ভাবে দায়ী। দায়ী এই কুয়োটাও। মেয়েটা এখন কোথায় আছে তিনি জানেন না। এই ঘটনার সমস্ত খোঁজ তাকে নিতে হবে। জানতে হবে এসবের যোগ সূত্র কী!……..
……………………………………………..
.
.
. . . . চলবে . . . .
.
.
###ভয়ঙ্কর সেই মেয়েটি
১ম পর্ব
লেখা: #Masud_Rana