কদিনের জন্য ছুটিতে কাল ব্যাংকক যাচ্ছি। বউকে অবশ্য বলেছি অফিসের কাজে যাচ্ছি। অনেক দিনের ইচ্ছে ছিল বন্ধুদের সাথে মজা করে কিছুটা সময় কাটাবো। সারাদিন অফিস। আর অফিসের পরে বউয়ের কানের কাছে প্যানপ্যানানি আর ছেলের ভ্যা ভ্যা কান্না আর ভালো লাগে না।
তবে সকালে ঘুম উঠে দেখি বাসায় বড়সড় একটা ডাকাতি হয়েছে। তবে চোরবেটা যে নারীবাদী তার বড়সড় একটা প্রমাণ দিয়ে গেছে। হতচ্ছাড়া বেটা আমার স্ত্রী একটা কিচ্ছু নিয়ে যায়নি। যা নিয়ে গেছে সব আমার। ল্যাপটপ, ফোন, হাতঘড়ি, পাসপোর্ট, লুঙ্গি এমন কি কদিন আগে অফারে ক্যালভিন ক্লেইন থেকে ২৫০ টাকা দিয়ে ৩ টা বিশেষ পোষাক কিনছিলাম। হারামজাদা প্যাকেট সহকারে নিয়ে গেছে।
অথচ আমার স্ত্রীর গহনার বক্স ছিল ওয়ারড্রবে। তার বিদেশি খালুর দেওয়া হাতের বালা রাখা ছিল টিভির পাশে (রাতে ঘুমানোর আগে খুলে ঘুমায়) এসব একটা কিচ্ছু নিয়ে যায়নি। জামাকাপড় তো দূরেই থাক। আমার ফোন নিয়ে গেছে। অথচ স্ত্রীর ফোনটা আমারটার সাথেই ছিল সেটা সেখানেই আছে।
সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে গোসল করার অভ্যাস আমার। গোসল করার পর বাথরুম থেকে বউকে ডাক দিয়ে কইলাম লুঙ্গি আর গামছা দিতে। একটু পর বউ এসে বললো “সর্বনাশ, তোমার লুঙ্গি গামছা কিছুই খুঁজে পাচ্ছি না। বউকে ধমক দিয়ে বললাম ” ভালো করে খুঁজে দেখো”।
বউ আবার এসে বললো ” তোমার লুঙ্গি গামছার চিন্তা পরে করো। তোমার মোবাইল, ল্যাপটপ, ঘড়ি কিছুই নাই”। ভেজা কাপড়ে বাইরে আসতে যাবো এমন সময় বউ বলে উঠলো আরে করো কি। দাঁড়াও একটা কিছু নিয়ে আসি সেটা পরে বাইরে আসো। বাসা ভিজে যাবে তো।
একটুপর আবার বউ একটা ম্যাক্সি নিয়ে এসে হাজির। বউকে আবার ধমক দিয়ে বললাম এটা কি আনছো? বউ উত্তর দিলো আপনার এমন কোনো জিনিস নাই যেটা চোর বাবাজি নিয়ে যায়নি। পরলে এটা পরেন নাহলে কাপড় না শুকানো পর্যন্ত বাথরুমে বসে থাকেন।
উপায় না দেখে বউয়ের ম্যাক্সি পরে বাইরে আসলাম। সম্পূর্ণ ঘর খুঁজতে লাগলাম। এমন কিছুই নাই যে সেটা আমার নিয়ে যায়নি। হতাশ হয়ে সোফায় বসে আছি এমন সময় ছেলে ঘুম থেকে উঠে এসে আমাকে দেখে ওর আম্মুকে বললো ” আম্মু এই আন্টি কে? দেখতে পুরা ছেলেদের মতো”। এমনেই মেজাজ খারাপ তার উপর ছেলের এমন কথা শুনে দিলাম কানের নিচে দুইটা। হারামজাদা নিজের বাপকে চিনস না। দিন দিন মায়ের মতো হচ্ছিস।
এবার ছেলের মা তেড়ে এলো। হ্যাঁ, সব দোষ তো এখন মায়ের। ঘুমানোর আগে দরজা ভালো ভাবে চেক করতে পারোনি। এখন আমার দোষ দেও তাইনা?
ছেলে ভ্যা ভ্যা করে কান্না করছে। আর আমি হতাশ হয়ে বসে আছি। দুনিয়াতে অনেক চোর দেখছে কিন্তু এমন নারীবাদী চোর দেখিনাই। স্ত্রীর ফোন থেকে শালাকে কল দিয়ে বললাম দ্রুত বাসায় আসতে। আর আসার আগে দোকান থেকে আমার সাইজে একটা প্যান্ট আর লুঙ্গি আনতে বললাম।
শালার অপেক্ষায় বসে আছি। এমন সময় কলিংবেলের শব্দ। স্ত্রী গেলো দরজা খুলতে। বাড়িওয়ালা এসেছে দেখা করতে। দৌড়ে গেলাম বাথরুমে। বউকে ইশারায় বললাম যেন বাড়িওয়ালা কে বলে আমি বাসায় নাই। আমি বাথরুমে ঢোকার পরে বাড়িওয়ালা রুমে এসে বসলো। আমি বাথরুম থেকে উনার কর্কশ কন্ঠের শব্দ শুনছিলাম।
বাড়িওয়ালা বলে উঠলো ” আচ্ছা ভাইকে দেখছিনা। ভাই বাসায় নেই। স্ত্রী বলে উঠলো ” আসলে ও আজ সকাল সকাল বাসা থেকে বের হয়েছে। ওর বন্ধুর বাবা মারা গেছে নাকি। তাই সকালে ঘুম থেকে উঠে ওখানে চলে গেছে। সন্ধ্যায় চলে আসবে। কেন আপনার কি বিশেষ দরকার? বাড়িওয়ালা বলে উঠলো আসলে না ভাইয়ার ব্যাংকে একটা একাউন্ট খুলতাম তাই সকাল সকাল এলাম উনার সাথে দেখা করতে। ব্যস্ত মানুষ সারাদিন খুঁজে পাওয়া যায় না। আজ তাহলে উঠি ভাবী কাল সকালে একবার এসে ভাইয়ার সাথে আলাপ করে যাবো।
আমার গুনধর ছেলে এখনো ভ্যা ভ্যা করে কান্না করছে। হঠাৎ সে কান্না থামিয়ে বলে উঠলো ” আঙ্কেল আঙ্কেল আব্বু না বাথরুমে। বাথরুমের মধ্যে নিজের গালে দুইটা নিজেই থাপ্পড় দিলাম। এমন হারামজাদা ছেলে দুনিয়াতে আছে যে নিজের বাপের ইজ্জত নিজেই হালুয়া বানায়।
উপায় না পেয়ে ম্যাক্সি পরেই বাথরুম থেকে বের হয়ে এলাম। বাড়িওয়ালা আমার দিকে ভূত দেখার মতো তাকিয়ে আছে। মুখে একটা কৃত্রিম হাসি এনে বললাম আরে ভাই যে। হঠাৎ কি মনে করে। উনি হাঁ করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। উনার তাকানো দেখে বললাম ” আসলে ভাই হয়েছে কি রাতে আমাদের বাসায় চুরি হয়েছে। চোর বেটা আমার সবকিছু নিয়ে গেছে। তাই উপায় না পেয়ে আপনার ভাবীর একটা ম্যাক্সি পরে আছি।
বাড়িওয়ালা উঠে বললো ” কি! আমার বাসায় চুরি। অসম্ভব। আপনি চিন্তা করবেন না ভাই। ৫ ঘন্টার মধ্যে চোরকে খুঁজে বের করছি। বলেই তিনি উঠে চলে গেলেন।
এদিকে শালার কোনো খবরনাই। ২ ঘন্টা বসে থাকার পরে ওর নাম্বারে কল দিয়ে দেখি নাম্বার ও বন্ধ। চুপচাপ বসে আছি। এমন সময় বাড়িওয়ালা এসে বললো তিনি তার পুলিশ বন্ধুকে কল দিয়েছেন। বিকালের মধ্যে চোর ধরা পরবে। এদিকে আমার ফ্লাইটের সময় শেষ।
ছেলের ভ্যা ভ্যা কান্না থামানোর জন্য ওকে কাছে ডাকলাম। ডেকে বললাম দেখ বাবা, বাবাকে এমনে বলতে হয় না। আর সারাক্ষণ এমন ভ্যা ভ্যা কাঁদলে মানুষ খারাপ বলে। ছেলে আমার কান্না থামিয়ে বললো ” তাহলে আমার জন্য একটা এই রকম ম্যাক্সি কিনে দিবা বলো? আমি তুমি আর আম্মু একসাথে পরে থাকবো”। আবার ছেলের কানের নিচে দুইটা দিলাম ছেলের। আবার ও ভ্যা ভ্যা করে কাঁদতে লাগলো।
বিকালের দিকে বাড়িওয়ালা এসে বললো ” ভাই চোর ধরা পড়েছে। আপনি এখন রমনা থানায় চলে যান। বাসা থেকে বের হবার আগে বাড়িওয়ালা ইয়া মোটা একটা পাঞ্জাবি পরেছি। আমার মতো তিনজন মানুষ সহজেই পাঞ্জাবির মধ্যে ঢুকে যাবে।
থানায় ঢুকে দেখি একটা ছেলেকে বেশ চমৎকার ভাবে উত্তমমধ্যম দেওয়া হচ্ছে। তবে ছেলেটার চিৎকারের কণ্ঠটা বেশ পরিচিত। মনে হচ্ছে কোথাও শুনেছি। কাছে এগিয়ে গিয়ে দেখি আরে এটা না আমার শালা। শালা আমাকে দেখে বলে উঠলো ” দুলাভাই আমাকে বাঁচান। আমার কোনো দোষ নাই। সব আপার দোষ। আপাই বলেছে আপনার সবকিছু চুরি করতে। যাতে আপনি ব্যাংককে যেতে না পারেন।
থানার দারোগা বাবু এগিয়ে এসে বললো ” চোর কি আপনার পরিচিত? উনাকে শাহবাগ থেকে ধরেছি। আপনার বাসার পাশের ফ্ল্যাটের সিসি ক্যামেরা থেকে উনার ভিডিও পেয়েছি কাল রাতের।আপনার সব মালামাল ওর ব্যাগে ছিল। পুলিশকে একটা ধমক দিয়ে বললাম ” আমার কোনো শালাই নাই। আর উনাকে আমি চিনি না। পুলিশ আমার কথা শুনে মাইরের পরিমাণ আরও বাড়িয়ে দিলেন।
বাসায় এসে সব জিনিস দেখিয়ে বউকে বললাম ” চোর ধরা পরেছে। বাংলাদেশের পুলিশ আজকাল খুব কাজের হয়েছে। চোরকে সরাসরি এনকাউন্টার করেছে। বেচারা মরার আগে খুব পানি খেতে চেয়েছিল। কিন্তু পানি খাওয়ার আগেই মরে গেছে।
ধপাস….. স্ত্রী মাথা ঘুরে পরে গেছে।
চোর
রিফাত আহমেদ