#মেদ ভূড়ি কি করি
– তোর পেটটা তো বড় হয়ে যাচ্ছে!
– কই! দুপুরে বেশি খাওয়া হইছে এজন্য একটু বাড়তি লাগছে।
– নাহ। তোর পেট বেড়ে যাচ্ছে। ব্যায়াম ট্যায়াম শুরু কর।
– ধুর! তোর বাসায় আসলেই তুই খুঁত ধরিস। আর আসবই না তোর বাসায়।
প্রায় পনের বছর আগে বন্ধু সোহাগের বাসায় এই কথা বলে বেরিয়ে এসেছিলাম রাগ করে। তারপর আর ওর বাসায় যাওয়া হয়নি। সেটার কারন অবশ্য ওর বদলি। সরকারি চাকুরে সোহাগ সেই যে ঢাকার বাইরে গিয়েছে আর ফিরেনি। ঢাকার জ্যাম, ক্যামিকেল যুক্ত খাবার এখন নাকি আর ভাল্লাগেনা ওর। তাই বিভিন্ন জেলায় জেলায় পোস্টিং নিলেও ঢাকায় আর আসেনি ও। তবে আমার সদ্য গজানো ভুড়ি নিয়ে সেসময় যেই কথা বলত ভাল লাগত না আমার। আমার পেট আমার কাছে একদম সমতল ভূমিই মনে হতো। আমার স্ত্রীও আমাকে সাপোর্ট করত। ওর কথা ছিল ছেলেদের বয়স হলে একটু ভূড়ি থাকাটাই ভাল। উৎসাহ পেয়ে নিজের ভূড়ির ব্যাপারটা পুরোপুরি অস্বীকার করা শুরু করলাম। দুই-তিন বছর এভাবেই চলল। তারপর হঠাৎ একদিন অফিসের বস ডাকলেন।
– রফিক সাহেব, আপনার ফিজিক্যাল ফিটনেস কেমন?
– ভাল স্যার। মাঝে মাঝে প্রেশার একটু হাই হয়ে যেত, এখন প্রশারের অসুধ খাচ্ছি, আল্লাহর রহমতে এখন সবকিছু ভাল।
– আপনি একটু বাল্কি হয়ে যাচ্ছেন মনে হয়, সেন্ট্রাল এরিয়া বেড়ে যাচ্ছে আপনার।
– ইদানিং ভাত একটু বেশি খাচ্ছি, স্যার। কমিয়ে দিলেই আবার নরমাল হয়ে যাবে।
– তারপরও একটু এক্সারসাইজ করেন। পয়ত্রিশের কাছাকাছি আসলেই তো এখন বিভিন্ন রোগ-ব্যাধি হয়ে যাচ্ছে। সাবধানে থাইকেন।
তখন আমি মানতে শুরু করেছি যে আমার ছোটখাট একটা ভূড়ি হয়েছে। আমার ধারনা ছিল, রাতে ভাত না খেলেই সেটা ঠিক হয়ে যাবে। কিন্ত কিসের কি! এক রাতে ভাত না খেলে পরের রাতেই রেস্টুরেন্টে গিয়ে বিরানি খেতে ইচ্ছে করে, মনে হয় কতদিন রাতে খাওয়াদাওয়া হয়না! আমার স্ত্রী এখানেও আমাকে উৎসাহ দিল। একদিন রাতে বাসায় এসে বললাম, রাতে খাবনা।
– কেন? বাইরে থেকে খেয়ে এসেছ?
– না। ভূড়িটা বেড়ে যাচ্ছে, একটু কন্ট্রোল করা দরকার।
– কন্ট্রোল করতে হলে সকালে তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠে এক্সারসাইজ কর। খাওয়া বন্ধ করতে হবে কেন? বাচ্চাগুলো বাবার সাথে খাবে বলে বসে থাকে, তুমি ওদের সাথে না খেলে ওদের খারাপ লাগবে না?
ইমোশনাল ব্ল্যাকমেল! অগত্যা প্ল্যান করলাম, সকালে নিয়মিত হাটব। দুইদিন হেটে এসে দেখলাম, অফিসে পৌছতে দেরি হচ্ছে। আবার হাটা বন্ধ। হিসেব করে দেখলাম প্রায়ই ফাস্ট ফুড খাচ্ছি অফিসে। পিওনকে বলে দিলাম, আমার জন্য কোন ফাস্টফুড না, ফলফ্রুটসের ব্যবস্থা কর। কিন্ত বাসায় আসার আগে আগে স্ত্রীর ফোন
– আসার সময়, পিজ্জা নিয়ে এসো। বাচ্চারা খেতে চেয়েছে।
-পিজ্জা বাসায় বানানো যায় না?
– যায়। কিন্ত আমার এতো সময় নাই।
– এত বাইরের জিনিস খাওয়া উচিত না…
– তাহলে তুমি বাসায় এসে বাচ্চাদের জন্য পিজ্জা বানাও।
কি আর করা! আজ পিজ্জা, কালকে বার্গার, পরশু গ্রীল চিকেন, বাচ্চাদের চাহিদা পুরন করে করে নিজেরও খাওয়া হচ্ছে দেদারসে। তবে একটা ভাল জিনিস হয়েছে, রাতে আর ভাত খেতে হচ্ছে না। কন্ট্রোলটা ভালই হচ্ছে! তারপর একদিন রাতে ঘুম ভেঙ্গে গেল। প্রচন্ড পেট ব্যাথা। পরেরদিন ডাক্তারের কাছে গেলাম।
– আপনার খাওয়া দাওয়া কি রেগুলার ?
– জ্বি, স্যার।
– রাতে ক’টায় খান?
– সাড়ে সাতটা, আটটার মধ্যে।
– সকালে?
– আটটা।
– বার ঘন্টার গ্যাপ দেয়া যাবেনা। আপনার গ্যাসের প্রবলেম হচ্ছে। দশটার দিকে কিছু খাওয়া দাওয়া করেন।
ব্যাস! আবারও আমার স্বাস্থ্যসচেতনতা শেষ। এখন আবার মোটামুটি গোপাল ভাড় সাইজের ভুড়ি। আমার আশেপাশে এবং নিজেকে দিয়ে আমি ভূড়ি গড়ে উঠার থিউরি বের করেছি। ভূড়ি হওয়ার স্টেজ তিনটা।
প্রথম স্টেজ, বিশ্বাস না করা। যে যাই বলুক, ব্যাক্তি মনে করে এবং সবার সাথে বিতর্ক করে যে, নাহ্, এটা ভূড়ি না, পেটটা একটু ফোলা ফোলা লাগছে কোন কারনে।
দ্বিতীয় স্টেজ, মেনে নেয়া। এই সময়, ব্যাক্তি মেনে নেয় যে তার একটু পেটটা বেড়েছে কিন্ত খাওয়া বিশেষ করে কার্বোহাইড্রেট কমিয়ে দিলেই ঠিক হয়ে যাবে।
তৃতীয় এবং ফাইনাল স্টেজ। এই স্টেজে এসে ভূড়িটাকে নিজের সৌন্দর্য বলে মনে হয়। কেউ কিছু বলা মানেই বডি শেমিং!
আমি এখন তৃতীয় স্টেজে। এসময়ই আবার পনের বছর পর বন্ধু সোহাগের সাথে দেখা। দেখতেই ও বলে উঠল-
– মাই গড্। তোর ভূড়ি এতবড়?!
– হ্যা। তো কি হইছে? হিংসা লাগে তোর?