#তানিশা সুলতানা
পৃথিবীর সব থেকে কঠিন কাজ হলো প্রিয় মানুষটির রাগ ভাঙানো। আর যদি সেই প্রিয় মানুষ হয় চাপা স্বভাবের। তাহলে তো কোনো কথাই নেই। মাহিম কখনোই নিজের ভালো লাগা খারাপ লাগা প্রকাশ করবে না। সে রেগে আছে, বা কতোটুকু রেগে আছে এটা বোঝাও খুব কঠিন বিষয়। কারণ সে তার রাগ কখনোই প্রকাশ করবে না। সারাক্ষণ গম্ভীর হয়ে থাকবে।
এখনো তার ব্যতিক্রম নয়। সে অধরার রুম থেকে বের হয়ে নিজের রুমে ঢুকেছে। দুজনের রুম পাশাপাশি। অধরা পেছন পেছন বের হয়েছে। এবং মাহিমের রুমের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। দরজা ভেতর থেকে বন্ধ। কয়েকবার ডেকেছে ভেতর থেকে কোনো সাড়া শব্দ পাওয়া যায় নি৷ আর যাবেও না। কাল সকালের আগে এই কামড়া খুলবে না।
বাড়ির সকলে বসার ঘরে বসে গল্প করছে। সেখানকার মধ্যে মনি হচ্ছে মুহিত। তাকে সকলে এটা ওটা জিজ্ঞেস করে যাচ্ছে।
আহামেদ শরীফ এক পাশে বসে আছে৷ সে তার ছেলেকে দেখছে। বুকটা কেঁপে উঠছে মেয়েটার জন্য। কেমন আছে মিথি?
দুই ছেলের সাথে প্রতিদিন কথা হলেও মেয়েটার সাথে কথা হয় না। ওই মাসে এক বার। মেয়েটাকে শেষবার কবে দেখেছিলো সেটাও মনে নেই। অনেকবার দেখতে গিয়েছে কিন্তু দেখতে পারে নি। মেয়েটার কলেজের সামনে গিয়েও দাঁড়িয়ে থেকেছে কতোদিন।
মিথি একটু বেশিই ভয় পায় মাকে। মায়ের কড়া শাসন ভুলে সে বাবার ডাকে সাড়া দেওয়ার সাহস কোনো কালেই করতে পারে নি।
তবে মিথিও ভীষণ ভালোবাসে বাবাকে।
অধরা সিঁড়ির রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে নিচে দাদা চাচাদের আড্ডা দেখছে। ইসস এখন তার বাবাও এখানে থাকলে জমে যেতো।
প্রিয় মানুষটি অভিমান করে আছে। ঘুম কি আর ধরা দিবে অধরার চোখে? বিছানায় দীর্ঘ শ্বাস এপাশ ওপাশ করেও যখন ঘুম হলো না তখন অধরা গায়ে ওড়না জড়িয়ে ছাঁদের উদ্দেশ্য রওনা দেয়। এই বাড়ির ছাঁদটা অনেক সুন্দর। আহামেদ শরীফ নিজের পছন্দে ছাঁদ বানিয়েছে। সবার জন্য দোলনা বানিয়েছে বাচ্চাদের জন্যও কয়েকটা খেলনা রেখেছেন ছাঁদে।
ছাঁদে উঠতেই অধরার মন প্রাণ জুরিয়ে যায়। রাতের ফুরফুরে হাওয়া আর গোলাপ ফুলের সুভাস। দুটোই মন কাড়ার মতো।
আকাশে থালার মতো চাঁদ উঠেছে। সেই চাঁদের আলো ছড়িয়ে পড়েছে ছাঁদের আনাচেকানাচে। অধরা একদম ছাঁদের এক কোণায় এসে দাঁড়ায়।
“অধরা
হঠাৎ পুরুষালি কন্ঠে চমকে ওঠে অধরা। পেছন ঘুরে মুহিতের হাস্যজ্জল মুখখানা দেখে মুখ ঘুরিয়ে নেয়। মুহিত এক লাফে ছাঁদের রেলিং এ বসে পড়ে।
” এতো রাতে এখানে কেনো তুমি? আমায় মিসস করছিলে?
অধরা নাক মুখ কুঁচকে ফেলে। দীর্ঘ শ্বাস ফেলে চলে যেতে নেয় তখনই মুহিত বলে ওঠে
“আমায় ভালোবাসবে অধরা?
আমি একটু পাগলামি করি বেশি কিন্তু পাগল নই। আমি বেশি কথা বলি। কিন্তু কখনো মিথ্যে বলি না। আমি তোমাকে ভীষণ ভালোবাসি। আমার হাতটা ধরবে অধরা? আমার সাথে মুক্ত আকাশে ডানা মেলে উড়াল দিবে? কথা দিচ্ছি ভীষণ ভালো রাখবো তোমায়।
মুহিতের মুখে এরকম প্রেমবাক্য শুনে অধরা কিঞ্চিৎ অবাক হয়ে যায়। এমনটা সে কখনোই আশা করে নি। লোকটার চোখে মুখে একটুও নার্ভাসনেস নেই। নেই কোনো হতাশা। কিন্তু অধরার শরীরে ঘাম ছেড়ে দিয়েছে। হাত পা কাঁপছে তার।
কিন্তু এভাবে নার্ভাস হলে চলবে না। আজকে অধরাকে কিছু বলতেই হবে। সে জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নেয়।
” আমি মাহিম ভাইয়াকে ভালোবাসি।
মুহিত হাসে। চাপ দাঁড়ি ভর্তি মুখটাতে প্রাণখোলা হাসি। কিন্তু হাসার মতো কিছু তো বলে নি অধরা।
“আপনি যেটা শুরু করেছেন সেটা ঠিক না। আমি মাহিম ভাইয়াকে অনেক দিন হলো ভালোবাসি৷ একটু বেশিই ভালোবাসি। আমি মনে করি আপনি এটা জানেন। তাহলে এরকম পাগলামির মানে কি?
“ভাইয়া ভালোবাসে তোমায়? প্রেয়সী বলে ডাকে?
অধরা কনফিডেন্সের সাথে বলে
” হ্যাঁ ভাইয়া আমাকে ভালোবাসে। হয়ত আমার মতো অতোটা না তবে একটু হলেও ভালোবাসে।
মুহিত এক লাফে রেলিং থেকে নেমে পড়ে। অধরার মুখোমুখি দাঁড়ায়। কোমরে হাত রেখে মুখটা নিচু করে অধরার মুখোমুখি হয়।
অধরা ভ্রু কুচকে একটু পিছিয়ে যায়। মুহিত হিসহিস করে বলে
“তোমায় ভালোবাসি অধরা। বউ করবো তোমায়। ভাইয়ের সাথে কম্পিটিশন করেই তোমায় জিতে নিবো। আমার হওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়ে যাও
বলেই মুহিত চলে যায়। অধরার রাগ উঠে। পায়ের কাছে থাকা ফুলের টপ লাথি দিয়ে ফেলে দেয়। একদম মায়ের মতো জেদি মুহিত। নিজে যেটা বলবে সেটাই। অন্যদের কথার কোনো মূল্যই নেই তাদের কাছে। এই ধরনের মানুষ অধরার পছন্দ না।
সকাল বেলা মাথায় কারো হাতের স্পর্শ পেয়ে ঘুম ছুটে যায় অধরার। আজকে তো মাহিমের চলে যাওয়ার কথা। চলে গেলো কি?
এক লাফে উঠে বসে অধরা। চোখ খুলে দেখতে পায় তার সামনে তার বাবা বসে আছে। অধরার ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে ওঠে। সে বাবাকে জড়িয়ে ধরে। আরিফও মেয়েকে আদর করে দেয়। তখন আবারও মনে পরে যায় মাহিমের কথা।
অধরা চট করে বাবাকে ছেড়ে দেয়
” বাবা তুমি বসো আমি আসছি
বলেই এক দৌড়ে চলে যায় সে।
মাহিমের রুমের দরজা খোলা। অধরা ভেতরে ঢুকে যায়। মাহিম চেঞ্জ করছে। সাত সকালে তার রুমে কেউ আসবে না বলে রুমেই চেঞ্জ করছিলো।
অধরা ঘড়ের গতিতে ঢুকে মাহিমের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। খালি গায়ে আধ ভেজা মাহিমকে দেখে তাড়াহুড়ো করে মুখে হাত দিয়ে উল্টো দিকে ঘুরে দাঁড়ায় অধরা।
মাহিম দাঁতে দাঁত চেপে তাড়াহুড়ো করে চেঞ্জ করতে থাকে।
নির্লজ্জের মতো অধরা ড্রেসিং টেবিলের আয়নায় দেখতে থাকে মাহিমকে। আসলে সে দেখতে চায় নি। কিন্তু চোখ শুধু চলেই যাচ্ছে। ইসসস রে কি সুন্দর মানুষটা?
এই সুন্দর মানুষটার দিকে চোখ যাবে না?
“কারো রুমে ঢুকতে গেলে নক করতে হয় জানিস না?
মাহিমের গম্ভীর কন্ঠে আবার চোখ বন্ধ করে ফেলে অধরা।
” আমি কিছুই দেখি নি। আপনার যে বুকের বা পাশে একটা বড় তিল আছে। এটা আমি দেখি নি।
মাহিম ছোটছোট চোখ করে তাকায় অধরার দিকে। অধরাও মাহিমের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে
“শার্ট ছাড়া আপনাকে দেখতে কেমন লাগছিলো জানেন?
মাহিম তাকিয়েই আছে। অধরা দু পা এগিয়ে যায় মাহিমের দিকে। গোড়ালি উঁচু করে মাহিমের মুখের দিকে নিজের মুখটা খানিকটা এগিয়ে দিয়ে বলে
” হটটটটটটটটটট
বলেই এক দৌড় দেয়। মাহিম মুখ বাঁকিয়ে তাকিয়ে থাকে।
চলবে……………..
১–৯ পর্ব লিংক