পরনের শার্ট টানতে টানতে বিদ্রোহী গলায় বলল,❝তুমি আমাকে ঘুষি দিয়ে মেরে ফেললেও আমি এটাই বলব,তুমি একটা মেয়ের দিকে লালসার দৃষ্টিতে তাকাও।তাকে দেখলে তোমার চোখ চরিত্রহীন হয়ে যায়।আমি বজ্রকন্ঠে ঘোষণা দিচ্ছি,আশমিন জায়িন চৌধুরী একজন নষ্ট প্রেমিক❞।
বইঃ ইটপাটকেল
লেখিকাঃ সানজিদা বিনতে সফি
ইট পাটকেল পর্ব ১
ইট পাটকেল পর্ব ২
ইট পাটকেল পর্ব ৩
ইট পাটকেল পর্ব ৪
ইট পাটকেল পর্ব ৫
ইট পাটকেল পর্ব ৬
ইট পাটকেল পর্ব ৭
ইট পাটকেল পর্ব ৮
ইট পাটকেল পর্ব ৯
ইট পাটকেল পর্ব ১০
ইট পাটকেল পর্ব ১১
ইট পাটকেল পর্ব ১২
ইট পাটকেল পর্ব ১৩
ইট পাটকেল পর্ব ১৪
ইট পাটকেল পর্ব ১৫
ইট পাটকেল পর্ব ১৬
ইট পাটকেল পর্ব ১৭
ইট পাটকেল পর্ব ১৮
ইট পাটকেল পর্ব ১৯
ইট পাটকেল পর্ব ২০
ইট পাটকেল পর্ব ২১
ইট পাটকেল পর্ব ২২
ইট পাটকেল পর্ব ২৩
ইট পাটকেল পর্ব ২৪
ইট পাটকেল পর্ব ২৫
ইট পাটকেল পর্ব ২৬
ইট পাটকেল পর্ব ২৭
ইট পাটকেল পর্ব ২৮
ইট পাটকেল পর্ব ২৯
ইট পাটকেল পর্ব ৩০
ইট পাটকেল পর্ব ৩১
ইট পাটকেল পর্ব ৩২
ইট পাটকেল পর্ব ৩৩
ইট পাটকেল পর্ব ৩৪
ইট পাটকেল পর্ব ৩৫
ইট পাটকেল পর্ব ৩৬
ইট পাটকেল পর্ব ৩৭
ইট পাটকেল পর্ব ৩৮
ইট পাটকেল পর্ব ৩৯
ইট পাটকেল পর্ব ৪০
ইট পাটকেল পর্ব ৪১
ইট পাটকেল পর্ব ৪২
ইট পাটকেল পর্ব ৪৩
ইট পাটকেল পর্ব ৪৪
ইট পাটকেল পর্ব ৪৫
ইট পাটকেল পর্ব ৪৬
ইট পাটকেল পর্ব ৪৭
ইট পাটকেল পর্ব ৪৮
রিভিউ ১
#আশমিন
ইট পাটকেল ছোট গল্প
#সানজিদা_বিনতে_সফি
বৃষ্টিতে ভেজা কর্দমাক্ত রাস্তায় শো শো করে এগিয়ে যাচ্ছে গোটা বিশেক গাড়ি। মেঘলা আকাশ আর সামান্য ঝর বৃষ্টি মিলে পরিবেশ কিছুটা বৈরী। রাস্তায় এখানে সেখানে পানি জমে ছোট ছোট ডোবার আকার ধারণ করেছে। আশমিন কিছুটা বিরক্ত মুখেই গাড়িতে বসে। তার বৃষ্টি পছন্দ নয়। সবচেয়ে বেশি অপছন্দ মাটির স্যাতস্যাতে গন্ধ। নাকে ঢুকতেই মাথা ধরে যায়। ড্রাইভারের পাশে সানভি করুণ মুখে বসে আছে। আজ সারাদিন খুব সাবধানে কাটাতে হবে। কোন কাজ এদিক সেদিক হওয়া যাবে না। নাহলে আশমিন ঠান্ডা মাথায় তাকে এক সপ্তাহের জন্য কাজের অযুহাতে আটকে দিয়েছে। উদ্দেশ্য বউ থেকে দূরে রাখা। সে আবার বউ ছাড়া থাকতে পারে না। অনেক কষ্টে সাবানার বাবাকে পটিয়ে বিয়ে করেছে। শুধু বউয়ের সাথেই ভাব ভালোবাসা জমাতে পারছে না। তাও আশমিনের জন্য। মাঝে মাঝে আশমিন কে তার বাংলা ছবির ভিলেন বাপ মনে হয়। আজ তার সাবানাকে নিয়ে কুয়াকাটা যাওয়ার কথা ছিল। আশমিন নিজেই তাকে বুদ্ধি দিয়েছিল লুবানা কে সারপ্রাইজ দিতে। সব কিছু যখন রেডি ঠিক সেই মুহুর্তেই সে তাকে নিয়ে তার গ্রামের বাড়িতে হাজির। তার নাকি গ্রামের পুকুরে মাছ ধরতে ইচ্ছে করছে। কয়েক মাস আগে বারোটা ছাগল কিনে দিয়েছিল কেয়ারটেকার কে। সেই ছাগল ছানা দেখার জন্যও মন আনচান করছে। এসব ভুজুংভাজুং বলে সকাল সকাল তাকে নিয়ে গ্রামে রওনা হয়েছে। দুঃখে সানভির চোখ ভিজে যাচ্ছে কিছুক্ষণ পর পর। দুনিয়াতে এতো চাকরি থাকতে তাকে মন্ত্রীর ই কেন এসিস্ট্যান্ট হতে হলো! তার আর সংসার করা হবে না সে বুঝে গেছে। এর পরেও তার সাবানা তার সাথে থাকবে!
“মতি চাচা কে কল করে বলেছো আমি আসছি?”
সানভি বিরস মুখেই বললো,
— জ্বি স্যার। আসার আগেই বলেছি।
— আর কতক্ষণ?
— আধঘন্টা লাগবে।
আশমিন আর কিছু বললো না। পাশে বসা আমজাদ চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে মুখ কুচকে রইলো। এটা ঠিক সে সকাল সকাল তাকে তুলে এনেছে। তাই বলে সারা রাস্তা ঘুমিয়ে কাটাবে! সারা রাত ঘুমায় নি নাকি? কামিনী চৌধুরী তো দুই দিন আগেই গ্রামের বাড়ি চলে এসেছে। তাহলে তার বাবা রাতে জেগে করেছে টা কি? বাকি আধঘন্টা তার ভালোই কাটবে মনে হচ্ছে।
— আব্বু,
আমজাদ চৌধুরী নড়েচড়ে উঠলো। সকাল সকাল বেরুতে তার মোটেও ভালো লাগে না। তার উপর কাল থেকে তার মন মেজাজও খুব একটা ভালো না। ছেলের ডাক কে পাত্তা না দিয়েই জানালার দিকে হেলান দিয়ে বসলেন। এখন পাহাড় ধসে পরলেও সে চোখ খুলবে না।
— শুনলাম রাত জেগে সোসাল মিডিয়ায় মেয়েদের বিরক্ত করছো? আম্মু গিয়েছে দুই দিন হয়নি। তাতেই তোমার এই অধপতন। এখন বুড়ো বাপের নামেও ইভটিজিং এর বিচার আসবে বাসায়! বুড়ো বয়সে কচি মেয়ের দিকে নজর দিতে তোমার বুক কাপলো না! সামলাতে পারার ও একটা ব্যপার আছে তো নাকি?
আমজাদ চৌধুরীর ইচ্ছে করলো গাড়ির নিচে মাথা দিয়ে নিজের মাথা পিষে ফেলতে। নির্লজ্জ ছেলে জন্ম দিয়ে পৃথিবীতে বেচে থাকার কোন মানে হয় না। সে দাত কটমট করতে করতে বললো,
— বাজে কথা বন্ধ করো বেয়াদব ছেলে। বাবা হই তোমার। বেয়াদবি করলে চা*পকে ছাল তুলে নিবো অসভ্য ।
সানভি অসহায় মুখ করে বসে আছে। এখন তার কোন কিছুতেই খুব একটা আফসোস হয় না। আগে হতো। বড় স্যারের জন্য তার প্রচন্ড মায়া হতো। এখন ব্যপার টা গা সওয়া হয়ে গেছে।
— আমাকে কাছে স্ক্রিনশট আছে। গত বারের কথা ভুলে যাওনি নিশ্চিহ্ন?
আমজাদ চৌধুরীর মুখটা শুকিয়ে গেলো। বাবা ছেলের কথার মাঝেই তাদের বিলাসবহুল গাড়ির চাকা গর্তে পড়ে হালকা ঝাকুনি দিয়ে উঠলো।
রাস্তায় দাড়িয়ে থাকা একঝাঁক তরুণী মুহুর্তেই কাদা পানিতে মাখামাখি হয়ে গেলো। তাদের মধ্যে কেউ একজন খুবই বিশ্রী ভাষায় গালিও দিয়েছে। যা শুনে আপাতত স্তব্ধ হয়ে বসে আছে আশমিন। আমজাদ চৌধুরীর মুখও কিছুটা হা হয়ে আছে। সানভি হা হা করে হেসে উঠেও মুখ বন্ধ করে ফেলেছে।
— গা*লি কি আমাদের দিলো সান?
— হ্যা স্যার।
— এটা একটা মেয়েই ছিল তো?
সানভি মুখটা করুন করার চেষ্টা করে মাথা নাড়িয়ে হ্যা বললো। মুখ খুললেই ফুট করে হাসি বেরিয়ে আসবে। অনেকদিন ঈদের মতো খুশি লাগছে। আশমিন কে হতভম্ব হতে দেখে কলিজায় যেন বরফ পরেছে। শান্তি!
আমজাদ চৌধুরী ছেলের গম্ভীর মুখের দিকে তাকিয়ে মনে মনে হাসিতে ফেটে পড়লো। ঠিক হয়েছে। আল্লাহ বিচার করেছে।
থমথমে মুখে চৌধুরী বাড়িতে প্রবেশ করলো আশমিন। আজ তার দাদার রুহের মাগফেরাতের জন্য এলাকার কিছু এতিম বাচ্চাদের খাওয়ানো হবে। আল্লাহ হয়তো সেই উছিলায় তাদের গুনাহ গুলো মাফ করবেন।
ছেলেকে দেখেই কামিনী চৌধুরী সব কাজ রেখে ছুটে এসেছেন। বাড়ি ভর্তি মানুষ। আশমিন মায়ের সাথে কথা বলে নিজের রুমে চলে গেলো। ফ্রেশ হয়ে তারাতাড়ি সবার সাথে দেখা করতে হবে। প্রায় চারমাস পর গ্রামে এসেছে সে।
আমজাদ চৌধুরী আপাতত বউয়ের আসে পাশে ঘেষছে না। ছেলের যন্ত্রণায় তার জীবন অতিষ্ঠ।
অতিথিদের মধ্যে আমজাদ চৌধুরীর শিশুকালের বন্ধু রাফসান শিকদার তার পুরো পরিবার নিয়ে উপস্থিত।স্ত্রী, যমজ দুই ছেলে আর এক মেয়ে তার পরিবার। ছেলে দুটো হলো পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ বিচ্ছু। তারা আপাতত কোণায় দাড়িয়ে সুন্দরী মেয়েদের লিষ্ট করছে।
আর মেয়ে তেহজিব নূর তার গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে। পড়াশোনা শেষ করে আপাতত বাবার বিজনেস দেখছে।
আশমিন নিচে আসতেই নূরের মুখ ভয়ংকর ভাবে কুচকে গেল। বাবার হাত ছেড়ে গটগট করে বন্ধুদের কাছে গিয়ে দাড়ালো। আশমিন শান্ত চোখে দেখলো। মেয়েটা কি তাকে দেখেই মুখ বাকালো! আশ্চর্য!
খাওয়াদাওয়া শেষে বন্ধুদের সাথে গল্প করছিল নূর। তাদের মধ্যে তার বন্ধু আদিল একটা মেয়েকে দেখে আফসোসের শিষ তুললো। চোখ ঘুড়িয়ে আসে পাশে নজর বুলিয়ে বললো,
— আজকাল মেয়েরা জিরো সাইজ বডি বানাইতে গিয়া একেকটা কংকাল হইতাছে দোস্ত। ধইরা মজা নাই। মাইয়া মানুষ হইবো বালিশের মত। বুকে জড়াইলে কলিজা ভইরা যাইতে হইবো। এই মাইয়া বিয়া করলে হাড্ডি গুনতে গুনতে জীবন শেষ। মজা নাই ভাই মজা নাই।
নূর প্রচন্ড বিরক্তি নিয়ে তাকালো আদিলের দিকে। সাথে দাড়ানো বাকি বন্ধু গুলোও সায় জানিয়ে সান্ত্বনা দিচ্ছে তাকে।
— তা ঠিক বলেছিস দোস্ত। তবে স্লিম ফিগার আজ তোদেরই চাহিদা। ক্যাটরিনা কাইফের মতো বউ চাই কিন্তু মজা পাওয়ার জন্য আবার তার শরীরে মাংস থাকতে হবে। যদি বউয়ের ও এমন কিছু চাহিদা থাকে তাহলে তোর তো সার্জারী করতে হবে দোস্ত।
নূরের কথায় চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রইলো সবাই। পিছনে আশমিনের বিষম লেগে পানি মাথায় উঠে গেছে। কি সাংঘাতিক! হন্তদন্ত হয়ে আমজাদ চৌধুরীর কাছে হাজির হলো সে। সবার ভিতর থেকে কিছুটা জোর করেই রুমে এনে গম্ভীর গলায় বলল,
— বিয়ে করবো আব্বু। মেয়ে পছন্দ হয়েছে৷ যত তারাতাড়ি সম্ভব কাজটা সারতে চাচ্ছি। তোমার মতো এক বাচ্চা পয়দা করে ফুলস্টপ লাগানো টা ঠিক হবে বলে মনে হচ্ছে না। তাই তারাতাড়ি বউ চাই।
আমজাদ চৌধুরী স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন। কি বেয়াদব! নির্লজ্জের মতো বিয়ের কথা বলছে। ভালো করে বললে কি সে না করতো?
চলবে,,……………………….
………………………………….
#আশমিন
#ইট_পাটকেল(ছোট গল্প)
#সানজিদা বিনতে সফি
আমজাদ চৌধুরীর সাথে কথা শেষ করার আগেই আশমিনের ফোনে কল এসেছে। তাই দ্রুত ফোন নিয়ে বাগানের দিকে ছুটেছে সে। ঠিক তিন মিনিটের মাথায় তার পা থেকে মাথা পর্যন্ত কাদায় মাখামাখি হয়ে গেলো। হতভম্ব আশমিন কান থেকে ফোন সরানো তো দূর চোখের পলক ফেলতেও ভুলে গেছে। কয়েক মুহুর্ত অতিক্রম হতেই চোখ ঘুড়িয়ে উপরে তাকালো সে। তার বাড়ির ছাদেই নূর বালতি হাতে দাঁড়িয়ে। নূরের মুখের ক্রুর হাসি আশমিনের বিস্ময় কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিলো। কপালে কয়েকটা ভাজ পরে সাথে সাথেই তা মিলিয়ে গেছে৷ তার পরিবর্তে ঠোঁটে জায়গা করে নিলো শয়তানি হাসি। কাছের আত্মীয় স্বজনরা ছাড়া বাড়িতে তেমন লোক নেই। বাগানের দিকে আশমিনের কয়েকজন বডিগার্ড ছিল। ঘটনার সাথে সাথেই তারা আশমিন কে ঘিরে দাঁড়িয়ে। একজন ছাদে ছুটেছে নূর কে পাকড়াও করতে।
বডিগার্ড ছাদে উঠেই নিজের পা থামিয়ে দিলো। নূরের পিছনে একই রকম দেখতে দুটো ছেলে দাঁড়িয়ে। একজন গম্ভীরমুখে দাঁড়িয়ে থাকলেও আরেকজন বিরক্ত মুখে দাঁড়িয়ে। বোনের পিছনে দাড়িয়ে থাকতে এই মুহুর্তে তার ভালো লাগছে না। মাখো মাখো একটা প্রেম হওয়ার সম্ভাবনা ছিল তার। কিন্তু নূরের হটাৎ তলবে সব পন্ড হয়ে গেলো।
— দাড়িয়ে কেন? আমাকে ধরতেই তো এসেছো মনে হচ্ছে। এদের ভয় পাওয়ার কিছু নেই (অমি আর আশিয়ান কে দেখিয়ে)। এরা আমার জজন্মসূত্রে পাওয়া বডিগার্ড। তেমন কিছু করবে না,সুধু,,,
নূরের কথা শেষ হওয়ার আগেই আশমিন এসে সেখানে উপস্থিত হয়েছে। আশমিনের কাদায় মাখা মুখ আর দেখে আশিয়ান হু হা করে হেসে উঠেছে৷ হাসতে হাসতে কখনো নূরের পিছনে চলে যাচ্ছে তো কখনো অমি’র পিছনে চলে যাচ্ছে। আশমিনের কপাল খানিকটা কুচকে আছে। অমি অসহায় মুখ করে ভাই বোন কে দেখছে। কাকে কাদা জল মাখিয়েছে তারা কি বুঝতে পারছে না! এখান থেকে বেচে ফিরবে কি না তা ও তো ভাবতে হবে।
আশমিন হুট করেই কাদা নিয়েই আশিয়ান কে জড়িয়ে ধরলো। আশিয়ানের সাদা পাঞ্জাবির পিছনের দিকটায় চাপড়ে দেয়ার ছলে হাতের কাদার ছাপ লাগিয়ে শান্ত গলায় বলল,
— কিছু মনে করো না ছোট ভাই। ভবিষ্যৎ সম্বন্ধী কে দেখে আবেগ ধরে রাখতে পারি নি। তাই কোলাকুলি টা সেরে নিলাম। গাল বাড়িয়ে দিলে চুমু টাও খেয়ে নেয়া যেতো। প্রথম সাক্ষাতে এতটা বাড়াবাড়ি ঠিক হবে না তাই বাদ দিচ্ছি। পরের বার হবে ইনশাআল্লাহ।
অমি নাক চুলকানোর ভান করে নিজের হাসিটা আড়াল করে নিলো। আশিয়ানের মুখটা দেখার মতো হয়েছে। নূরের ঠোঁট দুটো আপনা আপনি ফাকা হয়ে গেছে।
আশমিন শয়তানি হেসে আশিয়ান কে ছেড়ে নূরের দিকে এগিয়ে গেলো। সামনা সামনি দাঁড়িয়ে অমির দিকে তাকাতেই অমি হালকা হেসে আশিয়ান কে নিয়ে ছাদের অপর পাশে চলে গেলো।
— তোমাদের কি যাওয়ার জন্য পায়ে ধরে বলতে হবে? নাকি ম্যাডাম কে কতটা ডেস্পারেটলি চুমু খাবো তা দেখতে দাঁড়িয়ে আছো। আমি রাজনীতি করি বলে চরিত্রহীন ভেবেছ? এত্ত বড় সাহস!
বডিগার্ড তিনজন তড়িঘড়ি করে সিড়ি দিয়ে নেমে গেলো। আশমিন কুচকানো ভ্রু সোজা করে নূরের দিকে তাকালো। নূর ভাবলেশহীন ভাবে দাঁড়িয়ে।
— রাস্তায় বখাটের মতো গালি দেয়া মেয়েটা তুমিই ছিলে? (হালকা হেসে)। দিন দিন বেয়াদব হচ্ছো নূর। এমন ভরা বাড়িতে খোলা জায়গায় কেউ এভাবে কাউকে ভেজায়? ভেজাতে হলে রুমে আসো। আমাকেও একটু ভিজানোর সুযোগ দাও। হতাশ হবে না।
নূর চেচিয়ে উঠতে গিয়েও থেমে গেলো। তার বাবা কিভাবে এমন নির্লজ্জ লোকের সাথে তাকে বিয়ে দেয়ার কথা ভাবতে পারে! চারিদিকে একবার চোখ বুলিয়ে দাতে দাত পিষে বলল,
— অসভ্য মানুষ। একদম লজ্জা নেই না?
শেষের কথা টা কিছুটা চেচিয়ে ই বললো নূর। আশমিন নিজের মুখটা যথেষ্ট সিরিয়াস করে রাশভারি গলায় উত্তর দিলো,
— না। বিয়ের ন’মাসের মাথায় আমি বাবা হয়ে তোমার শ্বশুরকে চমকে দিতে চাই। তাই লজ্জা পাওয়ার রিস্ক নিচ্ছি না। তোয়ার উচিত আমাকে সহযোগিতা করা। চলো এখুনি বিয়ে টা সেরে নেই। ভিতর থেকে প্রেম বেড়িয়ে আসার জন্য লাফালাফি করছে। বেশিক্ষণ চেপে রাখতে পারবো না। আর চেপে রাখার ইচ্ছেও নেই।
আশমিনের গম্ভীর গলা শুনে নূর থতমত খেয়ে গেলো। কয়েকবার আঙুল তুলে কিছু বলতে গিয়েও মুখ থেকে কোন আওয়াজ বেরুলো না। মনে মনে চিৎকার করে বলল, আমি আপনাকে কখনো বিয়ে করবো না বেহায়া পুরুষ।
আশমিন কিছুটা চিন্তিত গলায় নূর কে বললো,
— দেখো,আমি এখন নিচে যাচ্ছি। বাকি কথা বিয়ের পরে হবে। আর কিছুক্ষণ থাকলে ঠাস করে চুমু খেয়ে বসবো। তবে তোমার যদি এতে আপত্তি না থাকে তাহলে আমি আরো কিছুক্ষণ থাকার রিস্ক নিতে পারি। জনগণের সেবা করাই আমার কাজ।
নূর স্তব্ধ হয়ে গেল। আশমিনের চিন্তিত মুখের দিকে তাকিয়ে তার সব-কয়টা দাত ভেঙ্গে দেয়ার প্রবল বাসনা মনে চাপা দিয়ে ধুপধাপ পা ফেলে নিচে চলে গেলো৷ আশমিন কিছুক্ষণ আগেই তার বাবার কাছ থেকে মেসেজ পেয়েছে তার নূরের সাথে বিয়ের কথা ভাবা হচ্ছে। এখন এই কাদায় মাখামাখি হয়ে আমজাদ চৌধুরীর কাছে গিয়ে তাকেও সুখবর টা দিতে হবে।
আমজাদ চৌধুরী সিড়ির নিচেই দাঁড়িয়ে। মূলত সে ছেলের জন্যই দাঁড়িয়ে আছে। আশমিনের গায়ের কাদা প্রায় শুকিয়ে। ছেলের গম্ভীর মুখের দিকে তাকিয়ে হাসি
আর চেপে রাখলো না। আমজাদ চৌধুরীর হাসির মাঝেই আশমিনের নজর কামিনী চৌধুরীর উপর পড়লো। সানভি কে কিছু বুঝিয়ে দিচ্ছেন তিনি। আশমিন গম্ভীর গলায় ডাকলো,
— আম্মু।
— হ্যা আব্বু, বলো।
কামিনী চৌধুরী দ্রুত পায়ে এসে দাড়িয়েছে ছেলের সামনে। ছেলের অবস্থা দেখে কিছুটা বিচলিত সে। সানভি নিজেও অবাক চোখে তাকিয়ে। এরকম দৃশ্য জীবনে প্রথম দেখছে সে৷
— তোমার বর এখানে মেয়েদের পিছু পিছু ঘুরছে। এই বয়সে এসে তার এসব কেন করতে হবে। এখন, এইমাত্র একটা মেয়েকে দেখে দাত বের করে হেসেছে। আমি নিজ চোখে দেখেছি। ভার্সিটির কথা মনে আছে তো? তোমার সামনেই কতো মেয়েদের সাথে ফ্লার্ট করেছে। তুমি ভুল করেছ আম্মু। আমি আরেকটু ভালো বাবা ডিজার্ভ করি।
আশমিন মন খারাপের ভান করে নিজের রুমে চলে গেলো। বাকিটা কামিনী চৌধুরী সামলে নিবেন। সানভি করুণ চোখে আমজাদ চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে। এরকম ছেলে শত্রুর ও না হোক।
কামিনী চৌধুরী আগুন দৃষ্টিতে আমজাদ চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে আছে। সানভি থাকবে না চলে যাবে সেই দ্বিধায় ভুগছে।
— সানভি(চিৎকার করে)।
— ইয়েস ম্যাম,,
— তোমার স্যারের জন্য ছাদের রুমটা খুলে দাও। আজ থেকে সে সেখানেই ঘুমাবে।
আমজাদ চৌধুরীর মুখটা শুকিয়ে গেলো। কিছুটা আকুতি ভরা গলায় বলল,
— এসব কি বলছো সোনা। আমি একা কিভাবে,,
— তাহলে কি এখন আরেকটা বিয়ে করতে চাও?
কামিনী চৌধুরীর কটমট গলা শুনে আমজাদ চৌধুরী দ্রুত মাথা নেড়ে বলল,
— আস্তাগফিরুল্লাহ! এসব কি বলো কামু। বিয়ে করবো কেন?
— তাহলে কি বিয়ে ছাড়াই লিভ টুগেদার করতে চাইছো! চরিত্রহীন পুরুষ। আমি কাল ই ছেলেকে নিয়ে বাপের বাড়ি চলে যাবো।
আমজাদ চৌধুরী বাকহারা হয়ে গেলো। এই ধমকি গত একত্রিশ বছর ধরে শুনে আসছে সে। কিছুটা মিনমিনে গলায় বলল,
— ছেলেকে একা পাঠালে হয় না?
কামিনী চৌধুরী গটগট পায়ে নিজের রুমে গিয়ে খিল দিলেন। সানভি চাবি নিয়ে অনেকক্ষণ আগেই ছাদে চলে গেছে। এসব দেখে দেখে তার সংসার থেকেই মন উঠে গেছে। সাবান কে ভালোবাসে বলেই এখনো সমাজে থাকছে। নাহলে কবেই সে নির্বাসন নিত।
চলবে,,
(আর দুই পর্ব আছে। তার পর নতুন উপন্যাস শুরু করবো ইনশাআল্লাহ। সবাই পাশে আছেন তো?)
……………………………….
#ইট_পাটকেল(ছোট গল্প)
#সানজিদা_বিনতে_সফি
রুমের মাঝেই অস্থির ভাবে পায়চারি করছে আশমিন। আমজাদ চৌধুরী ও মুখ ফুলিয়ে বসে। সে মোটেও ইচ্ছে করে বসে নেই। আশমিন তাকে জোর করে বসিয়ে রেখেছে তাও বলা যাচ্ছে না। সে বাধ্য হয়ে বসে আছে। কামিনী চৌধুরী তাকে রুমে জায়গা দেয় নি। গেস্ট রুমে মেহমান থাকায় সে আশমিনের রুমে আসন গেড়ে বসেছে।
— তুমি আংকেলের সাথে কথা বলে বিয়ের ডেট কাল সকালে ফাইনাল করে ফেলো। ফজরের পর পর আমি কবুল বলব বলে ঠিক করেছি।
আমজাদ চৌধুরী বিরক্ত হলেন। গলায় যথেষ্ট অসন্তোষ আনার চেষ্টা করে বললেন,
— বাজে বকা বন্ধ কর। এভাবে বিয়ে হয় কখনো শুনেছো? এক রাতেই বিয়ের জন্য পাগল হলে কেন? আশ্চর্য!
আশমিন মুখ কুচকে ফেললো। নিজের দুনিয়াতে আসা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ হল তার। এমন বাবার ঘরে জন্মেছে বলে নিজেকে কয়েকবার গালি দিতেও ভুলল না।
— আজ প্রমাণ হলো আমি তোমার ছেলে না। আমার মতো এমন হ্যান্ডসাম চার্মিং ছেলে কিছুতেই তোমার মতো রসকষহীন কাঠখোট্টা মানুষের হতেই পারে না।আমি ব্যাগ গোছাচ্ছি আমাকে আমার আসল বাবার কাছে দিয়ে এসো। সে নিশ্চয়ই আমার বিয়ে করার প্রয়োজনীয়তা গভীর ভাবে অনুভব করবে।
আমজাদ চৌধুরী অবাক হয়ে গেলো। এখানে বাবা না হওয়ার কি হলো সেটাই তার মাথায় আসছে না। আমজাদ চৌধুরীর হতভম্ব হওয়া মুখকে আশমিন পাত্তা দিলো না। সে ভালো পাঞ্জাবি খোজায় ব্যাস্ত। সকাল সকাল এসব খুজে সময় নষ্ট করা যাবে না। আহ! তার বউ টা নিশ্চয়ই এখন তাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখছে। স্বপ্নে সে নিশ্চয়ই বউয়ের সাথে ভালো ছেলে হয়ে থাকে নি। আশমিন চিন্তিত হয়ে গেলো। মনে মনে দোয়া করল যাতে আজকের মতো স্বপ্নে কোন অসভ্যতা না করে৷ দেখা গেল স্বপ্ন দেখেই বউ বেকে গেছে। তখন আবার আরেক ঝামেলা।
– এসব পাগলামি বন্ধ করো। হুট করেই বিয়ে হয়ে যায় নাকি? আয়োজনের একটা ব্যাপার স্যাপার আছে তো নাকি। কত মানুষ আসবে তোমার বিয়েতে। এভাবে বিয়ে করলে মিডিয়া তিল কে তাল বানাবে। ফেস নষ্ট হবে। আর রাফসান ও রাজি হবে না। একটা মাত্র মেয়ে তার। এভাবে বিয়ে দিবে কেন? মেয়ের মতামতের ও তো একটা ব্যাপার আছে। আমি কাল রাফসানের সাথে এ বিষয়ে কথা বলবো। এখন ঘুমাও। সকাল সকাল বের হতে হবে।
আশমিন হাতে দুটো সাদা পাঞ্জাবি ধরে আমজাদ চৌধুরী কে উদ্দেশ্য করে চিন্তিত গলায় বলল,
— কোনটা বেশি ভালো হবে বলো তো?
— দুটো ই তো এক। (কপাল কুচকে)
আশমিন বিরক্ত হল। সাথে কামিনী চৌধুরীর জন্য কিছুটা মায়া ও হলো। এমন একটা লোক কে বিয়ে করে তার মা নিশ্চয়ই সুখে নেই।
— আশমিন, আমার কথা বুঝেছো তুমি?
— অহ হ্যা, তুমি রাফসান আংকেল কে কল করো। আমি কথা বলছি।
আমজাদ চৌধুরী চিৎকার করেই “না” বলে উঠলো। আশমিন ড্রেসিং টেবিল থেকে চোখ ঘুড়িয়ে তার দিকে তাকাতেই আমতা আমতা করে বলল,
— না মানে এতো রাতে কল করার কি দরকার। কাল সকালে কোরো। রাফসান এখন ঘুমাচ্ছে। শুধু শুধু,,,
আমজাদ চৌধুরীর কথা শেষ হওয়ার আগেই আশমিন নূরের বাবা কে কল দিয়ে ফেলেছে। আমজাদ চৌধুরীর মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে গেছে। ঠিক কয়েক সেকেন্ডের মাথায় তার ইজ্জত নিয়ে এই ছেলে ছিনিমিনি খেলবে তার বোঝা শেষ।
র
কয়েকবার রিং হতেই ফোন তুলেছেন রাফসান শিকদার। কন্ঠে ঘুম আর আশ্চর্য ভাব ঢেলেই সে “হ্যালো” বললো।
— আসসালামু আলাইকুম আংকেল।আমি আপনার জামাই বলছি।
রাফসান শিকদার ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো। কান থেকে ফোন নামিয়ে নাম্বারে আরেকবার চোখ বুলালো। সেখানে আশমিনের নাম জ্বলজ্বল করছে। সে ভাবলো ঘুমের ঘোরে হয়তো ভুল শুনেছে। তাই নিজেই বলল,
— আশমিন, এতো রাতে? কোন সমস্যা হয় নি তো বাবা?
আশমিন নিজেকে যথেষ্ট ভদ্র সাজানোর চেষ্টা করলো। কোমল গলায় বলল,
— হ্যা আংকেল। একটা সমস্যা হয়েছে। আপনিই পারেন এর সমাধান করতে।
রাফসান শিকদার তড়িঘড়ি করে উঠে বসলেন। চিন্তিত গলায় বললেন,
— হ্যা বাবা বলো। আমি কি আসবো? কোন ঝামেলা হয়েছে?
— ব্যাপার টা হচ্ছে, আমি বিয়ে করতে চাইছি সকাল সকাল। বিষয় টা আব্বু বুঝতে পারছে না। এখন ছেলে হয়ে তো আর তাকে বলতে পারি না আমার আপনার মেয়েকে ছাড়া ঘুম আসছে না। আপনার নাতি নাতনিরা পৃথিবীতে আসার জন্য লাফালাফি করছে। আপনার মেয়ের ও নিশ্চয়ই আমাকে ছাড়া থাকতে কষ্ট হচ্ছে। একজন জনপ্রতিনিধি হিসেবে জনগণের কষ্ট কিভাবে মেনে নেই বলুন তো! তাই ফজরের সময় পরিবার নিয়ে চৌধুরী বাড়িতে চলে আসবেন। আমি খুব লাজুক মানুষ, তাই বলতে পারলাম না আপনার মেয়ের জন্য আমার কতটা প্রেম প্রেম পাচ্ছে। নাহলে আপনাকে সবটা খুলে বলতাম। রাখছি আংকেল। আপনি এখন একটু ঘুমিয়ে নিন। সকালে অনেক কাজ। মেয়ের বাবা বলে কথা।
রাফসান শিকদারের ঠোঁট দুটো আপনা আপনি আলাদা হয়ে গেছে। হার্টবিট ও বেড়ে গেছে অনেকটা। কান ঝা ঝা করছে। এসব কি বললো আশমিন! আল্লাহ!
চলবে,,
( কাল এতটুকু ই লিখেছিলাম।আজ আর আগাতে পারলাম না। ভালো লাগছে না। এটুকুই পড়ুন। পরে বাকিটা দিয়ে দিবো।)
…………………………………
#আশমিন
#ইট_পাটকেল (ছোট গল্প)
#সানজিদা_বিনতে_সফি
রাফসান শিকদার চিন্তিত মুখে আমজাদ চৌধুরী কে লাগাতার কল করছে। আমজাদ চৌধুরী অসহায় চোখে ফোনের দিকে কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে ফোন উল্টে রেখে দিয়েছে৷ ছেলের এমন নির্লজ্জ কর্মকাণ্ডে সে খুব বিরক্ত। কিন্তু তার এই বিরক্তি কে আশমিন পাত্তা দিচ্ছে না। সে এই রাতদুপুরে মসজিদের মাওলানা সাহেব কে কল করে বিয়ের বিষয় নিয়ে আলোচনায় ব্যাস্ত। আমজাদ চৌধুরী মুখ কালো করে বসে রইলেন। তার কিছু বলতে ইচ্ছে করছে না। কিশোরী মেয়েদের মতো মুখ ফোলাতে ইচ্ছে করছে তার। ছেলের দিকে অভিমানী চোখে তাকালেন একবার। ওমনি আশমিন ভয়ার্ত গলায় বলল,
–এভাবে তাকাচ্ছো কেন! তুমি নিশ্চয়ই আমার প্রেমিকা ছিলে না। এমন ভাব করছো যেন আমি তোমায় ঠকিয়ে অন্য মেয়ে নিয়ে সংসার করছি৷ আমি এই অপবাদ একদম মেনে নিবো না আব্বু!
ছেলের কথায় মোটেও ভড়কালেন না সে। উল্টো খাট থেকে নামতে নামতে বলল,
— আমি তোমার মায়ের কাছে যাচ্ছি। ছেলের কৃতকর্ম তার ও জানা উচিত। আমি এখানে চিন্তায় মরবো আর সে আড়াম করে ঘুমাবে তা তো হতে দেয়া যায় না।
আশমিন কষ্ট পাওয়ার ভান করে বলল,
— নানাজান অত্যন্ত স্বার্থপর একজন মানুষের সাথে আমার আম্মুর বিয়ে দিয়েছে। তিনি তো আর জানতেন না,তার পছন্দ করা পাত্র আমার আম্মু কে নিয়ে যে হিংসায় জ্বলে পুড়ে ছাই হয়ে যায়! নিজের মেয়ের সর্বনাশ কেউ এভাবে করে? তুমিই বলো?
আমজাদ চৌধুরী বিস্মিত গলায় বলল,
— আমি কখন হিংসা করলাম!
— তুমি শুধু আম্মু কে নয়, আমাকেও হিংসে করো।
— বাজে বকা বন্ধ করো। সব সময় আজে বাজে কথা! বাবা হই তোমার। হিংসে করবো কেন?
— এই যে আমি সুন্দরী দেখে একটা মেয়ে কে বিয়ে করছি তা তোমার সহ্য হচ্ছে না। মনে মনে তুমি হিংসায় জ্বলছো। কয়েকদিন পর যখন আমি ডজন খানেক বাচ্চার বাবা হয়ে যাবো তখন তুমি আরো জ্বলবে। তুমি তো আবার মাত্র এক বাচ্চার বাবা। কম্পিটিশনে আমি এগিয়ে ।
আমজাদ চৌধুরী রাগ করতে গিয়েও দ্বিধায় পরে গেলেন। বিরক্তিতে মুখ কুচকে ঝাজালো গলায় বললেন,
— সেই একটা বাচ্চা নেয়াও আমার ভুল হয়েছে। তার মাশুল আজ পর্যন্ত দিচ্ছি।অসভ্য ছেলে। ভদ্রতা পুরোটা গিলে খাচ্ছো দিন দিন। তুমি বিয়ে করলে আমার হিংসে হবে কেন? আশ্চর্য!
আশমিন অবাক হওয়ার ভান করে বলল,
— হবে না! তাহলে আয়োজন না করে ভাংতি দিচ্ছো কেন। আর কথা বলে অযথা আমার সময় ই বা নষ্ট করছো কেন?
আমজাদ চৌধুরী আতকে উঠে বলল,
— আমি তোমার সময় নষ্ট করছি!
আশমিন পাঞ্জাবির বোতাম লাগাতে লাগাতে উদাস গলায় বলল,
— তুমি ছাড়া এখানে আর কেউ নেই আব্বু।
আশমিনের উদাস মুখ টা দেখে আমজাদ চৌধুরীর মায়া হলো। তার মন বিদ্রোহ করে বলল, আয়োজন ছাড়া বিয়ে হওয়া কোন বিষয় নয়। ছেলের আপতত বিয়ে করা জরুরি। তাই এইটুকু করলে দোষের কিছু হবে না।
— এভাবে বসে না থেকে তোমার বন্ধু কে বলো মেয়ে কে নিয়ে আসতে। আমি কিন্তু লেট করবো না। ব্রাশ করার ও কোন দরকার নেই। অযথা সময় নষ্ট। বিয়ের পরে আমি নিজ হাতে ব্রাশ করিয়ে দিব।
আমজাদ চৌধুরী বির বির করতে করতে “নির্লজ্জ” বলে বেড়িয়ে গেল। এখানে থাকা মানে নিজের কান কে অপবিত্র করে ফেলা। কামিনী নিশ্চয়ই এই ছেলে কে পেটে নিয়ে উল্টো পালটা কিছু খেয়েছে। নাহলে এমন বজ্জাত ছেলেই তার হবে কেন?
এই শেষ রাতে কেন সানভি কে ঘুম থেকে তুলে আনা হয়েছে সে বুঝতে পারছে না। দেয়ালে হালকা হেলান দিয়ে একটু পর পর হাই তুলছে সে। তবে আশমিন কে কোন রকম প্রশ্ন করছে না।
আশমিন কামিনী চৌধুরীর রুমে গিয়ে তাকে ঘুম থেকে তুলে একটা ভয়ংকর কথা বলে ফেলেছে। সবার কাছে ভয়ংকর মনে হলেও আশমিনের চিন্তা দেখে মনে হচ্ছে সে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে চিন্তিত। কামিনী চৌধুরী ছেলের কপালে হাত রেখে উদ্বিগ্ন গলায় বললেন,
— কি হয়েছে বাবা!উল্টো পালটা বকছো কেন? তুমি কি ড্রিংক করেছো!
কামিনী চৌধুরীর গলায় স্পষ্ট আতংক। আশমিন গম্ভীর গলায় বলল,
— না আম্মু৷ আমি ভালো ছেলে। আপাতত বউ কে কি গিফট করবো তা নিয়ে চিন্তিত। ভালো কোন গয়না থাকলে আমাকে দাও। ইউনিক কিছু, যেমন মনে করো, বংশের বিখ্যাত কোন হার, বা চুরি।
কামিনী চৌধুরী ভয়ার্ত গলায় বলল,
— বউ কোথা থেকে আসবে বাবা! তুমি কি বিয়ে করেছো?
আশমিন মুখটা আরো গম্ভীর করে ফেললো, গলার স্বর মোটা করে বলল,
— করি নি। আব্বু আমার জন্য মেয়ে ঠিক করেছে। রাতভর অনুরোধ করেছে যাতে আজ ফজরের পরেই আমি বিয়েটা সেরে ফেলি। অবশেষে আমাকে রাজি হতেই হলো। একমাত্র বাবা বলে কথা। আবদার তো আর ফেলতে পারি না। আমার চোখ দেখো,সারারাত না ঘুমানোর ফলে লাল হয়ে আছে৷ সিদ্ধান্ত নিয়েছি বিয়ে করে একবারেই ঘুমাবো।
কামিনী চৌধুরী বিস্মিত হয়ে চেয়ে রইলেন। সানভির ঘুম পালিয়ে গেছে। সে আপাতত সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আমজাদ চৌধুরীর জন্য তার বুক ফেটে কান্না আসছে। এমন ছেলে তার নিস্পাপ স্যারের ই কেন হতে হলো!
কামিনী চৌধুরী কটমট গলায় বলল,
— তোমার আব্বু কোথায়?
— বিয়ের আয়োজন করতে গেছে। তুমি আমাকে গলার হার টার টাইপের কিছু দাও। আমি এখন ব্যাস্ত।
কামিনী চৌধুরী দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে আলমারি খুলে একটা নতুন হার বের করে দিলেন। খুব একটা বড় নয়। হালকার মধ্যে, তবে ডিজাইন সুন্দর।
— নানাজানের মেয়ের জামাইয়ের জন্য আমার এভাবে বিয়ে করতে হচ্ছে আম্মু। তোমার বাবা কাজটা ঠিক করেন নি। এর একটা বিহিত চাই আমি।
আশমিন চলে গেছে। কামিনী চৌধুরীর নিজের স্বামীর উপর প্রচন্ড রাগ হচ্ছে। এভাবে বিয়ে হয়! একমাত্র ছেলে তার, ধুমধাম করে বিয়ে করাবে। অথচ তাকে জানানোর ও প্রয়োজন মনে করলো না৷ কাল ই সে বাপের বাড়ি চলে যাবে৷ এমন লোকের সাথে সংসার করার মানেই হয় না।
হুট করেই বিয়ে হয়ে যাবে এমন ভাবনা নূরের মস্তিষ্কের ধারে কাছে ও ছিল না। তাও ফজরের পর পর! এটা কোন বিয়ে করার সময় হলো!
নূর বাড়ির সাধারণ পোশাকে বসে আছে আশমিনের রুমে। এলোমেলো চুল, ফোলা ফোলা চোখ দেখে আশমিন বুকে হাত দিয়ে তড়িঘড়ি করে রুম থেকে বেরিয়ে গেছে। তার সামনে এমন সাংঘাতিক ভাবে বসে থাকার মানে কি। চুমু টুমু খেয়ে ফেললে তাকেই আবার অসভ্য বলা হবে। রীতিমত পুরুষ নি*র্যাতন!
আমজাদ চৌধুরী অনেক কষ্টে রাফসান শিকদার কে বিয়ের জন্য রাজি করিয়েছে। রাফসান শিকদার রুষ্ট মনেই মেয়েকে নিয়ে হাজির হয়েছেন। অমি আর আশিয়ান ভ্যাবাচেকা খেয়ে বসে আছে তখন থেকে।
আশমিন রুমে গিয়ে দেখে নূর মুখ কুচকে বসে আছে।
— এভাবে বিয়ের মানে কি! কোন নষ্ট গল্প আছে নাকি? নেতাদের বিশ্বাস নেই। এভাবে চুপিচুপি বিয়ে করা তো সেই ইঙ্গিত ই দিচ্ছে।
আশমিন পাঞ্জাবির বোতাম খুলতে খুলতে বলল,
— নিজেকে এতো গুরুত্বপূর্ণ ভাবার কিছু নেই। আশমিন জায়িন চৌধুরীর একটা তুড়ি তে কয়েকশ মেয়ে এসে হাজির হয়ে যাবে। নেহাৎ ই আব্বু জোর করেছে। তোমাকে বিয়ে করার জন্য মরে যাচ্ছিলাম না আমি।
নূর ধীর পায়ে এগিয়ে এলো আশমিনের দিকে। চোখে চোখ রেখে শান্ত গলায় বলল,
— বাজান তুড়ি। আমিও দেখি দেশের কোন মেয়ের রুচি এতো খারাপ৷
আশমিন টপাটপ নূরের গালে চুমু খেয়ে ফেলল। বিস্ময়ে হা হয়ে যাওয়া নূরের মুখের দিকে তাকিয়ে রাগী গলায় বলল,
— একদম আমাকে সিডিউস করার চেষ্টা করবে না। দূরে যাও। নেহাৎ ই আমি নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারি না। নাহলে তোমাকে চুমু খাওয়ার কোন ইচ্ছেই আমার নেই।
চলবে,,
………………………………..
……………………………………………………..
#আশমিন
#ইট_পাটকেল
#সানজিদা_বিনতে_সফি
থমথমে মুখে ড্রয়িং রুমে বসে আছে আশমিন। আমজাদ চৌধুরী ছেলের দিকে তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নিলেন। আপাতত তার দুনিয়ায় কোন বিষয় নিয়ে আগ্রহ নেই। কাল বিকেলে ঢাকায় ফিরেছে তারা। কামিনী চৌধুরী স্বামীর রাগ করে নিজের বাপের বাড়ি চলে গিয়েছেন। কামিনী চৌধুরীর বড় ভাই শমসের চৌধুরী ফোন করে কয়েক বার নিজের দাপট বুঝিয়েছেন।
— তুমি থাকতে আমার বউ কি করে বাপের বাড়ি চলে গেল আব্বু! তোমার উচিত ছিল শ্বশুর হিসেবে তাকে ধরে বেধে ছেলের সাথে নিয়ে আসা।
আমজাদ চৌধুরী শান্ত গলায় বললেন।
— তুমিও তো ওখানেই ছিলে। তুমি কিছু বললে না কেন?
আশমিনের মুখটা গম্ভীর হয়ে গেল। সে চোখ মুখ কুচকে বলল,
— আমি তো ভালো ছেলে। তাই কিছু বলতে পারি নি৷ এখন দেখছি ভালো ছেলে হওয়া মোটেও ভালো কথা নয়। দেখলে তো, কিভাবে ধরা খেয়ে গেলাম! সব তোমার জন্য হয়েছে। বাবা হিসেবে তুমি শূন্য পেয়েছো। যাকে বলে ফেইল।
— বুড়ো বয়সে তোমার জন্য বউয়ের বড় ভাইয়ের ঝাড়ি খাচ্ছি। তোমার আম্মু আমাকে ছেড়ে বাপের বাড়ি চলে গেছে। আমি কি তোমাকে কিছু বলেছি? আমার দিকে আঙ্গুল তোলা বন্ধ করো।
আশমিন হতভম্ব হয়ে গেল। অসহায় হওয়ার ভান করে বলল,
— তুমি আমার উপর প্রতিশোধ নিলে! ষড়যন্ত্র করে আমাকে বউ হারা করে দিলে তুমি! এই দিন দেখার জন্য আমি তোমাকে বাবা হিসেবে চুজ করেছিলাম?
আমজাদ চৌধুরী বিরক্ত হলেন। টিভির রিমোট টা রেখে হনহন করে নিজের রুমে চলে গেলেন। এখানে থেকে এমন বাজে কথা শোনার কোন মানেই হয় না।
আশিমন দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল। নূর ইচ্ছে করেই যে তাদের সাথে আসেনি তা সে খুব ভালো করেই জানে। মেয়েটা এভাবে হুট করে বিয়ে করার প্রতিশোধ নিচ্ছে। আশমিনের মন টা খুব খারাপ হয়ে গেল। এভাবে বউ ছাড়া থাকার কোন মানে হয়। সকাল সকাল বিয়ে করে কি লাভ হলো!
আশমিন আজ তার বাবার অফিসে এসেছে। সচরাচর সে অফিসে খুব একটা আসে না। আমজাদ চৌধুরী ছেলেকে দেখে নিজের ব্যাক্তিগত কক্ষে গিয়ে দরজা বন্ধ করে বসে রইলেন। আশমিন যে কোন ভালো উদ্দেশ্যে আসে নি সে একশ ভাগ শিউর।
— আব্বু কোথায় সান?
সানভি অসহায় চোখে এদিকে সেদিক তাকালো। আমজাদ চৌধুরীর জন্য তার ছোট্ট মনে বিশাল মায়া।
— স্যার অফিসে নেই হয়তো। চলুন স্যার, আজ আমাদের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মিটিং আছে। এসপি সাহেব অপেক্ষা করছে।
— সেও অনেক কেই অপেক্ষা করায় সান। তাই নিজেও কিছুক্ষণ অপেক্ষা করুক। আমি আব্বুর সাথে দেখা করেই যাবো।
আমজাদ চৌধুরীকে খবর পাঠানো হলেও সে আসলো না। আশমিন নিজের কেবিনে আড়াম করে বসে খুব গুছিয়ে তার বাবা কে একটা মেসেজ পাঠালো। দশ মিনিটেই আমজাদ চৌধুরী হন্তদন্ত হয়ে আশমিনের সামনে এসে বসলো।
— আমি গ্রামে যাচ্ছি আব্বু। তাই তোমাকে দেখতে এলাম৷ কয়েক ঘন্টা আমাদের দেখা হবে না। আমি তোমাকে খুব মিস করবো।
আমজাদ চৌধুরী বিরক্ত গলায় বললেন,
— যা বলার সরাসরি বলো। তোমাকে আমার ভালো করে চেনা আছে।
— দেখেছো! আমার বাবা বলেই তুমি এতো ইন্টেলিজেন্ট। আচ্ছা যাই হোক, আমি শ্বশুর বাড়ি যাচ্ছি৷ আসার পর থেকে নূর ফোন রিসিভ করছে না। আমার মতো একটা অসাধারণ মানুষ কে মেয়েটা কত ভালোবাসে ভাবো একবার! আমার কল দেখে খুশিতে কল রিসিভ ই করতে পারে না। আমার উচিত মেয়েটাকে আরো বেশি ভালোবাসা। তাই আমি নিজেই তার কাছে চলে যাচ্ছি৷ তোমার জন্য কি কিছু আনতে হবে?
— চোখের সামনে থেকে বিদায় হও। কাজের সময় এসে বিরক্ত করছো কেন?
আশমিন আমজাদ চৌধুরীর কথা মোটেও গায়ে মাখলো না। সে এখানে এসেছে অন্য উদ্দেশ্যে। গলা খাকারি দিয়ে সিরিয়াস গলায় বলল,
— আমি একটা ডিল করতে চাইছি মি. চৌধুরী। এতে আপনার ও সমান লাভ আছে।
— আমি কোন ডিলে আগ্রহী নই। যেতে পারো।
আশমিন আমজাদ চৌধুরীর কথায় কান না দিয়ে গম্ভীর গলায় বলল,
— নিজের জীবন বাজি রেখে আপনার স্ত্রী কে আমি গিয়ে তার বাবার বাড়ি থেকে তু*লে আনবো। আপনার কথা ভেবে আমি নিজের রেপুটেশন সাইডে রেখে এতো বড় রিস্ক নিচ্ছি। আপনার উচিত কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা। সেই কৃতজ্ঞতা থেকে আপনি নূর কে বুঝিয়ে ঢাকা নিয়ে আসবেন। ব্যাস,,এটুকুই।
আশমিনের কথা শুনে সানভির ইচ্ছে হলো সাত তলা থেকে লা*ফ দিয়ে জীবন দিয়ে দিতে। সামান্য একটা কথা এভাবে বলার মানে কি! আশ্চর্য!
আমজাদ চৌধুরী মুখটা ভোতা করে বসে রইলেন। ইহজগতের মায়া সে ত্যাগ করেছেন। এখন আর সংসারে থেকে লাভ নেই। কাল ব্যাগ গুছিয়ে সে হিমালয়ে চলে যাবে। এমন স্ত্রী সন্তান তার চাই না।
— আপনার কাছে আর কোন অপশন নেই মি.চৌধুরী । আমার প্রস্তাবে রাজি না হলে আমি আপনার স্ত্রী কে বলে দিব আপনি তার অগোচরে আপনার কলেজ বান্ধবীর সাথে কেএফসি তে ঘন্টার পর ঘন্টা আড্ডা দেন।
আমজাদ চৌধুরী উত্তেজিত গলায় বললেন,
— মিথ্যা কথা। তুমি আমাকে ফাসাচ্ছো! নিজের বাবার সংসার ভাঙ্গতে চাইছো?কেমন ছেলে তুমি?
— ভালো ছেলে। আপাতত আমি যাচ্ছি৷ মিটিং শেষ করে বাসায় ফিরতে ফিরতে কাল সকাল হবে। রাতে আপনার স্ত্রীকে কিড*ন্যাপ ও করতে হবে। অনেক কাজ।
আমজাদ চৌধুরী হতভম্ব গলায় বললেন,
— ওটা তোমার নানার বাড়ি। তুমি গেলেই তোমার আম্মু চলে আসবে। এভাবে বলার মানে কি।
— তুমি গেলেও নূর চলে আসবে। তাহলে যাচ্ছো না কেন? মিনিমাম রেস্পন্সিবল না তুমি। বিরক্তিকর বাবা একটা।
দুনিয়ায় সমস্ত বাজে কথা বলে নিজেই বিরক্ত হয়ে উঠে চলে গেল। আমজাদ চৌধুরী ক্লান্ত গলায় বলল,
— আমি কি এমন বললাম সানভি?
সানভি নিজেও খুব অসহায় বোধ করছে।
— জানি না স্যার।
উত্তর দিয়ে দেড়ি করলো না সে।আশমিন অনেকটা এগিয়ে গিয়েছে। আশমিনের পিছনে ছুটলো সে৷ আমজাদ চৌধুরীর মন মেজাজ ভালো নেই৷ বিজনেস খুব একটা ভালো যাচ্ছে না। কামিনী চৌধুরী না থাকায় বিজনেস সামলাতে হিমসিম খাচ্ছে সে। তাই অতো না ভেবে নূর কে আনতে যাওয়াই তার ঠিক মনে হলো। এই ছেলের বিশ্বাস নেই। দেখা গেল বউয়ের কাছে তাকে ভাইরাল করে দিয়েছে।
সকালে কামিনী চৌধুরী কে নিয়ে বাসায় ফিরেছে আশমিন। দুই দিনের ধকলে খুব ক্লান্ত সে। সানভির হাত থেকে কামিনী চৌধুরীর লাগেজ টা নিজের হাতে নিয়ে ক্লান্ত গলায় বলল,
— বাসায় যাও সান। লুবানা অপেক্ষা করছে।
কৃতজ্ঞতায় সানভির চোখে পানি চলে এল। আজ কতদিন ধরে বাসায় যায় না সে। মনে মনে আশমিনের জন্য দোয়া করে ফেললো তৎক্ষনাৎ। ঠিক তখনই আশমিন বো*মা ফেললো।
— লুবানা কে তার বাবার বাড়ি পৌঁছে দিয়ে এগারোটায় অফিসে চলে আসবে। আমি অফিসে পৌঁছে যাব।
সানভির চোখে এবার ও পানি এলো। কেন এলো কে জানে! মুখ ফুটে কিছু বলতে পারলো না সে। চুপচাপ চলে গেল।
আশমিন রুমে এসে দেখলো এক সুন্দরী রমনী তার বিছানায় খুব আয়েস করে ঘুমাচ্ছে। আশমিন হাসলো। দূর থেকে কয়েক পলক দেখে ওয়াশরুমে চলে গেল ফ্রেশ হতে। নূর জেগেই ছিল। এতদিন আশমিন কে সে খুব জ্বালিয়েছে। ইচ্ছে করেই তার কল রিসিভ করে নি। মাঝরাতে আশমিনের দুষ্টু মেসেজ তার রাতের ঘুম হারাম করে দিয়েছে। এখন কাছে আসতেই তার হাত পা কাপছে। তবুও সে শক্ত হয়ে পরে থাকলো। কিছুতেই আশমিন কে বুঝতে দিবে না সে জেগে আছে।
আশমিন ফ্রেশ হয়ে এসে বিছানার বসতেই একটা সুন্দর ঘ্রাণ নূরের নাকে এসে লাগলো। আশমিন নূরের দিকে ঝুকে শক্ত করে তার গলায় কামড়ে দিল। নূর চিৎকার করার আগেই আশমিন ফিসফিস করে বলল,
— বলেছিলাম না,জ্বালিয়ো না।কামড়ে দিবো। এখন আমার দোষ দিতে পারবে না। আমি ভালো ছেলে।
কামড়ে দেয়া জায়গায় কয়েকটা চুমু খেয়ে সরে এলো সে। হতভম্ব নূরের দিকে তাকিয়ে গম্ভীর গলায় বলল,
— ভালো ছেলে বলেই আদর করে দিলাম। তোমার মতো কামড়াকামড়ি করার কোন ইচ্ছেই আমার নেই। আমার অবাধ্য হয়ে আমাকে খারাপ ছেলে করার চেষ্টা করবে না।
নূর হতভম্ব হয়ে রিয়্যাক্ট করতেও ভুলে গেল। আশমিন ততক্ষণে তাকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পরেছে। কয়েক ঘন্টা ঘুমাবে সে।
চলবে,,
…………………………………..
#আশমিন
#ইট_পাটকেল (ঈদ উপহার)
#সানজিদা_বিনতে_সফি
প্রচন্ড গরমে হাসফাস অবস্থা। আশমিনের যেন গরম একটু বেশিই লাগছে। এক অজানা কারণে তার খুব রাগ হচ্ছে। রাগে চুলের গোড়ায় গোড়ায় ব্যাথা করছে। তবুও সে চুপচাপ বসে আছে। তার রাগের একমাত্র কারণ তার বউ। যে বর্তমানে সবগুলো দাত বের করে বন্ধুদের সাথে কথা বলছে৷
আশমিন রেগে আছে বোঝাতে কয়েকবার সানভি কে ধমক ও দিয়েছে। তবে সেদিকে ধ্যান নেই নূরের। সানভি অবশ্য মিন মিন করে একবার জানতে চেয়েছে,
— আমি কি করেছি স্যার!
— এখন তুমি কিছু করবে,আর আমি ধমক দেয়ার জন্য এই আশায় বসে থাকবো? তোমার মর্জি মতো আমাকে ধমক দিতে হবে!
সানভির মুখটা অমাবশ্যায় ছেয়ে গেল। আশমিন কে আর কিছু বলার সাহস হলো না। কারণ সে যাই বলুক না কেন, আশমিন ত্যাড়া জবাব ই দিবে।তাই আগের মতো চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো।
ব্যাস দুই মিনিটেই আশমিনের ধৈর্য ভেঙে গেল। সে উঠে ধুপধাপ পা ফেলে নূরের কাছে গিয়ে তার হাত ধরে বেরিয়ে গেল।
— আরে কি করছেন! কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন আমাকে?
— আমরা ঘুরতে যাচ্ছি।
— এতো রাতে ঘুরতে যাবো কেন! এটা আপনার শহর নয়। এটা গ্রাম। বিপদ হতে পারে।
— হলে হোক। আমি কি কাউকে ভয় পাই নাকি?
আশমিনের কাটকাট কথায় নূর আর কিছু বললো না। তবে তার প্রচুর মেজাজ খারাপ হচ্ছে৷ গাড়িটা ও নিয়ে আসে নি৷ মাঝরাতে এভাবে গ্রামের রাস্তায় হাটার কোন মানে হয়!
কিছুক্ষণ যাওয়ার পর আশিমিনের মনে হলো সে নিজের ফোন টা আনতে ভুলে গেছে। তার সাথে কোন গার্ড ও নেই। যে কোন সময় তারা বিপদে পরতে পারে। সানভি গাধাটা ও তাদের পিছন পিছন আসে নি।
আশমিন চিন্তিত হয়ে নূরের দিকে তাকালো। নূর বিরক্ত চোখ তার দিকেই তাকিয়ে৷ আশনিন ভড়কে গেল৷ হালকা কেশে গম্ভীর গলায় বলল,
— এভাবে তাকিয়ে আছো কেন? তোমাদের বাড়ি এসেছি। তোমার উচিত ছিল দিনের বেলায় আমাকে গ্রাম ঘুরে দেখানো।তা না করে রাতে নিয়ে এসেছো৷ এখন আমাকে প্রোটেকশন দাও। আমাকে সেফ রাখা এখন তোমার দায়িত্ব।
রাগে নূরের গা পিত্তি জ্বলে যাচ্ছে। পারলে আশমিন কে এখুনি জ্বালিয়ে দিত সে।
— আপনি অসহ্যের চুড়ান্ত লেবেল পার করে গেছেন। আমি আপনাকে নিয়ে এসেছিলাম? আপনি নিজেই আমাকে জোর করে নিয়ে এসেছেন।
— একদম আমাকে ফাসানোর চেষ্টা করবে না৷ আমি মোটেও তোমাকে জোর করি নি।
নূর হতাশ হয়ে তর্ক করা ছেড়ে দিলো। রাত প্রায় বারোটা বাজাতে চলেছে। রাস্তায় এভাবে দাঁড়িয়ে থাকা মোটেও সেফ নয়।
— চলুন বাড়ি ফিরে যাই। সবাই চিন্তা করবে।
— যাবো না। এই, তুমি কি আমাকে ভিতু মনে করছো? আমাকে দেখে তোমার দূর্বল পুরুষ মনে হয়! একদম আমার পুরুষত্বের দিকে আঙ্গুল তুলবে না। আমি একজন শক্ত সামর্থ মানুষ। নিজের বর কে দূর্বল বলতে তোমার লজ্জা করলো না।
নূর অবাক হয়ে কথা বলতেও ভুলে গেল। হাতে একটা ছু*রি থাকলে এক কো*পে ধর থেকে মাথা টা আলাদা করে দিতো৷ নূর কিছু বলতে যাবে তার আগেই দেখলো আশমিন তীক্ষ্ণ চোখে অন্ধকারে তাকিয়ে আছে। এ যেন অচেনা এক আশমিন। আশমিনের এই দৃষ্টির সাথে সে পরিচিত নয়। আশমিন নূরের একটা হাত শক্ত করে ধরে গম্ভীর গলায় বলল,
— চলো।
আশমিন দ্রুত পায়ে হেটে যাচ্ছে। নূর থতমত খেয়ে বলল,
— আরে কি করছেন! পরে যাবো তো।
— কথা না বলে চুপচাপ থাকো। মেয়ে মানুষের বেশি কথা আমার পছন্দ নয়।
— বেশি কথা কখন বললাম! এভাবে গরুর মতো টেনে নিয়ে যাচ্ছেন তাই বললাম।
— তুমি এখন কি চাও? তোমাকে কোলে করে চুমু খেতে খেতে নিয়ে যাই? ছিঃ। বর কে দেখে আর লোভ সামলাতে পারছো না তাই না? লোভী মেয়ে।
কথা বলতে বলতে আশমিন নূর কে নিয়ে একটা ঝোপের আড়ালে চলে গেছে। টের পেতেই নূর চেচিয়ে উঠলো।
— এখানে এনেছেন কেন! ছাড়ুন আমাকে। তখন থেকে বাজে বকে যাচ্ছেন। কান খুলে শুনে রাখুন, আপনার প্রতি আমার কোন আগ্রহ নেই৷ শুনেছে অসভ্য পুরুষ।
আশিমিন নূরের মুখে চেপে ধরে তীক্ষ্ণ চোখে রাস্তার দিকে তাকিয়ে বলল,
— চেচাচ্ছো কেন!নিজের বরের প্রতি আগ্রহ নেই বলে নিজেকে বেয়াদব প্রমাণ করায় কোন বাহাদুরি নেই। আসো কোলে নেই।
নূর এক ঝটকায় নিজেকে ছাড়িয়ে নিল। মশা কামড়ে পা ফুলিয়ে ফেলেছে। আশমিনের দৃষ্টি এখনো রাস্তায়।
কয়েকজন ছেলে হন্য হয়ে কাউকে খুজছে। হাতে তাদের ধারালো অস্ত্র। নূরের গলা শুকিয়ে গেল। সে ভীতু গলায় বলল,
— আমাদের মারবে নাকি!
— নাহ, আদর করবে।
আশমিনের সোজা জবাব।
— এভাবে বসে আছেন কেন! ওদের গিয়ে মেরে আসুন। আপনি তো খুব সাহসী।
আশমিন ভ্রু কুচকে তাকালো। পাঞ্জাবীর হাতা গোটাতে গোটাতে বলল,
— সাহসী হয়েছি বলে এখন আমার জীবন দিতে হবে! এই পেট মোটা মাতালদের অস্ত্রে দুই ভাগ হয়ে সাহসের প্রমাণ দিতে হবে? শোন মেয়ে, আমি কিছুতেই এই কুৎ*সিত গু*ন্ডা*দের সাথে মারা*মারি করবো না। আমার পাঞ্জাবি নষ্ট হয়ে যাবে। ভালো ছেলেরা মারা*মারি করে না।
নূর হতভম্ব হয়ে গেল। অধৈর্য গলায় বলল,
— আমি আরো সুন্দর পাঞ্জাবি কিনে দিবো। প্লিজ এই ঝামেলা থেকে আমাকে রক্ষা করুন।
— কিন্তু তোমার তো আমার প্রতি কোন আগ্রহ নেই। আমি জনগণের সমর্থন ছাড়া কাজ করি না।
নূর বিরক্ত হয়ে বসে রইলো। যে হারে মোশা কামড়াচ্ছে। কিছুক্ষণ পর সে এমনিতেই রক্ত শূন্যতায় মারা যাবে। তাই অযথা এই বিরক্তকর লোকের সাথে তর্ক করে লাভ নেই।
আশিমিন কিছুক্ষণ মোচড়া মুচড়ি করে বলল,
— পিঠ টা চুলকে দাও তো। কিছুতেই হাত পৌছাচ্ছে না। মনে হয় মশা কামড়েছে।
নূর ক্লান্ত গলায় বলল,
— পারবো না। জনগণ আপনার পাশে নেই।
আশমিন আড়চোখে নূর কে দেখে নিলো। মেয়েটার বিরক্ত মুখ দেখে তার প্রেম পাচ্ছে। মশা মারার বাহানায় কয়েকটা চুমু খাওয়া গেলে ভালো কিছুটা ভালো লাগতো।
যেই ভাবা সেই কাজ। নূরের গালে পরপর কয়েকটা চুমু খেয়ে সোজা হয়ে বসলো সে। নূর চিৎকার করতে গিয়েও নিজেকে সামলে নিলো। কটমট করতে করতে দাতে দাত চেপে বলল,
— লজ্জা সরম কি বেচে খেয়েছেন? এমন ছিঃ মার্কা কাজ কারবারের মানে কি!
আশিমিন বিরক্ত হওয়ার ভান করে বলল,
— একদম আমাকে দোষ দিবে না। আমি জনপ্রতিনিধি। জনগণ পাশে নেই মানে আমার জন্য দুঃসংবাদ। তাই আদর করে জনগণ পটানোর চেষ্টা করছি।
— বাজে কথা বলা বন্ধ করুন। আরেকবার আমার কাছাকাছি আসার চেষ্টা করলে আমি আপনাকে খু*ন করে ফেলবো।
আশমিন তেতে গেলো। বিরক্ত গলায় বলল,
— মানুষের ভালো করতে নেই। গালে মশা বসেছিল। থাপ্পড় দিয়ে তো আর মারতে পারি না। কারণ আমি ভালো ছেলে। অথচ এখন আমার উপরে ই অভিযোগ করা হচ্ছে৷ বউ পেটানোর মতো খারাপ ছেলে আমি নই। সব দোষ মশার। যা বলার মশা কে বলো।
রাস্তার ছেলে গুলো কিছুক্ষণ খোজাখুজি করে চলে গেছে। আশমিন তবুও বের হচ্ছে না।
— ওরা চলে গেছে। চলুন বাড়ি ফিরে যাই।
— যাবো না। শ্বশুর বাড়ি এসে যদি এমন জঙ্গলে লুকিয়ে থাকা লাগে তাহলে সেই শ্বশুর বাড়ি যেয়ে কি হবে! কোন সিকিউরিটি নেই! আমরা এখন ঢাকা ফিরে যাবো।
— বললেই হলো! আমি দুই মাস এখানেই থাকবো। আপনি চলে যান।
— তর্ক করবে না। আমি রেগে গেছি।
নূর আশমিনের শান্ত মুখের দিকে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করলো সত্যি ই রেগে গেছে কি না। আশমিন দুই হাত পিছনে ভর দিয়ে পা ছড়িয়ে বসে আছে। মনে হচ্ছে সে এই ঝোপঝাড় আর মশার কামড় খুব এনজয় করছে। আশেপাশের অনেকের পায়ের শব্দ শোনা যাচ্ছে। আশমিন উকি দিয়ে দেখলো সানভি গার্ডদের নিয়ে তাকে খুজছে। নূর খুশি হয়ে বলল,
— সানভি এসেছে। এবার চলুন।
— না। আজ সারা রাত ও আমাদের খুজবে। এটাই ওর শাস্তি। এমনিতে ও কাল থেকে ওর চাকরি নেই। আজ রাত মন ভরে ডিউটি করুক।
নূরের ইচ্ছে হলো খুচিয়ে এই লোকটাকে রক্তাক্ত করে ফেলা। এই অসহ্য লোকের সাথে সে কিছুতেই থাকবে না। বাসায় গিয়েই বাবাকে বলবে, তার ডিভোর্স চাই। চাই মানে চাই।
চলবে,,
………………………………….
#আশমিন (ছোট গল্প)
#সানজিদা_বিনতে_সফি
ধুলো উড়া দুপুরে ক্লান্ত কাক টাও যেন বৈদ্যুতিক খুঁটিতে বসে হাই তুলছে। চারিদিকে আলসে দৃষ্টি দিয়ে কাটফাটা রোদে বারান্দায় দাঁড়িয়ে নূর। ক্লান্ত চোখে চারিদিকে চোখ বুলাচ্ছে। সূর্যের উত্তাপে চামড়া ঝলসে যাওয়ার যোগাড়।
পিছনে কারোর অস্তিত্ব অনুভব করতেই আগুন্তকের দুহতের বেড়াজালে আটকে পরলো সে।
– এভাবে নিজেকে রোদে না পুড়িয়ে আমার উত্তাপে পোড়াতে পারো তো। আমি কিন্তু সূর্যের মতো রূঢ় নই।
আশমিনের মোহনীয় বাক্য মুহুর্তেই নড়াচড়া বন্ধ হয়ে গেছে নূরের। কয়েকপল স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো সে। আশমিন ও প্রেয়সীর সান্নিধ্যে থাকার লোভ সামলাতে পারলো না। লেপ্টে দাঁড়িয়ে রইলো নূরের সাথে।
বুকের দামামা দ্রুত গতিতে চলছে নূরের। নূরের কাপতে থাকা দেহ কে আরেকটু কাপিয়ে দিতে কানের কাছে ফিস ফিস করে বলল,
– তোমাকে পোড়াতে এসে তোমার উত্তাপে তো আমিই পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছি! ভিতরে এসো, এসির হাওয়ায় দুজন একসাথে পুড়বো।
নূরের কান গরম হয়ে গেল। আশমিন ঠোঁট টিপে হাসলো। নূর কনুই দিয়ে ঠলে সরিয়ে দিলো আশমিন কে। কাপা কাপা গলায় রাগ দেখানোর চেষ্টা করে বলল,
– ব বাজে কথা বলবেন না। মাথায় কখনো ভালো চিন্তা আসে না তাই না? নষ্ট পুরুষ কোথাকার!
আশমিনের কপাল কুচকে গেল। তার মতো শান্তশিষ্ট ভদ্র শিশুর মতো মানুষ কে নষ্ট বললো! এ কেমন অবিচার! এই মেয়েতো কলি কালের সবচেয়ে জঘন্য অপবাদ তার ঘাড়ে লাগিয়েছে। আশমিনের গম্ভীর গলায় বলল,
— আমার মতো ভালো ছেলে পুরো পৃথিবী তন্নতন্ন করে খুজলেও পাবে তুমি? না চাইতেই পেয়ে গেছো তো, তাই কদর করছো না।
— ইসসস, আপনার ভালো পনা দেখলে গা জ্বলে যায় আমার। দূরে থাকুন বেহায়া পুরুষ।
— আমি তোমার কাছে কখন গেলাম? যথেষ্ট দুরত্বে দাঁড়িয়ে আছি।
নূর হতভম্ব চোখে তার সাথে লেপ্টে থাকা মিথ্যুক মানুষ টাকে দেখলো। কাপা কাপা গলায় বলল,
— তাহলে আমার সাথে লেপ্টে কে দাঁড়িয়ে আছে! মানুষ ঠিকই বলে, নেতারা মিথ্যুক ই হয়।
আশমিন নিজেদের দুরত্বে আরেকটু ঘুচিয়ে নিলো। বুকের কাছে লেপ্টে থাকা মেয়েটার থুতনি ধরে তার মুখোমুখি করে মন্থর গলায় বলল,
— এখনো আমাদের দূরত্ব অনেক মিসেস চৌধুরী৷ যেদিন আমাদের দূরত্ব কমবে সেদিন আমাদের লোমে লোমে সংঘর্ষ হবে৷ আবরণের সাথে আবরণের নয়। বুঝেছেন?
নূর নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে আটকে যাওয়া গলায় বলল,
— সরুন,,
— কেন?
— নিঃশ্বাস নিতে পারছি না।
— আমি সাহায্য করবো?.
নূর এক ঝটকায় সরে এলো। কাপা কাপা আঙ্গুল তুলে শাসানোর চেষ্টা করে দ্রুত পায়ে চলে গেল। আশমিন ঠোঁট কামড়ে হাসলো। বউকে ভালোই ভড়কে দেয়া গেছে। সারাদিনের তিরিক্ষ মেজাজ টা এখন কিছু টা আয়ত্তে এসেছে৷
ফ্রেশ হয়ে আশমিন নিচে এসে চুপ করে আমজাদ চৌধুরীর পাশে গিয়ে বসলো। আমজাদ চৌধুরী নড়েচড়ে বসলো। চশমার উপর দিয়ে ছেলের দিকে তাকালো।
— এমন বখাটে ছেলেদের মতো তাকাচ্ছো কেন!
আমজাদ চৌধুরী মুখ কুচকে ফেললো। চোখ ঘুরিয়ে টিভি দেখায় মন দিল সে।
— অফিসে যাচ্ছো না কেন? সারাদিন বাসায় বসে কি করো তুমি?
আমজাদ চৌধুরী নির্লিপ্ত কণ্ঠে বললো
— আমি অবসর নিয়েছি।
— অবসর নিয়েছো মানে! কেন? কি এমন বয়স হয়েছে তোমার? এখনো সতেরো তে আটকে আছো। হ্যাঁ, দুই এক দিন এদিক সেদিক হতে পারে। এই কচি বয়সে অবসর নেয়ার মানে কি আব্বু!
আমজাদ চৌধুরী বিরক্ত চোখে তাকালো ছেলের দিকে।
— বাজে বকো না তো! কোন প্রয়োজনীয় কথা না থাকলে যাও এখান থেকে।
আশমিন গম্ভীর গলায় বলল,,
— আমি অপ্রয়োজনীয় কথা বলি না আব্বু। তোমার অফিস থেকে জরুরি কিছু তথ্য অন্য কোম্পানির কাছে পাচার হয়ে গেছে৷ একাউন্টস এ ও গোলমাল। বিশ্বস্ত কাউকে অফিসে এপোয়েন্ট করা উচিত।
আমজাদ চৌধুরী চিন্তিত চোখে তাকালেন ছেলের দিকে।
— তোমার জানাশোনা কেউ আছে নাকি? কারোর কথা ভেবেছো?
— অবশ্যই আছে। আমার বউ কে তোমার চোখে লাগে না! সারাদিন তো বাসায় ই বসে থাকে। অফিসে গেলে সময় ভালো কাটবে।
— না না। তা কি করে হয়! মেয়েটার কাধে এতো বড় দায়িত্ব চাপিয়ে দেয়া ঠিক হবে না। কতটুকুই বা বয়স!
আশমিন চটে গেল। ঘাড়ে হাত বুলিয়ে অসহায় হওয়ার ভান করে বলল,
— ওকে ছোট বলো না বাবা! কিছুক্ষণ আগেই তোমার শিশু বউ মা আমাকে পুড়িয়ে মারার চেষ্টা করেছিলো। আমি সচেতন পুরুষ বলেই বেচে গেছি।
— ও তোমাকে পুড়িয়ে মারতে চাইছিলো!
— হ্যা।
— কিভাবে!
— ছেলের ব্যাক্তিগত বিষয় জানতে চাইছো! তোমার লজ্জা নেই?
— আরে! তুমি ই তো বললে!
— আমি কখন বললাম! আমার ঘাড়ে দোষ চাপাবে না। এতো কৌতুহল কেন তোমার!
আমজাদ চৌধুরী চরম বিরক্ত চোখে তাকালো ছেলের দিকে। আশেপাশে তাকিয়ে কামিনী চৌধুরী কে খুজলো। কাউকে না পেয়ে নিজেই উঠে চলে গেলো। আশমিন সরু চোখে তার বাবার যাওয়া দেখলো। পৃথিবীর সব চেয়ে নাটকীয় বাবা আল্লাহ তাকে দিয়েছে। আফসোসে তার পেট মোচড় দিচ্ছে। সে কপাল কুচকে ফোনে মনোযোগ দিলো। নূরের অফিস যাওয়ার ব্যাপার টা সুরাহা হলো না। সে সারাদিন বাইরে বাইরে থাকে। তার ছোট একটা বউ বাড়িতে পরে পরে তার চিন্তায় শুকিয়ে যাচ্ছে। ব্যাপার টা মেনে নেয়া যায় না। বাসায় এলেই বউ দূরে দূরে থাকে। তখন তার নিজেকে করোনা ভাইরাস মনে হয়। বউ তাকে দেখলেই সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখে। কোন ভাবে অফিসে জয়েন করাতে পারলে দিনের অর্ধেক টা সময় তার সামনেই থাকবে। বউয়ের সাথে প্রেম টাও তখন একটু মাখো মাখো হবে। এই বাবা টা কিছু বোঝে না।
চলবে,,?
……………………………..
…………………………………………………
দিয়েছেন Tasmi
ফেসবুকের বহুল জনপ্রিয় গল্প ‘ইট পাটকেল’ এবার নতুন রুপে বই আকারে।
রুপকথার রাজকুমারের মতো সুখের জীবন আশমিনের। ভালোবেসে ফেলেছিলো কঠিন হৃদয়ের নুরকে। প্রচন্ড আত্মসম্মানী নুর নিজের অবস্থান ভুলে কখনোই চাঁদ ছোয়ার স্বপ্ন দেখে না, সে যতোই তার কষ্ট হোক। তবুও অবাধ্য আশমিন দূর হতেই প্রেয়সীর ছায়ার মতো রয়ে যায়।হঠাৎ একরাতে ঘটে যাওয়া অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা আশমিনের সামনে প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে দাঁড় করিয়ে দেয় নুরকে। একদিকে জন্মদাত্রী মায়ের উপর প্রাণ প্রেয়সীর পিতাহ*ত্যার অভিযোগ, অন্যদিকে প্রেয়সীর নিরাপত্তা, নিজেকে রক্ষা – সবমিলিয়ে প্রাণোচ্ছল আশমিনের দোটানা চলতে থাকে।
কঠোর বাস্তবতা, সাহিত্যের জটিল ভাষা, ভারিক্কি শব্দ ও রহস্যে যখন হাঁপিয়ে উঠি তখন আমরা মন ভালো করার উপায় খুঁজি। যেখানে জটিলতা নেই, মস্তিষ্কে চাপ নেওয়ার বাড়তি ঝামেলা নেই। ‘ইট পাটকেল’ এমনি একটা বই।
জীবনের জটিল সময়টাতেও হাসি মুখে মজা করে কাটিয়ে দেওয়ার মতো একটি চরিত্র আশমিন। ব্যবসা, রাজনীতি, অচেনা শত্রু, ভালোবাসার টানাপোড়েন এতো কিছুর মাঝেও আশমিন প্রাণোচ্ছল। কখনো হাঁপিয়ে উঠেনি, ক্লান্ত হয়নি। বরং তার মেজাজ খারাপ হলে সে উল্টাপাল্টা বকাবকি করে আরও মানুষের মেজাজ খারাপ করে দিয়ে শান্তি পায়। ইতিবাচক মানসিকতার এই মানুষটিকে কখনো অভিযোগ করতে দেখিনি।
নুরের মতো একজন আত্মসম্মানী, বাস্তববাদী, বাবার অন্তঃপ্রাণ মেয়ের আশমিনকে মেনে না নেওয়া একদম স্বাভাবিক। ওর মতো রগচটা মেয়ে যে সেই মুহুর্তে দু তিনটা মা*র্ডার করে বসেনি, এই অনেক। নিজেকে শান্ত রেখে পরিকল্পনা করেছে। একটা হাসিখুশি পরিবারে বড় হওয়া আদুরে মেয়ে হঠাৎ একলা হয়েও নিজেকে সামলেছে। সে অবশ্যই মানসিক ভাবে অনেক শক্তিশালী।
এই বইয়ের সবচেয়ে প্রিয় অংশগুলো হচ্ছে বাবা-ছেলের কথোপকথন। আমজাদ চৌধুরী এবং আশমিনের অংশগুলোর জন্য আমি মুখিয়ে থাকতাম। নুর-আশমিনের থেকেও বাবা-ছেলের অংশগুলো আমি বেশি ইনজয় করেছি।
ঠোঁটকাটা, অসভ্য, দুষ্টু আশমিন তার মাকে বেশি ভালোবাসলেও, বাবার সাথে তার সম্পর্কটা একটু ভিন্ন ধরনের। দুজনে সামনাসামনি হলেই যেনো ছোট মানুষের মতো অভিযোগের ডালা নিয়ে বসে যায়।
কামিনী চৌধুরী মানুষ হিসেবে বিতর্কিত তবে একজন মা হিসেবে সে আশমিনের অনেক প্রিয়। তবে আমি এ বিষয়ে সন্দিহান। সন্তানকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসলে নিজের ইগোকে এতো প্রাধান্য হয়তো দিতো না। এছাড়া লারার সাহায্যে আশমিনকে হেনস্তা করার পর তার মাতৃত্বের প্রতি প্রশ্ন এমনিতেই উঠে যায়। তবে কামিনীর অতীত জানার পর তাকে ওতোটাও খারাপ লাগছে না। নুরের আচরণ যদি জাস্টিফাই করা যায় তবে কামিনী চৌধুরীর কেনো নয়!
এই গল্পের মূল চরিত্র আশমিন আসলে একজন ভাগ্যবান। কারন তার কাছে সবকিছু আছে। মৌরি, আলির মতো বন্ধু। সানভি, বাহাদুরের মতো নিষ্ঠাবান সহকর্মী। আমজাদ, কামিনীর মতো বাবা, মা।
ইট পাটকেল বইটি মূলত কমেডি ধাঁচে লেখা হলেও রাসফান শিকদারের মৃ*ত্যুর অংশটি ছিলো বেদনাদায়ক। কিছু অংশ পড়ে ভীষন খারাপ লেগেছে। একজন বাবার বিদায় বেলার বর্ণনা এতো নিখুঁত ছিলো যে আমি ওই মুহুর্তটা ফিল করতে শুরু করেছিলাম।
“নিয়ো না, উনাকে নিয়ো না। আরেকটু রাখো আমার কাছে। আমার কতো কথা বলা বাকি! একসাথে বুড়ো হওয়া বাকি। এভাবে কি বিদায় হয়? আমি নিয়ে যেতে দেবো না!”
এই লাইন কয়েকটা পড়ার পর আমি অনেকক্ষণ চুপচাপ বসে ছিলাম। ক্ষণে ক্ষণে কথাগুলো মনে পরছে।
সবকিছু ছাপিয়ে আশমিনের ধৈর্য্যের প্রশংসা করতেই হচ্ছে। নুরের ক্ষেপাটে আচরণ, তার মায়ের কূটিলতা, বহিরাগত শক্র সব ব্যাপারেই সে ভীষণ শান্ত থেকেছে। তার জীবনে সবার প্রায়োরিটি সমানে সমান। নুরকে কম প্রাধান্য দিয়ে মায়ের সাপোর্ট নিয়ে কিছু করেনি। আবার কখনো মাকে ছোট হতে দেয়নি।
গল্পে বোনাস হিসেবে রাজনীতি কিছু আলোচনা রয়েছে। গ্যাংস্টার টাইপ ফিল পেয়েছিলাম কিছু চটপটে মা*র্ডার এর কারনে। সত্যি বলতে আশমিনের এই রুপটাও আমার ভীষণ পছন্দ হয়েছে। আশমিনের সাথে এমন মা*রকুটে স্বভাব বেশি স্যুট করে।
নির্লজ্জ, বেহায়া, অসভ্য, অশ্লীল, ঠোঁটকাটা নায়ক যাদের পছন্দ, তাদের জন্য পারফেক্ট একটি বই ইট পাটকেল। নিছক বিনোদন হিসেবে নিলে এই বইয়ের সাথে দারুণ কিছু সময় কেটে যাবে আপনার। আমারো ভিশন ভালো একটি সময় কেটেছে এই বইয়ের সাথে।
বইটা হতে পেয়েই দুই দিনে পড়ে শেষ করে খান্ত হয়েছি।
বই: ইট পাটকেল
লেখক: সানজিদা বিনতে সফি
প্রকাশনী: নবকথন
প্রচ্ছদ: সাদিতইজজামান
মুদ্রিত মূল্য: ৫২০টাকা
পৃষ্ঠা: ২০৭
রিভিউ লেখনীতে: Tasmi