#লেখিকাঃ_আরভি_আহিয়াদ_তিহু
#পর্ব_22
“আরে ছাড়তো এই লুজার আবার কি করবে। এরা শুধু মুখেই বড় বড় কথা বলতে পারে, কাজের বেলায় ঘেচু।”
সাঈফা সাড়িকার মাথার পিছনে একটা থাপ্পর মেরে বললো
“ওরে ছাগল আহির ভাইয়াকে এখনো চিনতে পারলি না । ভাইয়া যা বলে তাই করে দেখায়। আজকে তোর আইডির বির্ষরজন হবে। কালকে তোকে কতো বার বারন করেছিলাম পিক গুলো আপলোড না দেওয়ার জন্য ।কিন্তু তুই তো আমার কোনো কথাই শুনলি না। এবার মজা বোঝ।”
“শাটআপ! একদম ওই আহিরের বাচ্চার চামচে গিরি করবি না।”
ব্যাস দুইজন সব কাজ ভুলে আবার ঝগরার কাজে লেগে গেলো।
_______________________
মেঘ ওয়াশরুম থেকে বের হতেই দেখলো আলিশা বেডের উপরে বসে আছে। ও অবাক হয়ে আলিশার কাছে গিয়ে জিঙ্গেস করলো
“আপি তুমি কখন আসলে।”
আলিশা মুচকি একটা হাসি দিয়ে বললো
“কালকে রাতেই এসেছি।”
“কিন্তু কেনো? তুমি বিয়ে বাড়ি ছেড়ে এখানে কি করছো? আর তুমি কার সাথে এখানে এসেছো?”
“হিয়ানের সাথে এসেছি। আর কালকে রাতে গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান শেষে আহান ভাইয়া হিয়ানকে ফোন করে বলে,, কাউকে কিছু না বলে যেনো আমাকে নিয়ে এই রির্সোটে চলে আসে। আমরাও ভাইয়ার কথা মতো এইখানে চলে এসেছি। এসে দেখি তুইও এখানে আছিস ।ভাইয়া আমাদের এখানে কেনো আসতে বলেছে ষেটা জিঙ্গেস করায় ভাইয়া আমাদের সবটা খুলে বললো। আর এটাও বলেছে যে সবাই যদি জানতে পারে তুই আহান ভাইয়ার সাথে আছিস,,তাহলে সবাই তোর নামে আজে বাজে কথা বলবে । তাই ভাইয়া ওইখানে মিহিরকে দিয়ে বলিয়েছে আমি আর তুই আমাদের বাড়িতে চলে গেছি। আর আহান ভাইয়া আর হিয়ান ওদের নিজেদের বাড়িতে চলে গেছে। “
আলিশার কথা শুনে মেঘ অবাক হলো মনে মনে বললো এই লোকটা আমার সম্মানের কথা এতোটা ভাবে? আমাকে যাতে কেউ আজেবাজে কথা বলতে না পারে তাই হিয়ান ভাইয়াকে আর আলিশা আপুকে এখানে ডেকে এনেছেন । যে লোক মেয়েদের সম্মানের কথা এতো ভাবে তাকে আমি কেনো পৃথিবীর যেকোনো মেয়েই চোখ বুজে বিশ্বাস করতে পারবে । দরজায় টোকা পড়তেই মেঘের ভাবনায় ছেদ ঘটলো। দরজার ওপাশ থেকে একজন মেয়েলি কন্ঠে বললো
“মে আই কাম ইন ম্যাম?”
আলিশা বললো
“কাম ইন।”
পারমিশন পেয়েই একজন পচিশ ছাব্বিশ বছরের মেয়ে রুমে প্রবেশ করলো। মেয়েটার হাতে একটা ফুড ট্রলি। আর মুঠের মধ্যে একটা শপিং ব্যাগ। গায়ে ইউনিফম পড়া । দৈখেই বোঝা যাচ্ছে এই রির্সোটের কোনো স্টাফ। মেয়েটা ফুড ট্রলিটা এক সাইডে রেখে মেঘের কাছে এসে হাতের ব্যাগটা মেঘের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে ঠোটের কোনে মুচকি হাসি ঝুলিয়ে বেশ ফরমাল ভাবে বললো
“ইউর ড্রেস ম্যাম। ড্রাই ক্লিন করানো হয়েছে এবার পড়তে পারেন।”
মেঘ মিষ্টি হেসে বললো
“থ্যাংক ইউ সো মাচ।”
“ইউ আর মোষ্ট ওয়েলকাম ম্যাম। আপনার শরীরের অবস্থা এখন কেমন ম্যাম?আগের থেকে একটু বেটার ফিল করছেন?”
“জ্বি আগের থেকে অনেকটা বেটার ফিল করছি।”
“ওকে টেইক কেয়ার। আমি এখন আসছি। আপনার ব্রেকফাস্ট ওখানে রাখা আছে খেয়ে নিবেন। গুড ডে ম্যাম।”
বলে মেয়েটা যেতে নিলেই মেঘ পিছন থেকে ডাকলো। মেঘের ডাকে মেয়েটি ওর কাছে এসে জ্ঞিগেস করলো
“কিছু বলবেন ম্যাম?”
মেঘ একটু ইতস্তত করে বললো
“না মানে আসলে বলতে চাইছিলাম যে কালকে রাতে আমার ড্রেসটা কে চেইঞ্জ করেছে ।”
“আমি করেছি ম্যাম। আসলে আপনার লেহেঙ্গাটায় একদম হলুদ লেগে নোংরা হয়ে গিয়েছিলো । তাই স্যার (আহান) বলেন ওটা যাতে আমি চেইঞ্জ করে ড্রাই ক্লিন করিয়ে দেই। কেনো কোনো সমস্যা হয়েছে?”
“না না কোনো সমস্যা নেই । যাষ্ট এমনিতেই জিঙ্গেস করেছি। আপনি এখন আসতে পারেন।”
বলেই মেঘ জোড় পূর্বক একটা হাসি দিলো। মেয়েটিও ফরমালিটিজ বজায় রাখার জন্য একটা হাসি দিয়ে চলে গেলো।মেয়েটি যেতেই আলিশা এসে মেঘের কান টেনে দিয়ে বললো
“তুই কি ভেবেছিলিস তোর ড্রেস আহান ভাইয়া চেইঞ্জ করিয়েছে।”
মেঘে লাফাতে লাফাতে বললো
“আহ আপি কি করছো লাগছে তো। বিশ্বাস করো আমি আগেই জানতাম ওনি আমার ড্রেসটা চেইঞ্জ করান নি। তাও মনে একটা কিউরোসিটি ছিলো সেটা দূর করার জন্যই প্রশ্নটা করলাম।”
“মেরে তোর কিউরোসিটি ছুটিয়ে দিবো । সারা রাত বসে বসে ছেলেটা ওনার সেবা করে গেছেন আর ওনি কিউরোসিটি দূর করছে। জানিস ভাইয়া সারা রাত ঘুমায়নি,, আমি ফজরের সময় নামাজ পড়তে উঠেছিলাম,,এখানে এসে দেখি আহান ভাইয়া তোর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে । আমি জোড় করে ভাইয়াকে সোফায় নিয়ে শুইয়ে দিয়েছি। বলেছি ,, ভাইয়া যতোক্ষন না উঠবে আমি তোর কাছে থাকবো। তারপর উনি একটু ঘুমিয়েছেন। আর তুই কি করছিস ভাইয়াকে সন্দেহ করছিস । আরে ওনার যদি তোর সাথে উল্টোপাল্টা কিছু করারই হতো তাহলে আমাদের ফোন করে এখানে ডাকতো না, বুঝেছিস গাধি?”
“হ্যা হ্যা বুঝে গেছি । আমার কানটা ছাড়ো প্লিজ ওটা ছিড়ে গেলে আমার আর বিয়ে হবে না। তুমি জিবনেও খালামনি ডাক শুনতে পাবে না । আর তোমারও বিয়ে হবে না। লোকে বলবে এই ধরনের দজ্জাল মেয়েকে জিবনেও বাড়ির বউ বানাবো না। যেই মেয়ে উব বি ননদের কান ছিড়ে দেয় সেই মেয়ে না জানি শাসুরির কি অবস্থা করবে।”
মেঘের কথা শুনে আলিশা ফিক করে হেসে দিলো। মেঘ এতোক্ষন কি সব আজাইরা কথা বলেছে সেটা মনে পড়তেই ও হেসে দিলো।
_________________________
মেঘ,, আলিশা, হিয়ান ,আহান রুমে বসে একসাথে ব্রেকফাস্ট করে।নয়টার দিকে রির্সোটে চেক আউট করে বেরিয়ে পড়লো। হিয়ান আর আলিশা ওদের গাড়ি নিয়ে চলে গেলো। মেঘ আহানের সাথে ওর গাড়িতে করে রওনা দিলো। সারে দশটার দিকে ওরা ফার্ম হাউজে পৌছে গেলো । মেঘ আর আহান গাড়ি থেকে নামতেই কোথা থেকে সাড়িকা এসে আহানকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ফুপিয়ে কেদে দিলো। পিছনে পিছনে সাঈফাও আসলো। আহান অবাক কন্ঠে জিঙ্গেস করলো
“সাড়িকা কি হয়েছে এভাবে কাদছিস কেনো?”
সাড়িকা কিছু বলছে না শুধু কেদেই যাচ্ছে। মেঘ ড্যাবড্যাব করে সাড়িকার দিকে চেয়ে আছে। আহান সাঈফার দিকে চেয়ে বললো
“সাঈফু কি হয়েছে ওর?এভাবে কাদছে কেনো?”
সাঈফা অসহায় কন্ঠে বললো
“আহীর ভাইয়া ওর আইডিটা হ্যাক করে ওর FB আইডির এর পাসওয়ার্ড চেইঞ্জ করে দিয়েছে। তাই ও আর FB তে লগইন করতে পারছে না । আহীর ভাইয়াকে অনেক রিকোয়েস্ট করেছি কিন্তু ভাইয়া পাসওয়ার্ড বলেই নি উল্টো ওর ফোনটাও রেখে দিয়েছে।”
আহান ভ্রু কুচকে জিঙ্গেস করলো
“আইডি কেনো হ্যাক করেছে। কি করেছিস তোরা।”
সাঈফা সকালে যা যা হয়েছে সেগুলো গরগর করে আহানকে বলে দিলো। সাঈফার কথা শেষ হতেই আহীর আর মিহির ওদের কাছে এসে দাড়ালো। আহীর সাঈফাকে উদ্দ্যেশ্য করে বললো
“ওরে চুকলি খোর ব্রো আসতে না আসতেই আমার নামে চুকলি শুরু করৈ দিয়েছিস। দাড়া আগে ওরটা নিয়েছি এবার তোরটাও নিবো । তোর আইডিটাও আজকে শেষ হয়ে যাবে।”
আহীরের কথা শুনে সাঈফা আহীরের কাছে গিয়ে ওর গাল দুটো টেনে দিয়ে একটা ক্যাবলা কান্ত মার্কা হাসি দিয়ে বললো
“আমার কিউট ভাইয়াটা। তুই জানিস আমি তোকে কতোটা ভালোবাসি। বিশ্বাস কর আমি তোর নামে একদম চুকলি করছিলাম না। আমি কি তোর নামে চুকলি করতে পারি বল?আমি তো সব সময় সবার কাছে তোর নামে প্রশংসা করি। আমার আইডিটার কিছু করিস না প্লিজ। ওটা চলে গেলে আমার কি হবে বল। আমি তো পরিচয় হীন হয়ে যাবো।”
সাড়িকা কাদতে কাদতে আহানকে উদ্দ্যেশ্য করে বললো
“দেখেছো ভাইয়া কি পাল্টিবাজ মেয়ে একটা। সেকেন্ডে সেকেন্ডে টিকটিকির মতো রঙ পাল্টায়। যেই শুনেছে ওর আইডিটা চলে যাবে অমনিই নিজের দল বদল করে নিলো। কুওি একটা।”
আহান ষাঈফার দিকে তাকিয়ে বললো
“সাঈফা তুই তো খুব দুষ্ট হয়ে গেছিস তোকে একটা মাইর দিতে হবে।”
সাড়িকা নাক টানতে টানতে বললো
“আহান ভাইয়া ওরে মাইর পরে দিবে, আগে তোমার ওই কুওা ভাইকে আমার আইডি আর ফোনটা ফেরত দিতে বলো।”
আহান সিরিয়াস হওয়ার ভান করে বললো
“এই কুওা ভাই ওর আইডি আর ফোনটা ফেরত দে।”
আহানের কথা শুনে মেঘ আর সাঈফা ফিক করে হেসে দিয়ে আবার নিজেদের মুখ চেপে ধরলো। আহীর দাতে দাত চেপে সাড়িকা কে উদ্দ্যেশ্য করে বললো
“তোর সাহস তো কম না।তুই আমাকে কুওা বলিস?তোকে আজকে মেরেই ফেলবো।”
বলেই আহীর সাড়িকার দিকে তেড়ে যেতে নিলেই। আহান গম্ভির কন্ঠে বলে
“খবরদার আহীর এক পাও এগোবি না। তোরা যেমন মেঘকে কেউ কিছু বললে রেগে যাস তেমনি সাড়িকা, সাঈফা,হিমা, আলিশা, দিশা ওরাও কিন্তু আমার বোন।ওদের কেউ কিছু বললে আমিও কিন্তু তাদের ছেড়ে দিবো না। এমনকি আমার ভাইয়েরা হলেও না।চুপচাপ ওর ফোনটা ফেরত দিয়ে দে।”
“নো ওয়ে ব্রো ও আমার কথার অমান্য করার ষাহস দেখিয়েছে। আইডিটা তো ও কিছুতেই পাবে না । পৃথীবি উল্টে গেলেও না। তুমি প্লিজ এই বিষয়ে কোন কথা বলবে না ।আর বললেও আমি শুনবো না।”
“ওকে কোনো ব্যাপ্যার না। তুই আমার কথা শুনবি না তো, শুনতে হবে না। তুই যদি সাড়িকার ফোন আর আইডিটা ফেরত না দিস, তাহলৈ আমি তোর আইডি টাও হ্যাক করাবো।আমার চেনাজানা অনেক হ্যাক্যার আছে। যাদের তোর মতো পুচকে হ্যাক্যারের আইডি হ্যাক করতে মাএ পাচ মিনিট লাগবে। তখন কেমন হবে বলতো?”
বলেই আহান পকেট থেকে নিজের ফোনটা বের করল। আহির গিয়ে সাড়িকাকে টান দিয়ে আহানের থেকে ছাড়িয়ে এনে নিজের দিকে ঘুড়িয়ে পকেট থেকে সাড়িকার ফোনটা বের করে ওর হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললো
“এই নে তোর ফোন। খুব বড় একটা ভূল করলি ।আজকে নাহয় ব্রো এর জন্য বেচে গেলি। কিন্তু এরপর থেকে তোকে আমার হাত থেকে কে বাচাবে ।”
সাড়িকা আহীরের হাতটা ঝাড়া দিয়ে ছাড়িয়ে বললো
“তুমি আমার কিচ্ছু করতে পারবৈ না। এই সব হুমকি গিয়ে অন্য কাউকে দিবে যাও সর সামনে থেকে। এন্ড বাই দ্যা ওয়ে পাসটা বলো।”
আহির দাতে দাত চেপে বললো
“আমার ফোন নাম্বারটা উল্টোভাবে বসালেই হবে। “
সাড়িকা একটা ভেংচি কেটে আহানকে গিয়ে জড়িয়ে ধরে বললো
“লাভ ইউ ভাইয়া। এন্ড থ্যাংক ইউ সো মাচ।”
বলেই সাড়িকা দৌরে ফার্ম হউজের ভিতরে চলে গেলো।ওর পিছনে পিছনে সাঈফাও চলে গেলো। দুই বোনের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আহান মুচকি হেসে দিলো।আহীর আহানের দিকে তাকিয়ে রাগে ফোস ফোস করতে করতে চলে গেলো।
_________________________
আহান ড্রাইভিং করছে ওর পাশের সিটে মেঘ বিষন্ন মনে বসে আছে। মেঘদের বাসার সামনে এসে আহান গাড়িকা থামালো ।মেঘ কিছু না বলেই চুপচাপ গাড়ির দরজা খুলে নেমে যেতে লাগলো। আহান মেঘের হাতটা টেনে ধরে এনে নিজের বুকের সাথে মেঘের পিঠটা মিশিয়ে ফেললো। তারপর ওর ঘাড়ে মুখ গুজে লো ভয়েজে আহান বললো
“কি হয়েছে মেঘ পড়ি? মুখটা এভাবে কালো করে রেখেছো কেনো?”
মেঘের চোখ দিয়ে দুফোটা পানি গাড়িয়ে পরলো। ও কান্নাজড়িত কন্ঠে বললো
“এই সব কিছু আমার জন্য হয়েছে । আপনি আমার জন্য এতোটা হার্ট হয়েছেন। কিন্তু বিশ্বাস করুন আমি বুঝতেই পারিনি আমার সামান্য একটা কথায় এতো বড় ঝামেলা হয়ে যাবে।”
আহান শক্ত করে মেঘকে নিজের বাহু বন্ধনে আবদ্ধ করে বললো
“সব কিছুর জন্য নিজেকে দোষ দেওয়াটা বন্ধ করো মেঘ। তোমার জন্য কিচ্ছু হয়নি। যা করেছে ওই থার্ড ক্লাস মেয়েটা করেছে। তোমার এতে কোনো দোষ নেই।”
___________
(ফ্লাস ব্যাক )
আহীর চলে যাওয়ার পর মিহিরও ওর পিছনে পিছনে চলে গেলো। আহান আর মেঘ বাসার ভিতরে গেলো। ড্রইং রুমে ঢুকতেই মেঘের চোখ গেলো ড্রইং রুমের সোফার উপর।সেখানে জেড়িন সোফার সাথে হেলান দিয়ে বসে আছে । ওর সাড়া গায়ে লাল র্যাস পড়ে গেছে । চোখের নিচে কালো দাগ পড়েছে। চুলগুলো উসকো খুসকো চেহারায় ক্লান্তির ছাপ স্পষ্ট । পাশেই জেড়িনের মা বসে বসে জেড়িনকে ব্রেড খায়িয়ে দিচ্ছে। জেড়িনকে এমন অবস্থায় দেখে মেঘ অবাক হয়ে গেলো। যে মেয়েটা কাল অবদি ঠিকঠাক ছিলো,, আজকে কি এমন হলো যাতে সেই মেয়েটাকে এতোটা বিষন্ন লাগছে? আহান জেড়িনের দিকে এক পলক তাকিয়ে ডোন্ট কেয়ার একটা ভাব নিয়ে ডাইনিং টেবিলে গিয়ে বসে পড়লো। জেড়িনকে এমন অবস্থায় দেখে মেঘের একটু মায়া হলো। ও ধীর পায়ে জেড়িনের মায়ের কাছে গিয়ে নীচু স্বরে জিঙ্গেস করলো
“ফুপি মনি ওর কি হয়ৈছে?ওকে এমন লাগছে কেনো?”
মেঘের কন্ঠ কানে আসতেই জেড়িন মাথা তুলে মেঘের দিকে তাকালো । সাথে সাথে জেড়িনের বিষন্ন মুখটা হিংস্র হয়ে উঠলো। ও উঠে দাড়িয়ে চিল্লিয়ে বললো
“তুই এখানে কি করছিস? এক্ষনি বেরো আমার বাড়ি থেকে। থার্ড ক্লাস মেয়ে একটা । এই সব কিছু তোর প্লান তাইনা? তুই আর দিশা মিলে এইসব কিছু করেছিস । তোরা ইচ্ছে করে আমার গায়ে এইসব ঢেলেছিস। তুই আমাকে মেরে ফেলতে চাস তাইনা?”
জেড়িনের চিৎকারে মেঘ কেপে উঠলো। ওর চোখে মুখে স্পষ্ট ভয়ের ছাপ ফুটে উঠলো। মেঘের মা-বাবা ,আহানের মা-বাবা, সাড়িকা সাঈফার মা-বাবা,চাচা-চাচী, অভি দিশা ওনারা সবাই ডাইনিং টেবিলে বসে ব্রেকফাস্ট করছিলো।জেড়িনের চিৎকারে ওনারা সবাই উঠে ড্রইং রুমে এলো সাথে আহানও আসলো। মেঘ ভয়ার্ত গলায় বললো
“তুই কি বলছিস এসব?আমি তো কিছুই বুঝতে পারছিস না। আমি আবার তোর গায়ে কখন কি ঢাললাম?”
“আমাকে খুন করতে চেয়ে আবার নেকামি হচ্ছে। ক্যারেক্টার লেস মেয়ে একটা তুই আমার থেকে আবির কে কেড়ে নিতে চাস তাইনা?তাই তুই আমাকে মারতে চেয়েছিস। কিন্তু আমি সেটা কিছুতেই হতে দিবো না। তুই আমার থেকে আমার আবির কে কেড়ে নিবি তার আগেই আমি তোকে খুন করে ফেলবো।”
বলেই জেড়িন আশেপাশে তাকিয়ে কিছু একটা খুজতে লাগলো। সোফার সামনে টেবিলের উপরে একটা ফ্লোয়ার ভাস রাখা ছিলো জেড়িন সেটা হাতে নিয়ে মেঘের দিকে ছুড়ে মারলো। আহান দৌড়ে এসে মেঘকে নিজের বুকের সাথে চেপে ধরে আড়াল করে ফেললো। ফ্লোয়ার ভাসটা এসে আহানের পিঠে উপর পড়লো। আহান ব্যাথ্যায় হাটু ভেঙে মেঘকে জড়িয়ে ধরে রেখেই ফ্লোরে বসে পড়লো। আহানের এমন অবস্থা দেখে মেঘ জোড়ে একটা চিৎকার দিলো।ড্রইং রুম ভর্তি সব মানুষ হতবম্ভ হয়ে গেলো। ঠিক তখনই কেউ জেড়িনের গালে সজোড়ে একটা চড় মাড়লো।
চলবে………