#লেখিকাঃ_আরভি_আহিয়াদ_তিহু
#পর্বঃ45
শহরের ব্যাস্ত রাস্তার মধ্যেও মোটামুটি ফুল স্পিডে গাড়ি চালাচ্ছে মিহির।পাশেই মেঘ দুইকানে হাত চেপে ধরে চোখ মুখ খিচে বন্ধ করে আছে।মিহিরের সেই দিকে কোনো হুশই নেই। ও নিজের মতো করে গাড়ি চালাচ্ছে আর রাগে ফুসছে।
তখন মিহির মেঘকে নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে এসেই সোজা গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে পড়েছে।মেঘও মিহিরের রাগ দেখে আর কিছু বলার সাহস পায়নি।চুপচাপ মিহিরের সাথে ও নিজেও চলে এসেছে।কিন্তু গাড়িতে ওঠার পরই মেঘের এমন মনে হচ্ছে ও গাড়িতে নয় এ্যারোপ্লেনে বসে আছে।মিহির গাড়ির স্পিড এতোটা বাড়িয়েছে যে ওদের সামনে থাকা গাড়ি গুলোও একে একে ওদের পিছনে চলে যাচ্ছে।মেঘ অনেক বার মিহিরকে বারন করেছে এতো জোড়ে গাড়ি না চালানোর জন্য। কিন্তু মিহির মেঘের কোনো কথাই কানে তোলেনি।ও নিজের ইচ্ছে মতো ফুল স্পিডে গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছে।নিজের সব রাগ গাড়ির উপরে ঝাড়ছে।মেঘ অতিরিক্ত ভয়ে চোখ বন্ধ করে থরথর করে কাপছে।হঠাৎ করে গাড়িটা থেমে যেতেই মেঘ চোখ খুলে সামনে তাকালো।দেখলো গাড়িটা খান মেনশনের সামনে দাড়িয়ে আছে।মেঘ ঘাড় ঘুড়িয়ে পাশে তাকিয়ে দেখলো মিহির সিটের সাথে সোজা হয়ে হেলান দিয়ে বসে জোড়ে জোড়ে নিশ্বাস ফেলছে।এক পলক মিহিরের দিকে তাকিয়ে ঝটফট করে গাড়ি থেকে নেমে গেলো।তারপর মিহিরকে উদ্দ্যেশ্য করে ঝাড়ি দিয়ে বললো
“গর্দভ কোথাকার,আরেকটু হলেই তো আমার প্রানপাখি খাচা ছাড়া হয়ে যেতো।তোর কোনো কমনসেন্স নেই?এইভাবে ইষ্টুপিডের মতো কেউ কার ড্রাইভ করে?আজকে যদি এ্যাক্সিডেন্ট হয়ে যেতো তখন কি হতো?”
মিহির মেঘের কথায় কোনো পাএাই দিলো না।ও চুপচাপ গাড়ি থেকে বের হয়ে গাড়ির দরজাটা লক করে হনহন করে বাড়ির ভিতরে চলে গেলো।মেঘ মিহিরকে চলে যেতে দেখে ও নিজেও মিহিরের পিছু পিছু বাসার ভিতরে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো।
_________________________
আহান আর আহাদ খান সোফায় বসে বিজনেস রিলেটেড কিছু কথা ডিসকাস করছিলো।মোনা খান কিচেনে রাতের রান্না করছিলেন।হঠাৎ বাসার কলিংবেল বেজে উঠতেই আহান এবং আহাদ খানের দৃষ্টি দরজার দিকে গেলো।একজন সার্ভেন্ট এগিয়ে গিয়ে দরজা খুলে দিতেই মিহির হনহন করে বাসার মধ্যে প্রবেশ করলো।ওর পিছনে পিছনে মেঘও মাথা নিচু করে চুপচাপ ভিতরে প্রবেশ করলো।
এই সময়ে মেঘ আর মিহিরকে হঠাৎ এই বাড়িতে দেখে আহাদ খান,আহান দুজনেই অবাক হলো।মোনা রহমানও কলিং বেলের শব্দ শুনে কিচেন থেকে ড্রইংরুমে এসে ওদের দেখে বেশ অবাক হলেন।এমনিতে মিহির যখন তখন এই বাড়িতে চলে আসে আহিরের সাথে।কিন্তু মেঘ বিনা নোটিশে এভাবে হঠাৎ করে কখনো এই বাড়িতে আসে না।তাছাড়া মিহিরকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে ও ভয়ংকর রেগে আছে।মোনা খান মিহিরের দিকে এগিয়ে এসে ওকে উদ্দ্যেশ্য করে বললো
“বাবাই এতো রেগে আছিস কেনো?কিছু কি হয়েছে?”
“এখন অবদি কিছুই হয়নি।তবে খুব তাড়াতাড়ি হবে।আমি ওই রহমান পরিবারের সবাইকে খুন করে মাটিতে পুতে দিবো।সাথে তোমার বোন আর তার ওই মহান হাজবেন্ট কেও!”
রাগি কন্ঠে কথাটা বলেই মিহির সিড়ি দিয়ে উপরে চলে গেলো আহিরের রুমের দিকে।মোনা খান অনেক বার মিহিরকে পিছন থেকে জিঙ্গেস করলেন কি হয়েছে?কে কি বলেছে?কিন্তু মিহির ওনার প্রশ্নের কোনো অ্যান্সারই করলো না।মিহির উপরে যেতেই সবার চোখ গেলো মেঘের উপর।মেঘের চেহারায় স্পষ্ট ভয়ের ছাপ দেখা যাচ্ছে।
আহান ওর হাতে থাকা পেন টা আঙুলে নিয়ে ঘোড়াচ্ছে আর সুক্ষ চোখে মেঘকে অবজারভ করছে।হঠাৎ মেঘের এইভাবে ভয় পাওয়ার কারন টা ওর মাথায় ঢুকছে না।মেঘ বারবার আহানের দিকে আর চোখে তাকাচ্ছে কিন্তু আহানের এমন সুক্ষ চাহনি দেখে আবার ভয়ে চোখ নামিয়ে নিচ্ছে।
আহাদ খান বসা থেকে উঠে এসে মেঘের মাথায় এক হাত রেখে ওকে উদ্দ্যেশ্য করে আহ্লাদি কন্ঠে জিঙ্গেস করলো
“কি হয়েছে আম্মুটা?এতোটা ঘাবরে আছো কেনো?তোমাকে কেউ কিছু বলেছে?”
মেঘ একটা জোড় পূর্বক হাসি দিয়ে বললো
“না পাপা,,আমাকে আবার কে কি বলবে?কেউ কিছু বলেনি তো।”
“তাহলে এতোটা ভয় পেয়ে আছো কেনো?আর মিহিরই বা এতো রেগে আছে কেনো?বাড়িতে কিছু হয়েছে?”
আহাদ খান কথাটা বলতেই মেঘ দ্রুত কন্ঠে বললো
“না না বাড়িতে কিছুই হয়নি।সব কিছু ঠিকঠাকই আছে।আসলে পাপা আমি একটু ক্লান্ত,তাই হয়তো আমাকে এই রকম দেখাচ্ছে।আর ভাইয়া কেনো রেগে আছে আমি জানি না।”
মেঘের কথা শুনে আহাদ খান এক হাতে মেঘকে নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে মুচকি হেসে বললো
“কিছু না হলেই ভালোরে আম্মুটা।তোকে নিয়েই আমার যতো চিন্তা।আহান,আহির,মিহির ওরা যেটা চায় সেটা ঠিক ওরা আদায় করে নেয়।হয় সোজা পথে নাহলে বাকা পথে।ওদের নিয়ে আমাকে কখনো ভাবতে হয় না।কিন্তু তুইতো কখনো কিছু মুখ ফুটে চাস না।তোর ভালো লাগা খারাপ লাগার বিষয়ে কাউকে কিচ্ছু বলিস না।হাজার কষ্ট হলেও নিজের পছন্দের জিনিসগুলো অন্যেদের দিয়ে দিস।তাইতো তোকে নিয়ে আমাকে সব সময় ভাবতে হয়।”
আহাদ খানের কথা শেষ হতেই মেঘ ম্লানো হেসে আহাদ খানকে জড়িয়ে ধরে আদুরে গলায় বললো
“আমাকে নিয়ে তোমরা কেনো এতো চিন্তা করো পাপা?আমি মুখ ফুটে কিছু না চাইতেই তোমরা সবকিছু আমার সামনে এনে হাজির করো।আমাকে কখনো কিছু চাওয়ার সুযোগই তো তোমরা দেওনা।তাহলে কিভাবে চাইবো বলো?”
মোনা খান এক দৃষ্টিতে আহাদ খান আর মেঘের দিকে তাকিয়ে আছেন।ওনার ঠোটের কোনে তৃপ্তির হাসি।উনি মাঝে মাঝে ভুলেই যান যে আহাদ খান আর মেঘের মধ্যে কোনো রক্তের সম্পর্ক নেই।ওদের দুজনকে দেখলে যে কেউ খুব সহজেই বিশ্বাস করবে ওরা বাবা মেয়ে। কখনো কখনো মোনা খানের মনে হয় ওনার থেকে মেঘকে আহাদ খান বেশি ভালোবাসে।কারন উনি আজ অবদি কখনো আহাদ খানকে মেঘের সাথে রাগি স্বরে কথা বলতে শুনেনি।আহান,আহির,মিহির থেকে শুরু করে ওনার রাজনৈতিক, ব্যাবসাহিক সেক্টরে যতো লোক আছে তাদের সবার সাথে উনি বেশ স্ট্রিক্টলি কথা বলেন।একমাএ মেঘের সাথেই আহাদ খান সব সময় আহ্লাদি কন্ঠে কথা বলে।এই চার বছরে উনি কখনো মেঘকে একটা ধমকও দেননি।
মেঘ আহাদ খানকে ছেড়ে দিয়ে একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে বললো
“পাপা আমি খুব ক্লান্ত।একটু ফ্রেস হয়ে আসি প্লিজ?তারপর আমরা দুই বাবা মেয়ে মিলে জমিয়ে আড্ডা দিবো।”
মেঘের কথা শুনে আহাদ খান মেঘের গাল টেনে দিয়ে বললেন
“ওকে আম্মুটা যাও ফ্রেস হয়ে আসো।”
_____________________________
মেঘ ওয়াশ রুম থেকে ফ্রেস হয়ে টাওয়েল দিয়ে হাত-মুখ মুছতে মুছতে বের হলো।বের হয়েই বেডের উপর টাওয়েল টা রেখে পিছনে ঘুরতেই দেখলো আহান হনহন করে রুমের মধ্যে ঢুকে ঠাস করে রুমের দরজাট লক করে দিলো।আহানকে হঠাৎ এভাবে আসতে দেখে মেঘ কিছুটা ভ্যাব্যাচ্যাগ্যা খেয়ে গেলো।আহান দরজাট লক করে দিয়ে পিছনে ঘুরে একপা একপা করে মেঘের দিকে আগাতে আগাতে বললো
“এতোটা অবাক হওয়ার কিছুই নেই।আমি তোমার রুমে কখনোই পারমিশন নিয়ে ঢুকিনি আর ঢুকবোও না।আমার যখনই ইচ্ছে তখনই এভাবে চলে আসবো।যাই হোক,এইবার বলো আজকে বাড়িতে কি হয়েছিলো?”
আহানের প্রশ্ন শুনে মেঘের চোখে মুখে আবার ভয়ের ছাপ ফুটে উঠলো।ও জানে আহান যদি এখন বাড়িতে ঘটা ঘটনাটা জানতে পারে তাহলে হয়তো আবার একটা বড়সড় ঝামেলা হবে।এই মুহুর্তে কোনো ঝামেলার সৃষ্টি হোক সেটা মেঘ কিছুতেই চাইছে না।একবার হিয়ানের বিয়েটা মিটে যাক তারপর যা হওয়ার হবে।
মেঘ কাচুমাচু করে দাড়িয়ে নিমনিমে কন্ঠে বললো
“বাড়িতে কি হবে?কিছুই তো হয়নি!”
আহান হাটতে হাটতে মেঘের একদম কাছে এসে বললো
“কিছুই হয়নি তাহলে তুমি আমার প্রশ্ন শুনে এতোটা ভয় পাচ্ছো কেনো?”
মেঘ শুকনো একটা ঢোক গিলে কাপাকাপা কন্ঠে বললো
“ক-কোথায় ভ-ভয় প-পাচ্ছি?”
আহান মেঘের দিকে আরেকটু এগিয়ে গিয়ে তীক্ষ্ণ কন্ঠে বললো
“ভয় পাচ্ছো না তাহলে তোমার গলা কাপছে কেনো?”
আহানকে এগিয়ে আসছে দেখে মেঘ পিছিয়ে গিয়ে একদম খাটের সাথে লেগে দাড়ালো।তারপর মাথাটা নিচু করে বললো
“ক-কোথায় গ-গলা ক-কাপছে?”
মেঘের কথা শেষ হতেই আহান মেঘের কোমরে হাত রেখে একটানে মেঘকে নিজের বুকে এনে ফেললো।তারপর তীক্ষ্ম চোখে তাকিয়ে বললো
“আমার সাথে মিথ্যা বলার চেষ্টাও করো না মেঘ পরী।আমার সাথে মিথ্যা বলার ফল তোমার জন্যও ভালো হবে না।আর যাদের জন্য বলছো তাদের জন্যে তো আরোই ভালো হবে না।তাই বলছি ভালোয় ভালোয় সত্যিটা বলে দাও।”
মেঘ আহানের দিকে একবার অসহায় চোখে তাকিয়ে মাথাটা নিচু করে ফেললো।মেঘকে চুপ করে থাকতে দেখে আহান মেঘের কোমর একটু চেপে ধরে বললো
“ওকে টিয়া পাখি,তোমাকে কিচ্ছু বলতে হবে না।তুমি যদি ভেবে থাকো,তুমি না বললে আমি কিছুই জানতে পারবো না?তাহলে তুমি ভূল ভাবো!তোমার বিষয়ে কোনো খবর নিতে আমার শুধু কয়েক সেকেন্ড লাগবে।ভেবে ছিলাম তোমার মুখ থেকে সত্যিটা শুনবো, কিন্তু তুমি যখন বলবেই না।তখন আমি নাহয় নিজেই সবটা জেনে নিবো।একবার সত্যিটা জানতে পারি তারপর তোমার ক্লাস নিচ্ছি।”
আহানের কথা শুনে মেঘ কাদো কাদো মুখ করে আহানের দিকে তাকালো।আহান মেঘকে ছেড়ে দিয়ে রুমের দরজা খুলে বেড়িয়ে যেতে যেতে মেঘকে উদ্দ্যেশ্য করে বললো
“ডিনারের সময়ে চুপচাপ নিচে চলে আসবে।খাবার না খাওয়ার জন্য যদি কোনো অযুহাত দেখিয়েছো তাহলে তোমাকে আমি সারা রাত পুলের মধ্যে দাড় করিয়ে রাখবো।”
আহানের কথা শুনে মেঘ চিৎ পটাং হয়ে বেডের উপর শুয়ে পড়লো তারপর কাদো কাদো কন্ঠে বললো
“আল্লাহ এটা আমি কাকে ভালো বাসলাম?কথায় কথায় শুধু হুমকি দেয়।এর থেকে তো আমার সিঙ্গেল লাইফই ভালো ছিলো।
ব্যা…ব্যা….ব্যা…”
___________________________
মেঘ নিচে নেমে আহাদ খান আর মোনা খানের সাথে কিছুক্ষন গল্প গুজব করলো।তারপর সবাই মিলে একসাথে ডিনার করতে বসলো।খাওয়ার মধ্যেই মেঘ খেয়াল করলো আহান,আহির, মিহির তিনজনই গম্ভীর মুখ করে খাবার খাচ্ছে।মোনা খান,আহাদ খানও বিষয়টা খেয়াল করলেন।ওনারা দুজন ওদের কয়েকবার জিঙ্গেসও করলেন ওদের কি হয়েছে?কিন্তু ওরা এটা সেটা বলে কথা এড়িয়ে গেলো।ওরা এড়িরে যাচ্ছে দেখে মোনা খান আহাদ খানও বেশি জোড় করলেন না।সবাই চুপচাপ যে যার মতো খেতে লাগলো।খাওয়া শেষে আহান বসা থেকে দাড়িয়ে মিহিরের দিকে তাকিয়ে শান্ত স্বরে বললো
“মিহির নিজের রাগটাকে কন্ট্রোল করতে শেখ।রাগের মাথায় হুটহাট কোনো কাজ করে ফেলাটা চরম বোকামি।আজকে তুই যেটা করেছিস তাতে তোর বোনের কতো বড় ক্ষতি হতে পারতো তোর ধারনা আছে?”
আহানের কথা শুনে মিহির অবাক হয়ে আহানের দিকে তাকালো।কারন ও আহানকে সন্ধ্যায় ঘটে যাওয়া বিষয়টা কিছুই জানায়নি। ইনফ্যাক্ট এখানে আসার পর আহানের সাথে ওর কথাই হয়নি।মিহিরকে এভাবে তাকাতে দেখে আহান একটা বাকা হাসি দিয়ে বললো
“এভাবে তাকানোর তো কিছু নেই মিহির।তুই না বললেও আমার কাছে সব খবরই আসে সেটা তো তোর ভালো করেই জানার কথা।যাই হোক আজকে যাই করেছিস,,ভবিষতে যেনো কখনো এরকম কিছু করতে না শুনি।সব সময় সাবধানে ড্রাইব করবি নাহলে তোর ড্রাইভিং লাইসেন্স বাতিল করানো ছাড়া আমার আর কোনো উপায় থাকবে না।”
কথাটা বলেই আহান কোনোদিক না তাকিয়ে সোজা উপরে চলে গেলো।মিহির আহানের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে ঠোট টা বাচ্চাদের মতো ফুলিয়ে রাখলো।
____________________________
রাত 2:30
মাঝরাতে হঠাৎ করেই দিশার ঘুমটা ভেঙে গেলো।ও ধরফর করে শোয়া থেকে উঠে বসলো।ওর সারা শরীর কেমন থরথর করে কাপছে।গলাটা শুকিয়ে একদম কাঠ হয়ে গেছে।মনে হচ্ছে এখুনি পানির তেষ্ঠায় প্রানটা বেড়িয়ে যাবে।দিশা পাশে তাকিয়ে দেখলো আলিশা গভির ঘুমে তলিয়ে আছে।ও ভাবলো আলিশাকে ডাকবে কিন্তু পরেক্ষনেই আবার ভাবলো সারাদিন আলিশার উপর দিয়ে অনেক ধকল গেছে তাই ওকে ডাকাটা উচিৎ হবে না।দিশা কোনো রকম শোয়া থেকে উঠে দাড়ালো।সোজা হয়ে দাড়াতেই পায়ে ব্যাথ্যায় কুকিয়ে উঠলো।নোখের ভিতরে এখনো যন্ত্রণা হচ্ছে।ও খাটের একপাশ ধরে ভর দিয়ে দাড়িয়ে সারা রুমে চোখ বুলালো।কিন্তু রুমের কোথাও কোনো পানির বোতল রাখা নেই।হয়তো এতো ঝামেলার মধ্যে আলিশা পানি রাখতে ভূলে গেছে।এটা ভেবে নিচে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো।
দিশা দেয়ালে ভর দিয়ে আস্তে আস্তে সিড়ির কাছে আসলো।এসে ধীরে ধীরে সিড়ি দিয়ে নামতে লাগলো।অর্ধ সিড়িতে নামতেই দেখতে পেলো অভি পানির বোতল হাতে নিয়ে উপরের দিকেই আসছে।অভিকে দেখে দিশা দাড়িয়ে গেলো।অভিও এতো রাতে দিশাকে এখানে এভাবে দেখে ষ্টাচু হয়ে দাড়িয়ে গেলো।দিশা খেয়াল করলো অভি ওর দিকে পুরো ভুত দেখার মতো চমকে তাকিয়ে আছে।অভিকে এভাবে তাকাতে দেখে দিশা ভ্রু কুচকে নিজের শরীরের দিকে তাকালো।তাকিয়েই ওর মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো।এতোক্ষন ওর যে পিপাসা পেয়ে ছিলো সব মুহুর্তের মধ্যে হাওয়া হয়ে গেলো।ও চোখ দুটো রসগোল্লার মতো করে একবার নিজের শরীরের দিকে তাকাচ্ছে আরেক বার অভির দিকে তাকাচ্ছে।
দিশা তাড়াহুড়োয় নিজের ওড়না আনতেই ভুলে গেছে।ওর গায়ে যে ওরনা নেই সেটা এতোক্ষন ওর খেয়ালই ছিলো না।দিশা আশে পাশে তাকিয়ে আর কোনো উপায় না পেয়ে নিজেকে লজ্জার হাত থেকে বাচানোর জন্য পিছনে ঘুড়ে দৌড়ে সিড়ি দিয়ে উপরে উঠতে লাগলো।কিন্তু দুই-তিন সিড়ি উঠতেই অ্যাক্সিডেন্টলি ওর পা টা ফসকে গেলো।পা টা ফসকে পড়ে যেতে নিলেই অভি দ্রুত এসে দিশাকে ধরে ফেললো।দিশা ভয়ে চোখ খিচে বন্ধ করে আছে।ভয়ে ওর সারা শরীর কাপছে।কিছুক্ষন পরে ওর খেয়াল হলো ও পড়ে যায়নি,কেউ ওকে ধরে রেখেছে।দিশা ফট করে চোখ খুলে সামনে তাকালো।তাকিয়েই দেখলো অভি ওর কোমরে একহাত দিয়ে ধরে রেখে ওর দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।অভিকে এভাবে তাকাতে দেখে দিশা শুকনো একটা ঢোক গিললো।
অভি কোনো কথা না বলে আচমকা দিশাকে পাজকোলে তুলে নিলো।তারপর উপরে এসে দিশাকে নিয়ে সোজা নিজের রুমে গিয়ে ওকে বেডের উপর এক প্রকার ছুড়ে মারলো।হঠাৎ করে এভাবে ফেলে দেওয়ায় দিশা মুখ থেকে অসফুট স্বরে আহ বলে মৃদু চিৎকার দিলো।অভি গিয়ে দরজাটা লক করে দিয়ে এসে দিশাকে একটানে শোয়া থেকে উঠিয়ে দাড় করালো।তারপর কোনো কথা না বলে দিশার গালে ঠাটিয়ে একটা চড় মারলো।চড়টা খেয়ে দিশা তাল সামলাতে না পেড়ে উপুৎ হয়ে বিছানার উপর হুমড়ি খেয়ে পড়লো।অভি আবারও দিশার বাহু ধরে টেনে দাড় করিয়ে ওর এক হাত পিছনে নিয়ে মুচরে ধরে বললো
“গাধা কোথাকার এই ভাবে কেউ দৌড় দেয়?আজকে যদি পড়ে গিয়ে কিছু একটা হয়ে যেতো তখন কি হতো?ঝগরা করা ছাড়া আর কিছু শিখেছো জিবনে?মাথার মধ্যে কি একটুও বুদ্ধি আছে নাকি সবটাই গোবর ঢুকানো?”
অভির কথা মেঘের কান অবদি পৌছালেও ও মুখ থেকে একটাও কথা বলতে পারছে না।কারন থাপ্পরটা এতোই জোড়ে পড়েছে যে দিশার মাথায় ঝিম ধরেছে।গালটা ভিষন জ্বলছে।দিশাকে চুপ থাকতে দেখে অভি আবারও দিশাকে ধমক দিয়ে বললো
“এই মেয়ে চুপ করে আছো কেনো?আমার প্রশ্নের উওর দাও?আর তুমি এতো রাতে কোন সাহসে ওড়না ছাড়া নিচে গিয়েছিলে হ্যা?জানো বাড়িতে কতো মেহমান আছে?আজকে আমার জায়গায় যদি অন্যকেউ থাকতো তখন কি হতো একবার ভেবে দেখেছো?”
অভি দিশার হাত এতো জোড়ে চেপে ধরেছে ব্যাথ্যায় ওর চোখ থেকে পানি পড়ছে।দিশা ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাদতে কাদতে বললো
“আমার খুব পানির পিপাসা পেয়েছিলো।শরীরটা খুব খারাপ লাগছিলো।রুমে কোথাও পানি ছিলো না।তাই আমি নিচে যেতে চেয়ে ছিলাম পানি খাওয়ার জন্য।বিশ্বাস করুন আমার একটুও খেয়াল ছিলো না যে আমার গায়ে ওড়না নেই।”
দিশার কথা শুনে অভির ওর প্রতি অনেকটা মায়া হলো।ও দিশার হাতটা ছেড়ে দিলো।তারপর জোড়ে জোড়ে দুটো নিশ্বাস নিয়ে নিজের রাগাটাকে কন্ট্রোল করে শান্ত স্বরে বললো
“তোমার পানির পিপাসা লেগেছিলো তুমি আলিশাকে ডাকলেই পারতে?অথবা তোমার ফোন ফোন থেকে আম্মুকে বা আমাকেও তো ফোন দিতে পারতে?এতো কষ্ট করে পা ব্যাথ্যা নিয়ে নিচে যাওয়ার কি দরকার ছিলো?”
অভি যে হাতটা চেপে ধরেছিলো দিশা ওই হাতটা ধরে কাদতে কাদতে বললো
“আপির উপর দিয়ে সারাদিন এতো ধকল গেছে তাই আর আপিকে উঠাইনি।আর আমার তখন খুব কষ্ট হচ্ছিলো তাই কাউকে কল করার কথা মাথাই আসেনি।”
দিশার কথা শুনে অভির বুকের বা পাশে কেমন চিনচিনে ব্যাথ্যা অনুভব হলো।অভি দিশার দিকে তাকিয়ে দেখলো ও এখনো চোখ বন্ধ করে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাদছে।গালে পাচ আঙুলের স্পষ্ট ছাপ বসে আছে।অভি গিয়ে দিশাকে কোলে নিয়ে ওর বেডের উপর শুইয়ে দিলো।তারপর ওর মাথার নিচে হাত দিয়ে মাথাটা একটু উচু করে ধরে ওকে পানি খাইয়ে দিলো।দিশা পানি খাওয়ার পর আস্তে আস্তে বেটার ফিল করতে লাগলো।কিন্তু সন্ধ্যায় পেইন কিলারের সাথে ঘুমের মেডিসিন নেওয়ার কারনে বেশিক্ষন তাকিয়ে থাকতে পারলো না।বেডে শোয়ার কিছুক্ষন পরেই ঘুমের দেশে পাড়ি জমালো।
দিশাকে ঘুমিয়ে পড়তে দেখে অভি একটা ওয়েনমেন্ট নিয়ে দিশার গালে লাগিয়ে দিলো।তারপর আস্তে করে ওর গায়ে কাথা টেনে দিয়ে ওর কপালে একটা গভির ভাবে চুমু খেলো।তারপর বিরবির করে বললো
“তোমাকে খুব তাড়াতাড়ি আমার কাছে নিয়ে আসবো পাখিটা।তোমাকে আর দূরে রাখা যাবে না।তুমি একদম নিজের খেয়াল নিজে রাখতে পারো না।এখন থেকে যা করার আমাকেই করতে হবে।”
কথাটা বলে অভি দিশার ঘুমন্ত মুখটার দিকে কিছুক্ষন মায়াভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো।তারপর নিজেও সোফায় গিয়ে শুয়ে পড়লো।
#চলবে……..
বিঃদ্রঃপরীক্ষা অলমোষ্ট শেষ।হয়তো এবার থেকে রেগুলার গল্প দিতে পারবো।