#সাদিয়া_শওকত_বাবলি
#পর্ব_২৮
( অনুমতি ব্যতীত কপি করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ )
অসহায় কন্ঠে বলল,
-“এর নাম ভারত চীন বর্ডার না রেখে ভারত বাংলাদেশ বর্ডার রাখা যায় না বউ? ভারত বাংলাদেশ বর্ডার হলে মাঝে মধ্যে তাও দুই চার পয়সা ঘুস দিয়েও বর্ডার পেরুনোর সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু ভারত চীন বর্ডারে নো নো চান্স। সোজা গু’লি করে খুলি উড়িয়ে দিবে।”
পৃথা তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকালো তুর্যের পানে। কাঠ কাঠ কন্ঠে বলল,
-“গু’লি করে আপনার খুলি উড়াতে পারবো কিনা জানি না। তবে এ কক্ষ থেকে ঠিক বেরিয়ে যেতে পারবো। এই কোলবালিশ ভেদ করে এদিকে আসার চেষ্টা করলে সোজা রুমের বাইরে চলে যাব বলে দিলাম।”
তুর্য চোখ মুখ কুঁচকালো। কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বলল,
-“তুমি তো দেখছি ভারত চীনের বর্ডারের থেকেও ভয়ংকর বউ।”
পৃথা গায়ে মাখলো না তুর্যের কোনো কথা। এ বান্দা সর্বদাই এমন আজগুবি সব কথা বলবে এ আর নতুন কি? মেয়েটা আর সময় নষ্ট করলো না। তুর্যকে একটা ভেংচি কেটে পাশ ফিরে শুয়ে পড়লো। চোখ বন্ধ করে বলল,
-“আজেবাজে কথা রেখে ঘুমাতে দিন এখন।”
তুর্যও আর কথা বাড়ালো না। বউয়ের পানে একবার অসহায় দৃষ্টি নিক্ষেপ করে শুয়ে পড়লো কোলবালিশের এপাশে। তবে ঘুমালো না তূর্য। বউকে পাশে রেখে কি আর তার মতো পুরুষের ঘুমানো সম্ভব নাকি? এতদিন পর বউকে পাশে পেয়ে শরীরে প্রেমের জোয়ার বইছে বেচারার। তুর্য বেশ কিছুক্ষণ সময় ঘুমের ভান ধরে মটকা মেরে পড়ে রইলো বিছানায়। অতঃপর পৃথার আর কোনো সাড়া শব্দ না পেয়ে উঠে বসলো। উঁকি দিয়ে দেখলো পৃথা সত্যিই ঘুমিয়েছে কিনা। বাহ্যিক দৃষ্টিতে তো মনে হচ্ছে মেয়েটা ঘুমিয়েছে। তবুও তুর্য নিজের হাত বাড়িয়ে পৃথার নাকের কাছে ধরলো।ভালোভাবে পর্যবেক্ষন করলো ঘুমিয়েছে কিনা। না এবার তো মনে হচ্ছে সত্যিই ঘুমিয়েছে। তুর্য আস্তে ধীরে তার আর পৃথার মধ্যাকার কোলবালিশটা সরিয়ে দিল। অতঃপর খুব সাবধানে শুয়ে পড়লো পৃথার গা ঘেঁষে। ইসসস কি মিষ্টি একটা গন্ধ আসছে তার বউয়ের শরীর থেকে অথচ এই মেয়েটা কিনা তাকে দূরে রাখতে চেয়েছিল। তুর্য আলতোভাবে পৃথার কোমড়ে হাত দিল। টেনে নিয়ে মিশিয়ে নিল নিজ বক্ষের সাথে। আলতোভাবে পৃথার কপালে চুমু খেয়ে বলল,
-“ভারত চীনের বর্ডার কেন? চীনের মহা প্রাচীর তুলে দিলেও তো আমাকে আমার বউয়ের থেকে আলাদা করা যাবে না।”
কথাটা বলেই ওষ্ঠ প্রসারিত করে হাসলো তুর্য। পৃথাকে লুকিয়ে নিল বুকের মধ্যখানে। অতঃপর চোখ বন্ধ করে পাড়ি জমালো ঘুমের দেশে।
২৯.
সময় গড়ালো কিছুটা। সকালের সূর্যটাও তার তেজ বাড়িয়ে দিয়েছে। প্রখরতা ছড়িয়ে দিয়েছে চারদিকে। চারপাশ থেকে আজানের সুমিষ্টি ধ্বনিও শোনা যাচ্ছে। হয়তো জোহরের আজান পড়েছে। সারারাত জার্নি করে এসে ভোরের দিকেই তো ঘুমিয়েছিল পৃথা আর তুর্য। তাই বাড়ির কেউও আর ডাকেনি তাদের। তবে জোহরের আজানের ধ্বনি কর্ণে পৌঁছাতেই ঘুম ভাঙলো তুর্যের। পিটপিট করে চোখ খুলতেই চোখের সম্মুখে ভেসে উঠলো পৃথার ঘুমন্ত মুখশ্রী। কি স্নিগ্ধ লাগছে মেয়েটাকে। তুর্য হৃদয়ে প্রশান্তি অনুভব করলো। তার কতদিনের স্বপ্ন ছিল এভাবে বুকের ভিতরে বাচ্চা বউটাকে নিয়ে ঘুমাবে, আবার জেগে উঠেও দেখবে বউটার মুখশ্রী। আজ সে স্বপ্ন বুঝি পূরণ হলো। তুর্য পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকালো মেয়েটার পানে। ঘুমানোর দরুন নাক, গাল, চোখ, কেমন ফুলে ফেঁপে উঠেছে। তুর্যের লোভ লাগলো। ইচ্ছে হলো একটু ছুঁয়ে দিতে। ছেলেটা এ পর্যায়ে নিজের ইচ্ছেটাকে দমন করলো না। হাত বাড়িয়ে আলতোভাবে ছুঁয়ে দিল বউয়ের, নাক, গাল , ওষ্ঠ। তবে এতেও বুঝি তার তৃষ্ণা মিটলো না তার। হৃদয়টা আরও কিছু চাইলো। নিষিদ্ধ চাওয়ারা তরতরিয়ে জাগ্রত হলো। তুর্য একটু ঝুঁকলো পৃথার পানে। হতে বাড়িয়ে আলতোভাবে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিল মেয়েটার নাক, কপাল এবং গালে। এরপর! এরপর আবার সেই ওষ্ঠ। আগের বার এই ওষ্ঠে চু’মু খেতে গিয়েই ধরাটা খেয়েছিল। এবারও যদি ধরা খায় তবে আর রক্ষে নাই। বউ সোজা রুম ছেড়ে দিবে। তুর্য একবার ভাবলো চু’মু খাবে না কিন্তু মনটাকে কোনোভাবেই দমাতে পারলো না সে। চু’মু খাবে না খাবে না করেও চ’ট করে একটা চু’মু খেল পৃথার ওষ্ঠে। মেয়েটা কোনোভাবে টের যাতে না পায় তাই অতি দ্রুত সরে এলো। ঝুঁকি না নিয়ে কোলবালিশটা আবার রেখে দিল পৃথা আর তার মাঝে খানে। অতঃপর মৃদু কন্ঠে ডাকলো মেয়েটাকে,
-“বউ, ও বউ।”
পৃথা নড়েচড়ে উঠলো একটু তবে পুরোপুরি উঠলো না। তুর্যও আর ডাকলো না। মেয়েটা ঘুমাচ্ছে আর একটু ঘুমাক। তুর্য বিছানা ছেড়ে উঠে গেল। ওয়াশ রুম থেকে ফ্রেশ হয়ে একটা সবুজ রঙা পাঞ্জাবী জড়ালো তার শক্তপোক্ত ফর্সা শরীরে। অতঃপর টুপি মাথায় রওনা হলো মসজিদে।
৩০.
পৃথার ঘুম ভাঙলো তখন ঘড়ির কাঁটায় প্রায় দুপুর দুইটা বেজেছে। ঘুমের ঘোরে চোখ বন্ধ রেখেই বিছানায় উঠে বসলো সে। ফোলা ফোলা চোখ মুখে তাকালো পাশে। দেখলো কোলবালিশটা একদম যথাস্থানেই আছে। আর তুর্যও কক্ষে নেই। যাক অন্তত ছেলেটার একটু তো সুবুদ্ধি হয়েছে এই কোলবালিশটা পেরুনোর চেষ্টা করেনি। হাত তুলে আড়মোড়া ভাঙলো পৃথা। হঠাৎ কক্ষে টানানো দেয়াল ঘড়িটার পানে তাকাতেই চক্ষু চড়কগাছ তার। ২ টা বেজে গেছে! এত সময় ঘুমিয়েছে সে। আর কেউ ডাকলোও না। পৃথা তড়িঘড়ি করে বিছানা ছেড়ে উঠে পড়লো। নতুন বাড়ি, নতুন মানুষ, তার উপর নতুন বউ। সে যদি এভাবে ঘুমিয়ে থাকে তাহলে কিভাবে হয়? সবাই কি ভেবেছে কে জানে। পৃথা হন্তদন্ত হয়ে ওয়াশ রুম থেকে ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে এলো। একটু শান্ত মনে জোহরের নামাজটা আদায় করলো। অতঃপর শরীরে জড়ানো থ্রী পিসের ওড়নাটা মাথায় ভালোভাবে জড়িয়েই বেরিয়ে এলো কক্ষ থেকে। কিন্তু একি বাড়ির সবাই কোথায়? পৃথা শরীরে জড়ানো ওড়নাটা আরেকটু টেনেটুনে ঠিক করলো, তাকালো আশেপাশে। ভোরেও তো এ বাড়িতে ভরপুর মানুষ দেখলো এখন কই সব? হঠাৎ পাশের এক কক্ষ থেকে টুংটাং আওয়াজ ভেসে এলো পৃথার কর্ণে। হয়তো ওখানেই কেউ আছে। আওয়াজ গুলো অনুসরণ করেই সে কক্ষের পানে গেল মেয়েটা। দেখা মিললো তাহমিনা বেগমের। সম্ভবত এটা ডাইনিং কক্ষ। টেবিলে খাবার দাবার ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে কক্ষের চারদিকে। কক্ষে অন্য কারো উপস্থিতি অনুভব করতেই তাহমিনা বেগম সেদিকে ফিরে তাকালেন। পৃথাকে দেখে একগাল হেসে বললেন,
-“উঠে পড়েছিস? আয় বস এক সাথে খাবো আমরা।”
পৃথা এগিয়ে গিয়ে দাঁড়ালো টেবিলের পাশে। বসবে নাকি বসবে না দ্বিধায় আছে। কেমন ইতস্তত লাগছে তার। আর তুর্যটাও বা কোথায়? ঘুম থেকে উঠে তো একটাবারের জন্যও দেখা মিললো না তার। কোথাও কি বেরিয়েছে? তাহমিনা বেগমের কাছে জিজ্ঞেস করবে কি? না না, কি না কি ভাবে আবার। পৃথার ভাবনার মধ্যেই তাহমিনা বেগমের কন্ঠস্বর ভেসে এলো। ভ্রু কুঁচকে তিনি বললেন,
-“কি হলো বস।”
পৃথা ইতস্তত করলো। চেয়ারে বসতে বসতে বলল,
-“এই তো বসছি আন্টি।”
তাহমিনা বেগম চোখ গরম করে তাকালেন পৃথার পানে। শাসিয়ে বললেন,
-“এই আন্টি কি রে? মা বলবি মা।”
পৃথা তাকালো শ্বাশুড়ির পানে। মানুষটা কত ভালো। এই টুকু সময়েই কেমন আপন করে নিয়েছেন। পৃথার এই মুহূর্তে সুফিয়া বেগমের কথা ভীষনভাবে মনে পড়লো। তার মা কেমন আছে? ঠিক আছে তো? নাকি কান্না কাটি করছে তার জন্য? কাল থেকে একটা খোঁজ খবরও নেওয়া হয়নি। পৃথার চোখ জোড়া ছলছল করে উঠলো। তবে তা তাহমিনা বেগমের নজরে আসার আগেই লুকিয়ে ফেললো। তাহমিনা বেগম খাবারের প্লেট এগিয়ে দিলেন পৃথার সম্মুখে। প্লেটে খাবার বেড়ে দিতে দিতে বললেন,
-” মা বলে ডাকবি তো?”
পৃথা দ্বিরুক্তি করলো না। মাথা নাড়িয়ে হ্যা সম্মতি দিল। তাহমিনা বেগম হাসলেন। তাড়া দিয়ে বললেন,
-“খেয়ে নে তাড়াতাড়ি। সেই কখন খেয়েছিস।”
পৃথা উসখুস করলো। হৃদয়ে হানা দিল তুর্য খেয়েছে কিনা প্রশ্নটা। হাজার হলেও এটা তুর্যের বাড়ি। তার মারফতেই তো পৃথা এসেছে এখানে। তার খোঁজ খবর নেওয়াটা অবশ্যই পৃথার কর্তব্য। কিন্তু সরাসরি প্রশ্নটা করতেও কেমন ইতস্তত লাগছে। শেষে একটু ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
-“বাড়ির সবাই খেয়েছে?”
-“হ্যা সবাই খেয়ে নিয়েছে। শুধুমাত্র বাকি আছে তুই, আমি আর তোর গুনধর স্বামী।”
তুর্য খায়নি শুনে পৃথারও আর খেতে ইচ্ছে হলো না। তবে নিজের মনের কথাটা সাহস করে শ্বশুরির নিকট জানাতে পারলো না। অনিচ্ছা সত্ত্বেও প্লেটে হাত রাখলো সে। ঠিক তখনই পৃথার পিছন থেকে ভেসে এলো এক ভারী কন্ঠস্বর। গম্ভীর কন্ঠেই বলল,
-“আমাকে রেখেই খেতে বসে গেছো? এত পাষান হতে পারলে তুমি বউ?”
তুর্যের কন্ঠ কর্ণে পৌঁছাতেই পিছন ঘুরে তাকালো পৃথা। অমনি যেন থমকে গেল মেয়েটা। হৃদস্পন্দন বেড়ে গেল দ্রুত। তুর্য পাঞ্জাবী পড়েছে আজ, আবার মাথায় টুপি। এই মুহূর্তে পৃথার চোখে এই পুরুষকে পৃথিবীর সবচেয়ে স্নিগ্ধ লাগছে। যদিও এর আগে একবার পাঞ্জাবী পড়া অবস্থায় তুর্যকে দেখেছে পৃথা কিন্তু এত খেয়াল করেনি। তখন তো শাড়ি আর পাঞ্জাবী ছেড়ার তালে ছিল দু’জনেই। তাছাড়া তখন মাথায় টুপিও ছিল না। পৃথার ভাবনার মধ্যেই তুর্য মাথার টুপিটা খুলে পকেটে ঢুকালো। একটু এগিয়ে এসে ধপ করে বসে পড়লো পৃথার পাশের চেয়ারটায়। একটু ঝুঁকে বলল,
-“আমাকে কি একটু বেশিই সুন্দর লাগছে বউ?”
চলবে…..
____