Apocalypto নামক Canadian সিনেমা আমাদের আজকের গল্পের মূল বিষয়। প্রিয় পাঠক শুরুতেই বলে রাখি Nudity (নগ্নতা) সহ্য করার ক্ষমতা যাদের আছে, আমাদের আজকের গল্প শুধু তাদের জন্য। Hollywood, Bollywood এর সিনেমা নিয়ে তো অনেক গল্প হল। এবার চলুন এর বাহিরের একটু স্বাদ নিয়ে দেখা যাক। আজ আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছি Canada এর একটি সিনেমার গল্প। Apocalypto নামক এই সিনেমাটি শুধু কানাডা নয়,পুরো সিনেমা ইতিহাসের অন্যতমা সেরা সৃষ্টি নিঃসন্দেহে। ঐতিহাসিক মায়ান সভ্যতার নির্মমতা আর ভয়াবহাতা নিয়ে এত অসাধারণ সিনেমা আগে কখনো আসেনি; পরবর্তীতে হয়তো আসবে কি না সন্দেহ আছে।
চলুন পাঠক আর দেরি না করে ঘুরে আসা যাক আজ থেকে ছয়শত বছর পূর্বের মায়া সভ্যতা নিয়ে নির্মিত Apocalypto সিনেমা থেকে।
মায়া সম্রাজ্য তখন বিলুপ্তির পথে, প্রতিকূল পরিবেশে টিকে থাকায় তখন একমাত্র লক্ষ্য।গল্পের শুরু ১৫০০ সালে; Mexico এর ইউকাটাল উপদ্বিপে গহীন জঙ্গলে বসবাসকারী মায়ান উপদ্বিপ কে কেন্দ্র করেই। Apocalypto সিনেমার শুরুতেই আমরা দেখতে পাই বেশ কয়েক জন আদিবাসীর একটি দলের পেতে রাখা ফাঁদে আটকা পরে এক বন্য শুকুর। শিকার এর পরে যখন সবাই ব্যাস্ত হয়ে পরে নিজেদের মধ্য ভাগ বাঁটওয়ারা করে নিতে; ঠিক সেই সময় তার লক্ষ্য করে কেউ একজন তাদের লুকিয়ে দেখছে।
আদিবাসি দলের যে প্রধান সে টের পেয়ে হুঙ্কার দিয়ে সবাইকে বেড়িয়ে আসতে বলে।লুকিয়ে থাকা আদিবাসীরা তখন বেড়িয়ে আসে। সবারই চোখে মুখে তখন ভয়ের ছাপ স্পষ্ট।বোঝাই যাচ্ছে কেউ তাদের উপর নির্যাতন চালিয়েছে।সবারই এই অবস্থা দেখে জাগুয়া, যে এই গল্পের নায়ক ও সর্দারের ছেলে সে ভয় পেয়ে যায়। ভয় পেলেও কৌতুহলি জাগুয়া জানতে চায় কি হয়েছিল এদের সাথে।জাগুয়ার বাবা এসব প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে সবাইকে নিয়ে চলে আসে নিজ গ্রামে। ছোট্র একটি গ্রাম তাদের,কিন্তু এদের দেখলে মনে হবে পৃথিবীতে সবচেয়ে সুখি মানুষ এরাই। আমাদের চিন্তার সাথে এদের জীবন যাত্রার ধরণ ঠিক মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। সুখ শান্তি আর হাসি ঠাট্টায় ভরপুর তাদের জীবন।
একদিন খুব ভোরে দুঃস্বপ্ন দেখে ঘুম ভাঙ্গে জাগুয়ার। দুঃস্বপ্নের রেশ কাটতে না কাটতেই জাগুয়া খেয়াল করে কেউ তাদের বাড়ি ঘরে আগুন লাগিয়ে দিচ্ছে। এই অবস্থা দেখে জাগুয়া তার অন্তঃসত্বা স্ত্রী আর সন্তানকে রেখে আসে এক নির্জন কূপের মধ্য। স্ত্রী-সন্তাকে রেখে এসে জাগুয়ার দেখতে পায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনের বাহিরে চলে গেছে। শুধু বাড়ি-ঘরে আগুন দিয়েই ক্ষান্ত হয়নি আক্রমনকারীরা, সাথে চালিয়েছে গ্রাম বাসিদের উপর অমানুষিক নির্যাতনও, আঘাত সহ্য করতে না পেরে মৃতুর কোলে ঢলে পড়েছে অনেকে। নিজের বাবাকেও মৃত্যুর হাত থেকে বাচাতে পারেনি জাগুয়া। জাগুয়া সহ আর যারা বেঁচে ছিল তাদেরকে বন্দি করা হয়।
এরই মাঝে এক অদ্ভত ঘটনা ঘটে, সবাই কে যখন বন্দি করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল তখন পথে এক বাচ্চা মেয়ের সাথে দেখা হয়। মেয়েটি ভবিষ্যৎ বানি করে আক্রমণকারী দলের উদ্দেশ্য বলে; “অচিরেই বিপদের সম্মুখিন হবে তারা, আর যে লোকটি তাদের বিপদের কারণ হবে সে এখন তাদের সাথেই আছে।“ ছোট বাচ্চার কথায় গুরুত্ব না দিয়ে ওরা চলতে থাকে ওদের গন্তব্যের দিকে।
এরপর তাদের নিয়ে যাওয়া হয় একটি গ্রামে। এখানে বন্দীদের সাড়া শরীরে নীল রং মেখে দেওয়া হয়। নীল রং লাগানো শেষে তাদের বিক্রি করে দেওয়া হয় নিলামে। এরপর নারী আর পুরুষ বন্দীদের আলাদা করা হয়; ছেলেদের নিয়ে যাওয়া হয় অন্য একটি স্থানে। এখানে এসে জাগুয়া ও তার সাথীরা এমন দৃশ্য দেখতে পায় যা দেখে তাদের অন্তর আত্মা কেঁপে ওঠে।হাজার মানুষের এক বিশাল জনশ্রত উল্লাসে মেতে উঠেছে; আর একটি বিশাল পিরামিডের উপর থেকে বন্দিদের শিরোচ্ছেদ করা হচ্ছে।
এই দৃশ্য দেখে তারা কিছুই আঁচ করে উঠতে পারেনা, একটু পরেই জাগুয়া জানতে পারে সূর্য দেবতাকে সন্তুষ্ট করতে ভয়াবহ এক কুসংস্কার পালিত হয় রাজধানিতে।বলিদান হিসাবে দেয়া হয় জীবিত মানুষের হৃদয়। ভয়াবহ এ প্রথা চোখে ভেসে উঠতেই গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে।নরবলি না দিলে ধ্বংস হয়ে যাবে তাদের সভ্যতা, এমনটিই জানায় মায়ান পুরোহিত। মায়ান সভ্যতা টিকিয়ে রাখতে হলে নির্মাণ করতে হবে অসংখ্য মন্দির,আর মন্দির নির্মাণের পর চাই নরবলি।যতক্ষন না সূর্য দেবতা সন্তষ্ঠ হচ্ছে ততোক্ষণ চালিয়ে যেতে হবে এই বলি উৎসব।
নরকিয় এ তান্ডবের এক পর্যায়ে চলে আসে জাগুয়ার পালা। জল্লাদ প্রস্তুতি নিচ্ছিল জাগুয়াকে বলি দেওয়ার জন্য; তখনি গল্পের মোড় ঘুরে যায় সূর্যগ্রহণের মাধ্যমে। চারেদিক অন্ধকার হয়ে যায়।পুরোহিত ঘোষণা দেয় সূর্যদেব সন্তুষ্টি লাভ করেছে; নরবলির আর কোন প্রয়োজন নেই। জাগুয়া কোন মত প্রাণে বেঁচে গেল।
না প্রিয় পাঠক জাগুয়া প্রাণে বাঁচতে পারেনি। ছিঁড়ে যাওয়া মালার পুঁতির মত একের পর এক বিপদ আসতে থাকে জাগুয়ার উপর।এরপর তাদের নিয়ে যাওয়া হয় এক বিশাল মাঠে। মাঠের শেষ প্রান্তেই রয়েছে গহীন জঙ্গল। জাগুয়া ও তার সাথীদের বলা হয় যদি তারা এ মাঠ পেরিয়ে যেতে পারে তবেই মুক্ত করে দেওয়া হবে তাদের। জীবন বাঁচানোর এ সুযোগ হাত ছাড়া করতে চায়নি কেউই।
দুজন করে ছেড়ে দেওয়া হয় মাঠের মাঝে।তারা দৌড়ানো শুরু করে মুক্তির দিকে। দৃশ্য যেন আরো নির্মম, যখন তারা দৌড়াচ্ছিল তখন ডাকাত দল পিছন থেকে তীর,ধনুক,বল্লম যার হাত যা ছিল ছুড়ে মারছিল তাদের দিকে। শেষ সীমানায় পৌছানোর আগেই তীর আর বল্লমের আঘাতে মারা পড়ে বন্দীরা। এবার জাগুয়ার পালা। দারুন এক কৌশলের অবলম্বন করে জাগুয়া। সোজা না দৌড়িয়ে আঁকাবাঁকা দৌড়াতে শুরু করে তার সঙ্গে থাকা সাথিকে নিয়ে। এতে নিশানা ঠিক করতে ব্যার্থ হয় আক্রমণকারীরা। কিন্তু কতক্ষন আর তীর ধনুক ফাঁকি দেওয়া যায়। একটি তীর এসে বেঁধে যায় জাগুয়ার গায়ে। মাটিতে লুটিয়ে পড়ে জাগুয়া।
আবার উঠে দৌড়াতে শুরু করে জাগুয়া কিন্তু সে আবারো লুটিয়ে পড়ে মাটিতে। চলার শক্তি যেন বিধাতা কেড়ে নিয়েছে তার কাছ থেকে। হার মানেনা জাগুয়া হামাগুড়ি দিয়ে এগিয়ে চলে জঙ্গলের দিকে। এমন সময় আক্রমণকারী দলের সর্দারের ছেলে দৌড়ে এসে মারতে যায় জাগুয়াকে; আরেক বন্দি সর্দারের ছেলের পা টেনে ধরে পিছন থেকে। এ সুযগে জাগুয়া তার গায়ে বিধে থাকা তীর বের করে ঢুকিয়ে দেয় ডাকাত দলের সর্দারের ছেলের গলায়। মারা যায় সর্দারের ছেলে। পালিয়ে জঙ্গলে ঢুকে পড়ে জাগুয়া। ছেলের মৃত্যু দেখে ক্রধে ফেটে পড়ে ডাকাত সর্দার; দলবল নিয়ে ঢুকে পড়ে জঙ্গলে।
জাগুয়া জঙ্গলে ঢুকে পড়ার সাথে সাথেই যেন পাল্টে যায় পুরো সিনেমার আবহ। জঙ্গলে ঢুকেই জাগুয়া Black Panther এর শিকারে পরিণত হয়। প্রাণ পনে ছুটছে জাগুয়া। এ সময় সাপে বড় হয়ে ডাকাত দলের একজন জাগুয়া আর black panther এর সামনে এসে পড়ায় প্রাণে বেঁচে যায় জাগুয়া। একে একে ডাকাত দলের সাথীরা মারা পড়ায় সবার মাঝে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়। সবার মনে পড়ে যায় সেই মেয়ের ভবিষ্যৎ বানির কথা।
ছেলের মৃত্যুর ঘা এখনো শুকায়নি। সর্দার আবার তাড়া করতে বলে জাগুয়াকে। দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত চলে জাগুয়াকে ধরার চেষ্টা। পালাতে পালাতে জাগুয়া চলে আসে বিশাল এক ঝর্ণার পাশে। উপর থেকে নিচের দিকে তাকিয়েই জাগুয়ার কলিজা শুকিয়ে আসে। আগ-পিছু না ভেবে জীবনের মায়া ত্যাগ করে জাগুয়া লাফিয়ে পড়ে ঝর্ণার বুকে। কারন তাকে যে কোন মূল্য পৌছাতে হবে যে তার স্ত্রী সন্তানের কাছে। বিশাল আকারের সেই ঝর্ণায় লাফ দিয়ে তীরে উঠেয় জাগুয়া বুঝতে পারে সে এখন তার এলাকায়।এ জঙ্গল তার নিজের, এখানে তার বাবার জন্ম হয়েছে, জন্ম হয়েছে বাবার বাবারো।
সর্দার তখনো উপরে দাঁড়িয়ে, সিদ্ধান্তহীনতায়। ছেলের খুনিকে ধরতে প্রাণের মায়া না করে ডাকাত দলের সর্দার ঝাপিয়ে পড়ে জলপ্রপাতের উপর। পাথরের ধাক্কায় একজন মারা গেলেও বাকিরা উঠে আসে পাড়ে।এ সময় লুকিয়ে থেকে ডাকাত দলের উপর মৌমাছির চাক ছুড়ে দেয় জাগুয়া; আর এক ধরণের বিষাক্ত ব্যাঙের বিষ দিয়ে তৈরি করে মরণ ঘাতি অস্ত্র। এই অস্ত্র দিয়েই একেক জনকে ঘায়েল করতে শুরু করে জাগুয়া।
এরই মধ্য শুরু হয় তুমুল বৃষ্টি। জাগুয়ার মনে পড়ে কূপে থাকা তার স্ত্রী-সন্তানের কথা। কূয়া ভরে ওঠার আগেই তাকে পৌছাতে হবে সেখানে।কিন্তু দুষ্টু লোকগুল তার পিছু ছাড়েনা। এদিকে কূয়া ভরতে শুরু করে সাথে শুরু হয় জাগুয়ার স্ত্রীর প্রসব যন্ত্রণা। হাত নিজ প্রাণ বাজি রেখে জাগুয়া ছুটছে তার স্ত্রীর দিকে ঠিক যতদ্রুত সম্ভব। ঠিক এ সময় সামনে চলে আসে ডাকাত দলের সর্দার; সাথে সাথে তীর ছুঁড়ে মারে, গেঁথে যায় জাগুয়ার শরীরে। মৃত্যু নিশ্চিত করতে চাকু হাতে ছুটে আসে জাগুয়ার দিকে।
আসার সময় খেয়াল করে তার পা কোন কিছুর সাথে ধাক্কা খাচ্ছে, আর এটা খেয়াল করতে করতেই যে ফাঁদ দিয়ে জাগুয়ারা বুনো শুকর শিকার করত; সেই ফাঁদে নির্মম বববরতায় মারা পড়ে ডাকাত সর্দার। এদিকে কূপের পানি গলা ছুঁইছুঁই। এই গলা ছুঁইছুঁই পানির মধ্যই সন্তান জন্মদান করেন জাগুয়ার স্ত্রী। ডাকাত সর্দার মারা গেলেও বেঁচে ছিল তার দুই সঙ্গী।তারা আবারো পিছু করে জাগুয়ারের।তাদের হাত থেকে বাঁচতে দৌড়াতে দৌড়াতে সমুদ্রের কিনারে চলে আসে জাগুয়া।এসময় তারা এমন দৃশ্য দেখে যা দেখে বেঁচে যাওয়া দুজন শত্রু, জাগুয়ার সবাই স্তম্ভিত হয়ে যায়। বড় বড় বিশাল জাহাজ দাঁড়িয়ে আছে সমুদ্রের কিনারায়। আর ছোট ছোট নৌকা দিয়ে তাদের দিকে আসছে কয়েক জন ইংরেজ। এমন দৃশ্য এর আগে দেখেনি এরা কেউই। এ সুযোগে চুপিসারে জাগুয়া চলে আসে তার স্ত্রী-সন্তানের কাছে। উদ্ধার করে তিন জনকে কূপ থেকে।
জাগুয়ার স্ত্রী ইংরেজদের দেখে বলে তাদের কি ওই জাহাজের দিকে যাওয়া উচিৎ? জাগুয়ার উত্তর দেয় “না।“
তাদের যোগ্য স্থান এই জঙ্গল, এই জঙ্গল ছেড়ে কোন দিনই যাবেনা তারা।
এখানেই শেষ হয় Apocalypto সিনেমাটি।
Apocalypto মায়া সভ্যতাকে কেন্দ্র করে নির্মিত হলেও এটি একই সাথে একটি inspirational সিনেমা। এখনে দেখান জাগুয়া আমাদের মাঝেই বসবাসকারী কোন চরিত্র। জাগুয়া চরিত্রের মাধ্যমে পরিচালক দেখিয়েছেন প্রতিকূল পরিবেশে ভীরু স্বভাবের একটি ছেলে কিভাবে অদম্য সাহসী হয়ে ওঠে। প্রিয় পাঠক আপনি যদি এখনো Apocalypto সিনেমাটি না দেখে থাকেন তাহলে অবশ্যই এখনি আপনার দেখা উচিৎ।
আমদের গল্প যদি আপনাদের ভাললাগে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট এর মাধ্যমে জানাবেন এবং বেশি বেশি বন্ধু দের সাথে শেয়ার করে আমাদের উৎসাহ দিবেন যেন আমরা আপনাদের জন্য নতুন নতুন গল্প নিয়ে আসতে পারি।