#ফাবিয়াহ্_মমো .
একটা কালো ছায়া স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে! কোনো নড়াচড়া করছেনা ছায়াটা! মূহুর্ত্তেই লাফ দিয়ে উঠলো মাহতিম! বুঝতে পারলো সে মস্ত বড় ভুল করে ফেলেছে। সর্বনাশ! দ্রুত কোমরের পিছনে ডানহাত চালান দিলো, কোমরে গোঁজা পিস্তলটা দক্ষ হাতের কবজায় এনে সোজাসুজি তাক করলো! লাইব্রেরির কাছটায় জান্তব ছায়াটা অন্ধকার থেকে উঠে আসছে, গম্ভীর ভাবে ধীরপায়ে এগিয়ে আসছে, ঠিক মাহতিমের দিকেই দৃষ্টি রেখেছে। মাহতিম পিস্তলটা নাক বরাবর ধরে টার্গেট ঠিক করলো, যদি ছায়াটা সন্দেহজনক ব্যাপার ঘটায় তাহলে এক মূহুর্তও দেরি করবে না। মাহতিমের পেছনে খোলা দরজা, সেখান দিয়ে সন্ধ্যার ফ্যাকাশে আলো ঢুকছে। চোখ সইয়ে তাকিয়ে থাকতেই ছায়াটার মুখ পরিদৃষ্ট হলো, ঠোঁটে বিদঘুটে হাসি ঝুলিয়ে দাঁত বের করে আছে। ভাবটা এমন মাহতিমকে দেখে যেনো দারুণ বিনোদন পেয়েছে। মুখটা দেখে ভ্রুঁ কুঁচকালো মাহতিম! হাতের পিস্তলটা মূর্হতের জন্যও টার্গেট বরাবর সরালো না, কন্ঠে দাম্ভিকতা ফুটিয়ে তেজের সাথে বললো,
– তুই এই বাড়িতে কিভাবে ঢুকলি?
প্রশ্ন শুনে মুখটা অট্টহাসিতে ফেটে পরলো। হাসতে-হাসতে মাথা ঝুঁকিয়ে ফেললো সে। মাহতিম পুরোপুরি সজাগ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে, একটুও অসতর্ক হওয়া যাবে না। হাসিটা কোনোমতে চেপে মুখ তুললো লোকটা, মাহতিমের দিকে তাকাতেই মুখের হাসিটা মিলিয়ে গেলো। কয়েক হাত দূরত্ব রেখে তাচ্ছিল্যের সাথে বললো,
– তাইলে আমারে চিনতে পারছেন? আপনের ব্রেইন তো দেখি মাশাআল্লাহ। আইচ্ছা আমার নাম কি কন তো দেহি?
দাঁতে-দাঁত পিষলো মাহতিম। পিস্তলের বাঁটটা দিয়ে সজোরে মাথার বারি লাগাতে ইচ্ছে করছে! জবাবটা সাথে-সাথে না দিয়ে চুপ থাকলো মাহতিম, শয়,তানের সাথে মুখ নাড়াতে ইচ্ছে করছেনা। কিন্তু অপরপক্ষের ব্যক্তি মাহতিমের চুপ থাকাকে মান্য করলো না, আবার একগাল হাসি দিয়ে গুমর ভাবে বললো,
– আনসারী সাহেব দেহি চুপ কইরা আছে। নাম কি মনে নাই? ভুইলা গেছেননি ভাই সাহেব?
রাগে মাহতিমের ভেতরটা টগবগ করছে। নির্ঘাত শয়,তানটার মাথায় কুবুদ্ধি আছে, ও সোজা ধাতের লোক না। সময় নষ্ট না করে মাহতিম শক্ত গলায় বললো,
– তুই সাইদুল বা:ন্ঞ্চোত না?
গালি খেয়ে হোহো করে হেসে উঠলো সাইদুল। মাহতিমের মুখে ‘ গালি ‘ শব্দটা কতটা বেমানান এটাই যেন হাসির ছলকে বুঝিয়ে দিচ্ছে। মাহতিম কৌশলের সাথে একপা সামনে এগুলো। হাস্যরত সাইদুলকে একটুও ঠাহর করতে দিলো না। চুপ করে এগিয়ে যেতেই আরেকটু সাবধানতা অবলম্বন করলো, সাইদুল যখন হাসি থামিয়ে তাকালো ততক্ষণে পরিস্থিতি বিগড়ে গেছে। আকস্মিকভাবে নিজের উপর ঝাঁপিয়ে পরলো কিছু, চোখ মেলে তাকানোর সুযোগও পেলো না। পিস্তলের শক্ত বাঁট দিয়ে জোরে বারি খেলো, ব্যথায় আর্তনাদ করে আহাজারি করলো সে! জানটা বুঝি বেরিয়ে গেছে! চিৎকারের তীব্র ধ্বনিটা শূন্য বাড়িটায় ঝনঝন করে বেজে উঠলো। শব্দটা অন্ধকার বাড়ির দেয়ালে-দেয়ালে ধাক্কা খাচ্ছে। মাথায় এক চোট মেরেই সাইদুলকে ধরাশায়ী করলো মাহতিম। অন্ধকারটা ভালোই কাজে লেগেছে, তাড়াতাড়ি আঙিনার বাতিটা জ্বালিয়ে দিতেই পুরো বাড়িটা ফকফকা হয়ে গেলো। চৌকির একপাশে পরে আছে সাইদুল, মাথার ডানদিকটা ফেটে গলগল করে রক্ত বেরুচ্ছে, প্রচণ্ড ব্যথায় গোঙাতে-গোঙাতে একপর্যায়ে বেঁহুশ হলো সে। আবারও মোল্লাবাড়িটা নিঃশব্দ-নিঃসাড় হয়ে পরলো। চারধার ছাপিয়ে দূরের মসজিদ থেকে মাগরিবের আযান ভেসে আসলো। তার মানে কাটায়-কাটায় পাক্কা এক ঘন্টা পেরিয়ে গেছে। এতোক্ষনে নিশ্চয়ই সবার রেসোর্টে পৌঁছার কথা। সবাই ঠিকঠাক মতো পৌঁছালো কিনা আপডেট শোনা দরকার। পকেট থেকে ফোন বের করে কল বসালো মাহতিম। বাঁ-কানে ফোন রাখতেই কোমরের কাছে প্যান্টের সাথে পিস্তুল গুঁজতে নিলো। চোখ তুলে সাইদুলের দিকে নিরস্ত দৃষ্টি রেখে কলিং টোন শুনতেই পেছন থেকে খসখসে আওয়াজ হলো! টান-টান নার্ভে সতর্ক হলো মাহতিম! কান থেকে ফোন সরিয়ে চটজলদি পিস্তল খাবলে ধরলো। পেছন ঘুরে তাকাতেই কল কেটে পিস্তল তাক করলো, ঠিক সামনেই দাঁড়িয়ে আছে সাদা পাণ্ঞ্জাবী। এনার্জী বাল্বের আলোয় চতুর মুখটা গম্ভীর দেখাচ্ছে। দু’হাত পিছমোড়া করে সটান হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মাথায় নতুনের মতো সাদা টুপি, মুখের ভাবভঙ্গি অনিশ্চিত। মাহতিম কয়েক মিনিট নিশ্চলভাবে তাকিয়ে থাকতেই বাঁকা হাসি দিলো। পিস্তলটা ধীরে-ধীরে নামাতেই নিটোল হাসিতে বললো,
– খালিহাতে আসাটা ঠিক হয়নি।
চট করে বাক্য ছুঁড়লো,
– কে বললো এ কথা? যে বলেছে সেতো একটা বলদ। তোমার কি মনেহয় আমি খালিহাতে বেড়াই?
মোবাইলটার দিকে না তাকিয়ে সেটা পকেটে রাখলো মাহতিম। পিস্তলটা এখনো হাতে রাখলেও যেকোনো মূহুর্তের জন্য রেডি। হান্নান শেখ স্বাভাবিক ভাবে এগুতে নিলো, কিন্তু বাধা দিলো মাহতিম। ঝাঁঝের সাথে বলে উঠলো,
– সামনে আগাবেন না কালাম সরদার। একটা পা আগালে আমি ট্রি:গার চাপতে বাধ্য হবো।
তীর্যক চাহনিতে মাহতিমের দিকে তাকালো হান্নান।হাতে একটা পিস্তল নিয়ে যেই সাহস দেখাচ্ছে, সেটা গুড়াতে মাত্র এক মিনিট লাগবে। ও নিজেও জানেনা ওর কপালে আজ মুক্তি নেই। মোল্লাবাড়ির চারপাশে সেও ধূর্ত ফাঁদ পেতেছে। সেই ফাঁদে ভয়ানক ভাবে পেঁচিয়ে গেছে মাহতিম। নিজের অজান্তেই এতো বড় বোকামি করেছে যে, সেটার জন্য একটু পরেই পস্তাতে হবে। কাউকে নিচু চোখে দেখতে নেই এটা মানুষ জানে না। নিচু করে দেখা মানেই অপরপক্ষকে সুযোগ দেওয়া। যদি সুযোগটা খাপে-খাপে লাগানো যায়, তাহলে সফল হতে দেরি নেই। হান্নানকে চুপ থাকতে দেখে বাঁ ভ্রুঁ-টা উঁচু মাহতিম, তার তীক্ষ্ম চাহনি দেখে ভড়কানো হাসি দিলো হান্নান। কিছুটা উত্তাপের সাথে বললো,
– বাড়ির মানুষগুলোকে যেখানে পাঠিয়েছো, তাদের ফিরে আসতে বলো। আমি চাই মীমাংসাটা তোমার-আমার মধ্যে হোক। কল করে গাড়ি ঘুরাতে বলো।
অটলভাবে তাকিয়ে থাকলো মাহতিম। দৃষ্টিটা হান্নানের উপর নিক্ষেপ করে কয়েক পা পিছিয়ে গেলো, আন্দাজের চৌকির নাগালটা বুঝতে পেরে শান্তভাবে বসে পরলো। বুক ফুলিয়ে নিশ্বাস টেনে ঠোঁট গোল করে ছেড়ে দিলো, হান্নান শেখের দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে চোখ সরিয়ে ফেললো, মেঝের দিকে তাকিয়ে থুতনিটা চুলকাতে-চুলকাতে বললো,
– শি:ট নানা!
এরপর চোখ তুলে হান্নান শেখের দিকে তাকালো, অসহায় ভাবভঙ্গির নাটক করে বললো,
– টু মাচ্ লেট। গাড়ি তো লোকেশন মোতাবেক পৌঁছে গেছে, এখন যে কি করি! ওহহো, আরেকটু আগে বললে আপনার নাতনীর সাথে দেখা করিয়ে দিতাম। কি মিস্টেকটাই হয়ে গেলো! কি করি বলুন তো? কোনো উপায় আছে?
হান্নান শেখ গম্ভীর মুখে বললো,
– তুমি কি জানো, তুমি এই মূহুর্তে কার সামনে সাহস দেখাচ্ছো? এই সাহসটা চরম মাশুল গুণাবে সেটা তুমি জানো না। তোমাকে হাতের কাছে পাওয়ার জন্য অপেক্ষায় ছিলাম মাহতিম। আজ এসেছো তাও মুখে বড় বড় কথা বলছো। তোমাকে সাবধান করছি, এখনো সময়ও আছে। ওদের ফিরিয়ে আনো, নাহলে পরিস্থিতি এমন বাজে করবো তুমি চিন্তাও করতে পারবে না।
মাহতিম দমলো না। ভীতু-ভীতু অভিনয় ছেড়ে আসল তর্জনে ফিরলো, চোখের কোটর শক্ত করে বললো,
– আপনার আস্তানায় ছোবল মে:রেছি। এবার তো থামবো না।
কঠিন সাহস দেখে আশ্চর্য হলো হান্নান। কিছুক্ষণের মধ্যে যেই কালবৈশাখির ঝড়টা বইবে, সেটা কি ধারণা করতে পারছে? পুরো বাড়ির চারদিকে মাকড়সার মতো সুক্ষ্ম জাল বুনে গেছে সেটা কি জানে? তখনই বাঁ পকেটে কাঁপুনি অনুভব করলো মাহতিম। ফোনটা ইনকামিং কলের জন্য ক্রমাগত বিপ্ করে যাচ্ছে, হান্নান শেখের দিকে একপলক তাকিয়ে ফোনটা রিসিভের চিন্তা করলো। বাঁ-পা সোজা করে পকেট থেকে ফোন বের করলো, দৃষ্টিটা হান্নান শেখের দিকে রাখার জন্য স্ক্রিনে তাকালো না। স্ক্রিনে সবুজ আইকনটা সোয়াইপ করে কানে রাখলো মাহতিম, হালকা গলায় সাড়া দিলো,
– হ্যালো,
বিপরীত পাশের কথা শোনার জন্য থামলো মাহতিম। মাহতিম শান্ত হয়ে সাড়াটা দিয়েছিলো, অথচ পরিস্থিতি তাকে শান্ত থাকতে দিলো না। কলের প্রতিটা কথা শুনে বসা থেকে দাঁড়িয়ে পরলো সে, সামনে থাকা ধূর্ত লোকটা মিটমিটিয়ে হাসছে। ওপাশ থেকে জানান দিলো, দশটা লাশের স্তুপ পেয়েছে। লাশগুলো চিহ্নিত করা যাচ্ছেনা। কলটা কাটতেই প্রশ্ন করলো মাহতিম,
– গ্রামের সহজ-সরল মানুষকে —
কথাটুকু শেষ না করলেও হান্নান শেখের হাসিতে উত্তর পেয়ে গেলো। সারা গায়ে হিম ছড়িয়ে পরলো ওর। এমন কঠিন মূহুর্তে মেহনূরের চেহারা ভাসছে। ওই মাসুম চেহারার সাথে এই লোকের পাষাণ চেহারাটা মিলাছেনা। জীবনের এমন কাকতলীয় ঘটনা দেখে নিজেই হতভম্ব। মানুষ কি আসলেই মুখোশ পরতে পটু? মেহনূর এসব ঘটনা মানতে পারবে? ও যেখানেই থাকুক ভালো থাকুক। অন্তত এই জঘন্য সত্যটা লুকিয়ে পড়ুক। মাথার ধবধবে সাদা টুপিটায় হাত দিলো হান্নান, সেটা মাথা থেকে সরিয়ে সুন্দর করে পাণ্ঞ্জাবীর পকেটে ঢুকিয়ে বললো,
– আসার সময় কয়েকটা কু:পিয়ে আসছি। মনে হলো ওরা এই গ্রামের না। এখন কার কপালে শনি পরছে একটু পরেই খবর পাবে।
সাথে-সাথে ফোন বাজলো মাহতিমের। মাহতিমের বুকটা হুহু করতেই ফোন রিসিভ করলো, ওপাশ থেকে নিস্তেজ কন্ঠে বললো,
– স্যার, মেয়েগুলোকে উদ্ধার করা গেছে। কিন্তু বিপ্লব দাদা —
চোখ বন্ধ করতেই হিন্দু ধর্মের লোকটাকে মনে পরলো। ভীষণ অমায়িক আচরণ ছিলো, কখনো উদ্ধত স্বভাব দেখায়নি। মাঝে-মাঝে যখন কথাবার্তা হতো, মনে হতো লোকটা স্বচ্ছ মনের মানুষ। যখন যা কমান্ড পেতো, সবই সাদরের সাথে গ্রহণ করতো, কখনো পালটা প্রশ্ন করেনি। কিছু পেতে হলে কিছু হারাতে হবে, এটা যেনো জাগতিক নিয়ম। আক্ষেপের সাথে মনে-মনে আওড়ালো মাহতিম, বুক থেকে ভারী নিশ্বাস ছাড়তে-ছাড়তে বললো, আপনাকে কখনো ভুলবো না দাদা। আপনিও সালেহের সাথে বিদায় হলেন।
আবারও ফোন বাজতে লাগলো ওর। বিরস মুখে ফোনটার দিকে তাকাতেই হান্নান শেখের দিকে তাকালো। বাজতে থাকা ফোনটা আরেক সংবাদ এনেছে, কথাটা শোনার আগে হান্নান শেখের মুখটা পড়তে মন চাইছে। হান্নান শেখ আবারও হাতদুটো পিছমোড়া করে বেধেছে, এখন নির্দিষ্ট সীমানার ভেতর অলস পায়ে পায়চারী করছে। মাহতিমের উদ্দেশ্যে বলে উঠলো সে,
– কলটা ধরে ফেলো। এবার হয়তো সুখবর পেতে পারো।
বিশ্বাস হলো না কথাটা। অবিশ্বাস নিয়ে কলটা রিসিভ করলো মাহতিম, আবারও ছোট্ট স্বরে ‘ হ্যালো ‘ বলতেই চট করে চোখ বন্ধ করলো। নিচের ঠোঁটটা উপরের ঠোঁট দিয়ে চেপে ধরতেই কল কেটে দিলো। মুখ তুলে তাকালো,
– খেলা কি আরো খেলবেন?
পায়চারী ব্যক্তি জবাব দিলো,
– আমার এতে আপত্তি নেই। শুরুটা তুমি করেছো, শেষটা আমি করতে চাচ্ছি। এই বাড়িতে আসাটা ভাগ্যের জোরে হয়েছিলো, কিন্তু ইচ্ছা করে যখন মেহনূরকে গুটি বানালে তখন তোমাকে ছাড় দেওয়া চলে না। আমি যদি একটুখানি হদিশ পেতাম, তাহলে ওইদিনই —
বাকি কথাটা বলতে গিয়ে বুক কাঁপলো না। দাম্ভিকতার সাথে বললো মাহতিম,
– আগে তোকে গা:ড়বো, তারপর এখান থেকে বিদায় হবো!
.
রাত্রিকালীন সময়। মাইক্রোর ঝাঁকুনিতে এখনো শরীর টলাচ্ছে। রাস্তা যে এতো খারাপ ছিলো ভাবতে পারেননি। পুরো রাস্তা শান্তিতে এলেও মেটো পথটুকু পেরিয়ে আসতে ভালোই ভোগান্তি হয়েছে। গ্রাম্য রেসোর্টটা আসলেই চমৎকার। গ্রামের বুকে শহরের ছোঁয়া লেগেছে সেটা এই প্রথম দেখলেন। পুরো রেসোর্টটা আলোয়-আলোয় পূর্ণ, প্রতিটা কামরা পরিষ্কার ভাবে উজ্জ্বল। পানিরও সুব্যবস্থা রয়েছে। মাহতিম তাদের থাকার জন্য বেশ ভালোই বন্দোবস্ত করেছে। ছেলেটার কাজকর্ম দেখে মুগ্ধ হলেন মাহমুদা। মারজা আপা যে ভাগ্য করে এমন সন্তান গর্ভে নিয়েছেন, তা নানা কর্মের মাধ্যমে ফুটে উঠে। রেসোর্টের খোলামেলা পরিবেশে আসার পর অবচেতন মনটা শান্ত হয়নি। বারবার মেহনূরের বিক্ষিপ্ত মুখটা দেখে বিচলিত হচ্ছেন। কেবল স্বামী-সংসারের দায়ভার বুঝতে শিখেছে মেহনূর, এখনই যদি কপালে একটা দূর্গতি ধেয়ে আসে তাহলে কে উদ্ধার করবে?
.
বিছানায় শরীর হেলিয়ে চোখ বন্ধ করলো। মাথার উপর ফুলস্পিডে ফ্যান ঘুরছে। রাতটা ধীরে-ধীরে গভীরে তলাচ্ছে। গরম হাওয়াটা একটু-একটু করে কমছে, ঠান্ডা হচ্ছে পরিবেশ। কি হচ্ছে আজ? কি হতে পারে? মাহতিম তো গতরাতেও কাছে ছিলো, কিন্তু আজ রাতে নেই। গ্রামে সে মিশনের জন্য এসেছে এটা শোনার পর শান্তিতে নেই। এটা যেনো গা ছমছমে শব্দ। ভাবতে গেলেই প্রতিটা পশমে ভয়ের কাঁটা জাগে। অস্থিরতায় ঘুম নেই, এমন অবস্থায় মাথাও ঠান্ডা হচ্ছে না। উদ্ভট চিন্তাগুলো এলোমেলো হয়ে ভয় দেখিয়ে যাচ্ছে। ডানহাতের মুঠোয় মোবাইল ফোনটা চেপে আছে, একটা কলের জন্য বুকটা খাঁ-খাঁ করছে। রাতটা অসহ্যকর লাগছে, অসহ্য ভাব কাটাতে চোখ বুজলো মেহনূর। পাশ ফিরে ডান কাত থেকে বাম কাতে ফিরলো। গালে নিচে হাত রেখে ঘুমানোর চেষ্টা করলো। ঘুমের মধ্যেও ভয় গ্রাস করছে। এ কেমন যন্ত্রণা? হৃৎপিন্ডটা কি ছিঁটকে বেরুবে? ধুকপুকনির জন্য নিশ্বাসটাও বেসামাল। ব্লাড প্রেসার বুঝি বেড়ে গেছে। বুকে এখন চাপও লাগছে। ফ্যানে নিচে থাকলেও চুটিয়ে ঘামছে মেহনূর। কপালের দুপাশ বেয়ে ঘার্মাক্ত স্রোত নামছে। আঁচলটা টেনে কপাল মুছার ইচ্ছা জাগলো না। আবার পাশ ফিরে বাম কাত থেকে ডান কাত ফিরলো। মুঠোর ফোনটা চোখের সামনে এনে মাহতিমের পুরোনো ম্যাসেজটা ওপেন করলো। আবার পড়লো মেহনূর,
NICHE ASHO. KAWKE BOLTE JEYONA. ANTICEPTIC LIQUID NIYE PLEASE DRUTO ASHO.
DON’T PANIC.
NEW SIM.
M. ANSARI
শেষের শর্ট ফর্মটা দেখে ঠোঁট নেড়ে পড়লো মেহনূর। এই প্রথম স্বামীর নামটা নিজ আয়ত্তে মনে-মনে বললো,
– মাহতিম আনসারী, যেখানেই থাকুন সুস্থ ভাবে ফিরে আসুন। আপনাকে নিয়ে এই ভয়-ভয় পরিস্থিতিতে থাকতে পারছিনা। আপনি সবাইকে পাঠিয়ে দিলেন, কিন্তু দাদাভাইকে কেন পাঠালেন না? আপনি আর দাদাভাই মিলে বদমা:শদের সমস্যা ঠিক করছেন? দাদাভাইয়ের কিন্তু খুব সাহস। সে আপনার পাশে থাকলে আপনার কোনো ভয় নেই। কিন্তু, একটা তো খবর দিবেন তাইনা?
স্ক্রিনের আলোটা নিভে গেছে। মেহনূর এখনো ভয়ে তটস্থ। সময়ের কাটা পেরুতে-পেরুতে রাতটুকু কেটে গেলো। মেহনূর অজান্তে ঘুমিয়ে পরলো। ক্লান্ত মস্তিষ্ককে অতিরিক্ত খাটানোর ফলে ক্লান্ত হয়ে পরেছে, আপনা-আপনি ঘুমের মধ্যে তলিয়ে গেছে। স্বপ্নের ধুম্রজালে দেখথে পেলো ফর্সা মুখ, ঠিক একটা বুড়ো-বুড়ো চেহারা। বুড়োটা হাত বাড়িয়ে হাসি দিয়ে বললো,
– দাদুভাই, চলো এখান থেকে চলে যাই।
স্বপ্নের মধ্যেই অবাক হলো মেহনূর। খুবই অবাক হলো। কেমন উদ্ভট কথা বললো দাদাভাই। এমন কথা তো আগে বলেনি।
চলমান .
#FABIYAH_MOMO .
মন বাড়িয়ে ছুঁই গল্পের লিংক kobitor (all part)