‘কাব্য ভাইয়ের উপর প্রথম ক্রাশ খেয়েছি আজ থেকে চার বছর আগে. . . তার গায়ের সাদা শার্টের উপর ডেনিম জ্যাকেট দেখে। একহাতে পকেটে বাদামী মানিব্যাগ, আরেকহাতে বাম পকেটে সেলফোনটা ঢুকাতে ঢুকাতে যখন ব্যস্ত পায়ে ড্রইংরুম ছেড়ে যাচ্ছিলেন. . .আমি হা করে তাকিয়ে ছিলাম। আমার পাশ দিয়ে যখন বেরিয়ে যান— তার পারফিউমের গন্ধে আমার পাগল-পাগল লাগতে শুরু করেছিলো। সেই যে পাগল হলাম… এখনো নিজেকে স্বাভাবিক করতে পারি না। তাকে দেখলে এখনো; এতটা বছর পর আমি নিজের মধ্যে থাকতে পারিনা! এটা তো প্রেমই, শার্লিন!’
কুহুর চোখে তখনো চার বছর আগের অসাধারণ; হৃদয় কেড়ে নেওয়ার দৃশ্য তাজা-তাজা ঘুরে; প্রেম নামের এক মিষ্টি ঝাঁপটা আজও তার বুকের ভেতর বহুল যত্নে পড়া আছে। হয়তোবা কুহু রোজ এখনো প্রেমের জোয়ার উথলে উঠেল; সেই যত্নে রাখা প্রেমকে বের করে দেখে; আগলায়; আবারও সযত্নে মনটার ভেতরে.. বহু ভেতরে চেপে রাখে।
শার্লিন তখনও কুহুকে অবাক চোখে দেখে। কুহুর সরল অথচ তীব্র প্রেমিকাসুলভ আবেগে এখনো প্রায়শই ও হতবাক হয়। ভাবতে বসে— এমন প্রেমও হয় বুঝি?
কুহু তাকালো শার্লিনের দিকে; বড্ড হাসিখুশি মেয়েটা এইবার উচ্ছাস নিয়ে বললো;
—- কাব্য ভাইর প্রেমে কিন্তু আমি সেইবারের পর আরো অনেকবার পড়েছি। তোকে বলবো না, তুই লজ্জা পাবি বললে।
শার্লিন এইবার চোখে খানিক বিরক্তি টেনে কুহুকে বলল;
—- তুই যে কাব্য ভাইকে এত পছন্দ করলি. . .বলেছিস কখনো?
কুহু এইবার সোজা হয়ে বসলো। শ্যামলা মুখে এক চিমটি লজ্জা ভাসিয়ে, নয় বধূর ন্যায় নত মস্তকে বলল;
— ভয় হয় রে শার্লিন। যদি কাব্য ভাই রিজেক্ট করে! আমার ওসব প্রেমের কথা শোনে যদি চোখ-মুখ কুঁচকে বলেন—কুহু! তুই আমার বোনের মতো। এসব কথা তুই আমার ব্যাপারে ভাবিস কীভাবে? পাগল নাকি তুই? চাচ্চুকে বিচার দিব?
শার্লিন কুহুর কোলে রাখা বাদামের প্যাকেট থেকে বাদাম নিলো কটা নিজের হাতেও। সেটার খোসা ছিলে পুকুরের পাড়ের দিকে চেয়ে একেকটা বাদাম মুখে পুরে আরাম করে সেটা চিবুতে চিবুতে ভাবুক গলায় বললো;
—- কিন্তু কুহু, আমার কেন যেন মনে হয় না কাব্য ভাই এসব বলবেন বা তোর বাবাকে বিচার দিবেন।
কুহুর এ কথা শোনেই ভ্রু উঁচু হয়ে গেল। ভেতরে ভেতরে খানিক আশা ফিরে পুকুরের ঢেউ থেকে চোখ সরিয়ে সরাররি শার্লিনের দিকে তাকালো ও। চঞ্চল কণ্ঠে বললো;
— কেন মনে হচ্ছে না তোর? এক্সপ্লেইন কর।
শার্লিন এবার সোজা হয়ে বসে, বাদাম খাওয়া থেকে কিছুসময়ের জন্যে ইস্তফা দিয়ে একদম বাস্তববাদী বড় মানুষদের মতো গম্ভীর হয়ে বললো;
—- দেখ তুই. . কাব্য ভাই তোদের ভাইবোনদের সবার থেকে অনেক ম্যাচোর; স্মার্ট, কেয়ারফুল, নিজের ফিলিংসগুলোও ভালো বোঝে। চালাকও বলা চলে উনাকে। তোর কি মনে হয়, সে এসব তোর বাবাকে বলে নিজেকে ছোট করবেন? তোর বাবা এটা শোনলে আঙ্কেল কিন্তু কাব্য ভাইকেও দোষের অর্ধেকটা দিবেন। কাব্য ভাই বড়জোর তোকে এড়িয়ে যেতে পারেন। বা খুব শান্তভাবে তোকে রিজেক্ট করবেন যেন তুই কষ্ট না পাস। উনার কাছে তোরা ভাইবোনরা সবসময় প্যাম্পার পাস, তাই সেইভাবেই করেই তোকে হ্যান্ডেল করবেন।
শার্লিন পুরো ব্যাপারটা কুহুকে বুঝিয়ে ভ্রু বাকিয়ে কুহুর মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো। অর্থাৎ ও বোঝার চেষ্টা করছে; এটা শোনার পর কুহুর ফেসিয়াল এক্সপ্রেশন কেমন দেখাচ্ছে? অথচ শার্লিনের কটা বাক্যের মধ্যে কুহুর মন ভেঙে পড়ল ওই এক কথা শোনে। কাব্য ভাই ওকে এড়িয়ে যাবেন, এটা কুহু কখনোই মেনে নিতে পারবেই না। কুহু দমটুকু বন্ধ করে অস্ফুটে বললো;
—- এড়িয়ে যাবে মানে? সে যদি একদিনও আমার সঙ্গে কথা না বলে, আমি পাগল হয়ে যাই। আমি ভাই এইভাবেই ঠিক আছি। দরকার নেই আমার তাকে প্রপোজ করার।
কুহু আবার সোজা হয়ে বসে বাকিসব ছেড়েছুড়ে বাদাম খেতে মন দিল। ওদিকে শার্লিন কুহুর এমন কথাতে চুড়ান্ত হতাশ! এই গাধাকে কি বোঝাল; আর এই গাধাটা কি বুঝলো? শার্লিন বাদাম খেতে মগ্ন কুহুর মাথাতে এক দড়াম শব্দ করে একটা থাপ্পড় বসালো। মাথাটার ব্যথায় কুহু আর্তনাদ করলো. . এক হাতে মাথাটা ঘষতে ঘষতে রাগে তাকিয়ে বললো;
—- আহ্! মারলি কেন?
শার্লিন দাঁতে দাঁত পিষে বললো;
—- তুই একটা আস্ত গাধা। আমি কি বোঝালাম; কি বুঝলি তুই এসব? শোন. . তুই যদি না বলিস, আর তারপর যদি কাব্য ভাইর অন্য কোথাও বিয়ে হয়ে যায়? তখন? তখন কিন্তু আঙুল চুষে থাকিও তুমি গাধা।
একটু আগের থাপ্পড়ের ব্যথা ভোলার চেষ্টা করে এইবার কুহুর হালকা হাসল. . . মিষ্টি-দুষ্টু ছেলেমানুষি হাসি। মায়াবী ওই ডাগর ডাগর চোখে হাসিটা বড্ড মোহনীয় ঠেকালো।আরাম করে পেছনে গাছের সঙ্গে হেলান দিয়ে কুহু শান্তি নিয়ে বললো;
—- হবে না রে বিয়ে। বড়মা-কে বলতে শুনেছি, কাব্য ভাই নাকি আরো দুই-তিন বছর বিয়ে করবে না, বলে রেখেছে বাসায়। উনি পড়াশানা শেষ করে মাস্টার্স করে তারপর বিয়ে করবে। আমার হাতে বিশাল এক সময় এখনো আছে। ততদিনে আমিও একটা নাহলে আরেকটা সুযোগ বের করে ফেলবোই। খুব স্পেশাল হবে আমার প্রপোজ; কাব্য ভাই চমকে যাবে; দেখিস।
শার্লিন ভ্রু কুচকে তাকালো. . বোধহয় এই আধা পাগল কুহুর কথাটা ওর বিশ্বাস হয়নি। কুহু ওই তাকানো দেখে কিছুটা হকচকালো বোধহয়। পরপর নিজেকে শুধরে বোকার মতো হেসে বললো,
—— মানে, চেষ্টা করব আরকি! ওমনে তাকানোর কিছু নেই। আমি কুহেলিকা সিদ্দিক কুহু এক কথার মানুষ।
শার্লিন কুহুর দিকে চেয়ে ফের দীর্ঘশ্বাস ফেললো। এটা ছাড়া আর কিইবা এখন করার আছে। কুহু আবারও মন দিয়ে বাদাম খেতে খেতে পুকুরের ঢেউ দেখছে। আজ জেলে নেই পুকুরের এ পাড়ে। প্রতিদিনই তো থাকে; আজ কেন নেই জানা নেই। প্রতিদিন এক্সাম শেষে এই পুকুরের পাড়টায় আসা একটা রুটিন হয়ে গেছে ওদের জন্যে। আর আজ তো এক্সাম হল থেকে ওদের বের করেই দিয়েছে। বাসায় এই অসময়ে গেলে কুহুর মা হ্যানত্যান জিজ্ঞেস করবেন।তাই এইখানেই রয়ে গেছে। ছুটির সময় হলে আবার চলে যাবে বাসায়।
বাদাম খেতে ব্যস্ত দুই বান্ধবী। কুহু একটা পাথর তুলে অযথাই পুকুরটার পানিতে ফেলতে যাবে, তখন কুহুর ব্যাগে থাকা ফোনটা বেজে উঠলো। কুহু শার্লিনের দিকে তাকালো; শার্লিনও তাকালো। ওরা যা ভাবছে; সে কি? কুহু দ্রুত বাদাম ফেলে ফোনটা ব্যাগ থেকে বের করতে থাকে। ফোনের স্ক্রিনে নামটুকুর পাশে,
‘Kabbo vai’ লেখা দেখে গা শিউরেই উঠলো কুহুর। খুশিতে ঝপঝপিয়ে উঠলো কুহু ছোটমোটো হৃদয়খানি। গলা দিয়ে আওয়াজ বেরুচ্ছে না প্রচণ্ড খুশিতে। উচ্চসিত ভঙ্গিতে শার্লিনকে দেখিয়ে দেখিয়ে, লাফিয়ে লাফিয়ে বলতে থাকে,
— শার্লিনের বাচ্চা, কাব্য. . কাব্য ভাই। দেখ উনিই কল করেছে।
শার্লিন ভ্রু কুঁচকে তাকালো। একটা সামান্য ফোনের জন্যে কুহুর খুশির অর্ধেকটুকু অনুভব করার বৃথা চেষ্টা করেও লাভ হলো না; বরং বিরক্ত হয়ে গেল। বিরক্তি নিয়েই বলল,
—— লাফালাফি বন্ধ করে কলটা ধর। লাইন কেটে যাবে।
কুহু একমুহূর্তে ঘোর থেকে ফিরে এলো। নিজেকে ঠেলেঠুলে একটু ঠিকঠাক করে নিল। গলা কেশে পরিষ্কার করল, যেন ভিতরের ব্যাকুলতা না ধরা না পরে যায় কাব্য ভাইর কাছে। তারপর নিজেকে চুড়ান্তভাবে স্বাভাবিক করে কলটা ধরলো,
—— আসসালা. . . .
সালামটুকু সম্পুর্ণ করার আগে ওপাশ থেকে কাব্য নামক গম্ভীর; চিটচিটে লোকটা বড্ড কর্কশ গলায় বলে বসে,
—- দু মিনিটের মধ্যে প্রিন্সিপালের রুমে আয়।
ব্যাস, কুহুর ফুরফুরে হাসিখুশি মেজাজের বারোটা বেজে গেলো। আজ যা করেছে সেসব ভেবেই কণ্ঠনালি শুকিয়ে আসলো। প্রিন্সিপাল কাব্য ভাইকে ভার্সিটি থেকে ডাকিয়ে এনেছে কেন? কুহুর কথা বলার জন্যে? আজ কাব্য ভাই কুহুকে কাঁচা চিবিয়ে খেয়ে ফেললেও কুহু অবাকটুকুও হবে না। কারণ ও নিজে কাব্য ভাইর এতো বছরের ঘষেমেঝে বানানো রেপুটেশনের উপরে কাদা মেখে দিয়েছে। আজ তো কুহুর রক্ষেই নেই।
ফোন কানে রেখে, শার্লিনের দিকে ভীষণ অসহায় চোখে তাকালো কুহু। শার্লিনও ভয় পেয়েছে যেমন। দুজনের চোখেই ভয়-অসহায়ত্ব। কুহু তাই না পারতে হুট করে ঝটপট মাথায় যে মিথ্যা আসলো; চোখ বন্ধ করে সেটাই বলে বসলো,
—- আমি রাস্তায় কাব্য ভাই. . .বাসায় যাচ্ছি।
ওপাশ থেকে কাব্য মিথ্যাটুকু ধরে ফেলবে জানে কুহু। হলোও তাই; কাব্য ধমকে বললো,
—- মিথ্যা বললে দিবো ধরে একটা। আমি তোকে দেখতে পারছি; পুকুরের পাড়ে বাদাম খাওয়া বের করবো তোর। আসবি তুই?
গম্ভীর গলার ওই বিশাল-বড়সড় ধমকে কুহুর শরীরটা কেঁপে উঠলো। বেচারি ধরা পরে গেছে। কাব্য ততক্ষণে টুক করে কলটা কেটে দিয়েছে। কুহু অসহায় চোখে শার্লিনের দিকে তাকালে, শার্লিন খ্যাকিয়ে উঠলো একপ্রকার। দূরে সরে, পিছিয়ে হিয়ে ঝাঁঝিয়ে বলল,
—- কি! আমার দিকে ক্যান তাকাস? আমি মানা করি নাই যে চিটিং করিস না? এখন এসব করে আমারে ফাঁসাবি না। তোমার কাব্য ভাই তোমারে ডাকছে, তুমি যাও। আমি বাড়ি গেলাম।
শার্লিন ব্যাগ তুলে কুহু আরেকবার বলার আগে তাড়াহুড়ো করে উঠে পরলো গাছের নিচ থেকে। কুহু বসে থাকা অবস্থাতেই দ্রুত ওর হাতটা চেপে ধরলো। কণ্ঠে অসহায়ত্ব, চোখে কান্না-কান্না ভাব ইচ্ছে করেই ফুটিয়ে বললো,
—- চল না বেবি. . প্লিজ!
কুহুর ওই অসহায় চোখ-দুটো দেখে শার্লিনের রাগ ধীরে ধীরে গলে যায় কেন যেন। মুখ ঘুরিয়ে ফেললেও কুহুর মায়াভরা কণ্ঠ ওকে আটকে রাখলো। একপ্রকার হাল ছেড়ে সবসময়ের মতো দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,
—- আমাকে তুই একদিন হেব্বি মাইরটা খাওয়াবি। চল যাই।
কুহুর চোখে-মুখে আবার উজ্জ্বলতা ফুটে উঠলো। দ্রুত হাসিখুশি শার্লিনের হাতটা ছেড়ে দিয়ে ফোনটা ব্যাগে ঢুকিয়ে নিয়ে, কাঁধে ঝুলিয়ে উঠে দাঁড়াল। শার্লিনের বাহুটা দুহাতে ঝাপটে ধরে, হেলেদুলে হাঁটতে হাঁটতে বললো,
—— তুই না থাকলে আমি কী করতাম রে শার্লিনের বাচ্চা। আল্লাহ তোকে বাঁচিয়ে রাখুক; আর শ বাচ্চার জননী করুক। আমিন; সুম্মা আমিন।
_____________
প্রিন্সিপালের রুমে তখন কাব্য বসে আছে, গম্ভীর মুখে একদম। প্রিন্সিপাল সুরেন্দ্র ঘোষ কাব্যকে সামনে বসিয়ে কিছু বলছেন; কাব্য শুধু চুপচাপ শুনছে ওসব। ওদের কথার মধ্যে কুহু-শার্লিন চুপচাপ মাথাটা নিচু করে রুমেটায় ঢুকলো। কাব্য বোধহয় ভার্সিটি থেকেই এদিকে এসেছে।তার কাঁধের ব্যাগটা প্রিন্সিপালের টেবিলের উপর রাখা। গায়ে সাদা টিশার্টের উপর খোলা বোতামের চেক-চেক ব্লু শার্ট।
কুহু রুমে ঢুকলে কাব্য তাকালো ওর দিকে। চোখটা আজ ভীষন ঠান্ডা; ওই চোখে কোনো প্রশ্রয় নেই এটুকুও। কুহুকে যেন ওই চোখেই ভস্ম করে দিতে চাইছে। কাব্যের ওই চোখ দেখে কিছুটা মিইয়ে গিয়েই শার্লিনের গায়ের সঙ্গে একদম মিশে যেতে লাগলো কুহু।
কাব্য ওসব ভয়ের ধার নিষ্ঠুরতার সাথে ধারলো না; কাঠকাঠ গলায় জিজ্ঞেস করলো স্রেফ,
— গতকালের এক্সামে তুই চিট করেছিস? বাড়ি থেকে নকল এনে?
কুহু চুপ করে দাড়িয়ে থাকলো মাথাটা নিচু করে। কথা বলার সাহস নেই ওর। কাব্য মেরেই ফেলবে আজ ওকে। যেভাবে রাগটা চেপে রেখেছে। বাড়ি গেলে আজ একটা থাপ্পড় মাটিতে পড়বে না, সব কুহুর গায়ে।
কাব্য আবার ধমকে উঠলো,
—- চুপ কেন? উত্তর দে।
কুহু অসহায়ভাবে এবার চোখ তুলে তাকালো। পিটপিট করে কাব্য ভাইর রাগী-রাগী মুখটা দেখে কম্পিত গলায় সাফাই গাওয়ার চেষ্টা করলো,
—- আমি. . .আমি এসব.. করি. . !
মিথ্যাটুকু বলবে জেনেই হয়তো কাব্য প্রিন্সিপালের সামনেই ধমকে উঠলো,
—- সারাদিন বাসায় সিরিয়াল নিয়ে পড়ে থাকলে এসব হবেই তো। চাচ্চুকে বলে তোর টিভির লাইন আমি কাটাচ্ছি আগে। তোর অবস্থা দেখে আমি সারপ্রাইজড হচ্ছি অ্যাকচুয়ালি। মান-সম্মান ডুবাবি আমাদের?
কাব্যের ধমকে কুহুর শরীরটা মৃদুমন্দ কেপে-কেপে উঠল। মাথাটা সেই যে নামালো; আর উঠালোই না একবারের জন্যে। কাব্যের এভাবে ধমকানো ওর প্রেমে উতলা মনের ঠিক সহ্য হয়নি। ঠোঁট কাঁপছে, কণ্ঠ রুদ্ধ। শুধু অভিমানী মনটা ভাবছে, কাব্য ভাই তার সঙ্গে এভাবে কথা বলতে পারলেন?
কাব্য এবার প্রিন্সিপালের দিকে ফিরে তাকালো। গলা যথাসম্ভব নরম রেখে; ভদ্রতা নিয়ে; সম্মান দেখিয়ে শান্ত গলায় জানালো,
—— স্যার, আমি এটা হ্যান্ডেল করছি। ও আবার এই এক্সাম দেবে। এবার একাই দেবে।
সুরেন্দ্র ঘোষ চশমা ঠিক করে বললেন,
—- তুমি আছো বলেই তোমাকে বললাম কাব্য। নাহলে তোমার চাচাকে ডেকে আনতাম। এমন স্টুডেন্টকে আমরা সরাসরি ফেইল করিয়ে দিই। যেহেতু তোমাকে চিনি, তাই আগে তোমাকে বলা। এক্সাম দিক ও, একটা অ্যাপ্লিকেশন দিলেই হবে আপাতত।
কাব্য ঠোঁট চেপে কুহুর দিকে একবার কড়া চোখে চেয়ে আবার স্যারের পক্ষে মাথা হেলিয়ে বললো,
— ইট মিনস এ লট স্যার। আমি দেখছি বিষয়টা। ও আমার বোন বলে কোনো ছাড়ের দরকার নেই। আর পাঁচটা স্টুডেন্টের মতো ওকে ট্রিট করলেই আমরা খুশি হবো।
এই ‘বোন’ শব্দটা এত রাগ; এত অপমানের মধ্যেও কুহুর হৃদয়টা চিড়ে ভেতরে ঢুকে। কুহু তবুও মাথা আর তুললো না।
প্রিন্সিপালের রুম থেকে বেরিয়ে এলো কাব্য। পেছনে কুহু আসছে—ধীর পায়ে, এখনো মাথাটা নিচু করে আছে। কাব্য সামনে হেঁটে যাচ্ছে; তার মুখ এখনও আগের মতোই সেই রূঢ়, ঠান্ডা।
কুহু সামনে যাচ্ছিলো। কাব্য পেছন থেকে ডাকলো,
—- শোন!
কুহু ঘাবড়ে পেছনে ফিরল। আবার কি ধমকাবে? কুহু এক ধমকেই ক্লান্ত হয়ে গেছে, আর শোনার ধৈর্য নেই একদম। কিন্তু কাব্য ধমকালো না, বরং ঠান্ডা অথচ ছোট কণ্ঠে বললো,
—— কি বলেছি মনে আছে? এই এক্সাম আবার দিবি তুই। অ্যাপ্লিকেশন দিবি। নাহলে… চাচ্চুর কানে খবর যাবে। চান্স দিচ্ছি চাচ্চুর গা লি খাওয়ার থেকে বাঁচার। কাজে লাগাবি। নাহলে . . .
কুহু চোখদুটো নিচু করে মাথা নেড়ে সায় দিল কেবল। মনেমনে ব্যাঙ্গ করে বলেও একবার— খালি তো পারেন চাচ্চু-চাচ্চু করতে। চাচ্চুকে বিচার দেওয়া ছাড়া আর কিছু হবে নাকি আপনার থেকে? ভ্যাড়া কাব্য ভাই একটা।
মনেমনে বলা এই কথা-গুলো কাব্য ভাই শোনেন না। কারণ কুহুর ওসব মুখে বলার সাহস নেই, কোনোদিন হবে বলে মনেও হয়না।
কাব্যর এক কাঁধে ভার্সিটি ব্যাগ ঝোলানো, রোদের মধ্যে চোখ-মুখ কুচকে এবার ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখল সময়, ওর ক্লাস আছে একটা। কাব্য আর দেরি করলো না। পকেট থেকে ফোন বের করতে করতে বলল,
—- ড্রাইভার আঙ্কেলকে বলছি। এসে নিয়ে যাবে। গরমে রিকশা করে যাওয়ার দরকার নাই।
সাধারণ একটা কথা! অযথা একটা যত্ন। অথচ ওটুকুতেই কুহুর রাগ পানি-পানি হয়ে গেল। ধুয়ে-মুছে অভিমানও সাফ হয়ে গেল। শুধু একদৃষ্টিতে ফোনে ব্যস্ত কাব্য ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে রইলো।
এটা কি প্রেম? নাকি কোনো বিশেষ অনুভূতি; যার নাম দিতে কুহু জানে না, শিখেওনি। নাকি কিছুই নয়. . . কুহুর একতরফা অনুভূতি মাত্র?
#চলবে
গল্পের নাম— ডেনিম জ্যাকেট সূচনা পর্ব
ডেনিম জ্যাকেট পর্ব ১
লেখিকা—#অবন্তিকা_তৃপ্তি
ডেনিম জ্যাকেট গল্পের লিংক। কলমে: অবন্তিকা তৃপ্তি
কাজিন স্টোরির এই গল্পের প্রথম পর্ব কেমন লেগেছে, কমেন্টে জানাবেন। আমি অপেক্ষা করবো আপনাদের কমেন্টের।
এ